আন্তর্জাতিক

দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ মার্চ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে একটি বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটে প্রাণঘাতী বোমা হামলার পেছনের সন্দেহভাজন ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। তিনি এর কৃতিত্ব দেন পাকিস্তানকে।

‘এই দানবকে গ্রেফতারে সহযোগিতার জন্য আমি বিশেষভাবে পাকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই,’ বলেন ট্রাম্প।

এর মাত্র তিন মাস পর, ১৮ জুন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীরকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান। যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধান, যিনি রাষ্ট্রপ্রধান নন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমন বৈঠকে অংশ নিলেন।

এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে এক নাটকীয় মোড়। কারণ সাত বছর আগে এই ট্রাম্পই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া কিছু দেয়নি’ বলে অভিযোগ করেছিলেন। এমনকি জো বাইডেনও পাকিস্তানকে ‘বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক দেশ’ বলে বর্ণনা করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্পর্ক পুনঃগঠনের প্রক্রিয়া চলছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকেই। আর গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা সেই সম্পর্ককে নতুন ভিত্তি দেয়।

তবে বিশ্লেষক মারভিন ওয়েইনবাম সতর্ক করে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া একেবারে অনির্দেশ্য ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এটি ঐতিহ্যবাহী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধারাকে প্রতিফলিত করে না’।

অন্যদিকে বিশ্লেষক রেজা আহমেদ রুমি বলেন, ‘ট্রাম্পের আমন্ত্রণ কেবল প্রথা ভঙ্গই নয়, বরং প্রথা পুনঃনির্ধারণ। এতে পরিষ্কার বার্তা—ওয়াশিংটনের নজরে পাকিস্তান এখন শুধুই পেরিফেরি নয়, বরং অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ’।

মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে পাকিস্তানের গুরুত্ব

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো এমন এক সময়ে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। গত ১৩ জুন থেকে ইসরাইল ইরানে হামলা শুরু করেছে এবং জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। ইসরাইলের হামলায় ইরানে ইতোমধ্যেই ৬০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০।

আসিম মুনীরের সঙ্গে বুধবার হোয়াইট হাউসে লাঞ্চের পর ট্রাম্প বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ইরানকে খুব ভালো জানে। সম্ভবত অন্যদের চেয়ে ভালো—যদিও (বর্তমান পরিস্থিতিতে) তারা খুশি নয়’।

ট্রাম্প আরও বলেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে আসিম মুনীর যে ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ।

এ সময় ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মানুষটিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, কারণ তিনি যুদ্ধ থামাতে ভূমিকা রেখেছেন। একইসঙ্গে (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও ধন্যবাদ দিতে চাই—যিনি কিছুদিন আগে হোয়াইট হাউজে এসেছিলেন’।

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ: এক ধাপ দূরে ছিল পারমাণবিক যুদ্ধ

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সূচনা হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে, কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর। এ ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে, তবে পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।

এর জেরে গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও প্রতিশোধ হিসেবে ৬টি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করার দাবি করে। এরপর উভয়পক্ষ তিনদিন ড্রোন হামলা বিনিময় করে এবং ১০ মে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পর্যন্ত গড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ থামে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ থামিয়েছি। মুনীর ও মোদি—এই দুই ব্যক্তি খুব বুদ্ধিমানের মতো যুদ্ধ থামানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি ছিল একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ’।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অস্বীকার করেছে। বলেছে, এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা। তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমিই পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ থামিয়েছি’।

যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান ‘কৌশলগত সম্পর্ক’ নাকি ‘গোপন চুক্তি’?

এদিকে রাজনীতি বিশ্লেষক আরিফ আনসার বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের তুলনায় সামরিকভাবে ছোট হলেও দেশটির দক্ষ কৌশলগত সাড়া ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে। এটি দেখিয়েছে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্বলতা সত্ত্বেও পাকিস্তান বড় প্রতিপক্ষকে কৌশলগতভাবে চাপে ফেলতে সক্ষম’।

সেইসঙ্গে পাকিস্তান ট্রাম্প প্রশাসনকে কিছু ‘আকর্ষণীয় অফারও’ দিয়েছে—শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, রেয়ার আর্থ মিনারেলস, এমনকি ক্রিপ্টো বিনিয়োগও।

এ বিষয়ে সেন্টকম প্রধান জেনারেল কুরিল্লা বলেন, ‘অ্যাবি গেট বোমার সন্দেহভাজনের গ্রেফতারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সরাসরি ভূমিকা ছিল। ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীর আমাকে ফোনে বলেন, তারা ওই আইএস-কে সদস্যকে আটক করেছে’।

‘গণতন্ত্র না সামরিক দাপট?’

বিশ্লেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক ‘সামরিক থেকে সামরিক’ ট্র্যাকে এগোচ্ছে এবং বেসামরিক সরকারকে পাশে রেখেই হচ্ছে সবকিছু।

রেজা আহমেদ রুমি বলেন, ‘এই মিটিং আসলে প্রমাণ করে দেয়—খাকি পোশাক এখনো ব্যালটকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। যদি এটিই হয় সম্পর্ক পুনর্গঠন, তাহলে সেটি গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য উদ্বেগজনক’।

আরিফ আনসারও বলেন, এ ধরনের গোপন ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চুক্তি অতীতে পাকিস্তানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।

সাময়িক রোমান্স না কি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই ছিল ‘লেনদেনভিত্তিক’—প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠতা, তারপর উপেক্ষা।

রুমি বলেন, ‘যতদিন না এ সম্পর্ক নিরাপত্তার বাইরেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গভীর হয়, ততদিন এটিকে শুধুই কৌশলগত রোমান্স বলা যেতে পারে—যা রাজনৈতিক বাতাস বদলালেই মিলিয়ে যেতে পারে’।

পরিশেষে বলা হয়, ট্রাম্প-মুনীর বৈঠক নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তবে তা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য সংকেত হতে পারে—যেখানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আবারও কেন্দ্রীয় হয়ে উঠছে। এই সম্পর্ক কতটা টিকবে, তা নির্ভর করবে ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, চীন ও ইরান নীতির দিকনির্দেশনার ওপর।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের আগ্রাসনের পাল্টা জবাবে গত কয়েক দিনে একাধিক পালায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। যার নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখনও পর্যন্ত তার সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, তবুও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

১৩ জুন ইসরাইল ইরানের উপর একতরফাভাবে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনা। এতে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এরোস্পেস ফোর্স ১৩টি ধাপে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকরা ইরানের হামলার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল চিহ্নিত করেছেন। তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে:

দিন-রাতের অনিয়মিত হামলা: নির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে দিনে-রাতে যেকোনো সময় আঘাত হানায় ইসরাইল প্রতিরোধে অপ্রস্তুত।
ভ্রান্তি তৈরির কৌশল: আসল ও ভুয়া হামলার সংমিশ্রণে ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা বিভ্রান্ত হয়েছে।

বিভিন্ন অস্ত্রের ব্যবহার: একসঙ্গে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

আধুনিক প্রতিরক্ষা ভেদ: THAAD, Iron Dome ও David’s Sling-এর মতো অতি উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ব্যর্থ হয়েছে।

অনিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ: বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন গতির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ইসরাইলের প্রতিরোধ ব্যাহত করেছে।

চমকপ্রদ লক্ষ্যবস্তু: ইরান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে, যা ইসরাইলের কাছে অপ্রত্যাশিত।

সীমাহীন হামলা ক্ষেত্র: হামলা কেবল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো দখলকৃত ভূখণ্ডে বিস্তৃত।

উন্নত তথ্যভান্ডার: ইরানের কাছে সেনা ঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও অবকাঠামোর বিশদ টার্গেট লিস্ট রয়েছে।

ভয় দেখানো: ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, দখলকৃত ফিলিস্তিনের কোনো এলাকাই আর নিরাপদ নয়। এর মাধ্যমে ইসরাইলিদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখছে ইরান।

নতুন অস্ত্র গোপন: ইরান এখনো তার সবচেয়ে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, ভবিষ্যতেও ইসরাইলকে চমকে দিতে চায়।

আন্তর্জাতিক

ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গোপন সম্মতি’ রয়েছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হলেও তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন তিনি। খবর আল-জাজিরার।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরান নিয়ে আমার ভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না!

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনায় নীতিগত সম্মতি দিলেও চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত রেখেছে এ আশায় যে, তেহরান হয়তো তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে।

তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, আমাকে সবাই এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দেখা যাক কী হয়।

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ‘অত্যন্ত মধুর’।

ইসরাইলের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্পের দৃঢ়তা ও স্পষ্ট বার্তা—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে না—এই সংকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা নিশ্চিত করতে হলে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তিনি (ট্রাম্প) তাদের আলোচনার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু তারা তাকে ধোঁকা দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেউ ধোঁকা দিয়ে পার পেতে পারে না।

মার্কিন সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, এটি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত, তবে তারা ইতিমধ্যেই আমাদের অনেক সহায়তা করছে।

এবার মিসাইল ছুড়ল উত্তর কোরিয়া

রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের সুনান থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ১০টি মাল্টিলঞ্চার মিসাইল ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে তারা এ মিসাইলগুলো ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী।

তবে মিসাইল ছোড়ার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দক্ষিণ কোরীয়রা। উত্তর কোরিয়া যেসব মাল্টিলঞ্চার মিসাইল নিক্ষেপ করেছে সেগুলো স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল হিসেবে বিবেচনা করে দক্ষিণ কোরিয়া। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করতে পারবে না। তবে দেশটি এসব নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করে না।

ইরানের ওপর ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিসিএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করছে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরাইলের এ ধরনের আচরণ ইরানের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

এতে আরও বলা হয়, বিশ্ব আজ যে গুরুতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ক্যান্সারের মতো এক সত্তা এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রধান হুমকি।

গত ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের রাজধানী তেহরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এর পাল্টা জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়।

এই পাল্টাপাল্টি হামলা এখন পর্যন্ত টানা সাত দিন ধরে চলছে।

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিমানটি ‘এফ-৩৫’ মডেলের। ইরানের তাবরিজ এলাকায় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়।

ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার কথা বলছে ইরানের সংবাদমাধ্যম।

রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নুর নিউজ’ বলছে, সোমবার ইরানের তাবরিজ এলাকায় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়।

এদিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই নিষ্ক্রিয় করার দাবি জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী—আইডিএফ।

শুক্রবার ভোরে ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব ও প্রধান পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার মাধ্যমে ‘আচমকা’ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে আকাশপথে হামলা পাল্টা হামলা অব্যাহত আছে।

সোমবার চার দিনের মাথায় এসে ইসরায়েল দাবি করে, ইরানের আকাশপথ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং আগামী দিনে হামলা আরও জোরদার করা হবে।

এদিন ইরানের রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ভবনেও হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার সময় চ্যানেলটি সরাসরি সম্প্রচারে ছিল।

যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নুর নিউজ’ বলছে, এটি ‘এফ-৩৫’ মডেলের। সোমবার ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেটি ধ্বংস করা হয়।

এদিকে আইডিএফের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর ইসরায়েলের ‘জানা নেই’।

পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, সোমবারও ইসরায়েলকে লক্ষ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের দিকে মোট ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সেগুলো প্রতিহত করেছে।

আন্তর্জাতিক

তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চায় ইরান। এজন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছে ইরান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এমন দাবির মধ্যেই জানা গেল, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা চেষ্টার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করলেই সংঘাতের অবসান হবে। সোমবার (১৬ জুন) এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খামেনিকে হত্যা চেষ্টার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এ মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহু বলেন, দেখুন আমাদের যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করছি। আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু আমরা তাদের (ইরান) শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছি।

ইরানকে হিটলারের পারমাণবিক দল আখ্যা দেন তিনি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে উৎখাতের পরিকল্পনা সম্পর্কে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটা করলে সংঘাত আর বাড়বে না, বরং সংঘাতের অবসান ঘটাবে। ’

যুদ্ধবিরতিতে গেলে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরবে ইরানের এমন শর্তকে ভুয়া বলে মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু। বলেন, ‘তারা (ইরান) এসব ভুয়া আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় যেখানে তারা মিথ্যা বলে, প্রতারণা করে আর এতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে চায়। ’

সঞ্চালককে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আপনি জানেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে খুব নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে। ’

রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পরিকল্পনায় ভেটো দিয়েছেন। যে কারণে তা আর বাস্তবায়নের দিকে যায়নি।

আজ নেতানিয়াহু জানালেন, তারা খামেনিকে হত্যা বা উৎখাত চান, সেই চেষ্টার জন্য যা করার করছেন।

আন্তর্জাতিক

১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আকার নিতে শুরু করলেও সাদ্দাম হোসেনের আমলে এসে ১৯৭০ এর দশকে এটি গতি পায়।

আন্তর্জাতিক

ক্রেমলিনের শীর্ষ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভকে উদ্ধৃত করে রুশ সংবাদ সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে একটি টেলিফোন আলাপ হয়েছে।

উশাকভ বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইরানের উপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান এবং দুই নেতা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু করার সম্ভাবনা নাকচ করেননি।

তিনি জানান, প্রায় ৫০ মিনিট ধরে দুই নেতার মধ্যে কথা হয় এবং আলোচনাটি গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ ছিল বলে বর্ণনা করেন।

এদিকে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। লাভরভ বলেন, মস্কো ইরানের ওপর ইসরায়েলের শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক ইস্যু ঘিরে সমস্যা সমাধানে কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।

লাভরভ সেই হামলায় নিহত ইরানিদের জন্য আরাঘচিকে সমবেদনা জানান বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক

ভারতে ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে লোকজনকে দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। এই বহিষ্কার অভিযানে বহু নিরীহ মুসলিম নাগরিককে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে টার্গেট করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও টেলিগ্রাফের।

একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মে থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্য ৩০৩ জনকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করেছে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষিত ৩০ হাজার মানুষের মধ্য থেকে এই ‘পুশব্যাক’ করা হয়। আসামে এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তাদের পরিবার ও জমিজমা উভয়ই রাজ্যে রয়েছে। এই রাজ্যে লক্ষাধিক পরিবার রয়েছে, যাদের শিকড় বাংলাদেশে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এবং তাদের পরিবারকে প্রায়ই ভুলভাবে প্রধানত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারা এতটা দরিদ্র যে, উচ্চ আদালতে ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করার মতো সামর্থ্যও রাখেন না। সরকারের রোষে পড়ার আশঙ্কায় মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, এই বিতাড়ন অভিযানে শুধু মুসলিমদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আসাম সরকারের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল টেলিগ্রাফ। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

বাংলাদেশসংলগ্ন ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) সীমান্ত থাকা আসাম গত মাস থেকে রাতের অন্ধকারে ‘পুশইন’ শুরু করেছে। আসামে এ ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয়। সম্ভাব্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা বাঙালি ভাষাভাষীদের স্থানীয় অসমিয়া ভাষাভাষীরা বিশেষ করে চাকরির বাজারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বলেছেন, বিদেশি বিতাড়নের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের চাপ রয়েছে। আমরা ৩০৩ জনকে পুশব্যাক করেছি। এই পুশব্যাক আরও তীব্র করা হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে।

বিচারাধীন অবস্থায় বহিষ্কৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের একজন ৫১ বছর বয়সি প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক খাইরুল ইসলাম। তাকে ২০১৬ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

খাইরুল বলেন, ২৩ মে পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ডিটেনশন সেন্টার হয়ে সীমান্তে পৌঁছায়। আমাদের চোখ বেঁধে ও হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতের আঁধারে ১৪ জনকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়। বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ওই ১৪ জনকে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ রেখে দেয়। খাইরুল জানান, তার স্ত্রী আসাম পুলিশকে জানালে তাকে ফেরত নেওয়া হয়, কিন্তু অন্যদের কোনো খবর তার জানা নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত থেকে কিছু মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে এবং এই বিষয়ে দিল্লি­র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের পুশব্যাক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি। তাদের আশঙ্কা, বিচারাধীন এবং প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদেরও ভুয়া নথির ভিত্তিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।

আন্তর্জাতিক

উত্তর আয়ারল্যান্ডের বালিমিনা শহর টানা দ্বিতীয় দিনেও রীতিমত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, গাড়ি ও বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, ঘটনাটি শুরু হয় সোমবার, এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে ঘিরে হওয়া একটি বিক্ষোভ থেকে।

পুলিশ জানায়, এতে মঙ্গলবার রাতেও ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। এ নিয়ে দুই দিনে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতেও বিক্ষোভকারীরা পেট্রল বোমা, ব্লকেড ভেঙে ফেলা ইট-পাথর ও ধাতব কাঠামো ছুঁড়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। পুলিশ জল কামান ও অপ্রাণঘাতী রাবার বুলেট দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ও উত্তেজনার সূচনা

এই সহিংসতার সূত্রপাত হয় সোমবার শহরটির ১৪ বছর বয়সি দুই কিশোর আদালতে হাজির হওয়ার পর। তাদের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়। পরে শুনানিতে রোমানিয়ান ভাষায় অনুবাদক ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

যদিও দুজনই আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তাদেরকে ২ জুলাই পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হয়েছে।

বর্ণবাদী ঘৃণা-অপরাধের আশঙ্কা

এদিকে সোমবার রাতের হামলায় চারটি ঘরবাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পুলিশ বর্ণবাদ-প্রসূত ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে।

এক রোমানিয়ান নারী বলেন, তিনি নিজের বাড়ির জানালায় ব্রিটিশ পতাকা লাগিয়ে রেখেছেন, যাতে হামলার লক্ষ্যবস্তু না হন।

বেলফাস্ট টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা গেছে, একটি বাড়ির দরজায় ব্রিটিশ ও ফিলিপিনো পতাকার নিচে লেখা, ‘Filipino lives here’ অর্থাৎ ‘ফিলিপিনোরা এখানেই বসবাস করে’।

এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে সোমবার গ্রেফতারকৃত একজনও রয়েছে।

দাঙ্গা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

পুলিশ প্রধান জন বাউচার বলেন, ‘বালিমিনায় যেসব মূর্খতাপূর্ণ সহিংসতা ঘটেছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। ঘৃণা-প্রসূত আচরণ ও জনতার শাসন সমাজের বন্ধন ছিন্ন করে দেয়—এই আচরণ বন্ধ হতে হবে’।

একটি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়, আরেকটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তা অসুস্থ হন ও বমি করেন। এদিন কয়েকটি গাড়িও আগুনে পুড়ে যায়। এর মধ্যে একটি গাড়ি উল্টে আগুনে জ্বলতে দেখা গেছে।

কেবল বালিমিনাই নয়, বেলফাস্ট, নিউটাউনঅ্যাবি ও ক্যারিকফারগাস শহরেও পুলিশের ওপর বোতল, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

এ নিয়ে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রী হিলারি বেন বলেছেন, ‘বালিমিনায় আবারও যে বেসামাল সহিংসতার দৃশ্য আমরা দেখলাম, তা উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’।

প্রেক্ষাপট

উত্তর আয়ারল্যান্ডে মাঝে মধ্যেই উত্তেজনার সময় পুলিশ আক্রমণের শিকার হয়, যদিও ১৯৯৮ সালের শান্তিচুক্তির পর তিন দশকের সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে। তবুও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে স্থিতিশীলতা এখনো ভঙ্গুর।

আন্তর্জাতিক

ভোরের আলো ফোটার আগেই হাজারও ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় জমে গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। শিশুদের কান্না থামাতে বাবা-মারা ছুটে যান রুটির খোঁজে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য; রুটির বদলে তারা ফিরছেন মাথায় গুলি নিয়ে-কেউ স্ট্রেচারে করে। কেউ লাশ হয়ে। খাদ্য সংকটে বিধ্বস্ত গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যখন মানুষ ট্রাকের পাশে ত্রাণের আশায় জড়ো হয় ঠিক তখনই নামে ইসরাইলি বুলেটবৃষ্টি।

সম্প্রতি রাফা ও খান ইউনিসে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের এই ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পড়ে গুলিবদ্ধ হয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি। নিহত হয়েছেন অনেকেই। শুয়াইব আবু তইর তাদেরই একজন। রোববার তার চার সন্তানের জন্য রুটি আনতে গিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু ফিরেছেন মাথায় গুলিবদ্ধ হয়ে। আলজাজিরা।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই গাজায় সহায়তা কেন্দ্রগুলো হয়ে উঠেছে গোপন মৃত্যুফাঁদ। রোববার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিএ)।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান (জিএইচএফ) পরিচালিত এসব বিতরণ পয়েন্টে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ। স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ ঘারিব জানিয়েছেন, রোববার রাফায় হাজার হাজার মানুষকে একটি মার্কিন বিতরণ পয়েন্টের ৫০০ মিটার দূরে আল-আলম গোলচত্বরে জড়ো হতে বলা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ভিড় যখন বাড়তে থাকে তখন হঠাৎ করে চারদিক থেকে গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। তারা আরও বলেছেন, মাথা আর বুক লক্ষ্য করেই গুলি চালায় বর্বর সেনারা। এ দিন গুলিবদ্ধ হন আবু তইরও।

তার শ্যালিকা আসমা আবু সালাহ বলেছেন, ‘সে তো শুধু বাচ্চাদের খাবার আর পানির জন্য গিয়েছিল।

ওর সন্তানরা তাকে বলেছে, ‘বাবা, আমাদের খাবার দাও’। এই কথাটাই সবচেয়ে কষ্টের। সে তো শুধু রুটি আনতে গিয়েছিল। রুটির বদলে ওরা তার মাথায় গুলি মেরেছে।’

গাজার ফিল্ড হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-হেমস এটিকে একটি গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। রোববারের পর সোমবারও ত্রাণের লাইনে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার ও বুধবারও একই তাণ্ডব চালিয়েছে সেনারা। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০০ জনেরও বেশি।

ত্রাণকেন্দ্র ছাড়াও গাজাজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার একমাত্র কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র নূরা আল-কাবি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে।

ইসরাইলি বর্বরতায় সোমবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৪৭০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ২৪ হাজার ৬৯৩ জন আহত হয়েছেন।