জাতীয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) শপথ গ্রহণ করেছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাদের শপথ পাঠ করান।

রোববার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ আলী আকবর।

অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

আগামীকাল (সোমবার) থেকে তারা নির্বাচন কমিশন ভবনে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। সেখানে সকালে তাদের বরণ করে নেওয়া হবে। পরে দুপুর ১টায় নতুন কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা রয়েছে।

শনিবার বিকালে সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বাধীন অপর চার নির্বাচন কমিশনার হলেন— অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নিয়োগ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লে­খ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো। নির্বাচন কমিশন আইনের অধীনে গঠিত এটিই প্রথম কমিশন।

নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার পর যেদিন প্রথম চেয়ারে বসেন, সেদিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাদের দায়িত্বকাল।  আগামীকাল (সোমবার) এই কমিশন দায়িত্ব নেবেন।  গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার কমিশন বিদায় নিলে দ্বিতীয়বারের মতো পুরো কমিশন ফাঁকা হয়ে পড়ে।

জাতীয়

দেশে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আরও ১১ জন মারা গেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১ জন বেশি মারা গেছেন। গতকাল মারা গিয়েছিল ১০ জন। আজ ১১ জনসহ এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৬ জনে। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ২৫ হাজার ৬৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ জন। আগের ২৪ ঘন্টায় ২৭ হাজার ৪৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৫১৬ জন। গতকালের চেয়ে করোনা সংক্রমণ কমেছে দশমিক ০৫ শতাংশ। গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আজ তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ হাজার ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৮৬৩ জন। শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আজ এই জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১ জন মারা গেছেন। গতকাল এই জেলায় ২ জন মারা গিয়েছিল।

আজ চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ জন জন, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ২ জন করে এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। তবে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে আজ করোনায় কেউ মারা যায়নি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৯৩৬ জন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮২ জন। সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৯২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

জাতীয়

আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জেতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার রাতে পৃথক বার্তায় এ অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

অভিনন্দন বার্তায় রাষ্ট্রপতি কার্যালয় থেকে বলা হয়, এক ম্যাচ হাতে রেখেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। টাইগারদের জয়ের এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।

অপর অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওয়ানডে সিরিজ জয়লাভ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।  এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল টাইগাররা।

ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে আফগানিস্তান ৪৫.১ ওভার খেলে ২১৮ রান করে গুটিয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশ পায় ৮৮ রানের জয়।

আফগানিস্তানে বিপক্ষে এ সিরিজ জয়ের মাধ্যমে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজে জয় পেল। সিরিজের শেষ ম্যাচটি আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয়

বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধানতম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র। এ দেশের ৯৮.৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। ভাষাবিকাশের ইতিহাসে ১৩৭২ বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ পুরোনো এ ভাষা। পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা ছিল বাংলা। সুলতানি আমলেও এ অঞ্চলের অন্যতম রাজভাষা ছিল বাংলা। মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচিত হয়েছিল বাংলায়। আরাংকান রাজসভার আনুকুল্যে বাংলা সাহিত্যের প্রভূত সমৃদ্ধি সাধিত হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী বাংলার নবজাগরণ উত্থান এবং বাংলার কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক বিকাশকে এক সূত্রে গ্রথিত করেছিল বাংলাভাষা ও সাহিত্য। বর্তমানে মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠবৃহত্তম ভাষা।

মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বিভাগোত্তর কালে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু বে-আইনিভাবে ক্ষমতার দাপটে বাংলার বদলে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেছিল জিন্নাহ-নাজিমুদ্দীন গংরা। ফলে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জিন্নাহর ‘সাধের পাকিস্তান’ কায়েমের পর ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি বাংলাভাষা আন্দোলনকে মূলীভূত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ স্ফূর্ত হয়েছিল বায়ান্নোর চেতনার শক্ত পাটাতনে দাঁড়িয়ে ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালের উত্তাল আন্দোলন ও সংগ্রামের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর ইশারায় ও তার উদাত্ত আহ্বানে গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বহু রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে একটি স্বাধীন স্বদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মূল অঙ্গীকার ছিল জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রয়োগ; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও আমরা তার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব করতে পারিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখনো জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষার পূর্ণ প্রয়োগ নয় কেন?

আমরা জানি, ১৯৪৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তরুণ তুর্কি শেখ মুজিবুর রহমান স্থির ও অচঞ্চল কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ‘বাংলাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করা হোক’। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নানা আন্দোলন, সংগ্রাম, মিছিল, মিটিং, সভা ও সমাবেশ শেষে এবং সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর রহমানসহ নাম না জানা শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা। বস্তুত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষাবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে গৃহীত হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করা হয়।

দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন ‘…আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে, সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু হবে। বাংলাভাষার পণ্ডিতরা পরিভাষা চালু করবেন, তারপরে বাংলাভাষা চালু হবে তা হবে না। পরিভাষাবিদরা যত খুশি গবেষণা করুন। আমরা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাভাষা চালু করে দিব, সে বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে, পরে তা সংশোধন করা হবে’।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু তার দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষিত এ প্রতিশ্রুতি সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাই তো আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলা। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যার সংবিধান বাংলাভাষায় লেখা হয়েছে এবং যার সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রভাষা একটি এবং তা হলো বাংলাভাষা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩ এ বলা হয়েছে-‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের কাল-বিলম্ব না করে বাংলায় রায় লেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি দাপ্তরিক কাজে বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করা হয়। এতদসত্ত্বেও স্বাধীনতার তিন বছর পর তিনি অত্যন্ত বিষাদের সঙ্গে লক্ষ করলেন যে, সরকারি-বেসরকারি অফিসে ও আদালতে এবং উচ্চশিক্ষায় অবাধে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষার চর্চা চলছে। এতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাভাষা প্রচলন সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়-‘দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষা করার পরও বাংলাদেশের বাঙালি কর্মচারীরা ইংরেজি ভাষায় নথি লিখবেন সেটি অসহনীয়। এ সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তী নির্দেশ সত্ত্বেও এ ধরনের অনিয়ম চলছে। আর এ উশৃঙ্খলতা চলতে দেওয়া যেতে পারে না’। এর আগে ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণকালে এবং ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাভাষাকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। মাতৃভাষার পক্ষে তার এ শক্ত অবস্থানের কারণে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনে তুমুল উদ্দীপনা প্রদীপিত হয়েছিল। চাকরি, পদোন্নতি, নথিপত্রে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচারে বাংলাভাষার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে বাংলাভাষা শেখার একটা ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট অকালে গণ-দুশমনদের বুলেটের আঘাতে তার জীবনাবসানের পর জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন প্রচণ্ড প্রতাপে বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাভাষার ওপর ঔপনিবেশবাদের ভূত আবার চেপে বসে। বাংলাদেশ বেতার, চালনা বন্দর, পৌরসভা, রাষ্ট্রপতি শব্দের পরিবর্তে যথাক্রমে রেডিও, পোর্ট অব চালনা, মিউনিসিপাল করপোরেশন, প্রেসিডেন্ট ব্যবহারের বাতিক বাড়তে থাকে। এ নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৯৭৯ সালে আবার সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এর কোনো বাস্তব প্রয়োগ ঘটে না। ফলে ১৯৮৪ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষ’ নামীয় একটি প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পের ১৮ নম্বর কার্যক্রমটি ছিল সব অফিসের সাইনবোর্ড ও কর্মকর্তাদের নামফলক বাংলায় লিখতে হবে। নথিপত্র বাংলায় লিখে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর বাংলায় দিতে হবে। সে অনুযায়ী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রতিনিয়ত বাংলায় স্বাক্ষর করছেন। কিন্তু সর্বত্র এ নির্দেশনা শতভাগ ফলবতী হয়নি। ফলে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে ১৯৮৭ সালে ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন’ প্রণীত হয়। এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশে সর্বত্র তথা অফিস-আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব ও অন্যান্য আইনানুগ কার‌্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। বাংলাভাষা প্রচলন আইনের ৩(১) উপধারায় বলা হয়, উল্লিখিত কোনো কর্মস্থলে কোনো ব্যক্তি বাংলাভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহলে সে আবেদন বে-আইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে। ধারা ৩(৩)-এ উল্লেখ করা হয়, যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ আইন অমান্য করেন তবে তিনি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু বরাবরের মতো এ আইনও পূণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। সে কারণে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তে বাংলাদেশ আইন কমিশন উচ্চ আদালতে আইনটি কার্যকর করার পাশাপাশি ন্যায়বিচারে সবার সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করে। অন্যদিকে ২০১২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানান রীতি অনুরসণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে ‘সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা’ নামক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। এতদসত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিসে, উচ্চ আদালতে বাংলাভাষার পূর্ণ প্রচলন ঘটেনি। সরকারি অফিসে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তার কর্মকাণ্ডে প্রধানত বাংলা ব্যবহার করলেও বাণিজ্যিক বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এবং করপোরেট অফিসে বাংলার উপস্থিতি খুবই কম বা কোনো ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক নথিপত্রে ইংরেজি ভাষার প্রচলন থাকায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকে ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’-এর লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ঋণ অনুমোদনের চিঠিতে বাংলা ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এ নির্দেশের বাস্তবায়ন খুব কমই লক্ষ করা যায়। প্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসা এবং উচ্চশিক্ষায়ও ১৯৮৭ সালের বাংলাভাষা প্রচলন আইনের প্রয়োগের তেমন বালাই নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকেও বাংলার প্রয়োগ নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দের একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজাউল হক নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বাংলাভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ অনুযায়ী অফিস-আদালত, গণমাধ্যমসহ সর্বত্র বাংলাভাষা ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি দূতাবাস ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সাইনবোর্ড, নামফলক ও গাড়ির নম্বর-প্লেট, বিলবোর্ড এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখা ও প্রচলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশের তিন মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে এ আদেশটি কার্যকর করতে বলে। কিন্তু সে আদেশের বাস্তবায়নে লক্ষ্যযোগ্য কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এরপর ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার এবং গাড়ির নতুন প্লেটে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ অনুরোধেরও পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেনি। অপার বিস্ময় জাগে এই দেখে যে, ষোলো কোটি বাঙালির এই বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে লেখা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-এর ওয়েবসাইটে সরকারি পঞ্চাশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নামের তালিকা, সেটি ইংরেজিতে বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে ব্র্যাকেট বন্দিতেও বাংলা নামের বালাই নেই। অথচ প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, সেটির নামকরণ বাংলায় করার কথা রয়েছে। যেমন, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাভাষা প্রচলন আইন থাকার পরও আমারা ডিপিডিসি, বিআরটিসি, টেলিটক, বিটিএমসি, বিজিবি, বিটিসিএল, বিজেএমসি ইত্যাদি নামকরণ দেখতে পাই। অথচ প্রতিবেশী দেশ নেপালে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিদেশি ভাষা পরিত্যাগ করে স্থানীয় নিজ ভাষায় মাত্র দুই মাসের মধ্যে নামকরণ করেছে।

আসলে বাংলাভাষার প্রয়োগ সাধনে আমাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করে। তা না হলে প্রেরক ও প্রাপক বা আদান ও প্রদানকারী বহিরঙ্গে বাঙালি হলেও বিয়ে, জন্মদিন, বউভাত গায়ে হলুদসহ নানা আয়োজনের আমন্ত্রণপত্র ইংরেজিতে রচনা করবেন কেন? দ্বিতীয়ত যে রোমান হরফে বাংলা লেখার বিরুদ্ধে পাকিস্তান জামানায় এত আন্দোলন করেছি আমরা, সেই আমরা কেনইবা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে রোমান হরফে বাংলা লিখছি? স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেই শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়াশোনা ও ভাব বিনিময়কালে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ এক লেখায় আফসোস করে বলেছেন, ‘বাংলা ছাড়া তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় অন্য কোনো বিভাগে বাংলায় প্রশ্নপত্র রচিত হয় না।’

দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বাংলা গান পরিবেশনের বিরতিতে কথোপকথনকালে উপস্থাপক ও শিল্পী হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা মিশ্রণে অদ্ভুত বাক্য বিনিময় করে থাকেন। এফএম রেডিওর উপস্থাপকদের তো মনে হয় তাদের মাতৃভাষা ইংরেজি, কখনো হিন্দি বা অন্য ভাষা। আর এখানে তারা কষ্ট করে বাংলা বলছেন। সবশ্রোতা বাঙালি হওয়ার পরও জকি নামক এসব উপস্থাপক কুল হ্যালো ভিউয়ার্স, হ্যালো লিসেনার্স বলে জগাখিচুড়িসমেত বিকৃত ভাষায় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন।

আমাদের নতুন প্রজন্ম স্মার্টনেস প্রকাশের প্রত্যয় থেকে ভিন্ন ভাষার মিশ্রণে নতুন নতুন অদ্ভূতুড়ে শব্দ ব্যবহার করছে। ট্রিট, জোশ, পিনিক, অসাম, মাগার, বিন্দাস, প্যারা, প্রাংক, মাইরালা, খ্রাপ (খারাপ), সেইরাম, ভাল্লাগছে, আম্রা (আমরা), এক্টা, আজিব, তার ছিঁড়া, Kmn,

ekdm Bay/Bai, Wlc, Bandu, Wcm, Gf, Tnxq, R8, Hbd, Gm/Gd, Nc, Knk, Srsly ইত্যাদি উচ্চারণে ও লেখায় তারা ভাব বিনিময় করছে।

বস্তুত বাংলাভাষার এ দীনদশার মূল কারণ আমাদের কোনো ভাষানীতি নেই, নেই কোনো ভাষা পরিকল্পনা। বিকৃতিকারীদের জন্য নেই কঠোর কোনো শাস্তির ব্যবস্থা। অথচ একুশের চেতনার কথা হরহামেশা আমরা বলি, ভাষা নিয়ে কত-শত গর্ব করি; কিন্তু অন্তরে ও বাইরে গভীর অনুরাগ লালন করি না। একুশের যে স্লোগান ‘মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘সর্ব স্তরে বাংলাভাষা চালুক কর’, ‘মাতৃভাষা হবে শিক্ষার বাহন’ তার প্রতি আনত হই না। কিন্তু চীন, কোরিয়া, জার্মানি, জাপান, তুরস্ক, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইরানি প্রমুখ জাতি মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তাই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে আমাদের আগে মাতৃভাষার দ্বারস্থ হতে হবে। রবীন্দ্রনাথ যে বলেছেন ‘আগে চাই বাংলাভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন’-সে কথা সর্বাগ্রে মানতে হবে। ভাষার গাঁথুনি সবল করার পাশাপাশি বাংলাভাষাকে অর্থনৈতিক স্রোতধারার সঙ্গে সংযোগ সাধন করতে হবে। এরপরে পর-ভাষার প্রতি নজর দিতে হবে। কারণ শেকড় শক্ত-পোক্ত না হলে সে বৃক্ষ কোনদিন ফলবতী হয় না, তেমনি শত-সহস্র শাখায় সেটি পল্লবিতও হয় না।

সেলিম আকন্দ , লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

জাতীয়

দেশে দীর্ঘদিন পর করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৭৪ জনে।

একই সময়ে নতুন করে ১ হাজার ৯৫১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৪২ জনে। শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে রোববার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু খবর জানানো হয়। এদিন শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৯৮৭ জন।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই বছর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় গত বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

২০২১ সালের ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এরপর বেশকিছু দিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়।

এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০ এর নিচে নেমে আসে।

২০২০ সালের এপ্রিলের পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর প্রথম করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুহীন দিন পার করে বাংলাদেশ। সর্বশেষ দ্বিতীয়বারের মতো ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুশূন্য দিন পার করেছে দেশ।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রন ঝড়। ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ এবং ৬ জানুয়ারি তা ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এরপর থেকে সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে।

জাতীয়

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সাল থেকে দুই দিন করে সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

শনিবার মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে নতুন পাঠ্যসূচির পাইলটিংয়ের জন্য নির্বাচিত ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বর্তমানে বেশির ভাগ স্কুল ও কলেজে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া বাকি ছয় দিন পাঠদান হয়ে থাকে। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, “২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই দিন করে সপ্তাহিক ছুটি থাকবে। পাশাপাশি নতুন পাঠক্রমে যারা যুক্ত হচ্ছেন তারাও এখন থেকেই সপ্তাহে দুদিন ছুটি পাবেন।”

তিনি বলেন, “শুধু জ্ঞান নয়, এর সাথে দক্ষতা অর্জনই মূলত নতুন পাঠ্যসূচির লক্ষ্য। সেটি বাস্তবায়নেই আমাদের আগামী দিনের পথচলা।

“আমরা দেখব নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দক্ষতাসম্পন্ন হচ্ছেন কিনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে কিনা। সেটি এখন দেখার বিষয়। আমরা যখন দেখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের থেকে ফিডব্যাক পাবো, তখন নিজেদের সার্থক মনে করব।“

এখন পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি বাস্তবায়িত হবে। এটা সফল হতে পারলে ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে ষষ্ট, সপ্তম শ্রেণি থেকে বাস্তবায়ন করব। ২০২৪ সালে এসে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়িত হবে। সে হিসেবে ২০২৪ সাল থেকে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগ থাকছে না।”

আগের পাঠক্রমে সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা ছিল না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা দেখব নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দক্ষতাসম্পন্ন হচ্ছেন কি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছেন কি না। সেটি এখন দেখার বিষয়।

“আগের পাঠক্রমে সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা ছিল না। সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন করতেই নতুন পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে।”

আমরা দীর্ঘদিন পর নতুন একটি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।

 

জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ জনের।

একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৫০ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৩০৪ জন।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ৪৭৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩২ জন। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৭৪টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২৪ হাজার ৫০৬টি এবং নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ হাজার ৬৯৮টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২টি।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সাতজন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। মৃত ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে একজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে চারজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে চারজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুইজন।

এতে আরও বলা হয়, মৃত ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিভাগের পাঁচজন, চট্টগ্রাম বিভাগের চারজন, রাজশাহী বিভাগের একজন, খুলনা বিভাগের একজন, বরিশাল বিভাগের একজন ও রংপুর বিভাগের একজন। মৃত ১৩ জনের মধ্যে ১২ জন সরকারি হাসপাতালে এবং একজন বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৩৩৯ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ১৩৮ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন চার লাখ ৩৯ হাজার ৬১০ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিন লাখ ৮৬ হাজার ১৮৭ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৫৩ হাজার ৪২৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে।

জাতীয়

‘এক পায়ে যুদ্ধ জয় করা’ তামান্না নূরার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য শনিবার রাতে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তামান্নার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে যান।

সেখানে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান নেতৃবৃন্দ। এ সময় তামান্নাকে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর দুটি বই উপহার দেন তারা। একই সঙ্গে তারা তামান্নার পড়াশুনা এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রলীগ সব সময় পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।

ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে তামান্নার পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে তামান্নার মা-বাবা। তারা দুইজনেই বলেন, শুধু তামান্নাকে না; সমাজের সকল প্রতিবন্ধীর পাশে থাকবে ছাত্রলীগ এমনটাই কামনা তাদের।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশ, অধিকার ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগ্রাম করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার সুদূর ঢাকা থেকে আমাদের ছোট বোন তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তামান্না সংগ্রাম করে তার যে শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করছে, তার পাশে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার আছি। তার পড়ালেখার জীবনে যদি কোনো জায়গায় কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তাহলে ছাত্রলীগ তার পাশে থেকে সমাধান করবে। তার উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, তামান্না খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে তার। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বা পরীক্ষার জন্য যে সাপোর্ট লাগে তার ব্যবস্থা আমরা করব। ভর্তি পরীক্ষার জন্য অন্য সবার চেয়ে তার প্রস্তুতি যেন কোনো অংশে কম না হয়, তার সব ব্যবস্থা আমরা করব।

তিনি বলেন, যদি তার পরিবার চায়, তাহলে আমরা তাকে ঢাকায় ভাল শিক্ষক দিয়ে লেখাপড়ার বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে দেব এবং তার পরিবারকে ঢাকায় থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা করব। আমি চাই, তার যে প্রতিভাগুলো আছে তা যেন সঠিকভাবে বিকশিত হয়। তামান্নার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী যেন তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামান্নার পাশে থাকবেন এবং আমরাও তার নির্দেশনায় তামান্নার পাশে থাকব।

ঝিকরগাছা উপজেলা ছাত্রলীগর সাধারণ সম্পাদক সভাপতি এহাসানুল হাবীব শিপলু বলেন, তামান্নার পড়াশুনার সব দায়িত্ব নিয়েছে ছাত্রলীগ। তার পড়াশুনার জন্য যাবতীয় উপকরণ ছাত্রলীগ দিয়ে যাবে। শুধু তামান্না না, তার ছোট্ট দুই ভাই-বোনের পড়াশুনার দেখভাল করার জন্য যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক।

তামান্নার পাশে ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদক পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত তামান্নার বাবা রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী।

তামান্নার মা খাদিজা পারভীন শিল্পী বলেন, সেই ঢাকা থেকে তামান্নাকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মীরা এসেছে। তামান্নাকে কাছে পেয়ে তারা মিষ্টিমুখ করান। তামান্নাও তাদের পেয়ে অনেক খুশি। তামান্নাকে তারা অনুপ্রেরণা যোগাতে অনেক নির্দেশনা দিয়েছে। পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছে। তামান্নার যারা খোঁজ খবর নিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তামান্নার জন্য

সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন উদ্যমী এই শিক্ষার্থীর মা।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান পিকুল, সাগর হোসেন সোহাগ, সুব্রত হালদার বাপ্পি, সিদ্ধার্থ কুমার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিকুল ইসলাম বাধন ও নাজমুল নাজ, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দীন কবীর
পিয়াস, সাধারণ সম্পাদক তানজিব নওশান পল্লবসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।

এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও।

বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকাল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিওকলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে যে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

একই সাথে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে তার স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেছেন তিনি।

এছাড়া মঙ্গলবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী তামান্নাকে ভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন এবং খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষামন্ত্রী তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে যশোরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

জাতীয়

স্বাধনীতার পর এই প্রথম কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে পড়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে কেউ নেই।

আগেও এই পদগুলো একবার পুরোপুরি ফাঁকা হয়েছিল। তবে সেটি সেনা সমর্থিত ১/১১ সময়কার জরুরি অবস্থার সময়।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতেও সিইসির পদ ফাঁকা থাকার নজির আছে। এক্ষেত্রে সিইসির পদটি ফাঁকা ছিল মোট চারবার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দিনের জন্য ফাঁকা ছিল ২০০০ সালে ও ২০০৭ সালে। তবে নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) পদ ১/১১ সরকারের সময় ছাড়া কখনো ফাঁকা ছিল না।

দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সিইসি পদে নিয়োগ পান বিচারপতি মো. ইদ্রিস। তিনি ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর জিয়াউর রহমান নিয়োগ দেন বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলামকে। তিনি ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা বসে নিয়োগ দেন বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মাসুদকে। তিনি ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। সবচেয়ে কম সময় অর্থাৎ ১০ মাস ৬ দিন দায়িত্ব পালন করে একই বছর ২৪ ডিসেম্বর বিদায় নেন তিনি। ২৫ ডিসেম্বর নিয়োগ পান বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ।

এই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সিইসি রউফ ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল বিদায় নেওয়ার পর ৮ দিন ফাঁকা ছিল পদটি। ওই প্রথম সিইসির পদটি ফাঁকা থাকে। সে বছরের ২৭ এপ্রিল এই পদে বিচারপতি একেএম সাদেককে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সময় অর্থাৎ ১১ মাস ১০ দিন দায়িত্ব পালনের পর চলে যান ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল। দুই দিন ফাঁকা থাকার পর ৯ এপ্রিল সিইসির পদে আসেন মোহাম্মদ আবু হেনা।

ওই বছর জুনে এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তিনি ২০০০ সালের ৮ মে চলে যাওয়ার পর ১৪ দিন ফাঁকা ছিল সিইসির পদটি। একই বছরের ২৩ মে আসেন এমএ সাইদ। ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি চলে গেলে ২৩ মে আসেন বিচারপতি এমএ আজিজ। বিএনপির আমলে নিয়োগ পাওয়া তিনিই শেষ সিইসি।

এরপর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হয়। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি এমএ আজিজ চলে গেলে ১৪ দিন ফাঁকা থাকার পর একই বছর পাঁচ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন ড. এটিএম শামসুল হুদা। ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার দায়িত্ব শেষ হলে তিনদিন ফাঁকা থাকার পর ৯ ফেব্রুয়ারি পদটিতে আসেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার দায়িত্ব শেষ হলে পাঁচদিন ফাঁকা থাকার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন কেএম নূরুল হুদা।

নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পুরো কমিশন ফাঁকা ছিল ২০০৭ সালে আজিজ কমিশন চলে যাওয়া পর। তিনি ২১ জানুয়ারি চলে যাওয়ার পর অন্য দুই কমিশনারের অধীনে চলে ৩১ জানুয়ারি। এরপর শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন দায়িত্ব নেন ওই বছর ৫ ফেব্রুয়ারি। সে সময় চারদিনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ফাঁকা ছিল। অন্যান্য সময় সিইসির পদ ফাঁকা থাকলেও কমিশনাররা ছিলেন।

কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়েছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন পুরোপুরিভাবে ওই বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি চলে যাওয়ার পর। সেই হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তি করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুরো কমিশন বিদায় নিয়েছে। বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে সবগুলো পদ।

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ নতুন কমিশন নিয়োগের জন্য এরই মধ্যে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে আইনে নির্ধারিত পন্থায় ৩২২ ব্যক্তির নাম জমা পড়েছে। তাদের মধ্য থেকে যোগ্য ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। যার ভিত্তিতে নতুন কমিটি পাবে নির্বাচন কমিশন। ফলে এই মধ্যবর্তী সময়ে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।

এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এরই মধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন ফাঁকা থাকলেও সাংবিধানিক কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হবে না। ইসি চিব তার কাজ পরিচালনা করবেন।

ইসির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ছিল। সংবিধান কার্যকর ছিল না। তাই সে সময় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তার আগে কখনও পদগুলো একসঙ্গে ফাঁকা ছিল না।

এদিকে নতুন কমিশনকে বরণের প্রস্তুতিও শুরু করেছে ইসি সচিবালয়। এরই মধ্যে সদ্য বিদায়ী কমিশনারদের দফতরগুলো ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে, সরিয়ে ফেলা হয়েছে নামফলকও।

জাতীয়

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হল গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ এর নবম ও দশম খণ্ড, যার মাধ্যমে শেষ হল এ ধারাবাহিক প্রকাশনার।

নবম খণ্ডে আওয়ামী লীগ গঠনের বিভিন্ন ধাপ, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে গিয়ে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাক্ষাৎ এবং সেখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয়ের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এই খণ্ডের নাম রাখা হয়েছে ‘মিশন পাঞ্জাব’।

আর দশম খণ্ডের শিরোনাম ‘মুক্তির পাথে’। এই খণ্ডে কারাগারে থাকা শেখ মুজিবের অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া, সেখানে গোপনে ভাষা আন্দোলনের জন্য সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন, জেলে অনশন, শরীর ভেঙে পড়া, ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, জেল থেকে মুক্তি, প্রাদেশিক নির্বাচনে বিজয় এবং ছয় দফাসহ বিভিন্ন ঘটনা স্থান পেয়েছে।

পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর লাহোরে পৌঁছানো, ফেরার সময় দিল্লি, কলকাতা হয়ে বেনাপোল দিয়ে খুলনা, ছদ্মবেশে থেকে জাহাজ চড়ে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছানোর ঘটনা এই খণ্ডে এসেছে।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশের পর শিশু-কিশোর ও তরুণদের কাছে তার ঘটনাবহুল জীবন নতুন রূপে তুলে ধরার জন্য বইটিকে গ্রাফিক নভেলের রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে প্রতিটি খসড়া দেখে দেওয়ায় অনেক কাজ সহজ হয়েছে এবং অনেক ভুলও এড়ানো গেছে বলেন জানিয়েছেন গ্রাফিক নভেল মুজিবের সম্পাদক শিবু কুমার শীল।

মঙ্গলবার শুরু হওয়া একুশে বইমেলোয় শেষ দুটি খণ্ড পাওয়া যাচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি।

শিবু বলেন, “আগামী ১৯ তারিখ শেষ দুই খণ্ডের আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা উৎসব হবে। সিআরআইয়ের স্টলের পাশে হবে সেই অনুষ্ঠান।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রাফিক নভেল হলেও বাংলাদেশে এটাই ছিল এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ। ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ গ্রাফিক নভেল মুজিবের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) উদ্যোগে এর বিভিন্ন পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।

প্রকাশক হিসেবে রয়েছেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং আরেক ট্রাস্টি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তার বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।

এছাড়া আছে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বংসহা সহধর্মিনীর কথা, যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে পাশে ছিলেন অবিচল।

বইমেলায় এই প্রকাশনার ওপর বিভিন্ন ছাড় থাকবে বলেও জানান শিবু। শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে সবকটি খণ্ড কিনলে ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।

এই গ্রাফিক নভেল নিয়ে ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত তিনটা খণ্ড ইংরেজিতে এবং জাপানি ভাষায় দুটি খণ্ড অনূদিত হয়েছে। ভবিষ্যতে ফরাসি ও চায়নিজ ভাষায় অনুবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে।”