জাতীয়

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) আসন্ন ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ডেন্টাল চিকিৎসকেরা।

রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ‘বাংলাদেশ ডেন্টাল ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান বিডিএস ডিগ্রিধারী বিসিএস প্রার্থীরা।

মানববন্ধনে ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রায়শ মুখ ও দাঁতের নানাবিধ রোগে ভুগে থাকেন। দেশে মুখ ও মুখ গহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্তের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বেসরকারিভাবে এ চিকিৎসা ব্যয়বহুল। প্রাথমিকভাবে ডেন্টাল সার্জন রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলে তা প্রতিরোধ সম্ভব। উপজেলাগুলোতে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষের বিপরীতে ৩১, ৫০ ও ১০০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে ডেন্টাল সার্জনের পদ একটি। ১০ ও ২০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে ডেন্টাল সার্জনের পদ নেই।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ছয় হাজার এমবিবিএস চিকিৎসকের বিপরীতে ২৫০ বিডিএস চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ৪২তম বিশেষ বিসিএসে বিডিএস চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। ৪৮তম বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কথা চলছে। এতে বিডিএস চিকিৎসকের কোনো পদ নেই।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, উচ্চশিক্ষিত বেকারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের মধ্যে পড়েছেন ডেন্টাল সার্জনেরা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে বিডিএস সম্পন্ন করা জহিরুল ইসলাম, রাশেকীন সিদ্দিক ও ফাবিহা শারমিন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ইসমাইল হোসেন, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের হাবিবুল্লাহ মারজান ও লায়েক আহমেদ, সাপোরো ডেন্টাল কলেজের জুই দেওয়ান প্রমুখ।

জাতীয়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার দায়িত্ব আরও বাড়লো।

এখন থেকে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মূল দায়িত্ব পালন করবেন।

নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে ডিএসসিসি প্রশাসক ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব সামলাবেন শাহজাহান মিয়া।

শাহজাহান মিয়াকে এসব দায়িত্ব দিয়ে রোববার (১৮ মে) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শাহজাহান মিয়া এসব দায়িত্ব পালন করবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে।

জাতীয়

রাজউকের বিতর্কিত তালিকাভুক্ত প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ কারণে সংশ্লিষ্ট প্লটের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ কথা বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর রাজধানী ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় রাজউকের বেশকিছু প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগ চাউর হয়। পরবর্তী সময়ে এসব অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তবে দীর্ঘসময় চলা অনুসন্ধান শেষে সুনির্দিষ্টভাবে ১৫টি প্লটের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে কমিশন কর্তৃক এ সংক্রান্ত অভিযোগ পরিসমাপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল দুদকের এক চিঠিতে বলা হয়, ‘আলোচ্য প্লটগুলোর বিষয়ে রাজউক তার নিজস্ব বিধান অনুসরণ করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

জানা যায়, দুদক যেসব প্লটের বিষয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান করে, সেগুলোর বেশির ভাগই রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও উত্তরায় অবস্থিত। এসব প্লটের মধ্যে অন্যতম গুলশান আবাসিক এলাকার সিডব্লিউএন (এ) ব্লকের ৪৯ নম্বর রোডের ২ নম্বর প্লট। শতকোটি টাকা মূল্যের জমিটি বিতর্কিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত করে রাজউক। এ নিয়ে গত বছর ২৪ নভেম্বর ‘কারসাজিতে বেদখল হাজার কোটি টাকার সম্পদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে । তবে শেষ পর্যন্ত এ প্লটের বিষয়ে ‘ক্লিন’ সার্টিফিকেট দিয়েছে দুদক।

এ প্রসঙ্গে প্লটটির মালিকপক্ষের একজন জানান, রেজিস্ট্রি দলিল মূলে সম্পত্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর তার অনুকূলে গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে সাব কবলা দলিল সম্পাদিত হয়। পরে এ বিষয়ে রাজউকের যথাযথ অনুমোদনসহ নামজারি থেকে শুরু করে বৈধ মালিকানার সপক্ষে অন্য সব দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে জমিটিতে মালিকপক্ষ ভোগদখলরত আছে।

জাতীয়

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের দায়িত্বে আসছে অন্তর্বর্তী প্রশাসন। এতে প্রশাসকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন ঢাকা কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস।

আগামী দুই বছরের জন্য তাকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাকে প্রশাসক করা হবে। ঢাকা কলেজই হবে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান দপ্তর।

রোববার (১৮ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় চুক্তিভিত্তিতে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে তাকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সাত সরকারি কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। কলেজগুলোতে নিয়মিত শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারেরও বেশি।

কলেজগুলো একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এ সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এ কলেজগুলোকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেটির নাম হবে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’।

জাতীয়

জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রীক জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টিকে কেন ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সেই সাথে রুলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জাতিসংঘের এই রিপোর্টকে কেন সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এসংক্রান্ত এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে এক রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

আদেশের পর আইনজীবী তানভীর আহমেদ জানান, দোষীদের বিচার নিয়ে আগস্টে রিট করি। তখন রুল ইস্যু করেন। সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রাইব্যুনালকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আইন সংশোধন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম কাজ করছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে ১৪০০ মানুষকে খুন করার কথা বলা হয়েছে। তখনকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, কীভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে, বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল-অর্থাৎ একটি যথাযথ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট।

তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে তিনটি উদ্দেশ্যে এটিকে সংরক্ষণ করা উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানার জন্য, কী ঘটনা ঘটেছিল। এভিডেন্স হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য। যদিও ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল এটাকে নিয়েছে বলে জেনেছি। ভবিষ্যতে রিসার্চের উদ্দেশ্যে অন্য দেশে ব্যবহার করা। এ জন্য কোর্ট অব রেকর্ড হিসেবে হাইকোর্টে রিপোর্টসহ আবেদন দাখিল করেছি। আদালত রুল জারি করে আদেশ দিয়েছেন।

জাতীয়

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একটি অংশের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

১৯৫৫ সালে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আর স্বাধীনতার পর দলের নাম হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে দলটির নেতাকর্মীরা চরম দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও লুটপাটে জড়িত হয়ে পড়ে।

১৫ বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-নেতারা দেশের ব্যাংক, শেয়ারবাজার, আর্থিক খাতসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে তোলে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে, যার মধ্যে ২০১৮ সালের ‘দিনের ভোট রাতে’ এবং ২০২৪ সালের একতরফা ‘ডামি’ নির্বাচন বিশেষভাবে সমালোচিত হয়।

গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় আর্থিক খাতে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, এর মধ্যে প্রায় ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ চাঁদাবাজি, ঘুষ ও বাড়তি খরচ দেখিয়ে লুটপাট হয়েছে। এই অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া করোনা টিকা কেনার নামে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও রয়েছে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি। হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে পলক সরকারের আইসিটি বিভাগে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের আওতায় ‘এসপায়ার টু ইনোভেট (এ-টু-আই)’, ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’, ‘হাইটেক পার্ক’, ‘আইটি পার্ক’ এবং ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’সহ বিভিন্ন প্রকল্পে তার কর্তৃত্ব ছিল। এসব প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক এমপি আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধেও রয়েছে দেশি-বিদেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তিনি ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে তার অর্জিত স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকা। পারিবারিক ব্যয়সহ সর্বমোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে, যা আইনবহির্ভূতভাবে অর্জিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দাবি করে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। অনুসন্ধান অনুযায়ী, তার নামে এবং তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহু বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাজ্যে তার ৩৬০টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য মেলে। যার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ডলার বা ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিতে ৯টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট; দুবাইয়ে ৫৪টি সম্পদ, ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট; মোট বিদেশি সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

দুবাই ও অন্যান্য দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ছিল জাভেদের মূল প্রক্রিয়া। তা ছাড়া ব্যাংক ঋণ ও ব্যবসার মুনাফা দেখিয়ে সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা; ছোট অংশে অর্থ বিনিয়োগ করে বিদেশি সরকারের নজর এড়িয়ে সম্পদ অর্জন; হুন্ডি, ফাইন্যান্সার ও বিদেশি এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি। বার্ষিক আয়কর রিটার্ন বা নির্বাচনকালীন হলফনামায় এসব সম্পদের কোনো উল্লেখ করেননি তিনি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাও এসব বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তার ছায়াতেই এসব কাজ করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে বসে আল জাজিরার সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, আমার নিউইয়র্ক, ম্যানহ্যাটন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় বাড়ি আছে। প্রধানমন্ত্রী জানতেন আমি এসব ব্যবসা করি। তিনি আরও বলেছেন, আমার বাবা প্রধানমন্ত্রীর (হাসিনা) খুব কাছের মানুষ ছিলেন। সত্যি বলতে আমিও। তিনি (হাসিনা) আমার বস।

একইভাবে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী তাদের আপার শাসনামলে নিজেদের আখের গুছিয়েছিলেন। তাদের দুর্নীতি এতটাই বেড়েছিল, যা ধারণার বাইরে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অন্যদিকে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কার্যত একটি একদলীয়, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে বিরোধী মতের অস্তিত্ব থাকলেও তা কার্যত দমন করা হয়।

পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি রাষ্ট্রীয় পত্রিকা রেখে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চালু করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, কারাবরণ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কার্যত একদলীয় শাসনের কাঠামো গড়ে তোলা হয়।

বাকশাল আমলে দেশের ৪টি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করা হয়। সেন্সরশিপের মাধ্যমে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রিত হতো। অন্যদিকে হাসিনার আমলে শতাধিক মিডিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সাংবাদিক গ্রেপ্তার, হয়রানি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়। সেলফ-সেন্সরশিপ একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।

বাকশালি আমলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে একদলীয় মনোনয়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আর ২০০৯–২০২৪ সালে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিরোধী দলকে মাঠে নামতেই দেওয়া হয়নি। ২০২৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ মুজিবের শাসনামলে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, রাজনৈতিক বন্দিত্ব, গণতন্ত্রহীনতা থেকে বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড দেখা গেছে। ২০০৯–২০২৪ সাল পর্যন্ত গুম-খুনের ব্যাপক অভিযোগ (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সূত্রে); রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের নিপীড়ন ও নির্যাতন ও ডিজিটাল আইন ব্যবহার করে মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটে।

মুজিবের সময় ছাত্রলীগকে মূল হাতিয়ার বানানো হয়। বিরোধী ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়। হাসিনা ছাত্রলীগের দাপট, বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ও হল দখলকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন। তার আমলে ব্যাপক আকারে শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয় প্রভাব, বিতর্কিত পাঠ্যক্রম ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ১৯৭৫ সালে মুজিবের বাকশাল ছিল একটি ঘোষিত একদলীয় শাসন। অন্যদিকে শেখ হাসিনার ২০০৯–২০২৪ সালের শাসন ছিল গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, যেখানে নির্বাচন, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম সবকিছু সরকারদলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। দুই সময়েই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার অবসান ঘটেছে; পার্থক্য হলো, শেখ হাসিনার সময় তা হয়েছে আধুনিক কৌশলে ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায়।

গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০০ জন এমপি-মন্ত্রী, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা একযোগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়—প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মচারী পর্যন্ত বহুজন গোপনে দেশ ত্যাগ করেন। যারা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনকে টিকিয়ে রাখার প্রশাসনিক ভরসা ছিলেন, তাদের এই গণপলায়ন প্রমাণ করে যে, সরকারের ভিত নড়বড়ে ছিল এবং নৈতিক ভিত্তি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল।

সরকারের নীতির ফলে কিছু ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতারা অলিগার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাদের হাতে প্রচুর অর্থ এবং ক্ষমতা চলে যায়। ফলে দেশের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক সমতা নষ্ট হয়। অলিগার্কদের প্রভাবশালী অবস্থান দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তারা দেশের অর্থনীতি তাদের নিজের প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন, ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। কিছু গোষ্ঠী যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা পেয়েছে, তা সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে আয়ের বৈষম্য বাড়ায়। অনেক সময় সরকারি প্রকল্প এবং উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় অলিগার্কদের মাধ্যমে। সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং চুক্তি এসব ব্যক্তিদের কাছে চলে যাওয়ায় দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। এসব লোকেদের প্রভাবশালী অবস্থান রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ফলে নৈতিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে ও জনগণের মধ্যে আস্থা কমে যায়।

শেখ হাসিনা জনতুষ্টির মাধ্যমে দেশে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি সৃষ্টি করেছেন। গণতন্ত্রের আদর্শকে অবজ্ঞা করে এবং একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে, উন্নয়নের স্লোগান তুলে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। এর ফলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয় এবং জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, যা দেশের জনগণের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার সরকারের শাসনকাল সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মন্তব্য করেছেন, বিশেষ করে গুম, খুন, রাজনৈতিক মামলা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়ে। তারা বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম ও খুনের ঘটনা বেড়ে যায়, যা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলার অবক্ষয় এবং বিচার ব্যবস্থার অকার্যকর হওয়ার ফলস্বরূপ ঘটনাগুলো তার আমলে ঘটতেই থাকে।

অনেক বিশ্লেষক শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক মামলা ও দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, সরকার বিরোধী মতের দমন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবে হাসিনার লোকজন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, এবং গ্রেপ্তার চালায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র—বিশেষ করে পুলিশ, র‌্যাব, এবং বিচার ব্যবস্থা—ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ণ করে বিরোধী দল ও সমাজের বিভিন্ন অংশের ওপর রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা।

অনেক বিশ্লেষক এও বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকুচিত হয়েছিল। বিরোধী দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করে দিয়েছিলেন তিনি। জনগণের রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি তার সরকারের উদাসীনতা প্রবল হয়ে উঠেছিল। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে শাসনমূলক শক্তি দ্বারা স্তব্ধ করা হয়েছিল।

২০২৪ সালের জুনে শিক্ষার্থীদের কোটা বৈষম্য ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ-সেনা-দলীয় ক্যাডারের গুলিতে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার বিদ্যমান। গঠিত কমিশন আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতি, খুন-গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ এবং পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন রাখতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের কারণে এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই আমরা মনে করি।

জাতীয়

আবারও লাশ পড়ল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। মঙ্গলবার (১৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য।

কেবল সাম্যই নন, স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক সংঘাতসহ নানা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭৬ খুনের তথ্য পাওয়া গেছে। গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সবগুলো হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য যাচাই সম্ভব হয়নি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধ, দলীয় কোন্দল, চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দল-উপদলের দ্বন্দ্ব ও নারীঘটিত কারণে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।

তবে বিভিন্ন সময়ে হওয়া এই ৭৬ হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। কোনো কোনোটির রায় হলেও আসামির চূড়ান্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন (৩২) নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে হলের একদল শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় ৮ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরমধ্যে ৬ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে। তবে এখনো এ বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই।

এর আগে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্যার এ এফ রহমান হলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পড়ে খুন হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর। ২০১৭ সালে এ মামলার রায়ে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মী বেকসুর খালাস পান। অথচ রায়ের ব্যাপারে নিহতের পরিবার কিংবা বাদীকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

সেসময় ১০ শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বহিষ্কার করে। তবে পরে হাইকোর্টের রিটের পর ২০১২ সালে তাদের বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ ঘটনায় পুনরায় উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের পর প্রথম হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল।  সেদিন মধ্যরাতে হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়েন সাতজন।

রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে এদিন মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বসির উদ্দিন আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন, সৈয়দ রিজওয়ানুর রব, এবাদ খান, সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ বাব্বন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের এম এ ইদ্রিস, সমাজবিজ্ঞানের এম এ চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হক কোহিনুরকে মুহসীন হলের টিভি রুমের সামনে ব্রাশফায়ার করা হয়।

সাত খুনের ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান। ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে তাকে মৃত্যদণ্ড এবং বাকি আসামিদের ২২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আসামিদের সাজা প্রথম ১০ বছর করেন। পরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

১৯৭৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রেম-সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ হলের ভূতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বীরেন্দ্র কুমার সরকারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন একই হলের রণজিৎ কুমার মজুমদার। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন হলের প্রাধ্যক্ষ জপব্রত রায় চৌধুরী। তবে মামলার পর তিনি কখনো আদালতে যাননি। এদিকে রণজিৎ পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।

১৯৮৮ সালে সপরিবারে আমেরিকায় চলে যান জপব্রত রায়। অন্যদিকে মামলার অপর চারজন সাক্ষী নিহত বীরেন্দ্রর বন্ধু স্বপন কুমার রায়, সচিন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, শীষ মোহাম্মদ এবং পুলিশের তৎকালীন সহকারী উপ-পরিদর্শক মামলার রেকর্ড অফিসার আবদুল বারীকেও আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ৩৭ বছর পর ২০১৪ সালে তদন্তকারী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলেও ‘কেস ডকেট’ না থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা যায়নি।

১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে লুকুসহ ২ জন নিহত হন। একই বছর রণ্টু নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় নুর গ্রুপের হাতে প্রাণ হারান। এ বছর হনু এবং গোপাল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন শিক্ষার্থী নিহত হন। ১৯৭৮ সালে লিয়াকতসহ দুজন খুন হন।

এরশাদের শাসনামলে প্রণীত মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো আন্দোলনে নামে। ১৯৮৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই আন্দোলনে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে জয়নাল নিহত হন।

১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এরশাদবিরোধী মিছিল নিয়ে মুহসীন হলের ফটক পার হওয়ার সময় এরশাদ সমর্থিত নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের গুলিতে নিহত হন জাতীয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রউফুন বসুনিয়া। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মাজহারুল হক আসলাম নামে একজন নিহত হন।

১৯৮৭ সালের ৯ মার্চ হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে বোমা বানাতে গিয়ে ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলু এবং তার দুই সহযোগী মাঈনুদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ নিহত হন। একই বছরের ১৪ জুলাই জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে আব্দুল ওয়াদুদ হালিম নামে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার পরদিন ছাত্রদল ও জাসদ ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মুন্না নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ঘটনাস্থলে আব্দুর রহিম নামে এক রিকশাচালক এবং কামরুল হাসান নামে এক পথচারী গুলি লেগে নিহত হন। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরে কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বজলুর রশীদকে খুন করা হয়। ১৯৮৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মতান্তরে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রদলের গোলাগুলিতে জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী কফিল উদ্দিন কনক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ৩৪ খুন

১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আলমগীর কবীর নিহত হন। একই মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা ও জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম চুন্নু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই বছরের ২৬ নভেম্বর পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে নিমাই নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

একই বছর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক জাসদকর্মী নিহত হন। এ সময় ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে শাহীন নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন টিএসসি মোড়ে সামরিক বাহিনী রিকশা লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হন।

১৯৯১ সালের ২১ জানুয়ারি সূর্যসেন হলের ছাত্র আলমগীর কবির লিটনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। ২০ জুন জাসদ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগের সংঘর্ষে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান খুন হন। ১৯৯১ সালের ২৭ অক্টোবর ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা গালিব, লিটন এবং ছাত্রলীগের নেতা মিজান খুন হন। এসময় অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনও নিহত হন।

১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শামসুন নাহার হলের সামনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরবর্তীতে ১৩ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মঈন হোসেন রাজু ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের গোলাগুলিতে পড়ে নিহত হন। ২৭ জুন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী লাক্কু। একই বছরের ১১ জুলাই কার্জন হল থেকে তন্ময় নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ আগস্ট ছাত্রদলের ইলিয়াস গ্রুপ এবং রতন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত হন। এই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল আলম মামুন ও খন্দকার মাহমুদ হোসেন নিহত হন।

১৯৯৩ সালে চাঁদা আদায়ের ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নাট্য সম্পাদক জিন্নাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সময় আরও দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। ১৯৯৩ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অলোক কান্তি পাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

১৯৯৪ সালে ফজলুল হক মুসলিম হলে গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর কামরুল ইসলাম বুলবুল নামে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রদলের সংঘর্ষে সরোয়ার খান মিঠু নিহত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর জগন্নাথ হলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিরকে হত্যা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কোন্দলে জগন্নাথ হলের একজন নিহত হন। ১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রদলের একটি সশস্ত্র গ্রুপ বঙ্গবন্ধু হলের আরিফ হোসেন তাজকে হত্যা করে। ১৯৯৭ সালে শাহীন নামে একজনের লাশ কার্জন হল থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা পার্থ প্রতিম আচার্য। ১৯৯৮ সালের জগন্নাথ হলের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কোন্দলে মারা যান।

১৯৯৯ সাল মনির হোসাইন ও ফিরোজ নামে দুজন খুন হন। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাতে নিহত হন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নিকুঞ্জ বিহারী নাগ। একই বছরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত হন। ২০০১ সালের ২৯ মার্চ খায়রুল ইসলাম লিটন নামে ছাত্রলীগের এক নেতা নিহত হন। ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী ইয়াছমিন এবং ইসমাইলের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়।

২০০৪ সালের ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের গ্যারেজের সামনে থেকে শামসুর নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রদলের নেতা মাহাবুবুল ইসলাম খোকন। ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। শাহবাগ থানায় মামলা হলেও এর বিচারকাজ শেষ হয়নি।

সুরাহা হয়নি অধ্যাপক আফতাব হত্যার

২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের বাসায় দুর্বৃত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনকে গুলি করে। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করলেও গত ১৮ বছরেও মামলার জট খুলতে পারেনি পুলিশ।

২০১৫ সালে তার স্ত্রী নুরজাহানও মারা যান। বাদী হয়ে অন্য কেউ এই মামলা নিয়ে সোচ্চার হননি। এ পর্যন্ত ১২ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে, কিন্তু অধ্যাপক আফতাবকে কারা গুলি করেছে, তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং বিচার না হওয়ার ঘটনায় মূল দুর্বলতা রাজনৈতিক।

দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয় এবং স্বাভাবিকও নয়। বেশ কয়েকটি ঘটনা বিবেচনা করলে এসব ঘটনা হয়তো সমাধানও করা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে তো কোনো কিছুই সেভাবে বিবেচনা করা হয় না। সেকারণে বিচারও হয় না।

আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, এগুলোর প্রতিকার চাইলে আমাদের রাষ্ট্রের এবং চিন্তা-ভাবনার কিছু পরিবর্তন দরকার। কিন্তু এসব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনো আলোচনা নেই। এই সমস্যার সমাধানে কোনো একটি জায়গায় প্রতিকার করলে হবে না। বরং একসাথে অনেকগুলো জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্রকে পর্যায়ক্রমিক উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে।

এই অধ্যাপক বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ এত ঢিলেঢালা অবস্থায় আছে। সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সে প্রচেষ্টা দেখি না।

‘মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সমাজ এমন হয়েছে, এখানে টাকা-পয়সা, সম্পত্তি কে কত বেশি অর্জন করতে পারে, তার ওপর মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়। আগে যেমন ধর্মের গুরুত্ব ছিল, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, চিন্তাবিদ—এ ধরনের মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু গত ৫০ বছরে সমাজ এসব থেকে সরে একটা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেভাবে গঠন করা হলে, এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

জাতীয়

বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিক্ষোভ চলাকালে প্রকাশ্যে সহিংসতার ডাক দেয়নি। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে জাতিসংঘ।

একইসঙ্গে তারা বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পায়নি, যেখানে তারা সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ বা সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে  ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনুদিত সেই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের ১১তম পর্ব।

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল একই ছাতার নিচে পরিচালিত আন্দোলন, যা বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শাখাসহ বিভিন্ন ধরনের ছাত্রদের একত্রিত করেছিল।

১৮ জুলাই থেকে পুরোপুরি অবরোধের মাধ্যমে প্রধান সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার কৌশলগতভাবে এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন সম্প্রসারণের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই আহ্বানের প্রতিধ্বনি করে এবং তাদের বহুসমর্থকসহ সাধারণ জনগণের বড় একটি অংশ এই ডাকে সাড়া দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা পরিকল্পিত এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। তারা প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ স্থাপনা, সরকারি ভবন এবং পরিবহন অবকাঠামোতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে ওএইচসিএইচআর এই দাবির সমর্থনে কোনো তথ্য পায়নি। বরং, এটা অনুমান করা যায় যে, দেশব্যাপী পুলিশ এবং পূর্ববর্তী সরকার দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে যে গুরুতর বলপ্রয়োগ করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নস্থানে জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং কারো নির্দেশনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুলিশ ও সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে পুলিশের নিপীড়ন বেশি ছিল, যেমন যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও আশুলিয়া, সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক হামলা তীব্র ছিল।

ওএইচসিএইচআর যতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছে, বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিক্ষোভ চলাকালে প্রকাশ্যে সহিংসতার ডাক দেয়নি। অন্যদিকে তাদের সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ বা সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে, এমন কোনো বক্তব্যও খুঁজে পায়নি।

জাতীয়

রাখাইনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘আলাদা রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী যে ‘প্রস্তাব’ দিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে দেশটির সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা সরকারের বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে শুক্রবার এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইরাবতী।

ঢাকার গুলশানে ২৭ এপ্রিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে জামায়াতের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের পর দলটির ব্রিফিংয়ের সূত্র ধরে সেদিন একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, যাতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য জামায়াতে ইসলামী আলাদা একটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে।

পরের দিন এ বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠায় দলটি। তাতে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, প্রেস ব্রিফিংয়ে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি, তাতে মূলত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদভাবে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার ব্যবস্থা ও তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি।

জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) যদি বেশি শর্ত দেয়, তবে বাংলাদেশ আর এই ঋণ নিতে আগ্রহী থাকবে না। কারণ আইএমএফের সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে গেলে দেশের অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের জন্য অতিরিক্ত শর্ত চাপিয়ে দিলে বাংলাদেশ ঋণের চুক্তি থেকে সরে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাজেট বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। সেমিনারে কৃষি অর্থনীতিবিদরা সরকারের প্রতি কৃষি খাতে বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের আহ্বান জানান। তারা পোল্ট্রি খাতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট হ্রাস, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি ও প্রণোদনার সুযোগ বাড়ানোরও সুপারিশ করেন।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে চলেছে। এর প্রস্তুতি নিতে অর্থনীতির বেশ কিছু দুয়ার খুলে দিতে হচ্ছে। অনেক খাতে সংস্কার করতে হচ্ছে।

বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে। এর আওতায় তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে আইএওমএফ। শর্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংস্থাটি ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় করেনি। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আগামী জুনে এক সঙ্গে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণের শর্তের বিষয়ে আইএমএফের সমঝোতা হয়নি। এ নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।