প্রথম দুই ম্যাচেই এসেছিল দারুণ জয়। তাতে স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছিল লঙ্কানদের প্রথমবারের মতো হোয়াইট ওয়াশ করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না বাংলাদেশের। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে টাইগাররা হেরে গেছে ৯৭ রানে।
লংকানদের ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ পেয়েছিল তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলটি। কিন্তু ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত লংকান ক্রিকেটারদের ধবল ধোলাই করা গেল না। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই খেলায় জিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
শুক্রবার শেষ ম্যাচে তামিম, সাকিব, নাঈম, আফিফরা দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে পারলে লংকাদের হোয়াইটওয়াশ করা যেত। কিন্তু ২৮৭ রানের টার্গেট তাড়ায় ২৮ রানে নাঈম শেখ, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের উইকেট হারানো দলটি আর খেলায় ফিরতে পারেনি।
শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক কুশল পেরেরার সেঞ্চুরি (১২০) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ফিফটির (৫৫) সুবাদে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে শ্রীলংকা।
টার্গেট তাড়া করতে নেমেই ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন তরুণ ওপেনার নাঈম শেখ। আগের ম্যাচে ১৯ রান করা নাঈম এদিন ফেরেন মাত্র ১ রানে।
এরপর তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৭ বলে ৪ রান করে ফেরেন এ অলরাউন্ডার। চলতি সিরিজে পুরোপুরি ব্যর্থ সাকিব।
শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় শূন্য রানে ফেরেন সাকিব। দ্বিতীয় ম্যাচে টেস্টের মেজাজে ব্যাটিং করেও ফর্মে ফিরতে পারেননি তিনি। ৩৪ বল খেলে মাত্র ১৫ রান করেই ফেরেন সাজঘরে। শুক্রবার তৃতীয় ও সিরিজের শেষ ম্যাচে আউট হলেন মাত্র ৪ রান। তিন ম্যাচে সাকিবের সংগ্রহ মাত্র ১৯ রান।
আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে আউট হলেন তামিম ইকবাল। দুশমন্থ চামিরার ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন তামিম। একটি শব্দও শোনা যায়। লঙ্কানদের আবেদনে আঙুল তুলতে খুব একটা সময় নেননি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। তবে তামিম রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই।
রিভিউয়ে আল্ট্রা-এজ-এ ধরা পড়ে শব্দ। তবে বল যখন ব্যাটের পাশে, ঠিক ওই সময়টাতেই ব্যাট লাগে মাটিতেও। তাই শব্দ আসলে কোনটির, নিশ্চিত হওয়া যায়নি বারবার রিপ্লে দেখেও। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন তৃতীয় আম্পায়ার।
২৯ বলে ১৭ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় তামিমের শরীরী ভাষায় পথে ক্ষোভ ফুটে ওঠে।
২৮ রানে নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল আউট হওয়ার পর আশা ছিল মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় এড়িয়ে খেলায় ফিরে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচেও তাকে ঘিরেই প্রত্যাশা ছিল টাইগারপ্রেমিদের। দলীয় ৮৪ রানে মুশফিকের বিদায়ে জয়ের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৫৪ বলে ২৮ রান করে ফেরেন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর অনবদ্য ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের ৩৭তম ম্যাচে তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়েই বিপদে পড়েন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলীয় ১২৫ রানে ৭২ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৫১ রান করে আউট হন সৈকত।
প্রথম দুই ম্যাচে ২৭ ও ১০ রান করে আউট হওয়া আফিফ হোসেন ফেরেন ১৬ রান করে। অতীতে ব্যাটিংয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ শ্রীলংকার বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম দুই খেলায় বল হাতে দাপট দেখাতে পারলেও ব্যাট হাতে তেমন কিছুই করতে পারেননি। শুক্রবার দলের প্রয়োজনেও কথা বলেনি তার ব্যাট। আগের ম্যাচের মতো আজও শূন্য রানে আউট হন এ অলরাউন্ডার।
উইকেটের এক প্রান্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে আসা-যাওয়া মধ্যে ছিলেন মোসাদ্দেক, আফিফ, মিরাজ ও তাসকিন আহমেদরা। দলীয় ১৮৯ রানে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরে বিদায়ে শেষ হয় টাইগারদের ইনিংস। তার আগে ৬৩ বলে ৫৩ রান করেন এ অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (কুশল পেরেরা ১২০, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৫*; তাসকিন ৪৬/৪, শরিফুল ৫৬/১)
বাংলাদেশ: ৪২.৩ ওভারে ১৮৯/১০ (মোসাদ্দেক হোসেন ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৫৩; চামিরা ১৬/৫, হাসারাঙ্গা ৪৭/২, রমেশ মেন্ডিস ৪০/২)
ফলাফল: ৯৭ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা
সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ
ম্যাচ সেরা: দুষ্মন্ত চামিরা (শ্রীলঙ্কা)
সিরিজ সেরা: মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)