রাজনীতি

রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনের মতো বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হতে না পারলে সরকারকে গণভোট করার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)।

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

মুফতি রেজাউল করিম বলেন, স্বৈরাচার তৈরির রাস্তা খোলা রাখা যাবে না। সংস্কার না করেই নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মতো বিষয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষের জনসমুদ্র।

পিআর পদ্ধতির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান। কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেন-জির দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি।

মৌলিক সংস্কার নিয়ে কেউ কেউ গড়িমসি করছে অভিযোগ করে চরমোনাই পীর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করা। ৫৪ বছরের জমা হওয়া জঞ্জাল দূর করা। আমরা লক্ষ্য করছি, মৌলিক সংস্কারে কেউ কেউ গড়িমসি করছেন। এটা জুলাইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

১৯৭২ সালের সংবিধানকে গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই সংবিধান রচয়িতাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার ম্যান্ডেটই ছিল না। তারা ভিনদেশের সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি ও উন্নতি হয় নাই। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলুষিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সংবিধান মেনেই স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে। এ জন্যই আমরা সংস্কারের প্রশ্নে অটল-অবিচল ও আপোষহীন অবস্থান নিয়েছি।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কোনো ক্ষমা নেই মন্তব্য করে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, যারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনো জেলের বাইরে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, শুরু থেকেই ইসলামপন্থী সব ভোট এক বাক্সে আনার কথা বলে আসছি। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও অনেক রাজনৈতিক দলও এক বাক্স নীতিতে আসতে পারে, ইনশাআল্লাহ। যদি আমরা একত্রে নির্বাচন করতে পারি, যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে ইনশাআল্লাহ।

রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চরিত্র, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অবস্থার এখনো কোন পরিবর্তন হয়নি। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, কারও নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিকে অবশ্যই প্রতিহত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, তোমাদের জীবনের প্রথম ভোট হোক সত্যের পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে, ইসলামের বাক্সে। যদি তোমরা এটা করতে পারো, এ দেশকে আমরা গড়ে তুলবোই ইনশাআল্লাহ। আমাদের কেউ দমাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন, অনেক সময় দিয়েছেন। অনেকে রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। আপনাদের কুরবানির বদৌলতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ গণমানুষের শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এখন সময় ফসল ঘরে তোলার। সুতরাং মহাসমাবেশ থেকে ফিরে গিয়েই কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় করুন। গ্রাম-মহল্লা ও ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করুন। সব ভোটারের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিন।

সরকারের উদ্দেশ্যে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল। এত জনসমর্থন নিয়ে আর কোনো সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। সরকারকে বলব সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকুন। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না। নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন।

বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের অংশগ্রহণ 
সমাবেশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন।

ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রর সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা জালাল উদ্দীন, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।

রাজনীতি

উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নদীর পানিপ্রবাহ যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সমন্বিত অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়ন’ প্রকল্প নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি।

বৈঠকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জোং ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তাদের একটি দল এই প্রকল্পের বিস্তারিত রূপকল্প, কৌশল এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের নদীপ্রবাহকে। বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ। আমরা কোনোভাবেই আমাদের পানিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে চাই না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকার জনসংখ্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আমাদের দেশ বন্যাপ্রবণ। তাই পানিপ্রবাহ বন্ধ করে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে। বন্যার সময় আমাদের দেশের মানুষ উঁচু রাস্তা, সেতু এবং রেলপথে আশ্রয় নেয়। সুতরাং সেতু শুধু নির্মাণ করলে হবে না, এটি জনগণের জন্য আশ্রয় হচ্ছে নাকি বিপদ ডেকে আনছে সেটাও বিবেচনা করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তৃতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক সংযোগ। আমরা এ অঞ্চলে একটি ইনভেস্টমেন্ট হাব তৈরি করতে চাই। সেজন্য প্রকল্প এমন হতে হবে যা নেপাল, ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকেও সংযুক্ত করবে।’

বৈঠকে এ উন্নয়ন প্রকল্পে পানি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে এবং একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এর আগে হাওর এলাকায় বিশাল সড়ক নির্মাণ হয়েছে কিন্তু পরে দেখা গেল সেটি ওই অঞ্চলের পুরো ইকোসিস্টেমকে ভেঙে দিয়েছে। মানুষ মারাত্মকভাবে বন্যার কবলে পড়েছে। সুতরাং যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে হবে।’

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মাফিয়াতন্ত্রদের অপশাসন-দুঃশাসন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। যুব সমাজ রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। বিশেষ করে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ স্বৈরাচারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল।

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনের সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে পুরো দেশ একটি জ্বলন্ত অগ্নিগিরিতে পরিণত হয়েছিল। এই (ঢাকা-১৫) আসনে আমি নিজে প্রার্থী হলেও এখানে আমার আসার সুযোগ ছিল না। এমনকি এ আসনে দায়িত্বশীলকে নির্বাচনের মাত্র তিন আগে উঠিয়ে নিয়ে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। নির্বাচনের এজেন্ট ও সহকর্মীদের রাস্তায় হাঁটতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বরং তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে কনসালটেশন সেন্টারে আটক করে শারীরিকভাবে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। দিনশেষে কাউকে কাউকে ছেড়ে দিলেও অন্যদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ’

‘আগুনকে বেশিদিন ছাই চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তাই সে আগুনের লেলিহান শিখায় স্বৈরাচারের তখতে তাউস খান খান হয়ে গেছে। তাদের (আওয়ামী লীগের) পতন ঘটেছে লজ্জাজনকভাবে’ বলে বক্তব্যে যোগ করেন ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াত আমির বলেন—আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা দেশের বরেণ্য আলেম-ওলামাদের বিশেষভাবে টার্গেট করেছিল। মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে কথিত রিমান্ডের নামে চালানো হয়েছিল অবর্ণনীয় নির্যাতন। হাতে হ্যান্ডকাফ ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জেল থেকে জেলে স্থানান্তর করে তাদেরকে বেইজ্জতি ও নাজেহাল করা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসনসহ নানাভাবে তাদেরকে শহীদও করা হয়েছে

আল্লামা সাঈদীর কথা উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, একজন হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি চিকিৎসকরাও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেনি। এরমধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে। বাস্তবে কী হয়েছে আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।

থানা আমির রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিস শুরা সদস্য ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমুখ।

রাজনীতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক- ‘মব জাস্টিস’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার সমর্থনযোগ্য নয়।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি একথা বলেন।

রিজভী বলেন, “গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সব নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক- বিচার হবে আইনের মাধ্যমেই, ‘মব জাস্টিসের’ মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।”

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা এবং ‘মব জাস্টিসের’ মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।

‘মব জাস্টিসে’ দলের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান রিজভী। আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে কিভাবে আসামিরা হেনস্তার শিকার হন- এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সাবেক তিন সিইসি দায়ী থাকলেও আইনসম্মতভাবেই তাদের অপরাধের বিচার চায় বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশে আবারো করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে। কিন্তু সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ মাহমুদ হোসেন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সহ-সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, যুগ্ম সাধারণ বেলাল উদ্দীন সরকার তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটুকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল) নিযুক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ আজ এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৫ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে।

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি ও রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি,’ বলে ‘শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের’ একটি অডিও ভাইরাল হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথপোকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সেটি হাসিনার বলে সত্যতা পায়। পরবর্তীতে এই বক্তব্যের বিষয়ে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয় ট্রাইব্যুনালে।

প্রসিকিউশনের করা সে আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি গ্রহণ করে ১৫ মে’র মধ্যে তাদের জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৫ মে জবাব দাখিল না করায় তাদেরকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ২৫ মে তারা হাজির না থাকায় প্রসিকিউশনের আবেদনে শেখ হাসিনাসহ দু’জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হাজির হওয়ার জন্য বহুল প্রচারিত দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশক্রমে ট্রইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ এস এম রুহুল ইমরান স্বাক্ষরিত নোটিশটি ২৬ মে যুগান্তর ও নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নোটিশে ৩ জুন সকাল ১০ টায় ট্রাইব্যুনালে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব বা বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচার কার্য সম্পন্ন হবে।

তবে গত ৩ জুন আদালত অবমাননার অভিযুক্তরা হাজির না হওয়া ট্র্যাইব্যুনাল পরবর্তী আদেশের জন্য ১৯ জুন দিন ধার্য করেন।

রাজনীতি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তারা বর্তমান সংসদ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটের পরিবর্তে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত প্রায় ৭০ হাজার সদস্যের ‘এক্সটেন্ডেড ইলেক্টোরাল কলেজ’-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে।

তবে,দলটি জোর দিয়েছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় দিনের প্রথম পর্বের বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবু তাহের সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

আবু তাহের বলেন, আজ সকালে মূলত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কিভাবে হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একটি এক্সটেন্ডেড ইলেক্টোরাল কলেজ-এর পক্ষে, যেখানে পার্লামেন্টের সদস্য (যদি আপার হাউজ হয় তবে উভয় কক্ষের) এবং জেলা পরিষদ, মিউনিসিপ্যালিটি, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বার পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার জনপ্রতিনিধি থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সরকারের অধীনে হতে হবে, যেমনটি পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। কারণ, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে যারা নির্বাচিত হবেন তারা তো প্রকৃত জনপ্রতিনিধি হবেন না।

এ বর্ধিত নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী নমনীয়তা প্রকাশ করেছে। আবু তাহের জানান, বিভিন্ন পক্ষ জেলা পরিষদ, উপইউনিয়ন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সকলে মিলে যে পর্যন্ত ঐকমত্য হতে পারি, সেখানে জামায়াত ইসলামী তার মতকে সংশোধন করতে পারে।

বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায় সবাই একমত হয়েছেন বলে জানান আবু তাহের—তা হলো গোপন ব্যালটে নির্বাচন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার শুরু থেকেই সকল অভ্যন্তরীণ নির্বাচন গোপন ব্যালটে করে থাকে। তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ নিয়ম কার্যকর হলে তা ভোটের জন্য ভালো।

এছাড়া জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়েও প্রস্তাব দিয়েছে, যা এখনো আলোচনার এজেন্ডায় আসেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আজকের ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধান, রাষ্ট্রের মূলনীতি ও নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জামায়াতের অবস্থানে হঠাৎ পরিবর্তন কেন?

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সংস্কার, বিচারসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

এমনকি নির্বাচন নিয়েও এ পর্যন্ত তেমন কঠোর কোনো বক্তব্য আসেনি তাদের পক্ষ থেকে। তবে হঠাৎ করেই প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলটি। খবর বিবিসির।

এমনকি (১৭ জুন) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার প্রথম দিনেও অংশ নেয়নি জামায়াত।

যদিও বুধবার আলোচনার দ্বিতীয় দিনে অংশ নিয়ে দলটি জানিয়েছে, ‘লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি ও যৌথ সংবাদ সম্মেলন ঘটনার ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ হিসেবে তারা মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়নি।

দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিব্রত হয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও ‘জয়েন স্টেটমেন্ট এবং জয়েন প্রেস ব্রিফিং এখানেই আমাদের সমস্যা’ বলেন জামায়াত নেতা তাহের।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন উল্লেখ করে সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে সংস্কার কমিশনও খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না।’

এছাড়া নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।

জামায়াতে ইসলামীর এমন অবস্থানে এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে দলটির?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেছেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে না যাওয়া এবং সংস্কারের আগে নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াতের সাম্প্রতিক অবস্থান–অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছু ভিন্নমতেরই ঈঙ্গিত দেয়। যদিও এগুলো খুব মেজর বিষয় না। ’

তিনি বলেন, ‘একটা প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশে তো কখনোই হয় নাই, সেক্ষেত্রে কিছু মতভেদ থাকতেই পারে। তবে মেজর দুইটা পার্টির মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে যার অবসান হলে জাতির জন্য কল্যাণ হতো।’

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন জামায়াতের

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলে আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে নানা সময় বিএনপির ভিন্ন অবস্থান থাকলেও জামায়াত খুব একটা দ্বিমত করেনি।

তবে গত ১৩ই জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর থেকেই সরকারের সমালোচনা করছে জামায়াত। প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।

লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক ও যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে, প্রধান উপদেষ্টা ‘একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন’ বলেও মন্তব্য করেছিল জামায়াত।

এমনকি এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবে (১৭ জুন) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়ও অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে দলটি, যাকে তারা ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ হিসেবেই উল্লেখ করছে। যদিও (১৮ জুন) বুধবারের আলোচনায় অংশ নিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। ‌

এদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষ অবস্থানের আশ্বাস পেয়েই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় আবারো অংশ নিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জামায়াত আমিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি এবং উনি আশ্বস্ত করেছেন যে উনার সরকার নিরপেক্ষ সরকার। উনারা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ইনক্লাইন্ড (অনুরক্ত) না।’ এদিন নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতেও কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যিনি একটা বিল্ডিংয়ের তালা খোলার মতো ব্যবস্থা করতে পারেন নাই এক মাসেও, তিনশোটা কনস্টিটিউয়েন্সিতে (নির্বাচনি আসন) উনি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন, এটা খুবই একটা বিষ্ময়ের ব্যাপার।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ তাহের বলেন, ‘ইফ-যদি দিয়ে তো কোনো ফাইনাল ডিসিশন হয় না। আমাদের ঐকমত্য কমিশন এখনো ইফ-যদিতে আছে।’

রাজনীতি

রোহিঙ্গাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ সরকারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এই আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, পৃথিবীর দেশে দেশে উদ্বাস্তু সমস্যা আজও ভয়াবহ ও অমানবিক। জাতিগত সহিংসতা ও রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাহীনতাই এর প্রধান কারণ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই দিবসের প্রতি পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন এবং বিশ্বব্যাপী নিজ দেশে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মানুষদের মর্যাদা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রতি সক্রিয় সমর্থন অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।

তারেক রহমান বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফসহ কয়েকটি স্থানে স্থাপিত হয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহত্ শরণার্থী শিবির, যেখানে রয়েছে ১৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা নিজ দেশের আবাস ছেড়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে নিপীড়ণ-নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, এই সমস্যাকে এখন সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের সাধ্যমতো প্রচষ্টো নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি মানবতার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। তবে এখন তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গতিশীল কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মানবিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর। রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা, তাদের নিয়ে বাংলাদেশ কী কী ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে, মিয়ানমার কীভাবে তাদের বাস্তচ্যুত করেছে, প্রত্যাবাসনের নামে মিয়ানমার কীভাবে বারবার কথার বরখেলাপ করছে ইত্যাদি বিষয়াদি বর্তমান সরকারকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে।

রাজনীতি

বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠক শেষে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন, মতামত দিয়েছেন। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’

বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’

রাজনীতি

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করলেও গণমাধ্যম এখনো ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালোদিবস। এদিন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী সব দল বাতিল ও চরম কর্তৃত্ববাদী একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। তাদের অনুগত চারটি সংবাদপত্র রেখে গোটা জাতিকে নির্বাক করে দিয়েছিল। ফলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন। তাদের রুজি-রোজগার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ চরম নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। চিরায়ত গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং যার মূল শর্ত হচ্ছে বাক, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকায় রাষ্ট্র ও সমাজ জবাবদিহিতার আওতায় আসে এবং দেশের সরকার গঠনে নাগরিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে।

তারেক রহমান বলেন, পরবর্তীকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশের কাঙ্খিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। বাকশাল সরকারের সব প্রকার অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।

পৃথক এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে প্রয়োজন দ্রুত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। বিএনপি বহুমত, পথ ও দলের বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে বারবার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বহুমাত্রিকতা বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ।

রাজনীতি

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের শপথ পড়ানোর ইস্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো আইন ভঙ্গ করেনি।

ডিএসসিসির নগর ভবন তালাবদ্ধ করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার আসিফ মাহমুদ এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ এবং পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দেওয়ার আর কোনো আইনি সুযোগ নেই।

উপদেষ্টা বলেন, ডিএসসিসির মেয়রের শপথ পড়ানোর আইনগত কোনো সুযোগ না থাকলেও ইশরাক হোসেন ক্ষমতা প্রদর্শন করে নগর ভবন দখল করে রেখেছেন। এজন্য দক্ষিণ ঢাকার দৈনন্দিন নাগরিক সেবায় বিঘ্ন ঘটানো দায়িত্বহীনতা এবং আইনের শাসনের প্রতি অবমাননাকর।

‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের একজন নেতার কাছ থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ নগরবাসী প্রত্যাশা করে না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অবরোধের কারণে বিগত মাসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০-৪০ শতাংশ নাগরিক সেবা হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের অফিসাররা ওয়াসা অফিসে বসে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত না হয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অংশীজনদের থেকে সরকার আরও দায়িত্বশীল এবং পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করে।