আন্তর্জাতিক

আগামী সপ্তাহের যেকোনো সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সামনের সপ্তাহে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গাজা ও ইরানে আমরা যে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমরা জিম্মিদের ফেরত পেতে চাই। খবর আল-জাজিরার।

গাজা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রচেষ্টার মাঝে আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।

খবরটি এমন সময় এলো যখন ইসরাইলের জন্য ৫১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তির অনুমোদন দিল ট্রাম্প প্রশাসন।

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। ওয়াশিংটন সফরের তথ্য নিশ্চিত করে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর ওইদিন থেকেই গাজায় বর্বরতা শুরু করে ইসরাইল। আড়াই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি সেনাদের অব্যাহত হামলার কারণে স্তূপে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা যায়নি।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এটি পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে পাকিস্তানের অষ্টম মেয়াদ এবং ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো সভাপতিত্ব পালন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে মাসিক ভিত্তিতে বর্ণানুক্রমিকভাবে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পরিবর্তিত হয়। জুলাই মাসের জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পড়েছে পাকিস্তানের ওপর।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৮২ ভোট পেয়ে পাকিস্তান অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। এবারের সভাপতিত্ব পাকিস্তানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে পাকিস্তান চলতি জুলাই মাসে পরিষদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার নেতৃত্ব দেবে।

যদিও এই মাসিক ঘূর্ণায়মান সভাপতিত্বের নির্বাহী ক্ষমতা নেই, তবু এটি সংশ্লিষ্ট দেশকে বৈশ্বিক ইস্যু—বিশেষ করে গাজা ও ইউক্রেন সংকটের মতো—নিয়ে আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেয়।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে বলেছেন, আমরা বিনম্রতা ও জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করছি। বিশ্বজুড়ে এখন সংঘাত ও মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

পাকিস্তানের সভাপতিত্বকালীন সময়ে দার দুটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক উন্মুক্ত আলোচনা। গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এই অধিবেশন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক মনোযোগ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ব বর্তমানে এক অস্থির, সংঘাতময় ও জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এ সভাপতিত্ব আমাদের জন্য একটি নীতিনিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চাই।

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের আগ্রাসনে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এটি ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। শুক্রবার এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ।

এই সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত নিহতের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। গাজার মন্ত্রণালয়টি জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৬,৩০০ ছাড়িয়েছে।

হারেৎজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি নিহত ছাড়াও বহু মানুষ পরোক্ষভাবে প্রাণ হারিয়েছেন— যেমন ক্ষুধা, ঠান্ডা ও রোগে আক্রান্ত হয়ে। এর কারণ গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল।

দৈনিকটি আরও বলেছে, ইসরাইলি মুখপাত্র, সাংবাদিক ও প্রভাবশালীরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত নিহতের সংখ্যা দেখে প্রায়শই সেটিকে বাড়িয়ে বলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে ক্রমে আরও বেশি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নিচ্ছেন— এমনকি বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় এটি হয়তো রক্ষণশীল হিসাবও হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ হোলোওয়ের অর্থনীতিবিদ এবং সংঘর্ষকালীন মৃত্যুর ওপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল স্প্যাগ্যাট গাজায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন।

এই সমীক্ষায় গাজার ২,০০০টি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ১০,০০০ মানুষ ছিল।

সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজা যুদ্ধে আনুমানিক ৭৫,২০০ জন ইসরাইলি সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন, যার সিংহভাগই ইসরাইলি গোলাবারুদের কারণে।

হারেৎজ বলছে, নিহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই শিশু (১৮ বছর বয়স পর্যন্ত) এবং নারী— যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অধিকাংশ যুদ্ধের তুলনায় ব্যতিক্রমী।

গবেষক স্প্যাগ্যাট বলেন, এই সমীক্ষার তথ্য গাজা যুদ্ধকে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও সিরিয়া, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যা গাজার চেয়ে বেশি হতে পারে, তবে গাজা যুদ্ধটি সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে যুদ্ধে জড়িত সামরিক সদস্যদের তুলনায়। আর এটি জনসংখ্যার অনুপাতে মৃত্যুহার বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, গাজায় সহিংসভাবে নিহত নারী ও শিশুর অনুপাত অন্যান্য সাম্প্রতিক যুদ্ধের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি— যেমন কসোভো (২০%), উত্তর ইথিওপিয়া (৯%), সিরিয়া (২০%) এবং সুদান (২৩%)।

স্প্যাগ্যাট বলেন, আমার ধারণা, গাজার প্রায় ৪ শতাংশ জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন। ২১’শ শতাব্দীতে আর কোনো সংঘাতে এত বেশি অনুপাতে মৃত্যু ঘটেছে কিনা, আমি তা জানি না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় ভয়াবহ অভিযান চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, মানবতাবিরোধী এ বাহিনীটি কোনো তোয়াক্কা করছে না।

গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এছাড়াও গাজায় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্থলবন্দর ব্যবহার করে পোশাকের পর এবার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশই বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ধারণা করছেন। খবর বিবিসির

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর ও রাজবাড়ী জুট মিলসের চেয়ারম্যান শেখ শামসুল আবেদিন বলেন, ভারতের নতুন সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের পাটশিল্পে কতটা পড়বে সেটি তারা বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি আরও বলেন, কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ হবে হয়ত। তবে স্থলবন্দর না হলে নৌপথে কীভাবে রপ্তানি চালু রাখা যায় সে আলোচনা এর মধ্যেই শুরু হয়েছে।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সাবেক সদস্য ও বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান বলছেন, স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ হলে সেটি নৌপথে রপ্তারি করে পোষানো খুবই কঠিন বিষয় হবে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই এসব পালটিপালটি পদক্ষেপ হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্যই বেশি ক্ষতিকর হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাকের পর পাট রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমার মনে হয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত আমাদের স্বার্থেই।

যদিও ভারতের সবশেষ পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বাকযুদ্ধের পর ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে।

ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন সরাসরি ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে, যা দ্রুত সমাধান করা দরকার বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ভারতের ঘোষণায় কী বলা হয়েছে

শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে নয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কথা প্রকাশ করা হয়।

যদিও ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পণ্য মুম্বাইয়ের নহ্ভা সেভা বন্দর দিয়ে ভারতে যেতে পারবে।

স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা এসব বাংলাদেশি পণ্যে মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি। এর মধ্যে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় রয়েছে এ তালিকায়।

ভারত এ ধরনের যে নয়টি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, এসব পণ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল প্রায় পনের কোটি ডলারের কাছাকাছি, যার প্রায় সবটাই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিল।

রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে, এই পনের কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে মাত্র বিশ লাখ ডলারের রপ্তানি স্থলবন্দর দিয়ে হয়নি।

তবে ভারতীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে ওই নয় ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ভারতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে, যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ নয়শ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। মূলত ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার হলো বাংলাদেশ।

ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হতো পোশাক এবং এরপর পাট ও পাটজাত পণ্যই দেশটিতে বেশি যায় বাংলাদেশ থেকে।

এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতেও বাংলাদেশ ভালো করছিল। এর ওপরে আগেই বিধিনিষেধ দিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশে কেমন প্রভাব পড়বে

শুক্রবার স্থলবন্দর দিয়ে নয়টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে তিন মাসে তিন দফায় বিধিনিষেধ দিল ভারত।

এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছিল।

তারও আগে গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল দেশটি।

এর আগে আটই এপ্রিল অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছিল ভারত।

এরপর ১৫ এপ্রিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সূতা আমদানি বন্ধ করে ঘোষণা করে বাংলাদেশ।

অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ভারত অনেক দিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু এখনকার পালটিপালটি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সংকট তৈরি করছে। এটা কারও জন্যই ভালো নয়। বাংলাদেশ ভারতের ওপর অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল। আবার ভারতীয় পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের উপরেও নির্ভরশীলতা আছে। তাই দুই পক্ষই যত দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে ততই দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি উপকৃত হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, তৈরি পোশাকের পরে ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্যই বেশি যাচ্ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। যদিও ২০১৭ সালে দেশটি বাংলাদেশি পাটপণ্যে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক আরোপ করে, যা ২০২৩ সালে আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।

শেখ শামসুল আবেদিন বলছেন, ওই শুল্ক আরোপের কারণেও বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য ভারতের রপ্তানিতে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশের পাট ভালো করছিল।

তিনি বলেন, এখন হয়তো কাঁচাপাট রপ্তানি সংকটে পড়বে। তবে একই সঙ্গে দেশে পাটের ফিনিশড গুড উৎপাদন আরও বাড়ানো সুযোগ আছে। যদিও নৌপথে ভারতের রপ্তানির সুযোগ এখনো আছে। সেটি কতটা কাজে লাগানো যায় তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতির পরও ইরানের ওপর ইসরাইলের নতুন হামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ‘বিরক্ত’ হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল লাভেল।

লাভেল বলেন, ট্রাম্প স্পষ্টতই নেতানিয়াহুর প্রতি খুবই বিরক্ত। এমনকি বলা যায়, তিনি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার মনে করছেন।

ইউরোপে একটি ন্যাটো সম্মেলনে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ইসরাইল এবং ইরান—দু’পক্ষই যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙেছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

তবে, ফিল লাভেল বলেন, যদিও ট্রাম্প দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন, তবুও তার বেশি রাগ ছিল ইসরাইলের ওপর, বিশেষ করে নেতানিয়াহুর আচরণের কারণে।

ওয়াশিংটন সূত্র জানায়, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নেতানিয়াহুর সমর্থন পাওয়ার পর ট্রাম্প কাতারের সহায়তায় ইরানের সাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরাইল ইরানে হামলা চালায়।

আন্তর্জাতিক

ইরান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মাদ মারান্দি ইজাদি আল-জাজিরাকে বলেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা করেও কোনো লাভ হয়নি—এমন অভিযোগ তুলে এনপিটি থেকে সরে আসতে পারে ইরান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটির ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে পারে তারা।

ইজাদি বলেন, ইরান এ চুক্তির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। অথচ এই সহযোগিতা কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি বরং ইরানের সেসব পারমাণবিক স্থাপনা ইসরাইলের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে কিন্তু হামলার শিকার হওয়া সব স্থাপনাই আইএইএর নিয়মিত নজরদারিতে ছিল। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এটি একেবারেই বেআইনি।

ইজাদি আরও বলেন, এ চুক্তির সদস্য না হয়েও অনেক দেশ পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরাইল নিজেই তার বড় উদাহরণ। ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসে, তাতে বৈধতার কোনো অভাব হবে না।

ইজাদি দাবি করেন, ইরানের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই বর্তমানে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে রয়েছেন এবং বিষয়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয়ভাবে আলোচনার টেবিলে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি এনপিটি থেকে সরে আসে, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি আরও বিতর্কিত হয়ে উঠবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

ইরান-ইসরাইল চলমান সংঘাতের কারণ হিসেবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে দায়ী করছে ইসরাইল ও এর মিত্ররা। ১২ দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলায় অগ্নিগর্ভ ইরান-ইসরাইল দুই দেশ। ২২ জুন ইসরাইলের হয়ে এই সংঘাতে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্রও। ইরানের তিন পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইস্পাহানে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিক্রিয়া কাতার, বাহরাইন, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এর পরপরই সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন—যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরাইল।

এরপর কয়েক ঘণ্টা নানা নাটকীয়তার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরাইল।

আন্তর্জাতিক

দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ মার্চ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে একটি বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটে প্রাণঘাতী বোমা হামলার পেছনের সন্দেহভাজন ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। তিনি এর কৃতিত্ব দেন পাকিস্তানকে।

‘এই দানবকে গ্রেফতারে সহযোগিতার জন্য আমি বিশেষভাবে পাকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই,’ বলেন ট্রাম্প।

এর মাত্র তিন মাস পর, ১৮ জুন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীরকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান। যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধান, যিনি রাষ্ট্রপ্রধান নন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমন বৈঠকে অংশ নিলেন।

এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে এক নাটকীয় মোড়। কারণ সাত বছর আগে এই ট্রাম্পই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া কিছু দেয়নি’ বলে অভিযোগ করেছিলেন। এমনকি জো বাইডেনও পাকিস্তানকে ‘বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক দেশ’ বলে বর্ণনা করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্পর্ক পুনঃগঠনের প্রক্রিয়া চলছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকেই। আর গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা সেই সম্পর্ককে নতুন ভিত্তি দেয়।

তবে বিশ্লেষক মারভিন ওয়েইনবাম সতর্ক করে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া একেবারে অনির্দেশ্য ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এটি ঐতিহ্যবাহী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধারাকে প্রতিফলিত করে না’।

অন্যদিকে বিশ্লেষক রেজা আহমেদ রুমি বলেন, ‘ট্রাম্পের আমন্ত্রণ কেবল প্রথা ভঙ্গই নয়, বরং প্রথা পুনঃনির্ধারণ। এতে পরিষ্কার বার্তা—ওয়াশিংটনের নজরে পাকিস্তান এখন শুধুই পেরিফেরি নয়, বরং অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ’।

মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে পাকিস্তানের গুরুত্ব

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো এমন এক সময়ে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। গত ১৩ জুন থেকে ইসরাইল ইরানে হামলা শুরু করেছে এবং জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। ইসরাইলের হামলায় ইরানে ইতোমধ্যেই ৬০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০।

আসিম মুনীরের সঙ্গে বুধবার হোয়াইট হাউসে লাঞ্চের পর ট্রাম্প বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ইরানকে খুব ভালো জানে। সম্ভবত অন্যদের চেয়ে ভালো—যদিও (বর্তমান পরিস্থিতিতে) তারা খুশি নয়’।

ট্রাম্প আরও বলেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে আসিম মুনীর যে ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ।

এ সময় ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মানুষটিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, কারণ তিনি যুদ্ধ থামাতে ভূমিকা রেখেছেন। একইসঙ্গে (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও ধন্যবাদ দিতে চাই—যিনি কিছুদিন আগে হোয়াইট হাউজে এসেছিলেন’।

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ: এক ধাপ দূরে ছিল পারমাণবিক যুদ্ধ

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সূচনা হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে, কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর। এ ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে, তবে পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।

এর জেরে গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও প্রতিশোধ হিসেবে ৬টি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করার দাবি করে। এরপর উভয়পক্ষ তিনদিন ড্রোন হামলা বিনিময় করে এবং ১০ মে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পর্যন্ত গড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ থামে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ থামিয়েছি। মুনীর ও মোদি—এই দুই ব্যক্তি খুব বুদ্ধিমানের মতো যুদ্ধ থামানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি ছিল একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ’।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অস্বীকার করেছে। বলেছে, এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা। তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমিই পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ থামিয়েছি’।

যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান ‘কৌশলগত সম্পর্ক’ নাকি ‘গোপন চুক্তি’?

এদিকে রাজনীতি বিশ্লেষক আরিফ আনসার বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের তুলনায় সামরিকভাবে ছোট হলেও দেশটির দক্ষ কৌশলগত সাড়া ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে। এটি দেখিয়েছে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্বলতা সত্ত্বেও পাকিস্তান বড় প্রতিপক্ষকে কৌশলগতভাবে চাপে ফেলতে সক্ষম’।

সেইসঙ্গে পাকিস্তান ট্রাম্প প্রশাসনকে কিছু ‘আকর্ষণীয় অফারও’ দিয়েছে—শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, রেয়ার আর্থ মিনারেলস, এমনকি ক্রিপ্টো বিনিয়োগও।

এ বিষয়ে সেন্টকম প্রধান জেনারেল কুরিল্লা বলেন, ‘অ্যাবি গেট বোমার সন্দেহভাজনের গ্রেফতারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সরাসরি ভূমিকা ছিল। ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীর আমাকে ফোনে বলেন, তারা ওই আইএস-কে সদস্যকে আটক করেছে’।

‘গণতন্ত্র না সামরিক দাপট?’

বিশ্লেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক ‘সামরিক থেকে সামরিক’ ট্র্যাকে এগোচ্ছে এবং বেসামরিক সরকারকে পাশে রেখেই হচ্ছে সবকিছু।

রেজা আহমেদ রুমি বলেন, ‘এই মিটিং আসলে প্রমাণ করে দেয়—খাকি পোশাক এখনো ব্যালটকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। যদি এটিই হয় সম্পর্ক পুনর্গঠন, তাহলে সেটি গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য উদ্বেগজনক’।

আরিফ আনসারও বলেন, এ ধরনের গোপন ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চুক্তি অতীতে পাকিস্তানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।

সাময়িক রোমান্স না কি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই ছিল ‘লেনদেনভিত্তিক’—প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠতা, তারপর উপেক্ষা।

রুমি বলেন, ‘যতদিন না এ সম্পর্ক নিরাপত্তার বাইরেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গভীর হয়, ততদিন এটিকে শুধুই কৌশলগত রোমান্স বলা যেতে পারে—যা রাজনৈতিক বাতাস বদলালেই মিলিয়ে যেতে পারে’।

পরিশেষে বলা হয়, ট্রাম্প-মুনীর বৈঠক নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তবে তা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য সংকেত হতে পারে—যেখানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আবারও কেন্দ্রীয় হয়ে উঠছে। এই সম্পর্ক কতটা টিকবে, তা নির্ভর করবে ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, চীন ও ইরান নীতির দিকনির্দেশনার ওপর।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের আগ্রাসনের পাল্টা জবাবে গত কয়েক দিনে একাধিক পালায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। যার নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখনও পর্যন্ত তার সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, তবুও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

১৩ জুন ইসরাইল ইরানের উপর একতরফাভাবে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনা। এতে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এরোস্পেস ফোর্স ১৩টি ধাপে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকরা ইরানের হামলার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল চিহ্নিত করেছেন। তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে:

দিন-রাতের অনিয়মিত হামলা: নির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে দিনে-রাতে যেকোনো সময় আঘাত হানায় ইসরাইল প্রতিরোধে অপ্রস্তুত।
ভ্রান্তি তৈরির কৌশল: আসল ও ভুয়া হামলার সংমিশ্রণে ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা বিভ্রান্ত হয়েছে।

বিভিন্ন অস্ত্রের ব্যবহার: একসঙ্গে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

আধুনিক প্রতিরক্ষা ভেদ: THAAD, Iron Dome ও David’s Sling-এর মতো অতি উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ব্যর্থ হয়েছে।

অনিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ: বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন গতির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ইসরাইলের প্রতিরোধ ব্যাহত করেছে।

চমকপ্রদ লক্ষ্যবস্তু: ইরান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে, যা ইসরাইলের কাছে অপ্রত্যাশিত।

সীমাহীন হামলা ক্ষেত্র: হামলা কেবল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো দখলকৃত ভূখণ্ডে বিস্তৃত।

উন্নত তথ্যভান্ডার: ইরানের কাছে সেনা ঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও অবকাঠামোর বিশদ টার্গেট লিস্ট রয়েছে।

ভয় দেখানো: ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, দখলকৃত ফিলিস্তিনের কোনো এলাকাই আর নিরাপদ নয়। এর মাধ্যমে ইসরাইলিদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখছে ইরান।

নতুন অস্ত্র গোপন: ইরান এখনো তার সবচেয়ে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, ভবিষ্যতেও ইসরাইলকে চমকে দিতে চায়।

আন্তর্জাতিক

ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গোপন সম্মতি’ রয়েছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হলেও তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন তিনি। খবর আল-জাজিরার।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরান নিয়ে আমার ভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না!

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনায় নীতিগত সম্মতি দিলেও চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত রেখেছে এ আশায় যে, তেহরান হয়তো তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে।

তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, আমাকে সবাই এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দেখা যাক কী হয়।

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ‘অত্যন্ত মধুর’।

ইসরাইলের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্পের দৃঢ়তা ও স্পষ্ট বার্তা—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে না—এই সংকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা নিশ্চিত করতে হলে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তিনি (ট্রাম্প) তাদের আলোচনার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু তারা তাকে ধোঁকা দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেউ ধোঁকা দিয়ে পার পেতে পারে না।

মার্কিন সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, এটি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত, তবে তারা ইতিমধ্যেই আমাদের অনেক সহায়তা করছে।

এবার মিসাইল ছুড়ল উত্তর কোরিয়া

রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের সুনান থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ১০টি মাল্টিলঞ্চার মিসাইল ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে তারা এ মিসাইলগুলো ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী।

তবে মিসাইল ছোড়ার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দক্ষিণ কোরীয়রা। উত্তর কোরিয়া যেসব মাল্টিলঞ্চার মিসাইল নিক্ষেপ করেছে সেগুলো স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল হিসেবে বিবেচনা করে দক্ষিণ কোরিয়া। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করতে পারবে না। তবে দেশটি এসব নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করে না।

ইরানের ওপর ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিসিএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করছে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরাইলের এ ধরনের আচরণ ইরানের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

এতে আরও বলা হয়, বিশ্ব আজ যে গুরুতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ক্যান্সারের মতো এক সত্তা এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রধান হুমকি।

গত ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের রাজধানী তেহরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এর পাল্টা জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়।

এই পাল্টাপাল্টি হামলা এখন পর্যন্ত টানা সাত দিন ধরে চলছে।

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিমানটি ‘এফ-৩৫’ মডেলের। ইরানের তাবরিজ এলাকায় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়।

ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার কথা বলছে ইরানের সংবাদমাধ্যম।

রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নুর নিউজ’ বলছে, সোমবার ইরানের তাবরিজ এলাকায় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়।

এদিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই নিষ্ক্রিয় করার দাবি জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী—আইডিএফ।

শুক্রবার ভোরে ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব ও প্রধান পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার মাধ্যমে ‘আচমকা’ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে আকাশপথে হামলা পাল্টা হামলা অব্যাহত আছে।

সোমবার চার দিনের মাথায় এসে ইসরায়েল দাবি করে, ইরানের আকাশপথ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং আগামী দিনে হামলা আরও জোরদার করা হবে।

এদিন ইরানের রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ভবনেও হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার সময় চ্যানেলটি সরাসরি সম্প্রচারে ছিল।

যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নুর নিউজ’ বলছে, এটি ‘এফ-৩৫’ মডেলের। সোমবার ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেটি ধ্বংস করা হয়।

এদিকে আইডিএফের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর ইসরায়েলের ‘জানা নেই’।

পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, সোমবারও ইসরায়েলকে লক্ষ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের দিকে মোট ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সেগুলো প্রতিহত করেছে।