অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশের মূল ভিত্তি বিবেচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৷ এই প্রকল্পটি বাস্তায়নে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে ৷

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে প্রকল্পটি ৷

নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের প্রথম ব্যাচের জ্বালানি (নিউক্লিয়ার ফ্রেস ফুয়েল) ইউরেনিয়াম গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে দেশে আনা হয় ৷

বৃহস্পতিবার(৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠানিকভাবে এ ইউরেনিয়াম হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। এ সময় রূপপুর প্রকল্প সাইটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন।

রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ জ্বালানি হস্তান্তর করবেন। এ সময় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন ৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রস্তুতির কাজ সব চূড়ান্ত। জ্বালানি আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের ৩৩তম দেশ হিসেবে যুক্ত। এটা একটা মাইলফলক অর্জন। আইএইএ এর গাইডলাইন মেনে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পারমাণবিক বিদ্যুতের জ্বালানি ইউরেনিয়াম থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপশক্তি পানিকে বাস্পে পরিণত করে টারবাইন ঘোরায় এবং এর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কয়লা, গ্যাস, তেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশের ওপর যে দুষণে প্রভাব পড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউরেনিয়াম ব্যবহারে এ ধরনের কোনো দুষণের প্রভাব নেই।

তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। সে পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রূপপুর প্রকল্পে সব রকম অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ প্রকল্পে থ্রি জি প্লাস প্রযুক্তির ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রিঅ্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে কোরক্যাচার নামেরর নিরাপত্তা যত্রাংশ।

এছাড়া তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত এর মাত্রা পর্যবেক্ষাণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যে নিরাপত্তা নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

আবার কয়লা, গ্যাস, তেলের চেয়ে ইউরেনিয়ামের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিবেশ বান্ধবের পাশাপাশি এই সব জ্বালানি থেকে অধিক সাশ্রয়ী ৷

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, সাড়ে ৪ গ্রাম ইউরেনিয়ামে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার জন্য কয়লা প্রয়োজন ৪০০ কেজি, তেল ৩৫০ লিটার এবং গ্যাস ৩৬০ ঘনমিটার। এই হিসেবে ৬০ টন তেল ও ১০০ টন কয়লার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তার জন্য ইউরেনিয়াম প্রয়োজন এক কেজি।

পাবনার রূপপুর ইউনিয়নে ১২০০ একর অর্থাৎ ৩৬০০ বিঘা জমির ওর নির্মিত রাশিয়ার প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

স্বাধীন বাংলাদেশের এটি সর্ববৃহৎ প্রকল্প ৷ এর জন্য ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ৷ এ প্রকল্পটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে এবং দুইটি ইউনিটেই স্থাপন করা হয়েছে রাশিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি থ্রি জি+ ভিভিইআর-১২০০ রিআ্যাক্টর। দুই ইউনিটি বিশিষ্ট এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

এই প্রকল্পটি আগামী বছর সেপ্টেম্বর দিকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছে ৷ সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলে উৎপানে শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান ৷

এই প্রকল্প টানা ৬০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর আরও ২০ বছর বর্ধিত করা যাবে ৷ পরবর্তীতে আরও ২০ বছর বাড়িয়ে মোট ১০০ বছর উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান ৷

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন-রোসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান সাইবেরিরয়ায় নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রেটস প্লান্টে (এনসিসিপি) রূপপুরের এ জ্বালানি উৎপাদন করছে।

রাশিয়ার ওই কারখানা থেকে বিশেষ বিমানে জ্বালানি ঢাকায় আনা হচ্ছে। এর পর সড়ক পথে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রকল্প সাইটে নেওয়া হয়।

ইউরেনিয়াম আমদানি, পরিবহন, সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার(আইএইএ) নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। সেই গাইডলাইন বা নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করেই সব ধরনের ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, রূপপুরে প্রথম ব্যাচের এ জ্বালানি সাত ধাপে দেশে আনা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ এসে পৌঁছেছে যা বৃহস্পতিবার হস্তান্তর হবে ৷ পরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাকি ৬ ধাপের ইউরেনিয়াম এসে পৌঁছবে ৷

এই প্রথম ব্যাচে যে পরিমাণ জ্বালানি আসবে তা দিয়ে এক বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। একেকটি ইউনিটে ১৬৩ টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি লোড করা হবে ৷ দুইটি ইউনিটেতে ৩২৬টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি ৮০ টন ইউরেনিয়াম ৷

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যত দিন চালু থাকবে ততদিন রাশিয়ার কোম্পানিটি এই প্রকল্পের জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে। এ সংক্রান্ত আলাদা চুক্তি রয়েছে কোম্পানিটির সঙ্গে।

চুক্তি অনুযায়ী তারা নিয়মিত প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে। তাছাড়া পাররমাণবিক জ্বালানির বর্জ্যও নিয়ে যাবে রাশিয়া, সে চুক্তিও করা হয়েছে দেশটির সঙ্গে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হস্তান্তর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বায়লানিউজকে বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সুরক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সব শর্ত মানা হয়েছে এবং সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ইউরেনিয়াম কমিশনিং এর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটি পারমাণবিক রূপ পাবে। মাত্র ছয় বছর সাত মাসে আমরা প্রকল্পের এই রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছেন ৷ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ৷ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হবে স্মার্ট বাংলাদেশের মূল্য ভিত্তি এবং এখান থেকেই শুরু হবে ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *