জাতীয়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা শুধু সংবিধানে উল্লেখ থাকলেই যথেষ্ট নয়, তার কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে উপযুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৮তম দিন শেষে এ কথা বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা অতীতে বলে এসেছি যে, প্রতিটি সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য সংবিধানে আলাদা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া না এনে, সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে সেই সব প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সংবিধানে আলাদা করে উল্লেখ করা যায়—এই ক্ষেত্রে আমরা একমত।

তিনি জানান, সংলাপে সব পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। এই কমিটিতে থাকবেন—জাতীয় সংসদের স্পিকার (সভাপতি), বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতি।

এই কমিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে একটি অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে, যেখানে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ নাম জমা দিতে পারবে। সংসদে একটি আইন প্রণয়ন করে এই অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটির কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সার্চ কমিটি জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে এবং সেটি সিলেকশন কমিটির কাছে পাঠাবে। কমিটি চাইলে এই তালিকা থেকে অথবা নিজেরা আরও প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

তিনি উল্লেখ করেন, কমিশন গঠনে আগে যে প্রস্তাবে প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে নাম সুপারিশ করার কথা ছিল, বর্তমান প্রস্তাবে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি পদের জন্য একটি করে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। নিয়োগের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এছাড়া সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের উপধারায় একটি নতুন সংযোজনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করবে এবং তাদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করবে।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই, যারা কার্যত স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাই তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কার্যক্রম পর্যন্ত সবখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, একাধিকবার নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, কিন্তু কার্যত তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এখন শুধু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া বাকি। আমরা ধরে নিচ্ছি, পরবর্তী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে। সেই বিবেচনায় একটি কার্যকর, স্বাধীন এবং জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন কমিশন গঠনে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গঠিত ঐক্যকে তিনি স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই গঠন প্রক্রিয়া এবং কমিশনের ভবিষ্যৎ কাজের দিক নির্দেশনা নির্ধারণে যে সর্বসম্মত প্রস্তাব এসেছে, তা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি তৈরি করবে।

জাতীয়

গভীর রাতে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।

আজ বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,ওইদিন রাতে (২১ জুলাই) মাইলস্টোন স্কুলের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে অনেক রাত পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল।

আমরা (উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা) সে বিষয়ে কথা বলে অনেক রাতে বাসায় ফিরছিলাম। রাতে যখন বাসায় ফিরছি তখনই পরীক্ষার বিষয়টা সামনে আসলো। কেউ কেউ চাচ্ছিলেন পরীক্ষা হউক আবার অনেকে জানতে চাচ্ছিলেন পরীক্ষা হবে কিনা এবং সেই প্রক্রিয়ায় কয়েকজন উপদেষ্টার সাথেও আমাদের কথা হয়। এ ধরনের একটা বিষয়ে হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না এবং এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও কারো নেই।

তিনি বলেন, এভাবে একটি পরীক্ষা নিতে হলে যেমন একটি রোল আপ করতে হয় তেমনি পরীক্ষা পেছাতে হলেও রোল ডাউন করতে হয়। তাছাড়া পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেহেতু সারাদেশে পৌঁছানোর একটা বিষয় ছিল এবং এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকেও জানাতে হয় প্রশ্নপত্র ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সব বিষয় ভেবে চিন্তে আমাদেরকে হয়তো পরীক্ষা স্থগিত করতে একটু সময় নিতে হয়েছে। তাও সেটা আমি মনে করি যথা সময়েই হয়েছে। অনেকে বলেন, পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তটা মনে হয় অনেক আগেই নেওয়া যেত এ ধারণাটা আসলেই ঠিক না। ডিউ প্রসেস ফলো করে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। অনেকে বলেছিলেন পরীক্ষা নেয়ার জন্য সেটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হয়েছিল।

শিক্ষা উপদেষ্টা এ সময় একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা আমার পদত্যাগের দাবি করলেও বিষয়টা প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। দুর্ঘটনার পর কোনো অব্যবস্থাপনা হয়নি। তাই তিনি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন না। শিক্ষা সচিবকে কেনো প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা তার জানা নেই। তবে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলেও জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২২ ও ২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

সোমবার (২১ জুলাই) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে ২২ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানান।

জাতীয়

বহুল আলোচিত সরকারি চাকরি আইন দ্বিতীয় সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। বুধবার (২৩ জুলাই) অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে জারি করা হয়েছে।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। এর প্রতিবাদে ২৪ মে থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

সরকারি চাকরি আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরোনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামে একটি ধারা সংযোজন করা হয়। নতুন এই ধারায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়ী হলে সাত দিন করে নোটিশ দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছিল।

অনুমোদনের আগে অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে যা ছিল-

১. কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে; ২. এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উসকানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে; ৩. কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।

অধ্যাদেশটিতে এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছিল।

এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, ৭ দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিশ দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে বলা হয়েছিল।

অধ্যাদেশটিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল করার সুযোগও রাখা হয়েছিল। দণ্ডের নোটিশ হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার পারবেন বলা হয়েছিল। সংশোধিত অধ্যাদেশটিকে তখন ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি আন্দোলনরত সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের আলাপ-আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের আপত্তি আমলে নিয়ে গত ৩ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদের ৩২তম বৈঠকে এ সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।

জাতীয়

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এনসিপি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলেও তাদের সমাবেশের আগে ও পরে হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িবহরে হামলা-ভাঙচুর এবং পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির কর্মসূচিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রায় যে জাগরণ দেখা গেছে, তাতে রাজনৈতিক ময়দানে তাদের শক্তি-সামর্থ্যের প্রতি আশার সঞ্চার হয়েছিল। জনগণের ভেতরে দলটি ক্রমশ নিজেদের ভিত্তি তৈরি করছে, এমন একটি আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছিল জনমনে। তবে গোপালগঞ্জের ঘটনায় সেই প্রত্যাশায় ভাটা পড়বে। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের হামলায় কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। তাদের শক্তি-সামর্থ্যের নাজুক দশা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। দলটির নেতাদের সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে গোপালগঞ্জ ছাড়তে হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির এ ধরনের বেকায়দায় পড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়। সে সময় তাদের যে জনপ্রিয়তা ছিল, তাতে ভাটা পড়ার প্রমাণ মেলে গোপালগঞ্জের সমাবেশে। জনপ্রিয়তা কমার কারণে তাদের কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো করতে পারেনি দলটি।

ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে না পারায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলার সাহস দেখায়।

এ ছাড়া দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে এনসিপির দূরত্বও আরেকটি বড় কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপির কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ায় দলটির শক্তি অনেকটা কমে এসেছে। বিএনপি ছাড়া দুর্বল হয়ে পড়ায় এনসিপির ওপর হামলা করতে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাহস পেয়েছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশস্থলে দুই দফা হামলা, তাদের অবরুদ্ধ করার ঘটনা সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত করতে পারে। ফলে এ ধরনের ঘটনা সারা দেশে আরও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ ধরনের ঘটনা সারা দেশে ঘটতে থাকলে দেশের রাজনীতিতে মারাত্মক অস্থিরতা তৈরি করবে। তাতে পতিত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের ক্ষেত্র তৈরি করতে হতে পারে।

আর এক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগকে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত করতে পারে বলে মনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে দূরে সরে গেলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা এটি উপলব্ধি করতে পারলে ভিন্ন দিকে মোড় নেবে দেশের রাজনীতি। ক্রমাগত বাড়তে থাকা দূরত্ব কমে আসতে পারে দল দুটির মধ্যে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির অগ্রভাগে থাকা একদল তরুণ-তরুণীর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারা, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমসহ জুলাই অভ্যুত্থানের সংগঠক একঝাঁক তরুণ নেতা।

বেশ কয়েকটি কারণে মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের জনপ্রিয়তা কমে আসে। এর মধ্যে রয়েছে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের অভাব, অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনৈক্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের কারও কারও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রিয়তাও জাতীয় নাগরিক পার্টির জনপ্রিয়তার ভাটা পড়ার জন্য দায়ী বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

স্বাভাবিক সমাবেশ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় সরকারের

গোপালগঞ্জের ঘটনা রাজনৈতিক বাঁকবদল ঘটাতে পারে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, একটা রাজনৈতিক দল স্বাভাবিকভাবে সমাবেশ করতে পারল না, এর ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকার যদি আগে থেকে ব্যবস্থা নিতো তাহলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে একটা পরিবর্তনের পর যে নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে তা ব্যাহত করতে অপশক্তি সুযোগ নিতে পারে। এখন সবাইকে, সব দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, এটা সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সব সময় নিন্দনীয়। একটা রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করবে, এতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। কর্মসূচি পালন করার আগেই উত্তেজনা তৈরি হলো, এটা ভালো না। এর ফলে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে বা কী প্রভাব পড়বে এ ব্যাপারে আগাম কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। এটা পরে বোঝা যাবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, আজকে গোপালগঞ্জের যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা একটি রাজনৈতিক দলের প্রোগ্রামে এভাবে হামলা চালাবে, এটি নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়।

গোপালগঞ্জের ঘটনা রাজনীতিতে কোনো বাঁক নিতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেভাবে জুলাই বিপ্লবের সময় ঐক্যবদ্ধ ছিলেন এখনো সেভাবেই আছে। সুতরাং এই ঘটনায় সারাদেশের রাজনীতিতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা এখনই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলীয় পর্যায়ে মিটিং চলছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাতে পারবো।

জাতীয়

কুমিল্লায় সততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অনিক নামের এক অটোরিকশা চালক। যাত্রীর ফেলে যাওয়া ব্যাগে থাকা প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা অটোচালক অনিক। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানান, এক অভিভাবক তাড়াহুড়োয় সন্তানকে স্কুলে পৌঁছাতে গিয়ে একটি অটোরিকশায় তার টাকা ভর্তি ব্যাগ রেখে নেমে যান। কিছুক্ষণ পর বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ফিরে এসে অটোরিকশাটিকে আর খুঁজে পাননি।

প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর ওই যাত্রী অবাক হয়ে দেখেন, একই অটোরিকশাচালক নিজেই তার বাসার আশপাশে এসে খুঁজছেন তাকে। পরে সবার সামনে অক্ষত অবস্থায় ব্যাগটি ফেরত দেন চালক অনিক।

অনিক জানান, ‘ব্যাগে এত টাকা দেখে আমি প্রথমেই আমার বাবাকে কল দেই। তিনি বললেন, যার জিনিস, তাকে খুঁজে দিয়ে আয়। হারাম টাকা নিয়ে বাঁচতে চাই না।’ আমি এরপর কয়েকবার ঘুরে ওই এলাকায় এসে শেষমেশ ব্যাগের মালিককে খুঁজে পাই।

জানা যায়, অনিকের বাবা নিজেও একজন অটোরিকশাচালক। তাদের পরিবারে সততা ও নৈতিকতার চর্চা বহুদিনের। আর তাই ১৫ লাখ টাকার মতো বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার পরও এক মুহূর্তের জন্যও লোভ স্পর্শ করেনি অনিককে।

ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রশংসায় ভাসছেন এই চালক। স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা বলছেন, অনিকের মতো সৎ মানুষ এই সমাজের সম্পদ। এমন মানুষদের সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।

জাতীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মামলার মধ্যে ১২টির চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা তিনটি এবং অন্যান্য ধারায় মামলা নয়টি।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ বিষয়টি জানিয়েছেন।

চার্জশিট দেওয়া তিনটি হত্যা মামলার মধ্যে সবকটিই শেরপুর জেলার। অন্যান্য ধারার নয়টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি, সিরাজগঞ্জ জেলার দুটি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্তাধীন দুটি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে দায়েরকৃত মামলার যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মামলাগুলো তদারক করছেন। রুজুকৃত অন্য সব মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।

জাতীয়

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশ স্লোভেনিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী দুই মন্ত্রীকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেবে না। এই দুই ইহুদিবাদী হলেন ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ।

বৃহস্পতিবার এক সরকারি বিবৃতিতে এমন ঘোষণা দেয় দেশটি। সরকারের ভাষ্যমতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে এটি এই ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইতামার বেন গভির ও বেজালেল স্মোত্রিচকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত ব্যক্তি) ঘোষণা করবে স্লোভেনিয়া। তারা চরম সহিংসতা উসকে দেওয়া ও ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত এবং তারা গণহত্যামূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

এর আগে জুন মাসে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড এবং নরওয়েও স্মোত্রিচ ও বেন গভিরের বিরুদ্ধে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই দুই মন্ত্রী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

গাজা যুদ্ধ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন সংক্রান্ত কট্টর মন্তব্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন স্মোত্রিচ ও বেন গভির।

পশ্চিম তীরের একটি বসতিতে বসবাসকারী স্মোত্রিচ দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ইসরাইলি বসতির সম্প্রসারণের পক্ষে এবং এই অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সঙ্গে একীভূত করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী টানিয়া ফায়োন এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে এটাই এই ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।’

গত ২১ মে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নাটাসা পির্ক মুসার গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

এর আগে মে মাসেই স্লোভেনিয়া ইসরাইলের গাজায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আরও পাঁচটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে এক হয়ে বলেছিল, তারা গাজায় কোনো জনসংখ্যাগত বা ভৌগোলিক পরিবর্তনকে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করে।

গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানিয়ে গত বছর আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেনের পর স্লোভেনিয়াও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

জাতীয়

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে ‘জনপ্রিয়’ লেখক হিসেবে পরিচিত পেলেও সমালোচনা কখনো পিছু ছাড়েনি তার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশ যখন উত্তাল, সবাই যখন কোটার বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঠিক তখনই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তিনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে/ আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানের প্রেক্ষিতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাফর ইকবাল। তাতে তিনি লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।’

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তার এমন নেতিবাচক মন্তব্যে গত বছর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় জাফর ইকবালকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।

এরপর ১৭ জুলাই জাফর ইকবালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও আজীবন নিষিদ্ধ করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

জাফরের এমন কাণ্ডে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইনভিত্তিক বইয়ের দোকান রকমারি.কম ঘোষণা দেয়, তারা আর অনলাইনে জাফর ইকবালের বই বিক্রি করবে না। এখনো রকমারিতে জাফর ইকবালের বই ‘নট অ্যাভেইলেবল’ দেখা যায়।

প্রগতি বইঘরও জাফর ইকবালের বই বিক্রি না করার ঘোষণা দেয়। একই ইস্যুতে জাফর ইকবালের বই বিক্রি না করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বই কেনার প্লাটফর্ম ‘বুকস অব বেঙ্গল’।

এমনকি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিষোদগার করায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় এই লেখকের ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ নামের বইটির পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীতে ফেলেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন নামে এক পরিবেশকর্মী ও বইপ্রেমী।

মামুন ওই সময় একটি ভিডিওবার্তায় জাফর ইকবালকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার (জাফর ইকবাল) লেখা অনেক বই আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে পড়িয়েছি। অনেক কষ্টের টাকায় বইগুলো কিনেছি। আর নয়, আজকে আপনার বই আমি ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীতে ফেলব। আজকে গ্রাম-গঞ্জে থেকেও আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনাকে ভাসিয়ে দিলাম। আপনার মতো বোদ্ধা, অসাধুদের উসকে দেওয়ার মতো মানুষের প্রয়োজন নেই। আপনি আর বই লেখিয়েন না। আমাদের অনেক প্রকাশকও আপনার লেখা আর ছাপাবে না।

এদিকে টানা এক মাসের বেশি সময় আন্দোলনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হয়। হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা পালিয়ে ভারত চলে যান। এখনো আত্মগোপনে রয়েছে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী।

৫ আগস্টের পর থেকে আড়ালে রয়েছেন জাফর ইকবালও। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন তা এখনো অজানা।

তবে জাফর ইকবাল কোথায় আছেন তা জানতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় পোস্ট দিতে দেখা যায়। ‘গর্তে আছেন’ বলেও অনেককে মন্তব্য করতে দেখা যায়।

নতুন বাংলাদেশ গঠনের পর ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে জাফর ইকবালকে নিয়ে ট্রল ও মিমে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে গর্তের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন ‘জাফর ইকবালের বর্তমান অবস্থান’।

ফেসবুকে জাফর ইকবাল সম্পর্কিত পোস্টের কমেন্টবক্সে জাফর ইকবালকে ‘দালাল’, ‘চাটুকার’ ও ‘প্রতারক’ বলে সম্বোধন করতে দেখা যায়।

অনেকেই লেখেন, নতুন স্বাধীন দেশে জাফর ইকবালের অনুভূতি কেমন?

জাতীয়

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল কত শতাংশ ভোট পেতে পারে, তা নিয়ে তরুণদের ওপর জরিপ পরিচালনা করেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং একশনএইড বাংলাদেশ। তাদের জরিপে দেখা যায়, নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পাবে বিএনপি। এরপরে জামায়াতে ইসলামী ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে।

চলতি বছরের ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। দেশের আটটি বিভাগের প্রতিটি থেকে দুটি জেলা এবং প্রতি জেলার দুটি করে উপজেলা থেকে তরুণদের বাছাই করা হয়। এতে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণের (নারী ও পুরুষ) মতামত নেওয়া হয়েছে।

তরুণদের মতে, যদি কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায় তাহলে ১৫ দশিমক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে। এছাড়া দেশের অন্যান্য ইসলামিক দল ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

এই জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ এখনো ভোটার হননি।

জরিপের ফলাফল নিয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, কেবল ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এখানে যে মতামত এসেছে, তা শুধু বাছাই করা ওই তরুণদের মতামত। এটাকে দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর বা অন্যান্য বয়সের মানুষের মতামত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। বিশেষ করে রাজনীতির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে তা কখনোই করা সংগত হবে না।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তরুণদের ভাবনা সম্পর্কিত এ জরিপটি সোমবার প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সানেমের গবেষণা সহযোগী সাফা তাসনিম। অনুষ্ঠানে তরুণদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।

তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতার পেছনে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা উঠে এসেছে জরিপে। অন্তত ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ সামাজিক মাধ্যম থেকে রাজনীতির তথ্য পান।

জরিপের একটি প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে তরুণ নেতৃত্বের দলগুলোর রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করেন কি না। এতে ৪২ শতাংশের বেশি তরুণ আশাবাদী বলে জানান।

এছাড়া এই তরুণদের দলগুলো তরুণদের চাহিদা ও প্রয়োজনকে উপস্থাপন করতে পারছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে জরিপে দেখা যায়, নিশ্চিত নন ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ তরুণ এবং ৩০ শতাংশের বেশি তরুণ বলেছেন, এ দলগুলো তরুণদের চাহিদা ও প্রয়োজন কিছুটা উপস্থাপন করতে পারছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৬০ শতাংশ তরুণ পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান বিষয়ক সংস্কার চান। তরুণদের প্রায় ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ মনে করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক। আর সহায়ক নয় বলে মনে করেন ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ তরুণ। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমবর্ধমান উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ। একেবারে উদ্বিগ্ন নন বলে জানিয়েছেন ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ৩০ শতাংশ বলেছেন কখনো কখনো উদ্বিগ্ন বা এ বিষয়ে মতামত নেই।

কত সময়ের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে—এর উত্তরে ৩৯ শতাংশের বেশি বলেছেন, তারা জানেন না এবং সাড়ে ২২ শতাংশ বলেছেন, কখনোই না। অন্যদিকে ১১ শতাংশের বেশি বলেছেন, পাঁচ বছরের মধ্যে ক্ষমতায় আসবে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, রাজনীতিতে যেসব তরুণ আসেন তারা সুযোগ–সুবিধা পাওয়ার আশায় নাকি সত্যিকারের পরিবর্তন বা আদর্শ নিয়ে আসেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব সব সময় তরুণেরাই দিয়েছেন, কিন্তু নীতিনির্ধারণে গিয়ে আর এই তরুণেরা থাকেন না।

অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, সবকিছু মিলিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করা হচ্ছে সেখানে এই সময়টুকুকে কতটা কাজে লাগানো যাচ্ছে তা দেখতে হবে। পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনেরা যদি সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে তাহলে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের আশা বাস্তবায়িত হবে না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকার।

জাতীয়

মুর্শিদাবাদ শহরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হাজার দুয়ারী আর ইমামবাড়া থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশেই একটা ভগ্নপ্রায় সিংহদরজা। লাল ইট বেরিয়ে এসেছে, কোথাও ভেঙেও পড়েছে।

সিংহদরজাটা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই কেমন যেন গা ছম ছম করে ওঠে– বিশেষ করে একটা পুরনো নীল রঙের বোর্ডে চোখ পড়লে মনে হয় যেন টাইম মেশিনে চেপে পিছিয়ে গিয়েছি ২৬৮ বছর আগে।

যেন দেখতে পাচ্ছি ১৭৫৭ সালের জুলাইয়ের এক বা দুই তারিখে এই সিংহদরজা দিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক তরুণ বিধ্বস্ত বন্দিকে। তার নানা উপাধি। কখনো সম্বোধন করা হয়, বা কয়েকদিন আগেও করা হতো মনসুর-উল-মুলক, কখনো বা হিবুত জং বলে।

তার পুরো নাম অবশ্য মীর সৈয়দ জাফর আলি খান মির্জা মুহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা। ছোট করে বললে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা। আর যে সিংহদুয়ার দিয়ে বন্দি সিরাজউদ্দৌলাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, লোকমুখে আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটির নাম ‘নিমকহারাম দেউরি’। কেন এরকম একটা নামকরণ হলো- সেটা আন্দাজ করা কঠিন হবে না, যদি জানতে পারেন যে ওই প্রাসাদটি কার।

‘নিমকহারাম দেউরি’

পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে মীর জাফরের প্রাসাদকে স্থানীয় মানুষ নিমকহারাম দেউরি বলেই ডাকেন। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করা হয়েছিল এই প্রাসাদেই, আবার ভিন্ন মতও আছে। সেই মতটা হলো গঙ্গার পশ্চিম তীরে সিরাজের প্রাসাদ– মনসুরগঞ্জ প্রাসাদেই বন্দি সিরাজকে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং সেখানেই মীর জাফরের পুত্র মীরণের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়।

এ বিষয়ে লালবাগ কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার পরে তার শরীর টুকরো করে ফেলা হয় এবং হাতির পিঠে চাপিয়ে সেই দেহখন্ডগুলো মুর্শিদাবাদ শহরে ঘোরানো হয়েছিল। মীর জাফরের বংশধরদের কাছ থেকেই জানা গেছে, এখন যেখানে সরাইখানা এলাকা, সেখানে যখন ওই হাতিটি নিয়ে যায় সিপাহীরা, সেখানকার মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

অধ্যাপক ফারুক বলেন, একটা জনরোষ তৈরি হয়েছিল, যার মোকাবিলা করতে সাহস দেখাননি সিপাহীরা। দেহখণ্ডে ভরা বস্তাটি তারা একটি কুয়োতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান। সেই থেকেই ওই এলাকাটি সিরজউদ্দৌলা বাজার বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন আর তার কোনো অস্তিত্ব নেই।

আবার মীর জাফরের বংশধরদের অনেকে বিশ্বাস করেন পারিবারিকসূত্রে পাওয়া আরেক কাহিনী। সেটা হলো- মীরণের নির্দেশে নয়, সিরাজকে গুলি করে হত্যা করেছিল দুই ব্রিটিশ সৈনিক।

এই ইতিহাসবিদের কথায়, আমি এটাও ওই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছেই শুনেছি যে, সিরাজকে বন্দি করার পরে সম্ভবত মীর জাফর ইংরেজদের চালটা ধরতে পেরেছিলেন এবং তিনিই মীরণকে পাঠিয়েছিলেন, যাতে সিরাজ পালিয়ে যেতে পারেন। সেখানে পাহারায় ছিল দুই ব্রিটিশ সিপাহী। তারা এই পরিকল্পনাটা জেনে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে মেরে ফেলে সিরাজউদ্দৌলাকে।

মীর জাফরের বংশধরেরা কোথায়?

মীর জাফরের বংশধরেরা অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন মুর্শিদাবাদসহ বিশ্বের নানা জায়গাতেই। মীর জাফরদের বংশধরদের এখনো নবাব, ছোটে নবাব বলে ডাকা হয়। লালবাগের কেল্লা নিজামতের ভেতরেও থাকেন ওই বংশের বেশ কয়েকজন।

ছোটে নবাব বলে পরিচিত সৈয়দ মুহাম্মদ রাজা আলি মির্জা বলছিলেন, আমাদের ফ্যামিলির তিন হাজারের মতো সদস্য আছেন। অনেকে এখানেই থাকেন, কেউ ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা বাইরে চলে গেছেন। তবে তাদের সবার বাড়ি এখানে রয়েছে।

আলি মির্জা আরও দাবি করছিলেন, পাকিস্তানের চতুর্থ ও শেষ গভর্নর জেনারেল এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার আলি মির্জাও তাদেরই পরিবারের সদস্য এবং মীর জাফরের বংশধর। এই কেল্লা নিজামতেই তার জন্ম, পরে যুক্তরাজ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন ইস্কান্দার মির্জা।

ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের বংশধর মীর জাফর

মীর জাফরের পূর্বপুরুষরা আরব থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়। মীর জাফরের বংশধরেরা দাবি করেন যে তারা ইমাম হাসান ও হোসাইনের উত্তরপুরুষ।

বেশ কয়েকটি প্রামাণ্য ইতিহাস গ্রন্থেও মীর জাফরের বংশ পরিচয়ের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে যেমন আছে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত পূর্ণচন্দ্র মজুমদারের লেখা ‘মসনদ অফ মুর্শিদাবাদ’, তেমনই আছে বাংলায় সমকালীন মুসলমানদের নিয়ে লেখা খন্দকার ফজলে রাব্বির আকর গ্রন্থ ‘হাকিকত মুসলমান-ই-বেঙ্গালাহ’-ও। পূর্ণচন্দ্র মজুমদারের বইটিতে তাদের বংশতালিকাও পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় বলছিলেন, মীর জাফর বাংলার মুঘল অশ্বারোহী বাহিনীর বকশী ছিলেন, অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলে পে মাস্টার জেনারেল বা প্রধান সেনাপতি। তার পরেই ছিলেন রায় দুর্লভরাম সোম। তিনি ছিলেন বিদেশি, আরব বিদেশি– নাজাফ থেকে এসেছিলেন।

রজতকান্ত রায় বলছেন, তিনি যখন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, তখন সাধারণ অশ্বারোহী ছিলেন। তারপরে ধীরে ধীরে তার পদোন্নতি হয় বিশেষ করে আলিবর্দি খাঁয়ের সময়ে। রায় দুর্লভ ছিলেন নিজামত দেওয়ান আর মীর জাফর ছিলেন বকশী। আলিবর্দি খাঁ এদের দিয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন যে তারা সিরাজের পক্ষে থাকবে যে কোনও যুদ্ধে।

পলাশীর ‘বিশ্বাসঘাতক’

ভারতের, বিশেষ করে বাঙালীদের একটা বড় অংশ জেনে এসেছেন যে মীর জাফরের ষড়যন্ত্রের জন্যই পলাশীর যুদ্ধে ক্লাইভের বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। তবে মীর জাফরের বংশধরেরা সেকথা বিশ্বাস করেন না।

তারই বংশধর, সৈয়দ মুহাম্মদ বাকের আলি মির্জার কথায়, যুদ্ধটা হল কিসের জন্য– কে নির্দেশ দিয়েছিল! মীর জাফর ভাবলেন যে আমি প্রধান সেনাপতি, কিন্তু যুদ্ধের নির্দেশটা কে দিল!

তিনি বলছেন, ট্রেচারি বলা হয় – কী ট্রেচারি করেছিলেন তিনি? যুদ্ধ হচ্ছে কিন্তু তিনি ভাগ নিলেন না – সেইজন্যই উনাকে বিশ্বাসঘাতক বলা হয়। যুদ্ধে অংশ না নেওয়ার জন্য যদি বিশ্বাসঘাতক হয়ে যায়, সেটা তো মানা যায় না। আজ পর্যন্ত তো কেউ প্রমাণ করতে পারল না যে উনি গদ্দারি করেছেন।

এই দাবি যেমন অনেক ইতিহাসবিদ মানেন না, তেমনই সাধারণ মানুষের বড় অংশই মীর জাফরকে এখনও বিশ্বাসঘাতক বলেই মনে করেন আর তা নিয়ে গত ২৬৮ বছর ধরেই নানা বিদ্রূপ শুনতে হয় তার বংশধরদের।

সৈয়দা তারাৎ বেগম, মীর জাফরের অষ্টম প্রজন্মের বংশধর সৈয়দা তারাৎ বেগম বলছিলেন, মীর জাফরকে নিয়ে ইংরেজরা তো খেলা করল– একটা গোটা বংশকে নিয়ে খেলা করল। দেশের মানুষ সেটা বুঝতে না পেরে মীর জাফরকে একটা শিখণ্ডী খাড়া করে উনাকে বিশ্বাসঘাতক করে দিল।

তার প্রশ্ন, এখন কেন নতুন ভাবে আপনারা জানতে চাইছেন – যদি ট্রেইটার হয়ে থাকে, তাহলে ট্রেইটার। এখনও পর্যন্ত এই পরিবারের খারাপ কোনো কাজ হলে লোকে বলে মীর জাফরের বংশধর আর ভাল কিছু করলে বলে এটা মুর্শিদাবাদের লোক।

মীর জাফরকে বিশ্বাসঘাতক বলা হয়ে থাকে তিনি ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিলেন বলে, তবে সেই ব্রিটিশ বনিকরা কিন্তু তাকেও সরিয়ে দিয়েছিল মসনদে বসার বছর তিনেকের মধ্যেই।

তার জামাই মীর কাশিমকে নবাব বানায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, যদিও তিন বছর পরে আবারও মীর জাফরকে ফিরিয়ে আনা হয় বাংলার মসনদে।

জীবনের শেষ দিন – ১৭৬৫ সালের পাঁচই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মীর জাফরই ছিলেন বাংলার নবাব। প্রাসাদের সামনেই তাদের পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত আছেন মীর জাফর।