দুটি পরিসংখ্যান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ ১৬ ওয়ানডের সবকটিতে জয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ দুই ওয়ানডে সিরিজেই জয় জিম্বাবুয়ের। খটকা লাগছে তো? দুটি পরিসংখ্যানই কিন্তু সত্যি! পরিবর্তন শুধু স্বাগতিকে। প্রথম পরিসংখ্যানটি বাংলাদেশের মাঠের, পরেরটি জিম্বাবুয়েতে।
পরিসংখ্যান ক্রিকেটে যতই জড়িয়ে থাকুক, এতে সবকিছু ফুটে ওঠে কম সময়ই। তবে এবার দুই দলের ওয়ানডে সিরিজের আগে এই পরিসংখ্যানই ফুটিয়ে তুলছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সামনে জিম্বাবুয়ে দল যতটা না বড় প্রতিপক্ষ, তার চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের মাঠ, কন্ডিশন ও আবহ। এটুকু জয় করতে পারলে লক্ষ্য অর্জনেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
লক্ষ্য কি, সেটা দলের কারও মুখ থেকে শোনার অপেক্ষা না করলেও চলে। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ এই সিরিজ। যা আদতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজ থেকে সম্ভাব্য ৩০ পয়েন্টের পুরোটা না পেলে বাংলাদেশের জন্য তা হবে হতাশার।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে শুক্রবার এই অভিযানে নামছেন তামিমরা। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায়।
ম্যাচের আগে অবশ্য বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের। বৃহস্পতিবার হারারের সময় দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তামিম অসহায়ের হাসিতে বললেন, ‘কাদের নিয়ে পরিকল্পনা করব, জানিই তো না প্রতিপক্ষে কারা খেলবে!’ পরে অনুশীলন শুরুর সময়ও তা ছিল অজানা। দল তাই ব্যাটিং মিটিং, বোলিং মিটিং, কিছুই করতে পারেনি। অবশেষে স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে ওয়ানডে দল ঘোষণা করে জিম্বাবুয়ে। টসের বাকি তখন কেবল ১৭ ঘণ্টা!
দল ঘোষণা নিয়ে বিস্ময় ছড়ালেও জিম্বাবুয়ের দলে চমকানোর কিছু নেই। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও নেই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভিন। সিকান্দার রাজা অবশ্য ফিরেছেন অসুস্থতা কাটিয়ে। ক্রিকেটীয় শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনায় এই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জিততে না পারার কারণ নেই।
তবে খেলাটা ক্রিকেট বলেই বাইরের সমীকরণ মেলে না প্রায়ই। এই জিম্বাবুয়েই তাদের সবশেষ ওয়ানডেতে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তারা এক ম্যাচে জিতেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। দুদিন আগেই আয়ারল্যান্ড হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দল হোয়াইটওয়াশ করেছে পূর্ণশক্তির পাকিস্তানকে।
তামিম ইকবাল তাই ভীষণ সতর্ক। বাংলাদেশ অধিনায়ক এগোতে চান ধাপে ধাপে। সেই পথে তার চাওয়া, শুরুটা ভালো করা।
“খেলাটা ক্রিকেট। সুপার লিগে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় স্থানে আছে। কিন্তু এখন তো বড় দলগুলি হারছে…।”
“আমার কাছে মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে, শুরুটা ভালো করা। আগে ব্যাটিং করি বা বোলিং, শুরু ভালো করতে হবে। এরপর যতটা সম্ভব, সবকিছু ঠিকঠাক করতে হবে ভালো কিছু পেতে হলে।”
ভালো শুরুর করার পথে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, ম্যাচ শুরুর প্রথম ঘণ্টা। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু ম্যাচ। উইকেটে আর্দ্রতা থাকতে পারে, পেসারদের সহায়তা থাকতে পারে। সেই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন তামিম।
“জিম্বাবুয়েতে আমি দুই-তিন সিরিজ খেলেছি, তবে সবশেষ ৬-৭ বছর আগে (২০১৩)। কন্ডিশন একই আছে। সাড়ে ৯টায় ম্যাচ শুরু, বোলাররা শুরুতে সুবিধা পাবে। বিশেষ করে প্রথম ঘণ্টায়। এটা চ্যালেঞ্জিং হবে, যদি আগে ব্যাট করি। আগে ব্যাট করলে সাবধান থাকতে হবে। আগে বোলিং করলে এই এক ঘণ্টা কাজে লাগাতে হবে।”
ব্যাটিং-বোলিং, দুই জায়গায়ই অবশ্য বড় দুর্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। মিডল অর্ডারের বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম পারিবারিক কারণে ফিরে এসেছেন দেশে। প্রস্তুতি ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পেয়ে প্রথম ওয়ানডেতে খেলা অনিশ্চিত বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের। তামিম নিজেও হাঁটুর চোট নিয়ে গেছে সফরে। টেস্টে পারেননি খেলতে, ওয়ানডে সিরিজ খেলবেন পায়ে টেপ পেচিয়ে।
একাদশ ও ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ম্যাচের আগে কোনো ধারণাই দেননি তামিম। তবে বৃহস্পতিবার প্রস্তুতি ম্যাচে লিটন দাস খেলেছেন চার নম্বরে। মূল সিরিজেও মুশফিকের জায়গায় এই পজিশনে তাকে ব্যাটিং করতে দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তামিমের সঙ্গে ওপেন করবেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিংবা, মুশফিকের জায়গায় মোহাম্মদ মিঠুন বা নুরুল হাসান সোহানও ঢুকতে পারেন একাদশে। তামিম ম্যাচের আগে বলেছেন, একাদশের বিবেচনায় শক্তভাবেই থাকবেন সোহান।
বাংলাদেশের জন্য যেমন এটি সুপার লিগের ৩০ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ, জিম্বাবুয়েও কিছু পয়েন্ট বাড়ানোর জন্য তাকিয়ে এই সিরিজেই। টেস্টের চেয়ে সীমিত ওভারে তারা বেশি অভিজ্ঞ ও আত্মবিশ্বাসী দল। তাদেরকে লড়াইয়ের বাইরে রাখার সুযোগ নেই কোনোভাবেই।
বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবালও সেটা জানেন বলেই ঘোষণা দিয়ে রাখলেন, “দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এমনিতে অনেক কিছু করা যায় (পরীক্ষা-নিরিক্ষা)। কিন্তু সুপার লিগে প্রত্যেক ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব আছে। তিন ম্যাচেই আমরা সেরা দল খেলানোর চেষ্টা করব।”
সেরা দল, সেরা ফল। এছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই বাংলাদেশের !