রাজনীতি

‘মধ্যস্বত্বভোগীদের আকাঙ্ক্ষার জিহ্বা টেনে ধরতে হবে’

দেশের মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের আকাঙ্ক্ষার জিহ্বা টেনে ধরতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের লোভ-লালসা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, আমরা শুধু চাই আর চাই।

তিনি বলেন, রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করা হবে, যাতে পণ্যের দাম না বাড়ানো হয়। সব পণ্যের দাম যেন স্বাভাবিক থাকে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিসিবির পণ্যের মতো রমজানে মুরগি, ডিম, মাংস ও দুধ বিক্রির বিষয়েও ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ খাত: সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ক’ কর্মশালায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ডিবিসি নিউজের এডিটর প্রণব সাহা, স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুর রহিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর গোলাম রব্বানী।

কর্মশালাটির যৌথ আয়োজক পরিপ্রেক্ষিত, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান থাকবে মানুষের জন্য কিছু করুন, লাভ কম করুন। বাজারে মাছ, মুরগি, ডিম, দুধের সরবরাহ থাকলেও দাম বেশি। আমাদের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক অধঃপতনও বাড়ছে। উৎপাদনকারীদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার অধিকার আছে। আবার ক্রেতাদেরও সঠিক দামে পণ্য পাওয়ার অধিকার আছে। অথচ মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা গ্রামে ৫ টাকা দিয়ে কপি কিনে ঢাকায় এনে তা ৬০ টাকা বিক্রি করছে। এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের আকাঙ্ক্ষার জিহ্বা টেনে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের লোভ-লালসা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, আমরা শুধু চাই আর চাই। এই আরও চাওয়াগুলো দুনিয়াতে কেউ ভোগ করে যেতে পারে না। এসব পিঁপড়ায় খায়। সুইস ব্যাংকে যারা টাকা রাখে, অনেক সময় তাদের স্বাক্ষর মেলে না। এতে টাকা আর তোলা হয় না। ফাঁকা পকেটে ফিরে আসতে হয়।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারে কাজের গুরুত্বকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। আর শুল্ক কতটুকু কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে মেডিসিন ও ফিডের দাম কমাতে হবে। দেশে দুধে ঘাটতি থাকলেও মাংস, ডিম ও মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর দেশে ভ্যাক্সিনেশনে বিপ্লব ঘটে গেছে। আমাদের দেশের যেসব শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়, তাদের কৃষি ও মৎস্যখাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠালে তারা বেশি উপকৃত হবে।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর গোলাম রব্বানী বলেন, ভারত দুধ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। তারা বছরে ২ হাজার ৫০০ বিলিয়ন টন দুধ উৎপাদন করে থাকে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় চীন, চতুর্থ পাকিস্তান, পঞ্চম ব্রাজিল ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে রাশিয়া।

তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড বিশ্বের ৪ ভাগ দুধ উৎপাদন করে ৪০ ভাগ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশে ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত গত ১০ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে ৭৯ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিক টন। আর একই সময়ে মাংসের উৎপাদন বেড়েছে ৪১ দশমিক ৮৯ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে প্রাণিখাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল ৭৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।

এ খাতের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের জেনেটিক রিসোর্স নেই, মিল্ক লিঙ্কেজ মার্কেট সমস্যা, উৎপাদন ব্যয় অনেক। ভালোমানের গাভীর অভাব রয়েছে। দুগ্ধজাত পণ্য যারা রপ্তানি করেন সেখানে আন্তর্জাতিক মান নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *