কানাডা গোলরক্ষকের উপহার কাজে লাগিয়ে শুরুতেই দলকে এগিয়ে নিলেন হাকিম জিয়াশ। সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া সমালোচনার জবাবে জালের দেখা পেলেন ইউসেফ এন-নেসিরি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে নিজেরা আত্মঘাতী গোল করলেও পরে আর কোনো ভুল করেনি মরক্কো। গ্রুপ সেরা হয়ে তারা পা রাখল শেষ ষোলোয়।
দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতল মরক্কো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোনো আসরে পেল একাধিক জয়।
সম্ভাবনায় হয়তো সবচেয়ে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল মরক্কোকেই। আফ্রিকার এই দেশটিই দেখাল সবচেয়ে বড় চমক। ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডার সঙ্গে এক গ্রুপে পড়েও অপরাজিত থেকে গেল পরের ধাপে।
দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা মরক্কো। দুই ড্র ও এক জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের শেষটা হলো হতাশায় ভরা। ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থেকে বিদায় নিলেন এদেন আজার-কেভিন ডে ব্রুইনেরা।
কানাডা ফিরল শূন্য হাতে। অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডে বসল এল সালভাদরের সঙ্গে। এই দুটি দলই কেবল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ছয় ম্যাচে হেরেছে।
হার এড়ালেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত। তবে ড্রয়ের জন্য নয়, মরক্কো শুরু থেকেই খেলে আক্রমণাত্মক ফুটবল।
কানাডা গোলরক্ষকের অমার্জনীয় ভুল কাজে লাগিয়ে চতুর্থ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। ডিফেন্ডারের দুর্বল ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে ডি-বক্সের বাইরে চলে আসেন গোলরক্ষক মিলান বোরিয়ান। জোরাল শট না নিয়ে কিংবা কোনো সতীর্থকে বল না বাড়িয়ে তিনি নেন লক্ষ্যহীন শট। ছুটে এসে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জাল খুঁজে নেন জিয়াশ!
পঞ্চদশ মিনিটে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তাহোন বিউকানান। কাইল ল্যারিনের ক্রসে দূরের পোস্টে ঠিকভাবে শট নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড।
২৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এন-নেসিরি। এই গোলে যথেষ্ট দায় আছে কানাডার কামাল মিলার ও স্টিভেন ভিটোরিয়া। পেছনে থাকার পরও মাঝমাঠ থেকে আসা বলের কাছে তাদের আগে যান এন-নেসিরি। ওই দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন সেভিয়ার এই ফরোয়ার্ড।
অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে ৪০তম মিনিটে সৌভাগ্যের গোলে ব্যবধান কমায় কানাডা। স্যামুয়েল অ্যাডাহকুবির ক্রস নায়েফ আগের্দের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। ঝাঁপিয়ে হাত ছোঁয়াতে পারলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।
চলতি আসরে এটা প্রথম আত্মঘাতী গোল, বিশ্বকাপের ইতিহাসে শততম।
যোগ করা সময়ে এন-নেসিরি জালে বল পাঠান। কিন্তু সে সময়ে আগের্দ গোলরক্ষকের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকায় অফসাইডের জন্য মেলেনি গোল।
দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণে মনোযোগ বাড়ায় মরক্কো। আক্রমণাত্মক ফুটবলে চাপ বাড়ায় কানাডা। ৭১তম মিনিটে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল তারা। অ্যাটিবা হাচিনসনের হেড ক্রসবারে লেগে, গোললাইনে পড়ে ফিরে আসে। এরপরও সুযোগ ছিল। কিন্তু অ্যালিস্টার জন্সটন হেড একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। বেঁচে যায় মরক্কো।
এরপর আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে দলটি। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ করে কানাডা। কিন্তু গোলের তেমন কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি তারা। আগেই বিদায় নিশ্চিত হওয়া দলটি বিদায় নিল টানা তিন ম্যাচ হেরে।
১৯৮৬ আসরের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব পার হওয়া মরক্কোর সামনে এখন নতুন উচ্চতা স্পর্শের হাতছানি।