রাজনীতি

সিলেটের মেয়র আরিফুলের সমালোচকদের একহাত নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার বিকাল ৩টায় স্থানীয় রেজিস্ট্রারি মাঠে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপিদলীয় হওয়ায় শুরু থেকেই এই আয়োজনে যোগদান না করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সব জল্পনা-কল্পনা ভেঙে অবশেষে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

তবে অবস্থান থেকে সরেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যোগ দেয়নি এই অনুষ্ঠানে। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্যও দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সিলেটের উন্নয়নে দল ও মতের বিবেচনা নয়, উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিতে হবে। স্বাগতিক বক্তব্যে সিটি মেয়র আরিফুর হক চৌধুরীও নগরীর উন্নয়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি জানান।

বুধবার দুপুর থেকে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠের সংবর্ধনা অনুষ্ঠাস্থলে দল-মত নির্বিশেষে লোকজন আসতে থাকেন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় রেজিস্ট্রারি মাঠ। বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর বিভিন্ন সময় আওয়ামীবিরোধী বক্তব্য প্রদানের অজুহাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা ‘বয়কট’ করলেও যোগ দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমেদসহ অন্যান্যরা।

স্বাগত বক্তব্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট নগরীর উন্নয়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের প্রচেষ্টা তুলে ধরেন। মেয়র বলেন, সাড়ে ২৬ বর্গকিলোমিটারের সিটি করপোরেশন এখন প্রায় তিনগুণ আয়তন বেড়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্টায়।

মেয়র উল্লেখ করেন, সিলেট–ঢাকা ৬ লেনসহ নগরীতে যে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তাতে অনেক অবদান রয়েছে মুহিত ও মোমেনের। একটি মডেল নগরী গড়তে দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতাও চান আরিফুল হক চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. একে আবদুল মোমেন শুরুতেই সিলেট সিটি করপোরেশনকে এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের প্রতি খুব সদয়। সিলেটের উন্নয়নে বরাদ্দ দিতে তিনি দ্বিধা করেন না। না চাইতেও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সিলেট অনেক কিছু পাচ্ছে। সিলেট নগরীর উন্নয়নে ১২২৮ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা-রাস্তাঘাট উন্নত হচ্ছে। এয়ারপোর্ট অত্যাধুনিক হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষা খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যেকটি কলেজে বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে মডেল সিলেট গড়ে তোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, টাকা শুধু পাইলেই হয় না। টাকা কাজে লাগাতে হয়। টাকা আগেও দিয়েছিলেন আমাদের অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ফেরত গেছে। বর্তমান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা টাকা কাজে লাগাচ্ছেন। যার ফলে সিলেটের উন্নয়ন হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সিলেট নগরী আপনার-আমার সবার। কে কোন মতের-দলের সেটা দেখার বিষয় নয়। আমরা সবাই সিলেটের, এটাই মূল বিষয়। এখানের ছেলে আমি, আমাদের সবার হৃদয়ে সিলেট। সিটি মেয়র আরিফুল হকের সমালোচনাকারীদের একহাত নিয়েছেন ড. মোমেন। তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে কেউ কেউ বলেন যে, মেয়র অন্য দলের। সুতরাং আপনি উনার অনেক প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না। আমি বলি, সিলেট তো আমারও। মেয়র সাহেবেরও (আরিফের)। সুতরাং বৃহত্তর সিলেটের মঙ্গলের জন্য সব করতে হবে।

ড. একে আবদুল মোমেন আরও বলেন, আমাকে কেউ কেউ বলেছেন- আজকের আয়োজন আরিফ করেছেন। আমি বলেছি- আরিফ সাহেব করে নাই, করেছে সিটি করপোরেশন, বরং আপনাদের লজ্জা লাগা উচিত এই কারণে যে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে এত ভালো কাজ করছেন, একজন অন্য দলের লোক সেটি স্বীকার করছে। সেটা গ্রহণ করতেছে। আপনাদের তো ভালো লাগার কথা। আমি তো হলাম উসিলা মাত্র। তারা আমাকে নয়, সম্মান দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। যিনি আমাদের প্রতি সদয় হয়ে এতকিছু করছেন। সুতরাং সিলেটের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *