জাতীয়

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া সচিবালয়ে প্রবেশের বেসরকারি সব পাস বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকরাও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে আপাতত ঢুকতে পারবেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মো. খোদা বখস চৌধুরী সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বাড়ানোর স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস (Digital Access Control System) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ব্যতীত সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।

সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এতদ্বারা বাতিল করা হলো।

বাতিলকৃত বিভিন্ন ক্যাটাগরির সচিবালয় প্রবেশ পাসধারীরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আব্দুল গণি রোড, ঢাকায় স্থাপনকৃত বিশেষ সেলের মাধ্যমে নতুন করে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হলো। ’

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনে আগুন লেগে ৬ থেকে ৯তলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। আগুনে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের দপ্তরও পুড়ে যায়।

জাতীয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন “সমাজ সেবা অধিদপ্তর”-এর মহা-পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নিযুক্ত হয়েছেন  জনাব মোঃ সাইদুর রহমান খান।

গত ২৬-১২-২০২৪ তারিখ তাঁর পূর্বতন কর্মস্হল স্বাস্হ মন্ত্রণালয়ের জিএনএসপি ইউনিটের পক্ষ থেকে উপসচিব শাখাওয়াৎ হোসেনের নেতৃত্বে কর্মকর্তাগন মহা-পরিচালক মহোদয়কে ফুলদিয়ে শুভেচ্ছা জানান , এসময় উপস্হিত ছিলেন জিজিএন২৪ সম্পাদক ও বড়চাপা দারুল ইসলাম এতিমখানার সভাপতি মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান আরো উপসি্হত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সিনিয়ার কর্মকর্তাগণ এবং ডিজি মহোদয়ের একান্ত সচিব আব্দুস সালাম ।

ডিজি মোঃ সাইদুর রহমান খান বলেন যে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আজকের আজকের এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

জাতীয়

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার একটি জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করার চেষ্টা করছে, যাতে ব্যবসায়ীরা এক জায়গা থেকে সমস্ত তথ্য পেতে পারে। তিনি বলেন, নির্ভুল তথ্য ছাড়া আর্থিক ও সামাজিক খাতে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় না।

আজ শনিবার সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’র ষষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সঠিকভাবে তথ্য  সংগ্রহ করতে না পারলে আরও সমস্যা তৈরি হবে। আমাদের তথ্য আপডেট করতে হবে। ১০-১৫ বছরের পুরানো ডেটা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।’

এখন শেয়ার বাজার, ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতের তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন প্রতারণা নেই জানিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) অতিরঞ্জন থেকে বিরত থেকে প্রকৃত তথ্য প্রকাশে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে তথ্য বিকৃতির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যদিও কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে মূল্যস্ফীতি এবং জিডিপি তথ্যের ভুল উপস্থাপনা হয়েছে, তবে নীতিনির্ধারকরাও প্রকৃত তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার  তার দ্বায়িত্ববোধ থেকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে এবং তথ্য বিপর্যয় সংস্কারের চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘দাতা সংস্থাগুলি জিনিপত্রের উচ্চ হার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তবে আমরা এখন সঠিক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করার মাধ্যমে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’

ব্যাংকিং অ্যালমানাক সম্পাদক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জন্য সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সামষ্টিক অর্থনীতির চাকাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ডেটার সত্যতা বজায় রাখা।’

জাতীয়

প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে নিজের সম্পদ বিবরণী তুলে ধরে নজির তৈরি করলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। এখন পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া সংস্থাটির সাত চেয়ারম্যানের মধ্যে তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি নিজের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ্যে আনলেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি নিজের আয়–ব্যয় ও সম্পদের বিবরণী তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমার সম্পদ বিবরণী দুদক সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। অন্য কমিশনাররা তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দিয়ে দেবেন।’

১১ ডিসেম্বর দুদক যোগ দেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ওই দিন সাত কর্মদিবসের মধ্যে নিজের ও বাকি দুই কমিশনারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়–ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তাদের আয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিজের সম্পত্তির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বছিলায় সাড়ে ৭০০ স্কয়ার ফিটের দুটি মিলিয়ে ১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সেখানে আরও ৭০০ স্কয়ার ফিট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটি খালি জায়গা আছে ৫ কাঠা। বিসিএস প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলাম। সেখানে ৮ জন সদস্যের জন্য ১০ কাঠা জমি আছে। আমার ভাগে ১.২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকাপয়সা পেয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত দখল পাই নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত সেটার কোনো নিষ্পত্তি হয় নাই। যে কোনো কারণে হোক সরকার আমাকে দেয় নাই। আমি আবার আবেদন করব। এর বাইরে আমার আর কোনো স্থাবর সম্পদ নাই।

অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আকারের ২৫ সেল্ফভর্তি বইপত্র। অনেক দামি বইপত্র আছে। আসবাব ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার জিনিস আছে। ৫ বছর মেয়াদি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। আর ৩ মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার। আমার জিপিএফের টাকা আমি তুলি নাই, ওই খানে ১৭ লাখ টাকা আছে।’

নিজের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার চাকরি লব্ধ আয়-উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ। শিক্ষকতা করি, বক্তৃতা করি, লেখালেখি করি। সাড়ে ৫ শতক একটা জমি কিনেছিলাম বেড়িবাঁধের বাইরে, সেটা বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমার চাকরিজীবন অনেক দিনের। ছাত্র অবস্থা থেকেই আয় করা শুরু করি। যখন এই চাকরি থেকে চলে যাব আপনারা হিসাব করবেন—এই সম্পদ কতটা বাড়ল, কতটা কমল।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি যে প্রধানমন্ত্রীও পালিয়েছেন একই সঙ্গে বায়তুল মোকাররমের খতিবও পালিয়েছেন। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর সেটা জনসচেতনতা প্রচার করতে হবে গণমাধ্যমকে।

দুদক কমিশনার কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘মাত্র অর্ধেক জনবল নিয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা নির্মোহভাবে অনুসন্ধান করব। কোথায় পক্ষপাত হবে না। আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ বলেন, দুদকের পেশাগত ভিত্তি অনেক শক্ত। ৪২ দিন কমিশন না থাকার পরেও দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে গেছেন। পৃথিবীর কোনো মানুষের দাসত্ব করবে না দুদক।

জাতীয়

রাজধানীর বনশ্রীতে ৬ তলা একটি ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট।

এর আগে রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার মো. শাহজাহান।
তিনি জানান, রাজধানীর বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাসায় আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট রওনা হয়। তবে যানজটের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়। রাত ৯টা ৪ মিনিটে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এরপর রাত সাড়ে ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও হতাহতের কোনো খবর জানাননি ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।

জাতীয়

আগামী সোমবারের মধ্যে ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানে’ শহিদদের তালিকা তৈরি করে পরবর্তী ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে। তবে এ তালিকা সর্বশেষ তালিকা নয়। এখনো তথ্য যাচাই-বাছাই ভেরিফিকেশনের কাজ চলছে। পরবর্তীতে আরও শহিদদের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেলে সেটাও তালিকায় এনে ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা ও শহিদের পরিবারের পুনর্বাসন বিষয়ে সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সভায় গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের দলনেতা খন্দকার জহিরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ৮৫৯ জন শহিদের ভেরিফায়েড তথ্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট থেকে পেয়েছি। এটা যদিও চূড়ান্ত নয়। এ ব্যাপারে কাজ অব্যাহত আছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান জানান, হাসপাতালে আহত রোগীদের খাবারের মানোন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, বরাদ্দ বৃদ্ধিতে খাবারের মানে দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাবে। এ ছাড়া সব হাসপাতালে পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনো অবস্থাতেই রোগীদের যেন নিজের টাকা খরচ করে চিকিৎসার জন্য কিছু কিনতে না হয়।

সভায় অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা, শহিদ ও আহতদের তালিকা চূড়ান্তকরণ, শহিদের পরিবার ও আহত রোগীদের পুনর্বাসন, পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন এবং বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ সময় জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম জানান, এ পর্যন্ত ৫২৫ শহিদ পরিবার এবং ১ হাজার ৪১০ জন আহতকে ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. নাজমুল হোসেন প্রমুখ।

জাতীয়

তিন কিশোর খেলনা পিস্তল নিয়ে কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংক লুট করতে এলেও তাদের আচরণ ছিল পেশাদার ডাকাতের মতো। ব্যাংকের ভেতরে থাকা লোকজন আসল পিস্তল ভেবে প্রাণভয়ে কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসেননি।

আত্মসমর্পণের পর ওরা অস্ত্রগুলো পুলিশের হাতে জমা দেওয়ার পর খেলনা পিস্তলের বিষয়টি জানাজানি হয়।

বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের রূপালী ব্যাংক ডাকাতির সময় ভেতরে ডাকাতদের হাতে ৬ জন গ্রাহক, এক শিশু ও ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ডাকাতরা আত্মসমর্পণ করলে মুক্তি পান জিম্মিরা।

জিম্মি থাকা গ্রাহকদের একজন চুনকুটিয়ার বাসিন্দা বাবুল খান। পেশায় তিনি বাড়িঘর নির্মাণের কন্ট্রাকটরের কাজ করেন। শুক্রবার বিকালে তিনি জিম্মি অবস্থার বর্ণনা দেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

তিনি বলেন, বেলা পৌনে ২টার দিকে এক লাখ টাকা জমা করতে ব্যাংকে যাই। দুপুরের দিকে তেমন ভিড় ছিল না। আমিসহ মাত্র ৬ জন গ্রাহক। একজনের সঙ্গে ছোট একটা বাচ্চা। টাকাগুলো ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিয়েছি, এমন সময় তিনজন লোক ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। সবার মুখমণ্ডল ঢাকা। এ সময় ভেতরে থাকা ব্যাংকের একজন গার্ড পা পিছলে মেঝেতে পড়ে যান। একজন তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। সবাইকে চুপচাপ থাকতে বলে। এলার্ম বাজাতে নিষেধ করে।

বাবুল খান বলেন, এ সময় ভয় আর আতঙ্কে সবাই অস্থির হয়ে পড়েন। অনেকেই কান্নাকাটি করতে থাকেন। এরপর সবাইকে এক জায়গায় এনে ফ্লোরে বসিয়ে দেয়। সবার মোবাইল নিয়ে নেয়। এর পর সঙ্গে করে আনা ৩টি ব্যাগে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ৫০ লাখ টাকার মতো ভরে কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে এসব ঘটে যায়।

বাবুল খান আরও বলেন, এদিকে ব্যাংক ডাকাতির বিষয়টি বাইরে জানাজানি হয়ে গেলে মাইকে ঘোষণা করা হয়। এলাকাবাসী ব্যাংক ঘিরে ফেলে বাইরে থেকে ব্যাংকের গেট তালাবদ্ধ করে দেন। এতে ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতর আটকা পড়ে। তবে এ সময় ওদের বিচলিত হতে দেখা যায়নি। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত হলেও ওরা নির্বিঘ্ন ছিল। ওরা বলছিল পুলিশ আমাদের কিছুই করতে পারবে না। তবে যখন সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়, তখন ওরা মনোবল হারিয়ে ফেলে। কাঁধ থেকে টাকার ব্যাগ নামিয়ে মেঝেতে রাখে।

তিনি বলেন, এ সময় ওরা অস্থির হয়ে পড়ে। এদিকে ব্যাংকের একজন অফিসারের মোবাইলে ফোন এলে সেই ফোন দিয়ে ওরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে। এভাবে কয়েক ঘণ্টা কেটে যায়। এ সময় দুজন গ্রাহক টয়লেট ব্যবহার করতে চাইলে ওরা অস্ত্রের মুখে তাদের অনুমতি দিয়েছে। একজন নারী কর্মকর্তা অনেক কান্নাকাটি করছিল। তাকেও তারা ক্ষতি করবে না বলে আশ্বস্ত করে কান্না থামাতে বলে। একপর্যায়ে একটি ব্যাগে ১৫ লাখ টাকা ভরে সেটা নিয়ে ওরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বাবুল খান বলেন, আমরা ওদের চেহারা দেখতে পারিনি। তবে কণ্ঠস্বর ও শারীরিক গঠন দেখে বুঝতে পারছিলাম এরা কিশোর বয়সের।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেন, এ ঘটনায় আমরা জিম্মি লোকজনের সেফটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অভিযান চালিয়েছি। আটকে পড়ার পর মোবাইলে ওদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা সময় নিয়েছি, নানাভাবে বুঝিয়ে ওদের কনভিন্স করেছি। ওদের দাবি আমরা জানতে চেয়েছি। ওরা ১৫ লাখ টাকা ও নিরাপদ প্রস্থান দাবি করে। আমরা রাজি হই। ওরা ১৫ লাখ টাকা ব্যাগে ভরে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় ওই টাকা ও ওদের প্যান্টের পকেট থেকে আরও ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আত্মসমর্পণের পর তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এসপি বলেন, ব্যাংক লুটের বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল। গ্রেফতার ৩ জনের মধ্যে দুজনের বয়স ১৬। একজনের ২২। ওদের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলগুলো ফেক (খেলনা) ছিল। এদের দুজন ব্যাংকের আশপাশেই বসবাস করে। কাছাকাছি হওয়ায় ওরা এই ব্যাংকে টার্গেট করে।

তিনি বলেন, কিশোর অ্যাডভেঞ্চার ও ফ্যান্টাসি থেকে তারা এমনটা করেছে। এ ঘটনার আগে তারা বিভিন্ন মুভি ও অনলাইনে ভিডিও দেখেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওরা জানিয়েছে- একজন রোগীকে সাহায্য করতে ও আইফোন কিনতে তারা ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করে। রোগীকে সহায়তা করার বিষয়টি আমরা এখনো যাচাই করতে পারিনি।

এদিকে রূপালী ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় শুক্রবার ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তারেক মাহমুদ বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, আসামিদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। শুক্রবার তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের গাজীপুরে কিশোর সংশোধনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি প্রাপ্তবয়স্ক (২২ বছর)। তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ব্যাংকের ম্যানেজার শেখর মণ্ডল বলেন, ব্যাংকের সব টাকা গুনে দেখা হয়েছে। এক টাকাও খোয়া যায়নি। রোববার থেকে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

জাতীয়

শীত মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এতে কমতে শুরু করেছে দাম। তবে এ রাজধানীর খুচরা বাজার দু-একটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা হলেও বেশিরভাগ সবজি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু সবজির দাম এখনো ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এতে সবজি কিনতে এখনো অস্বস্তিতে রয়েছে ক্রেতা। তবে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। কেজিপ্রতি করলা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতি পিস ফুলকপি ৩০-৪০ ও বাঁধাকপি ৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর প্রতি কেজি নতুন টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, মুলা ৩০ টাকায়, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, গাজরের কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬৫-৭০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা, পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, আর কাঁচা টমেটো বাজারভেদে প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, শিম (বিচিওয়ালা) প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শিম (বিচি ছাড়া) প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং ঢ্যাঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নয়াবাজারে সবজি কিনতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শীত এলে সবজির দাম অনেক কম থাকে। গত সপ্তাহের তুলনায় মূল্য কিছুটা কমলেও এখনো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সরবরাহ থাকলেও বিক্রেতারা বাড়তি দর হাঁকাচ্ছেন।

একই বাজারে সবজি বিক্রেতা মো. আমিন বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি আসতে শুরু করেছে। দিন যত যাবে সবজির দাম তত কমবে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা কমেছে। তবে পাইকারি আড়তে দাম এখনো বেশি। যে কারণে খুচরায় বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে।

এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মান ও আকারভেদে ৮০-১২০ টাকা। যা একদিন আগেও ৯০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু ৫ টাকা কমে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের বিক্রেতা সোনাই আলী বলেন, নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজেরও জোগান বেড়েছে। যে কারণে দামও কমতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসবে।

অন্যদিকে খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগি প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৪৮-৫০ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা। তবে মালিবাগ কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ২১০ টাকা পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে দেখা গেছে। সঙ্গে প্রতি পিস কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা ও খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৬০ টাকা, কাতল ৩৬০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, চিংড়ি (আকার অনুযায়ী) ৭৫০-৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০ টাকা, টেংরা ৭০০ টাকা, কই মাছ প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ২৮০-৩০০ টাকা, চাপিলা মাছ প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয়

মহান বিজয় দিবসে বিএনপি নেতাদের দাওয়াত না দেওয়ায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সাতবাড়ীয়া উত্তর ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরকে পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভেড়ামারা-দৌলতপুর সড়ক অবরোধ করে ট্রায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল ৮টায় বিএনপির ফরিদা ইয়াসমিন গ্রুপের নেতা মোস্তাক আহমেদ মিন্টুর নেতৃত্বে কর্মীরা বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে চলে যান।

এরপর সকাল ৯টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান বিএনপির মূলধারার নেতা ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম সরকার ও তার লোকজন। ফুল দেওয়ার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের তাদের অফিস কক্ষে নিয়ে আপ্যায়ন করান।

এ খবর পেয়ে ফরিদা ইয়াসমিন গ্রুপের মোস্তাক আহমেদ মিন্টু, সোহেল, সুজনসহ একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে তাদের কেন দাওয়াত দেওয়া হয়নি জানতে চান। একপর্যায়ে মারধর করে ও ওই কক্ষেই আটকে রেখে চলে আসেন।

খবর পেয়ে শিক্ষার্থী এবং বিএনপির নেতারা প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।

জাতীয়

বৈষম্যহীন নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে আজ সোমবার বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।

১৯৭১ সালের পর ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বৈষম্যহীন দেশ গড়ার আহবান এবং জাতীয় ঐক্যের শ্লোগান জাতিকে ইতোমধ্যে উদ্দীপ্ত করে তুলেছে। ফলে এবারের বিজয় দিবস উদযাপন হয়ে ওঠে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার বিজয় দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্য ও সামাজিক মুল্যবোধের বাংলাদেশ গড়ার বিজয় দিবস।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে এবারের মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে।

বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনার সরকার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে জন বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে উৎখাত হন। ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন, গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন, গুম খুনসহ নির্যতনের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ ও ক্ষুব্ধ জনতার রাজনৈতিক রোষানলের পড়ে তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে পালিয়ে যান।

হাসিনা সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে এই প্রথম দিনটি পালন করেছে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর অধিকাংশ দেশবাসী এ সময়টাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলেও অভিহিত করছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ ভাষণ দিয়েছেন।

সকালে ঢাকা পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের প্রতি গান-স্যালুট প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহিদদের প্রতি দোয়া এবং মোনাজাতে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক কমিটি। রোববার দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে তারা মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। এরপর তারা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ ও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করেন। এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখপাত্র সামান্তা শারমীনসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সকাল ৭টা ১২ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তার সঙ্গে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তাও ছিলেন। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দেশের জন্য আত্মদানকারী বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার/টিভি চ্যানেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় বার্তা সংস্থা-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গতকাল রাত থেকেই আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা করে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহে বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকেটে ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহকৃত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং মিলনায়তনে ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

বিজয় দিবসটি উপলক্ষে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের সংগ্রামের ইতিহাস ও বিজয় স্মরণে র‌্যালি করেছেন ছাত্র-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ র‌্যালির আয়োজন করে। দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বিজয় র‌্যালি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-শাহবাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আবার শহিদ মিনারে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে র‌্যালিটি শেষ হয়।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আসলেও সেই স্বাধীনতা ছিল অরক্ষিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বিজয় আমাদের স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিয়েছে।

দেশবাসীকে মহান বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪-এর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে জনগণ প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ অনুভব করছে।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ফ্যাসিজম ও আধিপত্যবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের পক্ষ থেকে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্যদিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবির খোকন উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের অফিসারদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধনের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ আখাউড়া-আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আইএসপিআর জানায়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ স্মৃতিসৌধে শহিদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।

দিবসটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সকালে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর দোয়া-মোনাজাতসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও জাতীয় এই দিবস উপলক্ষে আজ রোগীদের ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের মধ্যে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।