রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী এবং ধর্ম, মত বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে কাউকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। পুরো জাতি একটি পরিবার। পরিবারের ভেতরে মতভেদ থাকতে পারে, ব্যবহারের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু পরিবার একটি অটুট জিনিস—এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। আমরা যেন জাতি হিসেবে এই অটুট পরিবার হয়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

আজ রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যত ধর্মীয় পার্থক্য থাকুক, মতের পার্থক্য থাকুক, রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই বৈষম্য করার। রাষ্ট্র দায়িত্ববদ্ধ সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়ার জন্য। সে যেই ধর্মেই বিশ্বাস করুক, যে মতবাদেই বিশ্বাস করুক, ধনী হোক কিংবা গরিব—রাষ্ট্রের কাছে সে একজন নাগরিক। নাগরিকের সকল অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র আমাদের তালিকা করে দিয়েছে আমার প্রাপ্য কী। কোনো সরকারের অধিকার নেই কাউকে বঞ্চিত করার, সামান্যতম পরিমাণেও নয়। আমরা নাগরিক—আমাদের প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা যাবে না। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে।’

নাগরিক অধিকার প্রসঙ্গে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যত কথাই বলুন, তার মধ্যে বারে বারে বলুন—আমি এ দেশের নাগরিক, আমার সংবিধান প্রদত্ত সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তখন দেখবেন সবাই আপনাদের সঙ্গী হবে। সারা দেশের মানুষ একসঙ্গে থাকবে, কারণ সবার সমস্যাই একই—নিজের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’

নাগরিক অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বারবার লাঞ্ছিত হই, অপমানিত হই, নানা বৈষম্যের শিকার হই। কেন? কারণ নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আমরা হতাশ হয়ে গেছি। এখন আর হতাশ হওয়া চলবে না। নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো—সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা।’

প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই না নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে ধর্ম পালন করতে। আমরা চাই নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে। এ অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ভূমিকা পালন করছে, আমরা এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের ধর্মীয় উৎসব পালনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপের প্রয়োজন হবে না।’

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাও ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমাকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হবে। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। আমি বললাম, যাবই। এই আনন্দ থেকে আমি নিজেকে দূরে রাখতে চাইনি। যদিও শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকার প্রধান হিসেবে আমাকে থাকতে হবে, তাই আমি আগেভাগে এসেছি আপনাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখনও বলেছিলাম—আমরা সবাই একটি পরিবার। পারিবারিক মতভেদ থাকবেই, কিন্তু পরিবার ভাঙবে না।’

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দে প্রমূখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এই ঘোষণা চার বছরে আগের।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, পত্রিকায় লেখা হয়েছে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মুখোমুখি। তবে হেডলাইন লেখা উচিত ছিল, ফিলিস্তিন বাংলাদেশের মুখোমুখি। কেননা চার বছর আগে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ছিলো সাইপ্রাসের। তবে ফিলিস্তিন অনেক পরে এতে যোগ দেয়। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। যোগাযোগ করাটা স্বাভাবিক ছিল।

কাতারে ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি যৌথ আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, কাতারে খুবই অপ্রত্যাশিভাবে ইসরায়েল একটি হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। তবে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকদের মেরে ফেলা খুবই অদ্ভুত বিষয়।

তিনি আরও বলেন, সমঝোতার লক্ষ্যে যে আলোচনা, সেখানে আলোচকদের মেরে ফেললে আলোচনা হবে কী করে। আর সেখানে সেই ঘটনাই ঘটেছে। কাতারে আমাদের মূল আলোচনা ছিল, এ ঘটনায় কাতারের প্রতি সমর্থন ও সমবেদনা জানানো। আর ইসরায়েল যে গর্হিত কাজ করেছে তার নিন্দা জানানো। সেটাই আমরা করেছি।

রাজনীতি

কিছু আসন বেশি পাওয়ার লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলে ভয়ঙ্কর পরিণতি নিয়ে আসবে, এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তার মতে, জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে দলীয় স্বার্থের চিন্তা করলে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে, আর পতিত স্বৈরাচার সুযোগ নেবে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করার সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা একটা পরীক্ষিত পদ্ধতি। তার বাইরে কেউ যদি রাজনৈতিক স্বার্থে অথবা কিছু আসন বেশি পাওয়ার লোভে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, সেটা জাতীয় জীবনের জন্য একটা ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সূচিতে নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব না থাকলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ আন্দোলনে নামলে রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবেলা করবে বিএনপি।’

সঠিক সময় নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীল সরকার গঠন করলে না পারলে জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বৈধ প্রক্রিয়ায় সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন হবে, এমন প্রস্তাবে বিএনপির সমর্থন থাকবে বলেও জানান দলটির জ্যেষ্ঠ এ নেতা। তবে এমন কোনও প্রক্রিয়াকে বিএনপি উৎসাহিত করবে না, যেই বিধান ভবিষ্যতে দেশে অরাজকতা তৈরি করবে। আলোচনার টেবিলে যেকোন সমস্যার সমাধান সম্ভব, সে কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ৩১টির মধ্যে ২৬টি দল পিআরের পক্ষে। এর মধ্যে কিছু দল শুধু উচ্চকক্ষে, জামায়াতসহ কিছু দল উভয় কক্ষে পিআর চায়।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের তিনি জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের সাথে।

এ সময় তিনি বলেন, কমপক্ষে একবারের জন্য হলেও পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত।

নায়েবে আমির আরও বলেন, জোর করে কেন্দ্র দখল করে এমপি হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর এই মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি।

এ সময় ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জাতীয়

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলোকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা গেজেট কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে থাকা আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব জানান, আদালত সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, নির্বাচনী আইনের সেকশন ৭ কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না এবং গেজেট কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।

এর আগে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালের পক্ষে গেজেট বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলোকে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

বিনোদন

নিজেকে খুব বেশি পজিটিভ ভাবতে পছন্দ করেন কুসুম শিকদার। এই অভিনেত্রী ও পরিচালক সম্প্রতি বলেছেন, যার থেকে তিনি স্ট্রেস পান, তাকে দ্রুতই ত্যাগ করেন। মোদ্দাকথা ভালো মন নিয়ে ভালো থাকতে চান।

কাজ ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খোলামেলা কথা বলেছেন কুসুম। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি খুব কৃতজ্ঞ মানুষ, মিথ্যা কথা বলি না।’

কুসুম শিকদার বলেন, ‘আমি পজিটিভ মানুষ। আমি পজিটিভ এনার্জির মধ্যে থাকতে পছন্দ করি। আমি খুব কৃতজ্ঞ মানুষ, মিথ্যা কথা বলি না। খুব কম। এই গুণগুলো মানুষকে আমার মনে হয় সুন্দর রাখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্কিন যতখানিই ভালো লাগে দেখতে, আমার মনে হয় আমার মনের কারণে। আমি নেগেটিভ এনার্জি এভয়েড করি। কারো সঙ্গ যদি আমার মনে হয় যে আমাকে স্ট্রেস দেবে, কষ্ট দেবে আমি সেই সঙ্গ ত্যাগ করি। মনটা খুব সতেজ রাখি সবসময়। মনটাই আসলে আসল। রূপচর্চা করি না কখনোই। আমি খাওয়া-দাওয়াটা মেইনটেইন করি। আমি শাক-সবজি খাই, দুধ, দই, গ্রিন টি প্রচুর খাই।’

জাতীয়

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয় আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীন, সিঙ্গাপুর—যে দেশ থেকেই আনা হয় না কেন, তুলনামূলক দর দেখা হয়। বিষয়টি এত সহজ নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানিকে কাজ দিয়ে দেওয়া হবে। আর পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, তা ভালো করে জানিও না আমরা।’

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন।

অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল, এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না।

মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাকসিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যোগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

অ্যাকসিলারেট এনার্জি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উডল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এলএনজি সরবরাহের পাশাপাশি এলএনজি রূপান্তরের ভাসমান টার্মিনাল ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে তারা।

বিভিন্ন দেশের ২৩টি কোম্পানি থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করছে। এর মধ্যে অ্যাকসিলারেট এনার্জিও রয়েছে।

কর্মসংস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেশি কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা–বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায়, সেটা অবশ্যই প্রভাব পড়ে। ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমবে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা ঘাটতিটা কমানোর জন্য কী কী আমদানি করতে পারে, দেখছে। সেখানে মোটামুটি আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’

সার আমদানি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি। চট করে ব্যবস্থা নেব না। বিস্তারিত জানি না, সার আনে বেশির ভাগ কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এটা তাদের দায়িত্ব। বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখব।’

আন্তর্জাতিক

তীব্র বায়ুদূষণের কারণে ঐতিহাসিক মুঘল আমলের দূর্গ লালকেল্লার দেয়াল পুরু কালো আস্তরণে ঢাকা পড়ছে- বলছেন গবেষকরা।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে সেখানকার ঐতিহাসিক মুঘল আমলের দূর্গ লালকেল্লার দেয়ালে ‘কালো আস্তরণ’ তৈরি হয়েছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, লাল বেলেপাথরের এই দূর্গের দেয়ালের সঙ্গে দূষিত পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জমে যাওয়া আস্তরণ ০ দশমিক ০৫ মিলিমিটার থেকে ০ দশমিক ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু।

দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক কেল্লাটির সূক্ষ্ম নকশা ও খোদাই করা কাজ নষ্ট হতে পারে। বিবিসি জানায়, সপ্তদশ শতকে নির্মিত লালকেল্লার ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে এটিই এ ধরনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লির বায়ুর মানের অবনতি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়, বিশেষ করে শীতকালে।

সংরক্ষণবিদরা বরাবরই সতর্ক করে এসেছেন যে, রাজধানীসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত সপ্তদশ শতাদ্বীর বিখ্যাত সমাধি তাজমহল বায়ু ও পানিদূষণের কারণে হলদে এবং সবুজাভ-বাদামি হয়ে গেছে।

উত্তর প্রদেশ সরকারকে তাজমহল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নিতে বলেছিল আদালত। এবার লালকেল্লা নিয়ে গবেষণাটি পিয়ার-রিভিউ করে বিজ্ঞান সম্পর্কিত জার্নাল ‘হেরিটেজ’-এ প্রকাশ করা হয়েছে জুনে।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারত ও ইতালির গবেষকরা এ গবেষণা পরিচালনা করেন। মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মিত লালকেল্লা দিল্লির অন্যতম আইকনিক স্থাপনা ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের একদিন পর ১৯৪৭ সালের ১৬ অগাস্টে তৎকালীন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই দূর্গ থেকেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

তখন থেকেই স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে ভাষণ দিয়ে আসছেন। বিবিসি জানায়, গবেষকরা ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দিল্লির বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।

এরপর তারা কেল্লার বিভিন্ন দেয়াল থেকে কালো আস্তরণ সরিয়ে নিয়ে এর রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করেছেন।

তারা দেখতে পান, বাতাসে থাকা সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষক লাল কেল্লার দেয়ালে কালো আস্তরণ তৈরি করেছে এবং এর গম্বুজ, খিলান ও পাথরে সূক্ষ্ম খোদাই করা কাজগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

গবেষকরা দেয়ালে ফোস্কা ওঠা ও দেয়ালের রঙের স্তর আলগা হয়ে যাওয়ারও প্রমাণ পেয়েছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ (বায়ু দূষণকারী সূক্ষ্ম কণার ধরন) সাধারণত কোনও পৃষ্ঠতলে ধূলিকণা জমার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি তখনই হয় যখন এই সূক্ষ্ম কণাগুলো স্থির হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক জায়গায় জমতে থাকে।

দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা এই কণাগুলো পরে সেই পৃষ্ঠতলে দৃশ্যমান হয় কালচে রঙে। গবেষকরা লাল কেল্লা রক্ষায় সময়মতো সংরক্ষণ কৌশল বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

তারা বলছেন, “কালো আস্তরণ জমা একটি ধীরে অগ্রসরমান প্রক্রিয়া, যা সাধারনত প্রথমদিকে পাতলা কালো স্তর হিসেবে শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সরিয়ে ফেলা সম্ভব।”

তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, পাথরের সুরক্ষামূলক আবরণ বা সিল্যান্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোতে প্রয়োগ করে এই কালো আস্তরণ জমা ঠেকানো বা এর গতি ধীর করে দেওয়া যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক

বিদেশে ব্যালট পাঠানো এবং বিদেশ থেকে আনাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করেছে নির্বাচন কমিশন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটে আনতে নির্বাচন কমিশন বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা সাজালেও তাতে সাড়া কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় আছে বিশেষজ্ঞদের।

ইতোমধ্যে নতুন অ্যাপ তৈরিসহ পদ্ধতি উন্নয়নে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিদেশে ব্যালট পাঠানো এবং বিদেশ থেকে আনাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করেছে নির্বাচন কমিশন।

এর বাইরে প্রবাসে এনআইডি সেবা দিতে বাংলাদেশ মিশনে যন্ত্রপাতি স্থাপন, প্রশিক্ষণ, ইসি কর্মকর্তাদের আসা যাওয়ার ব্যয় তো আছেই।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলছেন, ডাকযোগে ভোট নিতে যে খরচ, সেই তুলনায় ভোটদানের হার বেশিরভাগ দেশেই খুব কম হয়। তারপরও দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা বিবেচনা করে তাদের ভোটের সুযোগ দেওয়া ‘জরুরি’।

প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি ডাকযোগে তাদের ভোট নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে জোরেশোরে প্রচারে নেমেছে নির্বাচন কমিশন।

ছয় মাস ধরে বেশ কয়েকটি দেশে ভোটার নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ও কারিগরি টিম সঙ্গে নিয়ে নানা দেশ সফর সূচি রয়েছে।

এনআইডি সেবার সার্বিক কাজে এনআইডি সংক্রান্ত আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিইএ) প্রকল্প থেকেই ব্যয় হচ্ছে সিংহভাগ অর্থ। ভোটের জন্য নিবন্ধনে ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ আসছে। আর ব্যালট পেপার ছাপানো থেকে প্রবাসে আনা নেওয়ায় ব্যয় প্রাক্কলনের কাজ চলছে।

প্রবাসে এনআইডি সেবা শুরুর পর প্রশাসনিক ও কারিগরি টিমের সঙ্গে ইসি কর্মকর্তাদের যেতে হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, জাপান, কানাডা, ইতালি, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে। কিছু কর্মকর্তা একাধিক দেশেও গেছেন।

অক্টোবরে চার সদস্যের কারিগরি টিম ও দুই সদস্যের প্রশাসনিক টিম করে তাদের দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মালদ্বীপ ও জর্ডানে যাওয়ার কথা রয়েছে।

সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বর্তমানে কানাডায় এবং নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় রয়েছেন উদ্বোধনের কাজে। আইডিইএ প্রকল্প থেকে পর্যায়ক্রমে সব কমিশনারকে প্রবাসে এনআইডি সেবা চালু ও ভোট ব্যবস্থার কাজে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “ইতোমধ্যে আরপিওতে প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে; এটা নিয়ে গাইড লাইন দেওয়া হবে। মার্কাসহ ব্যালট পাঠানো হবে তাদের কাছে।

“প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিংয়ের বিষয়ে আমরা সবাই উদ্যোগী, সচেতন। এজন্য ব্যাপক সচেতনতা ও প্রচার দরকার।”

ইসি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা’ বজায় রেখেই ব্যয় নির্বাহ করার কথা বলেছেন এ নির্বাচন কমিশনার।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক লাখ প্রবাসীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের কথা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে ১০টি দেশের ১৭টি মিশনে অর্ধ লাখ আবেদন জমা পড়েছে; যার মধ্যে নিবন্ধন সেরেছেন ৩০ হাজারের মত, আর ভোটার হয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার।

খরচ কত?

পোস্টাল ভোটিংয়ে কত খরচ হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো হিসাব এখনো নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।

তবে পোস্টাল ভোটিং সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও পরামর্শক সালিম আহমাদ খান এর আগে বিডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, প্রায় ১০ লাখ প্রবাসীকে পোস্টাল ভোটিংয়ে আনার লক্ষ্য ধরে তারা কাজ করছেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যয়ের বিষয়টি নির্ভর করবে ব্যালট আনা-নেওয়ায় ডাক বিভাগ শেষ পর্যন্ত কত খরচের প্রস্তাব রাখবে এবং কতজন ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করবেন, তার ওপর।

৮ থেকে ১০ লাখ প্রবাসীর যদি ভোট দিতে চান, তাহলে সব মিলিয়ে ৪০০ কোটি টাকার মত ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

গেল জুন মাসে ডাক বিভাগ বলেছিল, ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে।

পরে ৭ অগাস্ট নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, “শুধু একটা পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়া করতে গড়ে লাগবে আনুমানিক ৫০০ টাকা। এর বাইরেও ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হবে। সে হিসাবে প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য ছয় থেকে সাত কোটি টাকা লাগবে।

সম্ভাবনা কতটা?

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, “ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী ভোটার রয়েছে, যাদের ব্যাপক অবদান রয়েছে দেশ গঠনে, অর্থনীতিতে এবং জুলাই আন্দোলনেও ভূমিকা ছিল। তাদের ভোটের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

“শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় প্রবাসী ভোটিংয়ের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু এটার রিটার্ন বা ভোটার টার্নআউট খুব কম। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে (প্রবাসী ভোটিংয়ের) এভারেজ টার্নআউট ৩ শতাংশের বেশি হয় না।”

তিনি বলেন, ভারতেরও বিপুল সংখ্যক ভোটার দেশের বাইরে থাকে। তাদের টার্নআউটও ৩ শতাংশের বেশি হয় না।

“এত অর্থ ব্যয় করে ৩-৫% ভোট দিলেও প্রবাসীদের অবদানের কথা বিবেচনা করে ভোটিং নিশ্চিত করা জরুরি।”

আব্দুল আলীম বলেন, “আমি জানি না, অনুমান করছি- নির্বাচন কমিশন বিধির বাইরে গিয়ে কোনো ব্যয় করতে পারবে না; তারা যেভাবে বিদেশে গেলে পারডিয়াম (পারিতোষিক) পায়, এর বাইরে পাওয়ার সুযোগ নেই। সেটা অনুসরণ করেই কাজটা করছেন।

“সচেতনতা ছাড়া প্রবাসী ভোটিংয়ের কাজটা সম্ভবও না। কীভাবে ব্যালট যাবে, ভোট দেবে-পুরো প্রক্রিয়ার জন্য ভোটার অ্যান্ড সিভিক এডুকেশন দরকার। এর বিকল্প নেই।”

সচেতনতার কাজে প্রবাসে কিছু সংগঠনকেও কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন এ বিশ্লেষক। তিনি মনে করেন, ইসির বিভিন্ন টিমের বিদেশ ভ্রমণকে ‘ভ্রমণ বিলাস’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

“আমার মনে হয় না এটা (ভ্রমণ বিলাস)। অর্থব্যয় হলেও প্রবাসী ভোটিং নিশ্চিত করা জরুরি। নিশ্চয় বর্তমান ইসি গত তিনটি নির্বাচন (থেকে শিক্ষা নেবে)।”

বর্তমানে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়নি।

আব্দুল আলীমের ভাষ্য, একাদশ-দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের কিছু সফরে গিয়েছিলেন তৎকালীন ইসি কর্মকর্তারা। যদিও প্রবাসী ভোটিংয়ে তেমন সফলতা আনতে পারেননি তারা।

“নিশ্চয় ইসির কাছে সে লার্নিংটাও আছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এ কাজটা করবে। এখন মানুষের চোখ ইসির প্রতি, নির্বাচনের প্রতি। কমিশন কী করছে–মানুষ দেখছে। প্রবাসী ভোটিং নিশ্চিত করার জন্যই এখন সব উদ্যোগ হচ্ছে।”

ছয় বছর আগে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এনআইডি সেবা দিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তার চার বছরের মাথায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এনআইডি সেবা চালু হয় আরেক ইসির আমলে।

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন সেই দুই ইসির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কারাবন্দি; তাদের আমলের ভোটে অনিয়ম ও ইভিএম কেনাকাটা নিয়ে চলছে তদন্ত। এর মধ্যে ইভিএম বাদ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান ইসির তৎপরতা

প্রবাসে এনআইডি সেবা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ভোট নিয়ে মতবিনিময় সভা করতে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন সেপ্টেম্বরের শুরুতে কানাডা সফর করেছেন। টরন্টো ও অটোয়ায় বাংলাদেশ মিশনে প্রবাসীদের স্মার্টকার্ড সেবা চালু করেছেন তিনি। লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন তার সফরসঙ্গী।

ইসির এনআইডি সংক্রান্ত আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসে টু সার্ভিস (আইডিইএ) প্রকল্প-২ এ সফরের ব্যয়ভার বহন করে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার মালয়েশিয়া সফরে থাকছেন ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর। তিনি সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও এআইডি বিতরণ কাজের উদ্বোধন করেছেন।

আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটিং বিষয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্মকর্তা ও কমিউনিটির সঙ্গে জনসচেনতামূলক সভা করেছেন আনোয়ারুল। তার সফরসঙ্গী হয়েছেন রাজবাড়ী জেলা নির্বাচন অফিসার।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ফ্রান্স সফর করবেন ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর।

ব্ল্যাঙ্ক স্মার্ট কার্ডের প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বিষয়ে এ সফর হচ্ছে। তার সঙ্গে থাকবেন আইডিইএ প্রকল্প (পর্ব ২) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

এ সফরে পিএসআইয়ের পাশাপাশি ফ্রান্সের বাংলাদেশ মিশন অফিসে প্রবাসী ভোটিং (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং-ওসিভি) নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সভা করার কথা রয়েছে।

এরপর ১৫-১৬ অক্টোবর সুইডেন যাবেন এ নির্বাচন কমিশনার। সেখানে ‘এক্সপার্ট মিটিং অন দ্য প্রটেকটিং ইলেকশন প্রজেক্ট’ এ অংশ নেবেন এবং স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে ওসিভি নিয়ে সভা করবেন।

এনআইডি সেবায় সম্পৃক্ত দূতাবাস সংশ্লিষ্ট জনবলকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের বিষয়ে ইসির নিজস্ব দল (কারিগরি ও প্রশাসনিক টিম) সহযোগিতা করে থাকে।

কোন দেশে প্রবাসীদের জন্য কী উদ্যোগ চলছে

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ২০২৩ সালের মে মাসে দুবাই ও আবুধাবিতে প্রশাসনিক ও কারিগরি টিম যায়। নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে জুলাইয়ে যায় উদ্বোধনী টিম।

সৌদি আরব: ২০২৩ সালের অক্টোবরে রিয়াদ ও জেদ্দায় যায় প্রশাসনিক ও টেকনিক্যাল টিম। নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যায় উদ্বোধনী টিম।

ইতালি: ২০২৩ সালের অক্টোবরে রোম ও মিলানে যায় প্রশানিক ও কারিগরি টিম। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনআইডি সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

যুক্তরাজ্য: বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে কারিগরি টিম যায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। আর ২০২৪ সালে জুনে সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

কুয়েত: ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে কুয়েত সিটিতে যায় কারিগরি ও প্রশাসনিক টিম। একই বছরের মে মাসে সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

কাতার: ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে দোহায় যায় কারিগরি ও প্রশাসনিক টিম। মে মাসে সেবা উদ্বোধন করেন তৎকালীন ইসি সচিব।

মালয়েশিয়া: কুয়ালালামপুরে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে প্রশাসনিক ও কারগির টিম যায়। এ বছরের সেপ্টেম্বরে সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

অস্ট্রেলিয়া: এ বছরের এপ্রিলে ক্যানবেরা ও সিডনিতে ইন্সপেকশন টিম কাজ করেছেন। প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় শেষে টিমের একজন সিঙ্গাপুরেও এ সংক্রান্ত উদ্যোগ পরিদর্শন করে আসেন।

জাপান: টোকিও তে কারিগরি টিম কাজ করার পর অগাস্টে সেবা উদ্বোধন করেন ইসি সচিব।

কানাডা: এবছর এপ্রিলের শুরুতে অটোয়া ও টরেন্টোয় ৫ সদস্যের উচ্চ পযায়ের ইন্সপেকশন টিম যায়। এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে যায় ৫ সদস্যের কারিগরি ও ৬ সদস্যের প্রশাসনিক টিম। কাজ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রেও যান প্রশাসনিক টিমের একজন। অবশেষ সেপ্টেম্বরে কানাডায় এনআইডি সেবা চালু উদ্বোধন করেন সিইসি।

সামনে যেসব দেশে টিম যাবে

যুক্তরাষ্ট্র: নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে দুই সদস্যের প্রশাসনিক টিম এবং মিয়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলসে দুজনের পৃথক টিম যাবে। এর আগে মধ্য সেপ্টেম্বরে চার শহরে মিশন সংশ্লিষ্টদের প্রযুক্তি সরঞ্জাম স্থাপন ও প্রশিক্ষণ দেবেন পৃথক কারিগরি টিম। এসব টিম চারজন করে সদস্য রয়েছেন।

>> ফ্রান্স, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মালদ্বীপ ও জর্ডানে যাওয়ার কথা রয়েছে অক্টোবরে।

কানাডায় বৃহস্পতিবার এনআইডি সেবা চালু করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এজন্য ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে।

আগ্রহী প্রবাসীরা এই অ্যাপে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোটদানের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারবেন। এরপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসনভিত্তিক ব্যালট পেপার আনা-নেওয়ার কাজ করবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

পুরো কাজের তত্ত্বাবধানে ডাক বিভাগ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির অ্যাডহক কমিটির হাতে, যেখানে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধি থাকবেন।

প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে (আইসিপিভি) সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং জেলে বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান রয়েছে।

অর্থনীতি

কোটি টাকার বেশি রয়েছে এমন হিসাবে জুন শেষে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।

দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকা জমা রাখা হিসাবের সংখ্যা জুন প্রান্তিক শেষে আগের তিন মাসের চেয়ে বেড়েছে প্রায় ছয় হাজারটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে এক কোটি টাকা স্থিতি রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি।

তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিক শেষে এমন হিসাব ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি। এ হিসাবে তিন মাসে বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭৪টি ব্যাংক হিসাব।

কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে বেড়েছে এগুলোতে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণও। জুন শেষে এসব হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ বা আমানত দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। তিন মাস আগে যা ছিল ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে দেশে ব্যাংক খাতে মোট হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। তিন মাসে মোট ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। গত মার্চ শেষে তা ছিল ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮২১টি।

ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে আমানতের পরিমাণও বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।

কোটি টাকার হিসাবের তথ্য দিলেও এসব হিসাবের মালিকানা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কতটি সে তথ্য দেয় না বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করার সুযোগ থাকায় কোটি টাকা জমা রাখা গ্রাহকের সংখ্যা কত সেটিও প্রকাশ করা হয় না।