রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষা নয়, ধ্বংসের জন্য লড়াই করছে। আওয়ামী লীগ শান্তি চায়।

তিনি বলেন, অশান্তি চাইলে বিএনপি এতদিনে একটা সমাবেশও করতে পারত না। ২৮ অক্টোবর শান্তির নামে অশান্তি করতে এলে এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

আগামী ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন বিএনপির মহাসমাবেশ রয়েছে।

সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশে দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন সফল হয়নি। আমাদের দেশেও ৬৯ ও ৯০ এর আন্দোলন দিনক্ষণ দিয়ে হয়নি। ভুল পথে চলার কারণে এবারো বিএনপির আন্দোলন খাদে পড়বে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তি চায়। আমরা ক্ষমতায়। অশান্তি কেন চাইব? তবে এবার অশান্তি করতে এলে দেখিয়ে দেব অশান্তি কাকে বলে।

নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর উত্তাল সমুদ্র দেখতে চাই। বিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরের গর্জন শুনতে চাই। আমরা শান্তি চাই। তবে কেউ অশান্তি করতে এলে খবর আছে।

তিনি বলেন, অনেক সহ্য করেছি। সহ্যের সীমারেখা আছে। ৪০ দল নিয়ে সমাবেশ করবে। স্বপ্ন রে স্বপ্ন! বিএনপির রঙিন সে খোয়াব, বেলুন চুপসে যাবে, একটু অপেক্ষা করুন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, তা অবাক করার মতো।

বিশেষ এ বর্ধিত সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

রাজনীতি

ভয়ভীতি, গ্রেপ্তার বা কোনো ধরনের বাধা দিয়েই সরকার এবারের মহাসমাবেশ আটকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়নি, পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

ভয় ভীতি প্রদান, গ্রেপ্তার বা কোনো বাধাই মহাসমাবেশ আটকাতে পারবে না। মানুষ এবার আন্দোলন করে বিজয় ছিনিয়ে আনবেই।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বার বার সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় আসা তাদের (আওয়ামী লীগ) মজ্জাগত অভ্যাস। আবারও তারা সে পথ বেছে নিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে একতরফা নির্বাচন করতে চায়। যাতে জনগণ ভোটকেন্দ্রমুখী না হয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে প্রতিটি স্টেপই ঝুঁকিপূর্ণ। সেটা দেখে লাভ নেই, জনগণ জেগে উঠেছে। বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি করে। তারা আবারও তাই করবে।

আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তার ও তল্লাশি করার ক্ষমতা দিয়ে সংসদে যে বিল উত্থাপন করা হয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আনসার বাহিনী প্রকৃতপক্ষে প্রশিক্ষিত কোনো বাহিনী নয়। আনসার বাহিনীকে অনেকটাই আধুনিক করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর সেটিকে রাজনীতিকরণ করার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে কোনো অগ্নিসংযোগ বা নাশকতামূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হলে বিএনপি-জামায়াত চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতসহ আরো অনেকেই মাঠে নামতে চায়। আন্দোলন করুক এই ব্যাপারে আমাদের কোন কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার ঐ রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা কোন ধ্বংসাত্মক কাজ করে বা কোন ধরনের দুর্বৃত্ত পরাণতায় জড়ায় আমরা কিন্তু ছাড় দেবনা। এটাই বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী আজ নবনির্মিত ১৫ বিশিষ্ট বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন পরবর্তী আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এর আয়োজন করে।

এরআগে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় নবনির্মিত অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১৫ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন উদ্ধোধন করেন।

সরকার প্রধান সময় দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন এই বিএনপি আমাদের কত নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে তাদের হাঁড় গুড়োগুড়ো করে হত্যা করেছে। এরপর আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্ট করলো ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে। তারা সে সময় ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। ৩ হাজার ২২৫ জন লোককে অগ্নিদগ্ধ করেছে, ৫শ’ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ৩৮৮টি গাড়ি, সাধারণ মানুষের প্রাইভেট কার, সিএনজি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করেছে। চলমান প্রাইভেট গাড়ি,বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং মামলা চলমান রয়েছে সে মামলাগুলো দ্রত সম্পন্ন করতে হবে। আইনজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে এটা আমার অনুরোধ। কারণ, এদেরকে যদি সাজা না দেওয়া যায় এরা এত অন্যায় করেছে যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই সবথেকে বেশি নির্যাতিত।

তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? কেন তাদের বিচার কাজ দ্রুত হবেনা। সে ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। কারণ, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই এসব অপরাধির মামলা কেবল চালালেই হবে না তারা যেন যথাযথ শাস্তি পায় তার ব্যবস্থা আপনাদের করতে হবে। এটা আইনজীবীদের কাছে তাঁর নিজের দাবি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিচারহীনতা যেন এদেশে আর না চলে। ন্যায় বিচার যেন মানুষ পায়। স্বজন হারিয়ে বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের যারা আমরা আপনজন হারিয়েছি তারা তা বুঝি। তিনি জাতির পিতা হত্যা এবং ৩ নভেম্বরের জেলহত্যার বিচার করতে পারায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া আদায় করেন। এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত। তিনি জিয়াকে এর বেনিফিসিয়ারি বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক। ন্যায় বিচার নিশ্চিত হোক। বিচার পেতে আমাদের মত যেন ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে না হয়। সেভাবে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার আমি আহ্বান জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ থেকে ’৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ২৯ বছরে এদেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় নাই। যারা ক্ষমতা ছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল, দেশের জন্য নয়। কিন্ত একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে যেটা আগে করেছিল। সেটা যেন আর করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমার একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে, কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন তাই উৎপাদন করেন।

অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর আইনি দর্শন’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় এবং পরে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পিরা সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।

আরো বক্তৃতা করেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহবায়ক এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ.এম. আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু প্রমুখ।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বহুতল নবনির্মিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনটি তৈরিতে ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশায় ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত অফিস স্পেস, মিটিং রুম, দ’ুটি কনফারেন্স রুম, রেকর্ড রুম, স্টোর রুম, ওয়েটিং এরিয়া, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, এক্সিবিশন স্পেস, রিসিপশন, রেজিস্ট্রেশন রুম, ব্যাংক, অ্যাকাউন্টস সেকশন, আইটি সেকশন ইত্যাদি। আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ কক্ষ, পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল কক্ষ, সুপরিসর মাল্টিপারপাস হল, নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ রয়েছে। এছাড়া টিভি লাউঞ্জ, কিচেন ও ডাইনিং হলসহ শতাধিক আইনজীবীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভবনটিতে চারটি লিফট, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং পুরুষ-নারী-প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক শৌচাগার রয়েছে। প্রকল্পে আরবরিকালচারের মাধ্যমে ল্যান্ডস্কেপিং করা হয়েছে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাবস্টেশন ও জেনারেটরের মাধ্যমে পৃথক বৈদ্যুতিক লাইন সংযুক্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

মানুষের কল্যাণে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিচার বিভাগ এবং আইনজীবীদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা না হয়। স্মার্ট জুডিসিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিসিয়ারি চালু করেছি। জেলে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করে দেয়া হয়েছে।

আগামীতে জেলায় জেলায় আইনজীবীদের জন্য বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ তাঁর সরকার নেবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সাথে সাথে আমার একটি অনুরোধ থাকবে আপনারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের কল্যাণ ফান্ড, যেটা জাতির পিতা করে দিয়েছেন, আমিও বিভিন্ন সময় দিয়েছি, সেটাতে আমি আরো ৩০ কোটি টাকা দেবো। আপনারাও সাধারণ আইনজীবীরা এতে কন্ট্রিবিউট করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হবো, ততবেশি আইনজীবী থেকে শুরু করে সবার জন্য সুযোগ অবারিত করে দিতে পারবো। আসুন সবাই মিলে সেই বাংলাদেশ গঠনে কাজ করি। আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যেন সাজা পায় সে জন্য কাজ করবেন।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন- আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন। এজন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, দুর্নীতি করতেতো আসিনি। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি একটি দাবি আছে, আইনজীবী ভবন করে দেয়ার। আর্থিকভাবে যত সচ্ছলতা আসবে, ধীরে ধীরে সব জেলায় এটা করে দিতে পারবো। তবে এখানে একটা শর্ত আছে, সেখানে আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও ফান্ড থাকতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড গঠন করেন, সেখান আপনারাও কিছু দেন আমিও দেবো।

তিনি বলেন, একেবারে নি¤œস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত দেশের সকলেই যেন ন্যায় বিচার ও উন্নত জীবন পায়, দারিদ্র্যমুক্ত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। আমাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে বিএনপি সরকারের আমলে যেখানে ৪১ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যের হার, আমরা তা কমিয়ে ১৮ দশমিক সাত ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেখানে ২৫ দশমিক পাঁচ ভাগ ছিল, সেটা কমিয়ে আমরা মাত্র পাঁচ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ কেউ এ দেশে হতদরিদ্র, ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়েছি। আজকে চাল উৎপাদন বা দানাদার শস্য প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টনের মতো এখানো আমাদের মজুত আছে।

জাতির পিতার হাতধর্ইে বাংলাদেশে বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার ৯ মাসের মাথায় কেবল একটি সংবিধানই আমাদের দেন নাই ’৭২ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার এ্যন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২’ জারি করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে তাদের জন্য ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ করেন এবং ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড গঠন করে দেন। তিনিই পাকিস্তান আমলের আইন পরিবর্তন করে নারীদের বিচার বিভাগে অন্তভ’ক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে যান। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ’৯৬ পরবর্তিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে প্রথম উচ্চ আদালতে নারীদের বিচারক হবার ব্যবস্থা এবং দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পদক্ষেপ জাতির পিতাই শুরু করে যান। সমুদ্র সীমা নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শুরু করেছিলেন।

’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেঈমান মোশতাক ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু টিকতে পারেনি। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসেন জিয়া। ক্ষমতা দখল করেন।

একাধারে সেনাপ্রধান আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতির ঘোষণা করেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করেন।

খুনিদের জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসায়। বাবা-মা হত্যার বিচার চাইতে পারবেন না, খুনীরা ক্ষমতায়, এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর ’৮১ সালে একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সে সময় আমি দেশে ফিরে দেখি ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার উচ্ছ্বিষ্ট বিলিয়ে কিছু লোকের ভাগ্য উন্নয়ন করেছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়নি। আমি গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াই। মানুষের কষ্ট দুর্দশা দেখি। পরে ২১ বছর পর আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।

সরকার প্রধান বলেন, ২০০১ এ বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছিল । তারা দেশের অর্থপাচার করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছে। সারাদেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। তারা

দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করেছিল। আর আজকে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। কোনোদিক থেকে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৮ অক্টোবর আমাদেরও কর্মসূচি আছে। নতুন করে নয়, আগেই আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জনতার ঢল নামবে। মহাযাত্রা শুরু হবে।
শনিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানানোর পর সেখানে এক সমাবেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, মহাসমাবেশের মাধ্যমে তাঁদের আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরু হবে। এখন ওবায়দুল কাদেরও ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের মহাযাত্রা শুরুর কথা বললেন।

বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন। আর বায়তুল মোকাররম থেকে ঢাকায় নামবে জনতার ঢল।

তিনি বলেন, ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। সেদিন ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ফখরুল সাহেবকে (ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সেই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানাই।

হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি মহল অস্থিরতার ডাক দিয়েছে। তারা অবরোধ করার ঘোষণা দিচ্ছে। তাদের অবরোধ কেমন, তা আমরা ২০১৪ সালে দেখেছি, ২০০১ সালে দেখেছি। তিনি আরও বলেন, এদের (বিএনপি) প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে তারা আবার ২০০১ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। সে সময় তারা মন্দিরে হামলা, বাড়িতে, দোকানে লুটপাট করেছে। নির্যাতন করেছে। সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটুক, তা আমরা চাই না। তিনি বলেন, রাজনীতিকে অশুভ শক্তিমুক্ত করতে হবে। সমাজে যারা অন্যায় অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব, অসাধারণ উন্নয়ন করেছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তারা দুজনেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মণীন্দ্র কুমার নাথের সভাপতিত্বে এই সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, সহসভাপতি তাপস কুমার পাল প্রমুখ।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার জাতীয়তাবাদী দর্শনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের বা বর্ণের নয় বরং এদেশে বসবাসরত সবারই। সেজন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও বলেছেন, তিনি সংখ্যালঘুতায় বিশ্বাস করে না। এখানে যারা বাস করেন সবাই বাংলাদেশি। কেউ সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু অধিকার সবার সমান। আমাদের সংবিধানেও এ কথাগুলোই বলা আছে। বিএনপি সেটাকে চর্চা করে ও লালন করে।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. আব্দুস সালাম, রমেশ চন্দ্র সেন, তরুণ দে, জয়দেব জয়, মিল্টন বৈদ্য, অমলেন্দু দাস অপু, অপূর্ব হালদার অপু, মৃণাল বৈদ্য, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা হাজার বছর ধরে দুর্গোৎসব পালন করছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু মানুষ সেটা বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম সবাই একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। একটিই লক্ষ্য ছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আজ ধুলোয় মিশে গেছে। মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। এজন্য আমাদের আজ লড়াই করতে হচ্ছে। বিএনপি শুধু অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে তা নয়। আমরা অন্যান্য ধর্মের অধিকারও রক্ষা করি। আমরাই প্রথম সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময় মন্দিরের জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় যারা জড়িত তারা সবাই সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত। এ কথাটা রাণা দাশগুপ্ত বলেছেন। তিনি বলেছেন, সরকার চাইলে পূজা শান্তিপূর্ণ হবে, নচেত নয়’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি বলব- এ দেশে ধর্ম নিয়ে যাতে কোনো বাড়াবাড়ি না হয়। যাতে কোনো সংঘাত ও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি না হয়। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে গণতন্ত্র থাকলে সবারই অধিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে। আমরা সেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশের যে সংকট সেটা কিন্তু শুধু বিএনপির বা ব্যক্তির নয়। এই সংকট পুরো জাতির। মুসলমানদের ঈদ বলেন আর হিন্দুদের পুজা বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব ও রাষ্ট্র কিন্তু সবার। আমি বিশ্বাস করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এই ধর্মীয় মূল্যবোধকে বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দেশে রাজনীতি বিভক্ত করা হয়েছে। মানুষের মুক্তিতেই বাংলাদেশের মুক্তি। আসুন আমরা যেন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের সময় আসলে কেন গোলোযোগ সৃষ্টি হয়? কেন ৫২ বছরেও আমাদের ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়? কিন্তু এই শাসকগোষ্ঠী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে সবার মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের ৩১ দফায় বলা আছে- সব ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সব দল-মতের সমন্বয়ে রেইনবো নেশন তৈরি করব। আসুন হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে একটি শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

রাজনীতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আজ বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বাসসকে জানান, সাক্ষাৎকালে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।

নতুন প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান আশা প্রকাশ করেন যে, তাঁর নেতৃত্বে বিচার বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে।

এ সময় প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে বিচার বিভাগের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা অবহিত করেন।

তিনি আরো জানান, বিচারকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বৈঠককালে রাষ্ট্রপ্রধান সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচার বিভাগের উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নে, সরকার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

এ সময় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ও সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সঙ্গে মার্কিন প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদের আলোচনায় সংলাপ প্রসঙ্গ আসেনি বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, তখন সুনির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি। এখন যদি তারা মনে করেন, এটা তাদের ব্যাপার, তারা বলতে পারেন। সংলাপ তো এক পক্ষ করবে না। মূলত সমস্যা হল, সরকারের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের কনফ্লিক্টের কারণ সংলাপ না। বিএনপি বলছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়, সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায়। আমরা তো এই শর্তযুক্ত সংলাপে রাজি হব না।

সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সংলাপের চিন্তা করব তখন, যখন তারা (বিএনপি) চারটি শর্ত প্রত্যাহার করে নেবে। শর্তযুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।

মার্কিন প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের বিষয়ে এক প্রশ্নে সেতুমন্ত্রী বলেন, তারা (পর্যবেক্ষক দল) তো আমাদের সঙ্গে কথা বলে গেল। ডিটেইল আলোচনা হয়েছে, ইলেকশন রিলেটেড যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইলেকশন ফ্রি, ফেয়ার করা, সে অবস্থানে আমরা আছি এবং আমরা সেটি বলেছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে তারা (বিএনপি) কার সঙ্গে আলোচনা করবে? রাষ্ট্রপতি আলোচনা করতে চেয়েছেন, তারা (বিএনপি) রিজেক্ট করেছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুবার আলোচনার প্রস্তাব তারা খারিজ করে দিয়েছেন।

এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’।

রাজনীতি

দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরাও নির্বাচন চাই। তবে এবার আর যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

রোববার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে ‘দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা ও এই মুহূর্তে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার এবং ‘নো কমেন্টস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন সরকার পতনের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবাইকে সাহস জোগাচ্ছে।

ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তোমরা যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। আমরা যে যা বলছি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) ওনার মতোই ভাবছেন। প্রধানমন্ত্রী জবরদখল করে ক্ষমতায় বসে আছেন।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ক্ষমতাসীনরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কাউকে তোয়াক্কা করছে না। সরকারের বিরুদ্ধে আবারও পাতানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করার অভিযোগ তোলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবাই এবার রাজপথে নেমে গেছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। যারা মাঠে আছে, তাদের মধ্যে হতাশা থাকে না। যুগপৎ আন্দোলন যারা করছি, তাদের মধ্যেও কোনো হতাশা নেই। আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিচ্ছে। তবুও হতাশা নেই। বিজয় আমাদের হবেই। আমাদের নেত্রী, এই অবস্থায়ও আপস করেননি। নেতাকর্মীরাও আপস করবেন না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের মতোই নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবার আর পারবেন না। বাকি সব রাজনৈতিক দল নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় রাজপথে নেমেছি… লড়াই চালিয়ে যাবো… এ লড়াইয়ে আমরাই বিজয়ী হব।

রাজপথে ফয়সালার হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আবারও সরকার পতনের ডাক দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়ার জুতো ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের ব্যবসায়ীদের এ খাতের জন্য ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের ঘোষণার পাশাপাশি ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের পণ্য আমাদের নিজের নামে বাজারজাত করা হোক। আমাদের দেশের নাম বাড়–ক। আমি চাই বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হোক, বড় হোক।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪র্থ বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো (ব্লিস)-২০২৩ উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি অনেক দেশের অনেক পণ্য তারা এখান থেকে তৈরী করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশে ফিনিশিং দিয়ে নিজেদের নামে বাজারজাত করে। সেক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও নিজেদের কিছু কিছু ব্রান্ড তৈরী করতে পারি কিনা ’বাংলাদেশ ব্রান্ড’ হিসেবে আমার মনে হয় সেদিকেও নজর দিলে ভাল হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের কাছ থেকে সবধরনের সহযোগিতা পাবেন।

তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের পণ্য আমাদের নামে বাজারজাত হোক। আমাদের দেশের নাম বাড়–ক। দেশের নাম সুন্দর হোক, বৃদ্ধি পাক। কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের এই টানা তিন মেয়াদে তাঁর সরকার অনেক খাতে অনেক সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের রপ্তানিকারকদের উচ্চ মূল্য সংযোজন করে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের ও ক্রেতাদের ক্রয় আদেশ সম্পাদন সক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সুউচ্চ গুণগতমান সম্পূর্ণ বৈচিত্রময় পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাংলাদেশ করছে।

তিনি বলেন, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্রের হার কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে এবং আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরী হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষই এখন পণ্য ক্রয় করে। অতীতে যেখানে মানুষের পায়ে একটি রবারের চপ্পলও ছিল না এখন কিন্তু সেটা আর দেখা যায় না। পাশাপাশি, সরকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করে দেয়ায় এখন আর কাদামাটি ঠেলেও বেশি চলতে হয় না।

তিনি বলেন, এবারের ব্লিস-এর থিম ‘পসেবল ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশেও সম্ভব)’ সাম্প্রতি বছরগুলোতে সরকারী-বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের যে অভ’তপূর্ব উন্নয়নমুলক রূপান্তর ঘটেছে তা এতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্যোক্তদের এজন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

“আমি বিশ^াস করি এই বাংলাদেশও সম্ভব,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জোনাথন ববেট এবং গোল্ডেন চ্যাং গ্রুপের বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠাতা জেমস হো।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) যৌথভাবে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনসন সিটি বসুন্ধরায় ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ব্লিস এর শেষ তিনটি প্রদর্শনী ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উদ্যোক্তারা জানান, ব্লিস-২০২৩ ক্রেতা, ব্র্যান্ড এবং সোর্সিং প্রতিনিধিদের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে যা বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের শীর্ষ-স্তরের নির্মাতা এবং রপ্তানিকারক, পাদুকা প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে এবং বর্তমান বিনিয়োগের সুযোগ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কার্যকর নেটওয়ার্কিং, ব্যবসায়িক উন্নয়নের সুবিধা দেবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে চামড়া শিল্পে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, প্রথমত, বাণিজ্যিক খামার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং গবাদি পশু পালনে বিপ্লব ঘটেছে, যার ফলে দেশ কোরবানির মৌসুমেও গবাদি পশুর চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে বছরে ২.৫ মিলিয়ন গবাদি পশু উৎপাদিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, মাত্র এক দশক আগে দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসত কাঁচামাল হিসেবে চামড়া রপ্তানি থেকে, কিন্তু সরকারের প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তায় উচ্চমূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদন যেমন পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের সম্প্রসারণ হয়েছে।

এখন এ খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯৩ শতাংশ আসছে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য থেকে।

তৃতীয়ত, হাজারীবাগের পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে আমাদের সরকারই সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিপূর্ণভাবে সাভারে আধুনিক শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করেছে।

প্রধানমন্ত্রী অতি দ্রুত সাভারের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন তথা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) ও সাসটেইনবল লেদার ফাউন্ডেশন (এসএলএফ) ইত্যাদি অর্জন উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে এ ক্ষেত্রে, যেহেতু বেপজা কর্তৃপক্ষের একটি বিশ্বমানের ইটিপি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (যেমন বেপজা) অধীনে একটি ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি পৃথক ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ করে দেওয়া হবে। যাতে এই খাতের ছোট খাট নানা সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

এই খাতের সমস্যা সমাধানে এবং কোরবানীর পশুর চামড়া সংরক্ষণে অঞ্চলভিত্তিক অত্যাধুনিক কসাইখানা প্রতিষ্ঠা এবং  ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা তাঁর সরকারের রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঢাকার সাভারের পর চট্ট্রগ্রাম ও রাজশাহীর নাম উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আমরা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ ও চামড়া খাতের রপ্তানি রূপরেখা ২০২২ প্রণয়ন করেছি।

আমাদের ক্রমবর্ধমান সরবরাহের পুরোটাই ফিনিশড প্রডাক্ট তৈরি করে রপ্তানি করতে পারলে আমরা অনায়াসে ২০২৫ সালের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাত থেকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন সম্ভব হবে।

তবে, এক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র আনয়নের এবং রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধিতের প্রতিও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, “আমি চাই, ২০৩০ সাল নাগাদ এ খাত থেকে সামগ্রিক রপ্তানি আয় যেন ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এজন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এজন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের দৃষ্টিও আকর্ষণ করে তাঁর ওপর দায়িত্ব দিয়ে তিনি বলেন, একটু ধাক্কা না দিলে কাজ হয় না, সে ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি আমি।

এ বিষয়ে অতি সত্বর, সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করেন।

যার মধ্যে রয়েছে- সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর বর্ধিত প্রকল্পে কম্পোজিট চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা কারখানা গড়ে তোলার জন্য অন্তত ১৫০ একর জায়গা বরাদ্দ থাকবে। এখানে এলএফএমইএবি-র সদস্যদের বিনিয়োগের জন্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্পিড টু মার্কেট নিয়ে কাজ শুরু করেছি। রপ্তানির লিড টাইম ন্যুনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ও সেবা আরও সহজ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি কারকগণের স্টকহোল্ডিং-এর জন্য কমন বন্ডেড ওয়্যার হাউজ পদ্ধতি প্রবর্তন। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও বন্ড সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আমদানি সহজ, আমদানি ব্যয় হ্রাস ও লিড টাইম কমে আসবে।

এ সময় আমাদের প্রচলিত লাল ফিতার ধারনার অবসান হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো গতিশীলতা আসবে এবং দেশ আরো উন্নত হবে, উল্লেখ করে সরকার প্রধান আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহারের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা বস্তাবায়নও দ্রুত করতে হবে। একটু আটকে রাখলে বা ট্ইাট দিলে ভাল হয় কেউ কেউ মনে করেন। আসলে সবসময় তা ভাল হয় না। দ্রুত সিদ্ধান্ত, দ্রুত বাস্তবায়ন-এই নীতিতেই আমি বিশ^াসি। কাজের ক্ষেত্রে এই লাল ফিতার দৌরাত্ম যেন আর না থাকে। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকেও আমি বলবো, একটু আন্তরিক হলেই সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করা যেতে পারে। কারণ, নষ্ট করার মত সময় নেই, ‘টাইম ইজ টু সর্ট’। সেটা যেমন মাথায় রাখতে হবে তেমনি দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

কোভিড-১৯ অতিমারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সৃষ্ট বিশ^মন্দা না হলে দারিদ্রের হার সরকার যে ১৮ দশমিক ৬ ভাগে যে নামিয়েছে তার থেকে অন্তত দুইভাগ হলেও বেশি কমাতে পারতেন এবং হত দরিদ্রের হার ১৫ ভাগ থেকে ৫ ভাগে নামিয়েছে। আগামীতে দেশে আর কেউ হতদরিদ্র থাকবে না বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

অন্তত মানুষ যেন খেয়ে পরে ভালভাবে বাঁচতে পারে সে ব্যবস্থাই আওয়ামী লীগ সরকার করে দিচ্ছে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির এই যুগে সরকার আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করতে এবং নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছে। কারণ, আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর হয়ে গেলে সরাসরি কার্গো পাঠানো যাবে, সে ব্যাপারেও কাজ হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিং-এর জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান আন্তর্জাতিক বিমান পরিচালনা রুটের মধ্যে পড়ায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধ হতে পারে বাংলাদেশ। সেভাবেই বাংলাদেশকে উন্নত করা হচ্ছে।

তাঁর সরকারকে ‘ব্যবসাবান্ধব’ আখ্যায়িত করে দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কর্মস্থলে মালিকদের শ্রমবান্ধব পরিবেশ এবং শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার আহবানও পুণর্ব্যক্ত করেন।

সরকার ব্যবসার পরিবেশ সহজীকরণ ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ এবং ব্যবসায়ের চড়া খরচ ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ যাতে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে যেমন নজর দেবে তেমনি ব্যবসায়ীদের ইউটিলিটি বিলগুলো যথাসময়ে পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।

তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ না হতেই ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের উল্লেখ করে এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্যও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

রাজনীতি

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেবের মুরব্বিদের সঙ্গে সরকারের কথা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কী স্বপ্ন দেখিয়েছেন, এমন প্রশ্ন করে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা। তাই আগামীতে নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচনও শেখ হাসিনাই করবেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বৈঠক প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পিটার হাস সাহেব ফখরুলকে কী স্বপ্ন দেখিয়েছে? ফখরুল সাহেব, ক্ষমতা অনেক দূরে! পিটার হাস সাহেবের মুরব্বিদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। আমেরিকার মুরব্বি যারা তাদের সাথে কথাবার্তা শেষ। উচ্চ পর্যায়েও কথাবার্তা হয়ে গেছে। তলে তলে যখন সব শেষ, তখন আর এই সব করে লাভ কী?’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এখন আর বিদেশিরা ওইভাবে আসে না, পাত্তাই দেয় না। দৌড়ায় যায় পিটার হাসের কাছে। ঘুম থেকে উঠেই চলে যায় পিটার হাসের কাছে। দুপুরে লাঞ্চ করতে যায় পিটার হাসের কাছে। সন্ধ্যার পর নাস্তা করতে যায় পিটার হাসের সঙ্গে। হাস সাহেব ফখরুলকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। তবে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে লাভ নেই ৷ ফখরুল সাহেব দিল্লী বহুদূর, ক্ষমতার পথ আপনারাই বন্ধ করে দিয়েছেন। পিটার হাস সাহেব কী করবেন? ভিসা নীতি দেবেন, নিষেধাজ্ঞা দেবেন? তার মুরব্বিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। পিটার হাসকে দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধ করবেন? ঢাকায় তাণ্ডব করবেন। সেই খেলা খেলতে দেব না। সেই সন্ত্রাসের খেলা বিএনপিকে এবার আমরা খেলতে দেব না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলের সর্বশেষ বক্তৃতা শুনে মনে হলো, তিনি এখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মরা লাশ নিয়ে টানাটানি করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরা লাশ, আজিমপুরের গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত ৷ গোরস্তান থেকে ফখরুল এখন ওই মরা লাশ টেনে আনছেন। এই মরা লাশে মুক্তি আসবে না। আপনাকে বলি, নির্বাচন হবেই বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এই দেশে নির্বাচন কেউ বন্ধ করতে পারবে না। শান্তিপূর্ণ হবে, নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। মির্জা ফখরুল সাহেব না আসলে আমও যাবে ছালাও যাবে, দুইটাই হারাবেন। নির্বাচনে আসেন। দুনিয়াব্যাপী আপনারা শেখ হাসিনার বদনাম করেছেন, দেশে দেশে বদনাম করেছেন। কাজে বদনাম ঘোচানোর জন্য শেখ হাসিনা এমন নির্বাচন করবেন, যেই নির্বাচন হবে নজিরবিহীন৷

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, খেলা হবে, খেলার জন্য সব প্রস্তুত হয়ে যান। সামনেই আসছে সেমিফাইনাল, তারপরে ফাইনাল। সামনে আরও দুই মাস। এখনি তোমরা বেশি ক্লান্ত হইয়ো না, সবদিক থেকে খেলা হবে। ওরা কিন্তু খেলায় ফাউল করবে। ফাউলের জবাব দিতে হবে, লাল কার্ড দেখাতে হবে। তৈরি হয়ে যান, এবার কিন্তু ছাড় নেই।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।