জাতীয়

মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটিতে দুই বছর পর আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ৩রা মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ।

উক্ত নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে , একটি হল সালাম-মুফদি পরিষদ অন্যটি ডাঃ নজরুল-শাহানূর পরিষদ ।

উল্লেখ্য একটি পরিষদ নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে আপত্তি করে হাই কোর্টে মামলা করে , বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায় কোর্ট তত্বাবধায়ক বডি গঠন করে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে ব্যবস্তা নিতে সমাজসেবা মন্ত্রনালয়ের সচিবকে নির্দেশনা প্রদান করেন কিন্তু সমাজ সেবার কোনো পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত জাপান গার্ডেন সিটিতে দৃশ্যমান হয়নি।

এবিষয়ে জাপান গার্ডেন সিটির ফ্ল্যাট মালিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে ।

জাতীয়

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন জাতীয় সংসদে পাশ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

১৭-১৮ এপ্রিল দুইদিনের কুমিল্লা সফরের শেষ দিনে আজ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রান্তিক অঞ্চলের স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রান্তিক এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা উন্নত হলে সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হলে শহরের ওপর চাপ কমবে। প্রান্তিক এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল প্রকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী চান্দিনায় পুন:নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন এবং ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল পরিদর্শন, কুমিল্লা সদর হাসপাতাল ও ৩১ শয্যাবিশিষ্ট বুড়িচং হাসপাতাল পরিদর্শন এবং শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটের ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) উদ্বোধন করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. টিটো মিঞা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জাতীয়

চলতি বছরেই চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ২৫ শতাংশ ভাটায় পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট তৈরি নিশ্চিত করতে ইটভাটা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুসরণ ও পোড়ানো ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় সভায় ইটভাটা মালিক-সমিতির নেতাদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।

তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যে সকল ইটভাটা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ভাটায় ম্যানুয়ালি ও অটো পদ্ধতির পাশাপাশি ব্লক ইট তৈরি করা হচ্ছে। ভাটায় ব্লক ইট তৈরি করলে অন্য ইটভাটার মতো পরিবেশ দূষণ করবে না।

বায়ু দুষণ রোধসহ পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট তৈরির কনোন বিকল্প নেই। যাদের একাধিক ইটভাটা রয়েছে চলতি বছরের মধ্যেই তাদের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ ভাটায় ব্লক ইট তৈরি করে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ইট তৈরির কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে হবে। কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও আশানুরূপ ফসল ফলানোর লক্ষ্যে টপসয়েল কর্তন থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা মানতে হবে এবং বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে ব্লক ইট তৈরির বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, নতুন করে আর কোনো ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। যেগুলো আছে সেগুলো থেকে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এনে পরিবেশবান্ধব ইটভাটাগুলো রাখা হবে। চাহিদা থাকলে ব্লক ইটের সরবরাহ বাড়বে। প্রকৃত ও বৈধ ইটভাটা মালিকরা যাতে কোনো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে লক্ষ্যে গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল, সড়ক ও জনপথ (সওজ), শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও দপ্তর এবং সিপিডিএল ও স্যানমারসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ব্লক ইটের চাহিদাপত্র নিয়ে ইটভাটা মালিক পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আগামী মাসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়কে নিয়ে ইটভাটা ব্যবসা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়নে চট্টগ্রামে একটি সভা আহ্বান করা হবে। সিটি মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও জেলা-উপজেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির নেতাদের থেকে একজন করে প্রতিনিধিকে সভায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ইটভাটা মালিকদের প্রশ্নের জবাবে বালি সরবরাহ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, কর্ণফুলী নদীসহ রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন ছোট-বড় খালে বালির অভাব নেই। এখনো যে পরিমাণ বালি আছে তাতে আগামী ৫ বছরেও আশা করি কোনো সমস্যা হবে না, আপনারা আবেদন করেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে বালির ব্যবস্থা হবে।

সভায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ব্লক ইট তৈরির ছাড়পত্রের জন্য ইটভাটা মালিকগণ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়ে আবেদন করলে তা শুনানি শেষে দ্রুততার সাথে দেওয়া হবে। কোনো ধরনের বেগ পেতে হবে না। ছাড়পত্র পেলে বিদ্যুৎ সংযোগও দ্রুত সময়ে পাওয়া যাবে। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় চট্টগ্রাম জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি ও রাউজান পৌরসভার মেয়র মো. জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, দূষণবিহীন ইটভাটায় ব্লক ইট তৈরি করতে গিয়ে মালিক পক্ষ যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন। পরিবেশ দুষণ করে আমরা কেউ ইট তৈরি করতে চাই না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনেই পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

তিনি আরও বলেন, নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এগুলোতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করা যাবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজীব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একেএম গোলাম মোর্শেদ খান, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার, চট্টগ্রাম জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি ও রাউজান পৌরসভার মেয়র মো. জমির উদ্দিন পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদারসহ বিভিন্ন উপজেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকেরা।

জাতীয়

জননিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের জারি করা নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান করা ও নেতিবাচক বিবৃতি দেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে তার দপ্তরে এ মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

গতকাল রোববার (১৪ এপ্রিল) সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পহেলা বৈশাখে উদীচীর অনুষ্ঠান করা ও এ বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে নির্দেশনা জারি করেছিল সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান করা ছিল হঠকারী ও দুঃখজনক। তাদের এই আচরণে সরকার খুবই ব্যথিত ও মর্মাহত।

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে এবং যশোরের উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়েছে। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া ময়দান ও সিলেটে ঈদের জামাতের জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং জনগণের জীবন বাঁচিয়েছেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানে সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সবসময় সতর্ক থাকায় নিকট অতীতে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি হামলা বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতে পারেনি। এই বিষয়ে সরকার সবার সহযোগিতা কামনা করে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৩ সালে ১৪০০ বঙ্গাব্দে, বাংলা শতবর্ষ বরণ করার সময় খালেদা জিয়ার সরকার বাধা দিয়েছিল। তাদের বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল নিরাপত্তাজনিত নয়, বরং বাঙালির সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক এই উৎসবকে নিরুৎসাহিত করা। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযু্দ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব সংগঠনসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা আমরা সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছিলাম।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের কর্তব্য। আশা করব এক্ষেত্রে সবাই সবসময় সহযোগিতা করবেন, যাতে আনন্দের অনুষ্ঠান বিষাদে পরিণত না হয়ে যায়।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে অনুষ্ঠান উদীচী করেছে সেখানে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটতো তার দায়-দায়িত্ব কে নিতো এ প্রশ্ন রেখে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা মনে করি নিয়ম বা নির্দেশ না মেনে অনুষ্ঠান যারা করবেন তাদেরই সেই দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে যথাযথভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য বাংলা নববর্ষ ভাতার ব্যবস্থাও করেছে। তার সরকারের সময়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’-কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

জাতীয়

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

তিনি বলেন, এবার সম্পূর্ণ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।

এ ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।

দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ২১ এপ্রিল শেষ সময়, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, আপিল গ্রহণ ২৪-২৬ এপ্রিল, আপিল নিষ্পত্তি ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। আর ১৬১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২১ মে।

এ ধাপের নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভোটারের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি যেখানে সেখানে একাধিক সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন।

চার ধাপের উপজেলা ভোটের পরবর্তী দুই ধাপের নির্বাচন ২৯ মে ও ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

জাতীয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সোমালিয়ার জলদস্যুদের চেয়েও বিএনপি অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ সোমালিয়ার জলদস্যুরা আমাদের নাবিকদের ওপর কোনো নির্যাতন চালায়নি। তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেনি। কিন্তু বিএনপি তো মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীদের নেতৃত্বে বিএনপি অনেক সময় সোমালিয়ার জলদস্যুদের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।

শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের লালদিঘী চত্বরে ‘চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এসময় ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের চেয়ে বাংলাদেশের দস্যুরা বেশি ভয়ঙ্কর’, বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য, ‘দেশের মানুষ খুব দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে আছে, সাধারণ মানুষ ভালোভাবে ঈদ পালন করতে পারেনি’ এ বিষয়ে ড. হাছান বলেন, হয়তো মির্জা ফখরুল সাহেবদের মনে শান্তি নেই, উনাদের মনে অশান্তি বিধায় বাংলাদেশের মানুষের মনে শান্তি নেই বলছেন। কিন্তু মানুষের মনে সম্প্রীতি ও উৎসব আছে।

তিনি বলেন, দেখুন, এবার ঈদ অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। মানুষ এখনো ঈদ উৎসবের মধ্যে আছে। আপনারা দেখেছেন ঈদযাত্রাও এবার অনেক সুন্দর ছিল। ঈদের সময় অনেক ঘটনা ঘটে। সে ধরনের দুর্ঘটনা এবার অপেক্ষাকৃত অনেক কম ঘটেছে। এবং মানুষ অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়েই ঈদ উদযাপন করছে।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যু কতৃক হাইজ্যাক হওয়া জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আছে। খুব সহসা আপনারা সুখবর শুনতে পাবেন। আমি শুধু এটুকুই বলি, নাবিকরা খুব সহসাই মুক্তি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ, আমরা জাহাজটাও মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারব। গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ইতিমধ্যেই সাধিত হয়েছে।’

এর আগে ‘চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান বলেন, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবসময় বলেন এবং আমরাও বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আজকে ঈদ উৎসবকে ঘিরে ‘চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসবে’ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই সামিল হয়েছে। অর্থাৎ ধর্ম যার যার উৎসব যে সবার সেটি আসলে বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে এই উৎসবের মাধ্যমে।

তিনি আরও বলেন, এই দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান হবে না। কেউ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে, সবসময় করেছি, ভবিষ্যতেও করব। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

‘চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব’ আয়োজক কমিটির সভাপতি জহরলাল হাজারী, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, কাউন্সিলর রুমকি সেন গুপ্তা, মো. শাহাবুদ্দিনসহ আযোজক কমিটির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় বৃদ্ধা রোগীর পাশে বসে কেঁদে ফেলা মানুষটি একজন সংসদ সদস্য (এমপি)। ভদ্রলোক শুধু এমপিই নন, দেশের অন্যতম শীর্ষ ধনী, আরএকে সিরামিকসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (সুখন)।

শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান এই এমপি। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রায় শত বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধার পাশে মেঝেতে বসে পড়েন। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান, চোখে পানি চলে আসে তার।

একজন শীর্ষ ধনী ও সংসদ সদেস্যর এমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নেটিজেনদের মধ্যে। প্রশংসায় ভাসছেন এই সংসদ সদস্য। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি সব রোগীদের মধ্যে ঈদ উপহার তুলে দেন।

এসময় তিনি বলেন, আমাদের যতটুকু সাধ্য আছে তার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে যেতে চাই। কোনো রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.অভিজিৎ রায় জানান, আজকে এমপি স্যার হাসপাতালে রোগীদের দেখতে আসেন। রোগীদের জন্য ঈদ উপহার ও ছোট বাচ্চাদের জন্য খেলনা নিয়ে আসেন। এসময় শতবর্ষী রোগী সাজেদা বেগমকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং মেঝেতে রোগীর পাশে বসে পড়েন তিনি।

সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (সুখন) এমপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে এমপি হন এবং সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এবং সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন আহম্মদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরানুল হক ভূইয়া, ওসি মো. সোহাগ রানা প্রমুখ।

জাতীয়

ঢাকাসহ দেশের পাঁচটি বিভাগে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

শনিবার (৩০ মার্চ) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

রোববার (৩১ মার্চ) রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

সোমবার (০১ এপ্রিল) রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

শনিবার দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ১৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জাতীয়

শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং অত্যন্ত গোপনীয় তথ্যভান্ডার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইল্যান্সে (নজরদারি সফটওয়্যার) অবৈধ সংযোগের তথ্য মিলেছে।

বিএসইসির ভেতরের একটি চক্র টানা ৭ বছর ধরে এ কাজ করে আসছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে সার্ভেইল্যান্স এরিয়ার বাইরে সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপন করে কাজ করছে তারা।

এর সঙ্গে জড়িত আছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তার একটি চক্র। বিষয়টি ইতোমধ্যে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এখনো সংযোগই বন্ধ হয়নি।

নিজস্ব অনুসন্ধান ও বিএসইসির অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমন চঞ্চল্যকর তথ্য।

এসব ঘটনায় হতবাক বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, তথ্য পাচারের কারণে বড় অঙ্কের টাকা আয় হয়। এই টাকা দেশে থাকছে, নাকি দেশের বাইরে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তবে যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে শেখ মাহবুব উর রহমান শনিবার বলেন, সংযোগটি আমি নেইনি। ২০১২ সাল থেকে যখন যে পরিচালক ছিলেন, তার রুমেই এই সংযোগ ছিল। সেখান থেকেই আমি পেয়েছি। ফলে অবৈধ বলার সুযোগ নেই।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শনিবার বলেন, এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। শুধু বিএসইসি নয়, স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভেইল্যান্স থেকেও তথ্য পাচারের কথা শোনা যাচ্ছে। এখানে যাদের দায়িত্ব রয়েছে, তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। এর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। পুঁজিবাজারের স্বার্থেই এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত।

পাশাপাশি এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা আয় হয়। এই আয়ের টাকা দেশে থাকছে নাকি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার বাজারের লেনদেন, নজরদারি এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার গোপন তথ্যভান্ডার। এখানে দৈনন্দিন লেনদেন, কারা কিভাবে লেনদেন করছে, কে কোন শেয়ার কিনছে সে তথ্য থাকে। চারটি প্রতিষ্ঠানের সার্ভেইল্যান্স রয়েছে।

এগুলো হলো-বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার বিএসইসির। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লেনদেন মনিটরিং করা হয়।

এছাড়া সার্ভিল্যান্সের মাধ্যমে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএসইসি। দীর্ঘদিন থেকে এই সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বাইরে পাচারের অভিযোগ এসেছে। ২০১১ সালে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সার্ভেইল্যান্স থেকে তথ্য পাচারের কথা বলা হয়।

ওই রিপোর্টে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএসইসির কাছে সুপারিশ করা হয়। তবে ওই সময়ে বিএসইসির নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম ছিল না।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২০১২ সালে নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার কেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বিএসইসির সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বাইরে আসার বিষয়টি দুঃখজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে-শেয়ারবাজারে সার্ভেইল্যান্সের গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম কমিশনের নজরে আসে। তৎকালীন সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্বে থাকা কমিশনার মো. আবদুল হালিমের স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্ট ওইদিনই কমিশনে জমা হয়।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি আমাদের নজরে এসেছে, সার্ভেইল্যান্স পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত নির্ধারিত রুমের বাইরে এই সফটওয়্যারটির আরেকটি ওয়ার্কস্টেশন রয়েছে। এই সংযোগটি বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানের নিজ রুমে। এর কোনো বৈধ অনুমোদন নেই।

যেহেতু কমিশনের নজরদারি ব্যবস্থা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গোপনীয়। যে কারণে সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ব্যবস্থা এবং সীমাবদ্ধ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ওই কর্মকর্তার এ ধরনের কার্যক্রমে বিধিনিষেধ এবং নিরাপত্তা ভঙ্গ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।

এরপর ওইদিনই পরিচালক মাহবুব উর রহমানকে এই সংযোগের অনুমোদনের প্রমাণ সরবরাহ করতে বলা হয়। উত্তরে তিনি একটি অনুমোদনপত্র দেখিয়েছেন, যা হাইস্পিড (উচ্চগতির) কম্পিউটার চালানোর ব্যাপারে কমিশন তাকে দিয়েছে। কিন্তু সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যারটির বাইরে সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে অনুমোদন নেই। অর্থাৎ তিনি বৈধতার অনুমোদনের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ অবস্থায় সংযোগটি দ্রুত নজরদারি কক্ষে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সুপারিশ আমলে না নিয়ে এখনও সেই সংযোগটি কক্ষেই রেখেছেন তিনি।

পাশাপাশি ওই রিপোর্টে বেশকিছু বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রথমত, এ সংযোগটি তিনি কখন থেকে এবং কিভাবে পেয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, অনুমোদনহীনভাবে কে তার জন্য সফটওয়্যার সংযোগ স্থাপন করেছেন। তৃতীয়ত, এ সংযোগের উদ্দেশ্য কী ছিল। চতুর্থ বিষয় হলো-কিভাবে তিনি এই বর্ধিত সংযোগের ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিলেন। এক্ষেত্রে নজরদারি ব্যবস্থার অপব্যবহার হয়েছে কিনা। বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এই গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারে কোনো নির্দেশিকা নেই। যারা এখানে কাজ করেন, তাদের ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি গাইড লাইন থাকা জরুরি। না হলে এই প্রক্রিয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের নিরাপত্তা দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, সংযোগই বন্ধ হয়নি।

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার মো. আবদুল হালিম শনিবার বলেন, ওই সময়ে সার্ভেইল্যান্সের ব্যাপারে কিছু একটা সুপারিশ ছিল। কিন্তু আমি এখন আর সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্বে নেই। ফলে এরপর কী হয়েছে আমি আর বলতে পারব না।

তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্বে থাকা বর্তমান কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, সার্ভেইল্যান্স অত্যন্ত গোপনীয় ও সুরক্ষিত তথ্য। আমাদের আইনেও এ ব্যাপারে সুরক্ষা দেওয়া আছে। যাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে, তাদেরকেই এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখান থেকে তথ্য পাচার হলে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তবে কেউ তথ্য পাচার করছে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে আমারে কাছে অভিযোগ নেই। আমি নিশ্চিত করছি, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।

২০১৭ সালে বিএসইসির অফিস দিলকুশার জীবন বীমা টাওয়ার থেকে আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সময় এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) শেখ মাহবুব উর রহমান।

ওই সময়ে তার রুমে এই অবৈধ সংযোগটি স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে টানা ৭ বছর ধরে চলে এসেছে অবৈধ সংযোগ। প্রথমে কিছুদিন কারও নজরে আসেনি। পরবর্তী সময়ে কমিশন জানলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ছিল। এর সঙ্গে কমিশনের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।

জানতে চাইলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন- সার্ভেইল্যান্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের। তারা নিরাপত্তা না দিলে কী করার আছে?

তিনি বলেন, এই সফটওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে। কিভাবে পরিচালনা করা হয়, কারা পরিচালনা করছে এবং সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ফিচারগুলো কিভাবে করা হয়েছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কমিশন যদি সিকিউরিটি না দেয় তাহলে কী করবেন?

অনুসন্ধানে জানা গেছে-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে ২০১২ সালে নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সুইডেনের কোম্পানি ‘ট্রাপেটস এবি’র কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারে কেনা হয় সফটওয়্যারটি। এই সফটওয়্যারটির নাম ‘ইনস্ট্যান্ট ওয়াচ মার্কেট’ (আইডব্লিউএম)।

এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সুইডেনের হলেও আঞ্চলিক ভেন্ডর ছিল ভারতীয় কোম্পানি ‘চেলা সফটওয়্যার। প্রতি তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি এবং মেইনটেইন্যান্স বাবদ প্রতিবছর নবায়ন ফি ৫০ হাজার ডলার। তিন বছরে দেড় লাখ ডলার। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে রিয়েল টাইম এবং হিস্টোরিক্যাল দুটি ডাটাই দেখা যায়। ভারতের চেলা সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই সিস্টেম কেনা হলেও সফটওয়্যার কেনার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।

বর্তমানে চেলা সফটওয়্যারের মালিকানায়ও পরিবর্তন এসেছে। ফলে বিএসইসির সিস্টেমে কোনো সমস্যা হলে সুইডেনের কোম্পানি ট্রাপেটসের টেকনিক্যাল টিম সহায়তা দেয়। আজ ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকে এই সফটওয়্যারের নতুন ভার্সন ব্যবহারের কথা রয়েছে।

বিএসইসির বৈধ সার্ভেইল্যান্স রুমের নিরাপত্তার জন্য এখানে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ট্রেডিং সফটওয়্যারের সঙ্গে ডেডিকেটেড সফটওয়্যারে রিয়েল টাইম কানেকটেড। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের ‘প্যাকেট ডাটা’ তারা গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে কারও আইপি এবং ম্যাক সিস্টেমের সমন্বয় হলেই ওই ডাটা গ্রহণ করা হয়।

এক্ষেত্রে দুর্ঘটনাবশত কোনো হ্যাকার প্রবেশ করলেও একইসঙ্গে আইপি এবং ম্যাক সিস্টেমের সমন্বয় সম্ভব নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভেইল্যান্সের রিয়েল টাইম ডাটা তারা গ্রহণ করেন। কিন্তু আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএলের রিয়েল টাইম ডাটা পায় না। এক্ষেত্রে তারা দিন শেষে ডাটা গ্রহণ করে।

এছাড়াও বিএসইসির সপ্তম তলায় অবস্থিত সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের ওয়ার্ক স্টেশনে দুটি রুম। বর্তমানে তিনজন কাজ করছেন। একটি রুমে মূল সফটওয়্যার সিস্টেম। অন্য রুমে যারা কাছ করছেন, তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং সামান্য বিশ্রামের জায়গা। যারা কাজ করছেন এর বাইরে সফটওয়্যার রুমে কারও প্রবেশের অধিকার নেই। এখানের বিদ্যুতের লাইনও আলাদা।

অনুমতি ছাড়া মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ নেই। রুমের মধ্যে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। কেউ মোবাইল দিয়ে ছবি তুললেও তা কন্ট্রোল রুমে ধরা পড়বে। তবে মূল সার্ভেইল্যান্স রুমের বাইরে অবৈধভাবে স্থাপিত রুমে মানুষের স্বাভাবিক যাওয়া আসা রয়েছে। এই রুমে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে তা বেশ কিছুদিন ধরে নজরদারি করেছে । যে সেখানে মানুষ নিয়মিতভাবেই যাতায়াত করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে-শেয়ারবাজারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর নানাভাবে বাইরে আসছে। টাকার বিনিময়ে এসব তথ্য বেচা-কেনা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, কারসাজির সঙ্গে জড়িত বড় সিন্ডিকেট এবং প্রভাবশালী একটি মহল এসব তথ্য ব্যবহার করছে।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান রিয়েল টাইম ডাটা পেয়ে যায়। আবার লেনদেন শেষে বিকালের মধ্যেই ওইদিনের পুরো তথ্য বাইরে চলে আসে। কোন বিনিয়োগকারী বা ব্রোকারেজ হাউজ কোন কোম্পানি শেয়ার কী পরিমাণে কিনেছে, তার সব তথ্যই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বিও অ্যাকাউন্টের (শেয়ার লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হিসাব) তথ্যসহ বাজারে চলে আসে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের শেয়ারবাজারে এই তথ্য পাচার বা কিংবা অবৈধ সংযোগ একেবারেই অস্বাভাবিক। কারণ পৃথিবীর কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে গোপনীয় এই তথ্য পাচার অসম্ভব। এ কারণেই খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টে সার্ভেইল্যান্সের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।

ইব্রাহিম খালেদের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের তথ্য সংরক্ষণ জরুরি। এখান থেকে তথ্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে। কিভাবে এবং কারা তথ্য পাচার করে তার একটি তালিকা কমিটির হাতে এসেছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম থেকে তথ্য পাচারের সুযোগ নেই। কারণ ওই রুম অত্যন্ত সুরক্ষিত। ওখানে অন্য কারও প্রবেশাধিকার নেই। যারা কাজ করেন, তারা সেখানে মোবাইল, ইন্টারনেট এবং পেনড্রাইভ কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারেন না। এসব কিছু ব্যবহার সেখানে নিষিদ্ধ। এছাড়াও সেখানে সিসিটিভি রয়েছে। সবকিছু নজরদারিতে রাখা হয়।

জাতীয়

বিএনপির সাতটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগর শাখা নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। তেরোটি মহানগরের (সাংগঠনিক) মধ্যে খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, গাজীপুর, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহীতে আগের মতো ত্যাগী ও পরীক্ষিত বড় কোনো নেতা তৈরি করতে পারেনি দলটি।

দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে সাংগঠনিক অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এসব মহানগরের অধিকাংশই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে কর্মী সংকটে পড়ছে। তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ওপর নির্ভর করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়।

এর কারণ হিসাবে নেতারা জানান, বরিশালসহ কয়েকটি মহানগরের কমিটি গঠনে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক তথ্য দেননি। এসব মহানগরের ত্যাগী ও প্রভাবশালী একটি গ্রুপকে বাদ রেখে অনেকটা ‘অপরিচিত’ নেতাদের দিয়ে কমিটি করেছে।

যে কারণে তারা সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারছে না। আর খুলনাসহ কয়েকটি মহানগরে ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেক নেতা রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। এসব মহানগরে দলের হাইকমান্ড বিশেষভাবে ‘নজর’ না দিলে অতীতের মতোই আগামী দিনেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আসবে না বলে মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, বিএনপির তৃণমূল থেকে উঠে আসা খুলনার পরীক্ষিত নেতা ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মহানগরের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কারণে তাকে অব্যাহতি দেয় দল। মঞ্জু মহানগরের সভাপতিসহ নানা পদে ছিলেন।

খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে তার ত্যাগ সবাই স্বীকার করেন। অথচ মঞ্জু তিনবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও এখনো তাকে দলে নেওয়া হয়নি। মহানগরে তার অনুসারীদেরও কোনো পদে রাখা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় আড়াই মাসের আন্দোলনে মহানগরের বর্তমান নেতৃত্ব মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে; কিন্তু মঞ্জুর মতো নেতাকে ব্যবহার করতে না পারাটা দলের ব্যর্থতা বলে স্থানীয় অনেকেই স্বীকার করেন।

একইভাবে বরিশালের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের মতামতকে উপেক্ষা করে মহানগরের কমিটি দেওয়া হয়। সেই কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদের পর্যন্ত রাখা হয়নি। এবারের আন্দোলনে এই নগরীর নেতাকর্মীরা সরোয়ার ও তার কর্মীবাহিনীর অনুপস্থিতি অনুভব করেছেন।

কুমিল্লায়ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ছিলেন জনপ্রিয় নেতা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার বদলে সেরকম জনপ্রিয় নেতা সেখানে আর তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।

গাজীপুর মহানগরে হাসান উদ্দিন সরকার ও সাবেক মেয়র প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের মতো জনপ্রিয় নেতা তৈরি হয়নি। সর্বশেষ হাসান উদ্দিন সরকার মহানগরের কমিটিতে থাকাকালীন কর্মীবাহিনী তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান কমিটি গঠনের পর ফের দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

এ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রয়াত মান্নানের পুত্র এম মঞ্জুরুল করীম রনিকে রাখা হলেও তিনি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারেননি। মাঠের আন্দোলনে তো নয়ই, কোনো সাংগঠনিক কাজেও তাকে মহানগরের নেতাকর্মীরা পাচ্ছেন না। ফরিদপুরে একসময় বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমান ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো নেতারা ছিলেন। কিন্তু এখন যাদের হাতে কমিটি দেওয়া হয়েছে, তারা ততটা সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারছেন না।

রাজশাহীতেও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর মতো নেতা একসময় মহানগরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এখনকার নেতৃত্ব দুই গ্রুপে বিভক্ত। নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা। অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও এটিএম কামালকেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।

পরে গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈমুর ‘তৃণমূল বিএনপির’ মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়ে নির্বাচনেও অংশ নেন। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এ দুই নেতাকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তারাই ছিলেন নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত মুখ। তাদের স্থলে এ রকম আর কোনো নেতা তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।

বিএনপির সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৩টি মহানগর রয়েছে। এগুলো হলো-ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, গাজীপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা মহানগর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈসাকে আহ্বায়ক ও মামুন-অর-রশিদকে সদস্যসচিব করে রাজশাহী মহানগরের ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। তখনই এ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মহানগরের একটি অংশ।

তারা অভিযোগ করেন, কমিটি গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন ভুলের খেসারত সামনে বিএনপিকে দিতে হবে। বরিশাল মহানগরেরও একই অবস্থা। নানা নাটকীয়তার পর মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদকে সদস্যসচিব করে একই বছরের ২১ জানুয়ারি কমিটি দেওয়া হয়।

স্থানীয় নেতারা জানান, মহানগরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীদের বাদ দিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়। একতরফা কমিটি করার কারণে মহানগরে তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারছে না বর্তমান নেতৃত্ব।

কুমিল্লা মহানগরের কমিটি নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে এ মহানগরে প্রথমবার আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পিএস পরিচয়দানকারী আবদুর রহমান সানির শ্বশুর রাজিউর রহমান রাজিবকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

এছাড়া রাজিবের এক ভাইকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আরেক ভাইকে সদস্য করা হয়। অথচ তারা এর আগে বিএনপির কোনো পদে ছিলেন না। এমনকি অতীতের কোনো আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের দেখা যায়নি। এ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়।

পরে কমিটি ঘোষণার রাতেই নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় ঘোষিত কমিটি থেকে আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমিরসহ ৪৪ সদস্যের কমিটির বেশ কয়েকজন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে আমিরুজ্জামানকে বিএনপির সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আলীকে। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিউর রহমান রাজিব, সেলিম খান, শাহ আলম মজুমদার ও মো. বিল্লাল, সদস্য শাখাওয়াত উল্লাহ, কোহিনুর আক্তার, আবদুল্লাহ আল মোমেন, হারুন অর রশিদ ও নাসির উদ্দিনকে কমিটি এবং দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পরে তিন মাসের মধ্যে ৩১ আগস্ট ফের ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে রাজিউর রহমান রাজিব দ্বিতীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হন। রাজিউর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জয়ী হন।

তারেক রহমানের পিএস পরিচয়দানকারী আবদুর রহমান সানির শ্বশুর হওয়ার কারণে আবারও তাকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তারা বলেছেন, রাজিউর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করেন। তাকে মহানগর বিএনপির দুটি কমিটিতেই যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। অতীতে দলীয় কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি। অথচ অন্যদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার, পদ কেড়ে নেওয়া ও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নেতাকর্মীদের দাবি, তিন কমিটিতে দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব পদে রাখলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হতো। ফরিদপুর মহানগর কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সেখানে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং চলছে। অগণতান্ত্রিকভাবে ও অযোগ্যদের দিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার অভিযোগ এনে তখন সংবাদ সম্মেলনও করে নতুন কমিটির একাংশ। নারায়ণগঞ্জ মহানগরও সাংগঠনিকভাবে ততটা শক্তিশালী নয়।

একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জেলা ও বিভাগভিত্তিক হেভিওয়েট নেতা তৈরি করা গেলেও গ্রুপিংয়ের কারণে তা ধরে রাখা যায়নি। যে কারণে আন্দোলনে যতটা ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমাদের কাছে পদ-পদবি বড় না। দেশ বড়, দল বড়। আগে যেভাবে আমরা দল গড়ে তুলেছিলাম, এখন দল আরও বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কোয়ালিটি লিডারশিপ আমাদের আরও দরকার। নেতৃত্ব দিতে মেধা, যোগ্যতা, সহনশীলতা, কখনো কখনো সাহসী কর্মকাণ্ড যেটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য তা লাগে। ভালো ব্যবহার, নিষ্ঠা, শ্রদ্ধাবোধ তো রয়েছেই। এগুলো কিছুটা পরিবার থেকে আসে, কিছুটা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকেও শিখতে হয়। যাদের এসব কোয়ালিটি আছে, তারা ভালো নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপিও অনেক শক্তিশালী। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছি। এমনিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। সেটা ছিল, আছে-এটা এমন কিছু না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘এক নেতার এক পদ-এমন কথা বলে আমাকে বরিশাল মহানগরে রাখেনি। মহানগরে দ্রুত কমিটি করতে গিয়ে তা শক্তিশালী হয়নি। সঠিক জায়গায় সঠিক নেতৃত্ব হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। আবার কমিটি করতে গিয়ে পুরোনোদের একবারে বাদ দিয়ে দিয়েছে, যারা যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতা ছিলেন; যারা মাঠে ছিল না-এ ধরনের সংখ্যা কমিটিতে এখন বেশি। সক্রিয় লোকজন পদ পায়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের সময় আমি জেলে ছিলাম, মহানগরের নেতৃত্ব কি করতে পেরেছেন নীতিনির্ধারকরা তো তা অবশ্যই দেখেছেন।’

অবশ্য বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টিতে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে এখনো থানা নির্ধারণ করেনি, তাই কমিটি হয়নি। আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো ১ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছিলাম। প্রায় তিন মাস কারাগারে ছিলাম। এত গ্রেফতার-হামলা-মামলা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা যতটুকু করতে পেরেছেন তা করেছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘নগরের ৫টি থানা ও ৩১টি ওয়ার্ডে আমরা ভোটের মাধ্যমে কমিটি করেছি। এখন মহানগরের সম্মেলন বাকি আছে’। নির্বাচনের আগে আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হরতাল, অবরোধসহ সব কর্মসূচিই মহানগরে শতভাগ সফল হয়েছে। মহানগরেই ৪২টি মামলা হয়েছে, যেখানে ৫শ এর বেশি আসামি, অজ্ঞাত তো আছেই।