তথ্য প্রযুক্তি

হাই কোর্ট নির্দেশনা দিলে আল-জাজিরা বন্ধ হবে: তথ্যমন্ত্রী

হাই কোর্টের নির্দেশনা পেলে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানবাজারের বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, হাই কোর্টের নির্দেশ পেলে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাই কোর্ট যদি কোনো আদেশ দেন এটিকে বন্ধ করার জন্য, সে ক্ষেত্রে হাই কোর্টের আদেশ আমাদের মানতে হবে।”

গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে আল-জাজিরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনা সদর থেকে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এর জের ধরে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। সেখানে আল-জাজিরায় সম্প্রচারিত ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেইসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য কি না এবং আরজি অনুযায়ী আদালত একটি আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে কি না, সে বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতামত জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল, আব্দুল মতিন খসরু, কামাল উল আলম, প্রবীর নিয়োগী ও শাহদীন মালিককে অ্যামিচি কিউরি হিসেবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মতামত দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা চাইলে আল-জাজিরার সম্প্রচার আমাদের দেশে বন্ধ করতে পারতাম, অনেক দেশে বন্ধ করা হয়েছে এবং বন্ধ রয়েছে। এমনকি ভারতেও কিছু দিনের জন্য বন্ধ ছিল। এখনও ৬-৭টি দেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেহেতু গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তাই আমরা সেই উদ্যোগ নিইনি।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার যেমন দরকার, দায়িত্বশীলতারও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা মানে এই নয়, ভুল, মিথ্যা, পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অপরের স্বাধীনতা হরণকারী সংবাদ পরিবেশন করা। এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।

“আল-জাজিরার রিপোর্ট একটি মিথ্যা বানোয়াট, কিছু কাট পেস্ট করে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে। এটি একটি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।”

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বিএনপির ভূমিকা ‘গাধা জলঘোলা করে খাওয়ার মতো’ বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “বিএনপি নেতারা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছেন, তারা প্রথমে বলেছে সরকার ভ্যাকসিন সময়মতো আনতে পারবে না। যখন সময়মতো চলে আসল তখন বললেন, এটি নিলে কোনো কাজ হবে না। এই ভ্যাকসিন দিয়ে বিএনপি নেতাদেরকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে- এ ধরনের কথাও বলেছেন তারা।

“নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে, দায়িত্বহীন অনেক কথা বলে শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনেক নেতা করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং নেওয়ার পক্ষে কথাও বলেছেন। সেজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। কথা আছে না ‘গাধা জল ঘোলা করে খায়’, করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকাও সে রকমই ঘটেছে।”

বিএনপি নেতাদের নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই তারা ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ ও সবল থাকুক। তারা বিরোধী দল, বিরোধিতার ভূমিকায় তারা আছেন, আমাদের বিরোধিতা করুক।”

আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের আর্জি: আইনজীবীদের মতামত শুনবে হাই কোর্ট

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের ভূমিকা আসলে কী ছিল, সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে তিনি প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার খেতাব বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো হয়নি এখনও। এটা নিয়ে জামুকাতে আলোচনা হয়েছে মাত্র।”

বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপিতো বিরোধী দল, তারা বিক্ষোভ করতেই পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ অন্যান্য যে সমস্ত ইস্যুতে তারা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তা হাস্যকর।

“বাংলাদেশ কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশে যে ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় সেই নিরিখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু কার্যত মাঠে ছিল না। ভোটের দিন তাদের কাউকে দেখা যায়নি।”

তথ্যমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব কি চট্টগ্রাম এসেছিল? তিনি কি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন? একটা মিটিং করেছেন? অথচ তাদেরতো প্রচারণা চালাতে কোনো অসুবিধা ছিল না।

“নির্বাচন কমিশনের নানা বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের দলের এমপি এবং মন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল। মির্জা ফখরুল সাহেবসহ তাদের দলের নেতারা যারা প্রতিদিন নয়া পল্টনে কথা বলেন, তাদের তো কোনো সমস্যা ছিল না। তারা কিন্তু আসে নাই। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, কিন্তু মাঠে ছিল না, এটি তাদের ব্যর্থতা এবং দলীয় দুর্বলতা। এ কারণেই এই শহরে তারা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *