খেলাধুলা

মুমিনুল হকের বল ডিপ পয়েন্টে ঠেলে দিয়েই দৌড় শুরু করলেন ক্রিস্তিয়ান স্টাবস। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা পেয়ে শূন্যে ঘুষি মারলেন তিনি।

করতালি ভেসে এলো গ্যালারি থেকেও। উদযাপনের প্রায় পুরোটা সময়ই স্টাবস দর্শকদের কাছ থেকে পেলেন অভিবাদন।

অসহায় বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা তখন এলোমেলো। ঘটনাটা যেন চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেরই প্রতিচ্ছবি। টস হেরে যে দিনের শুরু, তার সমাপ্তি অবধি প্রাপ্তি কেবল তাইজুল ইসলামের এনে দেওয়া দুই উইকেট। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই এই ছাপ কাটিয়ে উঠতে না পারলে অবধারিতভাবেই সামনের চারটি দিনও বাংলাদেশের জন্য হবে অনেক লম্বা।

চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিনশেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান করেছে প্রোটিয়ারা।

বাংলাদেশ এদিন শুরু করে দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদকে দিয়ে। প্রথম ম্যাচে এক পেসার নিয়ে খেলার পর এ ম্যাচের একাদশে ফেরানো হয় নাহিদকে। এছাড়া আরও দুটি বদল আনতে হয়, জাকের আলি ও লিটন দাসের অসুস্থতায় সুযোগ পান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকির হাসান।

সকালের শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। অবশ্য পেসারদের প্রথম স্পেল থেকেই উইকেট পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু সপ্তম ওভারে টনি ডি জর্জির ক্যাচ ছেড়ে দেন উইকেটরক্ষক অঙ্কন। অভিষিক্ত অঙ্কনের জন্য অবশ্য সুযোগটা ছিল বেশ কঠিন। বাঁদিকে অনেকটা ঝাঁপিয়েও ক্যাচ নিতে পারেননি তিনি।

এরপর পুরো প্রথম ঘণ্টায় কোনো সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। ১৬তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকেও বোলিংয়ে নিয়ে আসেন শান্ত। তিনি উইকেট না পেলেও সাফল্যের দেখা পান আরেক স্পিনার তাইজুল। তার বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে আলগা শটে মিড অনে দাঁড়ানো মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দেন এইডেন মার্করাম। ৫৫ বলে ৩৩ রান করেছিলেন তিনি।

একরকম উপহার হিসেবে পাওয়া মার্করামের উইকেট নিয়েই বাকি সেশন সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। প্রথম সেশনে এমন হতাশার পর দ্বিতীয়টিতে ভালো কিছু করা জরুরি ছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু উল্টো হতাশা বেড়েছে আরও।

এই সেশনে স্টাবস হাফ সেঞ্চুরি ও জর্জি পেয়েছেন শতকের দেখা। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন উদ্বোধনী ব্যাটার জর্জি। পঞ্চম টেস্টে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি ছিল স্টাবসের। এই সেশনে বাংলাদেশ উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা জাগাতে পেরেছিল একবারই তাইজুল ইসলামের বল ক্রিস্তিয়ান স্টাবসের ব্যাটের একদম পাশ দিয়ে যায়। তখন তাইজুলের মনে হয়েছিল, বল লেগেছে ব্যাটারের ব্যাটে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও তার ওপর ভরসা করে রিভিউ নেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, ব্যাটে লাগেনি বল।

দ্বিতীয় সেশনে ৯৪ রান হয়। বাংলাদেশের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য থাকে তৃতীয় সেশন। এখানেও খুব একটা সাফল্যের দেখা মেলেনি। পঞ্চম টেস্টে এসে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান স্টাবস। তার সঙ্গী জর্জিও বড় করতে থাকেন নিজের রান।

স্টাবস অবশ্য প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে খুব বেশি বড় করতে পারেননি। তাইজুলের ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। ১৯৮ বলে ১০৬ রান করেন তিনি। স্টাবসের সঙ্গে জর্জির জুটি ছিল ২০১ রানের।

পুরো দিনে বাংলাদেশের বোলাররা তেমন চ্যালেঞ্জও জানাতে পারেনি। অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। ওপেনার জর্জি এখনও অপরাজিত ২১১ বলে ১৪১ রান করে। তার সঙ্গে দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন ২৫ বলে ১৮ রান করা ডেভিড বেডিংহাম।

জাকির-অঙ্কনকে খেলানোর ব্যাখ্যা দিলেন সিমন্স, মুগ্ধ নাহিদে

চট্টগ্রাম টেস্টের টসের সময় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানালেন, তার দলে পরিবর্তন আছে তিনটি। লিটন দাস, জাকের আলি ও নাঈম হাসান খেলছেন না; তাদের জায়গা নিয়েছেন নাহিদ রানা, জাকির হাসান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।

এর মধ্যে শেষ দুজন একদিন আগেও ছিলেন না স্কোয়াডের সঙ্গে। অঙ্কনের অভিষেক হয়েছে এ ম্যাচে। অথচ একদিন আগেও স্কোয়াডে সুযোগ পাবেন, ওই ভাবনাও ছিল না তার। জাতীয় লিগে ঢাকা বিভাগের হয়ে বিকেএসপিতে তিনি খেলছিলেন রংপুর বিভাগের বিপক্ষে।

ওই ম্যাচের মাঝপথেই তাকে আনা হয় জাকের আলী অনিক কনকাশনে ভোগায়। আরেকদিকে সোমবারও চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে সিলেটকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় এনে দেন জাকির। একটি ম্যাচ থেকে এসে পরদিনই অভিষেক ও ম্যাচ খেলানো কি যোগাযোগের ঘাটতির কারণে?

এমন প্রশ্নের উত্তরে হেড কোচ ফিল সিমন্স অবশ্য বলেন, ‘যোগাযোগের কোনো ঘাটতি ছিল না। জাকিরের ফিরে আসার কথা ছিলই (জাতীয় লিগের ম্যাচ শেষে)। আমরা চেয়েছিলাম যেহেতু সে সবশেষ টেস্টে খেলেনি সে, এই ম্যাচে তাকে প্রয়োজন পড়লে আগে ব্যাটিংয়ে কিছুটা সময় কাটাক। এরপর কনকাশনের ঘটনা ঘটল, অসুস্থতার ব্যাপার হলো। দুজন ব্যাটার ছিটকে গেল। এখানে যোগাযোগের কোনো সমস্যা ছিল না। ’

‘অঙ্কন দলে ঢুকেছে কারণ লিটন ভালো অনুভব করছিল না। এটা প্রথম কারণ। আমাদের একজন উইকেটকিপার লাগতই। (লিটনের জায়গায়) হয়তো জাকের কিপিং করতে পারত, কিন্তু তারও কানকাশন হয়ে গেল। এভাবে দলে আসা আদর্শ কিছু নয় অবশ্যই। মূল স্কোয়াডে থাকতে পারাই সবচেয়ে ভালো। তবে অনেক কিছুই হয়ে থাকে এবং সে সুযোগটা নিয়েছে। ’

একাদশে সুযোগ পাওয়া আরেক ক্রিকেটার নাহিদ রানা। তরুণ এই পেসার অবশ্য উইকেটের দেখা পাননি। তবে এই সিরিজের আগেই বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পাওয়া সিমন্স নাহিদকে দেখেছেন আরও আগেই। তাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহও আছে সিমন্সের।

তিনি বলেন, ‘আমি তাকে পাকিস্তানে দেখেছি। আমি মুগ্ধ। আপনি ১৪০-১৪৫ গতিতে বল করা বোলার চাইলেই পাবেন না। তাই এটা বেশ দারুণ, এখন আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে তাকে নিয়ে কাজ করা। যতক্ষণ অবধি সে ভালো গতি ও জায়গায় বল না করতে পারে। আমার মনে হয় দ্বিতীয় স্পেলে সে এটা দেখিয়েছে। আমি তাতে মুগ্ধ। আমি সবসময় পেস বোলারদের ব্যাপারে আগ্রহী। ’

খেলাধুলা

‘ভালো মারতে পারিসনি’, সাদমান ইসলাম সুইপ শট খেলার পর আরেকপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বললেন লিটন দাস। তাদের দুজনেরই এখন রানের খোঁজ, বাংলাদেশ দলও অবধারিতভাবেই খুঁজছে রান।

বিচ্ছিন্নভাবে রান এসেছে বটে, কিন্তু দল হিসেবে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো সংগ্রহ গড়তে পারেনি খুব একটা।

ব্যাটারদের ব্যর্থতা যে দলকে ভোগাচ্ছে, তার প্রমাণ শেষ তিন টেস্টেই বাংলাদেশের জন্য লড়াইহীন হার। এমনকি ঘরের মাঠ মিরপুরে হওয়া টেস্টেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেই সিরিজ বাঁচানোর লড়াই দলের সামনে।

ওই টেস্টের আগে দল যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই, তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। কোচ বা অধিনায়কের আসার রীতি থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন তাইজুল ইসলাম। তার ভাষায়ই ‘টিম ম্যানেজম্যান্ট’ অর্থাৎ দলের পরিকল্পনা যারা করেন; তাদের অংশ নন তিনি। মানেটাও পরিষ্কার, পরিকল্পনাকারীরা আপাতত এড়িয়ে চলতে চান মিডিয়া।

অধিনায়ক তাহলে কোথায়? চট্টগ্রাম টেস্টের আগে তিনি ব্যস্ত ছিলেন লম্বা ব্যাটিং সেশনে। কিন্তু তার প্রায় পুরোটাই একটা নেটে, অনেকটাই নিভৃতে। শুরুতে তাকে বল থ্রো করেন সহকারী কোচ নিক পোথাস। ওই যাত্রায় তাদের সঙ্গী ছিলেন ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই অধিনায়ক হিসেবে শান্তর ইতি; এমন আলাপ এখন প্রবল। এই সময়ে নিজেকে অনেকটা আড়ালে রেখে মাঝে হেড কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গেও আলাপ সেরেছেন তিনি। ঘরের মাঠের শেষ টেস্টেই কি অধিনায়ক শান্তর ইতি?

প্রশ্নের জবাবটা দিতে পারেননি দলের প্রতিনিধি হিসেবে আসা তাইজুল ইসলাম। তার দাবি, ‘এই বিষয়ে কিছুই জানি না। ’ তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জয়েই চোখ রাখছেন অধিনায়কত্বে দৌড়া ‘পুরো তৈরি’ বলে ঘোষণা দেওয়া এই স্পিনার।

তাইজুল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য তো একটাই থাকবে। আমরা জেতার জন্যই খেলবো। তারপরও পরিস্থিতি কী আসবে ম্যাচ যখন পুরোটা হবে তখন বোঝা যাবে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে দল হয়ে খেলার জন্য। সেটা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, যে পার্টটাই বলেন না কেন। আমরা চেষ্টা করবো জেতার জন্য। ’

জয়ের পথে বাংলাদেশের জন্য অবশ্য চিন্তার জায়গা ব্যাটিং। সবশেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তারা অলআউট হয় স্রেফ ১০৬ রানে। এরপর আর ওই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটাররা।

চট্টগ্রামের উইকেট বরাবরই ব্যাটারদের জন্য সহায়ক হয়। এখানেই বাংলাদেশের ব্যাটারদের বড় সুযোগ ঘুরে দাঁড়ানোর। তাইজুলও বলেছেন প্রায় এমনই, ‘প্রতিটি ম্যাচ আসা মানেই একটা সুযোগ। সেদিক থেকে আমার মনে হয় যে আবার আরেকটা সুযোগ ব্যাটারদের কাছে আছে। ’

বাংলাদেশ দল যতই ‍ভালো করুক, চট্টগ্রামের ব্যস্ত জীবনে খুব বেশি প্রভাব থাকবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। শহরের অনেক বাইরে স্টেডিয়াম হওয়ায় এমনিতেও বেশির ভাগ সময় গ্যালারি থাকে ফাঁকা। এবার গরম ও ছুটির দিন না থাকায় তেমন দর্শক হওয়ার কথা নয়। ম্যাচের আগের দিন টিকিট কাউন্টারগুলোও ছিল খালি।

দর্শক থাকুক অথবা না থাকুক, প্রতিপক্ষ শিবিরে যাই ঘটুক- দক্ষিণ আফ্রিকার সব মনোযোগ নিজেদের দিকেই। ১০ বছর উপমহাদেশে জিততে না পারার দাগ নিয়ে বাংলাদেশে পা রেখেছিল তারা- মিরপুরেই ওই দাগ মুছে গেছে। এখন তাদের চোখ সিরিজ জেতায়।

প্রায় সাত মাস পর চট্টগ্রামে টেস্ট হচ্ছে; এ ম্যাচে যারাই চোখ রাখবেন। তারা নিশ্চিতভাবেই চাইবেন মাঠের বাইরের সব আলোচনা থমকে গিয়ে মাঠের লড়াই যেন রোমাঞ্চ ছড়ায়- এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে দুই দলের ক্রিকেটারদেরই। বাংলাদেশের হয়তো একটু বেশিই।

কেন? প্রোটিয়া অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন চলার মাঝপথেই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় আলো। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার মুচকি হাসেন মার্করাম। তিনি কি বাংলাদেশ দলের অবস্থাটাও দেখেছেন কি না- কে জানে!

চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের স্কোয়াড

নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, হাসান মুরাদ।

খেলাধুলা

টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে দলকে, চট্টগ্রাম টেস্টে রানে ফিরতে মরিয়া মুশফিক-শান্তরা।

টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে দলকে, চট্টগ্রাম টেস্টে রানে ফিরতে মরিয়া মুশফিক-শান্তরা।

থ্রো-ডাউনে একটি ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে না পেরে একটু জোরেই চিৎকার করে উঠলেন মুশফিকুর রহিম। তার হতাশার আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকালেন মাঠের আরেক প্রান্তে বসে থাকা এইডেন মার্করাম। মুশফিককে দেখে হয়তো কিছুটা অবাকও হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু হতে যে তখনও বাকি ঘণ্টা দুইয়ের বেশি সময়!

মার্করাম চমক গেলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি নতুন কিছু নয়। দলীয় অনুশীলনের আগে নিয়মিতই আলাদা অনুশীলন করে নেন মুশফিক। রোববারও ব্যতিক্রম নয়। দলের অনেক আগেই ব্যক্তিগত অনুশীলনে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে চলে আসেন তিনি। পরে দলীয় অনুশীলনেও যথারীতি ঝালিয়ে নেন নিজেকে। মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংসেই দৃষ্টিকটূভাবে বোল্ড হয়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রামে তার ব্যাটে আবার ভরসা খুঁজবে দল।

শুধু মুশফিকই অবশ্য নয়, সিরিজ হার এড়াতে হলে চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ কিছু করতে হবে পুরো দলকেই। মিরপুরে মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। পরের টেস্টে তাই ব্যাটসম্যানদের ভালো করার দায়টা বেশি। চট্টগ্রামে আসার পর দলের প্রথম অনুশীলনে দুর্দশা কাটানোর চেষ্টার ছাপই যেন পড়ল বেশি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে দেখা যায় ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করতে।

দলের অনুশীলন দুপুরে থাকলেও বেলা ১১টাতেই মাঠে চলে আসেন মুশফিক। টিম বয় ও নেট বোলার নিয়ে শুরু করেন নেট সেশন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে তার ব্যক্তিগত অনুশীলন পর্ব।

পাকিস্তান সফরের প্রথম টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংসের পর থেকেই হাসছে না মুশফিকের ব্যাট। সবশেষ চার ম্যাচের আট ইনিংসে চল্লিশ ছুঁতে পারেননি ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। সীমানা আরেকটু বাড়িয়ে ১৫ ম্যাচ বিবেচনায় নিলে, ওই ১৯১ ছাড়া তার পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস আছে আর একটি। সবশেষ চার ইনিংসেই তিনি ফিরেছেন বোল্ড হয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ড্র করার অভিযানে জিততে হলে ব্যাটিংয়ে ভালো করার বিকল্প নেই বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্য পূরণে বড় দায়িত্ব মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকের। তাই দুঃসময়ের আঁধার পেরিয়ে আলোর খোঁজই যেন করছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

একইভাবে ছন্দহীনতায় ভুগছেন অধিনায়ক শান্তও। সবশেষ ১৫ ইনিংসে তিনি চল্লিশ ছুঁতে পেরেছেন মোটে একবার। স্পিনার হোক বা পেসার, বাজে শটে আউট হচ্ছেন প্রায় নিয়মিত।

শান্ত-মুশফিকসহ ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে দলের সামগ্রিক ব্যাটিংয়ে। চলতি বছর সাত টেস্টে মাত্র তিনবার তিনশ ছুঁয়েছে বাংলাদেশের স্কোর। ঘরের মাঠের অবস্থা আরও নাজুক। সবশেষ আট ইনিংসে দুইশ রান হয়েছে মোটে দুইবার।

ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় অনুশীলনে ভিন্ন নানা কিছু করতে দেখা যায় শান্তকে। তার ব্যাটিংয়ের প্রায় পুরোটা সময় সামনে থেকে দেখেন হেম্প। শুরুতে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট মাপের ব্যাট দিয়ে স্পিনের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে দেখা যায় বাংলাদেশ অধিনায়ককে। এ সময় কাছে দাঁড়িয়ে তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন ব্যাটিং কোচ।

নেট বোলারের একটি ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে না পেরে নিজের ওপর বিরক্ত হন শান্ত। সহকারী কোচ নিক পোথাস তখন এগিয়ে এসে তাকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেই পরামর্শ যে কাজে লেগেছে, তা বোঝা যায় পরের ডেলিভারিগুলোতে শান্তর ব্যাটিংয়ের নিয়ন্ত্রণ বাড়তে দেখে।

এরপর হাসান মাহমুদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানাদের পেস বোলিং বেশ ভালোভাবে সামলান শান্ত। এ সময় অন্য প্রান্তে দাঁড়ান মেহেদী হাসান মিরাজ। কয়েকটি ডেলিভারি পরপর স্ট্রাইক পরিবর্তন করে ব্যাটিং করতে থাকেন তারা দুজন।

সবশেষে স্পিনারদের নেটে গিয়ে বেশ কিছু বড় শটও খেলেন শান্ত। তার পাশের নেটে তখন নাহিদের একটি ডেলিভারি জাকের আলির হেলমেটে লাগলে মুহূর্তের জন্য শঙ্কা জাগে। তবে কিছুক্ষণ পরই আবার সাবলীলভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন মিরপুরে টেস্ট অভিষেকে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান।

ব্যাটিং অনুশীলন শেষ করে শুরু হয় প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে শান্তর দীর্ঘ আলোচনা। তখন পর্যন্ত চট দিয়ে ঢাকা ছিল উইকেট। কোচ ও অধিনায়ক সেদিকে যেতেই তুলে দেওয়া হয় কাভার। হাঁটু গেড়ে হাত দিয়ে উইকেট ধরে বোঝার চেষ্টা করেন শান্ত। মাঠের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবুও তখন যোগ দেন তাদের আলোচনায়।

দীর্ঘ ব্যাটিং সেশন শেষ করে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়েই সেন্টার উইকেটে প্রধান কোচ, অধিনায়ক ও কিউরেটরের সঙ্গে যোগ দেন মুশফিক। চার জন মিলে প্রায় ২০ মিনিট ধরে উইকেটের পাশে চলে আলোচনা। পরে মুশফিক ও জাহিদ রেজা সরে এলেও শান্ত ও সিমন্সের কথোপকথন চলছিল তখনও।

সেন্টার উইকেটে যখন এই দীর্ঘ আলোচনা চলমান, তখন ড্রেসিং রুমের সামনে নিরাপত্তা মহড়া পরিচালনা করছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। সংবাদমাধ্যমের নজর তখন সেদিকেই ছিল। সেন্টার উইকেট থেকে সেদিকে এসে মজার চলেই জাহিদ রেজা বলেন, ‘ভালোই হলো, উইকেট নিয়ে আমাদের আলোচনা কেউ খেয়াল করেনি!’

সঙ্গত কারণেই উইকেট নিয়ে কোনো ধরনের তথ্য দিতে রাজি হননি বিসিবির অভিজ্ঞ কিউরেটর। তবে পরে বিসিবির ভিডিওবার্তায় অফ স্পিনার নাঈম হাসান বলেন, স্পিন সহায়ক উইকেট আশা করছেন তারা।

“উইকেট আমি দেখিনি, যদি স্পিন সহায়ক হয়, তাহলে তো টার্ন হবে। আমাদের এই মাঠে বল একটু আস্তে ঘোরে, যেটা আমাদের জন্য ভালো। কারণ ওরা তো মিরপুরে অনেক আস্তে বোলিং করেছে, আমাদের স্পিনাররা তো ৯০-এর ওপর (কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) বোলিং করে। ওই হিসেবে আমাদের দিক দিয়ে ভালো।”

স্পিন সহায়ক উইকেট হলে কেশাভ মহারাজ, ডেন পিটদের সামলানোর চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে ব্যাটসম্যানদের। বিকেলের আলো যখন নিভু নিভু, তখন যেন সেই প্রস্তুতিই নেওয়ার চেষ্টা করেন মুমিনুল হক। বাকিরা ড্রেসিং রুমে চলে যাওয়ার পর এক টিম বয়কে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সুইপ আর রিভার্স সুইপের অনুশীলন করেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রথম দিনের অনুশীলনে ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগীই দেখা যায় পুরো দলকে। এমনকি লেজের দিকে ব্যাটসম্যানরাও প্রত্যেকে প্রায় ত্রিশ মিনিট করে ব্যাটিং করেন নেটে।

টেস্ট শুরুর আগে আরও একদিন নিজেদের শাণিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন ব্যাটসম্যানরা। এরপর মঙ্গলবার শুরু মূল পরীক্ষা। টেস্ট জিততে হলে ২০টি উইকেট নিতে হবে, এটিই সবসময়ের সত্যি। তবে কিছু রানও তো অন্তত করতে হবে!

খেলাধুলা

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে এই ভুটানকে ৮-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও গত আসরের থেকে এই ভুটান দল সম্পূর্ণ ভিন্ন। গ্রুপপর্বে দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৭ বার গোল দিয়েছে দলটি। এমন দলের বিপক্ষে ফাইনালে উঠার ম্যাচে তাই বাড়তি সতর্ক বাংলাদেশ। খেলেছে নিজেদের সেরা ফুটবলটাই। ফাইনালে পা রেখেছে সাফের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই। ভুটানকে সেমিফাইনালে উড়িয়ে দিয়েছে ৭-১ গোলের বড় ব্যবধানে।

নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটা অবশ্য প্রথমার্ধেই পরিষ্কার করে রেখে গিয়েছিল সাবিনা খাতুনের দল। প্রথমার্ধেই ভুটানের জালে ৫ গোল দিয়েছিল সাবিনা-তহুরারা। বিরতির পর সেই ব্যবধান আরও বাড়বে সেটাই ছিল অনুমেয়। হয়েছেও তাই। তবে ফাইনালের আগে চোট সতর্কতায় কোচ পিটার বাটলার বেশ কয়েকজনকে উঠিয়ে নেওয়ায় ব্যবধানটা তত বড় হয়নি এই যা।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে ম্যাচের ৫৭ মিনিটে প্রথম গোল পায় বাংলাদেশ। অনেকটা ফাকায় দাঁড়িয়ে ডি বক্সে ঢুকে বল জালে জড়ান তহুরা। পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। এই গোলের পর মাঝে একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ৭১ মিনিটে গোল করেন মাসুরা পারভিন। সানজিদার নেওয়া কর্নার কিক দারুণ হেডে জালে জড়ান এই রক্ষণভাগের ফুটবলার। এরপর আর গোল না হলে ৭-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। নিশ্চিত করে আসরের ফাইনাল।

এর আগে, প্রথমার্ধের পুরো সময় জুড়ে দাপট ছিল বাংলাদেশের। ম্যাচের ৭ মিনিটে ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে দূর পাল্লার শটে জাল কাঁপালেন এই উইঙ্গার। বাংলাদেশ পেয়ে গেল জয়ের রসত। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। ঋতুপর্ণার গোলের পর ১৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তহুরা খাতুন। গোলরক্ষক খানিকটা সামনের দিকে থাকায় ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নেন তিনি। তাতে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ায়।

২৪ মিনিটে সাবিনার গোলরক্ষককে ফাকি দেওয়া শট গোলপোস্টে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। নিশ্চিত গোল মিস হওয়ায় হতাশায় মুখ লুকান সাবিনা। অবশ্য এর এক মিনিট না যেতেই বল জালে জড়িয়ে গোল আদায় করে নেন সাবিনা। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-০ ব্যবধানে।

৩৪ মিনিটে আবারও তহুরার ম্যাজিক। বক্সের বাইরে থেকে বা পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত শটে জাল কাঁপান তিনি। তাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৪-০ ব্যবধানে। এক হালি গোল হজম করে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় ভুটান। এর দুই মিনিট না যেতেই ফের গোল। এবার গোলপোস্ট থেকে রুপনা চাকমার নেওয়া দূর পাল্লার শট মাঝ মাঠ থেকে দারুণ দক্ষতায় নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভুটানের ফুটবলারদের কাটিয়ে গোল করে আসেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। পঞ্চম দফা এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

খানিক পর অবশ্য এক গোল শোধ দিয়েছে ভুটান। দেখি লাজুম ৪০ মিনিটে এক গোল শোধ দেন। এ দফায় আর তাকে রুখতে পারেনি রুপনা। অনেকটা একাই পেয়ে গিয়েছিলেন রুপনাকে। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল হয়নি লাজুমের। ব্যবধান কমিয়ে বিরতিতে যায় ভুটান। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে আর দুই গোল হজম করতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৭-১ ব্যবধানে।

একই দিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মাঠে নামবে ভারত ও নেপাল। সেই ম্যাচের জয়ী দল আগামী বুধবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের।

খেলাধুলা

রাত পোহালেই ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টায় শুরু হবে প্রথম টেস্ট। এই টেস্টে কেমন হবে বাংলাদেশ একাদশ, এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।

পাকিস্তান সিরিজের দল থেকে ভারত সফরের টেস্ট দলে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। তাই একাদশেও খুব বেশি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই।

পেস বিভাগের নেতৃত্বে থাকবেন তাসকিন আহমেদ। তার সঙ্গে আছেন হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। পাকিস্তান সিরিজে দারুণ পারফর্ম করেছেন তারা। প্রথম টেস্টের একাদশে এই তিন পেসারকেই দেখা যেতে পারে।

তবে উইকেট যদি স্পিনবান্ধব হয়, সেক্ষেত্রে একাদশে দেখা যেতে পারে তাইজুল ইসলামকে। তখন একাদশে জায়গা হারাতে পারেন রানা।

এছাড়া বাংলাদেশের একাদশে খুব একটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। পাকিস্তান সিরিজের শেষ টেস্টের একাদশে যারা ছিলেন তাদের থাকারই সম্ভাবনা বেশি।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ

সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল ইসলাম, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা।

খেলাধুলা

টেস্টে বাংলাদেশের ওপর বরাবরই দাপট দেখিয়ে এসেছে ভারত। ১৩ ম্যাচের সবকটিতেই অপরাজিত তারা।

সামনেই অপেক্ষা করছে আরও একটি সিরিজে। তবে এই সিরিজে আগের চেয়ে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ। দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে এমনটাই জানিয়ে গেলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
সম্প্রতি পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করে ইতিহাস গড়েছে টাইগাররা। তাই সেই সিরিজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভারতের বিপক্ষে দারুণ কিছু করে দেখানোর আশ্বাস দিয়েছেন শান্ত।

বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এটা একটা চ্যালেঞ্জিং সিরিজ হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানে একটা ভালো সিরিজ পার হওয়ার পর দলের মধ্যে বাড়তি আত্মবিশ্বাস আছে, এমনকি পুরো দেশের মানুষের মধ্যেই আছে। প্রতিটি সিরিজ একটা সুযোগ, আমরা দুটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। জেতার জন্য যে জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ, প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ…আমাদের লক্ষ্য থাকবে কাজটা আমরা ঠিকঠাক করতে পারছি কি না। আমাদের কাজ ঠিকমতো করতে পারলে ভালো ফল সম্ভব, তবে চ্যালেঞ্জিং। ’

‘র‌্যাঙ্কিংয়েও যদি দেখেন, ওরা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে সম্প্রতি আমরা ভালো একটা সিরিজ পার করে এসেছি। আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পাঁচ দিন কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, ফলটা শেষ সেশনে গিয়েই হয়। পাঁচ দিন ভালো খেললে শেষ সেশনে সুযোগ থাকে কোন দল জিতবে। গুরুত্বপূর্ণ হলো পাঁচটা দিন কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, এটার জন্য কী পরিকল্পনা করা দরকার, সেটা। ’

পাকিস্তান সিরিজে বোলিং অ্যাটাকের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। সেটা পেস হোক কিংবা স্পিন। ভারত সিরিজের প্রথম টেস্টটি অনুষ্ঠিত হবে চেন্নাইয়ে। যেখানে সাধারণত স্পিনাররাই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন।

শান্ত বলেন, ‘শুধু স্পিনারদের যে দায়িত্ব, তা নয়। ব্যবধান তখনই গড়া সম্ভব হবে, যখন দল হিসেবে খেলব। ব্যাটসম্যান ও পেস বোলারদেরও সমান দায়িত্ব আছে। পুরো দল হিসেবে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ, দল হিসেবে খেলতে পারলেই ভালো ক্রিকেট খেলব। ’

‘প্রতিপক্ষ দল কী চিন্তা করছে, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে আমাদের স্পিন ও পেস বিভাগ ভালো একটা অবস্থানে আছে। তবে ওই দলের সঙ্গে তুলনা করলে অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমাদের পেসাররা কিছুটা পিছিয়ে। ’

অভিজ্ঞতায় ভারতকে এগিয়ে রাখলেও শান্ত এখনই হাল ছেড়ে দিতে নারাজ। বরং ইতিহাস গড়ারই সুযোগ দেখছেন তিনি।

বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘স্কিলের দিক থেকে হয়তো কাছাকাছি আছি, তবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে ওই দলটাকে এগিয়েই রাখব। (আমাদের) স্পিনারদের ভালো অভিজ্ঞতা, যেকোনো কন্ডিশনে বোলিং করার সামর্থ্য আছে। এতটুকু বলতে পারি পেসার, স্পিনাররা যারাই খেলবে, প্রত্যেক খেলোয়াড় শতভাগ দেবে। আমি বিশ্বাস করি পাঁচ দিন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে রোমাঞ্চকর ম্যাচ হবে। ’

‘এটা একটা সুযোগ। প্রত্যেকে ম্যাচ জেতার জন্য খেলব। সুযোগ থাকবে জেতার। কিন্তু যেটা বললাম, আগে এত লম্বা চিন্তা না করে শক্তি অনুযায়ী যেন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি পাঁচ দিন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। ’

খেলাধুলা

তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ নারী ‘এ’ দল।

পরপর দুই ম্যাচে সহজ জয়ের পর তৃতীয়টিতে কঠিন পরীক্ষায় পড়ল বাংলাদেশ নারী ‘এ’ দল। তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিন দায়িত্ব নিলেন বোলাররা। অল্প পুঁজি নিয়েও তাই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল সফরকারীরা।

খেলাধুলা

শ্রীলংকায় বিজয়কেতন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ‘এ’ দলের সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক ‘এ’ দলকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হার উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ।

অক্টোবরে আরব আমিরাতে বসবে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সে টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারকে নিয়েই শ্রীলংকা সফরে খেলছে বাংলাদেশ। জাতীয় দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ছাড়াও আছেন অভিজ্ঞ জাহানারা ও শামীমা সুলতানারাও।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর পি সারা ওভালে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ। ২০ ওভার ব্যাট করে পায় ১৬৪ রানের সংগ্রহ। জবাবে মাত্র ৬০ রানেই গুটিয়ে গেছে স্বাগতিক মেয়েরা।

টস হেরে ব্যাট করা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন সাথি রানি। দ্বিতীয় উইকেটে সুবহানা মুস্তারির সঙ্গে ৬৮ বলে ৮০ রানের জুটি গড়ে তোলেন তিনি। অন্যদিকে সুবহানা মুস্তারির ব্যাটে আসে ৩৯ বলে ৩৯ রান। এদিন নিগার সুলতানা জ্যোতি খেলেন ২৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট শিকার করেছেন মাল্কি মাদারা।

১৬৫ রানের বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পায়নি শ্রীলংকা। ব্যাট হাতে দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পেরেছেন কেবল দুই ওপেনার কৌশিনী (১১) ও নেথমি পূর্ণা (১৮)। বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ১৬.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় লংকানরা।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৪ রান খরচায় চার উইকেট শিকার করেন অধিনায়ক রাবেয়া খান। দুটি করে উইকেট যায় সুলতানা ও ফাহিমা খাতুনের ঝুলিতে।

খেলাধুলা

স্বাগতিক পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। নিশ্চিতভাবে এ সাফল্য নাজমুল হোসাইন শান্তদের ভারত সফরে অনুপ্রাণিত করবে। ভারতের বিপক্ষে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট সিরিজ।

সেই লক্ষ্যে ভারতে রওনা দেওয়ার আগে শান্তদের জন্য এলো আরেকটি সুখবর। পাকিস্তানে বিরাট অর্জনের স্বীকৃতিতে বড় অঙ্কের বোনাস পাচ্ছেন টাইগাররা। যা সামনে আরও ভালো করতে উদ্বুদ্ধ করবে তাদের।

বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এ বোনাস-পুরস্কারের পরিমাণ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। শনিবার বিকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শান্ত-মুশফিকদের হাতে এ অর্থ তুলে দেবেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে ১০ ও ৬ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। এর পর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন টাইগাররা।

সিরিজ জেতার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অধিনায়ক নাজমুল হোসাইন শান্তকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তখনই পুরো দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন তিনি।

যার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তান সিরিজজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। ঐতিহাসিক সিরিজ জেতায় সেখানে পুরো দলকে প্রধান উপদেষ্টা সংবর্ধনা দিয়েছেন।

সাধারণভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটি বিষয় প্রচলিত আছে যে, সংবর্ধনা মানেই পুরস্কার। প্রধান উপদেষ্টার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘিরে এমন আলোচনাই হচ্ছিল। ক্রিকেটাররা হয়তো গাড়ি, বাড়ি, জমি কিংবা টাকা পয়সা পেতে যাচ্ছেন!

কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেওয়া হলেও কোনো পুরস্কারের ঘোষণা আসেনি। এবার মিলছে সেই প্রাপ্তিও।

খেলাধুলা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন পাকিস্তান সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ ছাড়াও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনও ছিলেন।

পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জয়ের পরপরই জাতীয় দলকে সংবর্ধনার ঘোষণা দিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

সেই সিরিজ শেষে দেশে পৌঁছার পর ব্যস্ত সময় কাটছে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। চলতি মাসেই ভারত সফর করতে হবে তাদের। সেই মিশনকে সামনে রেখে চলছে অনুশীলন।

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্যস্ত সময় কাটছে ড. ইউনূসেরও। তবে শত ব্যস্ততার মধ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রসঙ্গত, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ দুই টেস্ট খেলতে পাকিস্তান সফর করে বাংলাদেশ। এ সফরে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বড় জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টেও ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় তারা।

সিরিজ জয়ের পর ড. ইউনূস জাতীয় দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সরকার এবং আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন। তোমাদের নিয়ে পুরো জাতি গর্বিত।’