জাতীয়

‘অনেকের শরীরে হাজারের বেশি লোহার টুকরো’ কুমিল্লার বিস্ফোরণে

কুমিল্লায় বেলুনে গ্যাস ভরার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ‘অনেকের শরীরে হাজারের বেশি লোহার টুকরো’ প্রবেশ করেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মির্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম জানান, বিস্ফোরণে সিলিন্ডারের অনেকাংশ ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হওয়ায়’ তাদের এই পরিণতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার মোকরা ইউনিয়নের বিরলী গ্রামে এই বিস্ফোরণ হয়। এতে শিশুসহ অন্তত ৪১ জন আহত হন। শরীরে লোহার টুকরো বিদ্ধ হওয়া ছাড়াও পাঁচ-ছয়জন অগ্নিদগ্ধ হন। আর হাত-পা ভেঙে গেছে কয়েকজনের।

আহতদের প্রথমে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলেও পরে অনেককে কুমিল্লা এবং পাঁচজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

মির্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল বলেন, “বিস্ফোরণে সিলিন্ডারটির অনেকাংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। অনেকের শরীরে এক হাজারের বেশি স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছে। ”

আহত ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবদাস দেব জানোন।

তিনি আহতদের চিকিৎসা বিষয়ে বলেন, আহতদের পাঁচ-ছয়জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হয়েছে স্প্লিন্টার ইনজুরি। এছাড়া অনেকে ব্লাস্ট ইনজুরিতে আহত হয়েছে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

পরে অনেকে হাসপাতাল থেকে ফিরে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে তিনি জানন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মহিউদ্দিন বলেন, এখন তাদের হাসপাতালে গুরুতর আহত ১৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছেন তারা। তাছাড়া আরও দুইজনকে তাদের স্বজনরা নিজ দায়িত্বে ওই ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেছেন।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে পাঁচজন ও নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও দুইজনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং সবার চিকিৎসা ভালোভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন।

ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন কারণ জানতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

কমিটির সদস্যরা হলেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হক, নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম ও উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। তাদের আগামী কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, তারা ঘটনা তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তবে তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।

এলাকাবাসী জানান, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের মোঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবছর পয়লা মাঘ শীতকালীন মেলা হয়। শনিবার সেই মেলা হওয়ার কথা। মেলায় বিক্রির জন্য বিরলী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বেলুনে গ্যাস ভরছিলেন। আর তা দেখার জন্য ভিড় করেছিল এলাকার শিশুরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন বয়স্করাও অনেকে। হঠাৎ সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে যায়। এতে পাশে ভিড় জমানো অন্তত ৪১ জন আহত হন। আহতদের বেশির ভাগই শিশু।

দুর্ঘটনায় আহত আলাউদ্দিন বলেন, “প্রায় ২০০ বছর ধরে মেলাটি হচ্ছে বলে শুনেছি। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে। আমি আনোয়ার ভাইয়ের কাছ থেকে বেলুন নিয়ে মেলায় বিক্রি করি। ওই দিন বিকেলে গিয়েছিলাম কিছু বেলুন আনতে। এরই মধ্যে হঠাৎ বিস্ফোরণটি ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বাড়ি রক্তে লাল হয়ে যায়।”

বিস্ফোরণে বেলুন বিক্রেতা আনোয়ার ও তার মেয়েসহ পরিবারের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে তার বোন ফারজানা আক্তার জানিয়েছেন।

ফারজানা বলেন, “আমার ভাই বেশ কয়েক বছর ধরে মেলার জন্য পাইকারি বেলুন বেচে থাকে। খুচরাও বেচে।

“ভাই আর তার ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া পরিবারের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।”

বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে দেশে মাঝে মাঝেই হতাহত হয় অনেকে। হাইড্রোজেন গ্যাসের এমন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলেও তাতে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *