আন্তর্জাতিক

ভারতজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একই সঙ্গে করানোর প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে।

বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হয়েছে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের লক্ষ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ। এর ফলে সংসদের অধিবেশনে এই নীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে কেন্দ্র বিল পাশে সক্রিয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখা ও অর্থ অপচয় ঠেকাতে লোকসভা, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ও পৌরসভা-পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনের ভোট একই সঙ্গে করা উচিত। প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই ভোট হয়ে গেলে ভারতের মতো গণতন্ত্রের দেশের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। উন্নয়নের কাজও ব্যাহত হবে না।

‘এক দেশ এক ভোট’ কার্যকরের বিষয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছিল মোদি সরকার। লোকসভা ভোটের আগেই গত ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সব ক’টি বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি জমা দিয়েছিল কোবিন্দ কমিটি। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ কমিটির অন্য সদস্যেরা।

রিপোর্টে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী, নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অভিমত নেওয়া হয়েছে।

তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি চালু করতে গেলে আগে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। সে জন্য দরকার বিলের পক্ষে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন। সেই সমর্থন বিজেপি ও তার সহযোগীদের নেই। সংবিধানের সংশোধন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত বিধানসভাতে পাস করানোও বাধ্যতামূলক।

আন্তর্জাতিক

নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি দেন জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটি এক বিলিয়ন ইউরোর সাহায্যে দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদারদের একটিতে পরিণত হয়েছে। জার্মানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

আখিম ট্রোস্টার বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য জার্মানি আট বছরের মধ্যে ৬শ’ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দেবে। এটি একটি বিশেষ সুবিধা। কারণ কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি যারা এই সহায়তা পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক

সৌদি গোয়েন্দা পরিষেবার সাবেক প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল বলেছেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ফয়সাল লন্ডন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসে এক বক্তৃতায় গাজা যুদ্ধের বছর পেরোনোর আগে শান্তি প্রক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন এবং জানান এই যুদ্ধের আগে শুরু হওয়ার আলোচনা (সৌদি- ইসরায়েল সম্পর্ক বিষয়ে) ইতিবাচকই ছিল।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে আগ্রহী, কিন্তু রিয়াদের অবস্থান হল, যদি এমন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় যার অস্তিত্ব ইসরায়েল স্বীকার করে, তাহলে আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে কথা শুরু করতে পারবো। খবর আরব নিউজ

এই সময় আল-ফয়সাল বলেন ১৯৮১ সালের কিং ফাহদ শান্তি পরিকল্পনা এবং বাদশাহ আবদুল্লাহ কর্তৃক প্রস্তাবিত ২০০২ আরব শান্তি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, সৌদি আরব সবসময় এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে এসেছে। সৌদি আরব চায় ১৯৬৭ সালে সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেম যুক্তকরে একট স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র।

বক্তব্যে গাজা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে চাপ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলি লবিস্ট গ্রুপের উপর থেকে কর রেয়াতের সুবিধা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরাইলকে সমর্থন করবে না আমিরাত

ফিলিস্তিনে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের প্রভাবে দিনদিনই জনমত হারাচ্ছে ইসরাইল। শুরুর দিকে ইসরাইলকে সমর্থন দিলেও এখনও অনেকেই আর সমর্থন দিতে পারছেন না এই যুদ্ধে। ইসরাইলের নাগরিকরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি। গাজায় বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এরইমধ্যে গণবিক্ষোভ করছে দেশটির নাগরিকরা। এই অবস্থায় ইসরাইলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।

সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা গাজায় ইসরাইলের পরিকল্পনায় সমর্থন করবে না। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া গাজা যুদ্ধে সমর্থন করতে প্রস্তুত নয়।’

এর আগে, গত মে মাসে, ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু গাজার জন্য একটি যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা অনলাইনে প্রকাশ করেন। যেখানে তার দাবি, এটি বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনিরা অতুলনীয় সমৃদ্ধি উপভোগ করবে। এই পরিকল্পনায় বন্দর, সৌর শক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন এবং নতুন আবিষ্কৃত গাজা গ্যাসফিল্ডের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর এই পরিকল্পনা যুদ্ধে বিজয়ের পর আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হতো।

যেই রোডম্যাপে বলা হয়েছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে পরিকল্পনাটি চালাবে। যা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, জর্ডান এবং মরক্কোসহ আরব রাষ্ট্রগুলির একটি জোট তত্ত্বাবধান করবে।

যার প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহুকে নিন্দা করেছেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ। তার মতে, ‘এই পদক্ষেপটিতে বাস্তবায়ন বা অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়ার বৈধ কর্তৃত্বের অভাব ছিল। কেননা, গাজা পরিকল্পনা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। এছাড়াও, সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি উপস্থিতি কভার প্রদানের লক্ষ্যে যে কোনও পরিকল্পনায় জড়িত হতে অস্বীকার করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন একটি ফিলিস্তিনি সরকার গঠিত হবে যা ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। সততা, যোগ্যতা এবং স্বাধীনতার দ্বারা আলাদা হবে। তখন সংযুক্ত আরব আমিরাত সেই সরকারকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকবে।’

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল সাক্ষাতে এলে ড. ইউনূস এ সহায়তা চান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার স্বৈরশাসনের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের অর্থ দেশে ফেরত আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির সাগরে ছিলাম।

অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, তার প্রশাসন অর্থনীতি সংস্কার এবং পুনরায় সচল করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং আমাদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই ভোট জালিয়াতি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগ, পুলিশ, বেসামরিক প্রশাসন, দেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, এ সংস্কার এজেন্ডায় সহায়তা করতে পারলে ওয়াশিংটন খুশি হবে।

এ সাক্ষাতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-সহ অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেন, তাদের দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রমিক ইস্যু, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

আন্তর্জাতিক

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ছয় ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার রুশ গোয়েন্দা বাহিনী ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসকে (এফএসবি) উদ্ধৃত করে রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি এ খবর দিয়েছে।

এফএসবির দাবি, তাদের কার্যকলাপ (ব্রিটিশ কূটনীতিকদের) রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। রাশিয়ান বার্তা সংস্থা তাস ওই ছয় জনের ছবি প্রকাশ করলেও, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি।

এফএসবি জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন নথি রয়েছে, যেখানে লন্ডনের ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি দলকে রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের পাশাপাশি ও নাশকতা উসকে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যাতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় নিশ্চিত হয়।

এফএসবি এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রকাশিত তথ্যগুলো রাশিয়ান ফেডারেশনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হওয়ায় যুক্তরাজ্য থেকে মস্কোয় পাঠানো কূটনীতিকদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায়। তাছাড়া রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের দেওয়া নথির ভিত্তিতে ও লন্ডনের অসংখ্য অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ব্রিটিশ দূতাবাসের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের ছয় সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স ও তাস

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দফতরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে আজ  শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় আসছে উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আগামীকাল ঢাকা এলেও মূলত বৈঠকগুলো হবে আগামী রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর)।

ওই দিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে প্রতিনিধিদল।
এদিন দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। বিকেলে প্রতিনিধিদলের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দফতরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ব্রেন্ট নেইম্যান ছাড়াও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও ইউএসএইডের এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর। এর মধ্যে দিল্লি হয়ে ঢাকায় আসবেন ডোনাল্ড লু।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। দুই দেশ সফরের সময় ডোনাল্ড লু ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার বিকাশে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।

সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য আলোচনা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্যই মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের আসন্ন ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হবে। তারা অল্প সময়ের জন্য আসছেন, তবে সব বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করবো। আমরা চেষ্টা করবো, তাদের সঙ্গে যে বিষয়গুলো আছে, সেটাকে এগিয়ে নেওয়ার।

এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা।

উল্লেখ্য, এর আগে গত মে মা‌সে মার্কিন এক‌টি প্রতি‌নি‌ধিদলের স‌ঙ্গে ঢাকা সফর ক‌রে‌ছি‌লেন ডোনাল্ড লু।

আন্তর্জাতিক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দুঘণ্টার বেশি সময় বসে থেকেও তাদের দেখা পাননি। পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মমতা।

মূলত মঙ্গলবার থেকে কলকাতায় স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পরে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তবে প্রথম থেকেই বৈঠকে বাসার জন্য দুটি শর্ত জুড়ে দেন চিকিৎসকরা। এই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার এবং ৩০ জন প্রতিনিধি নিয়ে নবান্নে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে এই দুই শর্তেই আপত্তি জানায় রাজ্য সরকার।

বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যারা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাদের আমি ক্ষমা করলাম। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।

এদিন মমতা বলেন অনেকে (আন্দোলনকারী) বৈঠক করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল। দুতিন জন রাজি হননি। আমি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। ডাক্তারদের অনুরোধ করছি, কাজে ফিরুন।

পদত্যাগ করতে রাজি আছেন জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বিচার চান না। চান ক্ষমতার চেয়ার।

আন্তর্জাতিক

গাজায় প্রায় ৩০০ ত্রাণকর্মী মারা গেছেন, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি জাতিসংঘের কর্মী বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ গাজায় নিহত জাতিসংঘের কর্মী ও অন্যান্য ত্রাণ কর্মীদের হত্যার ঘটনায় জবাবদিহির অভাবও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, গাজায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য৷ গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও নেতানিয়াহু তার ফোন ধরেননি বলে জানান গুতেরেস৷ খবর ডয়চে ভেলের।

গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ‘অত্যন্ত নাটকীয় লঙ্ঘন ঘটছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব৷

গাজায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন৷

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রতিশোধ বিষয়ে গুতেরেস বলেন, সেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অত্যন্ত নাটকীয় লঙ্ঘন ঘটছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি সেখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি৷

তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করে৷ গাজায় নিহতদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জঙ্গি বলে দাবি করে তারা৷ হামাস সাধারণ নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী৷ তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে গুতেরেসের কথা না হওয়া প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলিনি কারণ তিনি আমার ফোন ধরেননি৷

দুই সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সময় নেতানিয়াহু তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি আছেন বলেও জানান গুতেরেস৷

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, আমার তার সঙ্গে কথা না বলার কোনো কারণ নেই৷

বর্তমান পৃথিবীর অবস্থাকে ‘বিশৃঙ্খল’ বলে আখ্যায়িত করেন গুতেরেস৷ তিনি বলেন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷

আন্তর্জাতিক

বাতিল হচ্ছে জ্বালানি খাতের ৪ মেগা প্রকল্প। এগুলো হচ্ছে-কক্সবাজারে অবস্থিত সামিট পাওয়ারের তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ), এস আলম গ্রুপের ইস্টার্ন রিফাইনারির ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ এবং ভোলায় রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের ৫টি কূপ খনন প্রকল্প। এছাড়া বাতিলের তালিকায় আছে একক কোম্পানিকে দিয়ে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে আনার সিদ্ধান্ত। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সামিটের তৃতীয় এফএসআরইউ : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বৈঠকেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আলোচিত এই প্রকল্পটি বাগিয়ে নিয়েছিল সামিট গ্রুপ। কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওই বৈঠকে ১৭ হাজার কোটি টাকার এলএনজি টার্মিনালের কাজ দেওয়া হয় সামিটকে। মাত্র ১০ দিনের প্রক্রিয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর একক সিদ্ধান্ত ও চাপে সামিটকে এই কাজ দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির (বিশেষ আইন) আইন ২০১০ এর আওতায় তৎকালীন সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৩০ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে (দ্বিতীয় তলা) ‘গ্যাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ওই বৈঠকেই মহেশখালীতে ভাসমান তৃতীয় এলএনজি টার্মিনালের কাজ সামিটে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে (১০ জুন) কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব (বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব) মো. মাহবুব হোসেন, তৎকালীন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান (বর্তমান পানিসম্পদ সচিব) নাজমুল আহসানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিশেষ আইনে করা সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এজন্য ৫ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এ ধরনের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা এখন ভাসমান টার্মিনালের চেয়ে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চিন্তা করছি। এখন থেকে সব হবে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায়।’

জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে তৃতীয় এফএসআরইউ স্থাপনের জন্য বেশকিছু কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টার নির্দেশে শুধু সামিটের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই সামিটের প্রস্তাব আমলে নিয়ে তাদের কাজ দেওয়া হয়। এমনকি সামিটকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন দেয়। নিয়ম অনুযায়ী কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনের পর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও কাজের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা এফএসআরইউ নির্মাণের খসড়া চুক্তি অনুমোদন করে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুমোদিত খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল চালুর পর থেকে ১৫ বছর মেয়াদে দৈনিক ৩ লাখ ডলার (চুক্তিতে উল্লিখিত বিনিময় হার অনুযায়ী ৩ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ) রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ পাবে সামিট।

গ্যাজপ্রমের ৫ কূপ খনন প্রকল্প : জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই এখনো শেষ হয়নি। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করা হলেও ২০২৬ সালের আগে সঞ্চালন লাইন হচ্ছে না। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর আশায় ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হয় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) আবিষ্কার করা এ গ্যাসক্ষেত্রে বিনা দরপত্রে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়।

বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিজস্ব লোকবল দিয়ে তাদের একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কূপ খনন করতে গিয়ে খরচ হয় ১৮০ কোটি টাকার মতো। ২০২০ সালে তিনটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দিতে হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, সরকার গ্যাজপ্রর্মের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে তিনি শুনেছেন যদি এই প্রকল্প বাতিল হয় তাহলে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কূপগুলো খনন করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন খুবই গ্যাস ক্রাইসিস আছে। তাই টার্গেট হচ্ছে স্থানীয়ভাবে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন করা। সেজন্য যদি কোনো প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়, তাহলে যাতে সময়ক্ষেপণ না হয়, সেজন্য সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে।

বিনা দরপত্রে ও বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘কূপ খনন করার জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার তা বিনিয়োগ করা সরকারের উচিত ছিল। এখন যন্ত্রপাতি না থাকার অজুহাতে বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিকে কূপ খননের কাজ দেওয়া অপরাধ।’

ইআরএল ও এস আলম গ্রুপের প্রকল্প : ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) এবং এস আলম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাতিল করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২৯ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বিপিসির আওতাধীন ইআরএল কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিপিসি/ইআরএল এবং এস আলম গ্রুপের মধ্যে সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগী চুক্তির আওতায় বাস্তবায়ন প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পটির ডিপিপি বৈদেশিক মুদ্রার হালনাগাদ রেট অনুযায়ী প্রাক্কলন এবং সব ক্রয় পরিকল্পনা পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী প্রণয়নপূর্বক পরিকল্পনা কমিশনে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানোর জন্য বিপিসিতে পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

একক কোম্পানিকে দিয়ে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে আনার সিদ্ধান্ত : ভোলার গ্যাস সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) করতে আরও একাধিক কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হবে। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে কোম্পানিগুলো নির্বাচন করা হবে। বর্তমানে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ও দরপত্র আহ্বান ছাড়া একটি বিশেষ কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির নাম ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন। জানা গেছে, কোম্পানিটি ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করে সাড়ে চারশ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শেয়ার বাজার থেকে। আর এ উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। নিজের পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিতে কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই বিশেষ আইনে ভোলার গ্যাস সিএনজি করার চুক্তি করা হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ছাত্র-জনতা মিলে ভোলায় অবস্থিত ইন্ট্রাকোর রিফুয়েলিং স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। এখনো স্টেশনটি বন্ধ আছে। অন্যদিকে, এ খাতের ব্যবসায়ীরা চুক্তি বাতিল করে পুনরায় দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অটোগ্যাসের স্টেশন মালিক সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল মাওলা এ প্রসঙ্গে বলেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি করার প্রকল্পে সরকার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিকে বিশেষ আইনে কাজ দিয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি যে পদ্ধতিতে ভোলার গ্যাসকে সিএনজি করেছে, তা জটিল। এর চেয়ে সহজ পদ্ধতি বা টেকনোলজি আছে। কিন্তু ওই কোম্পানি ছাড়া কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেক কোম্পানি সেই সময় আগ্রহ দেখালেও কাউকে কাজ দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, প্রায় ৮ থেকে ১০টি কোম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহের আগ্রহ দেখালেও প্রতিমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় ইন্ট্রাকোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে পেট্রোবাংলা। ইন্ট্রাকোর এমডি রিয়াদ আলী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সহযোগী। এর আগেও এই ইন্ট্রাকোকে একাধিক এলপিজি ফিলিং স্টেশন করার অনুমোদন দেন নসরুল হামিদ।

চুক্তি অনুযায়ী, ইন্ট্রাকো সরকার থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনেছে ১৭ টাকায়। আর বিক্রি করছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়। ঘনমিটারপ্রতি লাভ ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। এই হিসাবে দৈনিক লাভের পরিমাণ ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ভোলার গ্যাস সরবরাহ করে মুনাফার নামে ৪৫৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ইন্ট্রাকো। বন্ধ না হয়ে কার্যক্রম চালু রাখা হলে বছরে মুনাফা হবে ৭৮০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটা খুবই অস্বাভাবিক।

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ক্রয়মূল্য ১৭ টাকার পরিবর্তে ২৭ টাকা এবং কম্প্রেশন চার্জ প্রতি ঘনমিটারে ১০ টাকা হারে যোগ করে বিক্রয় মূল্য ৩৭ টাকা ধার্য করা হলে সরকার, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা লাভবান হবেন। আগ্রহী শিল্প মালিকরা এই গ্যাস পরিবহণ ভাড়া পরিশোধ করে তাদের কারখানায় নিয়ে যাবেন। বর্তমানে ভোলার তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন ঢাকা সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে পররাষ্ট্র সচিব কয়েকজন সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে এ তথ্য জানান।

জসীম উদ্দিন বলেন, আলোচনাটা শুরুর আগে আমি এমন কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যাতে করে আলোচনার স্বাভাবিকতা ক্ষুন্ন হয়। আমি শুধু এটা বলতে পারি, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দলের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা যে সম্পর্ককে গুরত্ব দেয়, এটা তার একটা বড় প্রতিফলন। এর মধ্যে কারা কারা (প্রতিনিধিদলে) থাকছেন আপনারা জেনেছেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই যে প্রতিনিধিদলে কারা থাকছেন এটা থেকে বোঝা যায়, এই আলোচনাটা বহুমাত্রিক হবে, এটা শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলব এবং তা হবে বহুমাত্রিক। কিন্তু আমি আলোচনার আগে বা প্রতিনিধিদল বসার আগে কোনো ধরনের সুনির্দষ্ট এজেন্ডার বিষয় প্রকাশ করে আলোচনাকে প্রভাবিত করতে চাই না।

আগামী শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় আসবে। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, পররাষ্ট্র দপ্তর, বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকছেন। তাদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডসে ফোর্ড, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন।