বিনোদন

পবিত্র কাবার আদলে তৈরি হয়েছে স্টেজ আর সেই স্টেজে নাচ-গান করছেন জনপ্রিয় শিল্পী জেনেফার লোপেজ ও সেলিন ডিওন! এমন কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি ফ্যাশন শোতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়!

১৩ নভেম্বর রিয়াদে লেবাননের তারকা ফ্যাশন ডিজাইনার এলি সাবের ক্যারিয়ারের ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটিতে ফ্যাশন শো এর পাশাপাশি ছিলো নাচ-গানের আয়োজনও।

সেই আয়োজনেই খোলামেলা পোশাকে নাচ ও গান পরিবেশন করতে দেখা যায় জেনিফার লোপেজ ও সেলিন ডিওনকে। আর এর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনার ঝড়।

তবে স্টেজে পবিত্র কাবার আদলে কিছু ছিলো না দাবি করে সৌদি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফ্যাশন শো চলাকালীন যেটি দেখা গিয়েছিল সেটি ‘একটি গ্লাস কিউব’।

সৌদি আরবের অ্যান্টি-রিউমার অথরিটি শোতে কাবার ছবি ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।কর্তৃপক্ষ জানায়, এটা শুধু একটা গ্লাস কিউব আকৃতির স্ট্রাকচার, যার সঙ্গে কাবা শরিফের কোনো সম্পর্ক নেই।

সৌদি গণমাধ্যম অভিযোগ করছে, এ সমালোচনার পেছনে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।যারা সৌদি আরব ও দেশটির সংস্কার পরিকল্পনাকে টার্গেট করার চেষ্টা করছে।

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ শুধু তেলের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে না।বস্তুত, দেশটিতে সামাজিক সংস্কার, বিশেষ করে নারী অধিকারের জন্যও কাজ চলছে।

গত কয়েকদিন ধরে এক্স (সাবেক টুইটার) সহ অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেখানে রিয়াদের বিনোদন কার্যক্রমকে ‘অপমানজনক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বেশ কয়েকজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব এই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন এবং কিছু পর্যবেক্ষকও এই প্রদর্শনীটিকে ‘শয়তানি’ বলে অভিহিত করেছেন।

নেটিজেনরা রিয়াদের ফ্যাশন শো এবং এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে অনৈতিক বলে বর্ণনা করেছে। এমন কাণ্ডের জন্য সৌদি রাজপরিবার এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানেরও সমালোচনা করছেন।

সিরিয়াভিত্তিক ধর্মীয় নেতা আবদুল রহমান আল-আদ্রিসি দাবি করেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ফ্যাশন শোতে নারীরা এই ‘কাবার মতো আকৃতি’ ঘিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তিনি দাবি করেন, এটা দাজ্জালকে ডেকে আনার জন্য ‘শয়তানি’ কাজ।

পাকিস্তানেও অনেকে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। মোল্লা হাক্কানি নামের একজন বলেছেন, রিয়াদে ফ্যাশন উইকের অনুষ্ঠানে কাবাকে অপমান করা হয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাবার মতো জায়গাটি ডিজাইন করেছিল এবং অর্ধনগ্ন নারীদের সেখানে নাচিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকৃত কিছু ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে এই ফ্যাশন শো চলাকালীন মূর্তি দেখা যায়।

সৌদি চ্যানেল আল আরাবিয়া টিভি ১৭ নভেম্বর সম্প্রচারের সময় বলেছিল যে সামাজিক মিডিয়ায় ‘অজানা এবং সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলো’ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেছে।

আল-আরাবিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়াদ সিজনের সমালোচনা করে এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল ‘সৌদি সফট পাওয়ার এবং ভিশন ২০৩০ কর্মসূচিকে বিকৃত করা।’

উল্লেখ্য, অক্টোবরে শুরু হওয়া বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু থেকেই অনলাইনে সমালোচনা চলছিল।অনেকে একে গাজা ও লেবাননের যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত করে বলেছেন, এত মানুষের মৃত্যুর পরও রিয়াদ এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অব্যাহত রেখেছে।

তবে আল-আরাবিয়ার সম্প্রচারে সৌদিপন্থি কলামিস্ট আবদুল্লাহ আল-জাদায়াহ বলেছেন, ‘এই সমালোচনার পেছনে রয়েছে সৌদি আরবের নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুড এবং বিশ্বজুড়ে এর সদস্যরা।’

অনুষ্ঠানে নাচ নিয়ে সমালোচনার কারণ জানতে চাইলে জাদায়াহ বলেন, সব অনুষ্ঠানই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মুখে হাসি ফোটানো।

তিনি বলেন, ইতিহাসে মুসলমানরা যুদ্ধ, শান্তি ও হত্যাকাণ্ড দেখেছে। তার মানে এই নয় যে, জীবন একেবারেই থেমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অভিযান গতকাল শুরু হয়নি, ৭ অক্টোবরও শুরু হয়নি। প্রায় ৮০ বছর ধরে ফিলিস্তিন দখল হয়ে আছে।

জাদায়াহ বলেন, সৌদি আরব একটি ‘বড় পরিবর্তনের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিগত আমলে যারা লাভবান হয়েছেন এবং পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছেন তারাই মূলত এসব সমালোচনা করছে।

পবিত্র কাবার আদলে তৈরি স্টেজ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল-কায়েদা হচ্ছে প্রথম দল যারা সৌদি আরবকে দুটি (পবিত্র) মসজিদের দেশ হিসেবে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল।পৃথিবীতে এমন কোন বিবেকবান ব্যক্তি আছে যে বলে যে, কোন ঘনক্ষেত্র বা বর্গাকার জিনিস কাবার অবমাননা?

তিনি দাবি করেন, এরা (সমালোচকরা) মাত্র দুটি পবিত্র মসজিদের বিষয়টি তুলে ধরে সৌদি আরবকে বিব্রত করার চেষ্টা করে।

সূত্র: বিবিসি উর্দু

আন্তর্জাতিক

আবারও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হরিনি আমারাসুরিয়া।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমার দিশানায়েকে আমারাসুরিয়াকে নিয়োগ দেন।

আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিক বিজিথা হেরাথকেও নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আমারাসুরিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন দিশানায়েকে।

আমারাসুরিয়া তার দলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং সিরিমাভো বন্দরনায়েকে ও চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার পর তৃতীয় নারী, যিনি লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। খবর ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের।

শ্রীলঙ্কার সাধারণ নির্বাচনে ২শ ২৯ আসনের মধ্যে অনূঢ়ার বামপন্থি জোট ১শ ৫৯টি আসনে জয় লাভ করেন। আজ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ছাড়া বাকি মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেন দিশানায়েকে।

সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজেই সামলাচ্ছেন দিশানায়েকে এবং আজ নিজেই জানিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে তিনি থাকবেন।

খেলাধুলা

মাঠেই ক্ষত-বিক্ষত আম্পায়ার। সরাসরি বলের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান এক আম্পায়ার।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থে তৃতীয় শ্রেণির একটি ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারিং করার সময় ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন টনি ডি’নব্রেগা।

ম্যাচে ব্যাটসম্যানের নেওয়া জোরালো একটি শট সোজা গিয়ে লাগে আাম্পায়ার টনির মুখের ডানদিকে। তিনি চেষ্টা করেও বলের লাইন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেননি।

আম্পায়ারের ডান চোখের ঠিক নিচে জোরালো আঘাত লেগেছে। চোখের নিচের অংশ এতটাই ফুলে গিয়েছে যে, প্রায় ঢেকে গেছে একটি চোখ। চোয়ালে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। লাল হয়ে রয়েছে পুরো মুখ। ঠোঁটের কোনাও ফোলা। রক্ত জমে কালশিটে দাগ হয়ে গিয়েছে।

আম্পায়ার টনির শারিরীক অবস্থার আপডেট জানিয়েছে ওয়েস্ট ওস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সৌভাগ্যক্রমে টনির চোয়ালের কোনো হাড় ভাঙেনি বলে তারা নিশ্চিত করেছে।

তবে ওই আম্পায়ারের মুখে কোনো অস্ত্রোপচার লাগবে কি না সেটি এখনও জানা যায়নি। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাটসম্যানের একটি স্ট্রেট-ড্রাইভে বল গিয়ে লাগে টনির মুখের ডানদিকে। সারারাত হাসপাতালে কাটানোর পর জানা গেছ, তার মুখের কোনো হাড় ভাঙেনি। যদিও এখনই অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ডাক্তাররা তার শারীরিক পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছেন।

বিনোদন

দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন ছিল দেশের জনপ্রিয় ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দীঘির। তবে সব গুঞ্জনকে ভুল প্রমাণ করে অন্য একজনকে বিয়ে করেছেন আফ্রিদি। ধারণা করা হয় গত জুলাইয়ের আন্দোলনে নানা বিতর্ক সৃষ্টির পর ঘরোয়া আয়োজনেই চুপিসারে বিয়ে সেরেছেন তিনি।

আফ্রিদির বিয়ের খবর চর্চিত হচ্ছে সবজায়গাতেই। বিভিন্ন সূত্রে তার বিয়ের খবর প্রচারিত হলেও এতোদিন এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি। অবশেষে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শ্যালিকা, বউ ও বিয়ে নিয়ে মুখ খুললেন এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর।

তৌহিদ আফ্রিদি জানালেন, তার কাবিন হয়েছে। পারিবারিক আয়োজনে কাবিন হয়েছে। দুই পরিবারের সদস্যরাই তাদের কাবিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আফ্রিদি বলেন, ‘আমি গাড়িতে বসে শুনি গোপনে বিয়ে করলেন তৌহিদ আফ্রিদি! আরে, বিয়ে তো গোপনে করিনি, আমি বিয়ের ছবি আপলোড দেওয়ার আগে আপলোড হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম বাসায় যাব, এরপর সবাইকে বিয়ের খবর জানাব। কিন্তু সে সময় আর কই পেলাম। অনেকেই ছবি পোস্ট করেছে। আসলে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—এটা সম্পূর্ণ মহান আল্লাহ তাআলাই লিখে রাখেন। কার, কখন, কোথায়, কীভাবে বিয়ে হবে, এখানে কারও হাত নেই। আমি আমার মাকে নিয়ে কনে দেখতে গিয়েছিলাম, পরিবারকে নিয়ে দেখতে গেছি, ওখানেই কাবিন হয়ে গেছে।’

তৌহিদের স্ত্রীর নাম রামিসা আল রিসা, তার যমজ বোন রাইসা আল রোজা। শুরুতে খবর ছড়ায়, রাইসাকে বিয়ে করেছেন আফ্রিদি। এ প্রসঙ্গে আফ্রিদি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, মানুষ আসলে কনফিউজড হয়ে গেছে, তারা তো যমজ বোন। যমজ বোন হওয়ার কারণে আমার শালিকে (শ্যালিকা) অনেকে আমার ওয়াইফ বলা শুরু করেছে। এসব এক দিক থেকে হাস্যকর লাগে।’

শিগগিরই সবাইকে নিয়ে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন আফ্রিদি। তিনি বলেন, ‘বিয়ে তো একটা দায়িত্ব। সবার কাছে দোয়া চাইব, আমার জীবনটাকে যেন গুছিয়ে রাখতে পারি। আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে সব সময় আপনাদের মাঝে এভাবে ভালোবাসা নিয়ে থাকতে পারি। আমি এখন আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভি নিয়ে ব্যস্ত। উপস্থাপনা করছি। ইউটিউব কনটেন্ট বানানোর কাজ করব।’

অর্থনীতি

রাজধানীতে এবার ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করবে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিসিবি জানায়, প্রতি কেজি আলু ৪০ টাকা করে বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন।বুধবার থেকে ঢাকায় সাধারণ ভোক্তাদের জন্য এসব আলু বিক্রি শুরু হবে।

এই কার্যক্রম বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় টিসিবি ভবন থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নিম্ন আয়ের এক কোটি কার্ডধারী পরিবারে টিসিবির পণ্য (ভোজ্যতেল ও ডাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি চলছে। এই কার্যক্রমের পাশাপাশি ঢাকার ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির তেল, ডাল এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আলু।

এতে আরও বলা হয়, প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং ৩০ টাকায় চাল পাওয়া যাবে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি মসুর ডাল এবং পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারবেন।

জাতীয়

দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্টের তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।

তারা হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।

মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদ মতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিয়াছেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়াছেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এই তিন বিচারপতিকে প্রায় ৫ বছর ধরে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।

রাজনীতি

আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপি একা দেশ চালাবে না। এমনটা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটি জাতীয় সরকার গড়ে তুলব। যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল তাদের নিয়ে দেশ চালাব। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সন্দেহটা কোথায়? সন্দেহ কিন্তু আপনাদের ওপর আসতে শুরু করেছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ প্রশাসন-নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সন্দেহ কিন্তু আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) ওপর আসতে শুরু করেছে। আমরা চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হবো। আমরা চাই না, শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দু:শাসন আবার ফিরে আসুক।

শিক্ষা কাঠামোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৫৩ বছরে আমরা কী সাফল্য অর্জন করেছি শিক্ষাখাতে, বিশ্বের এক হাজার ইউনিভার্সিটি মধ্যে আমাদের একটি ইউনিভার্সিটি সিরিয়ালে আসে না। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি না। দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে শেখ হাসিনা। দেশের সব অর্জন ১৫ বছর শেষ করেছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিটেন্স, উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন তিনি। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। দেশকে ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল।

ইস্পাত কঠিন সময়ে ঐক্যের জায়গায় এক থাকতে হবে বলে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশীদ প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূ–খণ্ডে হামলা করেছে। মঙ্গলবার এ হামলা হয়েছে বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন মঙ্গলবার সকালে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ব্যবহার করে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় হামলা করেছে। পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং একটি ধ্বংস করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের কারণে ওই এলাকায় একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরেছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর কথা ইউক্রেনের গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো ইউক্রেন সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে এই হামলা চালানো হয়েছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ার পর আগুন ধরে যায়। দ্রুত ওই আগুন নেভানো হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।

এর আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করে যে, তারা রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে। তবে এই হামলায় এটিএসিএমএস ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটা তারা নিশ্চিত করেনি।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের মতো দূরে কারাচেভ শহরের কাছে একটি ডিপোতে ওই হামলা হয়েছে। হামলার পর ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সামরিক বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

রাজনীতি

সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে পতিত স্বৈরাচারের নেতারা তাদের বিপুল পরিমাণ পাচারের টাকায় বলিয়ান হয়ে এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য, অকার্যকর করার জন্য বিশাল অর্থে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে। তাদের একটি বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।

তিনি বলেন, পতিত সরকারের নেতৃবৃন্দ যারা এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে সে অর্থে বলিয়ান হয়ে তারা দেশে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদেরকে কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা সফল হওয়া মানে জাতির মৃত্যু। জাতি হিসেবে আমাদের অবসান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোন বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাবধান থাকুন। তাদের সকল হীন প্রচেষ্টাকে আমাদের ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিন। যে ভাবে নস্যাৎ করেছিলেন তাদের বন্দুকের গুলিকে। তাদের আয়না ঘরকে। প্রতি পায়ে তাদের অনাচারের শিকলকে। এ ব্যাপারে সবাই একমত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

তিনি আরও বলেন, বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক– সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

পতিত আ. লীগ সরকার রিজার্ভ তলানিতে রেখে গিয়েছিল: ইউনূস

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদেশে টাকা পাচার এবং রিজার্ভের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনো রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লণ্ডভণ্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম–সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশো দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে হয়েছে। বলা বাহুল্য এখনো আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে তা আসা শুরু করেনি।

তিনি বলেন, বন্ধু রাষ্ট্রগুলি শুধু যে আমাদের বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে তাই নয়, তারা এই সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষণীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে এগিয়ে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছে তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এবার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অন লাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গেও আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন।

তিনি বলেন, এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোনো বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক– সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যেমুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

ড. ইউনূস বলেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।

প্রতিটি হত্যার বিচার করব, শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইব: ড. ইউনূস

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১৫ বছরে সব গুম-খুন, অপকর্মের বিচার করব।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহীদি মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সাথে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯,৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই তালিকায় আরও নতুন নতুন শহীদের তথ্য যোগ হচ্ছে, যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে।

ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র শ্রমিক জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদকে স্মরণ করেন এবং তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত এবং সব অংশগ্রহণকারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, স্মরণ করছি তাদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। যারা নয় দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা এক দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা দেশকে এক হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের, আপনাদের ভাই-বোনদের, আপনাদের সন্তানদের যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমাদের সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি, যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা।

জাতীয়

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে জাতীয় পার্টির সাবেক এক সংসদ সদস্যকে জনতা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে।

রোববার বিকালে চুনারুঘাট পৌরসভার পশ্চিম পাকুড়িয়া খোয়াই বেইলি ব্রিজে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল পিটুনির শিকার হন বলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান জানান।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা রানা (৫৮) ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, বিকালে রানা মোহাম্মদ সোহেলকে বহনকারী গাড়িটি শ্রীমঙ্গল থেকে সাতছড়ি যাওয়ার পথে চুনারুঘাট খোয়াই বেইলি ব্রিজে যানজটের মুখে পড়ে।

এ সময় গাড়িটি পেছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রানা মোহাম্মদ সোহেল তার সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়েন।

তখন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আশপাশের মানুষ সেখানে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে জনতা রানা মোহাম্মদ সোহেলের ওপর চড়াও হয়। পরে তারা পুলিশকে খবর দেয়।

চুনারুঘাট থানার ওসি মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “পিস্তলসহ রানা মোহাম্মদ সোহেলকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার বাড়ি রংপুর জেলার কেরানীপাড়া এলাকায়। তিনি রাস উৎসব দেখতে শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন। পরে শ্রীমঙ্গল থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান বলেন, “সেনাবাহিনী তাদের লোক হিসেবে তাকে হেফাজতে নিয়ে গেছে। আমরা তার অস্ত্রটি জব্দ করেছি। অস্ত্রটি লাইসেন্স করা কিনা যাচাই-বাচাই চলছে।”

তিনি বলেন, “সাবেক মেজর কেন কী কারণে গুলি করলেন বিষয়টি তদন্ত করলে জানা যাবে।”