আন্তর্জাতিক

হামাসের সঙ্গে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান সব দিক থেকেই সম্প্রসারণ করেছে। সোমবারও টানা চতুর্থ দিনের মতো ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএএফ)।

এতে তিন দিনে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এরই মধ্যে সোমবার সকালে আরও ২০টি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়ে আইডিএএফ সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে। গাজার উত্তরের অভিযান শেষ করে তারা এখন ক্রমেই দক্ষিণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসির।

হামাসের সঙ্গে শুক্রবার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার পর গাজায় স্থল অভিযান বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। এর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গাজাজুড়েই হামাসের শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করে আইডিএফ অভিযান জোরদার করেছে। ইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল গাজায় প্রায় ১০ হাজার বিমান হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি জানিয়েছেন, অভিযান শুরুর পর আইডিএএফ ৮০০ উঁচু স্থাপনা নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসামরিক এলাকাতে নির্মিত অনেক টানেল ও রাস্তাও ধ্বংস করা হয়েছে। এ দিকে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার বলেছেন, দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের সম্ভাব্য অভিযান নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায় থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হচ্ছে, উত্তরে যা ঘটানো হয়েছে, দক্ষিণে কোনোভাবে সেটা ঘটতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, প্রতি ১০ মিনিটেই একটি করে বোমা ফেলা হচ্ছে। এখানে হাসপাতাল, আশ্রয় শিবির বা অন্য কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। আমিও কোথাও নিরাপদ বোধ করছি না। কেউই এখনো নিরাপদ বোধ করেন না। এদিকে আইডিএফ সোমবার জানিয়েছে গাজায় ২০০ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

শনিবার থেকে ইসরাইলি বাহিনীর এ হামলায় ৮শর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫,৫২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল কুদরা বলেন, এ হামলায় ৪১,৩১৬ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

এদিকে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে হাসপাতালে মরদেহ আসতে শুরু করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুর্স আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘মরদেহের প্রবাহে আমাদের হাসপাতগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। আমাদের হাসপাতালগুলো আহতদের আর কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। ইসরাইলের সেনারা আমাদের সব চিকিৎসা সরঞ্জাম ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, বিদ্যুতের অভাবে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যাবে।

মহাপরিচালক আরও জানিয়েছেন, ইসরাইলিদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন, যার মধ্যে মাত্র ৪০০ জন দক্ষিণ দিকের রাফাহ অঞ্চলে পৌঁছাতে পেরেছেন।

‘কৌশলগত পরাজয়’ ঘটতে পারে ইসরাইলের : গাজা উপত্যকায় চলমান অভিযানে যদি শিশু-নারী ও বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যুদ্ধে হামাসের বিরুদ্ধে জয় পেলেও কৌশলগতভাবে ইসরাইল পরাজিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।

রোববার ক্যালিফোর্নিয়ার সিমি ভ্যালিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে অস্টিন বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে তাতে বর্তমানে সেখানে গুরুত্বের একদম কেন্দ্রে অবস্থান করছে উপত্যকার সাধারণ বেসামরিক লোকজন। ইসরাইলের অভিযানের কারণে হামাসের ওপর যদি তাদের নতুন করে আস্থা বাড়তে শুরু করে সেক্ষেত্রে হামাসের বিরুদ্ধে জয়ী হলেও কৌশলগতভাবে পরাজিত হবে ইসরাইলি বাহিনী।

আন্তর্জাতিক

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা তাকিয়ে তাকিয়ে ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞ দেখে, তারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।

মন্ত্রী আজ দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইওসেফ রামাদানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরকে আরো বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে যেভাবে গাজায় নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে এবং যারা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে বরং ইসরাইলি আক্রমণকারীদের পক্ষ অবলম্বন করেছে, আমি মনে করি তারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ সবার কানে ফিলিস্তিনিদের এই আর্তনাদ পৌঁছাবে, অবিলম্বে সেখানে পূর্ণ যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হবে এবং ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।’

‘আমাদের সরকার, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ছিলেন, আছেন, থাকবেন’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নেতা হিসেবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এবং গাজায় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিশেষ আলোচনার আয়োজন করেছেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী জানান, ফিলিস্তিনের পাশে থাকার জন্য আমাদের সরকারের অঙ্গীকার এবং ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান রাষ্ট্রদূতকে পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা মনে করি, স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব অন্য কোনো কিছু নয়।

হাছান মাহমুদ আরো জানান, ফিলিস্তিনিদের প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চার হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও যেভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন করে ফিলিস্তিনি ডাক্তারেরা গাজায় কিভাবে সেবা দিচ্ছে সেগুলোর ভিডিও তিনি আমাকে দেখিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে যে সাহায্য সহযোগিতা পাঠিয়েছি সেগুলো তিনি সবিস্তারে বলেছেন।

বৈঠক শেষে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইওসেফ রামাদান সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোর পরিবেশিত সংবাদ এবং শব্দ এদেশের গণমাধ্যমে হুবহু কপি না করে যাচাই করে পরিবেশনের অনুরোধ জানান।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের প্রতিনিধির উপস্থিতি এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দেশটির চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ-২৮) অংশ নেওয়া ইরানের একটি প্রতিনিধিদল সংযুক্ত আরব আমিরাতে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের স্থান ত্যাগ করেছে।

জ্বালানিমন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ানের নেতৃত্বে ইরানের প্রতিনিধিদল শুক্রবার দুবাইয়ে জাতিসংঘের কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

দুবাই ছাড়ার আগে মেহরাবিয়ান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনে ভুয়া ইহুদিবাদী সরকারের রাজনৈতিক ও পক্ষপাতদুষ্ট উপস্থিতি এ সম্মেলনের উদ্দেশ্যের বিপরীত।

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সরকারের কয়েক দশক ধরে রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞের জবাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস দখলদারদের বিরুদ্ধে আকস্মিক অপারেশন আল-আকসা স্ট্রোম শুরু করার পর গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

গাজায় ইসরাইলি সহিংসতা পশ্চিম তীরেও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে ৭ অক্টোবর থেকে সেনা বা বসতি স্থাপনকারীদের হাতে প্রায় ২৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় আটক ১০৫ জন ইসরাইলি বন্দি এবং ২৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পায়।

আন্তর্জাতিক

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় নেতৃত্ব এবং সোচ্চার কণ্ঠস্বরের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুবাইয়ে কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি এ পুরস্কার দেয়।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এ পুরস্কার নেন কপ-২৮ এ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

উচ্চ পর্যায়ের এ অনুষ্ঠানে সহ-সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ড্যানিস ফ্র্যান্সিস ও আওএমের জেনারেল সেক্রেটারি অ্যামি পোপ।

আন্তর্জাতিক

হেনরি কিসিঞ্জার। জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। অভিবাসী হয়ে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। হয়ে উঠেছিলেন সে দেশেরই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নাগরিক হওয়ার পর থেকেই দেশটির প্রতি তার অনুরাগ ও আনুগত্য বাড়তেই থাকে।

সেখান থেকেই জন্ম নেয় অপকর্মের। কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে গিয়ে চালিয়েছেন হত্যাযজ্ঞ। মিত্রদের সাথে হাত মিলিয়ে ভয়ংকর যুদ্ধাপরাধের মতো জঘন্য কাজও করেছেন সমানতালে। তার কূটনৈতিক বুদ্ধিতে বিভিন্ন দেশে ঘটেছে গৃহযুদ্ধও। অভিবাসী থেকে হয়ে উঠেছেন যুদ্ধাপরাধী। বারবার আলোচিত, সমালোচিত হওয়া শতবর্ষী এই নেতা বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

কিসিঞ্জার ১৯২৩ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে নাৎসি নিপীড়ন থেকে বাঁচতে জার্মানি থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। পরে ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। সেখানে হিসাববিজ্ঞান অধ্যয়নের পরিকল্পনা করলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ভাষা দক্ষতা আর সামরিক বুদ্ধিমত্তায় ছিলেন এগিয়ে। পরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সেও কাজ করেছেন। কিসিঞ্জার ১৯৬৮ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত হন। এটিই তাকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলার সুযোগ করে দেয়। প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সময়ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এখান থেকেই তার বীভৎস রূপ ফুটে উঠেছিল। এ পদ তাকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দীর্ঘ ও বিস্তৃত স্নায়ুযুদ্ধ পরিচালনা করার সুযোগ দেয়। রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান ঘটালেও খারাপ প্রভাব পড়ে যায় কম্বোডিয়ার উপরে। ১৯৬৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে কিসিঞ্জার তার সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়গুলোর সূচনা করেন। যেটা ছিল কম্বোডিয়ায় গোপন বোমা হামলা চালানো।

কম্বোডিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধ হওয়ার কথা না থাকলেও চার বছর ধরে (১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত) দেশটিতে গোপন বোমা হামলা চালানো হয়। বিভিন্ন অনুমান অনুসারে, এ হামলার অভিযানে শেষ পর্যন্ত এক লাখ ৫০ হাজার থেকে দেড় মিলিয়ন কম্বোডিয়ান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

১৯৭১ সালে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির দায়িত্বে থাকাকালীন সময় কিসিঞ্জার বাঙালি জনগণের ওপর নৃশংস দমনপীড়ন চালানোর জন্য পাকিস্তানের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রিরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খলনায়ক। এ ছাড়াও ১৯৭৩ সালে চিলিতে সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলেন। যার ফলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার আগ্রাসনেও সমর্থন দিয়েছিলেন একইভাবে। ফোর্ড প্রশাসনের সময় তার নীতিগুলো আফ্রিকা বিশেষ করে অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধকেও উসকে দিয়েছিল। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়, কিসিঞ্জার হত্যাকারী শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সংঘাত চালাতে যে ইন্ধন যুগিয়েছেন তা লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এছাড়া অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটিয়েছেন অহরহ। অথচ কিসিঞ্জার সেইসব অপকর্মের জন্য কখনো অনুশোচনা করেননি। এর বিনিময়ে কখনো মূল্যও চোকাতে হয়নি তাকে। উলটো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক, প্রেস এবং সামাজিক অভিজাতদের সদস্য হিসেবে ভালো অবস্থানে ছিলেন।

কিসিঞ্জার উত্তর ভিয়েতনামের লে ডুক থোর (ভিয়েতনামের বিপ্লবী নেতা) সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। এ সময়ও পড়েছিলেন নানা বিতর্কের মুখে। নোবেল শান্তি পুরস্কারে কিসিঞ্জারের নাম ঘোষণার পরপরই নোবেলের ব্যঙ্গাত্মক নাম ছড়িয়ে পড়ল দেশে দেশে- ‘নোবেল ফর দ্য ওয়্যার প্রাইজ’!কিসিঞ্জারের নামের সঙ্গে নিজের নাম ঘোষণায় পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন বিপ্লবী নেতা লে ডুক থোরও। হাওয়া বুঝে পুরস্কার নিতে যাননি কিসিঞ্জারও।

আন্তর্জাতিক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ)-এর ২৮তম আসর। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের ১৯৮টি দেশের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। এতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটেনের রাজা চার্লসসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। তবে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। কপ-২৮ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা পরিবেশের দূষণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করবেন। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন।

কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি আবুধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ আল জাবের। সম্মেলনে কার্বন নির্গমনবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরিবেশে কার্বন নির্গমনের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী জ্বালানি তেল। তাই সম্মেলন সফল করতে আল জাবের কতটুকু সৎভাবে কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এর আগে আল জাবেরের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে গ্যাস ও অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনার নথি ফাঁস হওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিবিসি। এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে কপ-২৮ এর এক মুখপাত্র।

কপ-২৮ সম্মেলনে মোটা দাগে চারটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে পারে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো জ্বালানির ব্যবহার স্থানান্তর (জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার)। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে ৬০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় কাজ করা।

এছাড়া সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি, জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত, নাকি জলবায়ুর ওপর এসব শিল্পের প্রভাব কমাতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন রয়েছে। সম্মেলনে সেই বিভাজন আরও স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ বাড়াতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ লক্ষ্যে সম্মেলন চলাকালীন একটি চুক্তি করতে চায় এই তিন দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে একটি চূড়ান্ত তহবিল গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে এর খসড়া তৈরি হয়েছে। সম্মেলন চলাকালীন সেই খসড়া অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হবে।

কপ-২৮ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো গ্লোবাল স্টকটেক নিয়েই মূল আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। গ্লোবাল স্টকটেকে মূলত সম্মেলনের সদস্য দেশগুলো নিজেদের ক্ষেত্রে জলবায়ু সংক্রান্ত কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জলবায়ুবিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে গিয়ে কী কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে প্যারিস চুক্তির সামগ্রিক বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হয়েছে সেটিও মূল্যায়ন করা হবে।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কপ-২৮ সম্মেলনে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমনকে ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কাজ করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে ২০২৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাতিল করারও সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বন্ধ করতেও উদ্বুদ্ধ করা হবে।

কপ-২৮ সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজের (জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অপরিবর্তনীয় ক্ষতি) বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ সংক্রান্ত তহবিলের অগ্রগতি বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। কারণ এ ধরনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য উন্নত দেশগুলো নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে তহবিল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি চুক্তি হয়েছিল গত বছরের কপ-২৭ শীর্ষ সম্মেলনে। সে সময় দুই বছরের মধ্যে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আন্তর্জাতিক

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ দু’দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চুক্তিতে পৌঁছানোর এই ঘোষণা দিয়েছেন।

চুক্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার এবং বুধবার ১০ জন করে— মোট ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে দু’দিনে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি থাকা ৬০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকেও আরও দুই দিন যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

দীর্ঘ ৪৮ দিন যুদ্ধাবস্থার পর গত শুক্রবার হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চার দিনের এ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির শেষ দিন ছিল সোমবার।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলায় এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৫৪ ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, এখানে যদি কেউ (বিদেশি) সহায়তা করতে চায়, স্বাগত জানাব। কিন্তু আমরা মাতব্বরি করতে দেব না।

যারা মাতব্বরি করবে তাদের আমরা সহ্য বা গ্রহণ করতে পারি না।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদরা এটার জন্য দায়ী। কিছু হলেই মিশনে গিয়ে ধর্না দেয়। সম্প্রতিকালে আমাদের মিডিয়াও এটার জন্য দায়ী। কিছু বাঙালি বিদেশি আছে, তারাও এটার জন্য দায়ী। কয়েকটি গোষ্ঠী কারণে বিদেশিরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়। প্রত্যেক দিন মার্কিন মুখপাত্রকে ত্যক্ত করে ফেলে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা, বাংলাদেশি লোকেরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুপার পাওয়ার। আমরা তাদের অগ্রাহ্য করতে পারি না। আমরা করিও না। আমাদের কোনো উদ্দেশ্যও নাই। আমরা তো এজন্য তাদের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরত্বসহকারে গ্রহণ করি। তবে আমাদের দেশের একটা বাস্তবতা আছে। বাস্তবতার নিরিখে তারা যদি কোনো প্রস্তাব দেয়… আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র কিছু চায় না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা কিন্তু বেশি কিছু চায় না। তারা চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাই। তারা আমাদের সাহায্য করছে। আমরা নিজেরা একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন চাই। আমরা যদি এটা করি আমেরিকা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু দেশ। শুধু নির্বাচন নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন রকম সম্পর্ক আছে। আমেরিকা সব সময় বাস্তববাদী।

ড. মোমেন বলেন, বরং আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বলব, যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে, তাদের তারা ভিসা পলিসির মধ্যে ঢুকাক। তারা তাদের যা করার করুক, নির্বাচনে যারা বাধা দেবে। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চাই না। আমেরিকা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা তাদের সঙ্গে আছি, তারা আমাদের সঙ্গে আছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একাত্তরে সমর্থন দেয়নি। তারা পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করেছে। কিন্তু আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমেরিকা প্রতিনিয়ত আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে। কোনোদিন আমাদের বিরুদ্ধে যায়নি। এটা কী মিন করে? তারা আমাদের সঙ্গে আছে।

নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের তৎপরতা কম দেখা যাচ্ছে। সরকার কি বিদেশিদের চুপ থাকতে বাধ্য করল কি না—জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আমাদের সেই ক্ষমতা নাই। আমাদের বন্ধু দেশ যারা তারা অনেক সময় আমাদের উপদেশ দেয়, যেটা ভালো সেটা গ্রহণ করি। অন্যের যদি ভালো উপদেশ থাকে সহায়ক নির্বাচনের জন্য, আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে বলছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। সম্প্রতি তারা বলছে, সংঘাতমুক্ত। আমরাও চাই। কিন্তু সেটা আমরা একা পারব না।

এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, জনগণের যদি সম্পৃক্ততা থাকে, জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে সেটা অংশগ্রহমূলক। আমাদের প্রায় নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ লোক ভোট দেয়। আমেরিকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব সময় নির্বাচন হয়। সিনেটর কেনেডি, সিনেটর জন কেরি তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। সম্মানিত লোকের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তারানকো সাহেব কিছু করতে পেরেছে? আমরা চাইব না, বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। তবে সহায়কের ভূমিকা পালন করলে এটাতে স্বাগত জানাব। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, এখানে যদি কেউ সহায়তা করতে চায়, স্বাগত জানাব। কিন্তু আমরা মাতব্বরি করতে দেব না। যারা মাতব্বরি করবে তাদের আমরা সহ্য বা গ্রহণ করতে পারি না।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পরও যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় বিদেশিরা গ্রহণ করবে কি না—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই গ্রহণ করবে। যদি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়। একটি বড় দল যদি না আসে…। মিশরে বড় দল ছিল ব্রাদারহুড, তারা নির্বাচনে আসে নাই; আফগানিস্তানে তালেবান আসে নাই। যুক্তরাষ্ট্র ওটাকে গ্রহণ করেছে। কোনো একটি বিশেষ দল যদি না আসে, এটা খুব গুরত্বপূর্ণ নয়।

তিনি বলেন, সরকার হিসেবে সব দলকে চাই, নির্বাচনে আসুক। আর আমরা আমাদের নিজেদেরও যাচাই করতে চাই। তাদের যদি কোনো জনসমর্থন থাকে, তারা নির্বাচনে আসবে এবং প্রমাণ করবে তাদের অবস্থান।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের লোকেরা আগেভাগে দুশ্চিন্তা করে। আমরা বিদেশে যে জিনিসপত্র বিক্রি করি, কেউ আমাদের দয়া-দাক্ষিণ্য দেখায় না। সস্তায় ভালো জিনিস বিক্রি করি এবং যথা সময়ে পায় বলে কেনে। সুতরাং আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নাই।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা পরিণত সরকার। তারা জানে, র‌্যাব অত খারাপ কাজ করে না। আমেরিকা র‌্যাবকে সমর্থন করবে। হয়তো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।

আন্তর্জাতিক

টানা ৪৯ দিনের ইসরাইলি বর্বরতার পর যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, ১৩ ইসরাইলি জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।

শুক্রবার হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এ যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, চারদিনে ৫০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। চুক্তির শর্ত মেনে, প্রথমদিন ১৩ ইসরাইলিকে ছেড়ে দিয়েছে এ সশস্ত্র গোষ্ঠী। মুক্তি পাওয়া সবাই নারী ও শিশু। আগামী তিনদিনে হামাসের কাছ থেকে ছাড়া পাবেন আরও ৩৭ ইসরাইলি।

চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির চারদিনে ইসরাইল তাদের কারাগার থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩৯ জনকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে।

যেসব ইসরাইলিকে শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের পরিবারকে আগেই অবহিত করা হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালিয়ে ২৪০ জনের বেশি ইসরাইলিকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় হামাস।

এদিকে এ পর্যন্ত হামাস ইসরাইল যুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৪ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা শুক্রবার বিকালে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক হায়দ্রাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তিস্তা চুক্তি ও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন, বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্য থেকে বাণিজ্য বাধা অপসারণ এবং দু’দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহযোগিতাও কামনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এফওসি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু পর্যালোচনা এবং দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর সুবিধার জন্য পারস্পরিক স্বার্থের নতুন পথ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির অধীনে একমাত্র দক্ষিণ এশীয় নেতা হিসেবে ‘জি-২০ লিডার্স সামিটে’ যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিব বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং ২০২৩ সালে অর্জিত অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক সংযোগ, আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড সংযোগ, নিরাপত্তা ও পানি সম্পর্কিত ইস্যু, কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক ইস্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বাংলাদেশের সামনে যে সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তা নিয়েও তারা আলোচনা করেন। উভয় পক্ষই পুনর্ব্যক্ত করেছে যে শান্তিপূর্ণ সীমান্তের জন্য দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।