বিনোদন

ঢালিউডের শীর্ষ নায়কদের মধ্যে আলমগীর, ফারুক, জাফর ইকবাল, উজ্জ্বল ও সোহেল রানার বড়পর্দায় অভিষেক ঘটেছিল ষাটের দশকের ‘হার্টথ্রব’ নায়িকা সারাহ বেগম কবরীর বিপরীতে; ক্যারিয়ারের প্রথম নায়িকাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন সোহেল রানা ও আলমগীর।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা গেছেন কবরী। শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে এ কিংবদন্তী চিত্রনায়িকাকে।

ষাটের দশকে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে বেড়ে উঠা ভীরু ডাগর চোখের কিশোরী মিনা পাল মাত্র ১৪ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় যাত্রা শুরু করেন।

কয়েক বছরের ব্যবধানে নির্মাতা জহির রায়হানের উর্দু ছবি ‘বাহানা’ ও নির্মাতা খান আতাউর রহমানের ‘সোয়ে নদীয়া জাগে পানি’ সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কবরীর ভ্রু’র তালে উত্তাল হয়েছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।

তারকা কবরীর বিপরীতে নায়ক হিসেবে তরুণ সোহেল রানার অভিষেক ঘটে সত্তরের দশকে; ১৯৭৪ সালের ২৪ মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছিলেন সোহেল রানা।

ক্যারিয়ারের প্রথম নায়িকা হিসেবে কবরীকে আজীবন ‘হিরোইন’ বলে সম্বোধন করেছেন সোহেল রানা; আর সোহেল রানাকে ‘পারভেজ ভাই’ বলে ডেকেছেন করেছেন কবরী।

নায়ক হিসেবে ‘মাসুদ রানা’ সোহেল রানার প্রথম চলচ্চিত্র হলেও প্রযোজক হিসেবে এর আগে ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দর্শকদের মাঝে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
শনিবার রাতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে কথা বললেন সোহেল রানা।

“তখন স্টার আর্টিস্টরা নতুন পরিচালক কিংবা হিরোদের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে দোটানায় থাকতেন। কিন্তু কবরীকে যখন আমার ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলাম, তিনি জানালেন, কাজটি করবেন। পরে উনি হাসতে হাসতে বললেন, ছবিতে আরেক নায়িকা কে? বললাম, অলিভিয়া। এবার খুনসুটি করে বললেন, ওর দিকে আবার বেশি তাকাবেন না তো!”

“সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল তার। সেইদিন থেকে আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। নতুন ডিরেক্টর কিংবা নায়ক হিসেবে আমি যাতে তার সঙ্গে কাজ করতে ইতস্তত বোধ না করি সেকারণেই তিনি মজার ছলে আমার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন।”

পাঁচ দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’সহ দুই শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে আলো ছড়িয়েছেন কবরী।

তার সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্রগুলোর বেশিরভাগের নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। উপমহাদেশে যখন উত্তম-সুচিত্রার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া তখনই বাঙালির চিরায়ত জুটিতে পরিণত হয়েছিলেন রাজ্জাক-কবরী।

‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘অনির্বাণ’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘রংবাজ’ সহ অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তারা।

‘রংবাজ’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কবরীকে লাস্যময়ী হিসেবে দেখা গেলেও ষাট ও সত্তরের দশকের দর্শকের কাছে তার মূল আবেদন ছিল বাড়ির পাশের মিষ্টি মেয়ে রূপে। যে নারী ঘরের, যে নারী অতি আপন, যে নারী বাংলার প্রকৃতির মতোই কোমল ও স্নিগ্ধ, সে রূপেই দর্শক হৃদয়ে চিরস্থায়ী কবরী।

কবরীর মাঝে দর্শকরা আবহমান বাংলার চিরায়ত নারীর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছিলেন বলে মনে করেন সোহেল রানা।

“বাংলার নারীদের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আমরা যেমনটা অনুভব করি কবরীকে তেমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। এখনকার নায়ক-নায়িকারা সবাই একই রকমভাবে কথা বলে। চুলে নানা রঙ করে। কিন্তু বাংলার সাধারণ নারীকে এমনটা কেউ কল্পনা করে না।”

“বাংলার মানুষকে মিষ্টি মেয়ের কথা ভাবতে বললে শুধু কবরীর কথাই ভাবে। সেকারণেই তাকে ‘মিষ্টি মেয়ে’ বলা হয়। বাংলার মানুষের অন্তর থেকে এ উপাধি এসেছে। এমনকি গ্রামে যারা হালচাষ করেন তারাও বলবেন কবরী মিষ্টি মেয়ে; কবরী বাংলার মেয়ে। কবরী তুলনাহীন।”

সোহেল রানা জানালেন, কবরী ব্যক্তিগত জীবনে বেশ আমুদে ছিলেন; জমিয়ে আড্ডায় দিয়ে চারপাশ মাতিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। কাছের মানুষদের সঙ্গে খুনসুটি করতে ভালোবাসতেন; অবসরে গল্পের বইয়ে ডুবে থাকতেন। আর নতুন কোনও বিষয়ে তার জানার আগ্রহ ছিল প্রবল।
“আমার সঙ্গে কথা বলে তখন রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে। ছোটভাইয়ের (নায়ক রুবেল) সঙ্গে ফিটনেস নিয়ে কথা বলে। মানুষের সঙ্গে আলাপ করে নতুন কিছু শিখতে চাইত। জানার আগ্রহ কবরীকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

“শেষ দশ-বারো বছরে কবরীর বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা বলতে পারবেন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ নিয়ে কতটা ক্ষুরধার বিশ্লেষণ করতে পারতেন তিনি। শিল্পী হিসেবে, মানুষ হিসেবে কবরী তুলনাহীন। শি ওয়াজ অ্যা ট্রু লিজেন্ড। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় আর্টিস্ট পাওয়া যাবে কিন্তু কবরীকে পাওয়া যাবে না।”

১৯৭৩ সালে পরিচালক আলমগীর কুমকুমের পরিচালনায় ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রে প্রথমবার অভিনয় করেছিলেন আলমগীর; নায়িকা ছিলেন কবরী।

আলমগীর জানান, তিনি তখন নবীন শিল্পী ছিলেন; জ্যেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে প্রথম ছবির শুটিংয়ে সবসময় খোঁজখবর রাখতেন কবরী। নিজের টাকায় চকি, চাদর কিনে এনে শুটিংয়ের সেটে আমাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করতেন।

আলমগীর বলেন, “কবরী আমাদের শ্রদ্ধেয় আপা। মানুষ হিসেবে দুর্দান্ত ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। আর শিল্পী হিসেবে যাচাই করার ক্ষমতা আমার নাই। যাচাই করতে চাওয়াটাও আমার জন্য ধৃষ্টতা।”

কবরীর তারকা জীবন যেমন ছিল

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলেছিলেন, “মানুষের কাছাকাছি যেতে পারি না। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকতে হয়। মানুষের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্যও অনেকে এটা করে। কারণ বাজারে ২৪ ঘণ্টা ঘুরলে কোনো তারকার আর দর থাকে না।”

তারকারা যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে তা সাধারণ মানুষকেই প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে না পারলে চরিত্রায়নে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা?
এমন প্রশ্নের জবাবে কবরী জানিয়েছিলেন, চট্টাগ্রামের একটি হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পর পুরো জীবনটাই শহরে কেটেছে তার; তবে অনেক চলচ্চিত্রেই গ্রামের নারীর চরিত্রও তুলে এনেছেন পরিচালকের চিত্রনাট্য ধরে।

“পরিচালক যখন কোনো চিত্রনাট্য বুঝিয়ে দেন সেটা ভালোভাবে রপ্ত করি। একেবারে সাধারণের সঙ্গে যে মিশি না তা কিন্তু নয়; আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েকে দেখি। ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে গর্ভবতী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। বাচ্চা হলে পেট ব্যথা করে কি না সেটাও তখন জানতাম না। সেটা মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।”

এর বাইরে চলচ্চিত্র দেখে, বই পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করার চেষ্টা করতেন বলে জানিয়েছিলেন কবরী।

মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি

অভিনেত্রী কবরী একাত্তরের উত্তাল সময়ে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ভারতের বড় বড় শহরে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে কাজ করেছেন। সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। পরে দেশে ফিরে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন সিনেমায়।

সেলুলয়েডের সেই রঙিন জীবন শেষে কবরীর পরের জীবন-চলচ্চিত্রও কম বর্ণময় ছিল না। রাজনীতিতে নেমে জীবনের আরেক চলচ্চিত্রের মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছিল বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে।

এক সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের বধূ কবরীকে ভোটের মাঠে সেই নারায়ণগঞ্জেই নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সব জয় করেই ২০০৮ নবম সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।

২০০৬ সালে মুক্তি পায় কবরীর পরিচালার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন তিনি। সে কাজ আর তার শেষ হল না।

বিনোদন

বহুদিন পরে হলে ফেরা দর্শকের হাততালি দেওয়া এক সিনেমার নাম ‘পরাণ’ !

শুরুতে ‘যতই বলা হোক এই সিনেমার কাহিনি পুরোটাই কাল্পনিক, বাস্তব কোনো ঘটনার সঙ্গে মিলে গেলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয়’-মানুষ তত বেশি বিশ্বাস করেছে যে এটা বরগুনার নয়ন বন্ড ও রিফাতের হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নির ফাঁসি রায়ের সেই আলোচিত ঘটনা নিয়ে নির্মিত।

মানুষ বিশ্বাস করেছে যে এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। মানুষ তার জানা গল্পের সময়োচিত নির্মাণ দেখতেই হলে গেছে এবং আলোচিত সেই ঘটনা নিয়ে নির্মিত সময়োচিত এক রুদ্ধশ্বাস সিনেমারই নাম পরাণ। অভিনেতা অভিনেত্রীদের উজাড় করে দেওয়া অভিনয় আর আধুনিক নির্মাণের এক আলোচিত চলচ্চিত্র ‘পরাণ’।

‘মুড সুইং’ করা এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের নাম অনন্যা। সে দুবার ফেল করেছে এসএসসিতে। কলেজেও তার পড়ালেখার হাল ছিল এমনই। অনন্যার বাসার সামনে মোটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, নেশা করে ‘পিনিক’ নিয়ে চলা, বখে যাওয়া এক ছেলের নাম রোমান। রোমান আবার স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যবহৃত ‘ক্যাডার’। তাকে ব্যবহার করে, তাকে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে বেমালুম পেটায় এক নারী রাজনীতিবিদ। তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। সারাদিন নেশা করতে থাকা এই রোমান আবার অনন্যার সামনে এক শিশুসুলভ প্রেমিক। সে সবকিছুর বিনিময়ে ভালোবাসা চায় অনন্যার। অনন্যা সুযোগটা লুফে নেয়। পড়ালেখা করতে তার ভালো লাগে না। রোমানের চড় চাপ্পট খেয়ে ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছেলেটা অনন্যাকে সালাম দিয়ে তাকে নোট দিয়ে যায়, পরীক্ষার সময় নকল সাপ্লাই দেয়। অনন্যার ফেল করার ঘরানা থেকে বেরিয়ে ‘ভালো রেজাল্টের’ যুগে চলে আসে! তার রোমানের সঙ্গে প্রেম জমে ওঠে। রোমানকে সে ডাকে ‘পরাণ’! তারা ঘুরতে যায়, চটপটি খায়, গান গায়। কিন্তু একদিন (নয়ন বণ্ড আর মিন্নির জীবনে রিফাতকে আনার জন্যই হয়ত) অনন্যা ভর্তি হয় ইউনিভার্সিটিতে।

সিনেমার কাহিনি বা লোকেশান অনুসারে অনন্যার বাসা, কলেজ আর ইউনিভার্সিটি হয়ত একই এলাকায়! সে যাই হোক, কলেজের সবচেয়ে ভালো ছাত্রটার নাম সিফাত। সে কলেজে টিউশানি করে চলে। বন্ধুবান্ধবকে পড়ানোর দৃশ্য ভালো লেগে যায় অনন্যার। সে সিফাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। ‘গুডি গুডি বয়’ সিফাত তাকে পাত্তা না দিলে অনন্যা আবার রোমানের শরণাপন্ন হয়। রোমান ও তার দুই ‘ক্যাডারের’ হুমকি-ধমকিতে সিফাত অনন্যাকে পড়াতে রাজি হয়। অনন্যার ‘মুডসুইং’ প্রবণতায় নতুন ভালো লাগার শিকার হয় সিফাত। সে সিফাতের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে! রোমানের সঙ্গে প্রেমের ঘটনার মতো সিফাতের সঙ্গে প্রেমের কাহিনিও এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রোমান অনন্যার মুখোমুখি হলে অনন্যা রোমানকে প্রথমে রাজনীতি ও পরে নেশা ছেড়ে দিতে বলে। রোমান শুধু অনন্যাকে পাওয়ার জন্য রাজনীতির বিরুদ্ধ স্রোতে হেঁটে একেবারে সর্বশান্ত হয়। তার মাথার উপর থেকে রাজনীতির ছায়া সরে যায়।

অন্যদিকে সিফাতকে সাতদিনের মধ্যে বিয়ে করতে বলে অনন্যা, তিন মাসের ভেতর দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলে। অনন্যাকে পেতে সিফাত সেটাই করতে রাজি হয়। ততদিনে রোমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়, সে ফেরারী জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। সে লুকিয়ে যখন অনন্যার সঙ্গে দেখা করতে আসে, অনন্যা তখন তার সঙ্গে পালিয়ে যেতেও রাজি হয়। সে রাতে না এসে পরদিন ভোরে আসে রোমানের সঙ্গে দেখা করতে, সঙ্গে পুলিশ নিয়ে আসে! ধরা পরে যায় রোমান, খবরের শিরোনাম হয় সে। রোমানের ‘ক্যাডাররা’ তাকে সেই নারী রাজনীতিবিদের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলে। রোমান রাজি না হয়ে জেলে বা হাজতে (ছবিতে স্পষ্ট নয়) যায়! এর মাঝেই অনন্যা ও সিফাতের বিয়ে হয়ে যায়। জেলে বা হাজতে বসে রোমান সেই খবর পায়। বিয়ের পর আবারও মুড সুইং হয় অনন্যার, সারাক্ষণ বই নিয়ে থাকা গুডি গুডি বয় সিফাতকে তার কেমন যেন লাগে! চটপটি খেতে গেলে এক যুবক যখন অনন্যার গায়ে হাত দেয়, সিফাত যখন প্রতিবাদ করতে পারে না, অনন্যার তখন রোমানের কথাই মনে পড়ে! সে স্বামীকে ঘুমন্ত রেখে রোমানের সঙ্গে দেখা করতে যায়। শিশুসুলভ প্রেমিক বন্দি রোমান তখনও অনন্যাকে নিয়ে পালাতে চায়।

‘ছবির কাহিনি কোন বাস্তব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়’ এটা প্রমাণ করতেই হয়ত শেষে কাহিনী একটু বদল করা হয়েছে।

বরগুনার মিন্নির প্রেমিক নয়নবন্ড নিহত হয়েছিলেন কথিত ‘ক্রসফায়ারে’। সিনেমার শেষ কয়েকটি দৃশ্য অনুসারে কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে পালায় রোমান। সে ফিরে এসে কলেজের সামনে পেয়ে যায় অনন্যা ও সিফাতকে। অনন্যাকে রোমান নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেয় সিফাত। সিফাতের ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া রোমান ডাব কাটার দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে সিফাতকে এবং পালাতে সক্ষম হয়। এরপর আবারো মুড সুইং হয় অনন্যার। সে রোমানের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার ‘তুতু’ (যে কিনা সব সময় ‘ত’ দিয়ে শব্দ উচ্চারণ করে) কে বলে রোমানকে খুন করতে। তুতু পালিয়ে থাকা, খেতে না পারা রোমানের সঙ্গে দেখা করে, বিরিয়ানি খাইয়ে তাকে গুলি করে মারে। ছবির শেষে জেলে যায় অনন্যা ও তুতু।

পরের দৃশ্যে কী হবে? এটা জানার জন্য দর্শকের উত্তেজনা সারা সিনেমাজুড়েই ছিল। ছিল গল্পের টানটান উত্তেজনা কিংবা স্ক্রিপ্টের মুন্সিয়ানা। এই সিনেমার সবচেয়ে ভালো দিক গল্প বলার ভঙ্গি।

পরিচালক রায়হান রাফি এই ছবির জন্য বহুদিন দর্শকদের হৃদয়ে থাকবেন। তার পুরোনো সিনেমা দেখে তাকে যতটা সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে, এই সিনেমায় তিনি সব প্রত্যাশা যেন পূরণ করতে পেরেছেন। চিত্রনাট্য করেছেন রায়হান রাফি ও শাহজাহান সৌরভ।

এই সিনেমার আরেক ভালো দিক অভিনেতা অভিনেত্রীদের অসাধারণ অভিনয়। কার কথা আগে বলা যায়? পাঁচ ছয়জন মানুষ যেন অভিনয়কে শিল্পে পরিণত করেছেন। রোমানের চরিত্রে শরীফুল রাজ আর অনন্যার চরিত্রে বিদ্যা সিনহা মীম তাদের জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন। বখে যাওয়া আর নেশা করা চরিত্রে শরীফুল রাজ ছিলেন ভিন্নমাত্রার! আরেক দুর্দান্ত অভিনয় করা শিল্পীর নাম নাসিরুদ্দিন, যিনি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি কিনা ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজেও দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন। গুডি গুডি বয় সিফাত চরিত্রে ইয়াশ রোহানও দারুন অভিনয় করেছেন। ‘ত’ দিয়ে সব শব্দ বলে যাওয়া রাশেদ মামুন অপুও ছিলেন দুর্দান্ত! তার গালি শুনেও হেসেছে মানুষ, রোমানকে খুনের দৃশ্যে অন্যরকম এক অপুকে আবিষ্কার করেছেন দর্শক। খল চরিত্রের নারী রাজনীতিবিদ হিসেবেও ভালো করেছেন রোজী সিদ্দিকী, ভালো করেছেন অনন্যার বাবা মার চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম ও শিল্পী সরকার অপু।

সিনেমার গানগুলোতে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন নাভেদ পারভেজ ও ইমন চৌধুরী। চারটি গান ব্যবহৃত হয়েছে । জনি হকের লেখা এবং আতিয়া আনিসা ও অয়ন চাকলাদারের গাওয়া ‘চলো নিরালায়’ গানটি ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। সিনেমার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে প্রচলিত একটি গানের ব্রিজলাইন-‘সাজিয়ে গুছিয়ে দে মোরে সজনী তোরা’ কয়েকবার ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ‘জ্বলেরে পরাণ’ গানটি গেয়েছেন এপি শুভ (গীতিকার তাহসান শুভ ও ওয়াসিক সৈকত) এবং রবিউল ইসলাম জীবনের লেখা, ইমন চৌধুরী ও জিনিয়া জাফরিন লুইপার গাওয়া ‘ধীরে ধীরে’ গানটিও আছে সিনেমাটিতে।

২০১৯ এ শুটিং শুরু হলেও পরাণ মুক্তি পায় ১০ জুলাই ২০২২ এ মাত্র ১২টি হলে। এটি দারুণ মাত্রার ব্যবসা সফল ও জনপ্রিয় সিনেমা হবে বলেই হল থেকে ফেরা দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হয়েছে। রায়হান রাফিসহ এই সিনেমার সব অভিনেতা অভিনেত্রী, সঙ্গীত শিল্পীসহ সবাইকে বিশেষ শুভেচ্ছা জানানো যেতে পারে।

জয় হোক বাংলা সিনেমার।

বিনোদন

আবারো আন্তর্জাতিক উৎসবে পুরস্কার পেল নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’। সোমবার (১১ জুলাই) দক্ষিণ কোরিয়ার বুচেন আন্তর্জাতিক ফ্যান্টাসটিক ফিল্ম ফেস্টিভালে এটি পুরস্কৃত হয়েছে।

উৎসবটিতে জুরি পুরস্কার ‘বুচেন চয়েস’ পেয়েছে ‘মশারি’। এর আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি সেখানে প্রদর্শিত হয়।

‘মশারি’র গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘‘ন’ ডরাই’’খ্যাত অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল। উৎসটিতে অংশ নিতে গত ৮ জুলাই নুহাশ হুমায়ূনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছেন তিনিও। সেখান থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরটি দিয়েছেন এই তারকা।

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সুনেরাহ বলেন, ‘এখানকার দর্শক আমার সিনেমাটি খুব পছন্দ করেছেন, অনেকে আমার অভিনয়েরও প্রশংসা করেছেন। একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। এই উৎসবটি দক্ষিণ কোরিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিচালক নুহাশ হুমায়ূনকে যতই ধন্যবাদ জানাই তা যথেষ্ট নয়, তিনি সত্যিই একজন কঠোর পরিশ্রমী এবং একজন সৃজনশীল নির্মাতা। এই প্রজেক্টের একটি অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। ’

দেশি জামদানি শাড়ি পরে উৎসবটিতে অংশ নিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। সুনেরাহ সামাজিকমাধ্যমে নিজের ছবি প্রকাশ করতেই তা নেটিজেনদের নজর কেড়ে নিয়েছে। শনিবার (১৬ জুলাই) দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে ফিরবেন সুনেরাহ।

নুহাশ জানান, পৃথিবী ধ্বংসের শেষপ্রান্তে, এমন পটভূমিতে দুই বোনের গল্প দেখানো হয়েছে ‘মশারি’তে। ভৌতিক ঘরানার এই চলচ্চিত্রে আরো দেখানো হয়েছে, এক রক্তপিপাসু পোকার আক্রমণে পৃথিবী জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। সবশেষ দু’জন বেঁচে আছেন। তারা বুঝতে পারেন রক্তপিপাসু এই পোকা থেকে তাদের বাঁচাতে পারে কেবল মশারি!

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ পুত্রের স্বল্পদৈর্ঘ্যটি এর আগে সাউথ বাই সাউথ-ওয়েস্ট চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিল। এতে সুনেরাহ ছাড়াও অভিনয় করেছেন হুমায়ূন আহমেদের নাতনি ও শীলা আহমেদের মেয়ে অনোরা।

বিনোদন

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩০ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভারতের অসমীয়া সিনেমার অভিনেতা কিশোর দাস। শনিবার (০১ জুলাই) চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, ব্লাড ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন কিশোর। সম্প্রতি করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছিলেন এই অভিনেতা। এরপরই তার শারিরীক পরিস্থিতি অবনতি হয়।

এর আগে আসামে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর কিশোরকে মুম্বাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে চেন্নাইয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। শনিবার চেন্নাইয়ের হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন তিনি। তার মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ আসামের শোবিজ অঙ্গন।

ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা কিশোরের অভিনয়ই ছিল প্রথম ভালোবাসা। অল্প বয়সেই অসমিয়া সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে পাকা জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ‘বৃন্দাবন’, ‘প্রেম বন্ধকি’, ‘দাদা তুমি দুষ্টু বড়’সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

এছাড়াও ৩০০ টিরও বেশি মিউজিক ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে। টেলিভিশনের পর্দাতেও কাজ করেছেন কিশোর। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিরিয়ালের মধ্যে রয়েছে ‘বিধাতা ও বন্ধু’।

বিনোদন

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ালেন টেলিভিশন নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের রাজাপুর ও ঝিমটি গ্রামের মানুষের মধ্যে খাবার ও জরুরি ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে সংগঠনটি।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম, সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসানসহ কার্যকরী পরিষদের ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মম, মিশু সাব্বির, সুজাত শিমুল, শেখ মেরাজুল ইসলাম, তারভীর মাসুদ প্রমুখ।

এ বিষয়ে রওনক হাসান বলেন, বন্যাকবলিত এই জনগোষ্ঠী কী অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে দিন পার করছেন না দেখলে বিশ্বাস করা বা অনুধাবন করা যাবে না। কেনো যেনো মনে হচ্ছে নিজ চোখে দেখে আসলে আমাদের নিজেদের ও বোধের, ভাবনার জগতে এক বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

আবারো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে চান জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, আমরা আবার যেতে চাই। সবাই যার যার জায়গা থেকে যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। আপনার আমার একটু একটু সহায়তাই সমষ্টিগতভাবে তাদের এই বিপদ মোকাবেলায় সহায়তা করবে।

বিনোদন

স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আনন্দ র‌্যালি করেছে সংগঠনটি।

সোমবার (২৭ জুন) দুপুর ১টার দিকে এফডিসির প্রযোজক সমিতির সামনে থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে এফডিসি সংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এই আনন্দ র‌্যালিতে অংশ নেন চিত্রনায়ক আলমগীর, রিয়াজ, ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা নিপুন আক্তার, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াতসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অঙ্গনের কলাকুশলীরা।

সে সময় সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের সভাপতি চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের নিজেদের অর্থায়নের সেতু। এই সেতু আমাদের অহংকার। আমরা এই অহংকার অর্জন করেছি আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ‘

র‌্যালি শেষে চিত্রনায়িকা নিপুণ বলেন, ‘পদ্মা সেতু কোটি মানুষের একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন। সেজন্য আমরা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’

চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘দেশি-বিদেশি অসখ্য ষড়যন্ত্র কাটিয়ে আমাদের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। এপার-ওপারের মধ্যে সংযোগ তৈরি হয়েছে। এজন্য আমি চলচ্চিত্রবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’

শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল-১ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সকাল ৬টায় জনসাধারণের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়।

বিনোদন

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর অতিথি হলেন বড় পর্দার তারকা দম্পতি পরীমনি ও শরীফুল রাজ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জনপ্রিয় ঈদের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আনন্দ মেলা’ দেখা যাবে তাদের।

প্রথমবারের মতো আফরান নিশোকে ‘আনন্দ মেলা’র উপস্থাপক হিসেবে পাওয়া যাবে। অনুষ্ঠানটিতে এই তারকা তার অভিনীত বিভিন্ন নাটকের জনপ্রিয় চার-পাঁচটি চরিত্রে ধরা দেবেন। বিশেষ একটি পর্বে নিশোর সঙ্গে আড্ডায় অংশ নেবেন চিত্রনায়িকা পরীমনি ও তার স্বামী চিত্রনায়ক শরীফুল রাজ।

‘আনন্দ মেলা’র পরিকল্পনা করেছেন জগদীশ এষ। লিটু সাখাওয়াতের গ্রন্থনায় প্রযোজনা করেছেন আফরোজা সুলতানা ও হাসান রিয়াদ।

অনুষ্ঠানটি নিয়ে প্রযোজকদ্বয় জানান, শুধু উপস্থাপনাতেই নয়, পুরো ‘আনন্দ মেলা’ জুড়ে থাকছে বিভিন্ন চমক। এবার একটি থিম সং তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কণ্ঠ দিয়েছেন বেলাল খান ও লিজা। থাকছে ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদের পরিবেশনা।

এছাড়াও রয়েছে নিশিতা বড়ুয়া, সাব্বির, লিজা ও রাজীবের কণ্ঠে একটি মৌলিক গান। সিনেমার গানের সঙ্গে নাচবেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও চিত্রনায়ক সাইমন। থাকছে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার নাচ।

চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন হাজির হবেন তার সিনেমার নায়িকা অঞ্জনাকে নিয়ে।

সমসাময়িক বিষয় তিনটি নাটিকা এবং ‘মীরাক্কেল’খ্যাত কৌতুক অভিনেতাদের নিয়ে অন্যরকম আড্ডা।

জানা গেছে, বিটিভির নিজস্ব স্টুডিওতে সম্প্রতি আনন্দ মেলার শুটিং সম্পন্ন হয়েছে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঈদের দিন রাত দশটার ইংরেজি সংবাদের পর ‘আনন্দ মেলা’ বিটিভিতে প্রচার হবে।

বিনোদন

চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে ঘিরে মৌসুমীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল ওমর সানীর। দেড় বছর ধরেই নাকি এই তারকা দম্পতির সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল।

জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ওমর সানীর বিস্তর অভিযোগ থাকলেও একই ছাদের তলায় থাকা মৌসুমীর বক্তব্য একেবারে বিপরীত।

জায়েদ খুব ভালো ছেলে এবং তিনি কখনো তাকে বিরক্ত করেননি বলে দাবি ঢাকাই সিনেমার এ নায়িকার।

এমন পরিস্থিতিতে সানী-মৌসুমীর ২৭ বছরের সংসার ভেঙে যাচ্ছে কিনা সেই শঙ্কা জাগে তার ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে।

তবে এসব বিতর্ক ও আলোচনা ভুলে আবারও এক হলেন সানী-মৌসুমী। জায়েদ ইস্যুতে তাদের বিচ্ছেদের যে গুঞ্জন উঠেছিল তার সমাপ্তি ঘটছে।
নায়ক ওমর সানীর ফেসবুক পোস্টে এমন ভালো লাগার খবব পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন সানী। সেখানে এক টেবিলে বসে সপরিবারে খাবার খেতে দেখা গেছে ওমর সানীকে। মৌসুমীর মুখোমুখি বসে খাবার খেতে দেখা যায় সানীকে।

ছবির ক্যাপশনেও সব মিটে যাওয়া ইঙ্গিত দিলেন সানী। লিখলেন— ‘সবাই ভালো থাকবেন, দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’

ছবিটি পোস্ট হতেই ভাইরাল হয়ে যায়। হওয়ারই কথা। সব ভুলে যেন এ তারকা দম্পতির বন্ধন আবার আগের মতো দৃঢ়তা পায় সেই দোয়া করছিলেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা। আবারও এক হয়ে যাওয়ায় সানী-মৌসুমীর ভক্ত-অনুরাগীরা তাদের অভিনন্দনে ভাসাচ্ছেন রাত থেকেই।

পোস্টের ৯ ঘণ্টার মধ্যে দুই হাজার ৬০০-এর বেশি মন্তব্য জমা পড়েছে, যার বেশিরভাগই অভিনন্দন ও সানী-মৌসুমীর জন্য দোয়া-কামনা।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জুন অভিনেতা ডিপজলের ছেলের বিয়েপরবর্তী অনুষ্ঠানে জায়েদ খানকে চড় মারেন ওমর সানী। জায়েদের বিরুদ্ধে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকির অভিযোগ তোলেন সানী। এ নিয়ে শিল্পী সমিতিতে অভিযোগও করেন তিনি। ওই অভিযোগে গুলি করার হুমকি, ওমর সানীর স্ত্রী মৌসুমীকে নানাভাবে হয়রানির বিষয়ও তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগের বিষয় পুরোটা অস্বীকার করে জায়েদ বলেন, এ খবর মিথ্যা ও বানোয়াট।

এর পর দিনই সংবাদমাধ্যমে অডিওবার্তা দেন মৌসুমী। তাতে জায়েদ খানের কোনো দোষ নেই বলে উল্লেখ করেন নায়িকা।

বিনোদন

বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক কে কে’র লাশের ময়নাতদন্তে সন্দেহজনক কিছু পাননি চিকিৎসকরা।

ময়নাতদন্তের পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা এই তথ্য জানিয়েছেন বুধবার রাতে পুলিশকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

তবে ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে আরও সময় নেবেন চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় এক কনসার্ট থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া কে কে’র মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের আলোচনার ঝড় বইছে ভারতে।

ওই অনুষ্ঠানের পরিবেশে কে কে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ৫৪ বছর বয়সী এই সঙ্গীত তারকাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।

সেই সঙ্গে কে কে’র কপাল ও থুতনিতে আঘাতের চিহ্ন দেখে নানা সন্দেহও তৈরি হয়।

যে কারণে এই ঘটনায় বুধবার সকালে একটি অপমৃত্যুর মামলা করে কলকাতা ‍পুলিশ। তদন্ত করতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) রূপেশ কুমার এবং জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) মুরলিধর শর্মা হোটেলে যান বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।

সংবাদপত্রটি জানায়, হোটেলে কে কে’র ঘর থেকে তার ব্যবহৃত তোয়ালে সংগ্রহ করেন পুলিশকর্তারা।

কে কে’র মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে এসেছে একটি সিসিটিভির ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, হোটেলের লবিতে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি।

লিফ্‌ট থেকে নেমে তিনি ওই লবি দিয়ে হেঁটেই কক্ষে পৌঁছান তিনি। এই ভিডিওতে তাকে স্বাভাবিকই দেখাচ্ছিল। তার পরনে ছিল অনুষ্ঠানেই পোশাক, গলায় একটি সাদা তোয়ালে ছিল।

এই তোয়ালে দিয়েই অনুষ্ঠানে বার বার ঘাম মুছতে দেখা গিয়েছিল কে কেকে। সেই তোয়ালেই পুলিশ সংগ্রহ করেছে।

ভিডিওতে কে কে’র পাশে দেখা যাওয়া তার ম্যানেজার হিতেশ ভাট বলেন, হোটেলে নিজের কক্ষে ঢুকেই সোফায় বসতে গিয়ে পড়ে যান কে কে। তখন টেবিলের কোনায় তার মাথা ঠুকে কেটে যায়।

কে কে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো হয়নি।

বিনোদন

চিত্রনায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা ঈদের পর এখনো নতুন কোনো সিনেমার শুটিং শুরু করেননি। তবে সামাজিক সাংস্কৃতিক আয়োজনে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন। উপস্থাপনার কাজেও দেখা যাচ্ছে মাঝে মধ্যে। এসব বিষয় নিয়েই আজকের ‘হ্যালো…’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি।

* এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

** রাজধানীর নিজ বাসাতেই অবস্থান করছি। শুটিং শুরু করিনি এখনো। বেশ কিছু কাজের প্রস্তাব আছে। সেগুলো শুরু করার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।

* ঈদের পর বিনোদন অঙ্গনের অনেকেই কাজ শুরু করেছেন। আপনার বিলম্ব হচ্ছে কেন?

** আসলে আমি বেশি কাজ করি না। মানসম্মত কাজের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। কাজের সংখ্যা বাড়িয়ে তো লাভ নেই। গত কয়েক বছর ধরেই কিন্তু আমি এ পরিকল্পনা অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছি। সফলতা ব্যর্থতার হিসাব করবেন দর্শক ও সংশ্লিষ্টরা।

* এভাবে যদি কম কাজ করেন তাহলে তো ভক্ত ও দর্শকরা বঞ্চিত হবেন আপনার অভিনয়শৈলী দেখার জায়গা থেকে?

** আমাকে যারা ভালোবাসেন কিংবা আমার অভিনয় পছন্দ করেন তারা আমি কাজ না করলেও সব সময়ই আমার পাশে থাকবেন। এটা বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। আমি অল্প বয়সে মিডিয়ায় কাজ শুরু করলেও আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই দর্শকের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। আমি মনে করছি এটিই আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।

* অনেকদিন ধরেই আপনাকে নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায় না। এর কারণ কী?

** বিশেষ কোনো কারণ নেই। আমার পরিকল্পনার সঙ্গে না মিললে তো আর অভিনয় করতে পারি না। যদি পছন্দ অনুযায়ী কাজ না পাই তাহলে নাটকেও সহসাই আমাকে দেখা যাবে না।

* আপনার অভিনীত ‘গাঙচিল’ সিনেমাটির কাজের অগ্রগতি কী?

** নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের পরিচালনায় এ সিনেমার প্রায় সব কাজই শেষ। ঢাকা এবং নোয়াখালীর মনোরম কিছু জায়গায় এটির শুটিং হয়েছে। এ সিনেমাটিতে অভিনয় করে তৃপ্তি পেয়েছি।

* কিছুদিন আগে আপনার মাকে ‘মা পদক’ দিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। মায়ের এ প্রাপ্তি নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?

** আমার জন্যই আমার মা পদক পেয়েছেন, এটি একজন সন্তান হিসাবে আমার খুবই আনন্দের বিষয়। অনুষ্ঠানটির উদ্যোক্তা সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীনকে এ জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আমি মায়ের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। মাও অনেক খুশি হয়েছেন।