রাজনীতি

শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও মনে হয় এত জঘন্য অপরাধ করে নাই- এমন মন্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

মঙ্গলবার দুপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হওয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার বিষয়ে এক আলোচনা ও তথ্য প্রদর্শনীতে এ কথা বলেছিলেন তিনি। তার ওই বক্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

এরপর সন্ধ্যা সাতটা একত্রিশ মিনিটে ফেসবুকের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে আসিফ নজরুল এক পোস্টে লিখেছেন, শেখ হাসিনার নৃশংসতার সঙ্গে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করা ঠিক হয়নি।

তিনি লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার নৃশংসতা অবিশ্বাস্য। লাশ ও আহত মানুষকে আগুনে পোড়ানো, নির্বিচারে নারী-কিশোর-শিশু হত্যা, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে বেসামরিক মানুষ মারা, মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর তরুণকে গুলি করে মারা, হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।’

যুদ্ধের ময়দানেও এসব কর্মকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘কিন্তু তাই বলে তার নৃশংসতার সঙ্গে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করা ঠিক হয়নি আমার। দুটোই জঘন্যতম অপরাধ। আমার কথায় যারা ভেবেছেন আমি একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞকে ছোট করে দেখেছি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

রাজনীতি

“আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলব, যে অবিচার আমাদের উপর করা হয়েছে, দল হিসাবে আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতে–এ ধরনের কোনো বিচার দেখতে চাই না।”

রাজনীতি

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণবিক্ষোভ দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে কাতার ভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরা। তাদের অনুসন্ধানী দল ‘আই-ইউনিট’ গোপন টেলিফোন কথোপকথনের অডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা একটি ‘খোলা আদেশ’ জারি করে বিক্ষোভকারীদের ওপর যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং কেন্দ্র (এনটিএমসি) কর্তৃক রেকর্ড করা একটি কথোপকথনে হাসিনা তাঁর এক মিত্রকে বলেন, ‘আমি তো আগে থেকেই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে, সেখানেই গুলি করবে। আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম… ছাত্রদের কথা ভাবছিলাম।’

ওই ফোনালাপে হাসিনা আরও বলেন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে জটলা দেখবে, ওপর থেকেই—এখন ওপরে থেকেই হচ্ছে—এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। কিছু [বিক্ষোভকারী] নড়েছে।’

তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাবির শরীফ আই-ইউনিটকে জানান, ‘হেলিকপ্টার থেকে আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।’

তিনি জানান, অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে অস্বাভাবিক ধরনের গুলির ক্ষত ছিল।

‘বেশিরভাগ বুলেট কাঁধ বা বুকে ঢুকেছে এবং শরীরেই থেকে গেছে। তখন এমন ধরনের রোগী বেশি আসছিল। এক্স-রেতে দেখে আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম—বুলেটগুলো অনেক বড় ছিল।’

তবে কী ধরনের বুলেট ব্যবহৃত হয়েছিল, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি আল জাজিরা।

প্রসঙ্গত, হাসিনা টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারত পালিয়ে যান। তার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তাক্ত বিক্ষোভে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং ২০,০০০ জন আহত হন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

আল জাজিরা জানায়, ফোনালাপের অডিওগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কোনোভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, তা শনাক্তে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিশ্লেষণ করানো হয় এবং কণ্ঠস্বর মেলানোর মাধ্যমে বক্তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

আইসিটি ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা, তার দুই মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে। ২০২৫ সালের ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর আগস্টে তাদের বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব নজরদারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-ই রেকর্ড করেছে তাঁর একাধিক গোপন ফোনালাপ। আল জাজিরা জানায়, শুধু বিরোধী নয়, হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও গোয়েন্দা নজরদারি চালাত এনটিএমসি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় অন্য প্রান্ত থেকে বলা হতো, ‘এই বিষয়ে ফোনে কথা না বলাই ভালো।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ‘হ্যাঁ, জানি, জানি, জানি, এটা রেকর্ড হচ্ছে, কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি যোগ করেন, ‘অন্যদের জন্য উনি অনেক গভীর গর্ত খুঁড়েছিলেন, এখন সেই গর্তেই তিনি নিজেই পড়ে গেছেন।’

২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্ট ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করলে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের অভিযোগ ছিল, এই কোটা ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ব্যাহত হয়।

বিক্ষোভ আরও তীব্র হয় ১৬ জুলাই, যখন রংপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ নিহত হন। এটি ছিল জুলাই গণ-আন্দোলনের এক মোড় ঘোরানো ঘটনা।

হাসিনার উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমানের একটি গোপন ফোনালাপে তাকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়: ‘অটোপসি রিপোর্ট পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন? রংপুর মেডিকেল কী লুকোচুরি খেলছে?’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাকে পাঁচবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাল্টাতে বাধ্য করে পুলিশ, যেন একাধিক গুলিবিদ্ধের উল্লেখ না থাকে। তারা চেয়েছিল রিপোর্টে লেখা হোক—সাঈদ ভাই পাথরের আঘাতে মারা গেছেন। অথচ তিনি গুলিতে মারা যান।’

সাঈদ নিহত হওয়ার ১২ দিন পর তার পরিবারসহ ৪০টি নিহত পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে। এই বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করে সরকার।

সেখানে শেখ হাসিনা প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন এবং বলেন, ‘আমরা তোমাদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করব।’

সাঈদের বোন সুমি খাতুন সরাসরিই জবাব দেন, ‘ভিডিওতে তো দেখা গেছে পুলিশ গুলি করেছে। এখানে তদন্তের কী আছে? এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে।’

সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমাদের জোর করে গণভবনে আনা হয়েছে। না এলে অন্যভাবে হয়রানি করা হতো।’

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করেন, হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলেননি। এই ফোনালাপ হয় কৌশলে বাছাই করা, নয়তো সম্পাদিত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকার আন্তরিক। এ নিয়ে কোনো লুকোচুরি নেই।’

রাজনীতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়ার ওপর ৪৩টি মতামত ও সুপারিশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা পড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)সহ আটটি রাজনৈতিক দল, দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩৩ জন ব্যক্তি রয়েছেন। রয়েছেন বেশ কয়েকজন সাবেক আমলাও। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে কোনো মতামত জানায়নি। গত ১০ জুলাই ওই খসড়ার ওপর মতামত জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। গত ২৯ জুন এ খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছিল ইসি। যদিও বিএনপি নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর মতামত দিয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়ার বেশির ভাগ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। তবে দলীয় প্রধানের পাশাপাশি মহাসচিবের হেলিকপ্টার বা আকাশযানে নির্বাচনি প্রচার চালানোর সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। নির্বাচনের সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র অপব্যবহারের বিষয়টি আচরণ বিধিমালায় যুক্তের কথা বলেছে দলটি।

অপরদিকে খসড়া আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি নির্বাচনে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় কার্যক্রমে ব্যবহার নিষিদ্ধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে খসড়া বিধিমালায় কয়েকটি ধারা অস্পষ্ট বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। অন্যদের সুপারিশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার ও অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করবেন তারা। এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য কিছু সুপারিশ কমিশন আচরণ বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে বলে ধারণা তাদের। তারা আরও জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী খসড়া নিয়েও কাজ করছে কমিশন। আরপিও সংশোধনের ধরন অনুযায়ী বিধিমালায় পরিবর্তন আসার কথা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আরপিও সংশোধনের পর আচরণ বিধিমালা সংশোধন করা হয়। এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের আগেই আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণ বিধিমালার ওপর যেসব মতামত এসেছে, সেগুলো অ্যাড্রেস করা লাগবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ওইসব মতামত কম্পাইল করে কমিশনে জমা দেবেন। আগামী কমিশন সভায় সেই মতামতগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে কমিশন সভা হতে পারে। জানা গেছে, খসড়া আচরণ বিধিমালার ওপর যে ৪৩টি মতামত জমা পড়েছে তার মধ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের। দলগুলো হচ্ছে-বিএনপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ রক্ষণশীল দল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও সম্মিলিত গণতান্ত্রিক দল। টিআইবি ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) নামের দুটি প্রতিষ্ঠানও মতামত জমা দিয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ের ৩৩ জনের মধ্যে সাবেক আমলা ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা রয়েছেন।

রাজনৈতিক দলের মতামত : আরও জানা গেছে, বিএনপি প্রতিটি ধারা অনুযায়ী তাদের মতামত জানিয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছে। তবে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংজ্ঞায় ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। নির্বাচনি প্রচারে সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটির স্থলে তিনটি ক্যাম্প করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণাত্মক তথ্য, ভুল তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্ট) এবং প্রার্থী ও দলীয় নেতাদের চেহারা বিকৃত করে তৈরি করা কন্টেন্ট প্রচার নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে। বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করা হলে বিটিআরসি’র মাধ্যমে তা প্রচার নিষিদ্ধের বিষয়টি যুক্ত করার জন্য বলেছে। গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত নির্বাচনি ডায়ালগে যে দল যত সংখ্যক প্রার্থী দেবে, সেই অনুপাতে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ’র প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার বিধান তৈরি করা, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে গন্তব্যে নিরাপদে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করা, নির্বাচনি কর্মকর্তা ও প্রার্থী সংশ্লিষ্ট সবাইকে আচরণ বিধিমালা মানতে বাধ্য করার বিধান তৈরির প্রস্তাব করেছে।

বিকল্পধারা বাংলাদেশ তার প্রস্তাবে ব্যানার তৈরিতে রেক্সিন বা পিভিসি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। দলটি বিলবোর্ডে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার ঘোর বিরোধিতা করেছে। এর যৌক্তিকতা হিসাবে দলটি বলেছে, একটি নির্বাচনি আসনে ১০ জন প্রার্থী থাকলে ২০টি করে মোট ২০০টি বিলবোর্ড হতে পারে। এতে ঝামেলা বাড়বে। বিত্তবান প্রার্থীরা এর সুযোগ বেশি নেবে। এতে নির্বাচনি ব্যয় বেড়ে যাবে। এছাড়া দলটি ভোটার ছাড়া কেউ যাতে ভোটকেন্দ্রের ভেতর ও আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে না পারে, সেই বিধান আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে।

ব্যাপক সংশোধনীর প্রস্তাব টিআইবির : রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে টিআইবি। একই সঙ্গে খসড়া আচরণ বিধিমালার বিভিন্ন বিষয় অস্পষ্ট থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য পৃথক আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। এর যৌক্তিকতায় টিআইবি বলেছে, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে জড়িতরা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি প্রচারণাসহ রাজনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছে। এছাড়া প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ, ঋণ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য যাচাইয়ে অটোমেশন পদ্ধতি প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে ওই অটোমেশন পদ্ধতিতে হলফনামা যাচাই করার প্রস্তাব করেছে।

আচরণ বিধিমালায় সংশোধনীর বিষয়ে টিআইবির প্রস্তাবে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংজ্ঞায় প্রধান উপদেষ্টাকে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া বিধিমালায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নির্বাচনিী ও রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য একটি নতুন ধারা যুক্তের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। ওই ধারায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা, দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেওয়া এবং নির্বাচিতদের সম্পদ ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্তের কথা বলেছে। আচরণ বিধিমালার ধারা ১৩ তে একটি উপধারা যুক্ত করে সেখানে প্রচারণায় বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নির্বাচনি প্রচার বন্ধ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা কনসার্ট, ধর্মীয় মাহফিল বা জমায়েত ইত্যাদির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনি প্রচার না চালানোর নিয়ম অন্যতম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারসংক্রান্ত নতুন ধারা বা উপধারা যুক্তের প্রস্তাব করেছে টিআইবি। এ বিষয়ে সংস্থাটির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত নীতিমালায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে টিআইবি একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অপব্যবহারে প্রার্থী ও দলকে দায়ী করার বিধান যুক্তের কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের ঘটনায় ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের আগে তদন্ত শেষ করা এবং তদন্ত প্রতিবেদন ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করেছে। অনিয়মের ঘটনায় কোনো প্রার্থী বা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কারও পদ বাতিল করা হলে, ওই ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও সুনির্দিষ্ট যুক্তিসংবলিত প্রতিবেদন ইসির ওয়েবাসইটে প্রকাশের বিধান খসড়া আচরণ বিধিমালায় যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাজনীতি

জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তারা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বিক পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

আজ শুক্রবার চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী করেনি, করবেও না।

জামায়াত আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেগম পাড়া কিংবা পিসি পাড়া নাই। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি এবং যাবেও না। যারা দেশ ও জনগণকে ভালোবাসে না তারাই বিদেশে নিজেদের দ্বিতীয় ঠিকানা গড়ে তুলেছেন এবং তারা নিজেদের স্বার্থে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অপরদিকে দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপাত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। যার কারণে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।

পৃথিবীর একমাত্র অসাম্প্রদায়িক ধর্ম ইসলাম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয়ের কারণ আছে এজন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে তাদের মা-বোন যদি প্রয়োজনে বাজারে যেতে পারে, হাসপাতালে যেতে পারে, প্রয়োজনীয় মৌলিক সব কাজ করতে পারে তাহলে কেন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের চলাফেরায় বাঁধা সৃষ্টি হবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সকল ধর্মের নারী-পুরুষ সকলেই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্মের কিংবা লিঙ্গের বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সকলকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। সম্মেলন দারসুল কুরআন পেশ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মা’ছুম।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা কোনো ষড়যন্ত্রে থেমে যায়নি, যাবে না। একটি বৈষম্যহীন সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান এবং মো. শামছুর রহমান। এছাড়াও মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’

আজ বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি ১৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে’।

বৈঠকে অংশ নেওয়া সকল দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানান। তারা আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরও নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান।

বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির তানিয়া রব, ১২ুদলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স ও গণফোরামের মিজানুর রহমান অংশ নেন।

উল্লেখ্য, এর আগে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন।

রাজনীতি

মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বুধবার দিবাগত রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশান-২ নাম্বারের ৭৯ নাম্বার রোডের ১ নম্বর বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল নেওয়া হচ্ছে।

কিছুক্ষণ আগে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলেও জানানো হয়।

রাজনীতি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন দেরিতে হোক জামায়াতে ইসলামী সেটা চায় না। বাংলাদেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় আনতে হলে অবশ্যই একটি কার্যকর নির্বাচন লাগবে। আমরা আশা করছি, সেই নির্বাচন আগামী বছরের প্রথমদিকেই অনুষ্ঠিত হবে।

‘তবে অবশ্যই সেই নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। বিগত দিনের মতো যেনতেন আর বস্তাপচা কোনো নির্বাচন জামায়াতে ইসলামী মানবে না। কোনো মস্তানতন্ত্র চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং প্রশাসনকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ২০২৬ সালের প্রথমদিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল ৪টায় সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরের স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিভেদের বাংলাদেশ চায় না। মানবিকতা ও ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে চায়। সেই বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই, দেশবাসীকে পাশে চাই। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করার মাধ্যমে যদি ক্ষমতায় আসীন হতে পারে তাহলে দেশ গড়ার কারিগর হবেন এদেশের যুব সমাজ। দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, জনগণকে ঠকিয়ে কোনো রাষ্ট্রনায়ক সফল হতে পারেনি। অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতি করলে পালাতে হয়। জামায়াতে ইসলামীর ১১ জন নেতা হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলেছেন; কিন্তু কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি।

তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছতায় আবৃত ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারি গদি ছেড়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা শত নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেও দেশত্যাগ করেনি। কারণ জামায়াতে ইসলামী এ দেশকে ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসেজামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের মাটির নিচে-উপরে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। এত সম্পদ থাকার পরেও আমরা কেন স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। আমাদের কেবল চারিত্রিক সম্পদের অভাব। এই কারণেও স্বপ্নের দেশ গড়া সম্ভব হয়নি। গত ৫৪ বছরেও জনগণের দিকে কেউ ভালো করে ফিরে তাকায়নি। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি আর মাস্তান তন্ত্রসহ নিজেদের আখের গোছানো আর দলের শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী ছিলেন তারা। আগামীতে সেইদিন যাতে না আসে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি কাজী আবুল কাশেম, পৌর আমির কাজী জমির হোসাইন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ রুকন উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ নির্বাচনি আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মহানগর আমীর ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।

আরও বক্তব্য রাখেন- গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির জিন্নুর আহমদ চৌধুরী, পৌর শাখার ভারপ্রাপ্ত আমির রেহান আহমদ রায়হান, বিয়ানীবাজারের নায়েবে আমির মোস্তফা উদ্দিন ও আবুল খায়ের, আব্দুল হামিদ, সিলেট জেলা পূর্ব ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আদিল হোসেন প্রমুখ।

জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে বিপুলসংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরের পর থেকেই বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন শাখার খণ্ড খণ্ড মিছিল সমাবেশস্থলে পৌঁছে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।

রাজনীতি

জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে বলে কমিশন সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান।

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তাদের অনন্য ভূমিকা ও প্রচেষ্টার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি বৈঠক টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ায় সবাই এর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো দেখতে পাচ্ছেন। দেশ-বিদেশের মানুষ ব্যাপকভাবে এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। কাজেই পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। মানুষের কাছে এভাবেই দৃশ্যমান থাকতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে আটটি বিষয়ে আলোচনার পর ঐকমত্য হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন আলী রিয়াজ। এছাড়া আরও সাতটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আলোচনা চলমান আছে বলে জানান তিনি।

রাজনীতি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ। এ ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ‘দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রত্যাহারের দাবি করেছে দলটির নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এ দাবি করে জামায়াত।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শঙ্কিত নয়, উদ্বিগ্ন। অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় মনে হয় তাদের সঙ্গে গোপন কোনো শক্তি কাজ করছে।

তিনি গোপালগঞ্জের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মনে হয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই দুর্বল ও অসহায়। যার বাস্তবতা রাষ্ট্রের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ফুটে উঠেছে।

মিটফোর্ডের ঘটনার ধারাবাহিকতায় গোপালগঞ্জে হামলার সাহস দেখানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি ‘মিস্টার অসহায়’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিও জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গোপালগঞ্জের ঘটনাকে ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এনসিপি প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানোর পরও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কেন নিষ্ক্রিয় ছিল?

তিনি বলেন, জাতি কি এখনো ফ্যাসিবাদের জামানায় রয়েছে? কারণ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দলমতের লোকদের কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। সেই একই কায়দায় এনসিপির সমাবেশ পণ্ড করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের বাইরের অংশ নয়। বাংলাদেশেরই অংশ। তাই সরকারকে গোপালগঞ্জের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে বুঝতে হবে এটা হাসিনার বাংলাদেশ নয়; এটা ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার বাংলাদেশে সন্ত্রাস করার সুযোগ কেউ পাবে না। করলেও ছাড় পাবে না।

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ মুক্ত বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত ৭ দফা দাবি আদায়ে আগামী শনিবারের (১৯ জুলাই) জাতীয় সমাবেশে দেশবাসীকে দলে দলে যোগদানের আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সাবেক এমপি ড. এইচএম হামিদুর রহমান আজাদ প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে একটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।