জাতীয়

৩ মার্চ ১৯৭১: স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা

১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রেখে সফল সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা কেমন হবে, সেই বর্ণনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হবেন বলে নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি…’ সংগীতটিকে ব্যবহার করা হবে উল্লেখ করা হয়।

স্বাধীনতার দলিলপত্রে উল্লেখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এর উল্লেখ আছে। ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভার প্রস্তাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে এতে বলা হয়, ‘এই সভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তির লেলিয়ে দেওয়া সশস্ত্র সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালীদের ওপর গুলিবর্ষণের ফলে নিহত বাঙালী ভাইদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করিতেছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করিতেছে এবং পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তির সেনাবাহিনীর এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়িয়া তোলার জন্য আহ্বান জানাইতেছে। এই সভা স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থ রাখিয়া তাহার সফল সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

স্বাধীনতার দলিলপত্র( স্বাধীনতার দলিলপত্র )মার্চের ১ তারিখ থেকে একের পর এক প্রতিরোধ কর্মসূচির মধ্যে এই ইশতেহার অন্যতম ছিল। যেখানে বলা হয়, ‘৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গমাইল ভৌগোলিক এলাকার ৭ কোটি মানুষের জন্য আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম “বাঙলাদেশ”। স্বাধীন ও সার্বভৌম “বাঙলাদেশ” গঠনের মাধ্যমে নিম্নলিখিত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে:’

‘(১) “স্বাধীন ও সার্বভৌম বাঙলাদেশ” গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালী জাতির কৃষ্টি, বাঙালীর ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

‘(২) “স্বাধীন ও সার্বভৌম বাঙলাদেশ” গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসনকল্পে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে শ্রমিক রাজ কায়েম করতে হবে এবং “স্বাধীন ও সার্বভৌম বাঙলাদেশ” গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।’স্বাধীনতার দলিলপত্র

( স্বাধীনতার দলিলপত্র )রেসকিলিজের শেষ অংশে ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’—দীর্ঘজীবী হোক কামনা করে এবং স্বাধীন বাংলার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উল্লেখ করে গ্রামে গ্রামে দুর্গ ও মুক্তিবাহিনী গঠনের কথা বলা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলার সর্বাধিনায়ক হিসেবে পুনরায় বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করে স্বাধীনতা আন্দোলনের নিম্নরূপ ধারা উল্লেখ করে। যেখানে শুরুতেই বলা হয়, ‘বর্তমান সরকারকে বিদেশি উপনিবেশবাদী শোষক সরকার গণ্য করে বিদেশি সরকারের ঘোষিত সকল আইনকে বেআইনি বিবেচনা করতে হবে। বর্তমান বিদেশি উপনিবেশবাদী শোষক সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স-খাজনা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণরত যেকোনও শক্তিকে প্রতিরোধ, প্রতিহত, পাল্টা আক্রমণ ও খতম করার জন্যে সকলপ্রকার সশস্ত্র প্রস্তুতি নিতে হবে। তথাকথিত পাকিস্তানের স্বার্থের তল্পিবাহী পশ্চিমা অবাঙালী মিলিটারিকে বিদেশি ও হামলাকারী শত্রু সৈন্য হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এ হামলাকারী শত্রুসৈন্যকে খতম করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *