সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেল বাংলাদেশ। ৫০ রানের এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ এ ভাগ বসাল টাইগাররা।
হারলে হোয়াইটওয়াশ। জিতলে সিরিজে ভাগ বসানোর সুযোগ। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে সাকিব (৭৫), মুশফিকুর রহিম (৭০), নাজমুল হোসেন শান্তর (৫৩) ফিফটিতে ভর করে ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে ইংল্যান্ড। বিনা উইকেটে ৫৪ রান করা দলটি এরপর মাত্র ১ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়। জেমস ভিন্স ও স্যাম কারান চতুর্থ উইকেটে ৮১ বলে ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফেরান।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে টাইগাররা।
বাংলাদেশের জয়ে ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ৭৫ রান সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে ১০ ওভারে মাত্র ৩৫ রানে সবচেয়ে বেশি ৪ উইকেট শিকার করেন সাকিব। এদিন ৪ উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেটের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেন।
সোমবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় খেলায় টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২.৬ ওভারে দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় টাইগাররা।
মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে খেলায় ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ ব্যাটিং করেন তারা। ১২৮ বলে গড়েন ৯৮ রানের পার্টনারশিপ।
৭১ বলে ৫টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৫৩ রান করে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৯৩ বলে ৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৭০ রান করে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
শান্ত-মুশফিকের বিদায়ের পর রীতিমতো আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৮), আফিফ হোসেন (১৫), মেহেদি হাসান মিরাজ (৫) ও তাইজুল ইসলামরা (২)।
তবে ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রাখেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
সাকিব দলকে সম্মানজনক স্কোর উপহার দিতে শেষদিকে একাই লড়াই চালিয়ে যান। ৪৮.৪ ওভারে দলীয় ২৪৬ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাকিব। তার আগে ৭১ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৭৫ রান করেন।
সাকিব আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমেই এলবিডব্লিউ হন মোস্তাফিজুর রহমান। তার বিদায়ে ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের হয়ে জোফরা আর্চার তিন আর স্যাম কারান ও আদিল রশিদ দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
২৪৭ রানের টার্গেট তাড়ায় উড়ন্ত সূচনা করে ইংল্যান্ড। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৪ রান করা দলটি এরপর মাত্র ১ রানের ব্যবধানে হারায় ৩ উইকেট।
সাকিব আল হাসানের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন ফিল সল্ট। ৮.৬ ওভারে দলীয় ৫৪ রানে আউট হন সল্ট। তার আগে ২৫ বলে ৩৫ রান করেন তিনি।
সাকিবের পর ইংলিশ শিবিরে আঘাত হানেন পেসার এবাদত হোসেন। তার শিকার হয়ে ফেরেন ডেভিড মালান। ২ বল খেলে রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মালান।
নিজের ঠিক পরের তথা তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই সাকিব ফেরান ইংল্যান্ডের আরেক ওপেনার জেসন রয়কে। তার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন রয়। তার আগে ৩৩ বলে তিন চারে করেন ১৯ রান।
এরপর অনবদ্য ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন স্যাম কারান ও জেমস ভিন্স। তারা ৮১ বলে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটান মেহেদি হাসান মিরাজ।
মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরার আগে ৪৯ বলে এক চার আর এক ছক্কার সাহায্যে ২৩ রান করেন স্যাম কারান। তার বিদায়ে ২৩.৪ ওভারে ১০৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
সাকিবের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে পরাস্ত জেমস ভিন্স। ২৬.৫ ওভারে দলীয় ১২৭ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি সাজঘরে ফেরেন। তার আগে ৪৪ বলে ৩৮ রান করেন।
ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিল সল্ট, জেসন রয়ের পর চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা জেমস ভিন্সকেও সাজঘরে ফেরান সাকিব।
সাকিবের পর ইংলিশ শিবিরে আঘাত হানেন এবাদত হোসেন। তার ফুললেংথের বল বুঝতেই পারেননি মঈন আলী। তিনি ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন, মিস করে হয়েছেন বোল্ড। তার বিদায়ে ২৭.৫ ওভারে ১৩০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলারকে এলবিডব্লিউ করার মধ্য দিয়ে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৩৪.১ ওভারে ১৫৮ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন বাটলার।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের পর আদিল রশিদকেও সাজঘরে ফেরান তাইজুল ইসলাম। ৩৮.৪ ওভারে ১৭৪ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন রশিদ।
রেহান আহমেদকে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরানোর মধ্য দিয়ে সাকিব ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিস ওকসকে আউট করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মোস্তাফিজুর রহমান।