অর্থনীতি

অনলাইনে খুবই অল্প সময়ে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর বিবরণী দাখিল করা সম্ভব।

এক মাস সময় বৃদ্ধি করায় জরিমানা ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ব্যক্তি করদাতা আয়কর রিটার্ন বা বিবরণী দাখিল করার সুযোগ পেয়েছেন।

এই বছর আয়কর অফিসে সরাসরি রিটার্ন দাখিল করার পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও অনলাইনে যে কোনো জায়গা থেকেই রিটার্ন দাখিল করা যাচ্ছে।

যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল করার ব্যবস্থা ছিল। তবে এবারের মতো এতটা প্রচারণা ছিল না। তাছাড়াও সরকারি সকল কর্মচারী এবং কতিপয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবীদের জন্যও অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যে মাধ্যমেই আয়কর বিবরণী দাখিল করা হোক না না কেনো, কিছু সাধারণ ধারণা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে জানাচ্ছেন ‘ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন: কমপ্লিট গাইড ২০২৪’ বইয়ের লেখক জসীম উদ্দিন রাসেল।

ব্যক্তি করদাতার জন্য প্রযোজ্য যে আয়কর বিবরণী ফর্ম আছে তাতে এই বছর কোনো পরিবর্তন আসেনি। করদাতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে রিটার্ন ফর্ম ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে তাতে হাতে লিখে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে পারবেন।

আর যদি সফট কপি থাকে তাহলে কম্পিউটারে এডিট করে আয়কর বিবরণী দাখিল করা যাবে।

তবে অন্যান্য বছরের মতো, যদি ‘মেন্যুয়াল’ পদ্ধতিতে নিজেই আয়করের যাবতীয় কাজ করে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে চান তাহলে গত বছর থেকে এই বছর যে পরিবর্তনগুলো এসেছে তা জেনে আয়কর হিসেব করতে হবে।

এক্ষেত্রে ভালো ধারণা থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে যারা এই বছর থেকে অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিল করবেন তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হবে।

যেমন- সারা বছরের আয় থেকে আয়কর আইন অনুযায়ী কতটুকু অংশ অব্যাহতি হিসেবে বাদ দিতে হবে তা না জানলেও আয়কর গণনায় সমস্যা হবে না।

সকল আয়, ব্যয়, সম্পত্তি এবং দায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য হাতের কাছে নিয়ে অনলাইনে একে একে বসালেই আয়কর বিবরণী তৈরি হয়ে যাবে।

যদি আগে থেকেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা না থাকে তাহলে নিজের নামে নিবন্ধিত যে কোনো মোবাইল নাম্বার দিয়ে সহজেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তারপর কিছু তথ্য নির্বাচন করতে হবে।

যেমন- কোন খাতে আয় আছে, সম্পদের তথ্য ইত্যাদি। এসব দেওয়ার পর আয়কর বিবরণীর যে অংশটুকু আপনার জন্য প্রযোজ্য কেবল সেই অংশটুকুই দেখাবে। আর একে একে প্রযোজ্য তথ্য দিলেই আয়কর বিবরণী তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে।

ভুল করলেও চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আয়কর বিবরণী দাখিল করার আগ পর্যন্ত যতবার ইচ্ছা ততবার সংশোধন করা যাবে।

আবার, একবারে না পারলেও যে কোনো সময় যখন সময় পাবেন তখনই পূরণ করে দাখিল করতে পারবেন।

অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিল করার আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল- অনলাইনেই কর পরিশোধ করতে পারবেন এবং আয়কর বিবরণী দাখিল করার সাথে সাথেই প্রাপ্তিস্বীকার পত্র পেয়ে যাবেন।

এর বাইরে, যদি সঞ্চয়পত্র থাকে তাহলে সেটা থেকে উৎসে যে কর কর্তন করে রেখেছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপডেট হয়ে যাবে। সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে যে আয় হয়েছে তা মোট আয়ের সাথে কর গণনায় একটু জটিলতা হত। এখন আর এই জটিলতা তৈরি হবে না।

কারণ সঠিকভাবে তথ্য বসালে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তবে অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিল করার সময় যে ট্যাক্স দেখাচ্ছে তা সঠিক কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইলে আয়কর সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকতে হবে।

সাধারণত চাকরিজীবী করদাতাদের আয়কর বিবরণী তৈরি করা অনেকটা সহজ। তাই অনলাইনে খুবই অল্প সময়ে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে পারেন।

অনলাইন রিটার্ন জমার ঠিকানা হলো www.etaxnbr.gov.bd

অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে এখন ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ৯২০ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার হয়েছে। এ রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম৬) অনুসারে করা।

এখন বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৪৭৫ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করে।

গত ১১ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমদানি পণ্যের বিল বাবদ ১.৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ১৮.৪৫ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬)। গত এক মাসে বিদেশি মুদ্রার এ সঞ্চয় বাড়তে বাড়তে আবার ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

রিজার্ভের তিনটি হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমটি হলো বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভ। মোট রিজার্ভের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহজ শর্তের ঋণ, বিমান কেনায় সোনালী ব্যাংককে দেওয়া ঋণসহ বেশ কয়েকটি তহবিল। দ্বিতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবায়ন পদ্ধতি, অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিল বা ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে একটি তহবিল।
এর বাইরে রয়েছে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ। বর্তমানে যা ১৪ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা ওপরে রয়েছে।

দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে।
সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার ক্রয়ের মাধ্যমে আবার রিজার্ভ বাড়ায়। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগ হচ্ছে প্রতিদিনই। এর ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের ১ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হলে এ মাসেই ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে দেশের রিজার্ভ।

অর্থনীতি

এক বছরের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৫৬৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপরীতে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতির অনুপাত কমেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ঝুঁকির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে জিডিপির বিপরীতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে এ অনুপাত এখনো ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। আলোচ্য সময়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে, কমেছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি কমলেও বেড়েছে সরকারি খাতের ঋণের স্থিতি। এদিকে ঋণ পরিশোধের চাপও কমে আসছে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরাসির বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) ও বৈদেশিক ঋণবিষয়ক এ প্রতিবেদনটি প্রতি ছয় মাস পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জুন পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের ঋণ ৮ হাজার ৩২১ কোটি ডলার এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার। গত বছরের জুনে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৮১১ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ২২৬ কোটি ডলার। গত এক বছরের তুলনায় দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৫৬৮ কোটি ডলার বা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ২ এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ কমেছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট ঋণের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ সরকারি খাতে এবং বেসরকারি খাতে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

আলোচ্য ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ৮ হাজার ৪২ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ৯১৭ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১ হাজার ৪১৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ২৭৯ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। সরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কম, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেশি। এটিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখা হয়। বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কম। এটিকে নেতিবাচক হিসাবে দেখা হয়। কারণ, স্বল্পমেয়াদি ঋণ অর্থনীতিতে ঝুঁকির সৃষ্টি করে।

মোট বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে চীন থেকে ৩১৩ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্য থেকে ১১০ কোটি ডলার, তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডস থেকে ৯২ কোটি ডলার। এছাড়া হংকং থেকে ৭৯ কোটি, সিঙ্গাপুর থেকে ৫৭ কোটি, জার্মানি থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫১০ কোটি, উৎপাদন খাতে ২০৮ কোটি এবং বাণিজ্য খাতে ১০৯ কোটি ডলার।

গত অর্থবছরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ শোধ করা হয়েছে ২৩০ কোটি এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ শোধ করা হয়েছে ২৬০ কোটি ডলার। গত বছরের জুনের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধ কিছুটা বেড়েছে। তবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ কিছুটা কমেছে। কারণ, গত সরকারের আমলে ডলার সংকটের কারণে ব্যাপকভাবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছে। যে কারণে এখন স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি পরিশোধ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের জুনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপরীতে মোট বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ছিল ২৫ শতাংশ। গত জুনে তা কমে ২১ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে এবং ঋণ কমেছে। ফলে ঝুঁকিও কিছুটা কমেছে।

তবে দেশের মোট জিডিপির বিপরীতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত বেড়েছে। গত বছরের জুনে জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাত ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির তুলনায় ঋণ বেশি বেড়েছে। তবে জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো যথেষ্ট কম। জিডিপির ৫০ শতাংশের মতো বৈদেশিক ঋণকে ঝুঁকিমুক্ত ধরা হয়। এর বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, তিন অর্থবছর ধরে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কমছে। বৈশ্বিক মন্দা ও দেশে ডলার সংকটের কারণে এতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এফডিআই এসেছিল ১৭২ কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ১৬০ কোটি ৯৮ লাখ ডলারে নামে। গত অর্থবছরে তা আরও কমে ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ ডলারে নামে। গত এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার বা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

গত অর্থবছরে নিট পুঁজি হিসাবে বিনিয়োগ এসেছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। দেশে কার্যরত বিদেশি কোম্পানিগুলো মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ করেছে ৬১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ হিসাবে নিয়ে বিনিয়োগ করেছে ১৮ কোটি ৫৭ কোটি ডলার। ওই তিনটি উৎস থেকে বিনিয়োগ করা পুঁজিকে এফডিআই হিসাবে গণ্য করা হয়।

দুই বছর ধরে নিট পুঁজি হিসাবে বিনিয়োগ আনার প্রবণতা কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট পুঁজি এসেছিল ১১৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে এসেছিল ৭০ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে আরও কমে এসেছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে পুঁজি হিসাবে বিনিয়োগ আসার প্রবণতা কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। মুনাফা থেকে বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। তবে ঋণ থেকে বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

বৈদেশিক মন্দার কারণে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমায় আয় থেকে বিনিয়োগ কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুনাফা থেকে বিনিয়োগ হয়েছিল ৭৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার। গত বছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৬১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ হয়েছিল ১১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে হয়েছে ১৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এ খাতে ঋণ বেড়েছে।

গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে ২৯৯ কোটি ডলার। সিঙ্গাপুর থেকে ১৭৪ কোটি, কোরিয়া থেকে ১৫৬ কোটি, চীন থেকে ১৩৮ কোটি, নেদারল্যান্ডস থেকে ১২৭ কোটি, হংকং থেকে ১২৬ কোটি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০২ কোটি, ভারত থেকে ৮০ কোটি, মালয়েশিয়া থেকে ৭৮ কোটি এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ৬১ কোটি ডলার।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে পুঁজি যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের উদ্যোক্তারা বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগ নিয়েছিলেন ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগ যায়নি। বরং আগের চেয়ে ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার কমেছে। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ১০৭ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরে নিট পুঁজি হিসাবে বিনিয়োগ গেছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ডলার। আন্তঃকোম্পানির বা এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ কমেছে ৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

অর্থনীতি

গত ১৫ বছরে দেশে চামচা পুঁজিবাদ চোরতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। ফলে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। নানা খাতে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে দেশের ১০ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে। শুধু দারিদ্রই নয়, সম্পদ ভোগের ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ রোপণ হয়েছে। অর্থনীতির অবস্থা মূল্যায়নে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় উঠে আসে।

সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মূল বক্তব্য রাখেন শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সঙ্গে অন্য সদস্যরাও তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। এর আগের দিন রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

সোমবারের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের উদ্বৃতি দিয়ে জানানো হয়, ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছেন আমলারা (পোশাক পরা ও পোশাক ছাড়া)। দ্বিতীয় অবস্থানে রাজনীতিবিদ এবং তৃতীয় ব্যবসায়ীরা। খাতভিত্তিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। দ্বিতীয় ভেৌত অবকাঠামো, তৃতীয় জ্বালানি এবং দুর্নীতির চতুর্থ খাত হলো আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি।

তাদের মতে, এতদিন সবার শঙ্কা ছিল মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু ইতোমধ্যে এই ফাঁদে পড়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঋণের ফাঁদ। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপসহ নানা কারণে অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জে। সমস্যা উত্তরণে কয়েকটি সুপারিশ করেছে কমিটি। এগুলো হলো গত ৫ বছর অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার একটি হিসাব দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী ৬ মাসের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, তৃতীয়ত, ২ বছরের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা দিতে হবে। চতুর্থত, পরিসংখ্যানের নির্ভরতার জন্য একটি ডাটা কমিশন করতে হবে এবং পঞ্চম বিষয় হলো বিদেশিদের নিয়ে একটি ডেভেলপমেন্ট ফোরাম বা উন্নয়ন বৈঠক করা জরুরি। এই বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগী, রপ্তানিতে বাজার সুবিধা দেওয়া দেশের প্রতিনিধি, বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং যেসব দেশ থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসে, ওই দেশের প্রতিনিধি থাকতে হবে। এসব সুপারিশের পাশাপাশি আগামী জাতীয় বাজেটের জন্য দেওয়া হয়েছে একটি কাঠামো।

দেশের আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থা মূল্যায়নে বিশষ্টি অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে গত ২৮ আগস্ট ১১ সদস্যবিশষ্টি শ্বেতপত্র প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটিকে যেসব বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বহির্খাত (আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, এফডিআই, রিজার্ভ এবং বিদেশি ঋণ), ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুত ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যু, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান। কমিটি রোববার রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের সময়ে গড়ে প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। কমিটির সদস্য ড. একে এনামুল হক বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ লুটপাট করা হয়েছে। ড. আবু ইউসুফ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে আয়কর রিটার্ন দাখিলের দাবি করে, সেই পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয় না।

তিনি বলেন, ৪২ লাখ টিআইএনধারী (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) রিটার্ন জমা দেয়। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৫-১৬ লাখ। বেশি টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিলেও কর দেন না। ফলে প্রকৃত করদাতা ২২ থেকে ২৩ লাখ। তিনি বলেন, কোনো করদাতা মারা গেলে সেই সার্টিফিকেট বা নম্বর কী হবে, সেটির কোনো কার্যকর প্রক্রিয়াও নেই। এনবিআর পূর্ণাঙ্গ টিআইএনধারীর তালিকা শ্বেতপত্র কমিটিকে দিতে পারেনি।

তার মতে, কীভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা খাতকে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সঠিক কাঠামো নেই। তবে ১ কোটি করদাতা নির্ধারণ করা গেলে রাজস্ব আয় অনেক বাড়ানো সম্ভব। কমিটির সদস্য ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, অভিবাসনের জন্য মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিবাসনের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়েছে। ড. সেলিম রায়হান বলেন, যেসব খাতে সংস্কার দরকার, সেখানে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।

কমিটির আরেক সদস্য ড. ইমরান মতিন বলেন, ১০ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ ভাগ সম্পদ। দারিদ্র বিমোচনের যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। অর্থাত্ এমন মানুষ রয়েছে যাদের টোকা দিলে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাবে। সেটিকে কার্যকর অর্জন বলে না। কোনো মানুষ ২ দিন কাজ না করলেই দারিদ্রর নিচে চলে আসবে। এতে দারিদ্রয হার দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেল। অর্থাত্ বর্তমান প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মের ঘাড়ে থাকবে ঋণের বোঝা। তাই বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অতীতে যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো যাচাই করা দরকার। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমেও টাকা পাচার হয়েছে। কমিটির আরেকজন সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন। তেৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি তথ্য-উপাত্তে বড় গলদ আছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, ‘৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে চামচা পুঁজিবাদ কীভাবে অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে। কীভাবে তারা নীতি প্রণয়নকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করছেন। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতনে্ত্র পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো। এর উত্স তিনটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। এসব নির্বাচনে গণতানি্ত্রক প্রতিষ্ঠান এবং স্বচ্ছতার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা। তিনি বলেন, জাতিসংঘ এখনো মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথষ্টে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।

তবে ইতোমধ্যেই মধ্য আয়ের ফঁাদে পড়েছে দেশ। শ্বেতপত্রের সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম করা যাবে না। পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে বা আগামী ৬ মাসের জন্য কী সদ্ধিান্ত নেবে, তা স্পষ্ট করতে হবে। আরও দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে অন্তত আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারকে মধ্যমেয়াদে এমন পরিকল্পনা দিতে হবে যাতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষার মান এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকে। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। কেননা সেখানে যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ধরা ছিল, এগুলোর দায় কে নেবে তা স্পষ্ট করতে হবে। এছাড়া এলডিসি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সদ্ধিান্ত নেওয়া জরুরি। কারণ এখন আর পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। যদিও যেসব রপ্তানিকারকরা, বাজার সুবিধা পান, তারা ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণ না করার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। তারা এটি পেছাতে চায়। কিন্তু সেটি হতে দেওয়া যাবে না। কেননা খোঁজে দেখতে হবে ওই ব্যবসায়ীদের মূল কোথায়। এছাড়া রাজনৈতিকভাবেও পরে আওয়ামী লীগ বলবে, আমরা সোনার সংসার রেখে এসেছিলাম, দুই বছরে তারা সব শেষ করে দিয়েছে। এছাড়া সরকারের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি আছে। এসডিজির সঠিক মূল্যায়নের জন্য সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিত করতে হবে। সর্বশেষ সুপারিশ হলো উন্নয়নসহযোগী সংস্থা বা দেশ, যেসব দেশে আমরা জনশক্তি রপ্তানি করি এবং যেসব দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি সব পক্ষকে নিয়ে দ্রুত একটি বিডিএফ (বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম) বৈঠক করা দরকার।

আগামী বাজেটের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এতে জাতীয় বাজেট অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি মূল্যবান সুযোগ হিসাবে উলে্লখ করে স্বল্পমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নে নিষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য ভিত্তি স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বাজেট হচ্ছে পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট শক্তিশালী করার মধ্যমেয়াদি এজেন্ডা। এই অনুশীলনের শুরুতে একটি বিশ্বাসযোগ্য আর্থিক কাঠামো প্রস্তুত করা উচিত। তাই অন্তর্বর্তী সরকার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে পাঁচটি পথনির্দেশক নীতি বিবেচনা করতে পারে। এগুলো হলো, আর্থিক সংস্থান প্রসারিত করার ওপর জোর দেওয়া দরকার। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের স্থানকে কার্যকরভাবে উন্নত করার জন্য একটি কেৌশলগত এবং বহুমুখী পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। যা অতিরিক্ত দেশীয় রাজস্ব উত্পাদন এবং আর্থিক ব্যবস্থার মধ্যে ফাঁকি কমানোর ওপর জোর দেয়। ২০২৬ বাজেট বিদ্যমান করদাতাদের ওপর অযাচিত বোঝা চাপানোর পরিবর্তে করের ভিত্তি প্রসারিত করার দিকে মনোযোগের সুযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে এনবিআর আগে অব্যবহূত সম্পদ ব্যবহার করতে পারে। ডিজিটাল অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। জাতীয় বাাজেটে বর্তমান করছাড়ের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশে্লষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের সূক্ষ্মভাবে মূল্যায়ন করে, সরকার অকার্যকর কর প্রণোদনা চিহ্নিত করতে পারে এবং পর্যায়ক্রমে কেৌশলগত খাতগুলোকে উত্সাহিত করতে প্রচষ্টোর নির্দেশ দিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত কর ফাঁকি প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি উদাহরণ স্থাপন করা। আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য কমপ্লায়েন্স মেকানিজম শক্তিশালী করা। শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়, বাজেটে সরকারি ব্যয় প্রবাহিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আরও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গড়ে তোলার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি এবং এসএমইতে সহায়তা বাড়াতে হবে। জাতীয় বাজেট শুধু অবকাঠামোতে নজর না দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনিয়োগকারীদের উত্সাহিত করা উচিত। অগ্রাধিকার হিসাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অনুকরণীয় বিনিয়োগ চিহ্নিত করা এবং অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক।

অর্থনীতি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসের দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। গত বছর একই সময়ে ১৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এসব রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থ এসেছে ৯৭ কোটি মার্কিন ডলার। বেসরকারী ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ১২২ কোটি ৩১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) মধ্যে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার, অক্টোবরে এসেছে ২৪০ কো‌টি মার্কিন ডলার এবং সবশেষ নভেম্বরে এসেছে ২২০ কোটি ডলার।

অর্থনীতি

জোট হিসাবে ২৭ জাতির ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে এ জোটটি থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-এফটিএ আংশিক কার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভিয়েতনামের রপ্তানি বাড়ছে, কমছে বাংলাদেশের। আগামীতে এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। কারণ ২০২৭ সালে একদিকে ভিয়েতনামের সঙ্গে এফটিএ শতভাগ কার্যকর হবে। তখন দেশটি রপ্তানিতে শুল্ক মুক্ত সুবিধা ভোগ করবে। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের-এলডিসির কাতার থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৯ দশিমক শতাংশ শুল্কারোপ হবে। অর্থাৎ বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং ভিয়েতনামের ৯ শতাংশ শুল্করোপ বাস্তবতার বিপরীতে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কারোপ দাঁড়াবে ভিয়েতনামের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।

২০২৬ সালের নভেম্বর এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। উত্তরণের পরবর্তী ৩ বছর বর্তমানের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এ মেয়াদ শেষ হলেই ইইউতে রপ্তানিতে ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিওর আশঙ্কা, ইইউ এবং অন্যান্য বাজার মিলে বর্তমানের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি আয় হারাবে বাংলাদেশ।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) এক সেমিনারে এ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট র‌্যাপির চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। জার্মানির অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক ইবার্ট স্ট্রিপটাং-এফইএস এবং র‌্যাপিড যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি। বক্তৃতা করেন র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএ’র প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ।

আলোচনায় অংশ নেন, ইইউ দূতাবাসের ট্রেড কাউন্সিলর আবু সায়েদ বেলাল, বাংলাদেশে এফইএসের আবাসিক প্রতিনিধি ড. ফিলিক্স গার্ডস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ শাখার অতিরিক্ত সচিব আয়েশা আক্তার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের পরিচালক ড. শামীমা নাসরিন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম, বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০২০ সালে ইইউ-ভিয়েতনাম এফটিএ সইয়ের পর কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনামের ৭১ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ভোগ করছে। বাকি পণ্যগুলোতে বর্তমানে ৪ থেকে ৬ শতাংশর হারে শুল্কারোপ রয়েছে। এতেই ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী ২০২৭ সালে শতভাগ পণ্য এ সুবিধা কার্যকর হবে। গত বছর ইইউ জোটে ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের এ পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার। তবে ভিয়েতনামের রপ্তানিতে পণ্যের মধ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রপ্তানির পরিমাণ মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ। পোশাকের হিস্যা ৮ শতাংশের মতো। কারণ তৈরি পোশাক এখনো শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আসেনি। গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে পোশাক পণ্যে। এর বিপরীতে অস্ত্র বাদে সব পণ্য (ইবিএ) স্কিমের আওতায় বাংলাদেশের পণ্য এখনো শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এ সুবিধায় গত বছর পর্যন্ত পোশাকের রপ্তানি ইউর মোট আমদানির ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ তৈরি পোশাকে এখনো বাংলাদেশ আধিপত্য বজায় রেখেছে।

অর্থনীতি

আসন্ন রমজানে দেশ কঠিন সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্পবাণিজ্যবিষয়ক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে স্থানীয় শিল্পে স্থবিরতা, অন্যদিকে নানা জটিলতায় আমদানি কমে যাওয়ায় বাড়তি চাহিদার বিপরীতে পণ্য সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এ অবস্থায় ব্যবসাবাণিজ্যে গতি ফেরাতে সবরকম ভীতি কাটিয়ে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)- এর সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘দেশের সব রকম ব্যবসা-বাণিজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। ঘন ঘন আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে। ’

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে শ্লথগতি বিরাজ করছে। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে আসা মন্দা বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করে। জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের পণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন, ডলারের অভাবে অনেক ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হয়। পাশাপাশি সরকারের ঋণ বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাননি। আবার বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে শিল্প স্থাপন করেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়া এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন শুরু করা যায়নি। এ কারণে বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন বাড়েনি।

উদ্যোক্তারা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। উল্টো ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত থাকায় নতুন বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, আইনশৃঙ্খলায় অস্বস্তিসহ নানা কারণে উৎপাদনে গতি ফেরেনি। বরং কারখানায় হামলা, হয়রানিমূলক মামলা, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভিত্তিহীন নানা প্রচারে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংক ঋণের বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন করায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ব্যবসা করেও যারা কখনো খেলাপি হননি, নতুন নিয়মের ফাঁদে পড়ে তারাও এখন খেলাপির তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।

কোনো শিল্প গ্রুপের আওতাভুক্ত একটি কোম্পানি খেলাপি হলে পুরো গ্রুপের নতুন ঋণসুবিধা বন্ধের নিয়ম করায় অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়ছে। একটি কোম্পানি খারাপ হলে পুরো গ্রুপের সিআইবি রিপোর্ট খারাপ দেখানো হচ্ছে। এর ভিত্তিতে ওই গ্রুপকে খেলাপি গণ্য করে ব্যাংকসুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়মের কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতেও ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে জানা গেছে।

আমদানিকারকরা সাধারণত ইউপাস এলসি সুবিধায় শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন। এ ক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধে ২৭০ দিন সময় থাকে। এ সময়ের মধ্যেই একজন আমদানিকারক পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করেন। সেখান থেকে আসা আয় দিয়ে সরবরাহকারীর পাওনা পরিশোধের পর উদ্বৃত্ত অর্থ মুনাফা হিসেবে থাকে।

আমদানিকারকরা জানান, দেশে ইস্পাত, সিমেন্ট, বস্ত্রের মতো ভারী শিল্প ছাড়াও ভোজ্য তেল, চিনি, আটাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল ইউপাস এলসির মাধ্যমে আমদানি করা হয়। এরপর সেগুলো শিল্পকারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারোপযোগী পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। এভাবে মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাড) করে আমদানিকারক পণ্যের আমদানি ব্যয় তুলে নেন। এ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ১৮০ দিন লাগে। এরপর একজন আমদানিকারক ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহকারীর পাওনা পরিশোধ করেন। কিন্তু গত এক বছরে ডলারের বিনিময় হার ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহকারীর পাওনা পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইছেন ইউপাস এলসি খোলার সময় যে চুক্তি করা হয়েছিল সে অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করতে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলারের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী হিসাব করছে। ব্যাংকের দাবি মানতে গেলে আমদানিকারকদের ২০ শতাংশ পর্যন্ত লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউপাস এলসিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তরের সুযোগ দেওয়া হলে ব্যবসায়ীদের সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তা না হলে এসব এলসি খেলাপিতে পরিণত হবে। এতে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।

আগের ইউপাস এলসি নিয়ে জটিলতা এবং এ প্রক্রিয়ায় আনা পণ্য বিক্রি করে লোকসান হওয়ায় অনেকেই নতুন করে কাঁচামাল আনতে পারছেন না। এ কারণে রোজার মাসে অনেক পণ্য চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) ইতোমধ্যে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিটিটিসির প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯১ টন কমেছে। একই সময়ে পাম তেলের এলসি কমেছে ৭৭ হাজার ৯৩০ টন। আর পাম তেল আমদানি কম হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮৬ টন। একইভাবে সয়াবিন বীজ আমদানি আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার টন কম। এ ছাড়া পরিশোধিত ভোজ্য তেল, চিনি ও পেঁয়াজ আমদানিও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ এলসি খোলা দরকার ছিল, তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। ফলে এখন থেকে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী মার্চে পবিত্র রমজানে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর সাত দফা সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। সেই সঙ্গে ভোজ্য তেল, চিনি ও ডালের মিলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী বিপুল বিনিয়োগে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে তুললেও শুধু গ্যাসের সরবরাহ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছেন না। এর মধ্যে বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপ দৈনিক ১ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সয়াবিন তেলের মিল স্থাপন করলেও গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন করতে পারছে না। ইতোমধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি যথাসময়ে প্রয়োজনীয় টাকা জমা নিলেও এখন পর্যন্ত গ্যাস দেয়নি। পরিকল্পনামতো উৎপাদন শুরু করতে না পারায় একদিকে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আটকে পড়েছে, অন্যদিকে বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এভাবে অনেক ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করলেও গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেনি। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নতুন প্রকল্প করলেও সময়মতো পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। নতুন কারখানা থেকে কোনো আয় না হলেও ব্যাংক ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। আবার গ্যাসের দাম তিন গুণ করার কারণেও পণ্য উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এসব কারণে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব দিক থেকেই তাঁদের হাত-পা বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত উদ্যোক্তারা এখন ব্যবসাবাণিজ্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁরা ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছেন। শিগগিরই পরিস্থিতি না বদলালে সার্বিক অর্থনীতিতে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ব্যবসায়ীরা তাঁদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে না পারলে কোটি কোটি মানুষের কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। সেই সঙ্গে কমে যাবে সরকারের রাজস্ব।

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বিনিয়োগকে যদি উৎসাহিত করতে পারে, তা হলেই দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু সেজন্য কিছুটা সময় লাগবে। কারণ বিগত সরকার লুটপাট করে অর্থনীতি বরবাদ করে দিয়ে গেছে। দেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এগুলোর যে সম্মিলিত প্রভাব তা আরও বেশ কিছুদিন আমাদের ভোগ করতে হবে। এর কোনো সহজ সমাধান নেই। ’

অর্থনীতি

মালয়েশিয়ায় বিদেশিদের প্রবেশ ও দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশিদের জন্য একটি অনলাইন বিশেষ পাশ (ইএসপি) চালু করতে যাচ্ছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ (জেআইএম)। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এটি চালু হবে।

সোমবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল।

সাইফুদ্দিন নাসুশন বলেন, এই বিশেষ পাশ অভিবাসন বিভাগের যানজট কমানোর পাশাপাশি সংস্থাটিকে ডিজিটালাইজড করার অন্যতম প্রচেষ্টার একটি উদ্যোগ। যে কোনো বিদেশি নাগরিক যারা নতুন আবেদন, সম্প্রসারণ, দীর্ঘমেয়াদি পিএলএস, পিএলআইকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন বা যারা সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন পরিস্থিতিতে রয়েছেন তারাও এই ইএসপির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

অর্থনীতি

সারা দেশেই প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। জীবন ধারণের জন্য দৈনন্দিন চাহিদার পণ্য কিনতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।

যখন কোনোভাবেই দ্রব্য মূল্যের লাগাম টানতে পারছে না সরকার তখনই দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উপস্থাপন করেছেন যুগ্ম সচিব কাজী আবেদ হোসেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) হিসেবে কাজ করছেন যুগ্ম সচিব কাজী আবেদ হোসেন। তার উদ্ভাবন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেটি বিশ্লেষণের পর পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। সেখান থেকে গত ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ পত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কাজী আবেদ হোসেন এ প্রক্রিয়ায় আশা দেখছেন। তিনি মনে করেন, তার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ মডেল দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করা গেলে সরকার সফল হবে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন যুগ্ম সচিব কাজী আবেদ হোসেন।

তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহর, উপজেলা থেকে জেলা-বিভাগ, রাজধানী পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল তুলে ধরা হয়েছে এ উদ্ভাবনে। সেখানে প্রতিটি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম হবে যৌক্তিক, আবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না প্রান্তিক কৃষকও। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হলে আমাদের দেশ খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি মাত্রায় এগিয়ে যাবে। কারণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেলটিতে সরকারের অর্থ ব্যয় হবে না, অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন নেই, নতুন আইন তৈরির দরকার নেই। এটি সাধারণ মানুষের সহজ বোধগম্য ও তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

তার এই মডেলে সাধারণ মানুষের হাতে কীভাবে কমমূল্যে সহজভাবে পণ্য পৌঁছতে পারে সেজন্য অন্তত ৫০টি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এটি সরকার যদি বাস্তবায়ন করে তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ মডেলের রূপরেখার ব্যাখ্যায় বলা হয়, এ ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত জনবল ও খরচ ছাড়াই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রয়োজন হবে না নতুন আইন তৈরিরও। যেখানে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করতে হবে এবং বাজারে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে যেকোনো নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ হবে কৃষক, উৎপাদক বা আমদানি মূল্যের ওপর। সাধারণ সময়ের পাশাপাশি অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ দুর্যোগকালীন আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে করণীয়ও তুলে ধরা হয় এ উদ্ভাবনী পত্রে।

কাজী আবেদ হোসেনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী গ্রামীণ হাট থেকে জেলা বা বিভাগীয় শহরের প্রতিটি বাজারে বোর্ডের বাজারদর তুলে ধরতে হবে। যা নির্ধারণ করা হবে উৎপাদক বা কৃষক পর্যায়ের দামের ওপর। কোনো বিক্রেতা ওই দামের অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।

যুগ্ম সচিব বলেন, এ রূপরেখা বাস্তবায়ন হলে ৬৪ জেলা, বিভাগীয় শহর, উপজেলা ও গ্রামীণ হাট পর্যায়ে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য কমাতে কৃষকের উৎপাদক খচর কমানোর ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে আমার মডেলে। যেখানে কৃষকের জন্য ডিজেলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য হ্রাস এবং হিমাগার, নিত্যপণ্য পরিবহণ ও অন্যান্য বিষয়ে নজরদারির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মডেলটি আরও গ্রহণযোগ্য বা তথ্যভিত্তিক ও বহুমাত্রিক করতে দেশের সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞজনের সমন্বয়ে একটি গবেষণা কমিটি করার প্রস্তাব রাখা হয়।

কাজী আবেদ আলী এর আগে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ না ধরার মডেল প্রস্তুত করেছিলেন। যা ২০১১ সাল থেকে দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

অর্থনীতি

দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমাগত কমে আসছে। বিজিএমইএ’র সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই শিল্পে ১৯৮০ সালে নারী শ্রমিকদের হার ছিল ৮০ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত ১৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত তারা এই শিল্পে নিয়োজিত থাকেন। বয়স ৩৫ হওয়ার পর তারা এই কাজ ছেড়ে বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকতে থাকেন। বিকল্প হিসেবে তারা যেসব কাজকে বেছে নিচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে: কৃষিভিত্তিক ও গৃহস্থালি এবং নিজের মালিকানাধীন দর্জির দোকানে কাজ করা।

সাম্প্রতিক সময়ে কারখানাগুলোতে অস্থিরতা, বেশি টাকা উপার্জনের আশা ও তুলনামূলক স্বাধীন পেশার কারণে তারা এসব পেশায় আগ্রহী। এভাবে নারী শ্রমিক কমতে থাকলে দক্ষ শ্রমিক স্বল্পতায় দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষে থাকা তৈরি পোশাক খাতে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে।

এ অবস্থায় নারীদের পোশাক খাতে আগ্রহী করে তুলতে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো ও সঠিক সময়ে ন্যায্য মজুরি দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি এ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে ডিকার্বোনাইজেশন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়করণের প্রভাবকে মোকাবিলা করা জরুরি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) গুলশানের একটি হোটেলে ‘বুনন ২০৩০: বাংলাদেশের পোশাক খাতে মূল কার্যক্রম: গভীর পর্যবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এটি উপস্থাপন করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন।

ঢাকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিজনেস কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উল্লেখিত শিরোনামে প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। লাইটক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি এক্সচেইঞ্জ বাংলাদেশ ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গত এক বছরে অনুষ্ঠিত চারটি সংলাপে উপস্থিত সরকারের শীর্ষ নেতারা ৫০ জন নীতিনির্ধারক, ৫০ জন শিল্প নেতাসহ মোট ১০০ জনের অধিক মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। চারটি সংলাপের মধ্যে প্রথমটিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সার্কুলারিটি ও ডিকার্বোনাইজেশনের প্রভাব, দ্বিতীয়টিতে শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, তৃতীয়টিতে নীতিগত অপরিহার্যতা, চতুর্থটিতে অটোমেশন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব- এই চারটি বিষয় গুরুত্ব পায়। সেগুলোর ধারাবাহিকতায় ‘বুনন: ২০৩০’ সংক্রান্ত এই বছরের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএ এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার, প্রাইড গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন, বিল্ড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম ও পোশাক কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা।

আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। অপরাজিতা ও বুনন প্রকল্প নিয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক আইনি ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর টেকসই জিএসপি প্লাস লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কৌশল গ্রহণ সংক্রান্ত আর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন মোহাম্মদ হাতেম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩-২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে আছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে, বাংলাদেশ ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা জাতীয় জিডিপিতে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। এ শিল্পের সঙ্গে বর্তমানে ৪ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই এই সমস্যাগুলোর সমাধান না করা হয়, তাহলে পোশাক খাত এবং দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।