জাতীয়

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় খোদ এক সমন্বয়কই সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন ওই সমন্বয়ক। অনেকেই আবার ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

আরেক পোস্টে রিফাত লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য ফুলটাইম কাজ করবে এমন বড় একটা এক্সপার্ট টিম অবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি শুক্রবার একটা জেলা সফরের ফালতু ট্রেন্ড বাদ দিতে হবে।’

রিফাতের স্ট্যাটাসের জবাবে সারজিস লিখেছেন- ‘আন্দোলন করা লাগবে না, কাল থেকে তুই দায়িত্ব নে।’

প্রত্যুত্তরে রিফাত বলেন, ‘আমি কেন দায়িত্ব নেব? আপনি এক্সপার্ট লোকজন আনতেছেন না কেন? মেডিকেল, হেলথ ইকোনমিকসহ এই সেক্টরের এক্সপার্ট মানুষজন আনেন। সারা দেশে অসংখ্য গ্রুপ আর্কাইভ ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্টাবলিস হয়েছে। এদের ইনক্লুড করেন। টিমটা বড় করেন। ভেরিফিকেশনের শেল্টারে আরও বড় করেন’।

সারজিসের সমালোচনা করে চীনের গুইলিন ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক টেকনোলজির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জিহাদী ইহসান বলেন, যে দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা নাই সে দায়িত্ব নিয়েছো কেন? ছোটলোকের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো পাইলে সব খাইতে চায়, হজম করার কথা ভুলে যায়। কত বড় আহাম্মক হলে রিফাতকে বলে- ‘তুই কাল থেকে দায়িত্ব নে’।

‘তুমি দায়িত্ব নিয়েছো কেন? শহিদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করতে’- বলেন জিহাদী।

রিফাতের মন্তব্যে সারজিস যে জবাব দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন কবি হাসান রোবায়েত। তিনি বলেন, অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহিতা) নাই অথচ অভিমান আছে। বাহ! শুধু এই দায়ীত্বজ্ঞানহীন রিপ্লাই দিয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইমিডিয়েট তার রিজাইন/স্যাক দেওয়া/করা উচিত।

আরেক পোস্টে হাসান রোবায়েত বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনে হেল্প পাইতে সুপারিশ লাগবে কেন? একজন যোদ্ধার ক্ষতস্থানই কি তার সুপারিশের জন্য এনাফ নয়? সুপারিশকারীরাই কি তাহলে নয়া পাওয়ার হাউস? বাংলাদেশের সবচেয়ে অথর্ব ফাউন্ডেশন কি জুলাই ফাউন্ডেশন?’

জুলাই ফাউন্ডেশন ও সারজিসকে নিয়ে দেওয়া রিফাতের বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকারের পলিসি ও প্ল্যানিং প্রফেশনাল দিলশানা পারুল। রিফাতের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমি তার এই বক্তব্য সত্যিই পছন্দ করেছি। তার দাবি সুস্পষ্ট এবং খুবই গণতান্ত্রিক। তারা প্রকাশ্যে জবাবদিহি চাইছে’।

আরেক পোস্টে দিলশানা পারুল লেখেন, জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে আমার সীমিত যোগাযোগ থেকে যা জানতে পেরেছি, তা হলো- জুলাই ফাউন্ডেশনের ওয়েবপেজে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো সংখ্যার ভিত্তি নেই। মিনিস্ট্রি যতজনকে ভেরিফাই করে, ফাউন্ডেশন সেই সংখ্যাটাই ভেরিফায়েড হিসেবে গ্রহণ করে। সরকার যাদের ভেরিফাই করেনি, ফাউন্ডেশন তাদের টাকা দিতে পারে না। যদি সরকারের দ্বারা ভেরিফাইড না হওয়া কেউ ফাউন্ডেশনে আসে, তাহলে ফাউন্ডেশন সেটা ভেরিফিকেশনের জন্য হেলথ মিনিস্ট্রিকে পাঠায়। মিনিস্ট্রি সেটা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ভেরিফাই করে সেটি হেলথ মিনিস্ট্রিতে পাঠান। হেলথ মিনিস্ট্রি তথ্য ইনফরমেশন সিস্টেমে দিলে তখন ফাউন্ডেশন সেই ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

এখানে আমলারা অনেক সময় দেরি করেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এই ভেরিফিকেশন ৪ দিনের মধ্যে করা উচিত, কিন্তু আমি শুনেছি এটি ৪ দিনে কখনই সম্পন্ন হয় না।

এছাড়া ফাউন্ডেশনে আবেদন করার সময় আহতদের অনেকগুলো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় (এটা মনীষা আপার পোস্ট থেকে আগেই জেনেছি)। এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করে ফাউন্ডেশন নিজেই কাগজগুলো অথেনটিক কিনা যাচাই করতে পারত। এটি হাসপাতালগুলোকে ফোন করে খুব সহজেই করা সম্ভব। কিন্ত যতদূর জানলাম মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব এখনো ছাড়েনি বা ছাড়তে রাজি নয়।

বর্তমানে আহতদের নিজ উদ্যোগে মেডিকেল ডকুমেন্টগুলো হাসপাতাল থেকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়, যা তাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। ফাউন্ডেশনের উচিত এ প্রক্রিয়াটি সহজ করে আহতদের কাগজপত্র নিজেই যাচাই করে নেওয়া।

আমরা কোভিডের সময়ই বুঝতে পেরেছি আমাদের হেলথ মন্ত্রণালয়টা আসলে কী জিনিস। এখন মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় জুলাই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে যেন তাদের উপর কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব না পড়ে এবং সহজে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়।

সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে রিপোর্ট করুন- —কেন আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এমন অবস্থা? আহতরা কেন এমন ভোগান্তির শিকার?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সম্পাদক আল মাশনূন বলেন, ‘সারজিস ভাই একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন, কতটা মেটাতে পারবেন জানি না, তবে জুলাই ফাউন্ডেশনের মতো পবিত্র একটা জায়গায় কাজ ভালোভাবে না করতে পারলে তার উচিত কাজ আমাদের দিয়ে দেওয়া!আমরা আমাদের জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে এখানে পুরোটা সময় দিয়ে দিতে আগ্রহী। মানুষের গালি, অভিশাপ, কান্না দেখে আর শুনে রাতে ঘুমাতে পারি না। মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তারা রক্ষা পেয়েছেন, এখন তাদের স্বপ্নের মতো দেশ সংস্কার করার কাজে যে আমরা বিবেকের কাছে আটকে টিকে আছি তার চেয়ে শহীদ হওয়া উত্তম ছিল!’

তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব দিয়ে দেন বলতে আমাকে বা কোনো গোষ্ঠীকে দিতে হবে বিষয়টা এমনও না। আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করি- কে ভালো হবে তাকেই বসাই, তবুও কাজ হোক।

ফারদিন হাসান বলেন, আজকে হঠাৎ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠায় কিছু তথ্য চেক করতে তাদের ওয়েবসাইটে গেলাম। তাদের অ্যাবাউটস সেকশনে গিয়ে আমি যা দেখি তাতে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। আমরা যখন ব্যস্ত একাত্তরে ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ শহীদ সে হিসাব নিয়ে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন তখন আমাদের জুলাইয়ের শহীদদের সংখ্যা দুই হাজার থেকে সাতশ’ বানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে যখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এই আজগুবি সংখ্যাটা বললেন তখনো বুঝি নাই এর ভিত্তি কী? এখন তো দেখছি এই অকাজের পেছনে ফাউন্ডেশন নিজে।

‘সারজিস ও স্নিগ্ধ কি দায়িত্বশীল হিসেবে শহীদদের অস্বীকার করার দায়ভার নেবে? তেরোশর অধিক শহীদকে অস্বীকার করে তারা কি নিজেদের পদে বহাল তবিয়তেই থাকবে? আই এম সরি, বাট এইটা রক্তের সঙ্গে বেইমানি ছাড়া আর কিছুই না’, বলেন তিনি।

কাজী ওয়ালী উল্লাহ নামে একজন লেখেন- একজন শহীদ পরিবার বা আহত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার পায় না, আমরা বিভিন্ন সরকারি অফিসে গেলে হাসিনার আমলে যেমন ব্যবহার পেতাম! এই কারণে যাদের কিছুটা সামর্থ্যও আছে, ওই টাকার জন্য যায় না। যারা গেছেন, দ্বিতীয়বার যেতে না হওয়ার জন্য দোয়া করে।

শহিদের স্ত্রীদের প্রায়ই শুনতে হয়, ‘বয়স কম, আরেকটা বিয়ে করে ফেলবে, তাদের টাকা লাগে কেন’! যেই স্ত্রীর বাচ্চা নাই, তাকে তো ধুর-ধুরই করে।

যারা এগুলোর প্রতিবাদ করে তাদের এমন চোখে দেখা হয় যেন তারা কোনো অপরাধী! এই হইলো জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। আমরা কেন এই ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলা শুরু করছি ধীর ধীরে আরও ভালো বুঝতে পারবেন।

বাংলাদেশ নদী অধিকার সংরক্ষণ কমিউনিটির আহ্বায়ক ইবরাহিম মাহমুদ বলেন, স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য যে ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার প্রোপার হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে ওনারা পদত্যাগ করতে পারেন। আমি মনে করি এটা তাদের জন্য অসম্মানের কিছু না। বরং মাল্টিপল কাজের প্রেশার একসঙ্গে নিতে না পারাই উপদেষ্টাসহ প্রত্যেকের সেক্টর বেইজড ফেইল করার মূল কারণ। সারজিস আলমের উচিত ন্যাশনাল পলিটিক্সে মনোনিবেশ করা। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এই পথের পাথওয়ে হতে পারতো যদি না এইটা ওয়ার্ক করতো ঠিকঠাক। সে সম্ভাবনা আর নাই। এখন অন্যভাবে মুভ করা উচিত।

জিয়া মাহমুদ মির্জা নামে একজন লেখেন- নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক জনাব সারজিস আলমকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে জুলাই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত সম্ভব আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, আহত ও শহীদ পরিবারকে অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। সেখানে সারজিস সাহেব জুলাই ফাউন্ডেশনের কাজ ফেলে রেখে নিজের সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকে। অর্থ সহায়তা দেওয়ার নাম করে জেলা সফর আর রাজনৈতিক সমাবেশ করে বেড়াচ্ছে। সে কোন শহরে কবে যাবে তার ওপর ভিত্তি করে যদি সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে ততদিন কি এই ভুক্তভোগী পরিবাররা বসে থাকবে?

তার দাবি, জুলাই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দিতে হবে। জুলাই ফাউন্ডেশনের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে পারবে এমন যোগ্য লোকের কাছে ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব দিতে হবে।

এম জে ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি লেখেন- খুনিদের ঠিকঠাক বিচার না হলে আর শহীদ পরিবার যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ না পেলে এবং আহতরা যথার্থ চিকিৎসা না পেলে এর খেসারত আমাদের ভবিষ্যতে দিতে হবে, জাতিগতভাবেই।

ইমরানুল হক আকিব বলেন, এটা আমি স্বচক্ষে দেখে আসলাম। এরকম একটা দায়বদ্ধতার কাজ কত অবহেলায় পড়ে আছে তা দুঃখজনক। আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করাতে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। ওদের কত প্রত্যাশা, কত প্রশ্ন! কী বলব আর।

মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, পুরাই ফাজলামি চলতেছে চিকিৎসা আর জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে।

মীর হুযাইফা আল-মামদূহ লেখেন- আমরা যাদের ডাকে সাড়া দিয়ে গুলি খাইলাম, তারা আমাদের ডাকে একবারও আসে নাই। জুলাইয়ে আহত মোশাররফ ঢামেকে ভর্তি। ওদিকে সারজিসের সাইনের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশনের কোনো চেক হচ্ছে না। সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, সে নাকি বিদেশে গেছে।

আরেক পোস্টে তিনি বলেন, আমার আগের পোস্ট দেওয়ার দুই মিনিটের মাথায় হাসনাত আব্দুল্লাহ, তারেক রেজারা কমেন্ট করে জানাইছে- ‘আমি নাকি মিথ্যাচার করছি, অতিরিক্ত করছি’। অথচ সারজিস বিদেশে এ-ই দাবি আমি করি নাই। আহতের স্ত্রী ৫ বার জুলাই ফাউন্ডেশনে গিয়েও টাকা পান নাই। সেখান থেকে তাকে বলা হইছে- ‘সারজিসের সাইনের জন্য চেক হচ্ছে না, সে বিদেশে’। এই লোক (মোশাররফ) বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে, রানের নার্ভ শুকিয়ে গেছে, দুই মাস কোনো চিকিৎসা ছাড়া পড়ে আছে। দুই মাস আগেই ঢাকার ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, বিদেশে নিতে হবে। চিকিৎসার খরচ হচ্ছে, সরকার দিচ্ছে। কিন্তু তার নিজে চলার জন্য, দুটো মেয়ের খরচ চালাবার জন্য কোনো পয়সা নেই। আগস্টে কিছু টাকা পাইছে, তারপর আর কেউ খোঁজও নেয় নাই, এইটা বলতে বলতেই তারা কাঁদছিল। প্রতিদিন ৫০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। ধার করে, নানা মানুষের টাকায় এটা জোগাড় হচ্ছে।

জুলাই ফাউন্ডেশনে গত মাসের শুরুতে কাগজ জমা দিয়েছে, সেই টাকাটা পায়নি, সেই টাকা পেলে, তাও চলা যেত কিছুদিন। ভেরিফিকেশন হয় নাই শুনেছি অনেক দিন। আজকে শুনলাম, সাইনের জন্য চেক আটকা।

সারজিসের বিদেশ যাওয়া না যাওয়ার ইনফরমেশন নিয়ে এরা যতটা চিন্তিত, আহতদের টাকা পাওয়া নিয়ে ততটাও না। অথচ সেখানেই আটকা চেক। সেখানেই আটকা যাবতীয় ভেরিফিকেশন। এটাই বাস্তব। হা হা হা।

সারজিসকে কটাক্ষ করে মো. সাব্বির হোসাইন লেখেন- সার্ভিস আলম ভাই তার দল গোছানো আর অ্যাকাউন্ট ভরা নিয়ে বিজি আছে…। তার কাছে কিসের জুলাই আর কিসের শহীদ?

মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ওনার উচিত রিফাত রশিদের পোস্টের কমেন্টের জন্য অ্যাটলিস্ট মুচলেকা দিয়ে রিজাইন করা।

এদিকে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে আজ বুধবার জুলাই ফাউন্ডেশনের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবেদন করা হলেও নাম তালিকাভুক্তিতে গড়িমসি করা হচ্ছে, মিলছে না সরকারি সহায়তাও।

উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহীদ মিনারে জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়।

হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহীদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন শুরু হয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সম্পাদক করে সাত সদস্যের ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমকে। আর মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

জাতীয়

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসানের ওপর হামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া বক্তব্যের জেরে একদল যুবক তাকে মারধর করেন।

শনিবার এ ঘটনা ঘটে। আহত ফারুককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদিন বিকালে জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ বিগত ১৫ বছরের একাধিক হত্যাকাণ্ডের বিচার, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার গঠনসহ একাধিক দাবিতে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। অনুষ্ঠানে ফারুক হাসানকে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ফারুক হাসান তার বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সংবিধান ছুড়ে দিয়ে আমরা বিপ্লবী সরকার করেছি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার চাইনি। এই বিপ্লব না হওয়ার পেছনে ৫ আগস্ট যারা সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে, তাদের হাত আছে।

আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফারুক হাসান বলেন, ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছি। আমার বক্তব্য সঠিক। কিন্তু ছাত্রদল আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। তারা আমার মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে।

তবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ছাত্রদল নয় বরং হামলা করেছেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের ব্যক্তিরা। আমি শাহবাগ থানায় যাচ্ছি। দুই ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে।

অন্যদিকে সমাবেশের আয়োজক সংগঠন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান মো. আরিফের দাবি, কে বা কারা ফারুক হাসানের ওপর হামলা করেছে। তা তাদের জানা নেই।

জাতীয়

দেশে শীতকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মৃত্যুর ধারা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত রোগটিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে নতুন বছরে ডেঙ্গুতে প্রথম মৃত্যুর তথ্য দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসময়ে ৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রথম চার দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন ২২১ জন। মৃত্যু হল একজনের। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডেঙ্গুতে এর আগে একজনের মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর।

নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩, ঢাকা বিভাগে ৮, ময়মনসিংহ বিভাগে ১, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩, খুলনা বিভাগে ২ এবং বরিশাল বিভাগে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ২১০ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন ২২৬ জন।

দেশে গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে মারা যান ৫৭৫ জন। এক বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর মৃত্যুর হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

জাতীয়

চুলের ক্ষয় শীতকালে বেশি হয়, কারণ বাতাসে আর্দ্রতা নাহি রয়।

শীতের সময় ত্বকের যত্নের দিকে মনোযোগ যায় বেশি। তবে শীতল শুষ্ক আবহাওয়াতে চুল রক্ষ হয়ে আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।

তাই ত্বকের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শীতকালে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার

সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল আর্দ্রতা রক্ষাকারি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা।

এ বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রূপবিশেষজ্ঞ ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র চর্ম-বিজ্ঞান বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. ভিক্টোরিয়া বারবোসা বলেন, “চুলের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে আবহাওয়া ও চুলের ধরন অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার করুন।”

শীতকালীন পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাতে কোলাজেন, সিল্ক প্রোটিন ও হায়ালুরনিক অ্যাসিড আছে কিনা দেখে নিন।

ঘন ঘন চুল না ধোয়া

মাথার ত্বকের চুলকানি ও শুষ্কতা দূর করতে প্রতি নিয়ত শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শীতকালে মাথার ত্বকে ঘাম কম হয় এবং অনেকক্ষণ চুল না ধুয়েও থাকা যায়।

শ্যাম্পু মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে ঠিকই তবে প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়। যা চুলের আর্দ্রতা হারায়।

ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক

শীতকালে সপ্তাহে একবার ‘ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক’ ব্যবহার করতে হবে। আর্গন তেল সমৃদ্ধ মাস্ক চুলকে আর্দ্র ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।

আর্দ্রতার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। সাধারণ কন্ডিশনারের চেয়ে হেয়ার মাস্ক চুলকে বেশি মসৃণ ও কোমল রাখতে পারে।

নিয়মিত তেল ব্যবহার

শীতকালেও মাথার ত্বকে তেল মালিশ করা প্রয়োজন। এটা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফলে চুল দ্রুত বাড়ে।

তেল ব্যবহার করতে না চাইলে তেল ধর্মী ‘লিভ-ইন কন্ডিশনার’ বা সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে ও জট পড়া এড়াতে সহায়তা করে।

‘স্টাইলিং টুলস’ কম ব্যবহার করা

তাপীয় যন্ত্র যেমন- ‘কার্লার’ ও ‘স্ট্রেইটনার’ কম ব্যবহার করতে হবে। এগুলো চুলকে রুক্ষ করে দেয়।

বাতাসে চুল শুকানো ভালো। তবে শীতল বাতাসে চুল শুকানো না গেলে কম তাপে ড্রায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আগে অবশ্যই তাপ সুরক্ষক প্রসাধনী ব্যবহার করে নিতে হবে চুলে।

জাতীয়

ক্যানসারের চিকিৎসায় টিকা নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণার পর অবশেষে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষায়িত এই টিকা মূলত ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে টিউমার চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার নানা ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ফলাফল দেখাচ্ছে।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় করার ধারণাটি কিন্তু নতুন নয়। ১৯শ শতকের শেষভাগে নিউইয়র্কের সার্জন উইলিয়াম কোলি আবিষ্কার করেছিলেন, ব্যাকরেটিয়ার সংক্রমণ ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কোলি তার গবেষণায় প্রায় এক হাজার রোগীর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে চিকিৎসা করেছিলেন, যার অনেক ক্ষেত্রেই সফল ফলাফল পাওয়া যায়।

বর্তমানে ক্যানসার টিকার গবেষণা নতুন ধাপে পৌঁছেছে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা টিউমারের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করছেন, কোন মিউটেশন বা নিওঅ্যান্টিজেন ইমিউন সিস্টেমকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় আরএনএ ব্যবহার করে শরীরের কোষকে ক্যানসারের নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর ফলে ইমিউন সিস্টেম ক্যানসারের কোষগুলোকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক টিকার সাফল্য

দুই মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মডার্না এবং মার্কের তৈরি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক (প্রত্যেকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি) এমআরএনএ ক্যানসার টিকা (এমআরএনএ-৪১৫৭ বা ভি৯৪০) সম্প্রতি মেলানোমা (একধরনের স্কিন ক্যানসার) রোগীদের ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এই টিকা ক্যানসার পুনরাবৃত্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে এনেছে। এছাড়া, একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যান্য ক্যানসারের বিরুদ্ধেও পরীক্ষামূলক কাজ চলছে।

উজ্জ্বল সম্ভাবনা

গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের মতো জটিল চিকিৎসার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে ক্যানসারের টিকা। পাশাপাশি, প্রতিরোধমূলক টিকা তৈরি করেও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের সুরক্ষিত করা সম্ভব হতে পারে। ২০২৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধে একটি টিকা তৈরির জন্য অর্থায়ন পেয়েছেন।

তবে, এই পথে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক টিকা তৈরি এখনো বেশ সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। ‘অফ-দ্য-শেল্ফ’ টিকা উন্নয়নের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ক্যানসার টিকা নিয়ে ২০২৫ সাল হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। উইলিয়াম কোলির দৃষ্টিভঙ্গি এক শতাব্দী পর বিজ্ঞানীদের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পথ দেখাচ্ছে। তবে এই টিকা কতটা কার্যকর হবে, তা নিশ্চিত হতে আরও কিছু গবেষণার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনস্বার্থে কাজ করার ব্রত নিয়ে দেশবাসীকে সমাজসেবায় এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত ওয়াকাথন ও সমাজসেবা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বেলুন ও পায়রা উঠিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যদি অল্প অল্প করে নিজের স্বার্থের পাশাপাশি পরের স্বার্থে কাজ করতে পারতাম এবং অপরের জন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় ঢোকাতে পারতাম, তাহলে যে সমস্যা আমাদের রয়েছে, তা সমাধানে কারও মুখাপেক্ষী হতে হতো না। সমাজসেবা দিবসে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে পরের স্বার্থে কাজ করার যে শক্তি রয়েছে, সেটাকে যেন জাগিয়ে তুলতে পারি। উন্মোচন করতে পারি। ব্যক্তি এবং প্রতিটি পরিবার থেকে এই ব্রত গ্রহণ করলে আমরা সফল হব।’ তিনি দৈনন্দিন জীবনে জনস্বার্থে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাজসেবামূলক কাজ করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকের ভুল ধারণা ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের কাজ হলো কেবল টাকাপয়সা রোজগার করা। নিজের স্বার্থে কাজ করা। সমাজসেবা সরকারের দায়িত্ব—এটা ভুল ধারণা। ব্যক্তির যে শক্তি আছে, সেই শক্তির কাছে সরকারের শক্তি একেবারে নস্যি। মোটেই তুলনা করা যায় না। আমাদের এই প্রচণ্ড শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’

সামাজিক ব্যবসা জনস্বার্থের কাজের ক্ষেত্রে বড় মাধ্যম হতে পারে, এমন মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘অন্যের স্বার্থ বা পরের দুঃখ–দুর্দশা ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে আমরা আনন্দ পেতে পারি—এমন উপলব্ধি থেকে আমরা সবাইকে সামাজিক ব্যবসায় উৎসাহিত করি। মানুষ আস্তে আস্তে এটা বুঝছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে দেখছি। আমি যখন ব্যবসা করব, সেটা নিজের স্বার্থে যেমন করব, তেমনি পরের স্বার্থেও ব্যবসা করব। স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে যে ঘাটতি বা সমস্যা রয়ে গেছে, আসুন, আমরা তার সমাধানে সামাজিক ব্যবসা করি।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সমাজসেবা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। আর মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া, যেন কেউ ভুলে না যায় এই দায়িত্ব থেকে, দূরে সরে না যায়…আশা করি, এই আহ্বান সবার কাছে পৌঁছে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পরের স্বার্থে কাজ করার প্রবণতা আছে। সেই ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। নিজের জন্য কিছু করার তুলনায় পরের কল্যাণে কাজ করায় আনন্দ মেলে বেশি।’

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ . সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন ও জুলাই বিপ্লবের তিন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান খান ।

জাতীয়

রাজধানীসহ সারা দেশে কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার দাপটে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশের কোথাও কোথাও দিবাভাগে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমে বলেন, সারা দেশের মধ্যে ঢাকা এবং এর আশপাশে সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান মাত্র ২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ কারণেই বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান যত কমবে ততই বেশি শীত অনুভূত হবে। পাশাপাশি আরিচাতে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে সবশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার এদিন (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীন নদী পরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং দিনের তাপমাত্রা (১-৩) ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশের কোথাও কোথাও দিবাভাগে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

শুক্রবারের (৩ জানুয়ারি) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীন নদী পরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যহত হতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশের কোথাও কোথাও দিবাভাগে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

জাতীয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৪ জন ভিআইপিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, সচিব, রাজনৈতিক দলের নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা।

এসব বন্দির মধ্য থেকে ১০৮ জনকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। ২৬ জন এখনো ডিভিশন পাননি। কারাগারের খাতায় তারা (যারা ডিভিশন পাননি) বিশেষ বন্দি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন। কারা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

কারাগারগুলোয় যারা বিশেষ বন্দির তালিকায় আছেন, তাদের মধ্যে একজন সাবেক হুইপ, ২২ জন সাবেক সংসদ-সদস্য ও তিনজন সরকারি কর্মকর্তা। তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে ও সাবেক সংসদ-সদস্য তানভীর ইমাম, সাবেক সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সংসদ-সদস্য গোলাম কিবরিয়া, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, কামরুল আশরাফ খান পোটন, আব্দুর রউফ, রাগেবুল আহসান রিপু, আব্দুস সোবহান মিয়া (গোলাপ)।

আরও আছেন- কাজী জাফর উল্ল্যাহ, আহম্মদ হোসাইন, শাহে আলম, সাদেক খান, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সেলিম আলতাফ জর্জ, ড. ইঞ্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দীকি রোজী, সাবেক হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুর রহমান বদি, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আলী আজম মুকুল, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাবেক এএসপি রফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য এএমএ লতিফ, জান্নাত আরা হেনরি, রশিদুজ্জামান মোড়ল, সাবেক সংসদ-সদস্য এসএম তানভীর আরাফাত এবং রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সাবেক সংসদ-সদস্য তানভীর ইমামকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে। গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় পরদিন তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। হাজী সেলিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ১৩ নভেম্বর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ-সদস্য ১৪ নভেম্বর গোলাম কিবরিয়া টিপুকে রাতে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হাতিরঝিল থানার একটি মামলায় পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে ১৫ ডিসেম্বর রাতে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় গ্রেফতার নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য কামাল আশরাফ খান পোটনকে ১৯ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া-৪ আসনের (কুমারখালী-খোকসা) সাবেক সংসদ-সদস্য আবদুর রউফকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৬ নভেম্বর থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বগুড়া সদর আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে ১৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে র‌্যাব। রিপুর বিরুদ্ধে বগুড়ার বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে আগস্টে গ্রেফতার করা হয়। তিনি একসময় সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ আছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহকে সেপ্টেম্বরে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ আছেন।

আগস্টে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ উল্লাহকে। তিনিও এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় করাগার-২-এ আছেন। একই কারাগারে থাকা শাহে আলমকে গ্রেফতার করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে। গ্রেফতারের আগে তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হন। মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাদেক খান কারাগারে আছেন ২৯ আগস্ট থেকে।

লালবাগ থানার মামলায় হাজী মোহাম্মদ সেলিম কারাগারে আছেন ৪ সেপ্টেম্বর থেকে। মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে আছেন সাবেক সংসদ-সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। ডিভিশন না পাওয়া আরও যারা বিশেষ বন্দির মর্যদা পেয়েছেন, তাদের ২০ আগস্ট থেকে ২৬ ডিসেম্বর সময়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হিসাবে এ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সংসদ-সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম, শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজব জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টারের সাবেক মহাপরিচালক তারেক এম বরকত উল্লাহ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নৌবাহিনীর সাবেক কমোডর মনিরুল ইসলাম, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম সোহায়ইল, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক উপমন্ত্রী আদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

সাবেক মন্ত্রী মাহবুব আলী, ফরহাদ হোসেন, ইমরান আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, জাকির হোসেন, সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, উবায়দুল মোকদাদির চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক যুগ্মসচিব একেএম জি কিবরিয়া মজুমদার, সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আমির হোসেন আমু, আব্দুস শহীদ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শহিদুজ্জামান সরকার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইসমাইল হোসেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সংসদ-সদস্য সাফিয়া খাতুন, সাবেক সংসদ-সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা ওরফে শিউলি আজাদ, বেসিক ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মো. আলী চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. কুদ্দুসুর রহমান, সাবেক পুলিশ উপমহাপরিদর্শক মিজানুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মাইনুল হক, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান, ডিএমপির সাবেক উপপুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, পুলিশ সুপার শাহেন শাহ, পুলিশ সুপার মো. জুয়েল রানা, রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, তানজিল আহম্মেদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য বখতিয়ার আলম রনি, সহকারী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক আইজপি মো. শহিদুল হক, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মশিউর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল হাসান, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইফতেখার মাহমুদ, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফি, পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক ক্যাপ্টেন এআই সবুজ আহমেদ, সাবেক লেফটেন্যন্ট কর্নেল মো. তানভীর ইসলাম।

সাবেক মেজর এসএম মনিরুজ্জামান, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ওরফে শাহাবুদ্দিন মোল্লা, পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক সংসদ-সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওরফে ডলার সিরাজ, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক সংসদ-সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজন, দাবিরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, মো. আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ, কেডিএস গ্রুপের মালিকের ছেলে ইয়াসিন রহমান ওরফে রহমান ইয়াসীন।

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, সাবেক সংসদ-সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, আয়েশা ফেরদৌস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক আলী অমি, সাবেক সংসদ-সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কায়সার দস্তগীর, সাবেক পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক সংসদ-সদস্য মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, যাদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছে, তারা কারাবিধি অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, কারাবিধিতে বিশেষ বন্দি বলে কিছু নেই। আদালত যাদের ডিভিশন মঞ্জুর করেননি, তাদের সাধারণ বন্দি হিসাবেই দেখা হচ্ছে।

জাতীয়

হালনাগাদে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ তথ্য জানান।

দাবি, আপত্তি ও নিষ্পত্তি শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

বিদ্যমান ভোটার নিয়ে এখন ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন।

সবশেষ গত ২ মার্চে প্রকাশিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ১২ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে।

এ জানুয়ারিতে নতুন ভোটার যুক্ত হবে ১৮ লাখের বেশি।

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য হবেন- এ বছরের হালনাগাদের সময় তাদের যুক্ত করা হবে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর বাদ পড়া ও ভোটারযোগ্যদের তালিকাভুক্ত করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন তথ্য নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন।

জাতীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ আপাতত সফল না হলেও এ উদ্যোগের ‘পেছনে কারা’ তা নিয়ে নানা ধরনের ‘সন্দেহ ও আলোচনা’ দানা বেঁধেছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ মাস পর এসে ঘোষণাপত্র নিয়ে তোড়জোড় ও বিশেষ করে ‘বাহাত্তরের সংবিধানকে কবর দেওয়ার হুমকি’তে দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।

তাদের অনেকে মনে করেন এই উদ্যোগের সঙ্গে নির্বাচনকে বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টারও যোগসূত্র থাকতে পারে।

দলটির ভেতরে এমন বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে কোনো ‘বিশেষ রাজনৈতিক দলের’ উস্কানি কিংবা ভরসাতেই মঙ্গলবার শহীদ মিনারে জমায়েত ডেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধীরা। তবে এর সঙ্গে বিদেশি কোনো শক্তির ইন্ধন আছে বলে তারা মনে করেন না।

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ৩টায় জুলাই বিপ্লবের ‘ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে জানান। এ সময় তিনি বলেছিলেন যে ঘোষণাপত্রে ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে এবং ‘মুজিববাদী সংবিধান কবরস্থ’ করা হবে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলছেন বায়াত্তরের সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত শাসনতন্ত্র।

তিনি বলছেন, পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এটি অর্জন করেছি আমরা। কেউ এটি অপব্যবহার করলে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা যাবে। কিন্তু বাতিল করার প্রশ্ন আসছে কেন।

দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, দেশের বর্তমান ভঙ্গুর অবস্থায় হুট করে ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের পেছনের উদ্দেশ্য আসলে কী? এটা না জানলে তো নানা চিন্তার উদ্রেক হবেই। আবার ঘোষণা দিয়েও করা হলো না কেন। সেটারও বা কারণ কী, বলছিলেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, জুলাই ‘ঘোষণাপত্রে’ যেসব বিষয় আনার কথা বলা হচ্ছিলো সেগুলোর সঙ্গে বিএনপির যোগসূত্র কম এবং সে কারণেই বিএনপির কাছে এটিকে নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি চেষ্টা হিসেবেই মনে হয়েছে বলে তার ধারণা।

প্রসঙ্গত, বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই সংবিধানের সংস্কারের বিষয়ে সতর্ক মন্তব্য করে আসছে। এমনকি আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করলে দলটির নেতারা সেটির সমালোচনাও করেছেন।

ঘোষণাপত্র নিয়ে যত ঘটনা

আগস্টের শুরুতে আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আটই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। শুরু থেকেই বিএনপি সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছে।

পরে ড. ইউনূস সংবিধানসহ কয়েকটি বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করলে বিএনপি সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানায়।

পরে প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানালেও বিএনপি আরও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার চাপ দিয়ে আসছে।

এর মধ্যে হুট করেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও তাদের সমর্থিত জাতীয় কমিটির নেতারা শনিবার একযোগে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানান যে তারা ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দিতে যাচ্ছেন। পরে রোববার সংবাদ সম্মেলনে একত্রিশে ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ঘোষণাপত্র প্রকাশের সময় ঘোষণা করা হয়।

এতে হাসনাত আব্দুল্লাহ পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানকে কবর দিবেন তারা।

যদিও সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ঘোষণাপত্রের এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ হিসেবে উল্লেখ করেন।

হুট করে এমন ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় বিএনপির মধ্যে। সোমবার রাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

পরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘোষণাপত্র ঘোষণা নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন। অপরদিকে সরকারের দুজন উপদেষ্টাও তার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

সোমবারই সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘ঘোষণাপত্র’ তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ঘোষণাপত্র প্রকাশ স্থগিত করে তবে সমাবেশের কর্মসূচি বহাল রাখে।

বিএনপিতে কেমন প্রতিক্রিয়া

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হুট করে ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এই আলোচনায় কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। এগুলো হলো ছাত্রদের বাইরে থেকে কেউ উস্কানি দিচ্ছে কি না এবং ঘোষণাপত্রের নামে সব দল ও সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বকে সামনে রেখে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহিরের চেষ্টা হয় কি না।

একই সঙ্গে ঘোষণাপত্র প্রকাশের নামে নির্বাচনের দাবিকে গুরুত্বহীন দেখিয়ে বর্তমান শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কোনো অভিপ্রায় দেখা যায় কি না সেটি নিয়েও আলোচনা করেছে দলটির নেতারা।

এমনকি সভায় এই প্রশ্নও ওঠে যে সারাদেশ থেকে গাড়ি বোঝাই করে লোকজন এনে বিশাল শোডাউন করার জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে তার উৎস কী।

দলটির নেতাদের কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন যে ঘোষণাপত্রের সমাবেশে বিএনপিসহ সব পক্ষ উপস্থিত হলে এবং তাদের সামনে রেখে ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যা চায় সেটিই হয় – এমন ধারণা জাতির সামনে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন তারা এটি নিশ্চিত হয়েছেন যে এ উদ্যোগের সঙ্গে বিদেশি কোন শক্তির যোগসূত্র নেই। তবে দেশের দুটি দলের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে ধারণা করি।

সভায় এই ধারণাও উঠে আসে যে ছাত্ররা দল করছে ও তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এখন নেই আর জামায়াত ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বিলম্বিত করা গেলে ক্ষমতায় থেকে দল গোছানোর সময় পাওয়া যাবে। সে কারণেই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি হুট করে সামনে আনা হয়েছে বলে মনে করেন দলের একাংশ।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বৈষম্যবিরোধীরা তাদের দাবি বা প্রস্তাব সরকারের কাছেই দিতে পারতো। তা না করে তারা একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু আমাদের তো জানতে হবে এর পেছনে কারা।

জানা গেছে, সোমবার রাতের দলের স্থায়ী কমিটির সভায় গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বৈষম্যবিরোধীদের ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগকে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলছেন, তারা এখন দেখবেন সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়। সরকার যদি আমাদের ডাকে তখন আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের দূরত্ব ও সন্দেহের মূল জায়গাই হলো নির্বাচন।

অধ্যাপক বলেন, বৈষম্যবিরোধীরা তাদের ঘোষণাপত্রে যেসব বিষয় আনা হবে বলে বলছিলেন সেগুলোর সঙ্গে বিএনপির যোগসূত্র কম, বরং বিএনপি দেখছে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী প্লাটফরম ও তাদের মিত্র নাগরিক কমিটি, সরকার, জামায়াত- সবার মধ্যে একটি অলিখিত ঐক্য গড়ে উঠেছে নির্বাচনের সময়সীমাকে কেন্দ্র করে।