আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর ছিলেন শিরিন

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংঘাত নিয়ে খবর পরিবেশনকারী নারী সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ছিলেন টেলিভিশনের পর্দায় এক পরিচিত মুখ। সাহসী বর্ণনার জন্য আরব বিশ্বে পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছিলেন শিরিন।

আল জাজিরার এই নারী সাংবাদিক গত বুধবার (১১ মে) ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সংবাদ সংগ্রহের সময় নিহত হন। তবে তিনি ছিলেন সেই প্রবীণ টেলিভিশন সংবাদদাতা, যিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন।

জেরুজালেমে জন্ম নিলেও মার্কিন নাগরিকত্ব ছিল শিরিনের। টনি আবু আকলেহ নামে এক ভাই রয়েছে তার। বন্ধুরা এবং সহকর্মীরা শিরিনকে একজন সাহসী ও দয়ালু সাংবাদিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম তুলে ধরেছেন শিরিন। অবশ্য কেউ কেউ তার বিখ্যাত ‘সংক্রামক হাসি’র কথা উল্লেখ করতেও ভুলেননি।

শিরিনের সহকর্মী এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে আল জাজিরার প্রতিনিধি নিদা ইব্রাহিম বলেছেন, শিরিনকে হারানো অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন দয়ালু এবং নিবেদিতপ্রাণ। তার প্রতিবেদনগুলোতে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। তিনি তার কাজ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতেন এবং সুক্ষ্মতা বুঝতেন।

ইব্রাহিম অশ্রুসিক্ত অবস্থায় কথা বলছিলেন। তিনি শিরিনকে ‘অনন্য মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

শিরিনের বিনয় এবং ব্যক্তিত্বের শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করে ইব্রাহিম আরও জানান, মৃত্যুর আগেও শিরিন হিব্রু শিখছিলেন। তিনি ইসরায়েলি মিডিয়ার বর্ণনাগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে চাইছিলেন।

শিরিন বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত কভার করেছেন। তবুও তিনি নতুন কিছু শিখতে এবং নতুন উপায় ব্যবহার করে প্রতিবদন চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন।

১৯৭১ সালে জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন শিরিন। তিনি একজন খ্রিস্টান, জর্ডানের ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছেন। এর আগে পড়েছিলেন স্থাপত্য বিষয়ে। স্নাতক হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনে ফিরে যান। সে সময় ভয়েস অব ফিলিস্তিন রেডিও এবং আম্মান স্যাটেলাইট চ্যানেলসহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেটে কাজ করেন।

১৯৯৬ সালে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কে যোগ দেন শিরিন। তখনও আল জাজিরার বয়স মাত্র এক বছর।

এক ভিডিও বার্তায় শিরিন বলেছিলেন, মানুষের কাছাকাছি থাকার জন্য আমি সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছি। সত্য পরিবর্তন করা সহজ নাও হতে পারে। তবুও আমি ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।

একজন টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে শিরিন ২০০৮, ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০২১ সালের গাজার যুদ্ধ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরে উত্তর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ছয় ফিলিস্তিনির ঘটনা তুলে ধরেছেন। তিনি ২০০৬ সালে লেবাননের যুদ্ধসহ এই অঞ্চলের খবরও কভার করেছিলেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক ডালিয়া হাতুকা বলেন, শিরিন একজন পথপ্রদর্শক। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি যখন ছোট ছিলেন মা-বাবাকে হারিয়েছেন। ফিলিস্তিনে দেখা নিষ্ঠুরতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং সেখানে তার উপস্থিতি আল জাজিরার সমার্থক হয়ে উঠেছিল। এমনকি রামাল্লায় সেনারাও ব্যঙ্গ করে শিরিনের বিখ্যাত সমাপনী লাইনটি বলতেন: শিরিন আবু আকলেহ, আল জাজিরা, রামাল্লা।

এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক শিরিনের হত্যাকাণ্ডকে ‘সরাসরি হত্যা’ এবং ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। এছাড়াও সাংবাদিকদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।

তবে ইসরায়েলি বাহিনী সাংবাদিকদের টার্গেট করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং শিরিনের মৃত্যু নিয়ে একটি যৌথ তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে।

শিরিনের সহকর্মী তামের আল-মেশাল বলেন, শিরিন ফিলিস্তিন এবং আরবে সাংবাদিকদের জন্য মডেল ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তার কাজে পেশাদার এবং ধৈর্যশীল ছিলেন।

আল জাজিরাকে পাঠানো শিরিনের শেষ বার্তাটি ছিল সকাল ৬টা ১৩ মিনিটে। তিনি সেখানে জেনিন শহরের খবর ও ছবি পাঠানোর কথা বলছিলেন।

তবে আল জাজিরার সহকর্মী এবং দর্শকরা জানতেন না, যে সংবাদটি তিনি পাঠাবেন তা তার মৃত্যুর সংবাদ।

 

আলজাজিরার সাংবাদিককে মাথায় গুলি করে হত্যা করল ইসরাইল

================================================

অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক নারী সাংবাদিকের মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা।

নিহত ওই সাংবাদিকের নাম শিরীন আবু আকলেহ। বুধবার ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে জেনিন শহরে ইসরাইলি সেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। খবর আলজাজিরার।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার জেনিন শহরের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর চালানো অভিযানের প্রতিবেদন কভার করতে গেলে নারী ওই সাংবাদিককে ইসরাইলি সেনারা গুলি করে, এতে তিনি নিহত হন।

আলজাজিরার আরেক সাংবাদিক নিদা ইব্রাহিম বলেছেন, কেন সংবাদিক শিরীন আবু আকলেহকে গুলি করা হয়েছে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই ঘটনায় সামনে আসা একটি ভিডিওতে আবু আকলেহকে মাথায় গুলি করা হয়েছে বলে দেখা গেছে।

এ সময় জেরুজালেমভিত্তিক কুদস পত্রিকার আলী সামওদি নামে আরেক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের পিঠে গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *