সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেসারদের মানসিকতার উন্নতি দেখে সন্তুষ্ট পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড।
মাঝে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল অ্যালান ডোনাল্ড। তার দুই পাশে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও ইবাদত হোসেন। সিলেটে তোলা ছবিটি সাড়া জাগিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ডোনাল্ডের কোচিংয়ে বাংলাদেশের পেস বোলারদের যে জাগরণ, তারই প্রতিরূপ যেন ছবিটি। তাসকিন-ইবাদতদের গুরু হয়ে ডোনাল্ডও খুশি নিজের শিষ্যদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিং করতে হয়নি বাংলাদেশকে। রেকর্ড গড়া জয় পাওয়া প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন ইবাদত। তাসকিন ৬ ওভারে স্রেফ ১৫ রান দিয়ে নেন ২ শিকার। উইকেট না পেলেও ডোনাল্ডের মতে, আইরিশদের ভুগিয়েছেন আরেক পেসার মুস্তাফিজ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় সিরিজের ট্রফি নিজেদের করতে শেষ ওয়ানডে জিততে হবে বাংলাদেশকে।
কিন্তু ম্যাচের আগের দিন স্বাগতিকদের সংবাদ সম্মেলনে সিরিজ নিয়ে তেমন কোনো কথাই হলো না। পেস বোলিং কোচ ডোনাল্ডকে বেশিরভাগ উত্তর দিতে হলো দলের পেসারদের নিয়ে।
“দলগতভাবেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল। আমরা এই মানসিকতার কথাই বলে আসছি। সেদিন তারা যেমন বোলিং করেছে, তা দেখা সত্যিই দারুণ ছিল। তিনজনই খুব প্রভাব রেখেছে এবং (ব্যাটসম্যানের মনে) প্রশ্ন জাগিয়ে সুযোগ তৈরি করেছে। এটি দেখা সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল।”
নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় যেন নেমেছেন পেসাররা, সেখানে আলাদা একটা জায়গায় আছেন ইবাদত হোসেন। গত বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন ছিলেন। এরপর থেকে যখনই যে সংস্করণে সুযোগ পেয়েছেন নিজের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন গতিময় এই পেসার।
প্রায় বছরখানেক ধরে ইবাদতের সঙ্গে কাজ করা ডোনাল্ডও ২৯ বছর বয়সী ইবাদতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
“ঠিক ১২ মাস আগে জোহানসবার্গে আমাদের দেখা হওয়ার পর থেকে তো সে (ইবাদত) তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সে ক্রমাগত মুগ্ধ করে চলেছে। আপনি যদি বলেন তার একটি জায়গায় উন্নতি করা প্রয়োজন, আমি এখনও সেটি খুঁজছি।”
পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা ইবাদতের বোলিংয়ের গতি নজর কেড়েছে ডোনাল্ডের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ইবাদতের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৯.৬ কিমি। সেদিন গড়ে ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টার আশপাশে গতিবেগে বোলিং করেন তিনি।
“ইবাদতের ব্যাপারে যা ভালো লাগে যে, সে সবসময় ম্যাচে থাকে। চার-ছয় হজম করলেও ব্যাপার নয়। প্রতি ম্যাচেই উইকেটের তালিকায় তার নাম থাকবে। সে এমন একজন বোলার, যেখানে গতি বড় প্রভাবক হতে পারে সেখানে ১৪৫ থেকে ১৪৮ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বোলিংয়ের জন্য প্রস্তুত। সেদিনও সে এটি করে দেখিয়েছে।”
“সে দুর্দান্ত অ্যাথলেট। তার সঙ্গে কাজ করা আনন্দের। অসাধারণ প্রতিভা। একটি ফাস্ট বোলিং প্রতিযোগিতা (পেসার হান্ট) জিতে সে এখন আজকের জায়গায়। সে ধারাবাহিকভাবেই তিন সংস্করণে খেলতে পারে।”
শুধু ইবাদত নয়, দলের সব পেসারদের নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও ধারণা দিলেন ডোনাল্ড।
“সবার সঙ্গে আমরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজ করছি। অন্য কিছুর চেয়ে ট্যাকটিক্যাল বিষয় নিয়েই বেশি। তিন সংস্করণেই আমরা প্রতিবার ম্যাচে ব্যবহার করার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করি। গ্রুপ হিসেবে আমরা এভাবে কাজ করি।”
“যখন এই (পেস বোলিং) গ্রুপের সঙ্গে আমার দেখা হয়, আমি এসেই প্রশ্ন শুরু করে দিই না। আগে বসে তাদের কথা শুনি তারপর প্রশ্ন করি। ওদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করি, তাদের খেলা এখন কোথায় আছে এবং আমার থেকে কী চায়।”
পেসারদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া সবিস্তরে জানান দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি।
“আমার মনে হয়েছে এই গ্রুপের আরও ভালো করা প্রয়োজন। তারপর আমরা তাদের ওপর থেকে ব্যর্থতা ও হতাশার ভয় দূর করে দিলাম, লড়াই করার চেয়ে ফল নিয়ে ভাবতে বারণ করলাম… এই পর্যায়ে আপনি যদি ভাবেন যে পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন কি না, তাহলে আপনার কোনো জায়গা নেই। এই চিন্তাটা দূর করতে হয়েছে আমাদের।”
“এরপর আমার কাজ ছিল মানসিকতায় মনোযোগ দেওয়া। এক পর্যায়ে মানসিকতাই সব কিছু। অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হবে। এই বিষয়ে পেস বোলিং গ্রুপের আস্থার জায়গায় যেতে ৪-৫ মাস সময় লাগে আমার। বার্তাটা পরিষ্কার ছিল, ভুল করা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমিও ভুল করেছি এবং ভুল করা একদম ঠিক আছে। আমার মনে হয়, তারা এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ায় আমরা এখন উন্নতিটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সঠিক জায়গায় লড়াই করতে পারছি।”
কোচ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করলেও, দিন শেষে মূল কাজ যে পেসারদের সেই কথাও মনে করিয়ে দেন ডোনাল্ড।
“আমি শুধুমাত্র একটা পরিকল্পনা দিতে পারি। তাদের যদি এটি পছন্দ না হয়, তাহলে এর শেষটা ভালো হবে না। ভালো লাগার বিষয় হলো, এই গ্রুপের মধ্যে দারুণভাবেই সেই বিশ্বাসটা আছে।”
“এই গ্রুপকে আরও বড় করার জন্য আরও কয়েক তরুণকে যোগ করা ভালো হবে। যাতে আমরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাতে পারি এবং দেখতে পারি আমাদের কাছে কী আছে। দলের মধ্যে একটা বন্ধনের বিষয় আছে। কোনো দিন যদি ইবাদত ভালো না করে, তাহলে তাসকিন আছে করে দেওয়ার জন্য। এই মানসিকতা দেখাটা দারুণ। তারা যেভাবে একে অন্যের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, এর দারুণ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।”