খেলাধুলা

ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর সুতোয় ঝুলছে অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার দুয়ার এখনো খোলা রয়েছে তাদের জন্য।

তবে তা নির্ভর করছে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ম্যাচের ওপর।

গ্রুপ ওয়ান থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারত। গ্রুপের আরেক সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার জন্য সুযোগ আছে বাকি তিন দলেরই। আফগানিস্তানের জন্য অবশ্য সমীকরণটা কঠিন কিছু নয়। বাংলাদেশকে হারালেই সেমিফাইনালে উঠবে তারা। তবে হেরে গেলে বিদায় নিতে হবে আসর থেকে।

বাংলাদেশের জন্য রাস্তাটা বেশ কঠিন। উদাহরণ হিসেবে আগে ব্যাট করে টাইগাররা যদি ১৬০ রান করে, তাহলে সেমিতে যেতে হলে তাদের ৬১ বা এর বেশি রানে জিততে হবে। এছাড়া আফগানরা আগে ব্যাট করে যদি ১৬০ রান করে, তাহলে সেই রান ১৩ ওভারের মধ্যে পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। তবে অল্প ব্যবধানে হারলে সেমিতে চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া।

তাই আজ ভোরের ম্যাচে বাংলাদেশের জন্যই গলা ফাটাবে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের বিপক্ষে হারের পর এমনটাই জানিয়ে গেলেন অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ। প্রেজেন্টেশনে টাইগারদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ” কাম অন, বাংলাদেশ ” ! 

সুপার এইটে ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বর গ্রুপের দুইয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া (রানরেট -০.৩৩৭)। এক ম্যাচ কম খেলে তিনে আফগানিস্তান (রানরেট -০.৬৫০)। আর পয়েন্টের খাতা খুলতে না পারায় সবার শেষে বাংলাদেশ (রানরেট -২.৪৮৯)।

এদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ঘরের মাঠে আফগানদের ৯ উইকেটে হারায় টাইগাররা।

খেলাধুলা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সোমবার মুখোমুখি হয় দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত-অস্ট্রেলিয়া।

এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সমীকরণ ছিল ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে ৫৫ রানের ব্যবধানে হারাতে পারে আর নিজেদের ম্যাচে আফগানদের মাত্র ১ রানে হারাতে পারে তাহলে সেমিফাইনালে চলে যাবে টাইগাররা।

কিন্তু ভারত ২০৫ রানের পাহাড় গড়েও অস্ট্রেলিয়াকে ২৪ রানের বেশি ব্যবধানে হারাতে পারেনি। ভারত ২৪ রানের জয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যায়।

আজ ভোর সাড়ে ৬টায় আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ১৬০ রান করে আফগানদের ৬২ বা তার বেশি রানে হারাতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের মতো ২ পয়েন্ট করে নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালে চলে যাবে।

খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক জয়ে দারুণ জমে উঠেছে সুপার এইটের গ্রুপ-১ থেকে টি ২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই। চার দলের সামনেই যেমন সেমির দুয়ার খোলা, তেমনি চার দলেরই হয়েছে বাদ পড়ার শঙ্কা। আফগানদের জয় টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। তবে টানা দুই হারের পাশাপাশি নেট রানরেটেও অনেক পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশের জন্য সেমিতে ওঠার সমীকরণ সবচেয়ে কঠিন। সম্ভাবনায় এগিয়ে গ্রুপের অন্য তিন দল।

প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পাশাপাশি রানরেটও সমৃদ্ধ হওয়ায় সেমিতে কার্যত এক পা দিয়ে রেখেছে ভারত। একটি করে জয় ও হারে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের পয়েন্ট সমান দুই করে। রানরেটে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও শেষ ম্যাচে তাদের দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। সেন্ট লুসিয়ায় আজ টিকে থাকার কঠিন লড়াইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। আগামীকাল সকালে সেন্ট ভিনসেন্টে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে লড়বে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। এ দুই ম্যাচের ফলই ঠিক করে দেবে সেমিফাইনালের দুই দল। চার দলের সমীকরণটা দেখে নেওয়া যাক-

যদি অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান জেতে

সেক্ষেত্রে তিন দলের পয়েন্ট হবে সমান চার। অস্ট্রেলিয়া যদি ভারতের বিপক্ষে এক রানে জেতে, তাহলে নেট রানরেটে তাদের পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৬ রানে জিততে হবে আফগানিস্তানকে। আর ভারতের বিপক্ষে রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া যদি শেষ বলে জেতে, তাহলে বাংলাদেশের বিপক্ষে আনুমানিক ১৬০ রানের লক্ষ্যে ১৫.৪ ওভারের মধ্যে জিততে হবে আফগানদের।

ভারতকে ছিটকে দিতে হলে নিজেদের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানকে বড় ব্যবধানে জিততে হবে। ভারতের বিপক্ষে ৪১ রানে জিতলে রানরেটে তাদের টপকে যেতে পারবে অস্ট্রেলিয়া। তখন ভারতকে বিদায় করে সেমিতে উঠতে বাংলাদেশের বিপক্ষে অন্তত ৮৩ রানে জিততে হবে আফগানিস্তানকে।

যদি ভারত ও বাংলাদেশ জেতে

এক্ষেত্রে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষ দল হিসাবে সেমিফাইনালে উঠবে ভারত। বাকি তিন দলের পয়েন্ট হবে সমান তিন করে। তখন নেট রানরেটে বির্ধারিত হবে গ্রুপের দ্বিতীয় দল। আপাতত তিন দলের মধ্যে রানরেটে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তান যদি বাংলাদেশের কাছে এক রানে হারে, তাহলে রানরেটে আফগানদের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হবে ৩১ রানে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের চেয়ে রানরেটে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশকে জিততে হবে ৩১ রানে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে কামনা করতে হবে, অস্ট্রেলিয়া যেন ভারতের কাছে অন্তত ৫৫ রানে হারে। এ দুই সমীকরণ মিললেই শুধু সেমির টিকিট পাবে বাংলাদেশ।

যদি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ জেতে

এক্ষেত্রে চার পয়েন্ট করে নিয়ে সেমিতে উঠবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। দুই পয়েন্ট করে নিয়ে বিদায় নেবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।

যদি ভারত ও আফগানিস্তান জেতে

ছয় পয়েন্ট নিয়ে ভারত ও চার পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে জায়গা করে নেবে আফগানিস্তান। দুই পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও শূন্য হাতে বিদায় নেবে বাংলাদেশ।

যদি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়

দুটি ম্যাচই যদি পরিত্যক্ত হয়, সেক্ষেত্রে রানরেটে আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকায় সেমিতে ভারতের সঙ্গী হবে অস্ট্রেলিয়া। যদি শুধু ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়, তখন বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলে সেমিতে ভারতের সঙ্গী হবে আফগানিস্তান। আর আফগানিস্তান হারলে সেমিতে উঠবে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে ভারতের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প থাকবে না অস্ট্রেলিয়ার সামনে। অস্ট্রেলিয়া হারলে সেমিতে উঠবে আফগানিস্তান।

খেলাধুলা

ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিল বাংলাদেশ। সুপার এইটে তিন ম্যাচের মধ্যে টানা দুই ম্যাচে সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

শনিবার ওয়েষ্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডে আগে ব্যাট করে হার্দিক পান্ডিয়া, বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্থ, শিবম দুবে ও রোহিত শর্মার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ভারত।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে কুলদীপ যাদব, জসপ্রিত বুমরাহ ও আর্শদীপ সিংদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগাররা। ৫০ রানের জয় পায় ভারত। এই জয়ে বাংলাদেশকে বিদায় করে সেমিফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গেল ভারত।

এদিন টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমেই একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন ভারতীয় দুই তারকা ওপেনার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। রোহিতকে আউট করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে দলীয় ৩৯ রানে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। তার আগে মাত্র ১১ বলে তিনটি চার আর এক ছক্কায় করেন ২৩ রান।

রোহিত আউট হওয়ার পর ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার লাগাম টেনে ধরেন তানজিম হাসান সাকিব।তানজিমের বল ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন বিরাট কোহলি। তিনি থেমেছেন ২৮ বলে এক চার আর তিন ছক্কায় ৩৭ রান করে।

চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান সূর্যকুমার যাদব। পরের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। তানজিমের শর্ট লেংথের বলে আউটসাইড-এজের পর ধরা পড়েছেন উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে। তার বিদায়ে ৮.৩ ওভারে দলীয় ৭৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত।

সূর্যকুমার যাদব আউট হওয়ার পর উইকেটে সেট হয়ে ব্যাটিং তাণ্ডব চালতে থাকেন ঋষভ পন্থ। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাওয়া ভারতীয় এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানকে আউট করেন রিশাদ হোসেন। তার লেগস্পিন বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন পন্থ। তার বিদায়ে ১১.৪ ওভারে ১০৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত।

এরপর হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৫৩ রানের ‍জুটি গড়েন শিবম দুবে। ১৭.২ ওভারে দলীয় ১৬১ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে শিবম দুবেকে সাজঘরে ফেরান রিশাদ হোসেন। তার আগে ২৪ বলে তিন ছক্কায় ৩৪ রান করেন দুবে।

ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ২৭ বলে তিন ছক্কা আর চারটি বাউন্ডারির সাহায্যে অপরাজিত ৫০ রান করেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার ফিফটিতে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ভারত।

বাংলাদেশ দলের হয়ে ৪ ওভারে ৩২ রানে ২ উইকেট নেন তরুণ তারকা পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ৩ ওভারে ৪৩ রানে ২ উইকেট নেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ৩ ওভারে ৩৭ রানে মাত্র ১ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। ৪ ওভারে ২৮ রান খরচ করেন শেখ মাহেদি হাসান। ৪ ওভারে ৪৮ রান খরচ করে কোনো সাফল্য পাননি মোস্তাফিজুর রহমান। ২ ওভারে মাত্র ৮ রান খরচ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪.৩ ওভারে দলীয় ৩৫ রানেই ফেরেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। তিনি ১০ বলে এক চার আর এক ছক্কায় ১৩ রান করে ফেরেন। তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ফের ৩১ রানের জুটি গড়ে ফেরেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। তিনি ৩১ বলে চার বাউন্ডারিতে ২৯ রান করে ফেরেন।

চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ বলে মাত্র ৪ রানে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। ১৩.২ ওভা ৩ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৯৮ রান। এরপর একের পর এক উইকেট পতনের কারণে শেষ ৪০ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৮ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে ছন্দ পতনের কারণে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগাররা। দলের হয়ে ৩২ বলে এক চার আর তিন ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মাত্র ১০ বলে এক চার আর তিন ছক্কায় ২৪ রান করেন রিশাদ হোসেন। ৩১ বলে ২৯ রান করেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।

ভারতের হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রানে ২ উইকেট নেন জসপ্রিত বুমরাহ। ৪ ওভারে ৩০ রানে ২ উইকেট নেন আর্শদীপ সিং। ৩ ওভারে ৩২ রানে এক উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া।

খেলাধুলা

হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্ব শুরু করলো বাংলাদেশ। আজ সুপার এইটে গ্রুপ-১এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রান করেবাংলাদেশ। দলের পক্ষে ২৮ বলে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন তাওহিদ হৃদয়। বল হাতে এ ম্যাচে হ্যাট্টিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স। জবাবে ১১ দশমিক ২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বৃষ্টির কারনে তৃতীয়বারের মত খেলা বন্ধ হয়। তখন বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে এগিয়ে ছিলো অসিরা। এমন অবস্থায়ন  আর খেলা মাঠে না গড়ারে  বৃষ্টি আইনে ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগায়  স্যার ভিভিয়ান রিচাডর্স স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া।
ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ হাসান। দলের রানের খাতা খোলার আগেই  ফিরেন তানজিদ। চলতি বিশ^কাপে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি দুই অংকের কোটা  স্পর্শ  করতে পারেনি।

শুরুতেই উইকেট হারানো পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

দু’জনের জুটিতে পাওয়ার প্লেতে ৩৯ রান পায় বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারে বাংলাদেশের রান ও জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়।

পরের ওভারে স্পিনার এডাম জাম্পার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন ২টি চারে ২৫ বলে ১৬ রান করা লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ৪৮ বলে ৫৮ রান যোগ করেন লিটন।

লিটনের বিদায়ে পিঞ্চ হিটার হিসেবে চার নম্বরে  নেমে ২ রানে আউট হন রিশাদ হোসেন। কিছুক্ষণবাদে এ অবস্থায় উইকেটে সেট হয়ে সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক শান্ত। জাম্পার বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে লেগ বিফোর আউট হন তিনি। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪১ রান করেন শান্ত।

১৩তম ওভারে দলীয় ৮৪ রানে শান্তর বিদায়ের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় বেশি দূর যেতে পারেননি তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান। দলের রান ১শ পার হবার পর টি-টোয়েন্টি এক নম্বর অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিসকে বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে  আউট হন ১০ বলে ৮ রান করা  সাকিব। ১৯ বলে ১৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। সাকিব ফেরার ওভারেই পরপর দু’টি ছক্কা মারেন হৃদয়।

প্যাট কামিন্সের করা ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদুল্লাহ ২ এবং জাকের আলির পরিবর্তে খেলতে নামা মাহেদি হাসান শূণ্যতে আউট হন। এতে হ্যাট্টিকের সুযোগ তৈরি হয় কামিন্সের। ২০তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়কে শিকার করে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া কামিন্স।

দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাট্টিক করলেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বোলার হিসেবে ২০০৭ সালের বিশ^কাপে প্রথম হ্যাট্টিক করেছিলেন পেসার ব্রেট লি। সেটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ইতিহাসে এটি সপ্তম হ্যাট্টিক।

২টি করে চার-ছক্কায় বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ বলে ৪০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন হৃদয়। শেষ দিকে তাসকিন আহমেদের ৭ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার কামিন্স ২৯ রানে ৩টি, জাম্পা ২৪ রানে ২টি উইকেট নেন।

১৪১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট তুলে নিতে পারতো বাংলাদেশ। পেসার তানজিম হাসান সাকিবের করা  ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেন হৃদয়। ৫ রানে জীবন পেয়ে সতীর্থ ট্রাভিস হেডকে নিয়ে ঝড় তোলেন ওয়ার্নার। পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান যোগ করেন তারা। সপ্তম ওভারে নামে বৃুিষ্ট।  প্রায় ৩০ মিনিট বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হলে, প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২১ বলে ৩১ রান করা হেডকে বোল্ড করেন রিশাদ।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শকে ১ রানে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রিশাদ। ৪ রানের ব্যবধানে  ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অসিরা।

৬৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে দ্রুত রান তুলতে থাকেন ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েল। ১৫ বলে ৩১ রান তুলে ফেলেন তারা।

১২তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন ওয়ার্নার।  এরপর আবারো বৃষ্টি নামলে বন্ধ হয় খেলা। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ১১ দশমিক ২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান।  এমন অবস্থায়  বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে এগিয়ে ছিলো অসিরা। এরপর বৃষ্টির মাত্রা  আরো বেড়ে গেলে খেলা সম্ভভ না হওয়ায়ন  বৃষ্টি আইনে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ওয়ার্নার ৩৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ১টি করে চার-ছক্কায় ৬ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। বাংলাদেশের রিশাদ ২৩ রানে ২ উইকেট নেন।

আজ সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে।

বাংলাদেশ ইনিংস :

তানজিদ হাসান ব স্টার্ক ০
লিটন দাস ব জাম্পা ১৬
নাজমুল হোসেন শান্ত এলবিডব্লু ব জাম্পা ৪১
রিশাদ হোসেন ক জাম্পা ব ম্যাক্সওয়েল ২
তাওহিদ হৃদয় ক হ্যাজেলউড ব কামিন্স ৪০
সাকিব আল হাসান ক এন্ড ব স্টয়নিস ৮
মাহমুদুল্লাহ ব কামিন্স ২
মাহেদী হাসান ক জাম্পা ব কামিন্স ০
তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ১৩
তানজিম হাসান সাকিব অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-১১) ১৪
মোট (২০ ওভার) ১৪০/৮     
উইকেটের পতন : ১-০ (তানজিদ), ২-৫৮ (লিটন), ৩-৬৭ (রিশাদ), ৪-৮৪ (নাজমুল), ৫-১০৩ (সাকিব), ৬-১২২ (মাহমুদুল্লাহ), ৭-১২২ (মাহেদী), ৮-১৩৩ (হৃদয়)।

অস্ট্রেলিয়া বোলিং :
স্টার্ক : ৪-০-২১-১ (ও-২),
হ্যাজেলউড : ৪-১-২৫-০ (ও-১),
কামিন্স : ৪-০-২৯-৩ (ও-৩),
জাম্পা : ৪-০-২৪-২,
স্টয়নিস : ২-০-২৪-১ (ও-১),
ম্যাক্সওয়েল : ২-০-১৪-১।

অস্ট্রেলিয়া ইনিংস :
ডেভিড ওয়ার্নার অপরাজিত ৫৩
ট্রাভিস হেড ব রিশাদ ৩১
মিচেল মার্শ এলবিডব্লু ব রিশাদ ১
ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত ১৪
অতিরিক্ত (লে বা-১) ১
মোট (১১.২ ওভার) ১০০/২
উইকেট পতন : ১-৬৫ (হেড), ২-৬৯ (মার্শ)।

বাংলাদেশ বোলিং :
মাহেদি : ৪-০-২২-০,
তানজিম : ১-০-৯-০,
তাসকিন : ১.২-০-২২-০,
মুস্তাফিজুর : ২-০-২৩-০,
রিশাদ : ৩-০-২৩-২।
ফল : অস্ট্রেলিয়া বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে জয়ী।

খেলাধুলা

চলতি ২০২৪ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রশংসা করাই যায়। টাইগারদের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটাররা রীতিমতো চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। তানজিম হাসান সাকিব-মোস্তাফিজুর রহমানরা উইকেট নিচ্ছেন পাল্লা দিয়ে।

রেকর্ড গড়তে তানজিম সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার বেছে নিলেন নেপালকেই। তাদের রেকর্ড গড়ার দিনে সেন্ট ভিনসেন্টে এদিন নেপালের ব্যাটিং লাইন-আপ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। তানজিম সাকিব ও ফিজ নিয়েছেন ৪ ও ৩ উইকেট। দুজনেই ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করেছেন ও ৭ রান করে দিয়েছেন।

২১ ডট দিয়ে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ডট দেওয়ার কীর্তি গড়েছেন তানজিম সাকিব। মোস্তাফিজ দিয়েছেন ২০ ডট। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইনিংসে ডটের হিসেবে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তানজিম সাকিব ও ফিজের উইকেট এখন ৯ ও ৭। কিপ্টে বোলিংয়ের কারণে দুজনেই সেরা দশে উঠে এসেছেন। তিন ও সাতে অবস্থান করছেন তানজিম সাকিব ও মোস্তাফিজ। বাংলাদেশ সুপার এইটে আরও উইকেট নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এই দুই বোলার।

১২ উইকেট নিয়ে ২০২৪ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ফজল হক ফারুকি। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফারুকি করেছেন এবারের বিশ্বকাপে। তার দুর্দান্ত বোলিংই মূলত উগান্ডা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানদের বিশাল জয় পেতে দারুণ অবদান রেখেছে। তানজিম সাকিবের সমান ৯ উইকেট নিয়েছেন এনরিখ নরকীয়া ও অ্যাডাম জাম্পা। ইকোনমির কারণে নরকীয়া ও জাম্পা অবস্থান করছেন দুই ও চারে।

নুয়ান থুসারা ও আলজারি জোসেফ নিয়েছেন ৮টি করে উইকেট। যেখানে শ্রীলংকা এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গেছে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার এইটে উঠেছে। থুসারার বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও উইকেট সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে জোসেফের।

খেলাধুলা

ব্যাটাররা খুব বড় পুঁজি এনে দিতে পারেননি। কিন্তু এমন উইকেটে সেটাই ছিল যথেষ্ট! শুরুতে বল হাতে দাপট দেখালেন তানজিম হাসান সাকিব।

অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে শেষের কাজটা সুনিপুণভাবে করেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। তাতে নিশ্চিত হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুপার এইটে খেলা। আর্নস ভ্যালে স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ১০৬ রানের পুঁজি নিয়েও নেপালকে ২১ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।
নেপালের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেওয়ার নায়ক তানজিম। ডানহাতি এই পেসারকে দিয়ে ৪ ওভারের টানা স্পেল করান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তানজিমও তাকে হতাশ করেননি। ২ মেডেনসহ স্রেফ ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি।

নেপালকে আটকাতে হলে শুরু থেকেই চাপ সৃষ্টি করতে হতো। যদিও প্রথম দুই ওভারে কোনো উইকেট পায়নি। তবে তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। দ্বিতীয় বলে কুশল ভুর্তলকে ফুলটস ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ডানহাতি এই পেসার। তার চতুর্থ বলটি মিডঅফের ওপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন অনিল শাহ। কিন্তু ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। ডাবল উইকেটের ওভারটি তানজিম শেষ করেন মেডেন দিয়ে।

চতুর্থ ওভারে অবশ্য খরুচে ছিলেন তাসকিন। ১১ রান খরচ করেন তিনি। তবে পঞ্চম ওভারে এসে নেপালের অধিনায়ক রোহিত পৌড়েলের উইকেট তুলে নেন তানজিম। এর আগে যদিও দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় দুজনের মধ্যে। সেই রেশ টিকল না খুব বেশিক্ষণ। তানজিমের বলে পয়েন্টে থাকা রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১ রান করা রোহিত।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আসিফ শেখকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। আর নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে সন্দ্বীপ জরাকে শিকার করেন তানজিম। রোহিতের মতো সন্দ্বীপও ধরা পড়েন পয়েন্টে থাকা রিশাদের হাতে।

বিপর্যয়ে থাকা নেপালের এরপর হাল ধরেন কুশল মল্লা ও দীপেন্দ্র সিং ঐরী। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে পঞ্চম উইকেটে ৫২ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন তারা। সেই জুটি ভাঙে শান্তর হাতে এসে। ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে মল্লার (২৭) দারুণ এক ক্যাচ নেন তিনি। পরের ওভারে গুলশান ঝাকে ফেরান তাসকিন। ১৯তম ওভারে এসে কোনো রানই দেননি মোস্তাফিজ। একইসঙ্গে শেষ বলে শিকার করেন ২৫ রান করা দীপেন্দ্রর উইকেট। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ৭ রান খরচে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার। শেষ ওভারে এসে প্রথম দুই বলেই দুই উইকেট নেপালের ৮৫ রানে ইনিংসের ইতি ঘটান সাকিব।

ডি গ্রুপ থেকে এর আগে সুপার এইট নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের সঙ্গী হতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সম্পাল কামির বাউন্সার ডাউন দ্য উইকেটে এসে পুল করতে যান তানজিদ হাসান তামিম। কিন্তু টাইমিং ঠিকঠাক হয়নি, বোলারের কাছেই ক্যাচ দেন তিনি। প্রথম ওভার থেকে আসে স্রেফ ৩ রান।

দ্বিতীয় ওভারেও উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার বোল্ড হয়ে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দীপেন্দ্র সিংয়ের বলে আউট হওয়ার আগে ৫ বলে ৪ রান করেন তিনি।

মাঝে দুই ওভার বাদ দিয়ে আবার উইকেট এনে দেন সম্পাল। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে লিটন দাসকে ফেরান তিনি। তার বলে পুল করতে গিয়ে আসিফ শেখের হাতে ক্যাচ দেন লিটন। ১২ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

পাওয়ার প্লের আগেই তাওহীদ হৃদয়কেও হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। রোহিত পোডেলকে সুইপ করতে গেলে বল বাতাসে ভেসে যায়। হৃদয়ের দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন সন্দীপ লামিচানে। ৭ বলে ৯ রান করে আউট হন হৃদয়।

পাওয়ার প্লেতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের জুটিটিই ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় ভরসা। দুজন মিলে দলকে দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর বার্তাও। কিন্তু হুট করেই ফের ঘটে ছন্দপতন!

কিন্তু ২০ বলে দুজনের ২২ রানের জুটি ভাঙে হতাশার রান আউটে। সাকিব আল হাসান ফুলটস বল পাঠিয়েছিলেন এক্সট্রা কাভারে। দৌড়ও শুরু করেছিলেন, কিন্তু হঠাৎ তার মনে হয় বলের কাছাকাছি আছেন ফিল্ডার। সাকিব ফেরত পাঠান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। কিন্তু তিনি ফেরার আগেই নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙে। ১৩ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফেরত যান রিয়াদ।

তার আউট হওয়ার পর মাথায় হাত দিয়ে হতাশায় বসে পড়েন সাকিব। কিন্তু এরপর নিজেও দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস টানতে পারেননি। রোহিত পোডেলের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ২২ বলে ১৭ রান করেন সাকিব। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি।

১৪তম ওভারের প্রথম বলে সন্দীপ লামিচানে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তানজিম হাসান সাকিবকে। রিভিউ নিয়ে ওই বলে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু পরের বলে আরও এক গুগলিতে বোল্ড হয়ে যান ৫ বলে ৩ রান করে।

এরপর বাংলাদেশের জন্য শেষ ভরসা ছিলেন জাকের আলি। অনেকগুলো বলও খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু জাকেরও লামিচানের গুগলি না বুঝতে পেরে বোল্ড হয়ে যান। ২৬ বল খেলে ১২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

তার বিদায়ের পর রিশাদ একটু আশা জাগিয়েছিলেন। কুশল ব্রুথালকে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা ও দ্বিতীয়টিতে চার হাঁকান তিনি। ওই ওভার থেকে আসে ১৩ রান। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলেই লং অফে ক্যাচ দেন রিশাদ।

বাংলাদেশের একশ রানের আশাও তখন মনে হচ্ছিল দূরের কল্পনা। তবে শেষ উইকেট জুটিতে মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ ১৪ বলে ১৮ রান করলে একশ ছাড়াতে পারে বাংলাদেশ। ‍তৃতীয় বলে মোস্তাফিজ রান আউট হলে জুটি ভাঙে। ১৫ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন তাসকিন। নেপালের হয়ে দুই উইকেট করে নেন সম্পাল, লামিচানে, রোহিত ও দীপেন্দ্র।

ব্যাটারদের ব্যর্থতাকে ঢেকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত আলো ছড়ালেন বোলাররা। যার ফলে প্রথম আসরের পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে খেলার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। ঈদের দিনে এমন বাড়তি আনন্দই তো চেয়েছিলেন সমর্থকরা।

খেলাধুলা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এসেছিল কম প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু সুপার এইটের প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই জিতেছে তারা।

তাদের সুপার এইট এখন অনেকটাই নিশ্চিত। শুধু শেষ ম্যাচে নেপালকে হারালেই চলবে। হারলেও সেটি হতে হবে অল্প ব্যবধানের।

বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে অবিশ্বাস্য লড়াই করেছে নেপাল। তারা ম্যাচ হেরেছে স্রেফ ১ রানে। বাংলাদেশের জন্যও তাই আছে ভয়ের কারণ। যদিও নেপাল এখন অবধি কখনো হারাতে পারেনি টেস্ট খেলুড়ে দেশকে। কাল কি বাংলাদেশের সুপার এইটে উঠার স্বপ্ন ভেস্তে দেবে তারা?

উত্তরে দলটির কোচ মন্টি দেশাই বলেন, ‘আমরা আমাদের গল্প তৈরি করছি। কারো পার্টি ভেস্তে দেওয়ার ব্যাপারে তাই ভাবছি না। কিন্তু ড্রেসিংরুমে বার্তা দেওয়া হয়েছে- আমরা একটা কল্পনার জগতে বাস করছি, যার সীমা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অতিক্রম করেছি। আমাদের তিন পয়েন্ট আছে, আর আমরা সুপার এইটের জন্য লড়ছি (এমন যেন ভাবে সবাই)। ’

‘যদি আগামীকাল ও মানসিকতাটা রাখতে পারি। আর লড়াই, শেষ অবধি লড়াই করতে পারি, সীমাটা অতিক্রম করতে পারি, তাহলে গর্ব নিয়ে ফিরে যেতে পারবো। এরপর হয়তো অন্য ম্যাচের যদি-কিন্তু নিয়ে ভাববো। কিন্তু হ্যাঁ, আমরা নিজেদের মেলে ধরতে চাই। ’

নেপালের বিপক্ষে ৭ উইকেট হারিয়ে কেবল ১১৫ রান করতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলটির স্পিনারদের সামলানো বেশ মুশকিল ছিল প্রোটিয়া ব্যাটারদের জন্য। বাংলাদেশের বিপক্ষেও কি তেমন কিছু হবে? নেপালের কোচ বলছেন, ভারসম্য থাকবে তাদের বোলিং। প্রত্যাশা জানিয়েছেন ব্যাটারদের কাছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ভারসম্য রাখার চেষ্টা করছি পেসার ও স্পিনারদের মধ্যে। আমরা এখন অবধি দেখেছি স্পিন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, ক্যারিবীয়ানে আমার অতীত অভিজ্ঞতাও একই। কিন্তু আমাদের দলে ভারসম্য আছে। কাল উইকেট ও কন্ডিশনে যা দেখাবে, ওই অনুযায়ীই আমরা নিজেদের চ্যালেঞ্জ দেখাবো। ’

‘আমি যেটার দিকে খুব বেশি তাকিয়ে আছি তা হচ্ছে আমাদের ব্যাটাররা যেন আরেকটু সাহস দেখায়, চ্যালেঞ্জ নেয় ও লড়াই করে। আমি জানি নেটে অনেক বেশি দেখেছি আপনারা মাঠে যা দেখেছেন তার চেয়ে। আমি সত্যিই চাইবো তারা যেন সেটা কাল মাঠে দেখায়। ’

খেলাধুলা

ব্যাটিংয়ে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। তার হাফ সেঞ্চুরি, তানজিদ হাসান তামিম ও জাকের আলীর ব্যাটের রানে বাংলাদেশ পায় ভালো সংগ্রহ।

কিন্তু একটা সময় অবধি বেশ ভালোভাবেই লড়াইয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। তবে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রিশাদ হোসেন। শেষ অবধি জয় পেয়েছে তার দলও।
বৃহস্পতিবার আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে তারা। পরে ওই রান তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। এই জয়ে সুপার এইটের খুব কাছে চলে গেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে দুই জয় পাওয়ার পর শেষটিতে নেপালকে হারাতে হবে তাদের।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে তিন রান নেয় বাংলাদেশ। পরের ওভারেই নেদারল্যান্ডস বোলিংয়ে নিয়ে আসে আরিয়ান দত্তকে। আগের ম্যাচের একাদশে একটি বদল এনে তাকে ঢুকিয়েছিল ডাচরা। তাদের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে স্রেফ দুই বল দরকার হয় আরিয়ানের।

যদিও তাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দায়ই বেশি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি, ৩ বলে করেন ১ রান। শান্তর বিদায়ের ওভারে আসে স্রেফ ২ রান। পরের ওভারে গিয়ে হাত খোলেন তানজিদ হাসান তামিম। একটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকান তিনি।

কিন্তু পরের ওভারে আবার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার আরিয়ানের বলে সুইপ করেন লিটন। কিন্তু অনেকটুকু দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন এঙ্গেলব্রেখট। এরপর দারুণ জুটিতে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও তানজিদ হাসান তামিম।

তারা দুজনই ছিলেন আক্রমণাত্মক। এই ম্যাচের আগে অনেক কথা হয়েছিল সাকিব আল হাসানের অফ ফর্ম নিয়ে, রানে ফেরেন তিনি। তাদের ৩২ বলে ৪৮ রানের জুটি ভাঙে পল ভ্যান মেকেরিনের বলে তানজিদ ফিরলে। বাতাসের বিপক্ষে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন বাস ডি লিডির হাতে। ২৬ বলে পাঁচটি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন তানজিদ।

উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারিও কম আসতে থাকে। এর মধ্যে ১৫ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে যান তাওহীদ হৃদয়। টিম প্রিঙ্গেলের বলে বোল্ড হন আগের দুই ম্যাচে দারুণ করা এই ব্যাটার।

উইকেটে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। তবে ১৭তম ওভারে গিয়ে ১৬ রান তোলেন টিম প্রিঙ্গেলের বলে। যদিও ইনিংস শেষ করে আসতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফন মেকেরিনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দেন তিনি। ২১ বলে সাজঘরে ফেরত যান ২৫ রান করে।

৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০ ও বিশ্বকাপে ১৭ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাফ সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন সাকিব। শেষ অবধি উইকেটে থেকে দলকে ভালো সংগ্রহও এনে দেন তিনি। জাকেরের সঙ্গে মিলে শেষ দুই ওভারে আনেন ২৬ রান। ৯ চারে ৪৬ বলে ৬৪ রান করেন সাকিব। ৭ বলে ৩ চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের।

রান তাড়ায় নামা নেদারল্যান্ডসের সামনে মোস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে আসে বাংলাদেশ। তাদের অবশ্য প্রথম উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তার বলে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে পয়েন্টে মাইকেল লেভিটের ক্যাচ নেন তাওহীদ হৃদয়। ১৬ বলে ১৮ রান করে ফিরে যান লেভিট।

পরের ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দেন ম্যাক্স ও ডাউড। ফলো থ্রুতে থাকতেই ১৬ বলে ১২ রান করা ব্যাটারের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তানজিম। দুই ওভারে দুই উইকেট হারানোর পর ডাচদের হয়ে প্রতি আক্রমণ শুরু করেন বিক্রমজিত সিং। সাকিবকে টানা দুই বলে ছক্কা হাঁকান তিনি, বাউন্ডারি আসে আরও।

রিশাদ-সাকিবকে দিয়ে যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন শান্ত বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে এত বছর পর তিনিই বল হাতে এনে দেন স্বস্তি। তার বলে এগিয়ে এসে খেলতে যান, বল টার্ন করে বাইরে চলে যাচ্ছিল। ধরে দারুণভাবে স্টাম্পিং করেন লিটন।

বিক্রমজিতকে ফিরিয়েও অবশ্য স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার স্কট এডওয়ার্ডস সঙ্গী হন এঙ্গেলব্রেখটের। তাদের দুজনের জুটিতে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। তার ১৫তম ওভারেই মূলত বদলে যায় ম্যাচের ভাগ্য।

চতুর্থ বলে রিশাদ ফেরান এঙ্গেলব্রেখটকে। তার বলে তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো তানজিমের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ৩৩ রান করা ডাচ ব্যাটার। ওই ওভারের শেষ বলে স্টাম্পিং হন বাস ডি লিডি।

হুট করে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নেদারল্যান্ডসের জন্য শেষ ভরসা ছিলেন অধিনায়ক এডওয়ার্ডস। সুইপ করতে গেলে তার ব্যাটের আগায় লেগে শর্ট থার্ডম্যানে দাঁড়ানো জাকেরের হাতে ক্যাচ যায়। তিন চারে ২৩ বলে ২৫ রান করে আউট হন এডওয়ার্ডস। ওই ওভারে স্রেফ এক রান দেন মোস্তাফিজ।

নিজের পরের ওভারে এসে আরও এক উইকেট তুলে নেন রিশাদ। ৩ বলে ২ রান করা ভ্যান ভিকের ক্যাচ নিজেই নিয়ে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। যদিও শেষ অবধি সেটি করতে পারেননি। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে নিজের স্পেল শেষ করেন রিশাদ।

১৯তম ওভারে এসে আরও একবার দারুণ বোলিং করেন মোস্তাফিজ। দেন স্রেফ ৩ রান। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট পান তিনি। শেষ ওভারে তাসকিন ৭ রান দিয়ে তুলে নেন এক উইকেট। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে দুই উইকেট পান তিনি।

খেলাধুলা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের একিবারে শেষের দিকে প্রতি বলে বলে ছিল রোমাঞ্চ। টান টান উত্তেজনাকর ম্যাচে লড়াই করেও হেরে গেলো বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের ২১তম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১২০ বলে ১১৪ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে ৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদের গতির মুখে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। ৪.২ ওভারে মাত্র ২৩ রানে প্রথমসারির ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রোটিয়া শিবিরে একের পর এক আঘাত হানেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। তার গতির শিকার হয়ে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই তারকা ওপেনার রিজা হেনড্রিকস ও কুইন্টন ডি কক।

ইনিংসের প্রথম ওভারের একেবারে শেষ বলে প্রোটিয়া ওপেনার রিজা হেনড্রিকসকে এলবিডব্লিউ করেন সাকিব। তার বিদায়ে ১ ওভারে ১১ রানে প্রথম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ ওপেনার কুইন্টন ডি কককে ফেরান তানজিম সাকিব। ২.৩ ওভারে ১৯ রানে সাজঘরে ফেরার আগে ১১ বলে এক চার আর দুই ছক্কায় ১৮ রান করে ফেরেন ডি কক।

চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে বোল্ড করে ফেরান বাংলাদেশ দলের তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ।মার্করাম ৮ বলে ৪ রান করে ফেরেন।

এরপর প্রোটিয়া শিবিরে ফের আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ট্রিস্টান স্টাবস। ৫ বলে শূন্যরানে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ে ৪.২ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে খেলায় ফেরান ডেভিড মিলার ও হেনরি ক্লেসেন। মিডল অর্ডার এই দুই তারকা ব্যাটসম্যান পঞ্চম উইকেটে ৭৯ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন। তাদের সেই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ।

তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৪৪ বলে দুই চার আর তিন ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন হেনরি ক্লেসেন।

এরপর মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে ফেরেন আরেক সেট ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার। তাকে বোল্ড করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৮ বলে এক চার আর এক ছক্কায় ২৯ রান করেন ডেভিড মিলার।

ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে হেনরি ক্লেসেন ও ডেভিড মিলারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশ দলের হয়ে তানজিম হাসান সাকিব ৪ ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। ৪ ওভারে ১৯ রানে ২ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ।৪ ওভারে ৩২ রানে এক উইকেট নেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।