আন্তর্জাতিক

পালিয়ে ভারতে আশ্রয় মিয়ানমারের ৪৫ সেনার

বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে জীবন বাঁচাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৪৫ সেনা সদস্য। আশ্রয়ের খোঁজে ভারতে পালাচ্ছেন দেশটির সাধারণ নাগরিকরাও। আনন্দবাজার, হিন্দুস্থান টাইমস, আল আরাবিয়া ও আল জাজিরা।

মিজোরাম পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৪৫ জন মিয়ানমারের সেনা সদস্য ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে অসাম রাইফেলস।

মিজোরাম পুলিশ আরও জানায়, মঙ্গলবার ৪৩ জন মিয়ানমারের সেনা ভারতে ঢুকে পড়ে। বুধবার আরও দুইজন ঢুকে পড়েছে। বিদ্রোহীদের হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে তারা ভারতে ঢুকছে।

মিজোরামের চাম্পেই জেলা লাগোয়া সীমান্তের অদূরে মিয়ানমারের সেনার রিখাওদর ও খাওমাওয়ি ছাউনি দুটি সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহীরা দখল করে।

হাফ ডজন শহর, কয়েকশো গ্রাম, পুলিশ ও সেনার শতাধিক শিবিরের পর মঙ্গলবার মিয়ানমারের সেনাদের একটি অস্ত্রাগার দখলে নেয় বিদ্রোহী বাহিনী। শান প্রদেশের ওই অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের যৌথ বাহিনী অন্তত ছয়টি ট্যাংক ও বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়িও তাদের দখলে নেয়।

উত্তর মিয়ানমারে তুমুল যুদ্ধের পরে বিদ্রোহী বাহিনী মঙ্গলবার নামতু নদীর উত্তরে হেসেনভি শহর ও সেনাঘাঁটি দখল করেছে।

উত্তর মিয়ানমারের কুনলং, মনিক্যাট, নানবেং (লাশিও-টাংইয়ান রোডে) ও মোনেকো ছাড়া সীমান্তবর্তী অন্য কোনো সেনাঘাঁটি এখন সামরিক জান্তা সরকারের দখলে নেই। রাখাইন প্রদেশের সিতওয়ে শহরের দোরগোড়াতেও পৌঁছে গিয়েছে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ বাহিনী। এই প্রদেশে রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।

মিয়ানমারের শান ও সাগিয়াং প্রদেশে সাফল্যের পরে পশ্চিমের চিন এবং রাখাইন প্রদেশেও হামলা শুরু করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, পশ্চিম মিয়ানমারে সক্রিয় দুই বিদ্রোহী বাহিনী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’।

অক্টোবরের শেষ দিকে, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা শুরু করে ‘অপারেশন-১০২৭’। ব্যাপক লড়াইয়ের পর, জান্তা নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি শহরের দখলও নেয় সরকারবিরোধীরা। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর, এটিই দেশটির সরকারবিরোধীদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। এখনও হামলা-পালটা হামলায় উত্তপ্ত কিছু এলাকা।

জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখলের পর প্রায় তিন বছর ধরেই উত্তপ্ত মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো। বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে এই সময়ে দেশটি থেকে মিজোরামে পালিয়েছেন ত্রিশ হাজারের বেশি নাগরিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *