অর্থনীতি

দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত রোববার দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছাড়িয়েছিল ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের মোট রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।

আরিফ হোসেন খান জানান, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী আজ দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৬৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এক হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে। রোববার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

শনিবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এ দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের মূল্য ২,৬২৪ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৬ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) মূল্য কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম কমানো হয়েছে।

দাম কমানোর কারণ হিসেবে বাজুস বলছে, স্থানীয় বাজারে তেজারি স্বর্ণের মূল্য কমেছে, তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য ২ হাজার ৬২৪ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের মূল্য ২ হাজার ৪৯৬ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের ২ হাজার ১৩৫ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য ১ হাজার ৮৩২ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ১৭০ টাকা।

এর আগে গত ২৫ জুন ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৬৬৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫৯৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩৭৬ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৭ হাজার ২ টাকা। আজ শনিবার পর্যন্ত এ দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে।

অর্থনীতি

রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নসহ ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরেরর এনইসি সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো, উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ও স্থানীয় জনসাধারণেরজন্য সমন্বিত সেবা ও জীবন-জীবিকা উন্নয়ন , ৭টি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদকাশক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ, নবনির্মিত ৪টি মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প এবং নারীদের আইনি সহায়তারপ্রাপ্তি সহজ করা প্রকল্প।

এছাড়া বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ, কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ ও কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রম পরিচালনা, টিভিইটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগে একটি নতুন ডিজিটাল ডাটাবেজ সিস্টেম স্থাপন প্রকল্প।

আরো আছে, ইমপ্রুভমেন্ট অব পাবলিক ইনভেসমেন্ট ম্যানেজসেন্ট সিস্টেম, স্ট্রেনদেনিং পাবলিক অডিট থ্রো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এন্ড ক্যাপাসিটি ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট,ডমেস্টিক রেভিরিউ মবিলাইজেশন প্রকল্প।

অর্থনীতি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বছর ২০২৪ সালে (১২ মাস) সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ। এতে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। গত এক যুগ ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। যদিও নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করছে না ব্যাংকটি।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানত এখন ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১৪৯ টাকা ৬৯ পয়সা হিসাব করলে ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। অথচ আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এটি ছিল মাত্র এক কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলা টাকায় ২৬৪ কোটি টাকার মতো। এক বছরে আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ বা ৮ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। রিপোর্টে অবশ্য এই উলম্ফনের কোনো কারণ উল্লেখ নেই।

২০২১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে বাংলাদেশিদের আমানত। ২১ সালে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর নজিরবিহীন গতিতে অর্থ তুলে নেন বাংলাদেশিরা। দুই বছরে ১১ হাজার কোটি টাকা কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায় আমানত। দুই বছর টানা যে আমানত কমেছে, তা হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উত্তর অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সামনে আসে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন এবং ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিরাপদে অর্থ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি।

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোনো বাংলাদেশি, নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এই হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মুল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি প্রতিবেদনে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কমতে থাকায়, অনেক ধনী এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য ঝুকছেন, লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো ট্যাক্স হ্যাভেনের দিকে।

অর্থনীতি

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘটে গেল এক নাটকীয়তা। ঈদের আগের দিন (৬ জুন) হঠাৎ করে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় বিতর্ক, ক্ষোভ এবং দলীয় চাপ।

সবশেষে ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। আর তাতেই রাজনীতিতে যুক্ত হয় এক নতুন মাত্রা।

সংস্কারকে বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচনমুখী একটি দল হিসেবে বিএনপিকে প্রমাণ করতে সক্রিয় ছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী এবং ইউটিউবার গোষ্ঠী। তাদের ধারাবাহিক প্রচারণা ও ভিডিওবার্তায় ক্রমেই চাপে পড়ছিল বিএনপি।

১৩ জুনের বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক বিবৃতিতে বলে যে, ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন-সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত। তাদের অভিযোগ লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার তুলনায় সংস্কার ও বিচার গুরুত্ব পায়নি।

একটি দলের সঙ্গে সরকারের যৌথ বিবৃতিতে বিস্ময় প্রকাশ করে এনসিপি বলছে— এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য মোটেও অনুকূল নয়, বরং এটি নৈতিকতা বিরুদ্ধ। তাদের মতে, এটি একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি সরকার প্রধানের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। আর জামায়াতে ইসলামীর অভিযোগ, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার যে পদ্ধতিতে যৌথ ব্রিফিং ও বিবৃতি দিয়েছে, তা প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

যে বিএনপি এক সপ্তাহ আগে নির্দিষ্ট দুটি দলের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিল, এক সপ্তাহ পর সেই বিএনপি-ই সরকারের সঙ্গে সদ্ভাবপূর্ণ মনোভাবে এসেছে। বিপরীতে, যেসব দল এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত ছিল, তারাই এখন লন্ডন বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সরকার প্রধানের নিরপেক্ষতা ঘিরে।

নির্বাচনের সময় নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপির মধ্যে কিছুটা দূরত্ব আগে থেকেই ছিল। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও জুনের শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস হঠাৎ ঘোষণা দেন, ভোট হবে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা এটিকে জামায়াত ও এনসিপির ইচ্ছার প্রতিফলন বলে অভিযোগ তোলেন।

তবে ঈদের ছুটির মধ্যেই রাজনীতির মোড় ঘুরে যায়। এরপর নানা নাটকীয়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতা শেষে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক হয়। ১০ জুন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বৈঠকের খবর নিশ্চিত করলে শুরু হয় নানা বিশ্লেষণ।

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রথমে কিছুটা অনীহা ছিল। তবে সরকারের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকটি আয়োজনের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে ঢাকা ও লন্ডনে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলতে থাকে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান ইস্যুগুলো সমাধানের বিভিন্ন সম্ভাবনা তুলে ধরে বৈঠকে রাজি করাতে চেষ্টা চালানো হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এই সাক্ষাৎ বাস্তবায়নে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরে উভয় পক্ষের আগ্রহে, বিশেষ করে সরকারের বাড়তি উৎসাহে সাক্ষাতের সময় চূড়ান্ত হয়।

বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্বের মূল কারণ ছিল নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস। সময়সূচি নিয়ে গড়িমসি বিএনপির মনে প্রশ্ন তোলে—সরকার আদৌ নির্বাচন দিতে চায় কি না। অনেকেই মনে করেন, সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কৌশল হিসেবে সময় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলছে।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু বুদ্ধিজীবী, ইউটিউবার এবং স্বার্থান্বেষী লোক সরকার ও বিএনপির স্বাভাবিক সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলছিল পরিকল্পিতভাবে। তারা কোনোভাবেই চায়নি দ্রুতই জাতীয় নির্বাচন হোক। তাদের লক্ষ্য, যেভাবেই হোক নির্বাচন বিলম্বিত করে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটানো। আর এ কারণেই তারা কোনোভাবেই বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতে দিতে চাইছিল না। অনলাইন ও অফলাইন- দুই জায়গাতেই সমানভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে কথার যুদ্ধ শুরু করে বিএনপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কয়েকজন ইউটিউবার, রাজনৈতিক মিত্র, বুদ্ধিজীবী। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তখন একপর্যায়ে বলেন, বিএনপি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছে।

সরকারঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ না হওয়ায় একটি মহল এক/এগারো পরবর্তী সময়ের উদ্দেশ্যমূলক প্রচার ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূসকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে লন্ডনের বৈঠকে তারেক রহমান নিজেকে একজন পরিপক্ব, চিন্তাশীল ও সংস্কারমুখী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেন, যিনি গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারে প্রতিশ্রুতিশীল। কিছু নীতিগত মতপার্থক্য থাকলেও তার বিনয়, ধৈর্য ও উদারতা অধ্যাপক ইউনূসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

এ নিয়ে সাংবাদিক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের যে সৌন্দর্য, তার অনুশীলন দরকার। মতামতের বৈচিত্র্যের মধ্যে জাতীয় ঐক্য দরকার। রাজনীতিতে দম্ভ ও শক্তির প্রদর্শনীর বদলে মেধা, যুক্তি ও বুদ্ধির দীপ্তি দরকার। সহনশীলতা ও পারস্পরিক মর্যাদাবোধ দরকার। দলীয় অ্যাক্টিভিস্টদের চেয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের হৃদয়ের ভাষা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। লন্ডন বৈঠকের ছোট ছোট সংলাপের মধ্য দিয়ে তার প্রকাশ ঘটেছে। ’

বৈঠকের মূল বিষয় ছিল নির্বাচন, যার সমাধানও হয়েছে সহজভাবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনায় দুই পক্ষই অবস্থানে নমনীয়তা দেখিয়েছে। বিএনপি ডিসেম্বরের দাবিতে অনড় ছিল না, আর অন্তর্বর্তী সরকারও এপ্রিলে নির্বাচনেই অনড় থাকেনি। বিশ্লেষকদের মতে, এই সমঝোতা প্রমাণ করে, প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশের জনগণ দেশকেই বড় করে দেখে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘সরকার এবং বিএনপি দুই পক্ষই অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর রাষ্ট্র বিনির্মাণে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পেরেছে, দেশ ও জাতীর স্বার্থে এটি বিরাট সাফল্য। ’

একই মত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই বৈঠকে প্রমাণিত হয়েছে, জাতির ক্রান্তিলগ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। অতীতে কোনো দল কোনো বিষয়ে ভুল করতে পারে। প্রতিদিনের ভুলভ্রান্তি নিয়ে পড়ে থাকলে আমরা এগোতে পারব না। নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব না। ’

অর্থনীতি

বাংলাদেশের সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।

‘স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি (এসআইটিএ)’- শীর্ষক এই প্রকল্প বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি খাতগুলোর আধুনিকায়ন, তথ্যের স্বচ্ছতা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয় ও আর্থিক তদারকির ক্ষেত্রে চলমান সংস্কার কার্যক্রমকে সহায়তা করবে।

এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের শাসন কাঠামো ও সক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোর ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই বিনিয়োগ স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে ও দুর্নীতি কমাতে সহায়তা করবে। এতে বাংলাদেশ এমন আধুনিক সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবে, যা একটি উদীয়মান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে সক্ষম। ’

তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প সরকারি সেবার গুণগত মান ও প্রবেশগম্যতা বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে। ’

বিশ্বব্যাংক জানায়, এ প্রকল্পের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও একটি উন্নয়ন নীতিগত ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে, যা এই মাসের শেষ দিকে বোর্ড আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। এতে রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকখাত, তথ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সেবা প্রদান এবং নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতার স্বচ্ছতা উন্নয়নের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে।

এসআইটিএ প্রকল্পটি এসব কার্যক্রমের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার সুলেমানে কুলিবালি বলেন, ‘পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাকে নিয়ে একটি সমন্বিত কৌশলে কাজ করার ফলে সরকারের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যাবে, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প ও প্রস্তাবিত উন্নয়ন ঋণ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং সরকারকে আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর সেবাপ্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। ’

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে তারা ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত ও স্বল্পসুদের ঋণ প্রদান করেছে।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এবার ভরিতে ২ হাজার ১৯২ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। যা রেববার (১৫ জুন) থেকে কার্যকর হবে।

শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, সবশেষ গত ৫ জুন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ভরিতে ২ হাজার ৪১৫ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৬ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

অপরদিকে সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।

অর্থনীতি

পদ্মা সেতুর ডান তীর রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে সেতু উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেছেন, আমরা অতিদ্রুত এর স্থায়ী সমাধানের জন্য কার্যক্রম শুরু করব। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এর আশপাশে ভাঙন দেখা দেয়। এটা আমরা বন্ধ করবই। কোনো মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার মতো দুঃখজনক কিছু হতে পারে না। এখানে কী কী করতে হবে সামগ্রিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বিষয়টি দেখবেন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদ্মা সেতুর ডান তীর রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত নাওডোবা এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গুরুত্বের সঙ্গেই আমরা দেখতে এসেছি। আমরা বলেছি, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধান দরকার। যাতে বারবার যেন না ভাঙে। তবে এখন ভাঙছে না। আমরা যতটুকু পারি, দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব। নদী শাসন করা বড় কঠিন কাজ।

এছাড়া শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সঞ্চালন লাইন পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সঞ্চালনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলো।

সোমবার (২ জুন) দুপুর সাড়ে ৩টায়, ‘রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ সফলভাবে চালু হয়।

রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার। টাওয়ার সংখ্যা ৪১৪টি।

এর আগে প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপের জন্য আরও দুটি হাইভোল্টেজ লাইন প্রস্তুত করা হয়েছিল।

২০২২ সালের ৩০ জুন ‘রূপপুর-বাঘাবাড়ি ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ এবং ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল ‘রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ চালু করা হয়।

রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন চালুর মধ্য দিয়ে মোট তিনটি লাইন প্রস্তুত হলো। যার প্রতিটির সঞ্চালন সক্ষমতা ২০০০ মেগাওয়াট।

পিজিসিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত করিম জানান, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন সফলভাবে সংযুক্তের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড সঞ্চালনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ২৯ মে এই কাজ শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে সঞ্চালনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো।

অর্থনীতি

অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও। পাশাপাশি ভবনের নির্মাণের ক্ষেত্রেও এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এলাকাভেদে ও আয়তন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। সেখানে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকার ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা কর প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার অনধিক ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা কর দিতে হবে। ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা কর ধরা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের কম প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০০ টাকা কর দিতে হবে।

এসব এলাকা ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা কর প্রস্তাব করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা কর দিতে হবে। এছাড়া জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা, জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা কর প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশের অন্য এলাকায় (সিটি করপোরেশ ছাড়া) ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা কর দিতে হবে। দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে কর ১০০ টাকা। এছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস থেকে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালোটাকা সাদা করা যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে করহার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র সংস্কার- বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে, দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। করহার যা-ই হোক না কেন, এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যেখানে বলা হয়েছে রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে অনুপার্জিত আয় অবৈধ হবে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ একই সঙ্গে বৈষম্যমূলক। কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। সৎ উপার্জনকারীদের ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।