খেলাধুলা

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সাকিব-লিটনরা যদি না খেলেন, তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না। এমনটি মনে করেন খালেদ মাহমুদ। দেশের হয়ে খেলাটাই আগে,এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার শুরু হবে এবারের আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ)। এবারের এই টি ২০ টুর্নামেন্টে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে খেলবেন। মোস্তাফিজুর রহমানকে এবারও ধরে রেখেছে দিলি­ ক্যাপিটালস। তিনজনই আইপিএলের ১৬তম সংস্করণে খেলার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র চেয়েছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত তা পাননি তারা।

এদিকে আইরিশদের বিপক্ষে ঢাকায় ৪ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্ট না খেলে সাকিবরা ভারতে যেতে চান আইপিএলে খেলতে।

বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ মঙ্গলবার মিরপুরে বলেন, সাকিবদের আইপিএলে খেলতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া-না দেওয়া বোর্ডের এখতিয়ার। আমাদের দলটা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই আইরিশদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে আমরা যে দলই খেলাই না কেন, ভালো করব। তাই সাকিব, লিটন, মোস্তাফিজ না খেললে খুব একটা যে ক্ষতি হবে, তা নয়। ওরা যদিও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সবার আগে দেশ।

আগের দিন মাশরাফি মুর্তজা বলেছিলেন,অন্যান্য দেশ তো কোনো খেলোয়াড়কে আটকায় না। আমাদের শুধু শুধু ইমোশনাল হয়ে লাভ নেই। আমরা তো এমনিতে অনেক খেলোয়াড়কে অদলবদল করে খেলাচ্ছি,খেলাচ্ছি না তা তো না। ওরা ভালো জায়গায় যখন খেলার সুযোগ পায়, তখন আটকানো ঠিক না।

খেলাধুলা

দুইশ ছাড়ানো স্কোরের পর বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারাল সাকিব আল হাসানের দল।

খেলা শুরুর আগে চট্টলার আকাশ খানিকটা মেঘলা। চারপাশ গুমোট। একটু পর ঠিকই উঠল ঝড়। তবে প্রকৃতিতে নয়, জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ২২ গজে! রনি তালুকদার ও লিটন দাস যেন তাণ্ডব বইয়ে দিলেন আইরিশ বোলারদের ওপর দিয়ে। বৃষ্টিতে নতুন মোড় নেওয়া ম্যাচে পড়ে বল হাতে জ্বলে উঠলেন তাসকিন আহমেদ। প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২২ রানে হারাল বাংলাদেশ।

টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, উইকেটের সম্ভাব্য আচরণের কোনো ধারণা তার নেই। যত বেশি সম্ভব রান তুলতে চান তারা। সেই পথে দলকে এগিয়ে নেন দুই ওপেনার লিটন ও রনি। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রেকর্ড রান তুলে শেষ পর্যন্ত ৯১ রানের জুটি গড়েন তারা স্রেফ ৭.১ ওভারে।

৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন রনি। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৪৭।

ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ভালো শুরু পাওয়া আইরিশদের আশা গুঁড়িয়ে ১ ওভারেই ৩ উইকেট নেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি ১৬ রানে।

টস জয়ী আয়ারল্যান্ড বোলিং শুরু করে হেরি টেক্টরকে দিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫১ টি-টোয়েন্টিতে তিনি একটি বলও করেননি। তবে আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই নতুন বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। এ দিন অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি তার অফ স্পিনে। প্রথম ওভারে তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় শুরু করেন লিটন। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকে পুল করে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন রনি। ব্যস, দুজনের রান রথ ছুটতে থাকে।

চার-ছক্কা আসতে থাকে প্রতি ওভারেই। পেস-স্পিন, কিছুই পায়নি পাত্তা।

প্রথম ৫ ওভারে ভিন্ন ৫ বোলার ব্যবহার করেন এই সিরিজের আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। কিন্তু রান স্রোতে বাঁধ দিতে পারেননি কেউ। ৫ ওভারে রান উঠে যায় ৬১।

পরের ওভারে সেই রান পেরিয়ে যায় ৮০। মার্ক অ্যাডারের করা ওভারটিতে প্রথম বলে কঠিন একটা সুযাগ দিয়েছিলেন লিটন। পরের বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে রনির ছক্কা, এরপর টানা তিন বাউন্ডারি।

৬ ওভারেই চলে আসে ১২ বাউন্ডারি। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৮১। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মিরপুরে ৭৬।

অপ্রতিরোধ্য জুটিকে শেষ পর্যন্ত থামাতে পারেন ক্রিস ইয়াং। তার স্লোয়ারে আলতো শটে মিড অফে ধরা পড়েন লিটন। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ করে ফেরেন তিনি।

লিটনের পর নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান এক ছক্কায় ১৩ বলে ১৪ করে। তবে আইরিশদের স্বস্তি ফেরেনি। রনির ঝড় চলতে থাকে। চারে নেমে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গী হন শামীম হোসেনও।

বেন হোয়াইটওকে টানা দুই বাউন্ডারিতে রনি পঞ্চাশে পৌঁছে যান ২৪ বলে। তার জন্য আবেগময় এক মাইলফলক। সেই ২০১৫ সালের পর জাতীয় দলে ফিরেছেন তিনি কদিন আগে। ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অবশেষে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটির স্বাদ পেলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে, অভিষেকের প্রায় ৮ বছর পর।

শামীম ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তিন বলের মধ্যে চার-ছক্কা মারেন হোয়াইটকে। ওই ওভারে ছক্কা আসে রনির ব্যাট থেকেও।

রনির ইনিংস শেষ হয় রানের তাড়নাতেই। গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথ বলে স্লগ খেলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

অ্যাডায়ারের কাটারে শামীমের ইনিংস থামে ২০ বল ৩০ রানে। এই দফায় দলে ফেরার পর তার প্রথম ইনিংস ছিল এটি। সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে খেললেও ব্যাটিং পাননি।

সাকিব শুরু করেন প্রথম বলের বাউন্ডারিতে। তাওহিদ হৃদয় আউট হয়ে যান এক ছক্কায় ৮ বলে ১৩ করে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে প্রথম বলকে সীমানায় পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজও। এর পরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। সাকিব তখন অপরাজিত ১৩ বলে ২০ করে।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২১৫, দেশের মাঠে সর্বোচ্চ ২১১। চার বল আগে ইনিংস থেমে যাওয়ায় তা আর ছাড়ানো হলো না।

২ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয় যে সমীকরণে, আয়ারল্যান্ডের সামনে জয়ের হাতছানি ছিল তাতে ভালোভাবেই। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার শুরুটাও করেন আশা জাগানিয়া। পাওয়ার প্লের ২ ওভারে দুজন তোলেন ৩২ রান।

নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে আসে ১৮ রান, মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৪।

পরের ওভারেই রাশ টেনে ধরেন হাসান মাহমুদ। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে টানা তিন বলে রান দেননি তিনি রস অ্যাডায়ারকে। পরের বলে আইরিশ ওপেনার খেলার চেষ্টা করেন স্টাম্প ছেড়ে, হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কার ভেঙে দেয় মিডল স্টাম্প।

পরের ওভারেই তাসকিনের তিন ছোবল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ফুল লেংথ বলে বোল্ড লর্কান টাকার। স্লগ করে বোল্ড স্টার্লিং (৮ বলে ১৭)। পয়েন্ট সীমানায় ধরা পড়েন জর্জ ডকরেল।

পরে হাসানের এক ওভারে টেক্টরের তিন বাউন্ডারিতে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে অভিজ্ঞতার সবটুকু মেলে ধরে সাকিব দেন স্রেফ ৫ রান।

পরের দুই ওভারে আর পেরে ওঠেনি আইরিশরা। শেষ ওভারে অসাধারণ ক্যাচে টেক্টরকে ফেরান মিরাজ, ৪ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে স্বস্তিতে।

ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে পারেননি রনি তালুকদার। তার হয়ে তা গ্রহণ করেন অধিনায়ক সাকিব।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ বুধবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ২০৭/৫ (লিটন ৪৭, রনি ৬৭, শান্ত ১৪, শামীম ৩০, হৃদয় ১৩, সাকিব ২০*, মিরাজ ৪*; টেক্টর ২-০-১৬-১, অ্যাডায়ার ৩.২-০-৪৮-১, হিউম ৪-০-৩৫-১, ইয়াং ৪-০-৪৫-২, ডেল্যানি ৩-০-২১-০, হোয়াইট ৩-০-৩৭-০)

আয়ারল্যান্ড: (লক্ষ্য ৮ ওভারে ১০৪) ৮ ওভারে ৮১/৫ (স্টার্লিং ১৭, রস অ্যাডায়ার ১৩, টাকার ১, টেক্টর ১৯, ডকরেল ০, ডেল্যানি ২১*, ক্যাম্পার ১*; নাসুম ১-০-১৮-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৬-০, হাসান ২-০-২০-১, তাসকিন ২-০-১৬-৪, সাকিব ১-০-৫-০)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার।

খেলাধুলা

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিল আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচ একবার আফগানিস্তানের দিকে হেলে তো আরেকবার পাকিস্তানের দিকে। এই ম্যাচে শেষ ২ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২২ রান। সেখান থেকে শেষ ৬ বলে ৫। আর শেষ ২ বলে আফগানদের প্রয়োজন ছিল ২।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেষ হাসিটা আফগানরাই হেসেছে। ১ বল ও ৭ ‍উইকেট হাতে রেখে তারা পেয়েছে দুর্দান্ত এক জয়। সে সঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করেছে রশিদ খানের দল।

এর আগে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম তিন দেখায় তিনটিতেই পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল আফগানিস্তান। গত শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান। এবার সিরিজও নিজেদের করে নিল তারা। এখন শেষ ম্যাচে জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও রয়েছে আফগানদের।

লক্ষ্য তাড়ায় ২ ওভারেই ১৮ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা পায় আফগানিস্তান। ম্যাচের চতুর্থ ওভারে গিয়ে আফগানদের প্রথম ধাক্কা দেয় পাকিস্তান। নভিন-উল-হককে ফিরিয়ে দেন ইমাদ ওয়াসিম। উইকেট হারিয়েও অবশ্য রানের গতি শ্লথ করেনি আফগানিস্তান। প্রথম ৬ ওভারে তারা করে ৪৫ রান। জুটি গড়ে দলকে টেনে নেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জারদান। ১০ ওভার শেষে তারা দলকে নিয়ে যান ৬৬ রানে।

তবে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান ও বলের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ৭.৪ ওভার থেকে ১৫.৩ ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি পায়নি আফগানরা। এর মাঝে রানআউট হয়ে ফিরে যান ৪৪ রান করা গুরবাজও। দলীয় ১০২ রানে ফিরে যান ৩৮ করা ইব্রাহিমও। তাকে ফেরান ইহসানউল্লাহ। তবে ১৯তম ওভারে চাপের মুখে ১৭ রান নিয়ে ম্যাচের রূপ বদলে দেয় আফগানিস্তান। আর রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারের ৫ম বলে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন জারদান।

শারজায় টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে আগের ম্যাচটা যেখানে শেষ করেছিল, সেখান থেকেই যেন আজকের ম্যাচটি শুরু করে আফগানিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে সিয়াম আইয়ুব ও আবদুল্লাহ শফিককে ফিরিয়ে হ্যাট্রটিকের সম্ভাবনা জাগানোর পাশাপাশি পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের ভিত নাড়িয়ে দেন ফজলহক ফারুকি। প্রথম ওভারে কোনো রান না করেই ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান। অফ স্টাম্পের বাইরে বল খোঁচা দেন সিয়াম। দারুণ ক্যাচে বাকি কাজ সম্পন্ন করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ।

ফারুকির পরের বলটিকে লেগ সাইডে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন শফিক। কিন্তু টাইমিং গড়বড় করায় সেটি সরাসরি আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ারের দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়েও বদলাতে পারেননি শফিক। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন এই ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে অবশ্য ১৮ রান করে কিছুটা চাপ কমায় পাকিস্তান। ২ চার ও ১ ছক্কায় একাই ১৫ রান করেন মোহাম্মদ হারিস।

খেলাধুলা

বাংলাদেশ থেকে র‌্যাংকিংয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে সিশেলস। ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল এই বিষয়টি।

র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে খেলে ঠিক কতটা উপকৃত হবে বাংলাদেশ?
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাওয়ার আগে র‌্যাংকিয়ে বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে খেলার কথা বলা হচ্ছিল। তবে আজ (২৫ মার্চ) সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সমানতালে লড়াই করলো সিশেলস। র‌্যাংকিংয়ের পার্থক্য খুব এটা চোখে পড়লো না। ম্যাচে তারিক কাজীর একমাত্র গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরু থেকেই সুন্দর ফুটবল প্রদর্শন করে সিশেলস। প্রথমার্ধে তাদের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করেছে বাংলাদেশ। যদিও গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪২ মিনিট পর্যন্ত। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে দারুন এক সুযোগ তৈরি করেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ডান প্রান্ত থেকে বক্সের ভেতরে থাকা সজীবের উদ্দেশ্যে লম্বা ক্রস বাড়িয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। তবে সজীব বল পাওয়ার আগেই ক্লিয়ার করে দলকে বিপদ মুক্ত করেন সিশেলস ডিফেন্ডার।

আক্রমনের ধারা বজায় রাখে বাংলাদেশ। নবম মিনিটে গোলের সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। জামাল ভূইয়ার শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ফিরে যায়। ম্যাচের ১৫ মিনিটে প্রথম অন টার্গেট শট নেয় সিশেলস। দলের অধিনায়ক স্টেনিও মারির পাস থেকে শট নেন আসাদ রায়ান আবদু। তবে সহজেই বল মুঠোবন্দি করে নেন জিকো।

১৯ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণে একাই ভীতি ছড়িয়েছিলেন ব্রান্ডন রশিদ ডেন লাবোরসে। মাঝ মাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে দারুণ এক শট নেন তিনি। সাইডবার ঘেঁষে বল বেরিয়ে যাওয়ায় অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হন সিশেলসের নাম্বার টেন। ৩৩ মিনিটে শর্ট কর্ণার থেকে জামলকে পাস দেন সাদ উদ্দীন। বাংলাদেশ অধিনায়কের ক্রসে হেড করেন তপু বর্মণ। তবে সিশেলস গোলরক্ষক আলভিন রডি মিশেল সেটি সহজেই মুঠোবন্দী করেন।

পরক্ষণেই কাউন্টারে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সিশেলস। গোলরক্ষকের পাস থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান ব্রান্ডন রশিদ। তবে শেষ মুহুর্তে তাকে রুখে দেন তারিক। ম্যাচের আগেই বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া বলেছিলেন কাউন্টার অ্যাটাকে সিশেলস বেশ শক্তিশালি। তেমনটাই দেখা গেল মাঠেও।

৪২ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল পায় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক হেডনিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ব্রেন্ডন মোল। ফিরতি বল হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন তারিক। জাতীয় দলের হয়ে এটাই তার প্রথম গোল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আমিনুর রহমান সজীবের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এলিটা কিংসলে। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই ফরোয়ার্ডের আক্ষেপ এবার পূরণ হলো। ৫৪ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মতিন মিয়া।

৬০ মিনিটে নিজের অভিষেক ম্যাচকে রাঙিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন কিংসলে। সিশেলসের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বক্সে কিংসলেকে বল বাড়িয়ে দেন মতিন মিয়া। তার বাঁ পায়ের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। অল্পেরর জন্য গোল বঞ্চিত হন কিংসলে।

ম্যাচের ৮৭ মিনিটে সিশেলসের ডন ম্যাক্সিমের ফ্রি-কিক ক্রস বারে লেগে ফিরে আসে। ৮৯ মিনিটে দারুন এক গোলের সুযোগ ছিল এলিটা কিংসলের সামনে। ডি বক্সের বাইর থেকে এই ফরোয়ার্ডের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন সিশেলস গোলরক্ষক।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে পেরি আর্নেস্টা ফ্রি কিক থেকে বক্সে বল পেয়ে যান সতীর্থ ওয়ারেন। তার হেড সহজেই তালুবন্দী করেন আনিসুর রহমান জিকো। পরবর্তীতে আর কোনো গোল না হলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে কাবরেরার শিষ্যরা।

খেলাধুলা

সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ভারতকে ১-০ গোলে হারায় স্বাগতিকরা।

ম্যাচের শুরুতেই প্রথম সুযোগ পায় বাংলাদেশ। পূজা দাসের ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সুরভি আকন্দ প্রীতি। এরপর সুলতানা আক্তার বল পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ম্যাচের ১৬ মিনিটে অল্পের জন্য গোল হজম করা থেকে রক্ষা পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। ৭৪ মিনিটে ভারতের আখিলা রাজনের আত্মঘাতী গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। জ্যোতির ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে গেলে নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে দেন ভারতীয় ডিফেন্ডার।

তিন ম্যাচে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে দুই ম্যাচে ভারতের প্রথম হার। বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ খেলবে নেপালের বিপক্ষে ২৮ মার্চ।

আজকের জয়ে ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রাশিয়া। অন্যদিকে দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ভারত। রাউন্ড রবিন লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলের হাতে উঠবে শিরোপা।

খেলাধুলা

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলের নৈপুণ্যে ১০ উইকেটের রেকর্ড জয় পেল বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেটের দিক থেকে এটাই টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়।

এর আগে ২০০৬ সালে খুলনায় কেনিয়ার বিপক্ষে ৯ উইকেটের বড় জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ১৮৩ রানের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে রেকর্ড ৩৩৮ রান করে ১৮৩ রানের জয়ের নজির গড়ে টাইগাররা।

বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন তারকা পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেনের গতির মুখে পড়ে ২৮.১ ওভারে মাত্র ১০১ রানেই অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড।

বাংলাদেশ দলের হয়ে হাসান মাহমুদ ৮.১ ওভারে ৩২ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন। ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ৬ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট নেন পেসার এবাদত হোসেন।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ১৩.১ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের জয়ে ৩৮ বলে ১০টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৫০ রান পূর্ণ করেন লিটন।

৪১ বলে ৫টি চার আর দুটি ছক্কার সাহায্যে ৪১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

তামিম-লিটনের ৭৯ বলের ১০২ রানের অনবদ্য জুটির কল্যাণে ২২১ বল হাতে রেখেই ১০ উইকেটের রেকর্ড জয় পায় টাইগাররা। এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৩৮ রান করে ১৮৩ রানের রেকর্ড জয় পায় তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলটি। দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের ৬০ বলের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে আগের ম্যাচের রেকর্ড ভেঙে ৩৪৯ রান করে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়।

বৃহস্পতিবার আইরিশদের ১০১ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৩.১ ওভারে ১০ উইকেটের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ।

ম্যাচ সেরা হাসান, সিরিজ সেরা মুশফিক

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানেই জেতার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের।

কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৪৯ রানের রেকর্ড গড়ার পর বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ইনিংস মাঠে গড়ায়নি। যে কারণে সেই ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তাই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ৮৫ বলে ৮টি চার আর দুটি ছক্কার সাহায্যে ৯২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন তরুণ ওপেনার তাওহিদ হৃদয়।

দ্বিতীয় ম্যাচে ৬০ বলে ১০০ রানের ঝড়ো সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। কিন্তু বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ হারায় জয়ের সুযোগ, মুশফিক হারান সিরিজ জয়ের সুযোগ।

বৃহস্পতিবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেস বোলার হাসান মাহমুদ। তিনি ৮.১ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৮ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেন। হাসান, তাসকিন আর এবাদতের গতির মুখে পড়ে ২৮.১ ওভারে ১০১ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড।

১০২ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে ১০ উইকেটের রেকর্ড জয় নিশ্চিত করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। দলের জয়ে বল হাতে অবদান রেখে ম্যাচ সেরা হন হাসান মাহমুদ। সিরিজে দুই ম্যাচ ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৪ রান করে সিরিজ সেরা হন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সিরিজে সর্বোচ্চ ১৪৬ রান করেন ওপেনার লিটন দাস।

খেলাধুলা

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেসারদের মানসিকতার উন্নতি দেখে সন্তুষ্ট পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড।

মাঝে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল অ্যালান ডোনাল্ড। তার দুই পাশে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও ইবাদত হোসেন। সিলেটে তোলা ছবিটি সাড়া জাগিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ডোনাল্ডের কোচিংয়ে বাংলাদেশের পেস বোলারদের যে জাগরণ, তারই প্রতিরূপ যেন ছবিটি। তাসকিন-ইবাদতদের গুরু হয়ে ডোনাল্ডও খুশি নিজের শিষ্যদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিং করতে হয়নি বাংলাদেশকে। রেকর্ড গড়া জয় পাওয়া প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন ইবাদত। তাসকিন ৬ ওভারে স্রেফ ১৫ রান দিয়ে নেন ২ শিকার। উইকেট না পেলেও ডোনাল্ডের মতে, আইরিশদের ভুগিয়েছেন আরেক পেসার মুস্তাফিজ।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় সিরিজের ট্রফি নিজেদের করতে শেষ ওয়ানডে জিততে হবে বাংলাদেশকে।

কিন্তু ম্যাচের আগের দিন স্বাগতিকদের সংবাদ সম্মেলনে সিরিজ নিয়ে তেমন কোনো কথাই হলো না। পেস বোলিং কোচ ডোনাল্ডকে বেশিরভাগ উত্তর দিতে হলো দলের পেসারদের নিয়ে।

“দলগতভাবেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল। আমরা এই মানসিকতার কথাই বলে আসছি। সেদিন তারা যেমন বোলিং করেছে, তা দেখা সত্যিই দারুণ ছিল। তিনজনই খুব প্রভাব রেখেছে এবং (ব্যাটসম্যানের মনে) প্রশ্ন জাগিয়ে সুযোগ তৈরি করেছে। এটি দেখা সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল।”

নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় যেন নেমেছেন পেসাররা, সেখানে আলাদা একটা জায়গায় আছেন ইবাদত হোসেন। গত বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন ছিলেন। এরপর থেকে যখনই যে সংস্করণে সুযোগ পেয়েছেন নিজের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন গতিময় এই পেসার।

প্রায় বছরখানেক ধরে ইবাদতের সঙ্গে কাজ করা ডোনাল্ডও ২৯ বছর বয়সী ইবাদতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

“ঠিক ১২ মাস আগে জোহানসবার্গে আমাদের দেখা হওয়ার পর থেকে তো সে (ইবাদত) তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সে ক্রমাগত মুগ্ধ করে চলেছে। আপনি যদি বলেন তার একটি জায়গায় উন্নতি করা প্রয়োজন, আমি এখনও সেটি খুঁজছি।”

পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা ইবাদতের বোলিংয়ের গতি নজর কেড়েছে ডোনাল্ডের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ইবাদতের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৯.৬ কিমি। সেদিন গড়ে ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টার আশপাশে গতিবেগে বোলিং করেন তিনি।

“ইবাদতের ব্যাপারে যা ভালো লাগে যে, সে সবসময় ম্যাচে থাকে। চার-ছয় হজম করলেও ব্যাপার নয়। প্রতি ম্যাচেই উইকেটের তালিকায় তার নাম থাকবে। সে এমন একজন বোলার, যেখানে গতি বড় প্রভাবক হতে পারে সেখানে ১৪৫ থেকে ১৪৮ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বোলিংয়ের জন্য প্রস্তুত। সেদিনও সে এটি করে দেখিয়েছে।”

“সে দুর্দান্ত অ্যাথলেট। তার সঙ্গে কাজ করা আনন্দের। অসাধারণ প্রতিভা। একটি ফাস্ট বোলিং প্রতিযোগিতা (পেসার হান্ট) জিতে সে এখন আজকের জায়গায়। সে ধারাবাহিকভাবেই তিন সংস্করণে খেলতে পারে।”

শুধু ইবাদত নয়, দলের সব পেসারদের নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও ধারণা দিলেন ডোনাল্ড।

“সবার সঙ্গে আমরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজ করছি। অন্য কিছুর চেয়ে ট্যাকটিক্যাল বিষয় নিয়েই বেশি। তিন সংস্করণেই আমরা প্রতিবার ম্যাচে ব্যবহার করার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করি। গ্রুপ হিসেবে আমরা এভাবে কাজ করি।”

“যখন এই (পেস বোলিং) গ্রুপের সঙ্গে আমার দেখা হয়, আমি এসেই প্রশ্ন শুরু করে দিই না। আগে বসে তাদের কথা শুনি তারপর প্রশ্ন করি। ওদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করি, তাদের খেলা এখন কোথায় আছে এবং আমার থেকে কী চায়।”

পেসারদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া সবিস্তরে জানান দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি।

“আমার মনে হয়েছে এই গ্রুপের আরও ভালো করা প্রয়োজন। তারপর আমরা তাদের ওপর থেকে ব্যর্থতা ও হতাশার ভয় দূর করে দিলাম, লড়াই করার চেয়ে ফল নিয়ে ভাবতে বারণ করলাম… এই পর্যায়ে আপনি যদি ভাবেন যে পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন কি না, তাহলে আপনার কোনো জায়গা নেই। এই চিন্তাটা দূর করতে হয়েছে আমাদের।”

“এরপর আমার কাজ ছিল মানসিকতায় মনোযোগ দেওয়া। এক পর্যায়ে মানসিকতাই সব কিছু। অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হবে। এই বিষয়ে পেস বোলিং গ্রুপের আস্থার জায়গায় যেতে ৪-৫ মাস সময় লাগে আমার। বার্তাটা পরিষ্কার ছিল, ভুল করা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমিও ভুল করেছি এবং ভুল করা একদম ঠিক আছে। আমার মনে হয়, তারা এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ায় আমরা এখন উন্নতিটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সঠিক জায়গায় লড়াই করতে পারছি।”

কোচ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করলেও, দিন শেষে মূল কাজ যে পেসারদের সেই কথাও মনে করিয়ে দেন ডোনাল্ড।

“আমি শুধুমাত্র একটা পরিকল্পনা দিতে পারি। তাদের যদি এটি পছন্দ না হয়, তাহলে এর শেষটা ভালো হবে না। ভালো লাগার বিষয় হলো, এই গ্রুপের মধ্যে দারুণভাবেই সেই বিশ্বাসটা আছে।”

“এই গ্রুপকে আরও বড় করার জন্য আরও কয়েক তরুণকে যোগ করা ভালো হবে। যাতে আমরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাতে পারি এবং দেখতে পারি আমাদের কাছে কী আছে। দলের মধ্যে একটা বন্ধনের বিষয় আছে। কোনো দিন যদি ইবাদত ভালো না করে, তাহলে তাসকিন আছে করে দেওয়ার জন্য। এই মানসিকতা দেখাটা দারুণ। তারা যেভাবে একে অন্যের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, এর দারুণ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।”

খেলাধুলা

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ খবর দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই খেলোয়াড়।

এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাকিব আল হাসানের গ্র্যাজুয়েট হওয়ার খবর প্রায় সবারই জানা। গত ২০ মার্চ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) ২১তম সমাবর্তনে অংশ নেন সাকিব আল হাসান। তবে ক্রিকেটের ব্যস্ততার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ।

মঙ্গলবার তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং আমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সবসময় ক্লাসে অংশ নেয়ার চেষ্টা করেছি। নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট করেছি এবং পরীক্ষার হলে বসেছি।’

২০০৭ সালে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন ছিল তার জন্য।

মাহমুদুল্লাহ লিখেছেন, ‘পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা কঠিন। তবে এআইইউবি থেকে আমি আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (এমবিএ) শেষ করেছি।

দুর্ভাগ্যবশত ক্রিকেট ম্যাচ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারিনি। আমার সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এবং এআইইউবিকে ধন্যবাদ।’

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে অংশ নিয়ে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘আমার খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক বছর হলো। আগে আম্মা যখন ফোন করতেন, জিজ্ঞেস করতেন যে পড়াশোনার কী অবস্থা। আজকে আমি খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত এই কারণে যে, অবশেষে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। খেলার মাঠে হয়তো বেশি অর্জন করেছি, তবে এটা সবসময়ের স্বপ্ন ছিল।’

খেলাধুলা

আঘাতের কারণে প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাকে পাওয়া নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু এই ম্যাচেও মিরাজকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

চোখের উন্নতি হলেও খেলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। এখনো চোখে খানিকটা রক্ত জমে রয়েছে। যে কারণে চোখে সানগ্লাস পড়ে থাকতে হচ্ছে মিরাজকে। ফলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাকে পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।

শুক্রবার সকালে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় আঘাত পেয়েছিলেন মিরাজ। গা গরমের জন্য ফুটবল খেলতে গিয়ে মুখে বল লাগে তার। চোট গুরুতর হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মূলত পেসার হাসান মাহমুদের একটি কিক হঠাৎ করে এসে লাগে মিরাজের মুখে। এর পর মুখে হাত দিয়ে মাঠেই বসে পড়েন এই অলরাউন্ডার। ফিজিও বাইজিদুল ইসলাম এসে কিছুক্ষণ দেখাশোনা করেন, পরে মিরাজকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

সোমবার সিলেটে বিকাল ৩টায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

খেলাধুলা

বড় দলকে বাংলাদেশ প্রথম হারাল, এমন নয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারানোর সুখস্মৃতি এখনও খুব একটা দূরের গল্প নয়।

কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয়টা আলাদা। তাদের সঙ্গে প্রথম বলে তো অবশ্যই— একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে খেলার ধরন, মানসিকতা, উইকেট সবকিছু মিলিয়েই।

সপ্তাহিক কর্মদিবসের প্রথম দিন বিকেল তিনটায় খেলা, তবুও গ্যালারি ছিল ভর্তি। তাদের গর্জনের সুরেও বোধ হয় ‘ভালো দল’ দেখার সেই সাক্ষী। মিরপুরে সন্ধ্যে নামার আগে জ্বলে উঠা মোবাইলের ফ্লাশলাইটে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টিতে বদলে যাওয়ার শুরু হলো কি না, উঠবে এখন এই আলোচনাও।

অনেকদিন ধরে হতাশার টি-টোয়েন্টি দল বিশ্বকাপের পর খেলতে নেমেছিল প্রথমবার। একাদশ, স্কোয়াডেও বদলও এসেছিল বেশ কিছু। ‘পারফরমারদের’ নিয়ে গড়া ‘সাকিব আল হাসানের দল’ দেখিয়েছে নতুন আশার আলো, দিয়েছে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার বার্তাও।

রোববার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ আগেই প্রথমটিতে জেতা স্বাগতিকদের জন্য নিশ্চিত হয়েছে সিরিজও। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড পায় ১১৭ রানের সংগ্রহ। ৭ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছায় স্বাগতিকরা।

টস হেরে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। সফরকারীদের স্কোরকার্ডে তখন জমা হয়েছে ১৬ রান, ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রথম আঘাত হানেন তাসকিন। তাকে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে ডিপ থার্ড ম্যানে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দেন ডেভিড মালান। ৮ বল খেলে এই ব্যাটার করেন ৫ রান। সঙ্গী হারালেও তিনে নামা মঈন আলীকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ফিল সল্ট। ইংলিশদের চাপে ফেলতে তাসকিনকে দিয়ে টানা তিন ওভার করান সাকিব। উইকেটের দেখা না পেলেও ওই ওভারগুলোতে ১৯ রান দেন এই পেসার।

সপ্তম ওভারে নিজেই বোলিংয়ে এসে সল্টকে সাজঘরের পথ দেখান সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারের ফ্লাইটেড ডেলেভারিতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বসেন ইংলিশ ওপেনার। সাকিব দারুণ ক্যাচ নিলে ১৯ বলে ২৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন সল্ট।

এরপর দারুণ এক ইয়র্কারে জস বাটলারের স্টাম্প ভাঙেন হাসান। ৪ রানে বাটলার ফিরে গেলে মেহেদী হাসান মিরাজকে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে শামীম পাটোয়ারির তালুবন্দি হন মঈন। ৫৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড।

এরপর স্যাম কারানের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়েন বেন ডাকেট। তাদের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ, ১৬ বলে ১২ রান করা কারান হয়েছেন স্টাম্পিং। এক বল পরেই ক্রিস ওকসকেও শূন্য রানে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ।

এই স্পিনার ৪ ওভারে কেবল ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার। কম খরুচে ছিলেন বাংলাদেশের প্রায় সব বোলারই। তাসকিন আহমেদ নিজের ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন, এক উইকেট নিতে সাকিব ৩ ওভারে দেন ১৩ রান। ১ উইকেট নেওয়া হাসান মাহমুদ ২ ওভারে ১০ রান দেন। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে এক উইকেট নেন।

অল্প রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা বাংলাদেশের দরকার ছিল কেবল উইকেটে টিকে থাকা। মাঝেমধ্যে বড় টার্ন নিচ্ছিল বল, পিচও ছিল কিছুটা স্লো; কিন্তু মিরপুরের এই উইকেটে কীভাবে খেলতে হয় বাংলাদেশের ব্যাটারদেরই তা সবচেয়ে ভালো জানা। শুরুটা অবশ্য ছিল কিছুটা হতাশার।

রান খরায় ভুগতে থাকা লিটন দাস এদিনও আউট হন হতাশাজনকভাবে। ৯ বলে ৯ রান করে এই ব্যাটার স্যাম কারানের বলে পুল করতে যান। ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো ফিল সল্টে হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ১৬ রানে এসে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রনি তালুকদারও পারেননি নিজের ইনিংস লম্বা করতে।

১৪ বলে ৯ রান করে এই ব্যাটার ক্যাচ তুলে দেন মঈন আলীর হাতে, জফরা আর্চারের বলে। তাওহীদ হৃদয় ব্যাটিংয়ে এসে দারুণ দুটি শট খেলেন। কিন্তু এই ব্যাটারও পারেননি ইনিংস টেনে নিতে। ২ চারে ১৮ বলে ১৭ রান করে পয়েন্টে দাঁড়ানো ওকসের হাতে তিনি ক্যাচ দেন রেহান আহমেদের বলে।

বাকিরা যখন পথ ধরছেন সাজঘরে, ফর্মে থাকা শান্ত তখন একাই টেনেছেন দলকে। সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন কেউই তাকে দিতে পারেননি যোগ্য সঙ্গ। এক পর্যায়ে এসে ভয়ই ধরেছিল বাংলাদেশের। এর মাঝে অবশ্য মিরাজের ১৬ বলে ২ ছক্কায় ২০ রান কিছুটা চাপ কমায়। ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আফিফ হোসেন ধ্রুব যখন ফেরেন, তখনও বাংলাদেশের ১৩ বলে দরকার ১৩ রান।

শান্ত ফিরলেই বাংলাদেশের জন্য ছিল হারের বড় শঙ্কা। কিন্তু ক্রিস জর্ডানের করা ১৯তম ওভারে প্রতি আক্রমণে যান তাসকিন আহমেদ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই ওভারে দুজন মিলে হাঁকান তিন বাউন্ডারি, শান্ত অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৩ চারে ৪৬ রান করে। জর্ডানের পঞ্চম বলে তাসকিনের চারে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো মিরপুর।

নাজমুল হোসেন শান্ত জড়িয়ে ধরেন ক্রিজে থাকা আরেক ব্যাটার তাসকিন আহমেদকে। শান্ত চিৎকার করে এমন কিছুই বলতে চাইলেন কি না, ‘আমরা এসেছি নতুনের বার্তা নিয়ে’ এটুকু অবশ্য নিশ্চিত হওয়া গেল না।