অর্থনীতি

ভারত থেকে আমদানীকৃত ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল বহনকারী এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।

উন্মুক্ত দরপত্র চুক্তির আওতায় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা বন্দর থেকে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল নিয়ে এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি আজ রাত ৭টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দ্বিতীয় চালান।

জাহাজে আসা চালের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে।

অর্থনীতি

“এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে মানুষ পিষ্ট। এখন এই ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আবার নতুন করে কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।”

এক বছরের বেশি সময় ধরেই দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটেছে; কখনো খাদ্যে, কখনো খাদ্য বহির্ভূত খাতে, কখনো আবার সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে দুই অংকের ঘর।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও ওষুধ, এলপি গ্যাস, মোবাইলে ফোনের সিম কার্ডের মত প্রয়োজনীয় পণ্যসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, ‍উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক ও কর বাড়ল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার শুল্ক-কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে। আর এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিকদের কেউ কেউ।

রাজধানীর মহাখালী এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে তানভীর জিলুই হতাশার সুরে বলেন, “সরকার খালি কর বাড়ানোর তালে আছে, আয় বাড়ল কিনা তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। একে তো মূল্যস্ফীতি দুই অংকের নিচে নামে না, এর মধ্যে আবার এই ভ্যাট বাড়ানোতে অবশ্যই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। আমরা যাবো কই? আমাদের চাপ তো আরও বাড়ল।”

রাজধানীর বনানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আফতাব আহমেদ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী’ বলছেন।

তার ভাষায়, “সরকার রাজস্ব বাড়াতে চায়, ভালো কথা। কিন্তু, সেটা বাজেটে করা যেত। এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে মানুষ পিষ্ট। এখন এই ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আবার নতুন করে কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।”

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি। তাই অধ্যাদেশ জারি করে শুল্ক-কর বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার রাতে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে এ দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

তার আগে ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে এনবিআরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

অধ্যাদেশ জারির পরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে; এতে তা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়ে গেছে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও এনবিআর দাবি করেছে, এতে ভোক্তার বাড়তি মূল্য গুনতে হবে না।

শুল্ক-কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, এ পদক্ষেপে নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না’।

কর আদায়কারী সংস্থা এনবিআরও একই সুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছিল, মূল্যস্ফীতিতে ‘প্রভাব পড়বে না’।

তবে, এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “যেসব পণ্যে ট্যাক্স বেড়েছে, সেগুলোর দাম তো বাড়বে। কোনো ধরনের বাস্তবতায় এটা (প্রভাব পড়বে না) তো হয় না। প্রভাব পড়বে না বলা হলে, বোধ হয় তা বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হয়।

জাহিদ হোসেন বলেন, ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, এসব পণ্যের ওজন কম, দর কম, সেজন্য হয়ত মূল্যস্ফীতির হারের উপর খুবই কম প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, “যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হল, অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে যেগুলো ১৫ শতাংশের নিচে ছিল, সেগুলোকে ১৫ শতাংশে উঠানো হয়েছে। তার মানে ভ্যাট রেইট ইউনিফিকেশন (একীভূতকরণ), মানে সব পণ্যে একই ভ্যাট হবে, এটা তো একটা নীতি ছিল সরকারের।

“এর মধ্যে অনেক অব্যাহতি ছিল। ওই অব্যাহতিগুলোকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। কারণ, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রাজস্বে তো এখন পর্যন্ত কোনো প্রবৃদ্ধি নেই।”

শুল্ক ও কর বাড়ানোর জন্য এই সময়টাকে যথোপযুক্ত মনে করছেন না এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, “এখানে সময়টি প্রশ্নবিদ্ধ। যখন খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও প্রায় দুই অংকের ঘরে, সেরকম একটা সময়ে ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবতার নিরিখে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন করা যেতে পারে। যদি, একীভূত করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, সেটা তো আগামী বাজেটে করা যেত।”

৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে বলেছে। ‘সে কারণে’ অর্থবছরের মাঝপথে এসে এভাবে হঠাৎ শুল্ক ও করের বোঝা বাড়ানোর পথে হাঁটে সরকার।

জনজীবন ‘অতিষ্ট করে তুলবে’

পণ্য ও সেবার তালিকায় চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেলের মত পণ্য না থাকলেও যেসব পণ্য ও সেবার শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে, এগুলোর বেশির ভাগ বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় হওয়ায় তা খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।

বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “সরকার সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেমন- সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য বিস্কুট, সাধারণ হোটেল, মোবাইল রিচার্জ, গ্যাসসহ অপরিহার্য পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং আইএমএফের চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রান্তিক, স্থায়ী উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতিতেও সংকট তৈরি করবে।

“এসব সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে স্বৈরাচারী সরকারের মত জনগণের পকেট কাটার নীতি।”

বিবৃতিতে অবিলম্বে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ, খেলাপি ঋণ আদায় ও ধনীদের প্রয়োজনীয় বিশেষ কর আরোপের আহ্বান জানান হয়।

আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ফলে জনজীবন এমনিতেই দুর্বিসহ, তদুপরি আইএমএফের পরামর্শে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রামীণ স্বল্প উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে গভীর সংকট তৈরি করবে।”

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানান তিনি।

কোন পণ্যে কত ভ্যাট

কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়াল, সানগ্লাস, নন-এসি হোটেল, মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্র্যান্ড সম্বলিত তৈরি পোশাকের শো-রুম বা বিপণি বিতানে পণ্য ও সেবা বিক্রিতে থাকা বিদ্যমান ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন তা সাড়ে ৭ শতাংশ ছিল।

বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডক ইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় পণ্য যোগানদাতা, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাবে সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

আমদানি করা সুপারিতে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ, পাইন বাদাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, তাজা বা শুকনা সুপারি ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ, আম, কমলালেবু, লেবুজাতীয় ফল, আঙ্গুর, লেবু, পেঁপে, তরমুজ, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, সবজির রস, তামাক, বাদাম, পেইন্টস, পলিমার, ভার্নিশ ও লেকার, সাবান ও সাবান জাতীয় পণ্য, ডিটারজেন্ট, ফ্রুট ড্রিংকস, আর্টিফিশিয়াল বা ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস (কার্বোনেটেড ও নন-কার্বোনেটেড), তামাকযুক্ত সিগারেট এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

যেসব হোটেলে মদ বা মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ করা হয় সেসব হোটেল বা বারের বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও একইভাবে মদ বা মদজাতীয় পণ্য সরবরাহ করা হলে-তার বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের উপর ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বা আইএসপির উপর প্রথমবারের মত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

পটেটো ফ্ল্যাকস, কর্ন, মেশিন প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট বা টমেটো কেচাপ বা সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প, তেঁতুলের পেস্ট, ব্যবহারের অযোগ্য ট্রান্সফরমার অয়েল, লুবব্লেয়িং অয়েল, এলপি গ্যাস, বাল্ক ইম্পোটেড পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, বিআরটিএ থেকে নেওয়া লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, কঠিন শিলা, ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো-সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন অ্যালয়, এইচ আর কয়েল থেকে সি আর কয়েল, সি আর কয়েল থেকে জিপি শিট, জি আই ওয়্যার, ৫ কেভিএ থেকে ২ হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম, চশমার মেটাল ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, নারিকেলের ছোবড়া হতে তৈরি ম্যাট্রেস- এসব পণ্যের ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ, ইনভেন্টিং সংস্থার ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ, ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

তবে এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে।

সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক-দুটোই বাড়ানো হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একইভাবে বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে কখনও একই সঙ্গে চার স্তরের দাম ও শুল্ক-কর বাড়ানোর নজির ছিল না।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া মধ্যমস্তরে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ; উচ্চস্তরে ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ এবং অতি উচ্চস্তরের দাম ১৬০ থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

লাইম স্টোন ও ডলোমাইটে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

এতদিন সিগারেটের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক নিম্নস্তরে অন্য তিন স্তরের তুলনায় কম রাখা হত। এবারই প্রথম সম্পূরক শুল্ক একক হারে নেওয়া হল।

এ খাত থেকে এই দাম ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের বাকি দিনগুলোতে ৪ হাজার কোটি বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য এনবিআরের।

অপরদিকে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা হলেই টার্নওভার কর দিতে হবে। বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে কর দিতে হয়।

নতুন বিধান অনুযায়ী, বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা পেরোলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।

উড়োজাহাজের টিকেটের দামও বাড়তে পারে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রুট ও সার্কভুক্ত দেশের বিমান টিকেটে ৫০০ টাকা হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এটা ২০০ বাড়িয়ে ৭০০ টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশে বর্তমানের দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন

ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়টি ‘আইনসিদ্ধ’ নয় দাবি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদিরের।

তিনি বলেন, “ভ্যাট বাড়ানোর একটা নিয়ম আছে। বর্তমানে আমরা উৎপাদন থেকে পাইকারি পর্যায়ে যখন সরবরাহ করছি তখন ১৫ শতাংশ অলরেডি ভ্যাট দিচ্ছি। এরপর তারা যখন খুচরায় বিক্রি করে তার জন্য তাদের প্রফিট মার্জিন দিতে হয় ১৬ শতাংশ। ভ্যাট নিলে তাদের থেকে ১৫ শতাংশ নেওয়ার কথা ছিল।

“কিন্তু সরকার ২ লাখ প্রতিষ্ঠান এমন আছে, তাদের থেকে নিতে পারে না। ফলে সরকার আমাদেরই বলেছে, এই মার্জিনের ওপর ২ দশমিক ৪০ টাকা ভ্যাট কেটে পরিশোধ করতে। আমরা তা অগ্রিম দেই। এখন আপনি যদি ধরেন ১৬ টাকার মধ্যে ৩ টাকা দিয়ে দেব তখন ভ্যাট দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা অবৈধ।”

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, “সরকার বলছে এর মাধ্যমে সরকারের আয় বাড়াচ্ছে। তারা আয় বাড়াচ্ছে না; আমার খরচ বাড়াচ্ছে।”

ভ্যাট না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াতে ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত ও সরকারের উন্নয়ন কমানোর পক্ষে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আপনি বিদ্যুৎ দেন, গ্যাস দেন, আমরা দরকারে ফেরি করে আমাদের পণ্য সরবরাহ করব।

“এডিপিতে খরচ কমিয়ে এটি দুই লাখ কোটি টাকায় নামিয়ে ফেলেন। এই মুহূর্তে সরকারের ৩০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব।”

সরকারের দ্রুত রাজস্ব বাড়াতে সংস্কারের অংশ হিসেবে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেন, “কিন্তু টাইমিং একটা ফ্যাক্টর। সবকিছু সুচিন্তিত হচ্ছে না। এই মুহূর্তে মহার্ঘ্য ভাতা না দেওয়া উচিৎ ছিল। ওয়েট করা যেত। অপারেটিং বাজেট কমানো যেত। অনেক জায়গায় হাত দেওয়ার ছিল।”

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “পৃথিবীতে যেসব দেশে এ ধরনের ক্রাইসিস হয়, তারা যেটা করে, তা হল- তার অপারেটিং কস্ট কমিয়ে দেয়। কোনো কোনো দেশে এটি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন এক ফোর্স আছে, যার ফলে অপারেটিং কস্ট কমানো যাচ্ছে না।”

রেস্তোরাঁ মালিক আর মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে ক্ষোভ

সরকারের ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক আর মোবাইল ফোন অপারেটররাও।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, “জনগণের সরকার ক্ষমতায়; কিন্তু এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা নেই। আইএমএফের কথা বলে বাজেটের মাঝপথে এভাবে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।”

এটা পাড়া-মহল্লা, ফুটপাথের ছোট ব্যবসায়ীর কাছে এনবিআরের ‘চাঁদাবাজির’ নতুন ফর্মুলা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“সরকারের রাজস্ব কমে গেছে। সেজন্য বড়-বড় বিলাসী ব্যয়গুলো কমালেই তো পারে। আমলারা তো ঠিকই বড়-বড় বাড়ি বানাচ্ছে, গাড়ি কিনছে। সরকারের অনেক বাড়তি ব্যয় আছে, প্রয়োজনে সেগুলো কমানো হোক,” যোগ করেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সারাদেশে ৪ লাখ ৮২ হাজার রেঁস্তোরা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব রেস্তোরাঁর ৬০ হাজার মালিক আমাদের সদস্য। আমরা আগামী দুই দিনের মধ্যে আন্দোলনের ঘোষণা দেব।”

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, “এমনিতে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের পেনিট্রেশন অনেক কম। আপনি গ্রহকদের সুবিধা না দিতে পারলে তা আর বাড়বে না। এখন এই সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে যে বাড়তি টাকাটা দিতে হবে এটা কিন্তু সরাসরি গ্রাহকের পকেট থেকে যাবে।

“আগে যে ব্যবহারকারীকে ৫০০ টাকা দিতে হত, সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে তাকে এখন থেকে দিতে হবে ৫৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। আগে যিনি ১০০০ টাকা দিতেন, তাকে দিতে হবে ১১৫৫ টাকা। এই হারেই সবাইকে বাড়তি পেমেন্ট দিতে হবে।”

কর্পোরেট খাতে ইন্টারনেটের ব্যয় নিয়ে তারা শঙ্কায় আছেন জানিয়ে ইমদাদুল বলেন, “কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১০ হাজার টাকা বিল পাঠালে তারা এক হাজার এএআইটি (অগ্রিম আয়কর) হিসেবে কেটে রাখছে। ভ্যাট আছে ১৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ এসডি। মানে ২৫ শতাংশ সরাসরি চলে যাচ্ছে সরকারের খাতে।

“আবার কোম্পানির বার্ষিক ট্যাক্স আছে। আমরা যত টাকা ক্লায়েন্টের কাছে থেকে পাই তার মোর দ্যান ফিফটি পার্সেন্ট নিয়ে যাচ্ছে সরকার। আমার মনে হয় এই এসডি (সম্পূরক শুল্ক) আরোপের বিষয়টি সরকারের পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ।”

মোবাইলের রিচার্জেও অতিরিক্ত তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এখন ১০০ টাকা রিচার্জে একজন গ্রাহক মোটে ৪৩ টাকা ৭০ পয়সার সেবা নিতে পারবেন মোবাইল অপারেটর কাছ থেকে।

বর্তমানে মোবাইল সেবায় ১০০ টাকার রিচার্জে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা, রেভেনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর ২০ দশমিক ৪ টাকা। সব মিলিয়ে ১০০ টাকা রিচার্জে কর দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক ৬ টাকা। এর সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ বাড়ানোর পর সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা।

সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, “মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর হঠাৎ আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় আমরা বিস্মিত।

“এমন পরিস্থিতিতে এটি বাড়ানো হলো যখন ধকল কাটিয়ে উঠছে অর্থনীতি। এই নিয়ে গত সাত মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হল।”

২০২৪ সালের জুনে ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবারও ৩ শতাংশ বাড়ল। তাতে সাত মাসের মাথায় গ্রাহকদের ওপর পরোক্ষ করের বোঝা বাড়ল ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

এখন থেকে গ্রাহকরা প্রতি ১০০ টাকার সেবা গ্রহণ করলে প্রদান করতে হবে ১৪২ দশমিক ৪৫ টাকা (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জসহ)। গত বাজেটের আগে যা ছিল ১৩৩ দশমিক ২৫ টাকা।

তানভীর মোহাম্মদ বলেন, “ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য সংকল্পবদ্ধ টেলিযোগাযোগ শিল্প। কিন্তু এমন পদক্ষেপ এই অগ্রগতি ব্যাহত করবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য বাড়াবে।

“গ্রাহকদের স্বার্থে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠনের বৃহত্তর লক্ষ্যে আমরা সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।”

রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, “নতুন অর্থবছর শুরুর প্রায় ছয় মাস আগে একটা পরিপত্রের মাধ্যমে যেভাবে টেলিযোগাযোগ খাতের সব ধরনের সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি আমাদের কাছে খুবই ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে।”

আগের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, এ ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির প্রকৃত উদ্দেশ্য কখনো পূরণ হয় না। কারণ সাধারণ গ্রাহকেরা ব্যয় কমিয়ে এ ধরনের সেবা মূল্য বাড়ার ধাক্কা সামাল দেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সরকারের কাছে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য তারা আবেদন করবেন বলেছেন সাহেদ আলম।

অর্থনীতি

শুধু খেতেই মজা নয়, রয়েছে নানান স্বাস্থ্যোপকারিতা।

শীতের সময় যে কয়টি খাবারের কদর বাড়ে, সেগুলোর মধ্যে গুড়ও আছে।

পিঠা কিংবা চায়ে- গুড়ের ব্যবহারে অনন্য স্বাদ দিতে পারে। তবে শুধু জিহ্বার প্রশান্তি নয়। গুড়ের রয়েছে নানান স্বাস্থ্যগুণ।

প্রাকৃতিক পরিষ্কারক

শ্বাসনালী, ফুসফুস, অন্ত্র, পাকস্থলী এবং খাদ্যনালী অত্যন্ত কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে পারে গুড়।

এই তথ্য জানিয়ে ভারতের ম্যাক্স হেলথকেয়ার ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ মানজারি চন্দ্র টাইমসঅফইন্ডিয়া ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “তাই দুষিত পরিবেশে কাজ করেন এমন কর্মী যেমন কারখানা কিংবা কয়লা খনির শ্রমিকদের গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।”

এতে থাকে প্রচুর লৌহ, ফলে রক্তশূন্যতা দূর করতে গুড় আদর্শ প্রাকৃতিক সমাধান। পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনেও উন্নতি ঘটায়।

শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা বাড়ানো এবং পানিশোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে গুড়।

সর্দি-কাশির চিকিৎসা

দস্তা ও সেলেনিয়াম’য়ের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজে ভরপুর থাকে গুড়। যা শরীরের মুক্ত-মৌলজনীত ক্ষয় কমায় এবং রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ তৈরি করে।

কুসুম গরম পানিতে গুড় গুলে নিয়ে পান করা যায়। চায়ে চিনির পরিবর্তেও গুড় ব্যবহার উপকারী।

হাঁপানির চিকিৎসায়

গুড়ের অ্যালার্জিরোধী উপাদান হাঁপানির চিকিৎসায় আদর্শ।

৫ চা-চামচ হলুদ, ১ চা-চামচ মাখন এবং ছোট এক টুকরো গুড় একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। হাঁপানির কষ্ট কমাতে এই মিশ্রণ প্রতিদিন তিন থেকে চারবার খেতে হবে।

ভালো মানের গুড় চেনার পন্থা

গুড়ের গুণগত মান বুঝতে হবে এর রং দেখে।

রং যত গাঢ়, গুড় ততই খাঁটি। হলদে আভা থাকলে বুঝতে হবে এতে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।

স্টার্চ বা মাড় মেশানো হয় গুড়ে। পানিতে অল্প পরিমাণ গুড় গোলাতে হবে। যদি কোনো অবশিষ্টাংশ মিশে না যায় তবে বুঝতে হবে এতে মাড় মেশানো হয়েছে।

গুড়ে আলাদা চকচকেভাব ও মসৃণ দেখাতে তেল মেশানো হয়। এটা বোঝার জন্য অল্প গুড় আঙ্গুলে নিয়ে ঘষতে হবে। যদি তেলতেলে ভাব আঙ্গুলে লাগে তবে বুঝতে হবে গুড়ে উচ্চ মাত্রায় খনিজ তেল মেশানো হয়েছে।

গুড়ের প্রাকৃতিক রং হয় গাঢ় বাদামি। দিতে দেখতে কালচে বা বেশি হালকা মনে হয় তবে বুঝতে হবে এই গুড়ে কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে।

রাসায়নিক দ্রব্যও মেশানো হয় গুড়ের স্বাদ গন্ধ বাড়াতে। আসল গুড় মিষ্টির সাথে মাটির গন্ধ মিশ্রিত ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্য কোনো গন্ধ পেলে বুঝতে হবে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো আছে।

গুড় ধরলে এক গুঁড়া গুঁড়া অনুভত হয়। এর কারণ হল আখের আঁশ। যদি বেশ মসৃণ মনে হয় তবে বুঝতে হবে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে গুড়ে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে।

খাঁটি গুড়ে ঘনত্ব বেশি থাকে। যদি মনে হয় বেশি শক্ত বা নরম তবে ধরে নিতে হবে আলাদা উপকরণ মেশানো হয়েছে।

গুড়ের স্বাদে আলাদা উচ্চ অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বেশি মিষ্টিও না আবার পানসেও নয়। এর বাইরে অন্য রকম স্বাদ মনে হলে বুঝতে হবে গুড়টা হয়ত খাঁটি নয়।

অর্থনীতি

গ্যাসের নতুন কূপের অনুসন্ধানসহ ১০ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে ২০৫ কোটি ৭৯ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে—চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্প, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্প, মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্প, ইস্টাবিলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইনট্রিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প, ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প, সিলেটে বিভাগে ভূমি উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুন:নির্মাণ বা পুনর্বাসন প্রকল্প, ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ খনন প্রকল্প, কন্সট্রাকশন অব বাংলাদেশ বুডিস্ট মনাসট্রি কমপ্লেক্স এট লামবিনি কনভারশন এরিয়া, নেপাল প্রকল্প।

এদিকে পরিকল্পনা উপদেষ্টার অনুমোদন দেওয়া ১০ টি প্রকল্প একনেকে অবগতির জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে-রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর কমপ্লেক্স বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বাংলো নির্মাণ প্রকল্প, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ প্রকল্প, উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুবিধাবঞ্চিত ৮৬টি এলাকা ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন, সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন, মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টংগিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প এবং আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট।

অর্থনীতি

রাজস্ব আদায়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় যোগ হচ্ছে বাড়তি করের বোঝা।

ওষুধ, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টি, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার, বিমানের টিকিটসহ সিগারেট এবং তামাক রয়েছে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক-করের তালিকায়।

৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে আইএমএফ চলতি অর্থবছর বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে বলেছে। সে কারণে অর্থবছরের মাঝপথে এসে এভাবে হঠাৎ ভ্যাটের বোঝা বাড়ানোর পথে হাঁটছে এনবিআর।

এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্য ও সেবায় বর্তমানে ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।

বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে এনবিআরের ভ্যাট অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁয় এখন খাওয়ার বিলের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়; এটি বেড়ে ১৫ শতাংশ হতে যাচ্ছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটে বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে; সেটিও বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

একই সঙ্গে মিষ্টির দোকান ও নন-এসি হোটেলে সেবার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড বানানোর সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে টার্নওভার কর বসানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এখন ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে কর দিতে হয়। নতুন সিদ্ধান্তে বছরে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হলেই টার্নওভার কর দিতে হতে পারে।

আর বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে সকল পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর।

মদ পানের বিলের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে ফলের রসে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ; তামাকে ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ; সুপারিতে ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মোবাইল ফোনে কথা বলায় (টকটাইম) সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

উড়োজাহাজের টিকেটের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বাড়ছে। দেশের ভেতরে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা হতে পারব।

সার্কভুক্ত দেশের বাইরে কিন্তু এশিয়ার মধ্যে হলে সেক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হতে পারে।

জাতীয় সংসদ ছাড়া কর বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রপতির আদেশে অধ্যাদেশ দিয়ে কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এ অধ্যাদেশ জারি হতে পারে বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার আগে চলতি অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর কঠিন শর্তের মুখে পড়ে এনবিআর।

৪ ডিসেম্বর ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর চলতি অর্থবছরের জন্য আগের দেওয়া শর্ত শিথিল করে কর-জিডিপি অনুপাত ০.৪ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগ চেয়েছিল।

আইএমএফ সেই প্রস্তাবে রাজি হলেও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এনবিআর শর্ত পূরণ করতে না পারায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি আরও ০.২ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর শর্ত জুড়ে দেয়।

এরপর থেকে অর্থ উপদেষ্টা এবং এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন আয়োজনে কর বাড়ানোর কথা বলে আসছিলেন।

অর্থনীতি

জ্যোতিষশাস্ত্র সম্ভাবনার কথা বলে। কোনো কিছু নিশ্চিতভাবে হবে কিংবা ঘটবে তা বলে না।

রাশি অনুযায়ী এই সপ্তাহ কেমন যেতে পারে জেনে নিন।

পাশ্চাত্য রাশিচক্রমতে চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহগত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন রাশির জাতক জাতিকাদের নানান বিষয়ের শুভাশুভ পূর্বাভাস ও সতর্কতা জানাচ্ছেন জ্যোতিষশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম মাওলা।

মেষ রাশি (২১ মার্চ – ১৯ এপ্রিল) সপ্তাহের শুরুতে জনহিতকর কাজে যুক্ত হয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গ লাভে গর্বিত হতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত কথা অপরের কাছে প্রকাশ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সরকারি চাকরিতে বদলির সম্ভাবনা। সপ্তাহের মাঝদিকে সৃজনশীল কাজের জন্য প্রশংসিত হতে পারেন। মনে শক্তি, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধির অনুকূলে হতে পারে। চাকরিজীবীদের উদ্যোম ও যোগাযোগ তৎপরতা বাড়ানো দরকার। সপ্তাহের শেষ দিকে ঝুঁকি বা অপ্রত্যাশিত লাভের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থা উন্নত হতে পারে। জনসংযোগ প্রচারের কাজে সাফল্যের দেখা পেতে পারেন।

বৃষ রাশি (২০ এপ্রিল – ২০ মে) সপ্তাহের শুরুতে পরিশ্রম বেশ হলেও কর্মস্থলের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে পারেন। আনন্দদায়ক সফর ও সামাজিক জমায়েত ভারমুক্ত করে রাখবে। ফোন কল দীর্ঘ করার জন্য রোমান্টিক সঙ্গীকে জ্বালাতন করবেন। সপ্তাহের মাঝদিকে বেকারদের কেউ কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারেন। সময় ও অর্থ ব্যয় হতে পারে। সপ্তাহের শেষদিকে সীমাহীন শক্তি ও উদ্যাম চেপে ধরবে। কোনো প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা কাজে লাগাবেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সমস্যা মিটতে পারে।

মিথুন রাশি (২১ মে – ২০ জুন) সপ্তাহের শুরুতে ধর্মকর্মে আকর্ষণ বৃদ্ধি। দূর ভ্রমণে শুভ যোগাযোগ ঘটতে পারে। কর্মক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনাকে ঘিরে জটিলতা সৃষ্টি হলেও সাফল্য সুনিশ্চিত হতে পারে। একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সপ্তাহের মাঝদিকে অপ্রত্যাশিত সূত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রণ পেতে পারেন। ভালোবাসার জীবনে সত্যি সত্যিই অসাধারণ কিছু বয়ে আনবে। সপ্তাহের শেষদিকে আয় অপেক্ষা ব্যয়ের চাপ বৃদ্ধি ও পারিবারিক দায়িত্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক স্বভাবের জন্য কোনো প্রতিযোগিতায় জয় পেতে পারেন। অনেক কিছু অর্জন করার ক্ষমতা আছে। তাই সুযোগের সঙ্গে এগিয়ে চলুন।

কর্কট রাশি (২১ জুন – ২২ জুলাই) সপ্তাহের শুরুতে রাজনৈতিক কোনো ঘটনায় শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা আাছে। সঙ্গে থাকা মানুষেরা বিশেষ খুশি হবে না। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীরা শুভ ফল পেতে পারেন। সপ্তাহের মাঝদিকে কর্মস্থলে প্রতিপক্ষের বিরোধীতার পরও গরুত্বপূর্ণ কাজে সাফল্য অর্জিত হবে। শিল্প ক্ষেত্রে বা কর্পোরেট সংস্থায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের পদোন্নতির সুযোগ আসতে পারে। সপ্তাহের শেষদিকে বিদেশ যাত্রায় প্রবাসী আত্মীয়ের সহায়তা পেতে পারেন। ভালোবাসার সঙ্গীর সঙ্গে ভালোবাসার সমুদ্র মন্থন করতে পারেন। কোনো কোনো বিষয় বিরক্তিকর হতে পারে, যা মনে চাপ সৃষ্টি করবে।

সিংহ রাশি (২৩ জুলাই – ২২ অগাস্ট) সপ্তাহের শুরুতে নতুন ব্যবসায় হাত দেওয়ার জন্য সময়টি শুভ। এ সময় যদি বিনম্র ও সহায়ক হন তবে জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাবেন। সাবধানে চলাফেরা করবেন। দেহে আঘাত লাগার সম্ভাবনা। সপ্তাহের মাঝদিকে দূর থেকে ভালো কোনো সংবাদ পেতে পারেন। পরিবার পরিজনকে নিয়ে দূরে কোথাও বেরিয়ে আসতে পারেন। সপ্তাহের শেষদিকে ভালো কাজের জন্য সম্মানিত হতে পারেন। এমনকি কাজের পরিবেশ এ সময় ভালো দিক পরিবর্তন করতে পারে। ইমেইল আমন্ত্রণপত্র দিয়ে পূর্ণ থাকবে। ভালোবাসার সঙ্গীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কয়েকটি স্ট্যাটাস পরখ করে দেখুন, একটি সুন্দর সারপ্রাইজ পেতে পারেন।

কন্যা রাশি (২৩ অগাস্ট – ২২ সেপ্টেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যাপারে নিজেকে অবহেলা না করার জন্য সতর্ক থাকুন। ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে সুনাম বৃদ্ধি পেতে পারে। স্ত্রীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদের পর হৃদয়ে কোনো না কোনো অনুভূতি জাগতে পারে। সপ্তাহের মাঝদিকে অনৈতিক ক্রিয়া কলাপের সাথে জড়াবেন না, যা অনেক সমস্যা বাড়তে পারে। বিতর্ক, মুখমুখি সংঘাত ও অন্যদের মধ্যে অহেতুক দোষ খোঁজা এড়িয়ে চলুন। সপ্তাহের শেষদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যে শুভ যোগাযোগ ঘটতে পারে। প্রেম ইন্দ্রিয়ের সীমা অতিক্রম করে। তবে আপনার ইন্দ্রিয় ভালোবাসার উচ্ছাসের অভিজ্ঞতা লাভ করবে। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্য নতুন যোগাযোগ বানাতে হবে। পরিণামে পেশার উন্নতি সাধনে সাহায্য করবে।

তুলা রাশি (২৩ সেপ্টেম্বর – ২২ অক্টোবর) সপ্তাহের শুরুতে প্রেম অপরিমিত সীমাহীন এই কথাগুলো এবার উপলব্ধি করতে পারবেন। রক্তচাপের রোগীরা রক্তচাপ কমানো ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন। সপ্তাহের মাঝদিকে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা থাকলেও সাফল্যের সম্ভাবনা। বৈবাহিক জীবনের ওপর আসা বিষয়গুলো অবিশ্বাস্য। সপ্তাহের শেষদিকে রাস্তা পার হওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে লাল সিগনালে। বৈদেশিক যোগাযোগ শুভ। রহস্যবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায় অনুরাগ জন্মাতে পারে।

বৃশ্চিক রাশি (২৩ অক্টোবর – ২১ নভেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে উচিত ভূমি সম্পত্তি জমি সংক্রান্ত সমস্যার ওপর নজর কেন্দ্রীভূত করা। প্রেম আনন্দদায়ক ও উত্তেজনা পূর্ণ হতে পারে। এ সময়ে বিনোদনের মধ্যে খেলাধুলা সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপ এবং বাইরের অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। সপ্তাহের মাঝদিকে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। পেটের বা চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। নিজের খাদ্যতালিকা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আর শারীরিকভাবে সু্স্থ থাকার জন্য ব্যায়াম করুন। সপ্তাহের শেষদিকে সাবধানে গাড়ি চালান। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী/ স্ত্রী দেবদূতের ভূমিকায় থাকবে।

ধনু রাশি (২২ নভেম্বর – ২১ ডিসেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে এমন জায়গায় সময় কাটাতে পারেন যেখানে দুর্দান্ত লোকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ যথেষ্ট। কোনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ শুভ হতে পারে। নতুন বাসগৃহ বা জমি ক্রমের সম্ভাবনা। সপ্তাহের মাঝদিকে টিভিতে সিনেমা দেখা ও কাছের প্রিয়জনের সাথে গল্প করার চাইতে ভালো আর কি হতে পারে। ক্ষমতা শক্তি বেশি থাকার কারণে প্রিয়জন অপরিসীম সুখ দেবে। সপ্তাহের শেষ দিকে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে আর স্বাস্থ্যোদ্ধার করতে এখনই শরীরচর্চা শুরু করুন। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকতে পারেন। সঙ্গীর থেকে বেশি মনোযোগ পেতে পারেন।

মকর রাশি (২২ ডিসেম্বর – ১৯ জানুয়ারি) সপ্তাহের শুরুতে আত্মীয়রা দুঃখ ভাগ করে নেবে। আপনার সমস্যাগুলো তাদের সঙ্গে খোলামনে ভাগ করে নিন। আর্থিক লেনদেনে সতর্ক থাকুন। পাওনা আদায় হবে। অর্থ বৃদ্ধির যোগ রয়েছে। সপ্তাহের মাঝদিকে সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যবসায় উন্নতি ও অবিশ্বাস্য লাভবান হতে পারেন। এ সময়ে ঘরে অন্যদের অসন্তুষ্ট না করাই উচিত হবে। আর পারিবারিক প্রয়োজনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। সপ্তাহের শেষদিকে প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। শিক্ষার্থীদের নতুন কোনো সুযোগ আসতে পারে। ভাগ্যের ওপর নির্ভর করবেন না। স্বাস্থ্যের ব্যাপারটা ভাগ্যের হাতে ছাড়বেন না।

কুম্ভ রাশি (২০ জানুয়ারি – ১৮ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের শুরুতে অনেক কিছু অর্জন করার ক্ষমতা আছে। তাই সুযোগের সঙ্গে এগিয়ে চলুন। যা আপনার দিকে আসছে। নতুন কোনো আর্থিক পরিকল্পনা করতে পারেন যা আর্থিক উন্নতি ঘটাতে পারে। সপ্তাহের মাঝদিকে আত্মীয় স্বজনের কোনো শুভ খবরে আনন্দিত হতে পারেন। সাংবাদিকদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাবে। কোনো ব্যবসায়িক/ আইনি কাগজপত্র ভালোভাবে না পড়ে সই করবেন না। সপ্তাহের শেষদিকে বন্ধুরা এখন খুব সহায়ক তবে এর জন্য দ্রুত মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে। সঙ্গীর সঙ্গে হৃদস্পন্দন মেলাতে পারবেন। এটাই নিদর্শন যে প্রেমে পড়েছেন।

মীন রাশি (১৯ ফেব্রুয়ারি – ২০ মার্চ) সপ্তাহের শুরুতে ব্যয় বাড়ার কারণে সাংসারিক অশান্তি দেখা দিতে পারে। অসাধারণ মেধা ক্ষমতা, অক্ষমতাকে জয় করতে পারে। সময়টা অনুকূলে বলা যায়। সপ্তাহের মাঝদিকে দ্রুত অর্থ উপার্জন করার আকাঙ্ক্ষার অধিকারী হবেন। রক্ষণশীল বিনিয়োগে বিনিয়োগ করে আরও বেশ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। সপ্তাহের শেষদিকে কোনো কারণে মন বিক্ষিপ্ত থাকার ফলে কাজকর্মে অনিহা দেখা দিতে পারে। ভ্রাতা বা ভগ্নীর বিয়ের যোগাযোগ আসতে পারে। ঘরবাড়ি সংক্রান্ত জটিলতায় বিভ্রান্ত হতে পারেন। বিরোধ ও বিতর্ক এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত টাকা জমি-বাড়িতে বিনিয়োগ করা উচিত।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার ‘লুট’ করা হয়।

এতে সব ধরনের সহায়তা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিভাগের কর্মকর্তারা। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ‘দেশের জনগণের কষ্টার্জিত রিজার্ভ’ সরানোর নীলনকশা তারাই চূড়ান্ত করেন। ছক অনুযায়ী ‘আরটিজিএস’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর সঙ্গে সুইফট প্রক্রিয়ার সংযোগ স্থাপন করে হ্যাকিংয়ের সূত্রপাত ঘটে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিজার্ভ হাতিয়ে নেওয়ার পুরো বিষয়টি ২৪৪ দিন গোপন রাখেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

রাষ্ট্রের এত বড় অঙ্কের অর্থ ভয়াবহভাবে হ্যাকিং ও জালিয়াতির মাধ্যমে লুটের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতেও নিষেধ করেন তিনি। সন্দেহজনক ব্যক্তির নামে ৩৫টি পেমেন্ট হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (এফআরবিএনওয়াই) ফান্ড ট্রান্সফার বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তেমন কোনো তাগিদ দেখানো হয়নি। হ্যাকিংয়ের ২৫ দিন পর ম্যানিলার দ্য ইনকোয়ারার পত্রিকার খবরে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে লোপাটের তথ্য জানতে পারে বাংলাদশের মানুষ।

এটি শুধু ছোটখাটো চুরি নয়-হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ‘ডাকাতি ও লুটের’ বড় ধরনের ঘটনা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু আট বছরেও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হ্যাকিং করে রিজার্ভ থেকে অর্থ সরানোর পরিকল্পনা শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ থেকে। দীর্ঘ এই পরিকল্পনায় জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস ও বাজেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা রিজার্ভের গোপন তথ্য সাইবার অপরাধীদের হাতে তুলে দেন। গোপনীয়তা রক্ষা না করে সরকারের মাধ্যমে দ্য ফিলিপিন্স সরকারের সঙ্গে ৫ বা ৬ ফেব্রুয়ারিই বিষয়টি উত্থাপন করা যেত। যৌথ উদ্যোগ নিলে ফান্ড হস্তান্তর ঠেকানো সম্ভব হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির ৬১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উল্লিখিত সব বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ কপি এখন হাতে। এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অংশবিশেষ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করলে এ প্রতিবেদকসহ যুগান্তর-যমুনা কর্তৃপক্ষের ওপর রাষ্ট্রীয় হয়রানি নেমে আসে। য

দিও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট জনগণকে অবহিত করা হবে। কিন্তু পরে তা গোপন করা হয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. এমএ মোমেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হলেও বাকি বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনো বেহাত।

এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই তদন্ত করেছিল। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। গেল ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশকালে রিজার্ভ চুরির সম্পূর্ণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে ফিলিপাইনের সহায়তা চাওয়া হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলার তদন্ত চলছে আট বছর ধরে। অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি এখনো এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়নি। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির অপর সদস্য হলেন-প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও গকুল চাঁদ দাস। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ জড়িত কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দায় আনার বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। এতে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়। কীভাবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যাবে, এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের (এবিডি) ডিলিং রুমের ব্যাক অফিস থেকে সহকারী পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন (সুইফট বার্তার মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত আটজনের একজন) ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় সার্ভার লগআউট করেন। কিন্তু এর আগে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ১৮টি সুইফট বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (এফআরবিএনওয়াই) ৩১ কোটি ৯৭ লাখ ১ হাজার ২০১ মার্কিন ডলার পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন দেন।

এ থেকে দেখা যায়, মানি মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য প্রতিটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের চারটি খুব বড় মাপের ফান্ড স্থানান্তরের জন্য সুইফট বার্তা শেখ রিয়াজ উদ্দিন প্রেরণ করেছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় লগআউট করে শেখ রিয়াজ উদ্দিন ৮টা ৩ মিনিটে অফিস ত্যাগ করেন। এরপর কে বা কারা শেখ রিয়াজ উদ্দিনের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ৩৬ মিনিট থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে ৩৫টি অননুমোদিত সুইফট বার্তা পাঠান। এর মাধ্যমে চারজন ব্যক্তি বেনিফিশিয়ারির কাছে বিভিন্ন ইন্টারমিডিয়ারি ব্যাংক দিয়ে মোট ৯৫ কোটি ১০ লাখ ৬ হাজার ৮৮৬ মর্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তরের আদেশ দেন।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টপ পেমেন্ট বার্তা তাদের হাতে গেলেও ফিলিপাইনের আরসিবিসি (ব্যাংক) মাকাতি শাখা ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার চারজন ব্যক্তি প্রাপকের প্রশ্নবিদ্ধ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠায়। পরে সে অর্থ ক্যাসিনো ও জাঙ্ক অপারেটরদের হাতে চলে যায়। অর্থাৎ নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মনে সন্দেহ জাগা সত্ত্বেও পাঁচটি অননুমোদিত সুইফট বার্তার পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন তামিল করা হয়। ম্যানিলার আরসিবিসি (ব্যাংক) স্টপ পেমেন্ট অগ্রাহ্য করে তা বাস্তবায়ন করে ফেলে। তখন সুইফট লাইভ সার্ভারে দূরবর্তী কোনো টার্মিনাল থেকে সংযোগ করতে পারার ঘটনা সাইবার দস্যুরা পর্যবেক্ষণ করেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অনুমোদিতভাবে পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন ইস্যু করার ফলে অর্থ লুটের ঘটনায় অধস্তন কর্মকর্তারা গভর্নরকে থানায় জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করতে অনুরোধ করলেও তিনি গ্রাহ্য করেননি। গভর্নর যুক্তি দেখান, জিডি করলে আমাদের কর্মকর্তারা হয়রানির মধ্যে পড়বেন। জিডির কপি সংযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানানোর কথা বললে গভর্নর বলেছিলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কোথায় কী বলে ফেলেন ঠিক নেই।’ এ সম্পর্কে গভর্নর আতিউর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ পায়নি তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের জনগণের সম্পত্তি বৈদশিক মুদ্রায় রিজার্ভ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তর তথা ‘ডাকাতিতে’ অপারগ হলেও ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ ডলার চুরি করে আরসিবিসি ম্যানিলায় চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারী-ষড়যন্ত্রকারী মহল। একজন বিদেশি কর্তৃপক্ষীয় লোকের পরামর্শ এবং অনিশ্চিত আশ্বাসের ভিত্তিতে সাবেক গভর্নর দেশীয় কোনো আইনানুগ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ১ মার্চ পর্যন্ত না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। তবে ওই বছর (২০১৬) ২৯ ফেব্রুয়ারি ম্যানিলার দ্য ইনকোয়ারার পত্রিকার মাধ্যমে দেশের কর্তৃপক্ষ, দেশবাসী ও অন্যরা দুনিয়া কাঁপানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাক করে নেওয়া অর্থের বিষয়টি জানতে পারে। সাইবার অপরাধীরা ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার লোপাট করেছে, এ ঘটনা সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রহস্যজনক আরটিজিএস প্রকল্পের বিষয়ে প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, স্থানীয়ভাবে আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত আরটিজিএস-এর নিরাপত্তা সুরক্ষা সংবলিত বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে সুইফট সিস্টেমের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় পাঁচ হাজার কম্পিউটার এবং এমটিবি, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটিএন-এর কয়েক হাজার কম্পিউটারের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (এলএএন) করা; এমনকি কোনো বিশেষজ্ঞ মতামত না নিয়ে সংযুক্তিটি মোটেই ঠিক হয়নি।

ভিপিএন-এর সঙ্গে সুইফটের সহযাত্রায় এন্টিভাইরাসকে মূলোৎপাটন করা এবং সুইফট সার্ভার সব সময় খোলা রাখার বিষয়টি ছিল স্পর্শকাতর। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত দুজন কর্মকর্তা ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার ডাকাতির ক্রাইমটি সংঘটিত হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছেন বলে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। সুইফট কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংক ও আরটিজিএস-এর সঙ্গে সুইফট সংযোগ হস্তান্তর বুঝিয়ে দেওয়ার নামে মি. নীলাভান্নন নামে একজনের সন্দেহজনক মিশন শুরু হয়। যার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা জুবায়ের বিন হুদা ও সালেহীনের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সিস্টেমে কাজ করার সময় মাঝেমধ্যো একা, ফিঙ্গার স্ট্রোক, পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত জেনে যাওয়া সম্ভব ছিল।

৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাত। নিউইয়র্কে সকাল (যখন ঢাকায় সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়ে গেছে) এবং ৬, ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ম্যানিলায় সম্প্রসারিত ছুটির সুযোগে চাঞ্চল্যকর অপরাধটি ঘটানো যাবে-এমন সুযোগটি কাজে লাগানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাক অফিস অপরাধীদের কাজের সুবিধা করে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকেই সাইবার অপরাধীদের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা ও সুযোগ করে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৯ বা ২০ জানুয়ারি সুইফট সিস্টেমে একটি ম্যালওয়ার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যেটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড কপি করে নিতে উৎসাহিত করেছে। আর সেটিই ৪ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ৩৫টি অননুমোদিত বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে ফান্ড স্থানান্তরে সহায়তা করেছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অননুমোদিত সুইফট বার্তার মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার আরসিবিসির মাধ্যমে চুরি হয়ে যাওয়ার দায় সুইফট অস্বীকার করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএস-এর সঙ্গে সুইফটের নেটওয়ার্কের ফলে নেটওয়ার্কের যে কোনো কম্পিউটার থেকেই ইতঃপূর্বে ম্যালওয়ারের মাধ্যমে হ্যাক হওয়া কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডি দিয়ে ওই অবৈধ বার্তাগুলো পাঠানো হয় বলেই মনে হচ্ছে। ৪ ফেব্রুয়ারি অননুমোদিত বার্তাগুলোও মুছে ফেলা হয়। সেজন্যই সেগুলো সুইফট উদ্ধার করতে পারেনি।

৩ ফেব্রুয়ারি কর্মকর্তা সালেহীনের ল্যাপটপ লগবার্তাগুলো মুছে ফেলা, ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে অথবা ১টা ২০ মিনিটে ৩৫টি অননুমোদিত বার্তায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ককে পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন পাঠানো এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা ২৩ মিনিটে সুইফট সার্ভার থেকে লগআউট করা-এসব ঘটনা যখন সংঘটিত হয়, তখন ডেপুটি ডাইরেক্টর মুখলেসুর রহমান ডেটা সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৫টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সুইফটের মাধ্যমে ৩৫টি পেমেন্টের ইনস্ট্রাকশন পায়।

আপাত মনে হতে পারে, তা অথরাইজড ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে। আসলে তা নয়। প্রথমে ১২টি এবং এর পরপরই ১২টিসহ ৩৫টি বার্তায় রিজার্ভ থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের অনুরোধ করা হয়। এ সম্পর্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সন্দেহ জাগে। তারা ফান্ড ট্রান্সফার বন্ধ করে বাংলাদেশের কাছে বেনিফিশিয়ারির বিষয়ে অধিকতর তথ্য ও ব্যাখ্যা চায়। কারণ, ৩৫টি পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন ছিল ব্যক্তির নামে। এর আগের এক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব বার্তায় ফান্ড ট্রান্সফারের অনুরোধ গেছে, এর গড় হচ্ছে এক মিলিয়ন ডলার। আর আলোচ্য ৩৫টি বার্তায় বিপুল অর্থ ট্রান্সফারের অনুরোধ করা হয়, যা গড়ে সাড়ে নয় মিলিয়ন ডলারের। পরে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি সুইফট বার্তায় ফান্ড লেনদেন স্থানান্তর করে দেয়।

অর্থনীতি

দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সরকার আজ এক কার্গো এলএনজি এবং ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার সংগ্রহের জন্য পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

রাজধানীর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (এসিসিজিপি) কমিটির ১৮তম সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে আন্তর্জাতিক কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোরিয়া’র পসকো ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন থেকে প্রায় ৬৯২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কার্গো এলএনজি ক্রয় করবে। যার প্রতি একক এলএনজির দাম হবে ১৪ দশমিক ৬৯ মার্কিন ডলার।

এছাড়া, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১০ম লটের অধীনে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে প্রায় ১২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া সার সংগ্রহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য পড়বে ৩৪৩ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিসিআইসি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১৪তম লটের অধীনে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় ১২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্রানুলার ইউরিয়া সার সংগ্রহ করবে। যার প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য হবে ৩৪৯ দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির অধীনে প্রায় ১০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকায় রাশিয়ার প্রোডিনটরগ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার সংগ্রহ করবে। যার প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম হবে ৪৮৯ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।

এছাড়াও, বিএডিসি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির অধীনে মরক্কোর ওসিপি নেউট্রিক্রপস থেকে ২৮০ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার সংগ্রহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম হবে ৫৮৪ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।

অর্থনীতি

ডিসেম্বরের ২১ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে দুইশ’ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বা দুই বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)।

সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এটি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের ২১ দিনে প্রতিদিন এসেছে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৮০ ডলার। ডিসেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ের নতুন মাত্রা যোগ করলো। কারণ, ২১ দিনের মধ্যে প্রতিদিন যে প্রবাসী আয় এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে এমন প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়নি। আগের মাস নভেম্বরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল সাত কোটি ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার। আর আগের বছরের ডিসেম্বরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৩ ডলার।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত কৃষি ব্যাকের মাধ্যমে এসেছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সব বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

একক ব্যাংক হিসাবে ডিসেম্বরের প্রথম ২১ দিনে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংক -এর মাধ্যমে ২৭ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক -এর মাধ্যম ১৫ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

অর্থনীতি

পাকিস্তান থেকে চিনি, আলুসহ শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম রুটের প্রথম জাহাজ এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং (YUAN XIANG FA ZHAN)। জাহাজটির প্রথম ট্রিপের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি কনটেইনার এসেছে দ্বিতীয় ট্রিপে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) জাহাজটি বাংলাদেশ জলসীমায় পৌঁছে। তবে জাহাজটি কনটেইনার খালাস ও খালি কনটেইনার লোড করার জন্য বন্দরের এনসিটি জেটিতে আসবে রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে।

এখানে কাজ শেষ করতে ২ দিন সময় লাগবে। যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম থেকে ইন্দোনেশিয়ার বন্দরের জন্য ৪০০ টিইইউ’স এবং মালয়েশিয়ার বন্দরের জন্য ৬০০ টিইইউ’স খালি কনটেইনার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ফিডার লাইনস ডিএমসিসি দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-ভারত-দুবাই রুটে ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ জাহাজটি চালু করেছে। রিজেনসি লাইনস লিমিটেড জাহাজটির বাংলাদেশের লোকাল এজেন্ট।

সূত্র জানায়, এবারের ট্রিপে ৭৮০ বক্সে ৮২৫ টিইইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে) কনটেইনার এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর জন্য। এর মধ্যে দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে জাহাজে তোলা হয়েছে ১০৫ বক্সে ১২৬ টিইইউ’স এবং পাকিস্তানের করাচি থেকে তোলা হয়েছে ৬৭৮ বক্সে ৬৯৯ টিইইউ’স কনটেইনার। এসব কনটেইনারে রয়েছে- চিনি, সোডা অ্যাশ, ডেনিম ফেব্রিক, সুতো, ডলোমাইট লুম্পস, ন্যাচারাল ডলোমাইট, ড্রাই ফিশ (শুঁটকি), ইউপিএস, আলু, রেডিয়েটর কোর ইত্যাদি।

শিপিং এজেন্ট, বন্দর ব্যবহারকারী ও আমদানিকারকদের মতে, দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চালু হওয়ায় মেরিটাইমে গুরুত্বপূর্ণ দুই বিবেচ্য বিষয় ‘ভাড়া’ ও ‘সময়’ সাশ্রয় হচ্ছে। এতে আগ্রহী হচ্ছেন এ রুটের আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা। জাহাজটির লোকাল এজেন্ট ও প্রিন্সিপালের (মূল মালিক) এ রুটে আরেকটি নতুন জাহাজ নামানোরও পরিকল্পনা রয়েছে।

পানামা পতাকাবাহী এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং (YUAN XIANG FA ZHAN) নামের কনটেইনার জাহাজটি প্রথম ট্রিপে দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে গত ১১ নভেম্বর। জাহাজটিতে ৩২৮ বক্স কনটেইনারে ৩৭০ টিইইউ’স (২০ ফুট হিসেবে) কার্গো নামানো হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয় ২৯৭ একক কনটেইনার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয় ৭৩ একক কনটেইনার। কনটেইনারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেই ছিল টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল, কাচ শিল্পের কাঁচামাল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রং, কাঁচামাল, কাপড়। ৪২টি রেফার (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) কনটেইনারে ছিল পেঁয়াজ ও ১৪ কনটেইনারে ছিল আলু। এ ছাড়া ফেব্রিকস, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজ, ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, ডলোমাইট ইত্যাদিও ছিল। এসব পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশের আকিজ গ্লাস কারখানা, প্যাসিফিক জিনস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাসির গ্লাস, এক্স সিরামিকস, হাফিজ করপোরেশন, এমআর ট্রেডিং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।