সকালে ঘুম ভেঙেছে দুই মেয়ের ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ শুনে। নাতি-নাতনিরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছে, যা ‘অন্যরকম এক আনন্দ’ তার কাছে।
জন্মদিনের ভোর থেকেই শুভাকাঙ্ক্ষি ও প্রিয়জনদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৭৮তম জন্মদিনে দাঁড়িয়ে ‘গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার’ কথাও বললেন তিনি।
১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে তার জন্ম।
জন্মদিনে টেলিফোনে তিনি বলেন, “বুড়ো হয়ে গেছি… এখন তো বিদায়ের প্রান্তে। তারপরও মনের ভেতরে যে স্বপ্ন, যে প্রত্যাশা, তা কিন্তু চিরঞ্জীব আছে। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
“বয়সের এই প্রান্তে এসে এই বিশ্বাসটুকু আমি করি, আমাদের রাজনৈতিক যে সংকটগুলো, যে চ্যালেঞ্জগুলো, তা অধিকাংশই সমাধান করা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশ গণতন্ত্রে ফিরে যাবে সেই প্রত্যাশায় আছি।”
জন্মদিন কীভাবে কাটলো জানতে চাইলে তিনি বলেন ইদানিং শরীর ভালো যায় না।
ফখরুল বলেন, “এবার আমার গোটা পরিবারই ঢাকায়। একসাথে এবার এই দিনটি কাটছে।”
বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, সকালে ঘুম ভেঙেছে দুই মেয়ের ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ শুনে। নাতি-নাতনিরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছে, যা ‘অন্যরকম এক আনন্দ’ তার কাছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জন্মদিন মানে আরো একটি বছর চলে গেছে। অন্যান্য বছর বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে টেলিফোন করে। এবার কিন্তু সেটি হয়নি। বড় মেয়ে তার পরিবার নিয়ে কয়েকদিন আগেই ঢাকায় এসেছে। ফলে বড় মেয়ে, ছোট মেয়েসহ আমার গোটা পরিবারই এখন ঢাকায়। মেয়েরা ‘হ্যাপি বার্থে ডে’ বলল। আপনার ভাবিও বার্থ ডের উইশ করেছে।”
এছাড়া জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকেই বন্ধু, স্বজন, নেতাদের অনেকে টেলিফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকেও শুভেচ্ছা পেয়েছেন।
জন্মদিন নিয়ে নিজের অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “জন্মদিন আমি আসলে পালন করি না। ৭৭ বছর বয়স পেরোলাম, বলতে পারেন একটা লং জার্নি। এই ৭৭ বছরে বহু পরিবর্তন দেখেছি, বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, বহু জীবন দেখেছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পেয়েছি।
“এখন যাওয়ার পালা। তবে আশা এখন একটাই, প্রত্যাশা একটাই, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দিকে যাবে, গণতন্ত্র ফিরে পাবে। এই গণতন্ত্রের জন্য আমাদের দেশের মানুষ, আমাদের বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী যে আত্মত্যাগ করেছে, ফ্যাসিস্টদের যে নিপীড়ন, নির্যাতন ভোগ করেছে, গুম-খুনের শিকার হয়েছে, নির্মমতার মুখে পড়েছে, এই রকম চিত্র আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না, নজিরবিহীন।”
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন শাখার সভাপতি এবং এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন ফখরুল। ঢাকা কলেজ, দিনাজপুর কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে জিতে হন চেয়ারম্যান।
ছাত্রজীবনের বাম রাজনীতি থেকে উঠে আসা মির্জা ফখরুলের জাতীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দল ন্যাপে। সেখান থেকেই তার বিএনপিতে যোগদান।
১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর একান্ত সচিব ছিলেন ফখরুল।
১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি, পরে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে উঠে আসেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে আসার আগে তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রথম সহসভাপতি এবং পরে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন।
ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফখরুল। ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারে তাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তিনি শপথ না নেওয়ায় ওই আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির জিএম সিরাজ সংসদে যান।
দুই মেয়ে নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রাহাত আরা বেগমের সংসার।
বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ নিয়ে এখন ক্যানবেরার ফেডারেল মেডিকেল কাউন্সিলের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কয়েকদিন আগেই শামারুহ মির্জা ও তার স্বামী ঢাকায় এসেছেন।
আর ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ধানমণ্ডির সানিডেল স্কুলে শিক্ষকতা করেন।