আন্তর্জাতিক

কিছু বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

তবে কী ধরনের চুক্তি হলে বৈঠক সম্ভব—সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি পেসকভ। পুতিন ও জেলেনস্কি সর্বশেষ মুখোমুখি হন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে।

তুরস্কে চলমান শান্তি আলোচনা ঘিরে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট চলতি সপ্তাহেই পুতিনকে সরাসরি সাক্ষাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুতিন সেখানে না গিয়ে সহকারী ও কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠান, যারা শুক্রবার ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২০২২ সালের মার্চের পর প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে পুতিন-জেলেনস্কি সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়টি তোলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।

এ প্রসঙ্গে পেসকভ বলেন, এমন বৈঠক সম্ভব, তবে তা হতে হবে দুই দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু চুক্তি এবং আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে।

তিনি আরও বলেন, চুক্তিপত্রে সইয়ের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইউক্রেনের পক্ষে ঠিক কে সেই চুক্তিতে সই করবেন।

পেসকভ তার এই মন্তব্য ব্যাখ্যা না করলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুতিন এর আগেও জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, তার নির্বাচিত মেয়াদ গত বছর শেষ হয়ে গেছে।

বর্তমানে যুদ্ধকালীন আইন জারি থাকায় ইউক্রেনে নতুন নির্বাচন এখনও হয়নি। ফলে চুক্তিতে জেলেনস্কির সইয়ের বিষয়টি ঘিরে ক্রেমলিনের আপত্তি থেকেই যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

গত বছরের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি সে দেশেই অবস্থান করছেন।

এই দীর্ঘ ৯ মাসে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি শেখ হাসিনার। জয় এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তিনি মার্কিন নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শিগিগিরই শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের। আর সেই সাক্ষাৎ হবে অবশ্যই ভারতে। ভারত সফরে আসছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তবে কবে দেখা হতে পারে এ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি প্রতিবেদনে।

জয়ের ভারত সফরের প্রেক্ষাপট এমন এক সময়, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

নিউজ এইটিন জানিয়েছে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়ার পর তিনি আমেরিকার নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। জয় ভারতে এলে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এটিই হবে মা-ছেলের প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ।

এদিকে জয়ের সম্ভাব্য ভারত সফর ও মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের খবরে আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একজন সাবেক মন্ত্রী নিউজ এইটিনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জয় এবং নির্বাসিত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সরকার যেভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটি আগামী নির্বাচনে দলটিকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে নেওয়া কৌশলের অংশ। ’

উল্লেখ্য, আওয়ামী শাসন আমলের দুইবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ‘চুপিসারে’ দেশত্যাগের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জোরদার হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের টানা আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১০ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহের সব অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের বিচার ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের প্রচার, মিছিল, সভা, সেমিনার, গণমাধ্যমে প্রকাশনা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। প্রজ্ঞাপনটি সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর করা হয়েছে।

এতদিন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছিলেন শেখ হাসিনা। তবে সরকারের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মকাণ্ড এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে জয়ের ভারত সফরের খবর উৎসাহ যোগ করেছে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফর করলেন সৌদি আরবে। দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)-এর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা জানালেন তিনি। রিয়াদে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়িক নেতাদের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প মজা করে যুবরাজকে প্রশ্ন করেন, মোহাম্মদ, আপনি রাতে ঘুমান কিভাবে? কী অবিশ্বাস্য কাজ আপনি করেছেন!

ট্রাম্প বলেন, তিনি (এমবিএস) রাতে আমাদের মতোই বিছানায় গড়াগড়ি করেন। ভাবেন— ‘আর কীভাবে উন্নতি করবো?’ এ মন্তব্যে যুবরাজ হাসি দিয়ে সাড়া দেন এবং উপস্থিত শ্রোতারা দাঁড়িয়ে করতালি দেন।

৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প সৌদি আরবের পরিবর্তনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সমালোচকরা মনে করত এটা সম্ভব না। কিন্তু গত আট বছরে সৌদি আরব তাদের ভুল প্রমাণ করেছে। আমি তাকে (এমবিএস) অনেক পছন্দ করি, খুব বেশি পছন্দ করি।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, এমবিএস এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অনুরোধে তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছেন।

এ সময় ট্রাম্প রসিকতা করে বলেন, ক্রাউন প্রিন্সের জন্য আমি কী-না করি!

ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবকে ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ’ বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি সৌদি নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক রূপান্তর এবং বৈশ্বিক মঞ্চে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সৌদি নেতাদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আপনারা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ, রিয়াদ একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে উঠবে। মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ এখান থেকেই শুরু।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘দিন-রাত পরিশ্রমী নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুই পুত্র– কাসিম ও সুলেমান– দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে তাদের বাবার কারাবন্দি অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খবর সামা টিভির।

ইমরান খানের গ্রেফতারের পর এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেছেন দুই ভাই। কাসিম খান বলেন, আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে আমাদের বাবা এত দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে থাকবেন। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাদের হাতে এখন খুব কম অপশন আছে, তাই আমরা মনে করি জনসমক্ষে কথা বলার সময় এসেছে।

তারা অভিযোগ করেন, ইমরান খান কারাগারে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন এবং তার মৌলিক মানবাধিকার পর্যন্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কাসিম শঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে কিছু অভিযোগের সাজা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এখন তারা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ইমরান খানের মুক্তির পথ খুঁজছেন এবং এজন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কাসিম বলেন, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য ট্রাম্পের চেয়ে উপযুক্ত আর কে হতে পারে? আমরা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে সাহায্য চাইছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইনি পথে যা যা করা সম্ভব, সব করেছি। বাবার মুক্তির জন্য এবং পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি না, তিনি কখনো নিজের মুক্তির বিনিময়ে কোনো আপস করবেন।

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। পরিস্থিতি এমন যে, গোলা-কামান নিয়ে যুদ্ধে প্রস্তুত পারমাণবিক শক্তিধারী প্রতিবেশী দুই দেশ। তবে ভারত-পাকিস্তান এই দ্বন্দ্বের রয়েছে ৭৮ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস। শনিবার এক প্রতিবেদনে দুই ভূ-খণ্ডের সেই সংঘাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছে আল-জাজিরা।

১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের ভারতে বিভক্ত হয়। সেসময় থেকেই ‘ভূস্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে হিন্দু রাজার শাসনাধীন কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালে প্রথম এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় সদ্য স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পাকিস্তান মূলত উত্তর ও পশ্চিম অংশ অর্থাৎ আজাদ কাশ্মীর, গিলগিট এবং বালতিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশ। যার মধ্যে কাশ্মীর উপত্যকা এবং এর বৃহত্তম শহর শ্রীনগর, পাশাপাশি জম্মু এবং লাদাখও রয়েছে। কাশ্মীর স্বায়ত্তশাসিত থাকবে, এই অঞ্চলের নিজস্ব সংবিধান, পতাকা ও আইন থাকবে-এমন প্রতিশ্রুতিতে কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিং ভারতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে চুক্তির অংশ হিসাবে নয়াদিল্লি প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ খাতের দায়িত্ব পালন করবে বলে ঠিক হয়। এই বিশেষ মর্যাদা ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা মোদি সরকার ২০১৯ সালে বাতিল করে দেয়।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান আরও দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয় ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে। ২০০৩ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে এক হামলায় তিন দিনে ১৬৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতে জড়ানোর আশঙ্কা বেড়ে যায়।

এছাড়াও ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে আমন্ত্রণ জানানোর পর দুই দেশ শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে দেখা করায় সেই আশা ক্ষণস্থায়ী হয়।

২০১৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর ওপর এক মারাত্মক হামলা হয়, যার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ। এরপরই নরেন্দ্র মোদি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে নিজস্ব আইন নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে ফোন সিগন্যাল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া এবং বহু মানুষকে আটক করা হয়।

এরপর দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলার পর ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে আবারও উত্তেজনা শুরু হয়। হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

আন্তর্জাতিক

শিবপুর উপজেলার তরুণ হাবিবুল্লাহ ভূইয়া (২০), ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন আঁধারের আবছা আলোয় এসে তার হাতে ধরা দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কজন দালাল তাকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে।

ইতালি যাওয়া স্বপ্ন দেখা হাবিবুল্লাহ দালালের কৌশলে গিয়ে পড়েন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর হামলায় হাবিবুল্লাহ মারা গেছেন।

পরিবারের দাবি, ইতালি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসে একাধিক দালাল হাবিবুল্লাহকে রাশিয়ায় নিয়ে যায়। দালালরা তাকে ২০ লাখ টাকায় রুশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। নিদারুণ কষ্ট, নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছিলেন হাবিবুল্লাহ। পরিবার এ মৃত্যুর খবর পায় তারই এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

নিহত হাবিবুল্লাহ শিবপুর উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক ভূইয়া ও মানসুরা বেগমের ছোট ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল সে।

পরিবার জানিয়েছে, এইচএসসি পাস করার পর থেকেই ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল হাবিবুল্লাহ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্রাহ্মন্দী গ্রামের এক দালাল ফারুকের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে পরিবার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দালালের মাধ্যমে হাবিবুল্লাহকে সৌদি আরবে নেওয়া হয় ওমরাহ ভিসায়। সেখানে দুই মাস অবস্থান করিয়ে তাকে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রাশিয়ায় প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন হাবিবুল্লাহ। পরে শফিক নামে ঢাকার এক দালাল তাকে ছাড়িয়ে নেয় এবং ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সুলতান নামে আরেক দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর হাবিবুল্লাহকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের কথা বলে একটি রুশ ভাষায় লেখা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে দিয়ে সেনা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন সুলতান। সেখানে তাকে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হাবিবুল্লাহ তখনই বুঝতে পারেন, তাকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

গত ২৭ মার্চ, রাশিয়ান বাহিনীর ৪৫ সদস্যের একটি ইউনিটের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধে অংশ নেন হাবিবুল্লাহ। যুদ্ধ শেষে তারা বিশ্রামের সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান। বুধবার হাবিবুল্লাহর মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছায় তার এক বাংলাদেশি সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

হাবিবুল্লাহর বন্ধু নাইম ইসলাম অভি বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে ওর সঙ্গে আমার কথা হতো। দালালরা তাকে মিথ্যে প্রলোভন দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গেছে। সেখানে তাকে অনেক অত্যাচার করা হয়। তাকে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে জোর করা হয়। সেখানে ও নিহত হলো। আমরা এর জন্য দায়ীদের বিচার চাই।

প্রতিবেশী ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সে খুব ভালো ছেলে ছিল। ছোট ভাইয়ের মতো দেখতাম। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ও আর নেই। দালালদের বিচার চাই।

ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। হাবিবুল্লাহর বাবা আবু সিদ্দিক বলেন, আমার ছেলে ইতালি যেতে চেয়েছিল। দালালরা তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছে। চাইলে আমাদের কাছেই টাকা চাইতো, কিন্তু তারা টাকার লোভে আমার ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

মা মানসুরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ছেলে দেশে ফেরার জন্য কাঁদতো, আর আমরা অসহায়ের মতো কিছুই করতে পারিনি। এত টাকা খরচ করেও আজ তাকে কফিনে দেখতে হবে? এই দালালরা অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। আমি তাদের কঠিন শাস্তি চাই এবং সরকারের কাছে ছেলের মরদেহ ফিরিয়ে আনার আবেদন জানাই।

এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারিনি। যিনি নিহত হয়েছে, তার পরিবার তথ্য দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো এবং দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুক্রবার জানিয়েছে, গাজায় সমস্ত খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে গেছে। কারণ ইসরাইল গত ২ মার্চ থেকে সীমান্ত পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে এখন খাবারের জন্য হাহাকার!

এদিন এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘আজ ডব্লিউএফপির নিয়ন্ত্রণে থাকা গাজা উপত্যকার রান্নাঘরগুলোতে তাদের হাতে মজুদ থাকা সর্বশেষ খাবার সরবরাহ করেছে’।

আনাদোলু জানিয়েছে, এই রান্নাঘরগুলো গাজার অর্ধেক জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার মাত্র ২৫ ভাগ জোগান দিয়ে আসছিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, তারা যে ২৫টি বেকারিকে সহায়তা করে আসছিল, তা গত ৩১ মার্চের মধ্যেই গমের আটা ও রান্নার জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা প্যাকেটজাত খাবারও ওই সময়ে শেষ হয়ে যায়।

সংস্থাটি এ সময় সতর্ক করে জানায়, এখানে নিরাপদ পানীয়জল ও রান্নার জ্বালানির মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। মানুষ এখন খাবার রান্না করার জন্য পোড়ানোর মতো কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে আনাদোলু জানাচ্ছে, গাজা বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত অবরোধের শিকার হয়েছে। ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া উপত্যকাটিতে টানা সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক বা বাণিজ্যিক সহায়তা প্রবেশ করেনি।

সেখানে যুদ্ধবিরতির সময়ের তুলনায় বর্তমানে খাদ্যের দাম ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মৌলিক পণ্যের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। যার ফলে শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী ও বয়স্কদের জন্য গুরুতর পুষ্টিহীনতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, ১০ লাখ মানুষের চার মাসের জন্য যথেষ্ট হবে এমন ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা সীমান্ত খুললেই গাজায় পাঠানো যাবে।

একই সঙ্গে সংস্থাটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আবারও একটি ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না’।

পাশাপাশি, ‘গাজার নাগরিকদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অবিলম্বে গাজায় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে’ বলে বিশ্বের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত করেছে। ভারতের পানি শক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি বৃহস্পতিবার তার সমকক্ষ পাকিস্তানের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজাকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে এই স্থগিতাদেশের ঘোষণা দেন।

চিঠিতে ভারত অভিযোগ করে, ‘জম্মু ও কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের ধারাবাহিক আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ’ এবং চুক্তি পুনর্বিবেচনায় পাকিস্তানের অনিচ্ছাই এই সিদ্ধান্তের কারণ। চুক্তির ৬৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম স্বাক্ষরকারী একপক্ষ এমন চরম পদক্ষেপ নিয়েছে।

পাকিস্তান ভারতের এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সিন্ধু পানি চুক্তি একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হয়েছে এবং এটিকে একতরফা স্থগিতাদেশের কোনো বিধান নেই।

এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী (সতলজ, বিয়াস ও রাভি) এবং পাকিস্তান তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব) নিয়ন্ত্রণের অধিকার পায়। এখন চুক্তি থেকে ভারতের একতরফা সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের সামনে কি কোনো বিকল্প রয়েছে?

এনএসসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তার অধিকার অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করতে পারে; যার মধ্যে শিমলা চুক্তিও রয়েছে। বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান যদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করা শুরু করে, তাহলে ভারত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অভিযোগও জানাতে পারবে না। অপরদিকে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের কাছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করতে পারে।

প্রথমত, এটা বোঝা জরুরি যে, সিন্ধু পানি চুক্তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা ভারতের এটাই প্রথম নয়। এই চুক্তিটি ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের মধ্যে করাচিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও এটি টিকে ছিল। ১৯৭০ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় চেনাব নদীর উপর সালাল বাঁধ নির্মাণ করে চুক্তি লঙ্ঘন করে। তবুও এই চুক্তি ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও টিকে ছিল।

পরবর্তীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তার সরকার বিশ্বব্যাংকে সালাল বাঁধ নিমার্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় এবং ভারতকে বাঁধটি নকশা পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়। এরপর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে ভারত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে। এ চুক্তির ফলে বাঁধের স্পিলওয়ে গেটের উচ্চতা ৪০ ফুট থেকে ৩০ ফুটে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয় ভারত।

সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ইলিফ। ছবি: বিশ্বব্যাংক
ভারত চুক্তিটিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা এটিকে ঝেলাম, চেনাব এবং সিন্ধু নদীর পানি ঘুরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় বাধা বলে মনে করতেন। ২০০১ সালে ভারতের সংসদ ভবনে হামলার পর দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি স্থগিতের হুমকি দিয়েছিল। বিগত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি স্পষ্ট, ভারত বারবার সন্ত্রাসবাদের অজুহাত তুলে এই চুক্তিকে স্থগিত করার চেষ্টা করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের লক্ষ্য ছিল ঝেলাম ও চেনাব নদীর উপর আরও বেশি বাঁধ নির্মাণ।

২০০৭ সালে ভারত কাশ্মীর উপত্যকার বান্দিপুরার উত্তরে ঝেলাম নদীর উপর কিশনগঙ্গা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ জানালে প্রকল্প স্থগিত করতে হয় ভারতকে। পরে বিষয়টি সালিশি আদালতে পাঠানো হয়, যা এখনো বিচারাধীন।

পুনরায় ২০১৩ সালে ভারত কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলায় চেনাব নদীর উপর রাতলে বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। পাকিস্তান আবারও বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ করলে, ভারত নকশায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত আবার চুক্তটি বাতিলের হুমকি দেয়। অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে বেশি পানি পায়। প্রকৃতপক্ষে, এই দাবিটি ভুল।

গত বছর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু পাকিস্তান ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এরপর সর্বশেষ পেহেলগামে হামলার পর ভারত সরকার চুক্তিটি স্থগিতের ঘোষণা দেয় এবং প্রচার করে, ‘পানি অবরোধ’ করে পাকিস্তানকে ভয়াবহ পানি সংকটে ফেলা হবে।

তবে অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বিজেপি সরকারের এই দাবির সঙ্গে একমত নন। ইন্ডিয়া টুডে-তে অভিষেক দে লেখেন, ‘চুক্তি স্থগিত মানেই তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া যাবে এমন নয়; কারণ ভারতের হাতে এখনো সেই পরিকাঠামো নেই, যার মাধ্যমে সিন্ধু নদীর পানি থামিয়ে দেওয়া বা নিজের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। ভারত সর্বোচ্চ ৫-১০% পানি প্রবাহ কমাতে পারে।’

এই নদীগুলোর উপর বড় রিজার্ভার নির্মাণ করতে ভারতের কয়েক বছর লেগে যাবে। এর জন্য বিস্তৃত জরিপ এবং বিশাল অর্থের প্রয়োজন। পাকিস্তান এই প্রকল্পগুলোর কারণে দশ বছর পর সমস্যায় পড়তে পারে।

এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভারত সরকার মিথ্যা দাবি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এর বিপরীতে পাকিস্তান যদি শিমলা চুক্তি স্থগিত করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে ভারতই বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। বর্তমানে পাকিস্তানের হাতে শিমলা চুক্তি স্থগিতের অনেক যুক্তি রয়েছে। ভারত ১৯৮৪ সালে সিয়াচিন হাইটস দখল করে এ চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল। পরবর্তীতে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করে ভারত আবারও চুক্তিটি লঙ্ঘন করে।

এখন কল্পনা করা যাক, পাকিস্তান যদি শিমলা চুক্তি থেকে সরে আসে তাহলে কী কী হতে পারে। প্রথমত, পাকিস্তান আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শর্তে আবদ্ধ থাকবে না এবং কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার পথ খুলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা অন্য যে কোনো দেশ কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধবিরতির রেখা (সিএফএল) হিসেবে বিবেচিত হবে, যা কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আইন নেই যা যুদ্ধবিরতির রেখা অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। ভারত হয়তো ভাবতেও পারছে না, শিমলা চুক্তি স্থগিত হলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। ভারতের তথাকথিত ‘পানি অবরোধ’ হয়তো পাকিস্তানকে একেবারে শুকিয়ে ফেলবে না, কিন্তু পাকিস্তানের ‘শিমলা অবরোধ’র পর ভারত নিজেই সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আন্তর্জাতিক

ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত ১৫ এপ্রিল ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয় ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লাখো জনতা ফিলিস্তিনের পক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। আপনি নিশ্চয়ই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: বাংলাদেশের জনগণ কখনো ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝখানে ছিল না। তারা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে ছিল। ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল। কেননা তারা দেখছে, গত ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ নিজেদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য বাংলাদেশের বার্তা খুব স্পষ্ট—আমরা তোমাদের (ফিলিস্তিনের) পাশে আছি। এজন্য আমি বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও গৌরব বোধ করি।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘ দিন ধরে গণহত্যা চলে আসছে। তবে আমরা দেখছি, আরব বিশ্ব নীরবতা পালন করছে। আপনার মন্তব্য কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। শুধু আরবই নয়, সাধারণভাবে পুরো বিশ্বই নীরবতা পালন করছে। আর শুধু নীরবই নয়, কিছু দেশ এই গণহত্যার জন্ম দিচ্ছে, সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক না কেন। আর এটা ঘটছে এখন এই বিংশ শতাব্দীতে এসে, যখন আমরা মানবতা-গণতন্ত্র রক্ষা ও সকল নীতি নৈতিকতার কথা বলছি। যখন আমরা এসব বলছি, তখন কার্যকর ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, সম্পূর্ণ এর বিপরীত এক চিত্র। আমাদের ধর্ম, বর্ণ আলাদা হতে পারে। তবে সবার সাথে আমাদের যে মিল আছে, সেটা হলো আমরা সবাই মানুষ। আমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, আমাদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, প্রকৃতপক্ষে যারা মানবতার বিরুদ্ধে তাদের সকলের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই করার কথা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা করছি না।

তবে ফিলিস্তিনের জনগণ প্রকৃতপক্ষে মানবতার জন্যই লড়াই করছে। এই লড়াই অশুভশক্তির বিরুদ্ধে। এটা শুধু তাদের নিজেদের জন্য লড়াই নয়। আমি বিশদভাবে বলতে চাই না, কোন দেশ কী ভূমিকা পালন করছে। আমি বলতে চাই, বিশ্ব কিছুই করছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কোনো ভূমিকা পালন করছে না। যদিও তারা চেষ্টা করছে, তবে কিছু করতে পারছে না, কারণ তারাও চাপে রয়েছে। এখন আমরা কী করতে পারি? আমরা লড়াই বন্ধ করে দিতে পারি না। কেননা আমাদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। আমাদের শুধু ১৭ হাজার শিশুই মারা গেছে! পুরো বিশ্ব সেটা দেখছে। এখানে তো মানবতা নীরব।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা নিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জাতিসংঘকে অনেক সম্মান করি। তারা যতটা পারে, সেই চেষ্টাও করেছে। জাতিসংঘের ১৩০ জন কর্মী ইসরায়েলের আগ্রাসনে নিহত হয়েছে। তবে তাদের (জাতিসংঘের) ভূমিকা সীমিত। কারণ, তারা অপহৃত হয়েছে। আইনের ক্ষেত্রে তাদের পুরোপুরি কর্তৃত্ব নেই। কেননা সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলের সমর্থনে ভেটো দিয়ে আসছে, আর এটাই হলো প্রকৃত বাস্তবতা।

বাংলাদেশ গত সপ্তাহে পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ (ইসরায়েল ব্যাতিত) বাক্যটি সংযুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেটা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাসপোর্টে এটা (এক্সসেপ্ট ইসরায়েল) লেখা ছিল। তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বাক্যটি পাসপোর্ট থেকে প্রত্যাহার করে। আমার শক্তিতে যতটুকু কুলায়, তখন আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম, যেন সরকার ওই সিদ্ধান্তটা বাতিল করে। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। আমার মনে আছে, সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান কামাল) সঙ্গে আমার একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে আমি খুব স্পষ্ট করে বলেছিলাম—যখন আমাদের ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরছে, শিশুদের রক্ত ঝরছে, গাজা উপত্যকায় এখনো আমরা অধিকার হারা আর এই মুহূর্তে এটা করা হলে ইসরায়েলকে একটি উপহার দেওয়া হবে। তবে তার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) উত্তর ছিল—আমরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব, (পাসপোর্ট) আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে চূড়ান্তভাবে আমরা সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। আমরা চেষ্টা করি, কখনো সফল হই, কখনো হই না।

তবে এখন যেটা আবার হয়েছে, এটা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন ও সংহতি ঘোষণা। গত সপ্তাহে ঢাকায় প্রায় ২০ লাখ লোক সমবেশ করে সংহতি জানিয়েছেন। আর পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ যুক্ত হয়েছে। এই দুই ঘটনা আমাদের গৌরাবান্বিত করেছে।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন গণহত্যা চলছে। কীভাবে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান হতে পারে?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এটা মিলিয়ন ডলারের একটি প্রশ্ন। এটা সমাধান সম্ভব, তবে অন্য অংশে ইসরায়েল এই সংকটের সমাধান চায় না। কারণ তাদের শক্তি আছে, তাদের পেছনে আমেরিকা আছে। এখানে ভুল বা সঠিক কোনো ইস্যু নেই, এখানে রয়েছে—শক্তি আর শক্তিহীনতার ইস্যু। আমরা এই সংকট সমাধানে ১৯৯০ সাল থেকে ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করে আসছি। ইতোমধ্যে ৩৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে, রক্ত ঝরছে। আর তারা আমাদের বেশিরভাগ ভূমি দখলে নিয়েছে। আপনারা জানেন, ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন মাত্র ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আমরা শুধুমাত্র ২২ শতাংশ ভূমি চেয়েছি, আমাদের রাষ্ট্রের জন্য। আর তাদের ৭৮ শতাংশ। কিন্তু তারা এটাও মানছে না। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা শুধু ফিলিস্তিন নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশটাই চায়। তারা যতক্ষণ না মাথা থেকে এই অসুস্থতা না সরাবে, ততক্ষণ শান্তি আসবে না।

হামাস (ফিলিস্তিনের একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল, যারা গাজা শহর নিয়ন্ত্রণ করে) ও ফাতাহ (প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্টের) এর মধ্যে বিভক্তির জন্য ফিলিস্তিন সংকট সমাধান হচ্ছে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এই বিভক্তি আসলেই দুঃখজনক একটি অধ্যায়। এই বিভক্তির কোনো ন্যায্যতা নেই। তবে দুভার্গ্যজনক হলেও এটা হয়েছে। তবে বিভক্তি থাকলেও সংকট সমাধান করা যাবে না, সেটা সত্য নয়। এটা ইসরায়েলের প্রচারণা, এর পেছনে যাওয়া উচিত নয়। আমরা এ বিষয়ে খুব সতর্ক। আমরা (হামাস-ফাতাহ) একই জিনিস চিন্তা করি। আমরা আমাদের নিজস্ব দেশ চাই। তবে তারা (হামাস) ভিন্নভাবে বিশ্বাস করে। তারা ভিন্ন পন্থা বিশ্বাস করে। আর আমরা (ফাতাহ) বিশ্বাস করি, আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই শান্তি আনতে চাই। কেননা আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো অবস্থানে নেই। আমাদের আলোচনাই করা উচিত। আমরা ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করেই এই সংকটের সমাধান চাই। এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। আমরা যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ করতে চাই না। হত্যার জন্য সংগ্রাম করতে চাই না। রক্তপাত চাই না। এটা আমাদের ধরন। তবে আপনি যদি চাপিয়ে দেন, আমরা সেটা করতে বাধ্য হব। আমরা ১৯৬৫ সাল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, আর এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আমরা যদি আলোচনায় ব্যর্থ হই, তাহলে তখন হামাস বলতে পারে—তোমরা ব্যর্থ, এখন একমাত্র উপায় যুদ্ধ।

আমি বলতে চাই, প্রতিটি ফিলিস্তিনির উচিত পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন)-এর ব্যানারে একত্রিত হওয়া, যেটা ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা। আশা করি, আমাদের হামাসের ভাইয়েরা এখানে এগিয়ে আসবেন। আর ফিলিস্তিনের জনগণকেই ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে দিন, কে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে যতই বিভক্তি থাকুক না কেন, এখন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের উভয়ের শত্রু একই। এটাই এখন বাস্তবতা। আমরা বিভক্তিকে পাশ কাটিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

আন্তর্জাতিক

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা চালিয়েছে শত শত অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী।সোমবারের এই হামলা ছিল ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভারের দ্বিতীয় দিনের অংশ হিসেবে সংগঠিত হামলা।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, ৭৬৫ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি পুলিশের নিরাপত্তা সহযোগিতায় আল-মুগাররাবা গেট দিয়ে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তারা দলবদ্ধভাবে প্রবেশ করে মসজিদের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় ও হামলা চালায়।

এর আগের দিন রোববারও (পাসওভারের প্রথম দিনে) প্রায় ৫০০ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী একইভাবে আল-আকসায় প্রবেশ করে ও হামলা চালায়।

পাসওভার কী?

পাসওভার হলো-ইহুদি ধর্মের অন্যতম পবিত্র উৎসব। এ উৎসব হজরত মূসা (আ.)-এর সময় মিসর থেকে ইসরাইলিদের নির্গমন স্মরণে পালিত হয়।

অবৈধ প্রবেশ ও আগ্রাসনের পরিসংখ্যান

ফিলিস্তিনি ওয়াকফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রমজানে (২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিল) ২১ বার আল-আকসা মসজিদে অবৈধভাবে ঢুকে হামলা চালানো হয়।

জেরুজালেম গভর্নর অফিসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ১৩,০৬৪ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী আল-আকসায় প্রবেশ করে।

আল-আকসা মসজিদের গুরুত্ব ও ইহুদিদের ধারণা

আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান।তবে ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা একে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে অভিহিত করে। তাদের দাবি, সেখানে তাদের প্রাচীন দুটি উপাসনালয় ছিল।

এ নিয়ে ফাখরি আবু দিয়াব নামে জেরুজালেম বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ কিছুদিন আগে আল-আকসা মসজিদের পাশের ‘ডোম অব দ্য রক’ মসজিদে ইহুদি উগ্রপন্থিদের গতিবিধি সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, এই পবিত্র স্থানটিকে ইহুদিকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে আল-আকসার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

তাসনিম নিউজ জানায়, ফাখরি আবু দিয়াব পাসওভারের ছুটি এগিয়ে আসার সঙ্গে আল-আকসা মসজিদের ওপর ইহুদিবাদীদের অভূতপূর্ব অপতৎপরতা বৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, চরমপন্থি ইহুদি গোষ্ঠীগুলো আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে আক্রমণের পরিধি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা প্রকাশ্যে তালমুদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং ডোম অব দ্য রক মসজিদের কাছে দুম্বা জবাইয়ের চেষ্টা করছে। ইহুদিবাদীদের এই পদক্ষেপ উস্কানিমূলক এবং আল-আকসা মসজিদকে ইহুদিকরণের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলোর একটি।

আল-কুদস প্রসঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ইহুদিবাদীদের এইসব কর্মকাণ্ডে দখলদার পুলিশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

এমনকি ইসরাইলি চরমপন্থি মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক সমর্থনে সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যেহেতু আরব এবং মুসলিম বিশ্ব নীরব এবং নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে, সে কারণে এই গোষ্ঠীগুলো এ ধরনের উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হচ্ছে।

আবু দিয়াব জোর দিয়ে বলেন, আল-আকসা মসজিদকে পরিকল্পিতভাবে ইহুদিকরণের লক্ষ্যে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং সেখানে ইহুদিবাদীদের ক্রমাগত উপস্থিতি তাদের ওই আন্দোলনকে ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করবে।

আন্তর্জাতিক অবস্থান

ইসরাইল ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় পূর্ব জেরুজালেম দখল করে এবং ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে সংযুক্ত করে। যদিও তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা কখনোই স্বীকৃত হয়নি।