অর্থনীতি

চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে একীভূত ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে, বলেন তিনি।

ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে একীভূত ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে বলে সোমবার চ্যানেল ২৪ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুর্বল ব্যাংকগুলো হল- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটির পর্ষদ সরাসরি চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণও পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে তার কাছে যায়। আর এক্সিম ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল শেখ হাসিনার সময়ের আরেক প্রভাব খাটানো ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের।

একীভূত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে এসব ব্যাংকের সম্পদ পর্যালোচনাও করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সোমবার রাতে প্রচারিত চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনে গভর্নর বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে এসব ব্যাংককে সরকারি মালিকানায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পুঁজি যোগান দেওয়া হবে। তারপর বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে।

“এটা আস্থার খবর কারণ এটা সরকারিকরণ করা হবে। সরকার সাময়িকভাবে এটাকে নিয়ে নেবে। একই সঙ্গে সেগুলোকে মূলধন যোগাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকতো ইতোমধ্যে তাদের তারল্য সহায়তা দিচ্ছে। তারপর আমরা শেয়ারগুলোকে আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করব; পুনর্গঠন হওয়ার পরে।”

তিনি বলেন, “পুনর্গঠনের সময়টায় আমরা অংশীদারত্ব রাখব। এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা, যেটা আমরা নতুন ব্যাংক করব। পরে সেটা নতুন বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করে দেওয়া হবে।”

এর আগে বিগত সরকারের আমলে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত বা মার্জার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে পট পরিবর্তনের পর সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।

দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করতে ২০২৪ সালে ব্যাংক দুটির পর্ষদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে একটি এমইউ চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল।

ওই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ সংকেতের পর ন্যাশনাল ব্যাংককে (এনবিএল) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে মার্জার হওয়ার বিষয়ে আপত্তি থাকায় তা বাতিল হয়ে যায়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে।

এর অধীনে দেউলিয়া হওয়া বা দেউলিয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংককে ‘ভালো করার স্বার্থে’ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় নিতে পারবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

দুর্বল ব্যাংককে ‘ভালো করার স্বার্থে’ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এরপরই দুর্বল ছয় ব্যাংককে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বললেন গভর্নর।

তিনি বলেন, ”আমরা পর্যায়ক্রমে যাব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমরা প্রথমটা সফলভাবে করতে পারলে আমরা পরেরটায় যাব। প্রথমটা থেকে আমরা শিক্ষা নেব কী ভুল হতে পারে। এটা ধাপে ধাপে হবে। এটা দুই-তিন মাসের ব্যাপার নয়। রেজুলেশনের প্রথম তিন মাস একটা কঠিন সময়।”

একীভূত করার পর ওই ব্যাংকে বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে তিনি বলেন, “নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী যারাই নেবেন তারা এটা সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা চাই এটার মূলধন বাড়বে, এটার তারল্য বাড়বে, প্রত্যেকটা গ্রাহক তার টাকা পাবে, গ্রাহকদের কোনো লোকসান হবে না।“

অর্থনীতি

নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এডিপিভুক্ত দীর্ঘদিনের পুরোনো ৪৫টি প্রকল্প। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এসব প্রকল্পে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কাজের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণের করের শত শত কোটি টাকার অপচয় হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, বরাদ্দের সামান্য অর্থে আগামী এডিপি সংশোধনের আগ পর্যন্ত কোনো কাজই করা যাবে না। এতে অর্থবছরের শুরুতেই কাজে দেরি হলে সেই ঘানি টানতে হবে শেষ পর্যন্ত। সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে কাক্সিক্ষত সুফল পেতেও অপেক্ষা করতে হবে বছরের পর বছর।

জিইয়ে রাখা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৩ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে এমন প্রকল্প আছে একটি। ১১ বছরের দুটি, ১০ বছরের চারটি, সাত বছরের তিনটি, চার বছরের সাতটি প্রকল্প। এছাড়া ছয় বছরের তিনটি, তিন বছরের আটটি এবং বাকি প্রকল্পগুলো রয়েছে এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। এসবের কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা একটা ব্যাড প্র্যাকটিস। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ হলে ভালো হতো। ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখা খারাপ। বরাদ্দ বন্ধ হলে প্রকল্প থেকে কোনো উপকার পাওয়া যায় না, সেটি তো প্রমাাণিত। সামান্য বরাদ্দ দিয়ে এগুলো বাঁচিয়ে রাখায় কারা উপকার পায়? আমরা জানি জনগণ তো অন্তত কিছু পায় না। তাহলে এই কাজ কেন হচ্ছে। এবার ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যতিক্রমী কিছু করবে। এ ধরনের অপচেষ্টা আর থাকবে না। কিন্তু নতুনত্ব কোথায়? কোনো পরিবর্তন এলো না। অল্প বরাদ্দের নামে যা দেওয়া হলো সেটারও অপচয় এবং ভবিষ্যতে অর্থ ঢালার পথও থেকেই গেল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার মাথায় নেই। আমি তো এডিপির পুরো বই মুখস্থ রাখিনি। এছাড়া এটা একক কোনো কাজ নয়। যৌথভাবে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এডিপি তৈরি হয়েছে। তবে কেন এত কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে সে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে জানাতে পারব।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্য্ইে চারবার সংশোাধন করতে হয়েছে। এরপরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মাত্র এক লাখ টাকা। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে ৯১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এত কম বরাদ্দের কারণ প্রসঙ্গে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পটি ১০ বছরের পুরোনো।

২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ আছে। এতেও বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে সামান্য বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে পরে সংশোধন বা মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যায়। একই অবস্থা রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পেও। তবে এটি তিনবার সংশোধন করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরে জুটেছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ। এটিও চলছে ১০ বছর ধরে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইআইবির ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন রেলপথ নির্মাণ এ্বং বিদ্যমান রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি। এটির মোট ব্যয় ৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা। এটি চলছে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। টেলিটক নেটওয়ার্ক বিটিএস সাইটের ডিসি পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেমের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সেবার মান উন্নয়ন প্রকল্পও পেয়েছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ।

এ বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হতে পারে। যাতে আগামীতে সুযোগ এলেই ব্যয় বৃদ্ধি বা মেয়াদ বাড়িয়ে আবারও বরাদ্দ নেওয়া যায়। এভাবে প্রকল্প চালু রাখলে সংশ্লিষ্টদের অনেক ধরনের লাভ হয়ে থাকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজন না থাকলে প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতে এগুলোর পেছনে বাড়তি খরচের আশঙ্কা থাকে না।

নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি প্রকল্প হলো, বারহাট্টা উপজেলায় শিশুপার্ক নির্মাণ। এতে বরাদ্দ তিন লাখ টাকা। কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটিতে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা। খুলনার ভৈরব নদীর তীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা।

আরও আছে, লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পাচ্ছে আট লাখ টাকা। জামালপুর নকশিপল্লী প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা। শেখ হাসিনা স্পেশালাইহজড জুট টেক্সটাইল মিলস এক লাখ টাকা। বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লিমিটেড প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চলে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা এবং চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা।

অর্থনীতি

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এবারের বাজেট দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে না। এমন বাজেট হবে, যা আগামী অর্থবছরের জন্য বোঝা হবে না। আমরা শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট করছি। এজন্যই আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার কমেছে।

রোববার জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সন্মেলন কক্ষে এ বৈঠক এবং ব্রিফিং হয়। এতে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অহেতুক ব্যয় কমানো হয়েছে। তবে আগামীতে আড়াই হাজার ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। সেজন্য তখন স্বাস্থ্য খাতে পরিচালন বরাদ্দও বাড়বে। শিক্ষকদের কল্যাণ ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে দেনা পরিশোধে বরাদ্দ থাকছে। আগামী বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করে সব ধরনের ঋণের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা, বাজেট বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং টেকসই অর্থনীতির বাজেট।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি যাতে শুরু থেকেই বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি নিয়ে এনইসিতে আলোচনা হয়েছে। সেই প্রচেষ্টা থাকবে।

অর্থনীতি

জাতীয় পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতা ব্যক্তি পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পর চাইলে তার মোট জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ এককালীন উত্তোলনের সুযোগ পাবেন।

বুধবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। সভায় পেনশন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম আরও গতিশীল এবং স্কিমগুলোকে আরও সহজ ও অংশগ্রহণমূলক করতে আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রবাস এবং প্রগতি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী অনেকের মাসিক আয় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এই দুটি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার হার দুই হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে প্রগতি স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের মাসিক আয় বেসরকারি খাতের কর্মকর্তাদের গড় মাসিক আয়ের চেয়ে বেশি, তাদের সুবিধার্থে মাসিক সর্বোচ্চ জমার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় চুক্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের প্রগতি পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের একটি ইসলামিক ভার্সন চালু করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

দেশে গ্রিন রেল পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে সরকার ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ে এই ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে আনুমানিক ব্যয় ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০২৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এই শেষ হবে।

মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে প্রকল্প ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে।

প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের অধীনে কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এবং তারপর সিজিপিওয়াই থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বে টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা পর্যন্ত প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন ভবন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, বিদ্যমান কার্যকরী ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা স্থানান্তরের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, কমলাপুর স্টেশনে মাল্টিমডাল পরিবহন হাব তৈরির জন্য স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ড পুর্ননির্মাণসহ প্রকল্পের জন্য ব্যয় করা হবে।

এছাড়াও, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড এবং বে টার্মিনাল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত রেল সংযোগ স্থাপন।

বাসস’র সাথে আলাপকালে, পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির একটি সভা করে যেখানে পরিকল্পনা কমিশন কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মূল ঋণ থেকে প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক অগ্রিম (পিপিএ) হিসাবে ৬০ লক্ষ ডলার প্রদানে রাজি হয়েছে।

প্রকল্পের অংশ হিসেবে, কমলাপুর এবং ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ‘মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’ নির্মাণের সুবিধার্থে বিদ্যমান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধাগুলো স্থানান্তরসহ স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ডগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।

ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড এবং বে টার্মিনাল পর্যন্ত রেল সংযোগ উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মালবাহী লোকোমোটিভ, ত্রাণ ট্রেন এবং পরিবহনের ক্রয় এবং রেল সংযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন মূল প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। গ্রিন রেল পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু হলে, কার্বন নির্গমন কম হবে যা পরিবেশ দূষণ কমাতেও সাহায্য করবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা বলেন, গ্রিন রেল পরিবহনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রেলওয়ে অবকাঠামোর যথাযথ উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের পাশাপাশি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিষেবার মান উন্নত করা।

উন্নত রেল পরিবহন ব্যবস্থা সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করবে, পরিবহন খরচ বহুগুণ কমাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহায়তা করবে এবং এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

এর আগে, বিশ্বব্যাংক ইস্যুকৃত এক পত্রে বলা হয়েছে, তারা মূল বিনিয়োগ প্রকল্পের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্পের অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে।

চলতি অর্থবছরের (২৫ অর্থবছর) জন্য সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে বিদেশি অর্থায়নে অপ্রকাশিত প্রকল্পগুলোর নতুন তালিকায় প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মধ্যে দুটি অর্থায়ন চুক্তি সই হয়েছে।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল এইচ. মার্টিন চুক্তিপত্রে সই করেন।

এদিন বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) বাস্তবায়নে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সামাজিক সুরক্ষা জোরদার প্রকল্প (এসএসপিআইআরআইটি) বাস্তবায়নে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়।

প্রকল্প দুটি যথাক্রমে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও অর্থ বিভাগ বাস্তবায়ন করবে।

বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি মাস থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত এবং এসএসপিআইআরআইটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল এ বছরের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত।

ঋণ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের (এসএআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারসহ বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল নির্মাণে গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) অনুমোদন হয়।

ওই দিন সভায় সুরক্ষা জোরদার প্রকল্পও (এসএসপিআইআরআইটি) অনুমোদন পায়। মোট অনুমোদন দেওয়া হয় ১৬টি প্রকল্প। যার মোট ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন চার হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

অর্থনীতি

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সকল কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা বলেন, ‘সিআইডির তদন্ত যখন ম্যাচিউর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল (আওয়ামী লীগ আমলে) তখন আগেই সিআইডিকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, (রিজার্ভ চুরিতে) বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা ইনভলভ আছে, তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়।’

‘এভাবে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছিল বলে আজকে সিআইডি থেকে আমরা জেনেছি। বাংলাদেশের যারা অপরাধের জন্য দায়ী ছিল তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য করণীয় ঠিক করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা আমরা জানতে চেয়েছি। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও বলেছি।’

এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নিউইয়র্কে বিচার চলমান। বাংলাদেশে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে নিউইয়র্কের বিচারের কোনো সমস্যা হবে কিনা, এই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের ল’ ফার্মের মতামত নেওয়া হবে এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা

ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে অনেকের নাম পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে দু-চার সপ্তাহ দেরি করেছিলেন। এগুলো তখন পত্রিকার রিপোর্টে এসেছে। আরও বেশ কয়েকজনের নাম বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছে।’

‘এটা তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের আমলে সীমাহীন রাজনীতি করা হয়েছে,’ বলেন তিনি। দুই সপ্তাহ পর এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। এ জন্য প্রয়োজনে পাচারকারীদের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে।

এস আলম ও বেক্সিমকোসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ দেশ থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং’ বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ‘আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট’ বলে একটা কথা আছে। সব জিনিসে সবসময় মামলায় দীর্ঘসূত্রিতায় যাওয়ার মানে হয় না। বিশ্বের অন্য দেশও আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কিছু উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আপসের মাধ্যমে হলে অনেক সময় পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনা যায়। তবে সবার আগে আমাদের দেশ থেকে কোন দেশে কী পরিমাণ অর্থ-সম্পদ পাচার হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য আগে সংগ্রহ করতে হবে। যত বেশি সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকবে ততবেশি দর কাষাকষি করার সুযোগ থাকবে।

বড় অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গভর্নর বলেন, অর্থপাচারকারীদের খোঁজ নিতে কিছু বেসরকারি ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা সেই সম্পদ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। তারপর তথ্য নিয়ে সে দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসব। অর্থ ফেরত আনতে হলে সে দেশের আইনি বিষয়টিও আমাদের মেনে চলতে হবে। তবে ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে এবং ভালোভাবে সহযোগীতাও করছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান বলেন, চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপ (এস আলম) দেশে থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি থেকে দেড় লাখ কোটি টাকার মতো পাচার করেছে। বেক্সিমকো গ্রুপসহ আরও কয়েকটি বড় গ্রুপের হিসাব করলে তার পরিমাণ প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা হবে। তাছাড়া দেশের নন পারফর্মিং প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার বড় অংশই পাচার হয়েছে বলে বাকি টাকা পাচার না হলেও আদায় করা সম্ভব হয়নি।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি আদায় না হওয়া এসব ঋণ অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে আদায় করা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এভাবে বিপুল অর্থ পাচার হওয়ার সুযোগ ছিল না। এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ধারণা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যদি দুদক বা রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা প্রমাণসহ আমাদের কাছে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন ভালো। আমাদের রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি, রপ্তানি আয় সব কিছুই ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকসহ যেসব বেসরকারি ব্যাংক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল সেসব ব্যাংকও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বলা যায়, ব্যাংকগুলো সংকট কাটিয়ে গ্রাহকদের আস্থার জায়গায় ফিরতে পেরেছে।

ড. আহসান এই মনসুর বলেন, মানি লন্ডারিংয়ে বাংলাদেশ একটা বড় ভিকটিম। এই দেশের ব্যাংকিং খাতে কতিপয় পরিবার বা গোষ্ঠী মানি লন্ডারিং করে সম্পদ চুরি করে বাইরে নিয়ে গেছে। আমরা সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’ রোগের উৎপত্তি রোধ করা প্রধান দায়িত্ব। রোগ সারানোর দায়িত্ব হচ্ছে পরে। চুরি হওয়ার পরে বুদ্ধি বাড়িয়ে লাভ নেই। চুরি হওয়ার আগেই ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনোভাবে অর্থ পাচার না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার যে উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য তা একেবারেই নতুন। পদ্ধতিগতভাবে এ ধরনের সমস্যা আগে মোকাবেলা করিনি। সেজন্য আমাদের অনেক শিখতে হচ্ছে। এটা তো দেশের আইনে হবে না। বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তাদের আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে হবে।

গভর্নর বলেন, আমাদের রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। রপ্তানি বাড়ছে। বিভিন্ন রকমের গোলযোগ আন্দোলন সত্ত্বেও রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়েনি, বাড়ছে। ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখতে পাচ্ছি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক। এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছি। সব মিলিয়ে ম্যাক্রো ইকোনমিক এক্সটারনাল সেক্টরে একটা স্বস্তির জায়গায় আমরা চলে এসেছি।

অর্থনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন।

এসময় দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধু প্রতিম দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে তার দেশের প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সংসদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার সমর্থন চেয়েছেন।

দুই নেতা জুলাইয়ের বিদ্রোহের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বের উপর জোর দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা এবং আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার প্রশাসনের পরিকল্পনা বর্ণনা করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে শাক, সবজি ও মুরগির দাম কমেছে। একই সঙ্গে আলু আগের দামে বিক্রি হলেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।

তবে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সবজি-মুরগির দাম কমার কারণ হিসেবে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, প্রথমতো, এবার রমজানে ও ঈদে বাজার ছিল বেশ স্থিতিশীল। তার ওপর গত সোমবার (৩১ মার্চ) ছিল ঈদুল ফিতর। ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করতে গেছেন। তাদের অনেকেই এখনো ফেরেননি। এ কারণে এখন ঢাকার বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের চাহিদা কিছুটা কম।

রাজধানীর বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কেজি প্রতি বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, পটল কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ টাকা, কচুর লতি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সজনে কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকা ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, কাঁচা আম ১৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁপের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে শিম ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৬০ টাকা পিস, বাঁধা কপি ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। তবে পাকা টমেটো কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সব ধরনের শাকের দাম কমেছে। বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ৩ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারগুলোতে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ৩২০ এবং সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।

অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইন মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কৈ ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।