জাতীয়

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে ১১ রোডম্যাপ বা প্রস্তাব বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে ‘অ্যা পেনিনসুলা ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘জুলাই ৩৬ ফোরাম’।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ নির্ধারণে ১১টি মৌলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়, যা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তি কেন্দ্র এবং বিশ্বে ‘নেক্সট ১১ অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

বক্তারা বলেন, ৫৩ বছরে বাংলাদেশ নানা সংকট পেরিয়েছে। তবে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জুলাই ৩৬ ফোরামের আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ নাজীর শাহীন বলেন, এখনই সঠিক রোডম্যাপ কার্যকর করার সময়, অন্যথায় সম্ভাবনাগুলো হাতছাড়া হবে।

বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিনিয়োগ প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০০৮ সালে বিশ্বখ্যাত গোল্ডম্যান সার্চের প্রজেকশন অনুযায়ী বাংলাদেশ ১১তম অর্থনৈতিক অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

প্রস্তাবিত রোডম্যাপ/১১ দফা হলো-

এক. অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্লেষক এবং থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, দুই. ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে রেল, উচ্চগতির ট্রেন, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাব হিসাবে গড়ে তোলা, তিন. কৌশলগত প্রতিরক্ষায় ব্লু ইকোনমি ও রণতরী সংযোজনের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি, চার. বহুজাতিক সম্পর্কে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমন্বয়, পাঁচ. প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে সুন্দরবন ডকট্রিন ও অন্যান্য পরিবেশগত সম্পদ রক্ষা, ছয়. আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জোরালো ভ‚মিকা নিয়ে ইউএন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জন, সাত. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ব্যবহার করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আট. ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নে ২০৩৮ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ, নয়. প্রশাসনিক সংস্কারে দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহির মাধ্যমে প্রশাসনকে জনমুখী করা, দশ. প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রণীত থ্রি-জিরো : দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং এগারো. বিশ্বমঞ্চে অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ডেল্টা নেশন হিসাবে ব্র্যান্ডিং।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সুব্রত ঘোষ সুমন, নাওয়দি হোসাইন, মারুফী হাসান, কনক ইসলাম, এসএম লিমন এবং আরিয়ান নাজীর প্রমুখ।

জাতীয়

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় মহিলা দলের সমাবেশকে উপলক্ষ্য করে ভোজনের আয়োজনের জন্য গরু চুরি অভিযোগে বিএনপির এক নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের পর যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের কয়ড়া বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খানের স্বাক্ষরিত এক অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মাদারগঞ্জের কয়ড়া বাজার এলাকার মৃত আব্দুল মজিদ মন্ডলের ছেলে ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তা চৌধুরীর অনুসারী এবং আদারভিটা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী সুমন মণ্ডল (৪০)। অন্যজন একই এলাকার হাসান প্রামাণিকের ছেলে মাংস ব্যবসায়ী (কসাই) ফজলুল প্রামাণিক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সমাবেশ উপলক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুক্তার চৌধুরীর বাড়িতে এক ভোজের আয়োজন করা হয়। সেই ভোজের জন্য ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তা চৌধুরী নির্দেশে যুবদল কর্মী সুমন মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির কর্মী জোড়খালী ইউনিয়নের দক্ষিণ খামার মাগুরা এলাকার মৃত ছৈয়দ আলী মণ্ডলের ছেলে এফাজ মণ্ডলের বাড়ি থেকে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে একটি গরু চুরি করেন। পরে মাংস ব্যবসায়ী ফজলুল প্রামাণিককে দিয়ে গরু জবাই করে রান্নার জন্য তৈরি করা হয়।

আরও জানা গেছে, শনিবার সকালে এফাজ মণ্ডল তার গোয়াল ঘরে গরু দেখতে না পেয়ে এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। গরু চুরির ঘটনায় এফাজ মণ্ডলের বাড়িতে লোকজন জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনসহ গরুর মালিকসহ কয়ড়া বাজারে যাওয়ার পথে মাংস ব্যবসায়ী ফজলুর কাছে গরু মাথা ও চামড়া দেখে চুরি যাওয়া গরুটি শনাক্ত করেন। পরে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা করতে গেলে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মী সুমন ও মাংস ব্যবসায়ী ফজলুকে আটক করে। এ সময় গরু চামড়া, মাথা ও কিছু মাংস জব্দ করে পুলিশ।

এ বিষয়ে আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুক্তা বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, দলীয় ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মাহমুদুল হাসান মুক্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তা সাতদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

মাদারগঞ্জ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বলেন, গরু চুরি ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।

জাতীয়

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ বিশেষ অভিযান চলে।

ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ জানায়, তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইবনে মিজানের নেতৃত্বে একাধিক টিম সাড়ে চার ঘন্টা বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে রায়ের বাজার, বোর্ডঘাট, নবীনগর হাউজিং, চাঁদ উদ্যান ও ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে মাদক কারবারি, পেশাদার ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাতীয়

ভারত নদীকে ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের চারপাশে ভারতের পঞ্চাশটির মত ড্যাম, ব্যারেজসহ হাইড্রোলিক অবকাঠামো রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। মূলত ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে নদীকে ব্যবহার করে ভারত।”

শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পূর্বপাড় কাশিনগর এলাকায় ‘নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা’ বিষয়ক সংগঠন তরীর আয়োজনে ‘নদী সম্মিলনে’ এসব কথা বলেন তিনি।

নদীর ব্যাপারে ভারতকে অবিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে মনজুর আহমেদ বলেন, “ভারতকে নদীর ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। তাই বাংলাদেশকে পানির বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বনির্ভরশীল হতে হবে।”

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পঞ্চাশটিরও বেশি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দুই দেশের চুক্তিতে ভারতের আগ্রহ খুবই কম। যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে ডেল্টা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।”

নদী রক্ষার এই সম্মিলনে মনজুর আহমেদ বলেন, “ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত তার পশ্চিমাঞ্চলে ট্রান্সফার করতে চায়, যেটি বাংলাদেশের জন্য সমূহ বিপদ। ভারত থেকে যেসব নদীর শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তার মধ্যে ব্যাপক পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে জমে। বর্ষাকালে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিট মিটার পানি এসব নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়।

“তবে সেসব নদী থেকে গ্রীষ্মকালে মাত্র ৫ ভাগ পানি বাংলাদেশে আসে। সেখানে ভারতে পানি তো দেয়ই না, উল্টো গঙ্গার পানি তারা ব্যাপকভাবে নিয়ে যাচ্ছে। পানি যখন বেশি দরকার তখন কম দেয়, যখন কম দরকার তখন বেশি দিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। সিলেট এবং ফেনীর বন্যা তার প্রমাণ।”

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশব্যাপী নদী দখল ও দূষণ বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দাবি জানান নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

নদী সম্মিলনে তরীর আহ্বায়ক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে সাংবাদিক ও লেখক আমিন আল রশীদ, রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কিউ এম সোহেল রানা বক্তব্য দেন।

জাতীয়

২০২৪ সাল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ঘটনাবহুল বছর। নির্বাচন দিয়ে শুরু হয়েছিল বছর, এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়েছে। এছাড়া আরও ছোট-বড় বিভিন্ন ঘটনায় সারা বছর সরব ছিল দেশ। এসময় ভুল ও অপতথ্যও বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ।

বিগত বছরে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে।

বাংলাদেশের স্বাধীন ফ্যাক্টচেকার প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার প্রতিষ্ঠানটি ‘২০২৪ সালের ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের গণমাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একক ব্যক্তি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়ানো সবচেয়ে বেশি, ২০৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। এই তালিকায় পরের অবস্থানে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে নিয়ে ছড়ানো ১১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ছড়ানো ৯৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই তিনজন শীর্ষে।

জাতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য অধ্যাপক ইউনূসের পরে আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আসিফ নজরুলও রয়েছেন এ তালিকায়। ধর্মীয় দিক থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জড়িয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে।

জাতীয়

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় খোদ এক সমন্বয়কই সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন ওই সমন্বয়ক। অনেকেই আবার ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

আরেক পোস্টে রিফাত লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য ফুলটাইম কাজ করবে এমন বড় একটা এক্সপার্ট টিম অবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি শুক্রবার একটা জেলা সফরের ফালতু ট্রেন্ড বাদ দিতে হবে।’

রিফাতের স্ট্যাটাসের জবাবে সারজিস লিখেছেন- ‘আন্দোলন করা লাগবে না, কাল থেকে তুই দায়িত্ব নে।’

প্রত্যুত্তরে রিফাত বলেন, ‘আমি কেন দায়িত্ব নেব? আপনি এক্সপার্ট লোকজন আনতেছেন না কেন? মেডিকেল, হেলথ ইকোনমিকসহ এই সেক্টরের এক্সপার্ট মানুষজন আনেন। সারা দেশে অসংখ্য গ্রুপ আর্কাইভ ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্টাবলিস হয়েছে। এদের ইনক্লুড করেন। টিমটা বড় করেন। ভেরিফিকেশনের শেল্টারে আরও বড় করেন’।

সারজিসের সমালোচনা করে চীনের গুইলিন ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক টেকনোলজির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জিহাদী ইহসান বলেন, যে দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা নাই সে দায়িত্ব নিয়েছো কেন? ছোটলোকের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো পাইলে সব খাইতে চায়, হজম করার কথা ভুলে যায়। কত বড় আহাম্মক হলে রিফাতকে বলে- ‘তুই কাল থেকে দায়িত্ব নে’।

‘তুমি দায়িত্ব নিয়েছো কেন? শহিদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করতে’- বলেন জিহাদী।

রিফাতের মন্তব্যে সারজিস যে জবাব দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন কবি হাসান রোবায়েত। তিনি বলেন, অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহিতা) নাই অথচ অভিমান আছে। বাহ! শুধু এই দায়ীত্বজ্ঞানহীন রিপ্লাই দিয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইমিডিয়েট তার রিজাইন/স্যাক দেওয়া/করা উচিত।

আরেক পোস্টে হাসান রোবায়েত বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনে হেল্প পাইতে সুপারিশ লাগবে কেন? একজন যোদ্ধার ক্ষতস্থানই কি তার সুপারিশের জন্য এনাফ নয়? সুপারিশকারীরাই কি তাহলে নয়া পাওয়ার হাউস? বাংলাদেশের সবচেয়ে অথর্ব ফাউন্ডেশন কি জুলাই ফাউন্ডেশন?’

জুলাই ফাউন্ডেশন ও সারজিসকে নিয়ে দেওয়া রিফাতের বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকারের পলিসি ও প্ল্যানিং প্রফেশনাল দিলশানা পারুল। রিফাতের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমি তার এই বক্তব্য সত্যিই পছন্দ করেছি। তার দাবি সুস্পষ্ট এবং খুবই গণতান্ত্রিক। তারা প্রকাশ্যে জবাবদিহি চাইছে’।

আরেক পোস্টে দিলশানা পারুল লেখেন, জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে আমার সীমিত যোগাযোগ থেকে যা জানতে পেরেছি, তা হলো- জুলাই ফাউন্ডেশনের ওয়েবপেজে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো সংখ্যার ভিত্তি নেই। মিনিস্ট্রি যতজনকে ভেরিফাই করে, ফাউন্ডেশন সেই সংখ্যাটাই ভেরিফায়েড হিসেবে গ্রহণ করে। সরকার যাদের ভেরিফাই করেনি, ফাউন্ডেশন তাদের টাকা দিতে পারে না। যদি সরকারের দ্বারা ভেরিফাইড না হওয়া কেউ ফাউন্ডেশনে আসে, তাহলে ফাউন্ডেশন সেটা ভেরিফিকেশনের জন্য হেলথ মিনিস্ট্রিকে পাঠায়। মিনিস্ট্রি সেটা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ভেরিফাই করে সেটি হেলথ মিনিস্ট্রিতে পাঠান। হেলথ মিনিস্ট্রি তথ্য ইনফরমেশন সিস্টেমে দিলে তখন ফাউন্ডেশন সেই ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

এখানে আমলারা অনেক সময় দেরি করেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এই ভেরিফিকেশন ৪ দিনের মধ্যে করা উচিত, কিন্তু আমি শুনেছি এটি ৪ দিনে কখনই সম্পন্ন হয় না।

এছাড়া ফাউন্ডেশনে আবেদন করার সময় আহতদের অনেকগুলো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় (এটা মনীষা আপার পোস্ট থেকে আগেই জেনেছি)। এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করে ফাউন্ডেশন নিজেই কাগজগুলো অথেনটিক কিনা যাচাই করতে পারত। এটি হাসপাতালগুলোকে ফোন করে খুব সহজেই করা সম্ভব। কিন্ত যতদূর জানলাম মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব এখনো ছাড়েনি বা ছাড়তে রাজি নয়।

বর্তমানে আহতদের নিজ উদ্যোগে মেডিকেল ডকুমেন্টগুলো হাসপাতাল থেকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়, যা তাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। ফাউন্ডেশনের উচিত এ প্রক্রিয়াটি সহজ করে আহতদের কাগজপত্র নিজেই যাচাই করে নেওয়া।

আমরা কোভিডের সময়ই বুঝতে পেরেছি আমাদের হেলথ মন্ত্রণালয়টা আসলে কী জিনিস। এখন মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় জুলাই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে যেন তাদের উপর কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব না পড়ে এবং সহজে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়।

সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে রিপোর্ট করুন- —কেন আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এমন অবস্থা? আহতরা কেন এমন ভোগান্তির শিকার?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সম্পাদক আল মাশনূন বলেন, ‘সারজিস ভাই একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন, কতটা মেটাতে পারবেন জানি না, তবে জুলাই ফাউন্ডেশনের মতো পবিত্র একটা জায়গায় কাজ ভালোভাবে না করতে পারলে তার উচিত কাজ আমাদের দিয়ে দেওয়া!আমরা আমাদের জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে এখানে পুরোটা সময় দিয়ে দিতে আগ্রহী। মানুষের গালি, অভিশাপ, কান্না দেখে আর শুনে রাতে ঘুমাতে পারি না। মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তারা রক্ষা পেয়েছেন, এখন তাদের স্বপ্নের মতো দেশ সংস্কার করার কাজে যে আমরা বিবেকের কাছে আটকে টিকে আছি তার চেয়ে শহীদ হওয়া উত্তম ছিল!’

তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব দিয়ে দেন বলতে আমাকে বা কোনো গোষ্ঠীকে দিতে হবে বিষয়টা এমনও না। আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করি- কে ভালো হবে তাকেই বসাই, তবুও কাজ হোক।

ফারদিন হাসান বলেন, আজকে হঠাৎ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠায় কিছু তথ্য চেক করতে তাদের ওয়েবসাইটে গেলাম। তাদের অ্যাবাউটস সেকশনে গিয়ে আমি যা দেখি তাতে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। আমরা যখন ব্যস্ত একাত্তরে ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ শহীদ সে হিসাব নিয়ে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন তখন আমাদের জুলাইয়ের শহীদদের সংখ্যা দুই হাজার থেকে সাতশ’ বানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে যখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এই আজগুবি সংখ্যাটা বললেন তখনো বুঝি নাই এর ভিত্তি কী? এখন তো দেখছি এই অকাজের পেছনে ফাউন্ডেশন নিজে।

‘সারজিস ও স্নিগ্ধ কি দায়িত্বশীল হিসেবে শহীদদের অস্বীকার করার দায়ভার নেবে? তেরোশর অধিক শহীদকে অস্বীকার করে তারা কি নিজেদের পদে বহাল তবিয়তেই থাকবে? আই এম সরি, বাট এইটা রক্তের সঙ্গে বেইমানি ছাড়া আর কিছুই না’, বলেন তিনি।

কাজী ওয়ালী উল্লাহ নামে একজন লেখেন- একজন শহীদ পরিবার বা আহত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার পায় না, আমরা বিভিন্ন সরকারি অফিসে গেলে হাসিনার আমলে যেমন ব্যবহার পেতাম! এই কারণে যাদের কিছুটা সামর্থ্যও আছে, ওই টাকার জন্য যায় না। যারা গেছেন, দ্বিতীয়বার যেতে না হওয়ার জন্য দোয়া করে।

শহিদের স্ত্রীদের প্রায়ই শুনতে হয়, ‘বয়স কম, আরেকটা বিয়ে করে ফেলবে, তাদের টাকা লাগে কেন’! যেই স্ত্রীর বাচ্চা নাই, তাকে তো ধুর-ধুরই করে।

যারা এগুলোর প্রতিবাদ করে তাদের এমন চোখে দেখা হয় যেন তারা কোনো অপরাধী! এই হইলো জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। আমরা কেন এই ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলা শুরু করছি ধীর ধীরে আরও ভালো বুঝতে পারবেন।

বাংলাদেশ নদী অধিকার সংরক্ষণ কমিউনিটির আহ্বায়ক ইবরাহিম মাহমুদ বলেন, স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য যে ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার প্রোপার হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে ওনারা পদত্যাগ করতে পারেন। আমি মনে করি এটা তাদের জন্য অসম্মানের কিছু না। বরং মাল্টিপল কাজের প্রেশার একসঙ্গে নিতে না পারাই উপদেষ্টাসহ প্রত্যেকের সেক্টর বেইজড ফেইল করার মূল কারণ। সারজিস আলমের উচিত ন্যাশনাল পলিটিক্সে মনোনিবেশ করা। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এই পথের পাথওয়ে হতে পারতো যদি না এইটা ওয়ার্ক করতো ঠিকঠাক। সে সম্ভাবনা আর নাই। এখন অন্যভাবে মুভ করা উচিত।

জিয়া মাহমুদ মির্জা নামে একজন লেখেন- নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক জনাব সারজিস আলমকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে জুলাই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত সম্ভব আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, আহত ও শহীদ পরিবারকে অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। সেখানে সারজিস সাহেব জুলাই ফাউন্ডেশনের কাজ ফেলে রেখে নিজের সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকে। অর্থ সহায়তা দেওয়ার নাম করে জেলা সফর আর রাজনৈতিক সমাবেশ করে বেড়াচ্ছে। সে কোন শহরে কবে যাবে তার ওপর ভিত্তি করে যদি সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে ততদিন কি এই ভুক্তভোগী পরিবাররা বসে থাকবে?

তার দাবি, জুলাই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দিতে হবে। জুলাই ফাউন্ডেশনের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে পারবে এমন যোগ্য লোকের কাছে ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব দিতে হবে।

এম জে ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি লেখেন- খুনিদের ঠিকঠাক বিচার না হলে আর শহীদ পরিবার যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ না পেলে এবং আহতরা যথার্থ চিকিৎসা না পেলে এর খেসারত আমাদের ভবিষ্যতে দিতে হবে, জাতিগতভাবেই।

ইমরানুল হক আকিব বলেন, এটা আমি স্বচক্ষে দেখে আসলাম। এরকম একটা দায়বদ্ধতার কাজ কত অবহেলায় পড়ে আছে তা দুঃখজনক। আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করাতে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। ওদের কত প্রত্যাশা, কত প্রশ্ন! কী বলব আর।

মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, পুরাই ফাজলামি চলতেছে চিকিৎসা আর জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে।

মীর হুযাইফা আল-মামদূহ লেখেন- আমরা যাদের ডাকে সাড়া দিয়ে গুলি খাইলাম, তারা আমাদের ডাকে একবারও আসে নাই। জুলাইয়ে আহত মোশাররফ ঢামেকে ভর্তি। ওদিকে সারজিসের সাইনের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশনের কোনো চেক হচ্ছে না। সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, সে নাকি বিদেশে গেছে।

আরেক পোস্টে তিনি বলেন, আমার আগের পোস্ট দেওয়ার দুই মিনিটের মাথায় হাসনাত আব্দুল্লাহ, তারেক রেজারা কমেন্ট করে জানাইছে- ‘আমি নাকি মিথ্যাচার করছি, অতিরিক্ত করছি’। অথচ সারজিস বিদেশে এ-ই দাবি আমি করি নাই। আহতের স্ত্রী ৫ বার জুলাই ফাউন্ডেশনে গিয়েও টাকা পান নাই। সেখান থেকে তাকে বলা হইছে- ‘সারজিসের সাইনের জন্য চেক হচ্ছে না, সে বিদেশে’। এই লোক (মোশাররফ) বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে, রানের নার্ভ শুকিয়ে গেছে, দুই মাস কোনো চিকিৎসা ছাড়া পড়ে আছে। দুই মাস আগেই ঢাকার ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, বিদেশে নিতে হবে। চিকিৎসার খরচ হচ্ছে, সরকার দিচ্ছে। কিন্তু তার নিজে চলার জন্য, দুটো মেয়ের খরচ চালাবার জন্য কোনো পয়সা নেই। আগস্টে কিছু টাকা পাইছে, তারপর আর কেউ খোঁজও নেয় নাই, এইটা বলতে বলতেই তারা কাঁদছিল। প্রতিদিন ৫০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। ধার করে, নানা মানুষের টাকায় এটা জোগাড় হচ্ছে।

জুলাই ফাউন্ডেশনে গত মাসের শুরুতে কাগজ জমা দিয়েছে, সেই টাকাটা পায়নি, সেই টাকা পেলে, তাও চলা যেত কিছুদিন। ভেরিফিকেশন হয় নাই শুনেছি অনেক দিন। আজকে শুনলাম, সাইনের জন্য চেক আটকা।

সারজিসের বিদেশ যাওয়া না যাওয়ার ইনফরমেশন নিয়ে এরা যতটা চিন্তিত, আহতদের টাকা পাওয়া নিয়ে ততটাও না। অথচ সেখানেই আটকা চেক। সেখানেই আটকা যাবতীয় ভেরিফিকেশন। এটাই বাস্তব। হা হা হা।

সারজিসকে কটাক্ষ করে মো. সাব্বির হোসাইন লেখেন- সার্ভিস আলম ভাই তার দল গোছানো আর অ্যাকাউন্ট ভরা নিয়ে বিজি আছে…। তার কাছে কিসের জুলাই আর কিসের শহীদ?

মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ওনার উচিত রিফাত রশিদের পোস্টের কমেন্টের জন্য অ্যাটলিস্ট মুচলেকা দিয়ে রিজাইন করা।

এদিকে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে আজ বুধবার জুলাই ফাউন্ডেশনের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবেদন করা হলেও নাম তালিকাভুক্তিতে গড়িমসি করা হচ্ছে, মিলছে না সরকারি সহায়তাও।

উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহীদ মিনারে জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়।

হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহীদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন শুরু হয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সম্পাদক করে সাত সদস্যের ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমকে। আর মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

জাতীয়

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসানের ওপর হামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া বক্তব্যের জেরে একদল যুবক তাকে মারধর করেন।

শনিবার এ ঘটনা ঘটে। আহত ফারুককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদিন বিকালে জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ বিগত ১৫ বছরের একাধিক হত্যাকাণ্ডের বিচার, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার গঠনসহ একাধিক দাবিতে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। অনুষ্ঠানে ফারুক হাসানকে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ফারুক হাসান তার বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সংবিধান ছুড়ে দিয়ে আমরা বিপ্লবী সরকার করেছি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার চাইনি। এই বিপ্লব না হওয়ার পেছনে ৫ আগস্ট যারা সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে, তাদের হাত আছে।

আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফারুক হাসান বলেন, ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছি। আমার বক্তব্য সঠিক। কিন্তু ছাত্রদল আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। তারা আমার মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে।

তবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ছাত্রদল নয় বরং হামলা করেছেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের ব্যক্তিরা। আমি শাহবাগ থানায় যাচ্ছি। দুই ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে।

অন্যদিকে সমাবেশের আয়োজক সংগঠন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান মো. আরিফের দাবি, কে বা কারা ফারুক হাসানের ওপর হামলা করেছে। তা তাদের জানা নেই।

জাতীয়

দেশে শীতকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মৃত্যুর ধারা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত রোগটিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে নতুন বছরে ডেঙ্গুতে প্রথম মৃত্যুর তথ্য দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসময়ে ৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রথম চার দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন ২২১ জন। মৃত্যু হল একজনের। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডেঙ্গুতে এর আগে একজনের মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর।

নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩, ঢাকা বিভাগে ৮, ময়মনসিংহ বিভাগে ১, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩, খুলনা বিভাগে ২ এবং বরিশাল বিভাগে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ২১০ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন ২২৬ জন।

দেশে গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে মারা যান ৫৭৫ জন। এক বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর মৃত্যুর হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

জাতীয়

চুলের ক্ষয় শীতকালে বেশি হয়, কারণ বাতাসে আর্দ্রতা নাহি রয়।

শীতের সময় ত্বকের যত্নের দিকে মনোযোগ যায় বেশি। তবে শীতল শুষ্ক আবহাওয়াতে চুল রক্ষ হয়ে আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।

তাই ত্বকের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শীতকালে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার

সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল আর্দ্রতা রক্ষাকারি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা।

এ বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রূপবিশেষজ্ঞ ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র চর্ম-বিজ্ঞান বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. ভিক্টোরিয়া বারবোসা বলেন, “চুলের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে আবহাওয়া ও চুলের ধরন অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার করুন।”

শীতকালীন পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাতে কোলাজেন, সিল্ক প্রোটিন ও হায়ালুরনিক অ্যাসিড আছে কিনা দেখে নিন।

ঘন ঘন চুল না ধোয়া

মাথার ত্বকের চুলকানি ও শুষ্কতা দূর করতে প্রতি নিয়ত শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শীতকালে মাথার ত্বকে ঘাম কম হয় এবং অনেকক্ষণ চুল না ধুয়েও থাকা যায়।

শ্যাম্পু মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে ঠিকই তবে প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়। যা চুলের আর্দ্রতা হারায়।

ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক

শীতকালে সপ্তাহে একবার ‘ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক’ ব্যবহার করতে হবে। আর্গন তেল সমৃদ্ধ মাস্ক চুলকে আর্দ্র ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।

আর্দ্রতার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। সাধারণ কন্ডিশনারের চেয়ে হেয়ার মাস্ক চুলকে বেশি মসৃণ ও কোমল রাখতে পারে।

নিয়মিত তেল ব্যবহার

শীতকালেও মাথার ত্বকে তেল মালিশ করা প্রয়োজন। এটা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফলে চুল দ্রুত বাড়ে।

তেল ব্যবহার করতে না চাইলে তেল ধর্মী ‘লিভ-ইন কন্ডিশনার’ বা সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে ও জট পড়া এড়াতে সহায়তা করে।

‘স্টাইলিং টুলস’ কম ব্যবহার করা

তাপীয় যন্ত্র যেমন- ‘কার্লার’ ও ‘স্ট্রেইটনার’ কম ব্যবহার করতে হবে। এগুলো চুলকে রুক্ষ করে দেয়।

বাতাসে চুল শুকানো ভালো। তবে শীতল বাতাসে চুল শুকানো না গেলে কম তাপে ড্রায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আগে অবশ্যই তাপ সুরক্ষক প্রসাধনী ব্যবহার করে নিতে হবে চুলে।

জাতীয়

ক্যানসারের চিকিৎসায় টিকা নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণার পর অবশেষে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষায়িত এই টিকা মূলত ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে টিউমার চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার নানা ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ফলাফল দেখাচ্ছে।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় করার ধারণাটি কিন্তু নতুন নয়। ১৯শ শতকের শেষভাগে নিউইয়র্কের সার্জন উইলিয়াম কোলি আবিষ্কার করেছিলেন, ব্যাকরেটিয়ার সংক্রমণ ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কোলি তার গবেষণায় প্রায় এক হাজার রোগীর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে চিকিৎসা করেছিলেন, যার অনেক ক্ষেত্রেই সফল ফলাফল পাওয়া যায়।

বর্তমানে ক্যানসার টিকার গবেষণা নতুন ধাপে পৌঁছেছে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা টিউমারের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করছেন, কোন মিউটেশন বা নিওঅ্যান্টিজেন ইমিউন সিস্টেমকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় আরএনএ ব্যবহার করে শরীরের কোষকে ক্যানসারের নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর ফলে ইমিউন সিস্টেম ক্যানসারের কোষগুলোকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক টিকার সাফল্য

দুই মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মডার্না এবং মার্কের তৈরি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক (প্রত্যেকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি) এমআরএনএ ক্যানসার টিকা (এমআরএনএ-৪১৫৭ বা ভি৯৪০) সম্প্রতি মেলানোমা (একধরনের স্কিন ক্যানসার) রোগীদের ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এই টিকা ক্যানসার পুনরাবৃত্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে এনেছে। এছাড়া, একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যান্য ক্যানসারের বিরুদ্ধেও পরীক্ষামূলক কাজ চলছে।

উজ্জ্বল সম্ভাবনা

গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের মতো জটিল চিকিৎসার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে ক্যানসারের টিকা। পাশাপাশি, প্রতিরোধমূলক টিকা তৈরি করেও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের সুরক্ষিত করা সম্ভব হতে পারে। ২০২৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধে একটি টিকা তৈরির জন্য অর্থায়ন পেয়েছেন।

তবে, এই পথে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক টিকা তৈরি এখনো বেশ সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। ‘অফ-দ্য-শেল্ফ’ টিকা উন্নয়নের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ক্যানসার টিকা নিয়ে ২০২৫ সাল হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। উইলিয়াম কোলির দৃষ্টিভঙ্গি এক শতাব্দী পর বিজ্ঞানীদের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পথ দেখাচ্ছে। তবে এই টিকা কতটা কার্যকর হবে, তা নিশ্চিত হতে আরও কিছু গবেষণার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।