জাতীয়

১৭ জুলাই: জাফর ইকবালের অভিশপ্ত দিন

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে ‘জনপ্রিয়’ লেখক হিসেবে পরিচিত পেলেও সমালোচনা কখনো পিছু ছাড়েনি তার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশ যখন উত্তাল, সবাই যখন কোটার বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঠিক তখনই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তিনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে/ আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানের প্রেক্ষিতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাফর ইকবাল। তাতে তিনি লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।’

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তার এমন নেতিবাচক মন্তব্যে গত বছর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় জাফর ইকবালকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।

এরপর ১৭ জুলাই জাফর ইকবালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও আজীবন নিষিদ্ধ করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

জাফরের এমন কাণ্ডে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইনভিত্তিক বইয়ের দোকান রকমারি.কম ঘোষণা দেয়, তারা আর অনলাইনে জাফর ইকবালের বই বিক্রি করবে না। এখনো রকমারিতে জাফর ইকবালের বই ‘নট অ্যাভেইলেবল’ দেখা যায়।

প্রগতি বইঘরও জাফর ইকবালের বই বিক্রি না করার ঘোষণা দেয়। একই ইস্যুতে জাফর ইকবালের বই বিক্রি না করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বই কেনার প্লাটফর্ম ‘বুকস অব বেঙ্গল’।

এমনকি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিষোদগার করায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় এই লেখকের ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ নামের বইটির পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীতে ফেলেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন নামে এক পরিবেশকর্মী ও বইপ্রেমী।

মামুন ওই সময় একটি ভিডিওবার্তায় জাফর ইকবালকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার (জাফর ইকবাল) লেখা অনেক বই আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে পড়িয়েছি। অনেক কষ্টের টাকায় বইগুলো কিনেছি। আর নয়, আজকে আপনার বই আমি ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীতে ফেলব। আজকে গ্রাম-গঞ্জে থেকেও আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনাকে ভাসিয়ে দিলাম। আপনার মতো বোদ্ধা, অসাধুদের উসকে দেওয়ার মতো মানুষের প্রয়োজন নেই। আপনি আর বই লেখিয়েন না। আমাদের অনেক প্রকাশকও আপনার লেখা আর ছাপাবে না।

এদিকে টানা এক মাসের বেশি সময় আন্দোলনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হয়। হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা পালিয়ে ভারত চলে যান। এখনো আত্মগোপনে রয়েছে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী।

৫ আগস্টের পর থেকে আড়ালে রয়েছেন জাফর ইকবালও। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন তা এখনো অজানা।

তবে জাফর ইকবাল কোথায় আছেন তা জানতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় পোস্ট দিতে দেখা যায়। ‘গর্তে আছেন’ বলেও অনেককে মন্তব্য করতে দেখা যায়।

নতুন বাংলাদেশ গঠনের পর ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে জাফর ইকবালকে নিয়ে ট্রল ও মিমে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে গর্তের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন ‘জাফর ইকবালের বর্তমান অবস্থান’।

ফেসবুকে জাফর ইকবাল সম্পর্কিত পোস্টের কমেন্টবক্সে জাফর ইকবালকে ‘দালাল’, ‘চাটুকার’ ও ‘প্রতারক’ বলে সম্বোধন করতে দেখা যায়।

অনেকেই লেখেন, নতুন স্বাধীন দেশে জাফর ইকবালের অনুভূতি কেমন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *