রাজনীতি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এসেছে।

আপিল বিভাগের রোববারের (১০ নভেম্বর) কার্যতালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আবেদন দুটি ৫ ও ৬ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে আবেদনটির শুনানি হতে পারে।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুটি লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. রেজাউল হক।

২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছিলেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

একই সঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল করেন। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট।

সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এছাড়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।

হাইকোর্টের ওই রায়ের আগের দিন ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান একটি রায় দেন। রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

পরে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার অংশ হিসেবে নিজের খরচে পেপারবুক (মামলা বৃত্তান্ত) তৈরির আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট সে আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এখন পেপারবুক তৈরি হলে আপিল শুনানি হবে।

যদিও এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। তারপরও আপিল শুনানি কেন? আমরা বলেছি, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজনীতি

গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চেনার দিন। তেমনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল শত্রু চিহ্নিত করার দিন। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না।

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার রাজপথে আজ লাখো জনতার মিছিল। দেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল আজ।

তিনি আরও বলেন, লাখো জনতার আজকের এ মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নের একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী মিছিল।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক, রাজধানীর রাজপথে আজ কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার মিছিল নয় বরং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার মিছিল। নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার আদায়ের মিছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কখনো যেন ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য প্রত্যেক নাগরিকের সরাসরি ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সক্ষমতা অর্জন জরুরি। স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্বাচিত হতে ইচ্ছুক জনপ্রতিনিধিদের যতক্ষণ জনগণের ভোটের প্রতি মুখাপেক্ষী না করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত করে যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে না আনা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে তারা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজনীতি

“সকল মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে আনুপাতিক ভোটের প্রস্তাব করেছি”, বলেন দলের আমির শফিকুর রহমান।

“সকল মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে আনুপাতিক ভোটের প্রস্তাব করেছি”, বলেন দলের আমির শফিকুর রহমান।

গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনকে ‘বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে দেশে আরও একটি ‘বিপ্লবের’ ঘোষণা এসেছে জামায়াতে ইসলামীর তরফে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সেই ‘বিপ্লব’ হবে ইসলামের, এ জন্য নেতাকর্মীদেরকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি।

শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে তিনি এই বক্তব্য রাখেন বলে দলটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পরওয়ার বলেন, “৫ আগস্ট এর পর আরেকটি ‘বিপ্লব’ হবে, আর সেটা হবে ‘ইসলামের বিপ্লব’। সেই ইসলামী বিপ্লবের জন্য সকল রুকন ভাইবোনদেরকে প্রস্তত থাকতে হবে।”

রুকন বা সদস্যদেরকে ‘সংগঠনের খুঁটি’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত নেতা বলেন, “খুঁটিকে মজবুত করে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন শক্ত ঈমান । আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে আগামী ২ বছরের জন্য জেলা আমিরের শপথ পড়ানো হয়।

কুষ্টিয়া জামায়াতের আমির আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসাইন, অঞ্চল টিম সদস্য এ কে এম আলী মুহসিন।

‘যৌক্তিক সময় পর’ সংখ্যানুপাতিক ভোটের দাবি

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান একই দিন নীলফামারীতে জেলার রুকন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সংখ্যানুপাতিক ভোটে সংসদ নির্বাচনের দাবি করেন।

জামায়াতের প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের তত শতাংশ আসন থাকবে।

জামায়াতের আমির বলেন, “আমরা ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। অন্তর্বতী সরকার আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা যাবে। সকল মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে আনুপাতিক ভোটের প্রস্তাব করেছি।”

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে। আর সংস্কারের জন্য সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়’ দিতে হবে।

“বিএনপি সরকারকে নির্বাচনের বিষয়ে বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সবাই’ একমত।”

এর আগে রুকন সম্মেলনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হালিম বলেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে ‘অতীতের মত’ আশঙ্কা রয়েছে। সরকার দ্রুত সংস্কার করে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে।”

রাজনীতি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের দুই ভাই বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

শহিদ আবু সাঈদের দুই ভাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে তাদের পিতামাতার ‘সালাম’এবং শুভকামনা পৌঁছে দেন।

তারা জানান, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনূস যখন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে আবু সাঈদ ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের অন্য শহিদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন তখন শহিদ আবু সাঈদের বাবা-মাসহ তারা সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী অধ্যাপক ইউনুসকে বলেন, ‘আপনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার একদিন পর রংপরে আমাদের গ্রামে গিয়ে আমাদের সাথে দেখা করেছেন এবং আপনি জাতিসংঘে তাবু সাঈদসহ বিপ্লবের শহিদদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেছেন এজন্য আমরা অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করেছি।

প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড স্যালুট দেয়। এসময় দুই ভাই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে একই মঞ্চে ছিলেন।

শহিদ আবু সাঈদের অপর ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সাথে যখন আমরা মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সৈন্যরা আমাদেরকে স্যালুট দিয়ে সম্মান জানায় তখন আমাদের কেমন লেগেছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করে বলেন, তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

দুই ভাই তাদের শহিদ ভাইয়ের নামে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করবেন উল্লেখ করে বলেন, তারা তাদের শহিদ ভাইয়ের স্মরণে তাদের গ্রামে একটি ‘মডেল মসজিদ’ এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রত্ষ্ঠিা করতে চান এবং তারা এ বিষয়ে সহায়তার জন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন।

আবু হোসেন বলেন, ‘এ ফাউন্ডেশন দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করবে।’

অধ্যাপক ইউনূস আবু সাঈদের পরিবারের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশকে তার হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শহিদ আবু সাঈদ জাতির জন্য যা করেছেন তা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। তার আত্মত্যাগ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।’

তিনি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তাদের জন্য তাঁর দরজা সবসময় খোলা থাকবে।

তিনি দুই ভাইকে তাদের বাবা-মাকে তাঁর ‘সালাম’ পৌঁছে দিতে বলেন এবং সবসময় তাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক একদিন পর ৯ আগস্ট রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন ও ফাতেহা পাঠ করেন।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে বুক পেতে দিয়ে শহিদ হন।

রাজনীতি

 

৭ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

বুধবার (৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এ দাবি করেন তিনি।

বিবৃতি তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবিলায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকল মুক্তিকামী জনতা রাজপথে নেমেছিল।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মেজর জে. খালেদ মোশাররফ পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করেছিলো। তখন আমাদের দেশপ্রেমিক সিপাহী ও জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে ৭ নভেম্বর নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে খালেদ মোশাররফের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করেছিল।

জামায়াত আমীর বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী বারবার দেশকে বিদেশী আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছে। ৫ আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতা অনেক তাজা প্রাণ ও রক্তের বিনিময় দেশকে সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করেছে এবং দেশের সামরিক বাহিনী ছাত্র-জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা এমনি এক সময় ৭ নভেম্বর পালন করতে যাচ্ছি যখন জাতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিকে আবার ফ্যাসিবাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নানামুখি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জাতি আবার ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। ফ্যাসিবাদীরা পুনরায় ফিরে আসলে জাতি এক মহাসঙ্কটে নিপতিত হবে। এ অবস্থায় জাতিকে রক্ষা করার জন্য দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল-মত-নির্বিশেষে এবং বর্তমান সরকার ও সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

শফিকুর রহমান বলেন, সকল প্রকার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার দীপ্ত শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস, যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আমি জামায়াতের সকল শাখা ও দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

রাজনীতি

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল। ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের অপশক্তি এখনো আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এই সরকারের মেয়াদ ৩ মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একটি সরকারের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য ৩ মাস যথেষ্ট সময় নয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিদিন জনগণকে হার মানতে হয়। ৩ মাস সময় তাদের (জনগণ) কাছে মনে হতে পারে ৩ বছরের সমান। বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাগব করতে কঠোর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সব কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

বুধবার বিকালে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বইও প্রকাশ করা হয়। দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহৎ ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্র মেরামত তথা প্রচলিত বিধিবিধান সংস্কারের জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। যা এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় বিএনপি ও সমাজের বহু মানুষ উল্লেখ করেছেন। বিএনপি সংস্কারের পক্ষে, তবে রাষ্ট্রীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রথাগত সংস্কারের চেয়ে জনগণের রাজনীতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিকদের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। বর্তমান সংবিধানে আছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। সংবিধানে লেখা থাকার পরেও মাফিয়া সরকার মানেনি। গত ১৫ বছর জনগণের ভোট ছাড়াই, তথাকথিত জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে প্রকাশ্যে ফ্যাসিবাদের পক্ষ অবলম্বন করতে দেখা গেছে। এজন্য জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী ও স্বাধীন থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনোই জনগণের স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। জনগণের আদালত কিন্তু মব জাস্টিজ নয়, এর অর্থ কোনো ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান কিংবা ক্ষমতাহীন করার চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকা। রাষ্ট্রে রাজনীতিক বন্দোবস্ত এমন হওয়া প্রয়োজন যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ, যে পর্যায়ের প্রতিনিধি হোক না কেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষতা ছাড়া কোনোভাবেই একজন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে সক্ষম হবেন না। এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নিশিরাতের আয়োজন কিংবা ডামি প্রার্থী হিসাবে জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ স্বাভাবিকভাবে রুদ্ধ হয়ে যাবে।

তারেক রহমান বলেন, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে জনগণের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করে ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। প্রার্থীকে জনগণের আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। বিজয়ের জন্য জনগণের আদালতের রায় পেতে হবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রে জনগণের আদালত ও রাষ্ট্রীয় আদালত এই দুটি কার্যক্রম শক্তিশালী করা গেলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সংস্কার নিশ্চিত করা যাবে। জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো অপ্রিয় কাজের দ্বায় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তথা জনগণের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের যাত্রাপথের এটি একটি শুরু মাত্র। সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতা যথানিয়মে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন, সঙ্গে রাখুন। জনগণ পছন্দ করেন না এমন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ নভেম্বর শুধু একটি দিন নয়, দিবস নয়। ৭ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। নতুন সত্তা পেয়েছিল। নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। সেই ইতিহাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিপ্লব ও অভ্যুত্থান ঘটেছে। পরাজিত করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে (শেখ হাসিনা)। ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছি। এখন ভবিষ্যতে সতর্কতার সঙ্গে পার হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার অতি অল্প সময়ে মধ্যে প্রয়োজনীর সংস্কার শেষে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে তারা সাহায্য করবে। নির্বাচন ইস্যুতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। তিনি অতি দ্রুত সেই সংস্কারগুলো করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবেন এবং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি। আমরা মাঠ ছাড়িনি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে আবার সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের সম্মুখীন হয়েছি। গণতন্ত্রের পথে যে লক্ষ্য তার সম্মুখীন হয়েছি। যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোকে নিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনকে আবারও সফল করতে হবে। নতুন করে আর বয়ান শুনতে চাই না। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শক্তিশালী সমাজ বিনির্মাণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কথা বলছে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাবে। সেই সংস্কারকে বর্তমান সরকারের কাছে যদি হয় একমাত্র কর্তব্য তাহলে ভুল হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার চাইলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সরকার এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি। নির্বাচিত সরকারই পারে সংবিধান সংশোধন করতে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্যে দেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ। এছাড়া সভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে আজ সোমবার ঢাকায় তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে ছয় সংস্কার কমিশন প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে কমিশন প্রধানরা সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তারা জানান সংস্কার কমিশনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে।

বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রধান চিারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দূর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ অংশগ্রহণ করেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস তার ভাষণে বলেন, তারা সংস্কার চান। সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান। আর সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে ছয় জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনের প্রধান করে ছয় কমিশন গঠন করা হয়। গত মাস থেকে কমিশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

বৈঠকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন।

বৈঠকে জানানো হয়;

১. পুলিশ সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। পাশাপাশি অংশীদ্বারদের সঙ্গে আরও চারটি বৈঠক করেছে।

২. জনসাধারণের মতামত চেয়ে একটি প্রশ্নমালা প্রস্তুত করা হয়েছে; যা ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

৩. কিছু আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে যেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি প্রক্রিয়া সহজ করে তোলার জন্য যথাযথ প্রস্তাব করা হচ্ছে।

৪. মব নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে।

৫. ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কতিপয় ধারা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তা পরিবর্তন করা হবে কি না সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

বৈঠকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী।

মুয়িদ চৌধুরী জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলের মতামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সফর করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

জনপ্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাডার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় শুরু হয়েছে এবং এটি চলমান রয়েছে বলে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন পেশ করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

রাজনীতি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ৭ নভেম্বর হচ্ছে এই সরকারের তিন মাস। কিন্তু এখনো ‘কচ্ছপ গতিতে’ চলছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার অথবা নিষ্পত্তির কার্যক্রম। এতে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি মামলার নিষ্পতি হলেও এখনো প্রায় দেড় লাখ মামলা রয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা এসব মামলাকে মিথ্যা ও গায়েবি বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। পটপরিবর্তন হলেও এখনো এসব রাজনৈতিক মামলায় নিয়মিত আদালতের এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় ছুটতে হচ্ছে তাদের। আগের মতো গ্রেফতার আতঙ্ক না থাকলেও মামলার ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার অথবা নিষ্পত্তি চান নেতাকর্মীরা। অন্যথায় তারা এ নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবেন। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর দুই স্তরের কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে বলা হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এ দুই কমিটি কাজ করবে। রাজনৈতিক হয়রানি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও নেতারা বলছে, মামলা প্রত্যাহারের কার্যকরী তেমন কোনো উদ্যোগ দেখছেন না তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখছি কী হয়। তারপর আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশের মানুষ এত নির্যাতনের পরেও যাদের (বিএনপি নেতাকর্মী) সবচেয়ে বেশি অবদান তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনার বিষয় হতে পারে, এটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা শেখ হাসিনার পতনের জন্য ১৫ বছর লড়ে সবকিছু ত্যাগ করে আজকের এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাদের মামলা এখনো যায়নি (নিষ্পতি) কেন? এটা স্বাভাবিকভাবে সবারই প্রশ্ন। সুতরাং এ বিষয়ে ব্যবস্থা যদি শিগগিরই করা না হয়, তাহলে যারা শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে তারা তো আর বসে থাকবে না।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অসংখ্য মামলা দায়ের করেছিল। প্রত্যেকটা মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। আমরা আইনগতভাবে প্রত্যেকটা পদক্ষেপই নিচ্ছি। তারেক রহমানের নির্দেশনা হচ্ছে তিনি দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান, সিআরপিসির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনিভাবেই তিনি তার মামলাগুলো মোকাবিলা করবেন এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তিনি তার মামলার ফয়সালা চান। তবে যদি রাষ্ট্র কখনো মনে করেন যে, তারেক রহমানের মামলাগুলো উঠানো উচিত, সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চান তার রাজনৈতিক কর্মীদের সর্বশেষ মামলাটাও যেন তার আগে প্রত্যাহার হয়। একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে ওনার বক্তব্য-কোনোক্রমেই ওনার মামলা নিয়ে এই অবস্থায় কোনো ধরনের প্রত্যাহারের আলোচনা হোক-সেটি তিনি চান না।

তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে আসতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের নাগরিক। এক-এগারোর সময় তৎকালীন সরকার, আর্মি কেয়ারটেকার সরকার ওনাকে কাস্টোডিয়াল টর্চার করেন। যে টর্চারের কারণে তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওনার দেশে আসাটা একান্তই ওনার পারিপার্শ্বিক সবকিছু বিবেচনা করে, চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি মনে করি মামলার বিষয়গুলো ওনার আসা না আসার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ত নেই। তবে যেহেতু উনি আসবেন, দেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে যে, উনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে আসুক। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট যদি চিন্তা করেন তাহলে তারেক রহমানের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের মাঠে দরকার। দেশে আসার ব্যাপারে তিনি যথাসময়ে চিন্তাভাবনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপিসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সবার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার না হলে কখনোই একটা নিরপেক্ষ অবস্থা তৈরি হবে না। অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এসব রাজনৈতিক মামলা। স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

নেতারা আরও জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের কার্যক্রম অনেকটা ধীরগতির। এতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিগত ১৭ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দল ও মতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতেই অনেক সময়ক্ষেপণ হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের দেড় মাস পর বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব কমিটি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে মামলার তথ্য সংগ্রহ করবে। এর পর আইন মন্ত্রণালয় সেসব মামলা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আন্দোলনের ফসল হিসাবে সবাই স্বাধীনতা পেলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা এর ব্যতিক্রম। মামলার ফাঁদে আটকে পড়ে আছেন তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনো ১৬০টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে ৫টি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সবগুলো মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, যার কোনো ভিত্তি নেই। এখনো আদালতের বারান্দায় প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। আইনজীবী ও বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর গত ৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩ মামলায় ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৪৯২ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুধু গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে তিন মাসের মধ্যে সারা দেশে ১ হাজার ৬৪৫ মামলায় প্রায় ৭০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে পাইকারি গ্রেফতারের পাশাপাশি গণহারে মামলার সাজা দেওয়া শুরু হয়। ওই সময় প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ঢাকার বিভিন্ন আদালত। বিএনপি ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে এখনো অন্তত ৯০টি মামলা চলমান রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নামে প্রায় ৫০টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০টি, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৫০টি মামলা রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ৩৫৭টি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ১৮০টির বেশি, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ৪ শতাধিক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ৬০টি মামলা রয়েছে। প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর ৩১৫টি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর ২২৬টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের বিরুদ্ধে রয়েছে ২১২টি মামলা। একইচিত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও।

খালেদা জিয়ার মামলা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলা তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি অবস্থায় ৪টি মামলা হলেও বাকিগুলো পরবর্তী সরকারের আমলে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে সাজা হয়েছিল খালেদা জিয়ার, যা ৬ আগস্ট দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত ২১টি মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালাস পান। এখনো ১৬ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলমান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলার আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আরও রয়েছে-ঋণখেলাপির একটি মামলা, গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে ২ মামলা, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের মামলা বর্তমানে পেন্ডিং রয়েছে। এছাড়া ঢাকাসহ খুলনা, পঞ্চগড় ও কুমিল্লায় এখনো ৭টি মামলা।

তারেক রহমানের মামলা : বিএনপি ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৭ বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে ৮২টির বেশি মামলা হয়েছে। তবে মামলার পরিসংখ্যান যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এক-এগারো সরকারের সময়ে ১৭টি। যার অধিকাংশ মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে ৬৫টির বেশি মামলা হয়। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ১২টি মামলা খালাস ও প্রত্যাহারের তথ্য পেয়েছে । এছাড়া একটি মামলা বাদী তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে চারটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অভিযোগে মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, এসব মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারেক রহমানের নাম ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকার ষড়যন্ত্র করে তার নাম দিয়েছে।

রাজনীতি

“কোনো সরকারই কিন্তু শেষ সরকার নয়, মনে রাখতে হবে; আমাদের ক্ষেত্রে আমরাও শেষ সরকার ছিলাম না,” লন্ডনভিত্তিক একটি টেলিভিশন স্টেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি।

দেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ প্রয়োজন হলে বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়ে তার দলের প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার (০৩ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে এনডিসি ও এফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে এটি কখনোই হবে না।

তরুণদের দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? একবার আপনি কী করতে চান, তা বুঝতে পারলে আপনি তা করতে পারবেন, কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয় বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে। ’

প্রযুক্তিকে আলাদিনের চেরাগ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনি যদি ছাত্র বিপ্লবের দিকে তাকান, তবে এটি প্রযুক্তির বিষয়। তারা একে অন্যের সঙ্গে খুব দ্রুত যোগাযোগ করতে পারত। তাদের কোনো কমান্ড কাঠামো ছিল না।

ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের তরুণ যুবকরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। তরুণরা রাজনীতিবিদ নয় এবং কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়।

বিশ্ব শান্তির কথা উল্লেখ করে, ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী বলেন, বেশিরভাগ সময়, মানুষ শান্তির নামে একে অপরকে হত্যা করে।

তিনি বলেন, …কিন্তু আমরা প্রতিদিন, আমাদের সমস্ত উচ্চারণ ও আমাদের সমস্ত দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি। আমরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে শান্তি, সব দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয়, বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে এটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই। যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয়?

আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোতে শান্তি মন্ত্রণালয় ও যুদ্ধ মন্ত্রণালয় উভয় মন্ত্রণালয়ই রাখার ওপর জোর দেন।

তিনি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আত্মধ্বংসাত্মক গ্রহ। কেননা আমরা শুধুমাত্র নিজেদের হত্যা করার জন্য সবকিছু করেছি।

একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ গ্রহ ধ্বংস করতে পরিবেশ ধ্বংস করছে।

প্রতিদিন মানুষ গ্রহ ধ্বংস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একটি ভুল সভ্যতা তৈরি করেছি – আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন।