ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালিয়ে রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড়ে পড়া এবং কিইভে বিদেশি সামরিক সহায়তার ঢেউ শুরু হওয়ার তিনমাস পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিষ্কার করে জানালেন, যুক্তরাষ্ট্র মস্কোয় শাসন ক্ষমতা পরিবর্তন করতে চাইছে না।
‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার মতামত কলামে এক লেখনীতে বাইডেন বলেছেন, “যদিও আমি (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিনের সঙ্গে একমত নই, আর তার কর্মকাণ্ডও ভয়ানক মনে করি…তারপরও যুক্তরাষ্ট্র মস্কোয় তাকে উৎখাতের চেষ্টা করবে না।”
“যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা যতক্ষণ পর্যন্ত আক্রান্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সরাসরি সংঘাতে জড়াব না; ইউক্রেইনে যুদ্ধ করতে মার্কিন সেনা পাঠব না কিংবা রুশ বাহিনীকে আক্রমণও করব না। আমরা নেটো জোট এবং রাশিয়ার মধ্যেও সংঘাত চাই না,” বলেন বাইডেন।
ইউক্রেইনকে আরও নিখুঁতভাবে মূল নিশানাগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তোলার জন্য ওয়াশিংটন থেকে সদ্যই দেশটিকে আরও অত্যাধুনিক রকেট সিস্টেম ব্যবস্থাপনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তিনি মস্কোকে এই বলেও আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি ইউক্রেইনকে এই অস্ত্র তাদের ভূখন্ডের বাইরে ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করবেন না।
ইউক্রেইনকে সুনির্দিষ্ট কোনও অস্ত্র ব্যবস্থা দেওয়ার বিষয়টি বাইডেন নাকচ না করলেও সেই অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে শর্তারোপ করছেন বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। “কেবল রাশিয়াকে যন্ত্রণায় ফেলতে আমরা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না,” বলেছেন বাইডেন।
‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানায়, বাইডেন লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য খুবই সোজাসাপ্টা: আমরা একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন, সার্বভৌম এবং সমৃদ্ধশালী ইউক্রেইন দেখতে চাই। আরও কোনওরকম আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার উপায়ও তাদের হাতে থাকা চাই।”
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যেমনটি বলেছেন, শেষপর্র্যন্ত এই যুদ্ধ “কেবল কূটনীতির মধ্য দিয়েই শেষ হতে পারে।” প্রতিটি আলোচনাতেই মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটছে। আমরা দ্রুতই ইউক্রেইনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিতে তৎপর হয়েছি। যাতে তারা রণক্ষেত্রে লড়তে পারে এবং আলোচনার টেবিলে শক্ত অবস্থানে থাকতে পারে।
“সে কারণেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা ইউক্রেইনকে আরও অত্যাধুনিক রকেট ব্যবস্থা এবং অস্ত্র দেব, যাতে করে তারা ইউক্রেইনের ভেতরে রণক্ষেত্রের মূল নিশানাগুলোতে আরও সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে পারে”, লেখেন বাইডেন।
পুতিনকে নিয়ে বাইডেন এবার যে মন্তব্য করেছেন, তাতে রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বাইডেনের আরও আগে করা একটি মন্তব্যেরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা বেরিয়ে এসেছে। ইউক্রেইনে হামলা করায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ক্ষমতায় থাকতে পারেন না’ বলে গত মার্চে পোল্যান্ডে এক ভাষণে মন্তব্য করেছিলেন বাইডেন।
সেই সময় বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, বাইডেনের এমন মন্তব্য যুদ্ধের আগুনে আরও ঘি ঢেলে দেবে। রাশিয়া সরকারের এক মুখপাত্র একে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা তখন চটজলদি বিষয়টিকে হালকা করারও চেষ্টা নেন।
বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা তখন যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, “প্রেসিডেন্ট বাইডেন আসলে এটাই বলতে চেয়েছেন যে, পুতিনকে রাশিয়ার প্রতিবেশীদের ওপর কিংবা ওই অঞ্চলের ওপর ক্ষমতা জাহির করতে দেওয়া যাবে না।”