অর্থনীতি

১৭৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের ৯ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সরকারের অর্থায়ন ৬৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ও বৈদেশিক অর্থায়ন ১ হাজার ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এননেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মন্ত্রী জানান, অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে চারটি নতুন প্রকল্প রয়েছে এবং বাকী ৫টি সংশোধিত প্রকল্প।

প্রকল্পসমূহ হলো- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েরর ‘ঢাকাস্থ আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১১২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্প, মংস্য মন্ত্রণালয়ের ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের সমীক্ষা’ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প এবং ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ’ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি’ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব ইকুপমেন্ট ফর টেকনিক্যাল অ্যাডুকেশন’ প্রকল্প, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন’ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।

একনেক সভায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন।

জমি অনাবাদী না রেখে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এর যথাযথ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ডাল, পেঁয়াজ ও সরিষার আবাদ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের গভীর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,  কোনো জমি যেন অলস পড়ে না থাকে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও কোনো জমি অলস না রেখে চাষের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে এখনও অনেক জমি অলস পড়ে থাকে। চাষাবাদ হচ্ছে না। সেসব জমি চাষের আওতায় আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি ঘের মালিকদের প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ঘের মালিকরা যেন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং ঘের থেকে বালু পরিস্কার করতে পারে। এছাড়া, তিনি বিদেশি জাতের মাছের পরিবর্তে স্থানীয় জাতের মাছ চাষে বেশি মনোযোগ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী যেকোন প্রকল্পে ‘দারিদ্র বিমোচন’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার আপত্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন শব্দটি বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো প্রকল্পের অধীনে কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করাটাই সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য অবকাঠামো ও ভবনের অধীনে মেশিনারিজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের দরকার রয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি প্রকল্পে আমদানি করা যানবাহনের পরিবর্তে প্রগতি থেকে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত যানবাহন ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের প্রবণতা কমানো এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজ সংস্থার নিয়মকানুন মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করেন।
দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। মার্চে সেটি আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি বোরোর বাম্পার ফলন হয়, তাহলে বৈশাখ থেকে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে, তবে এসময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কিন্তু ভাল নয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করেন, বর্তমানে সার্বিক অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। তিনি বলেন, ‘রেমিটেন্স, রপ্তানি এবং কৃষি ফলনের অবস্থা যেভাবে আছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য পণ্যের সরবরাহ কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মান্নান বলেন, বাংলাদেশের মত অর্থনীতিতে পণ্যের প্রবাহ মসৃন নয়। এখানে কিছু অজানা ও অদৃশ্য সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মত ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবে, সেটি কমানো যেতে পারে।
আসন্ন রমজানে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা প্রদান করেছেন কিনা- সে বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি করে পণ্য কেনার  (পেনিং বায়িং) প্রবণতা রয়েছে। যা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রবণতা রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি জানান, সম্প্রতি ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করায় একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। দুই প্রতিবেশী দেশ ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম বিশেষ করে ডিজেল আমদানি করবে বাংলাদেশ।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *