অর্থনীতি

খেলাপি ঋণের অর্ধেকই সরকারি ৫ ব্যাংকে

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি বড় খেলাপির কাছেই যেমন আটকে রয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। তেমনি সরকারিসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকেই রয়েছে খেলাপি ঋণের সিংহভাগ। ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৫ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে।

খেলাপি ঋণে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে রয়েছে মোট খেলাপির ৪৮ শতাংশ। একইভাবে সম্পদের দিক থেকেও মোট সম্পদের ৩১ শতাংশ রয়েছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে। মোট সম্পদের ৪২ শতাংশ রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতি তিন মাস পরপর আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে এসব প্রতিবেদন কোনো প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে প্রকাশ করত। এবার তা প্রকাশ করল সাড়ে ৬ মাস পর।

প্রতিবেদনে দেশের আর্থিক খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে ঝুঁকির বিষয়গুলো যেমন রয়েছে, তেমনি সম্ভাবনার বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত মার্চের তুলনায় জুনে ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান কমেছে। তবে মুনাফার প্রবণতা বেড়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ কিছুটা বাড়লেও মুনাফা কমেছে। ব্যাংক ও আর্থিক দুই খাতেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব দেশে আর্থিক খাতে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবে ডলার সংকট বেড়েছে। আমদানি কমেছে। সব মিলে বৈশ্বিকভাবে দেশের আর্থিক খাত চাপের মধ্যে রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ খেলাপি ঋণই রয়েছে ৫টি ব্যাংকে। এসব ব্যাংকের সবগুলোই সরকারি খাতের। বাকি ৫২ শতাংশ অন্য ব্যাংকে। এ হিসাবে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে। খেলাপি ঋণের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে আটকে রয়েছে মোট খেলাপির ৬৫ শতাংশ। অন্য ব্যাংকে রয়েছে ৩৫ শতাংশ। আগে এ হার আরও কম ছিল। বর্তমানে কিছু ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন এর পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেশি মাত্রায় কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে পড়েছে।

একইভাবে মোট সম্পদের ৩১ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের হাতে। বাকি ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৬৯ শতাংশ। শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে সম্পদ রয়েছে ৪৫ শতাংশ। অন্য ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৫৫ শতাংশ। ২ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে মাত্র ৭টি ব্যাংকের কাছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২ শতাংশের কম খেলাপি ছিল ১০টি ব্যাংকের কাছে। এ হিসাবে ৩টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২ শতাংশের বেশি থেকে ৩ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪টি ব্যাংকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৮টি ব্যাংকে। অর্থাৎ ছয় মাসে ৪টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ৩ শতাংশের বেশি থেকে ৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ১৭টি ব্যাংকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২০টি ব্যাংকে।

আন্তর্জাতিকভাবে ৩ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়। বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়। এ হিসাবে ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩৩টি ব্যাংকের। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৩টি ব্যাংকই খেলাপি ঋণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে গত জুনে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশই খেলাপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *