রাজনীতি

বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে যুদ্ধবন্ধসহ ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কি-নোট স্পিকারের বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। আমাদের এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।

ছয় দফা প্রস্তাবের প্রথমটিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। এর মাধ্যমে ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে ড. ইউনূস বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করে খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে। পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে, বাঁধা নয়।

ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ আমরা যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করেছি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়। এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, নৈতিক ব্যর্থতা। ক্ষুধা দূর করতে যেখানে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্র কিনতে বিশ্ব ব্যয় করেছে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। একে কি আমরা অগ্রগতি বলব?

অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, পুরনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতি কোটি কোটি মানুষকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আমাদের নতুন ব্যবসা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।

অধ্যাপক ইউনূস তার স্বপ্নের ‘তিন শূন্য বিশ্ব’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ) ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি অপরিহার্য। বিশ্ব বাঁচানোর একমাত্র পথ।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার সাফল্য আমরা দেখেছি। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন। গ্রামীণ ডানোন শিশু অপুষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে এমন বহু সামাজিক ব্যবসা মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে। তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনগত ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, বাঁধা নয়।

তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন। তরুণদের বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিলের মাধ্যমে মূলধনে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কৃষি-উদ্ভাবন কেন্দ্র, কৃষিপ্রযুক্তি, চক্রাকার খাদ্য ব্যবস্থা ও জলবায়ু স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দিতে হবে। যুব সমাজের ওপর বিনিয়োগ করলে শুধু বিশ্বকে খাদ্য দিতে পারব না, বিশ্বকেই বদলে দিতে পারব।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোটের (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমরা এফএও ও জি-২০’র সঙ্গে মিলিতভাবে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নৈতিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এফএওর ৮০ বছর পূর্তি শুধু উদযাপন নয়, ভবিষ্যতের প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘হাত ধরে হাতে, উন্নত খাদ্য ও উন্নত ভবিষ্যতের পথে’ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, খাদ্য শুধু ক্যালরির ব্যাপার নয়, এটি মর্যাদার, ন্যায়ের এবং আমরা কেমন পৃথিবীতে বাস করতে চাই তার প্রতিচ্ছবি।

তিনি এফএওর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তি জোটের প্রশংসা করে বলেন, এটি ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে বলেন, তরুণরা সাহস ও আশায় ভরপুর হয়ে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। তাদের দাবি ছিল ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও আস্থার ভিত্তিতে সমাজ গঠন। এ তরুণরাই এখন নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে, যেখানে জনগণ শাসনের কেন্দ্রে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে আমরা ন্যায় ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব।

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভূমির আয়তনের দিক থেকে ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা (বাংলাদেশ) আজ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করছে এবং মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে আছি ধান, সবজি ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে। কৃষকরা ফসলের নিবিড়তা ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন এবং আমরা জলবায়ু সহনশীল ১৩৩ প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করেছি। আমরা কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করেছি, ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি, শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, অপুষ্টি কমিয়েছি, খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য এনেছি এবং কৃষিকে সবুজ করেছি। মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছি।

রাজনীতি

ভোটারদের পছন্দের তালিকায় দেশের ছয়টি বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। রংপুর বিভাগে এগিয়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।

বেসরকারি সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং পরিচালিত ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় খণ্ড’ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিডিবিএল ভবনে আয়োজিত ‘ভোটারদের সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ভিন্নতার প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় জরিপের ফল প্রকাশ করে বেসরকারি সংস্থাটি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন, ড. আসিফ শাহান, জামায়াতের ড. নকিবুর রহমান, এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, পলিসি এনালিস্ট ড. অনন্য রায়হান, বাংলা আউটলুকের মোকতাদির রশিদ এবং গবেষণা সংস্থা ব্রেইনের ড. শফিকুর রহমান। জরিপের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন ইনোভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াত সারওয়ার।

জরিপে দেখা যায়, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপি এগিয়ে। ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপি ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ, জামায়াত ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ শতাংশ ১৭ দশমিক ৩ ও এনসিপি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সিলেটে বিএনপি ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, জামায়াত ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১৪ শতাংশ। রাজশাহীতে বিএনপি ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ, জামায়াত ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ৯ দশমিক ২ শতাংশ। খুলনায় বিএনপি ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, জামায়াত ৩০ দশমিক ১ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ঢাকায় বিএনপি ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জামায়াত ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিএনপি ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ, জামায়াত ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ ও আওয়ামী লীগ ১৭ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার সমর্থন পেয়েছে।

অন্যদিকে রংপুর বিভাগে জামায়াত এগিয়ে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে, যেখানে বিএনপি ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বরিশালে আওয়ামী লীগ এগিয়ে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার সমর্থন নিয়ে, বিএনপি ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও জামায়াত ২৯ দশমিক ১ শতাংশ।

সার্বিকভাবে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বিএনপি, জামায়াত দ্বিতীয়, আওয়ামী লীগ তৃতীয় এবং এনসিপি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।

২০২৫ সালের ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপে রাজনৈতিক বিষয়, সামাজিক উন্নয়ন এবং নির্বাচনী পছন্দ নিয়ে জনগণের ধারণা জানতে সারা দেশে ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতার মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপে ৯ হাজার ৩৯৮টি পরিবার এবং এক হাজার ১৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ এবং পেশার মানুষের মতামত উঠে এসেছে।

জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের ১৯.৬ শতাংশ মনে করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না, যেখানে নারী ভোটারদের মধ্যে এই হার ১২.৯ শতাংশ।

বিএনপি ও জামায়াতের ভোট শহর এবং গ্রামে প্রায় সমান। তবে, এনসিপির ভোট গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি।

বিএনপি ও জামায়াতের জনপ্রিয়তায় বয়সভেদে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। জামায়াতের তুলনায় বিএনপির স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ভোটারের হার বেশি। তবে, জামায়াতের স্থানীয় রাজনীতি সম্পর্কে জানেন না, এমন ভোটারের সংখ্যাও বেশি। অন্যদিকে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এনসিপির পক্ষে ও বিপক্ষে দুই দিকেই জোরালো সমর্থন রয়েছে।

সারাদেশে মোট ভোটারের ৩২.৬ শতাংশ এখনো সিদ্ধান্তহীন, যা ২০২৫ সালের মার্চে ছিল ২৯.৪ শতাংশ। জেন জি প্রজন্মের ৩৬.৩৪ শতাংশ এবং নারী ভোটারদের ৩৭.৮৮ শতাংশ এখনো কোনো দলকে বেছে নিতে পারেননি।

এনসিপির সমর্থকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী এবং ৪৭ শতাংশ পুরুষ। যা বিএনপি ও জামায়াতের থেকে একেবারে ভিন্ন, কারণ ওই দল দুটির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমর্থকের হার প্রায় সমান।

বিএনপি কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে থেকে বেশি ভোট পায়, অন্যদিকে এনসিপির সমর্থকদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি।

‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’-র দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল থেকে বাংলাদেশে একটি পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চিত নির্বাচনী আবহের চিত্র ফুটে উঠেছে। ভোটারদের পছন্দে অঞ্চল, প্রজন্ম এবং লিঙ্গভেদে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

এই জরিপ বলছে, সিদ্ধান্তহীন ভোটার, বিশেষ করে জেন জি প্রজন্ম এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই আগামী নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বাস্তবতা মাথায় রেখে নিজেদের কৌশল সাজাতে হবে এবং ব্যাপক জনসমর্থন পেতে শহর-গ্রামের ব্যবধান কমাতে কাজ করতে হবে।

রাজনীতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে ২১৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে দলটির কাছে। তবে বিএনপি এবার কৌশলগতভাবে সর্বোচ্চ ৪০টি আসন মিত্রদের ছেড়ে দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮টি, ১২ দলীয় জোট ২১টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৩টি, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫টি, গণফোরাম ১৫টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ১০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে বিএনপির কাছে।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল সরাসরি লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রার্থীদের নাম হস্তান্তর করেছে। দলীয় সূত্র বলছে, মিত্রদের আসন ছাড় নিয়ে এখন চলছে দরকষাকষি ও তীব্র আলোচনা।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে ২২টি আসন গিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে। এবার জামায়াতের সঙ্গে কোনো প্রকার জোট বা সমঝোতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ফলে নতুন শরিকদের মধ্য থেকেই আসন ছাড়ের হিসাব কষছে দলটি।

বিএনপির একাধিক টিম এখন শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে জনপ্রিয়তা যাচাই করছে। আগের নির্বাচনে শরিকদের দেওয়া আসনগুলোর অনেকগুলো এবারও ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেসব মিত্র এবার মনোনয়ন পাবেন না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষে (উপরের কক্ষ) মূল্যায়নের উদ্যোগ নিতে পারে বিএনপি।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনে মিত্রদের ভূমিকা তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তবে আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাকেই প্রধান মানদণ্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের কত আসন ছাড়বে, সেটি আলোচনার বিষয়। এমন আসনেই শরিকদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যেগুলোতে জয়লাভের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।’

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘যেসব দল অতীতে রাজপথে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আমরা তাদের সঙ্গে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে একসঙ্গে থাকতে চাই। সবার মতামত নিয়েই রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।’

সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম

সূত্র জানায়, পাঁচটি জরিপ ও নিজস্ব গোয়েন্দা টিমের তথ্য বিশ্লেষণের পর কয়েকজন নেতাকে আসন্ন নির্বাচনে সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে।

এর মধ্যে রয়েছেন—

• জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর–১)

• এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর–১)

• বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ–৫)

• নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া–২)

• গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬)

• এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ (ঢাকা–১৩)

• বিএনপি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা–১৭)

• এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা–৭)

• এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল–২)

বিএনপির সূত্র বলছে, এদের মধ্যে কয়েকজনকে মৌখিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে বিএনপি। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে দুই দলের মধ্যে। যদিও এনসিপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারা ৩শ আসনেই প্রার্থী দিতে চান এবং বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি জোটে যেতে চান না।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এনসিপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘ইতিবাচক’ এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের কত আসন ছাড় দেওয়া হবে তা চলতি মাসের মধ্যেই জানা যাবে। যেসব শরিকদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে, তাদের বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে দলটি।

যদিও মিত্রদের দাবি অনেক বেশি, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন—এবার আসন ছাড়ের সীমা সর্বোচ্চ ৪০টির বেশি হবে না। কারণ, দলটির নিজস্ব সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই সীমিত আসন ছাড় নীতি মিত্রদের সঙ্গে ভবিষ্যতে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে পারে।

রাজনীতি

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ইতালির রাজধানী রোম পৌঁছেছেন। রোম পৌঁছালে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ টি এম রকিবুল হক প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সফরসূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উদ্যোক্তারা খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিনিময় করেন। এবারের ইভেন্টটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোমে এফএও সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সক্রিয় কূটনৈতিক উপস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

রাজনীতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নয়, বরং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি থেকেই এসেছে।

তিনি বলেন, এই পিআর পদ্ধতি জনগণ চায় না।

জনগণ চায় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে।

রোববার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৫ বছর পর আমরা এক ফ্যাসিস্ট শাসনকে সরিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, যেন তিনি দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন। তিনি চেষ্টা করেছেন, সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন এবং নতুন কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ১৭ অক্টোবর সেসব প্রস্তাবে সই হওয়ার কথা।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে ছিল। কিন্তু এখন কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে বিএনপি সংস্কার চায় না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। বিএনপি নিজেই সংস্কার আন্দোলনের ফসল।

কিছু রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে অভিযোগ তুলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আমরা চাই ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হোক। জনগণ এখনই নির্বাচন চায়। আমরা চেষ্টা করছি নতুন করে বাংলাদেশকে জাগিয়ে তোলার, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই সুযোগটি যেন হারিয়ে না যায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

রাজনীতি

“বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ১৫০০ টাকায় চিকিৎসা হয় না,” বলেন তিনি

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহিত প্রকাশ করে হাসনাত বলেন, “প্রিয় শিক্ষক সমাজ, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনাদের দাবি করা বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এই মোনাফেক অন্তর্বর্তী সরকার মেনে নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা রাজপথ ছাড়বেন না।

“এটা রাষ্ট্রের কাছে কোনো ভিক্ষা নয়, এটা রাষ্ট্রের কাছে আপনাদের অধিকার।”

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের শহীদ মিনার না ছাড়ারও আহ্বান জানান তিনি।

বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অব্স্থান কর্মসূচি শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলে। কিন্তু শিক্ষকদের একটা অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া বলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ পর পর বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়। প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামানও আনা হয়।

বিকালে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রীয় চরিত্র হতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই হীন কাজের জন্য তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে।

“আর যাদের আপনারা (পুলিশ) গ্রেপ্তার করেছেন, তাদের সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।”

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ায় সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেতেন। এখন পান ৫০ শতাংশ হারে।

তারা এখন ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দাবি করছেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতার দাবি নিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের চাওয়াতো কত কম, রিপোর্টটা দেখাইতে ১৫০০ টাকা ভিজিট দিতে হয়। বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ১৫০০ টাকায় চিকিৎসা হয় না। বাংলাদেশি পোশাক

“স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমরা বানাইসি দেশের স্বাস্থ্য সংস্কার করার জন্য। কিন্তু উনি যখন অসুস্থ হন উনি চিকিৎসা নিতে যান সিঙ্গাপুর। এর থেকে লজ্জার কি আছে?

“উচিত ছিল, আমার জনগণ যতক্ষণ না পর্যন্ত সুচিকিৎসা পাচ্ছে, আমি যেহেতু এই চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছি, আমি নিজেও এই চিকিৎসা কার্যক্রমের অংশ হবো; কিন্তু আমরা দেখলাম তারা নির্লজ্জের মত সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যায়।”

প্রশাসনে পদয়ান-পদোন্নতি নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন কর হয়েছে বলে অভিযোগ করে হাসনাত বলেন, “আমরা কখনই শিক্ষকদের গলা চেপে ধরতে দেখি নাই রাষ্ট্রের।

“তাদের এই মিটিংয়ের প্রতি সম্মান জানাইয়া আমরা রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করতে চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ করতে হবে।”স্বাস্থ্য বীমা

শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে কর্মবিরতির কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে সোমবার থেকে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

লাগাতার অবস্থানরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবারের পরিবর্তে সোমবার থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

একই সঙ্গে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী৷

রাজনীতি

পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভূক্ত করে গণভোটের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে তৃতীয়বারের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদশ জামায়াতে ইসলামী।

রোববার (১২ অক্টোবর) সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।

জামায়াতের ৫ দফা দাবি হচ্ছে- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে গণভোট প্রদান করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভূক্ত করে গণভোট প্রদান করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা ও স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

বিবৃতিতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘৫ দফা দাবির প্রেক্ষিতে গত ১ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি, ১০ অক্টোবর ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের নিকট স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, জামায়াতের দাবির প্রতি দেশবাসীর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সরকারের উচিত জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করে অবিলম্বে জামায়াতের ৫-দফা দাবি মেনে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের জনগণ রাজপথ ছাড়বে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এখন পর্যন্ত আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেওয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তৃতীয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করছে।’

তৃতীয় দফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে ১৪ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে মৎস্য ভবন হয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। যাত্রাবাড়ী মোড়, মৎস্য ভবন ও গাবতলী পয়েন্টের মানববন্ধনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

এদিন দেশের সকল বিভাগীয় শহরেও মানববন্ধন করবে দলটি। পরদিন ১৫ অক্টোবর দেশের সকল জেলা শহরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকাবাসীসহ সারাদেশের জনগণ এবং জামায়াতের সকল জনশক্তিকে এসব কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

রাজনীতি

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল হওয়ায় ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা এরইমধ্যে নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি চাকরি হারাতে হচ্ছে সরকারি কর্মে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার বা থাকার যোগ্য হবেন না- এমন বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হয়েছে। পাশাপাপি কোনো সরকারি পদেও অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। ফলে অভিযোগ দখিল হওয়া একশ’ জনের মধ্যে যারা সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন তারা চাকরি হারাবেন, বাদবাকিরা নির্বাচন করার সুযোগ হারিয়েছেন।

যদিও সংবিধান মতে, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যদি দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি লাভের পর ৫ বছর পার না হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য থাকবেন না বা পদ হারাবেন।

প্রসিকিউশন বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধান দ্বারা প্রটেক্টেড। তাই এ আইন অনুসারে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় অভিযোগ দাখিল হলে নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। আর আইনটি ভুতাপেক্ষভাবে কার্যকর হওয়ায় আইন সংশোধনের আগে পরে এখন পর্যন্ত দাখিল করা সব মামলার আসামির ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য হবে।

এ পর্যন্ত ১০ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অন্তত ১০০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

১০ মামলার মধ্যে শেখ হাসিনাকে তিন মামলায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দুই মামলায়, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে দুই মামলায় এবং রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমানকে দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ফরমাল চার্জ দাখিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, তার জোট সঙ্গী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাভার-আশুলিয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কিছু নেতা নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন।

আইন সংশোধন
গত ৬ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশে আইনের ২০(সি) সংযোজন করা হয়। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩-এ একটি সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজিত ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত আইনের সেকশন ৯–এর ১–এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো পাবলিক অফিসে অধিষ্ঠিত হওয়ারও অযোগ্য হবেন। তবে ট্রাইব্যুনাল কাউকে অব্যাহতি বা খালাস দিলে তার ক্ষেত্রে এসব বিষয় প্রযোজ্য হবে না ।

শেখ হাসিনার মামলা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনে দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞের অভিযোগে একটি এবং গুমের অভিযোগে দুটি মামলায় ফরমাল চার্জ দেওয়া হয়।

জুলাই অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি বাকি দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এখন যুক্তি তর্ক শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

গুমের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

গুমের অপর মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

চানখারপুল হত্যাযজ্ঞ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।

এ মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে আটজনকে। এর মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার রয়েছেন শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।

মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে ১৫তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইঁয়া।

আবু সাঈদ হত্যা
জুলাই আন্দোলনে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ জন আসামি পলাতক। অন্য ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন- রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানো
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত হন এবং একজন গুরুতর আহত হন। পরে নিহত ৫ জনের লাশ এবং আহত ব্যক্তিকে পুলিশ ভ্যানে তুলে পেট্রোল ছড়িয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

সেখানে নিহতরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বোস্তামি ও আবুল হোসেন; একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে কারাগারে রয়েছেন আটজন। তারা হলেন- ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই শেখ আফজালুল হক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান ও কনস্টেবল মুকুল। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক এসআই বিশ্বজিৎ সাহাসহ এ মামলার আট আসামি পলাতক। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা যুবককে গুলি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর রামপুরায় একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা একজনকে গুলি ও একই এলাকায় অন্য দু’জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় পলাতক সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চার আসামি হলেন- ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম ভূইয়া। আর গ্রেফতার আসামি হলেন রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার।

হাসানুল হক ইনু
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে একমাত্র আসামি করে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে ২০ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন।

মাহবুব উল আলম হানিফ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে।

রামপুরা হত্যা
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলামসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন, বিজিবি কর্মকর্তা মো. রাফাত–বিন–আলম মুন, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান।

চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, যে সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়, তারা দেশের কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন না। অর্থাৎ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। কোনো সরকারি অফিসে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। ফরমাল চার্জ দাখিল হওয়ামাত্র তারা আর সার্ভিসে আছেন বলে গণ্য হবেন না।

তিনি আরও বলেন, এটা একটা নতুন সংশোধন। একটা রাষ্ট্র বিপ্লবোত্তর পরিবেশে যখন পুর্নগঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তখন রাষ্ট্রের প্রয়োজেন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই আইন শুধু নয়, বিভিন্ন আইনের সংশোধনী আনছে। তার অংশ হিসেবে সময়ের প্রয়োজেন এটা করা হয়েছে।

এ আইনটি সংবিধান দ্বারা প্রটেক্টেড একটি আইন। সুতরাং এ আইনের রেটরোসফেক্টিভ ইফেক্ট আছে (ভূতাপেক্ষ)। এটাকে আবার সংবিধান সম্মত করা হয়েছে। সুতরাং এটার সব কিছু বৈধ বলে গণ্য হবে। এটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না।

রাজনীতি

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ভিসা জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করতে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন। বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘কিছু কিছু দেশে আমাদের ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা রয়েছে, যা আগের সরকারের সময় থেকেই চলমান। প্রধান উপদেষ্টা চান, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।’

তিনি জানান, পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের নতুন শ্রমবাজার তৈরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সফরে প্রধান উপদেষ্টা কসোভো ও আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং কসোভোর প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আলোচনায় শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। তবে এসব দেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। প্রেস সচিব বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ভিসার জন্য নয়াদিল্লিতে গিয়ে আবেদন করতে হয়। প্রধান উপদেষ্টা চান, এসব জটিলতা দ্রুত দূর হোক।’

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, বৈঠকে ফার্মাসিউটিক্যালস, পোশাক ও অন্যান্য ব্যবসা খাতের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। সেখানে আমদানি নীতি, গ্যাস সরবরাহ, ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ, আইসিটি খাতের প্রণোদনা ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়।

বিশেষভাবে, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ গ্যাস সরবরাহ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলেন, ম্যানমেড ফাইবারসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ধারাবাহিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট সম্প্রসারণসহ নতুন ল্যান্ড বেস টার্মিনাল স্থাপনের দাবি উত্থাপন করা হয়। তারা উল্লেখ করেন, এ ধরনের উদ্যোগ শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়াতে সরকার এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে।’

আইসিটি খাত প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রচলিত খাতে প্রণোদনা কমিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নির্ভর খাতে প্রণোদনা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই খাতের কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শিগগিরই একটি রোডম্যাপ উপস্থাপনের কথা বলেছেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যাংকিং খাত, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, রিজার্ভ এখন পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান এবং মুদ্রাস্ফীতি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে।

রাজনীতি

প্রায় সাড়ে সাত বছর পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বুধবার (৮ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে তিনি রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে যান। স্বামীর সমাধির পাশে গাড়িতে বসে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাত করবেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গুলশানের বাসা ফিরোজার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। এর আগে রাত ১০ টার পরে নীল রঙের একটি প্রাইভেট কারে করে বিএনপি চেয়ারপারসন ফিরোজা থেকে বের হন। গাড়িতে দলীয় পতাকা ছিল।

এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার দুই ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন ইস্কান্দার ও শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা।

জিয়াউর রহমানের মাজারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা।

খালেদা জিয়ার আসার খবরে নেতাকর্মীরা রাতে চন্দ্রিমা উদ্যানে ভিড় করেন।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, মাজার জিয়ারতের ঘটনাটি আচমকাই ঘটেছে। তার স্বামীর সমাধি জিয়ারত করছেন—অস্বাভাবিক কিছু না। কেউ কেউ ধারণা করছেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ইচ্ছা থেকেই হঠাৎ মাজার জিয়ারত করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বুধবার রাতে হঠাৎ করেই বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামীর সমাধি জিয়ারতের কথা বলেন। তখন সবাই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনায় চন্দ্রিমা উদ্যানে আসার উদ্যোগ নেন। তিনি মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই জিয়ারতের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।

অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডার রাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন উনার স্বামী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। তখন একরকম দ্রুত তার ব্যবস্থা করা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার আগে সর্বশেষ খালেদা জিয়া তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার কারণে তিনি মুক্ত হওয়ার পর আর মাজারে যাননি।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি তাকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ চার মাস পর গত ৬ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে তিনি দেশে ফেরেন।