রাজনীতি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এ তিনটি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব মোটা দাগে তিনটি এবং তিনটাই কঠিন দায়িত্ব। এর একটা হচ্ছে সংস্কার, আরেকটি হচ্ছে বিচার, অপরটি নির্বাচন।’

আজ শুক্রবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এই দায়িত্বটা জাতীয় দায়িত্ব। আমরা আগে থেকেই বলছি যে আমরা ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিয়েছি। এ দায়িত্বটা পালন করা তখনই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে যখন আমরা সকলের সহযোগিতা পাব।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একটা সময় দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘কালকে আমাদের মিটিং এর পরে আমরা অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আমাদের যে যে দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো আসলে পালন করতে পারছি কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেবার পর থেকে যার যত রকম দাবি আছে সব দাবি নিয়ে তারা রাস্তায় বসে পড়ছে। এসব কারণে ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ছে। সে অচল অবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কিনা। প্রত্যাশার বিষয়টা এক আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। বড় দাগের তিনটা দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিবন্ধকতা গুলোকে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব সকলে মিলে সেটা চিন্তা করছি।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্বে থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, সেখানে ফিরে যাবো।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। রিফর্ম কমিশন গঠন করেছি, কমিশন তাদের রিপোর্ট, দিয়েছে সেই রিপোর্টের উপর রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। আমরা নির্বাচনের একটা সময় বলে দিয়েছি যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অবশ্যই হবে।’

বিচার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আগে ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে শুরু হচ্ছে।

রাজনীতি

দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মগবাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক জামায়াত আমীর এ আহ্বান জানান।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সময় চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টায় দলটিকে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, চলমান বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছেন।

দলটি মনে করে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান না। তার চায় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

এর আগে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।

রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ড. ইউনূস বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে আগামী জুনের পরে হবে না।

তিনি এই নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সে বিষয়ও নিশ্চিত করেননি।

তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকখাতকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো দুর্বল। একইসঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভঙ্গুর রয়েছে। বিপ্লবের নয় মাস পরও বড় পরিবর্তন আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুলে দেবে এবং একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে সহায়তা করবে।

‘ঐক্যে পৌঁছানো সহজ ব্যাপার নয়, কোন কোন কমিশন থাকা উচিত, তা নিয়েই রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে মতপার্থক্য শুরুতেই রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি তৈরি পোশাকখাত নিয়ে একটি কমিশন থাকা উচিত ছিল; আবার কারো অভিযোগ, শিক্ষাখাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম হয়েছে নারী সংস্কার কমিশনকে ঘিরে, যা অনেক পরে গঠিত হয়। এই কমিশন ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের সুপারিশ করে, যাতে নারীদের অধিক অধিকার দেওয়া হয়, আর এতেই ইসলামপন্থি দলগুলো বিক্ষোভ শুরু করে। ’

আওয়ামীলীগ ইস্যুতে ড. ইউনূস বলেন, ১২ মে নির্বাচন কমিশন আওয়ামীলীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে, ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

রাজনীতি

সালাতের শিক্ষাই উজ্জীবিত হয়ে আদর্শ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সকলকে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

রোববার (১৮ মে) বাদ আছর রাজধানীর শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদে কাফরুল পশ্চিম থানা জামায়াত আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ও সর্বজনীন জীবনবিধান। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে বলেছেন। ইসলামের সুবিধাজনক বিষয় মানব, আর অন্যগুলো মানবো না-এমনটি করার কোনো সুযোগ নেই বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রেই ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক।

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের অনুশাসন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। অন্যথায় দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় ক্ষেত্রেই আমাদেরকে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আদালতে আখেরাতের ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করে সকলকে নামাজের বিষয়ে অতিশয় যত্নশীল হওয়ার আহবান জানান তিনি।

তিনি বলেন, নামাজ আল্লাহর দেওয়া বিধান ও শেখানো পদ্ধতি। আর আল্লাহর রাসুল (স.) আসরের নামাজের বিষয়ে বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন। এ নামাজকে সালাতুল উসতা হিসাবে উল্লেখ করে বিশেষভাবে যত্নশীল হওয়ার নিদের্শ প্রদান করা হয়েছে। তাই আমাদেরকে নামাজের শিক্ষার আলোকে জীবন গঠন করে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে। বস্তুত, নামাজই আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্যতম মাধ্যম। কারণ, ইয়াওত তাবাগুন তথা হাসরের ময়দানে সবার আগে নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত নামাজের শিক্ষা ব্যক্তি জীবন, পরিবার ও রাষ্ট্র গঠনে আত্মনিয়োগ করা। তিনি দেশকে ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকলকে জামায়াতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান জামায়াত আমির।

থানা আমীর আব্দুল মতিন খানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আতিক হাসান রায়হানের পরিচালনায় সুধি সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শাহ আলম তুহিন, কাফরুল জোন টিম সদস্য তারেক রেজা তুহিন, থানা কর্মপরিষদ সদস্য মতিউর রহমান ও সুলতান মাহমুদ, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ ছায়েফুল্লাহ, নাসিমুল আলম, আমিনুর রাহমান আমান, খন্দকার মাহবুবুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

রাজনীতি

রাজধানীর গুলিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে ১১ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মিছিলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। মিছিলে অংশ নেওয়া অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল। ওই মিছিল থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়। রোববার রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তাদের নাম-ঠিকানা বা তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২ কর্তৃক ১২ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনটিতে আওয়ামী লীগের ও এর সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পেছনে সরকার কিছু কারণ থাকার কথা উল্লেখ করেছে।

পাঠকদের জন্য প্রজ্ঞাপনটি হুবহু নিচে তুলে দেওয়া হলো-

‘যেহেতু ২০০৯ সালে ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে; এবং যেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

যেহেতু উল্লেখিত অপরাধসমূহের অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন রয়েছে; এবং যেহেতু এসব মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে গত ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং ভিনদেশে পলাতক তাদের নেত্রীসহ অন্য নেতাকর্মী কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে।

যেহেতু এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে ও এভাবে বিচার বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে; এবং যেহেতু সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনের ন্যায় বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

যেহেতু, সরকার যুক্তিসংগতভাবে মনে করে সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন; সেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

প্রজ্ঞাপনেই বলে দেওয়া হয়েছে যে এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

মূলত এ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ এবং দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংগঠনের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো সরকার।’

রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদের নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কিছু গড়ার সক্ষমতা রাখি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়।

সমাবর্তন ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাইলে আমাদের মতো করে এক নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’ তবে, তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকা দরকার- কেমন পরিবেশ ও সমাজ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই সম্পর্কে।

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা চলছে তা একটি ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির সভ্যতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতি তৈরি করেছি তা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য।’ তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসাকেন্দ্রিক এই সভ্যতা আত্মঘাতী এবং তা টিকবে না।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আনন্দিত। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৭২ সালে চবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল তা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল চবির অর্থনীতি বিভাগে।

অনুষ্ঠানে, চবি কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট সনদ তুলে দেন।

সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ অন্যান্যরাও বক্তব্য রাখেন।

চবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চবি আজ দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তনের আয়োজন করে, যেখানে ২২,৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়।

রাজনীতি

নারীর সম-অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় শুক্রবার (১৬ মে) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (১৪ মে) সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, নারী বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড, ধর্মান্ধ মৌলবাদীগোষ্ঠী নারীর প্রতি অবমাননার প্রতিবাদে সম-মর্যাদা ও সম-অধিকারের দাবিতে শুক্রবার (১৬ মে) বিকেল ৩টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। নেতারা নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা সফল করার আহ্বান জানান।

নেতারা সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সব সদস্য, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গণতন্ত্রমনা সবাইকে এই সমাবেশে অংশ নিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানান।

রাজনীতি

ছাত্ররা যদি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের ১৮ কোটি মানুষ ব্যর্থ হবে, বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে- বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

বুধবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহানগরী সাংস্কৃতিক ফোরাম।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, এক সময় দেশ পরিচালনা করেছি। আগামী দিনে যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, দেশের জনগণ যাদের দায়িত্ব দেবে, তারাই দেশ পরিচালনা করবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ যারা নতুন প্রজন্ম, তারাই আগামী দিনে বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। গুরু দায়িত্ব পালনে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তোমাদের মনে রাখতে হবে, এই দেশ তোমাদের।

তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশের পরিবর্তন এসেছে, সেই অর্জন তোমাদের। আমরা সেই কথা গর্বের সঙ্গে বলে থাকি। বিগত ১৫ বছর সংগ্রাম করে জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সেই গৌরব তোমাদের ধরে রাখতে হবে। এই সুযোগ যদি হেলায় হারাও, কোনো ভুল পথে গিয়ে সুনাম নষ্ট করো, তাহলে শুধু তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মো. ইউনুস তালুকদার রাজুর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলমগীর হোসেন, বিশিষ্ট সংগঠক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।

রাজনীতি

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ একদিন পিছিয়ে গেছে। আগামী ৫ মে’র পরিবর্তে ৬ মে (মঙ্গলবার) তিনি দেশে ফিরবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিএনপি মহাসচিবের নির্দেশে আমাদেরকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ৫ মে লন্ডন থেকে রওয়ানা হয়ে ৬ মে ঢাকায় পৌঁছাবেন।

তিনি আরও জানান, কাতারের আমিরের দেওয়া একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া লন্ডন ত্যাগ করবেন এবং পরদিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন।

খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা মহামারির সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। তবে তিনি কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

এরপর এ বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি তাকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের যে নির্দেশনা বিএনপির

প্রায় চার মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে সোমবার দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই ফিরছেন তিনি। তাকে বিমানবন্দর থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তার বাসভবনে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।

শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলআলমগীর।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে বিএনপি থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে সোমবার ঢাকায় পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া।

এদিকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে দলের চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাবে বিএনপি। এনিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যৌথসভা করে বিএনপি। পরে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী ৫ তারিখে (৫ মে) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি বিশেষ বিমানে আসবেন। আমরা আশা করেছিলাম যে বিমানে তিনি গেছেন, কাতারের রয়াল অ্যাম্বুলেন্স, সেই অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি আবার দেশে ফিরে আসবেন। সময়টা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ, এই সময়টা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। যদি আজকে রাতের (শনিবার) মধ্যে আমরা নিশ্চিত হই, তখন সেটা জানিয়ে দেব।’

প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নেত্রী ফিরে আসবেন। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে প্রচন্ড আবেগ আছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ আজকে উৎসাহিত-উজ্জীবিত যে, তাদের প্রিয় নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। তাকে যথাযথ অভ্যর্থনা জানানো, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ আজকে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। এনিয়ে আমরা যৌথসভা করেছি। জনগণ যাতে তাদের নেত্রীকে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে কোনো যানজট সৃষ্টি না করে তারা তাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। আমরা যেটা বলেছি, একহাতে জাতীয় পতাকা এবং আরেক হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে আমরা তাকে অভ্যর্থনা জানাব। এটাই হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দলের যৌথসভা করেছি। দুই সিটি, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের নিয়ে। যাতে আমরা অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে জনগণ যেন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। শুক্রবারও প্রশাসন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও বসেছিলাম। আলোচনা করেছি। তিনি (তারেক রহমান) পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে চার মাস লন্ডনে একটি হাসপাতালে দেশনেত্রী চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বাসায় (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায়) গিয়ে চিকিৎসা আবার নিয়মিত করেছেন। প্রতিদিন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। একদিকে ভালো পরিবেশ, বিশেষ করে পারিবারিক পরিবেশ এবং একইসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ও উন্নত চিকিৎসার মধ্যদিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থবোধ করছেন। সেই কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি এখন দেশে ফিরে আসবেন।

বিমানবন্দরের টারমার্কে বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে ৮নং গেট দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের উদ্দেশে রওনা হবে। বিমানবন্দর মোড় থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন।

প্রায় চার মাস লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার সন্ধ্যায় হিথ্রো বিমানবন্দর ছাড়বেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে মাকে বিদায় জানাবেন ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমিনুল হক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, নিরাপত্তা সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেএম সামছুল রহমানসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

রাজনীতি

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সরব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন।

জামায়াত আমির বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। প্রথমত, রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাস। তবে যদি এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনকালীন সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন না হয় এবং জনমনে আস্থা তৈরি করার মতো বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না হয়, তাহলে এপ্রিল মাসের পরই নির্বাচন আর বিলম্বিত করা উচিত নয়। ’

শনিবার (৩ মে) সকালে ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান আরও উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারির শেষ এবং মার্চের বেশিরভাগ সময় রমজান মাস থাকায় তখন নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার যদি আন্তরিকভাবে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয় এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সহযোগিতা করে, তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদেরকে এখন ফ্যাসিবাদ নয়, বরং ফ্যাসিবাদীদের পতন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। দুঃখজনক ইতিহাসে জাতি হিসেবে আমরা এখনো একটি ইতি টানতে পারিনি। ’

ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০১১ সালের এপ্রিলের পর জামায়াতে ইসলামী এমন একটি বৃহৎ সম্মেলনে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা দেশ শাসন ও শোষণ করেছে এবং বিরোধী দল, বিশেষ করে ইসলামপন্থিদের ওপর বিভিন্নভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছে।

তিনি তিনটি বড় ধরনের গণহত্যার অভিযোগ তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনার হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে হেফাজতের কর্মীদের হত্যা এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আরেকটি হত্যাকাণ্ড, যাতে অনেকে শহীদ ও পঙ্গু হয়েছেন।

৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জামায়াত আমীর বলেন, ওই সময় দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। তিনি দলীয় কর্মীদের ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার এবং সাধারণ মানুষকেও সংযত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি জানান, অন্যান্য দেশে এমন পরিস্থিতিতে যা ঘটেছে, তার তুলনায় বাংলাদেশে তেমন কিছু ঘটেনি এবং যা ঘটেছে, তাও তারা সমর্থন করেন না। সেদিনই তারা আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার এবং আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিকার চাওয়ার কথা বলেছিলেন।

তিনি আরও জানান, জামায়াত ইসলামীর কর্মীরা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও দল দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। জামায়াত শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ফেনীর বন্যার শুরু থেকেই তাদের দলের কর্মীরা দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।

যারা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে যারা হত্যা, গণহত্যা, গুম, খুন ও ধর্ষণ করেছে এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকব।