রাজনীতি

জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের বিষয়ে দিল্লির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবর নিন্দা ও প্রতিবাদপত্র দিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা।

বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে মোদী বরাবর ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় এ চিঠি দেওয়া হয়।

এর আগে জাগপা সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বেলা ১১টায় চিঠি স্বাক্ষর করার পর আসাদ গেটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জাগপা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্দেশ্যে রওনা করে।

প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর জাগপার আহ্বায়ক শ্যামল চন্দ্র সরকার, যুব জাগপা সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু। তারা হাইকমিশনে পৌঁছালে কোনো কর্মকর্তা সামনে না এসে ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তালাত মাহমুদ শাহান শাহের মাধ্যমে চিঠি গ্রহণ করেন।

চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে বলা হয়, ভারতের জনগণকে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

‘আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যাত্রা শুরু করে, যখন ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ লুট করে। শুরু থেকেই ভারত বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্য হিসেবে দেখতে চেয়েছিল, যা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ’

চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভারত দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। অবৈধভাবে ভারত বাংলাদেশের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। উপরন্তু, ভারত তার নিজেদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট রুট ও করিডোর ব্যবহার করেছে। এসব কিছুর ওপরে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী অননুমোদিতভাবে বাংলাদেশের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করেছে—এটি একটি অনৈতিক কাজ যা আপনার দেশের জন্য লজ্জাজনক।

ভার সরকার বারবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে কারসাজিও আছে, ফলশ্রুতিতে যা ভারতের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে। অবৈধ প্রভাব এবং গোপন কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারত আমাদের রাজনৈতিক, শিল্প, সাংস্কৃতিক এবং গণমাধ্যম খাতকে ব্যবহার করেছে।

একইসঙ্গে, সীমান্তে চলমান অবৈধ পুশ-ইন এবং বছরের পর বছর পাখির মতো বাংলাদেশিদের হত্যা অগ্রহণযোগ্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে, ভারত শেখ হাসিনাকে সুরক্ষা ও আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এটি আরও তীব্র হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, যার বর্তমানে কোনো বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।

‘আমি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে, শেখ হাসিনাকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, যিনি একজন স্বৈরশাসক ও গণহত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত। বাংলাদেশের জনগণ দেশের মাটিতে তার বিচারের অপেক্ষায় আছে। তাই, আমরা দাবি জানাচ্ছি ভারত সরকার দ্রুত শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের ফিরিয়ে দিক, যারা আপনার দেশের সরকারি সুরক্ষা এবং ভারতীয় করদাতাদের খরচে অবৈধভাবে বসবাস করছে। ’

চিঠিতে বলা হয়, প্রতিবেশীদের মধ্যে সুসম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে, ভারতের উচিত আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দ্রষ্টব্য: আমরা প্রতিবেশী, শত্রু নই।

রাজনীতি

আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় সমমনা জোট, এলডিপি ও লেবার পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আসছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ দলের সিনিয়র নেতারা।

সমমনা দলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার, সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

রাজনীতি

চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজা ফেসবুক লাইভে এসে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি অভিযোগ করেন, নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে নোংরামি ও কুৎসা রটিয়ে তাদের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

লাইভে আবেগঘন কণ্ঠে লিজা বলেন, আমার দ্বারা আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি বোঝাতে পারব না চট্টগ্রামে মেয়েদের নিয়ে কতটা নোংরামি করা হয়, তাদের কতটা ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়। কে করে এসব? আমাদের নিজেদের মানুষই করে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে একসময় অনেক মেয়ে রাজনীতিতে ছিল। আজ তারা হারিয়ে গেছে। আজ আমাকে নিয়েও নোংরামি শুরু হয়ে গেছে। শুধু আমাকে মাইনাস করার জন্যই একের পর এক বাজে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে। আপনারা যারা বড় ভাই, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্লিজ এসব বন্ধ করুন। মেয়েদের নিয়ে এই নোংরামি থামান।

নিজের বিদায়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিজা বলেন, চট্টগ্রামের কিছুসংখ্যক মানুষের স্বার্থের কাছে, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কাছে আমাদের রাজনীতি হারিয়ে গেছে। আন্দোলনের সম্মুখসারিতে থাকা অনেকেই হারিয়ে গেছেন। এখন বলতে গেলে কেউই আর নেই।

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু ভাই-ব্রাদার কেন্দ্রের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চট্টগ্রামে একটার পর একটা কোরাম বানিয়েছেন। এর দায় আপনাদের নিতে হবে।

লাইভের পুরোটা জুড়েই লিজা ছিলেন স্পষ্ট ও সাহসী। ব্যক্তিগত কষ্ট এবং রাজনীতিতে নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়গুলো তিনি বারবার তুলে ধরেন। শেষ পর্যন্ত আবেগ সংবরণ না করে তিনি বলেন, আমার দ্বারা সত্যিই আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়।

এই ঘটনার পর লিজার ফেসবুক পোস্ট এবং লাইভ ভিডিওতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই তার সাহসের প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ তীব্র সমালোচনাও করেছেন।

রাজনীতি

জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, শনিবারের জাতীয় পার্টি সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্টির মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদ শেষ করে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে, সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।

রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, ‘অনেকে বলছেন, এই পার্টি আলাদা হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আগামীকাল সম্মেলন হবে, পল্লীবন্ধু এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল। যার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নাম্বার ১২। আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিলর পরে, আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোন একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শনিবার ৯ আগস্ট গুলশান ১ এর ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, গত ৩০ জুলাই ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে, পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে—দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য বা স্থবির থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়—এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ধারার ক্ষমতাবলে, ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো—চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—প্রেসিডিয়াম সভা আয়োজিত হয়।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতিদ্রুত জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। উপরন্তু, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে—তাকে বাস্তবায়নে এটি সময়োচিত ও আবশ্যক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে। এই দল কেবল ব্যক্তি—কেন্দ্রিক নয়; এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন।

তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের জানাতে চাই, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে ২৮ জুন কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম, কিন্তু উপযুক্ত ভেন্যু না পাওয়ায় তা স্থগিত করতে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—পার্টির কো-সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট জিয়া উল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো. ইসরাফিল খোকন, ইয়াকুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন আজাদ,শফিকুল ইসলাম শফিক, জামাল রানা, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রহমান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

রাজনীতি

ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আজ উপদেষ্টা পরিষদের ৩৭তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে এ বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪১টি উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে ১৯৪টির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। বৈঠকসমূহে গৃহীত ৩১৫টি সিদ্ধান্তের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৪৭টি। বাস্তবায়ন হার ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসকে ‘গ’ শ্রেণির পরিবর্তে ‘খ’ শ্রেণির দিবস হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কেও উপদেষ্টা পরিষদে পর্যালোচনা হয়।

রাজনীতি

বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পালটা শুল্কের হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনাকে রপ্তানি খাতের জন্য একটি ‘সন্তোষজনক অবস্থা’ হিসেবে দেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার দুপুরে গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

আমির খসরু বলেন, এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না। যে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে একটা সন্তোষজনক অবস্থানে আছি।

তিনি বলেন, আমরা ২০%, পাকিস্তান ১৯%, ভিয়েতনামে ২০%, ভারতে ২৫%। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সার্বিকভাবে ট্যারিফের ফিগারটা সন্তোষজনক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। ট্যারিফ বিষয়ে আমাদের প্রতিযোগিতাদের সঙ্গে সেটা হয়েছে ঠিকই আছে। এটা সন্তোষজনক।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের নতুন এই হারের পেছনে কী আছে সেই প্রসঙ্গটি টেনে সাবেক এ বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, পুরো নেগোসিয়েশনের সার্বিক বিষয়টা তো আমাদের জানা নেই।

‘আমরা শুধু ট্যারিফের বিষয়টা জানি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিষয়টা জানার পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। এর (ট্যারিফ) বিপরীতে আর কী দিতে হয়েছে সেটা না জানা পর্যন্ত এর ইমপেক্টটা কী হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না।’

আমির খসরু বলেন, নেগোসিয়েশনের পেছনের যে বিষয়গুলো… এটা তো একটা প্যাকেজ। এখানে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু মাত্র ‍ট্যারিফের কত পার্সেন্ট কমানো হলো সেটা সিদ্ধান্ত হয়নি।

‘এ সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক আলাপ-আলোচনা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কী দাবি-দাওয়া ছিল এ বিষয়গুলো প্রকাশ হলে আমরা বুঝতে পারব।’

সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার একটা কথা বলেছেন এটার সঙ্গে ট্যারিফের কোনো সম্পর্কের কিনা প্রশ্ন করা হলে আমির খসরু বলেন, না, কিছু তো করতেই হবে। কারণ আমেরিকানদের পুরো ট্যারিফের বিষয়টা হচ্ছে, আমেরিকানদের পণ্য রপ্তানির স্বার্থে। সেজন্য তো এই অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বাংলাদেশ কতটুকু এবজরভ করতে পারবে, আমাদের অর্থনীতি কতটুকু এবজরভ করতে পারবে, ব্যবসায়ীরা কতটুকু এভজরভ করতে পারবে, ইকোনমি কতটুকু এবজরভ করতে পারবে সেই বিষয়গুলো আলোচনার বিষয়। আমরা বিস্তারিত জানলে সেটার ওপর মন্তব্য করতে পারব। আমি মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পুরো বিষয়টা খোলাসা করা উচিত।

আমির খসরু বলেন, বাণিজ্য শুধু আমেরিকার সঙ্গে নয়…অন্যান্য দেশে সঙ্গেও আমাদের পণ্য রপ্তানি হয়। সেই জায়গাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে আমরা কোথায় দাঁড়াচ্ছি সেটা বুঝতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানিটা আমাদের আরও বেশি ডাইভারসিফাই করতে হবে। বিদেশে ডাইভারসিফাই করতে, দেশেও ডাইভারসিফাই… শুধু আমেরিকা নির্ভরশীল অর্থনীতি হতে পারে না। সেটাই হচ্ছে আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।

রাজনীতি

দেশের বিভিন্ন খাতে নিগূঢ় পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আমাদের একেবারে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

প্রলেপ দেওয়া পরির্বতন না, একদম গভীর থেকে পরিবর্তন করতে হবে। নইলে এক স্বৈরাচার গিয়ে আরেক স্বৈরাচার আসবে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান: জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সুপারিশ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. ইউনূস বলেন, প্রতিবার জুলাইয়ের এই ছবি-ভিডিও দেখি, এখন জুলাই মাসের কারণে বেশি দেখছি। যখনই দেখি, নিথর হয়ে যাই। জুলাই শহীদদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন ভাবি, তারা কি আমাদের মত ছবি দেখার অপেক্ষা করেন? তারা তো সারাক্ষণই নিথর হয়ে আছেন। কী ছিল, কী থেকে কী হয়ে গেল? কান্ট্রি অব হররে পরিণত হয়েছিল। মানুষ কীভাবে এমন নির্মম হতে পারে, মাথায় আসে না।

পতিত ফ্যাসিবাদের সময়ে গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর’ যদি সবাইকে দেখাতে পারতাম, তাহলে জাতি বুঝতে পারতো যে এই ১৬ বছর কী হয়েছে। মানুষদের নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে। ইলেকট্রিক চেয়ার রেখেছে। সেগুলোতে সবাইকে দেখানোর সুযোগ হয়নি। সেই সবকিছু মিলে আজকের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা, যে বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, মুখের একতা না, বললাম আর ভুলে গেলাম, তেমন না, একেবারে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। প্রলেপ দেওয়া পরির্বতন না, একদম গভীর থেকে পরিবর্তন করতে হবে। নইলে এক স্বৈরাচার গিয়ে আরেক স্বৈরাচার আসবে। যতই আইন করি না কেন, আসবেই।

‘আমাদের জাতির ভেতরে এমন কিছু রয়ে গেছে যে, আমরা যতকিছুই করি, আগের বীজ রয়ে গেছে। এটা কয়েকটা কাগজের সংস্কার না, মনের গভীরের সংস্কার। ’

ড. ইউনূস বলেন, জুলাই আমাদের পুনর্জন্মের মাস, শুধু স্বৈরাচার বিদায়ের মাস না। আমাদের কাছে এখনো সুযোগ আছে। জুলাইয়ের শিক্ষা এখনো তাজা আছে। আবার আগের পথ বন্ধ করে দেওয়া, আগের পথে আর কখনো যাবো না, সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার দরকার

অনুষ্ঠানের অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, মানুষের অধিকার বিলীন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আমরা একটা ভয়ংকর সময় পার হয়ে এসেছি। সেই সময়টা আমাদের জন্য ভয়ংকর সময় ছিল। আমাদের প্রায় ৬০ লাখ কর্মীর নামে ভুয়া মামলা দেওয়া হয়েছিল এবং সেই মামলা কিন্তু এখনও তুলে নেওয়া হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এক বছর সময় অনেক বড় না। এই এক বছরে তারা অনেকগুলো কাজ করেছেন, এটা সত্য। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মত পার্থক্য তো থাকবেই। কিন্তু এটাকে অনেক বড় করে দেখিয়ে, জাতিকে বিভক্ত করা ঠিক হবে না। অনেকগুলো বিষয়ে তো আমরা একমত হয়েছি। বাকি সংস্কার প্রক্রিয়া চলতে পারে। জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার, এটা দরকার। ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে।

‘সংস্কারের নির্বাচন হলে ডিজাস্টার হবে’

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছর জাতির ওপরে স্টিম রোলার চলেছে। শেষ পরিণতি ৫ আগস্ট। এই সময়ে রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক কেউ বাদ পড়েননি।

তিনি বলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তুলতে হবে। তা না করে সেই সময়ে ‘আয়নাঘরে’ রাখা হয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা আংশিক মাত্র।

জুলাই হত্যার বিচার এখনো দৃশ্যমান হয়নি উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আরও কিছু করার থাকলে করতে হবে। আমরা সে সময়ের শহীদ স্মরণিকা করতে কাজ করছি। তবে এটা সরকারি উদ্যোগে হতে হবে। ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায়। ইতিহাস ধরে রাখতে হবে। মুখে নয়, বাস্তবে করতে হবে। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন প্যারালাল হতে হবে। সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে, ডিজাস্টার তৈরি হবে। শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে বিচার করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, গুম, খুন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আমলে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। তখন মানবতার বিরুদ্ধে সব কিছুই হয়েছে। এখন রাষ্ট্রকে অতীত কাঠামো থেকে বেরিয়ে নতুন কাঠামোয় নিয়ে আসতে হবে। জাতিসংঘের সুপারিশে বিচার বিভাগ স্বাধীন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। আমরা সুপারিশ সমর্থন করি। যারা জুলাই হত্যার নির্দেশ দিলেন, যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের বিচার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে পারিনি। যারা বিদেশে আছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে।

‘এমন যেন আর না হয়, সেজন্য পুলিশের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’

অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ নাফিসের বাবা গোলাম রহমান বলেন, বলার ভাষা নেই। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা দেশের পরিবর্তন চাই, বিচার চাই। তবে আমার ছেলে হত্যায় যিনি (পুলিশ) জড়িত, তিনি কক্সবাজারে কাজে নিয়োজিত। আমি তার বিচার চাই।

শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরীনা আফরোজ বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যেন এমন আর না হয়? আমি সৌভাগ্যবতী ছিলাম যে আমার ভাইয়ের মরদেহ স্পর্শ করতে পেরেছিলাম এবং তাকে সম্মানের সঙ্গে দাফন করেছিলাম। কিন্তু শত শত শহীদ আছেন যারা অজ্ঞাত হিসেবে দাফন হয়েছেন। তাদের পরিবার তাদের শেষবারের মতো দেখতে পারেনি।

সাবরীনা আফরোজ প্রশ্ন রেখে বলেন, তাদের জন্য এই এক বছরে কী করেছে অন্তর্বর্তী সরকার? আহতদের চিকিৎসায় কী করেছে? আহত এবং শহীদদের পরিবারের জন্য কী করেছে সরকার, যেন আগামী ১০ বছর তাদের কোনো সমস্যা না হয়?

রাজনীতি

শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও মনে হয় এত জঘন্য অপরাধ করে নাই- এমন মন্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

মঙ্গলবার দুপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হওয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার বিষয়ে এক আলোচনা ও তথ্য প্রদর্শনীতে এ কথা বলেছিলেন তিনি। তার ওই বক্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

এরপর সন্ধ্যা সাতটা একত্রিশ মিনিটে ফেসবুকের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে আসিফ নজরুল এক পোস্টে লিখেছেন, শেখ হাসিনার নৃশংসতার সঙ্গে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করা ঠিক হয়নি।

তিনি লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার নৃশংসতা অবিশ্বাস্য। লাশ ও আহত মানুষকে আগুনে পোড়ানো, নির্বিচারে নারী-কিশোর-শিশু হত্যা, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে বেসামরিক মানুষ মারা, মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর তরুণকে গুলি করে মারা, হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।’

যুদ্ধের ময়দানেও এসব কর্মকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘কিন্তু তাই বলে তার নৃশংসতার সঙ্গে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করা ঠিক হয়নি আমার। দুটোই জঘন্যতম অপরাধ। আমার কথায় যারা ভেবেছেন আমি একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞকে ছোট করে দেখেছি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

রাজনীতি

“আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলব, যে অবিচার আমাদের উপর করা হয়েছে, দল হিসাবে আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতে–এ ধরনের কোনো বিচার দেখতে চাই না।”

রাজনীতি

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণবিক্ষোভ দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে কাতার ভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরা। তাদের অনুসন্ধানী দল ‘আই-ইউনিট’ গোপন টেলিফোন কথোপকথনের অডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা একটি ‘খোলা আদেশ’ জারি করে বিক্ষোভকারীদের ওপর যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং কেন্দ্র (এনটিএমসি) কর্তৃক রেকর্ড করা একটি কথোপকথনে হাসিনা তাঁর এক মিত্রকে বলেন, ‘আমি তো আগে থেকেই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে, সেখানেই গুলি করবে। আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম… ছাত্রদের কথা ভাবছিলাম।’

ওই ফোনালাপে হাসিনা আরও বলেন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে জটলা দেখবে, ওপর থেকেই—এখন ওপরে থেকেই হচ্ছে—এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। কিছু [বিক্ষোভকারী] নড়েছে।’

তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাবির শরীফ আই-ইউনিটকে জানান, ‘হেলিকপ্টার থেকে আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।’

তিনি জানান, অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে অস্বাভাবিক ধরনের গুলির ক্ষত ছিল।

‘বেশিরভাগ বুলেট কাঁধ বা বুকে ঢুকেছে এবং শরীরেই থেকে গেছে। তখন এমন ধরনের রোগী বেশি আসছিল। এক্স-রেতে দেখে আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম—বুলেটগুলো অনেক বড় ছিল।’

তবে কী ধরনের বুলেট ব্যবহৃত হয়েছিল, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি আল জাজিরা।

প্রসঙ্গত, হাসিনা টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারত পালিয়ে যান। তার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তাক্ত বিক্ষোভে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং ২০,০০০ জন আহত হন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

আল জাজিরা জানায়, ফোনালাপের অডিওগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কোনোভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, তা শনাক্তে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিশ্লেষণ করানো হয় এবং কণ্ঠস্বর মেলানোর মাধ্যমে বক্তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

আইসিটি ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা, তার দুই মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে। ২০২৫ সালের ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর আগস্টে তাদের বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব নজরদারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-ই রেকর্ড করেছে তাঁর একাধিক গোপন ফোনালাপ। আল জাজিরা জানায়, শুধু বিরোধী নয়, হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও গোয়েন্দা নজরদারি চালাত এনটিএমসি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় অন্য প্রান্ত থেকে বলা হতো, ‘এই বিষয়ে ফোনে কথা না বলাই ভালো।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ‘হ্যাঁ, জানি, জানি, জানি, এটা রেকর্ড হচ্ছে, কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি যোগ করেন, ‘অন্যদের জন্য উনি অনেক গভীর গর্ত খুঁড়েছিলেন, এখন সেই গর্তেই তিনি নিজেই পড়ে গেছেন।’

২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্ট ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করলে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের অভিযোগ ছিল, এই কোটা ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ব্যাহত হয়।

বিক্ষোভ আরও তীব্র হয় ১৬ জুলাই, যখন রংপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ নিহত হন। এটি ছিল জুলাই গণ-আন্দোলনের এক মোড় ঘোরানো ঘটনা।

হাসিনার উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমানের একটি গোপন ফোনালাপে তাকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়: ‘অটোপসি রিপোর্ট পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন? রংপুর মেডিকেল কী লুকোচুরি খেলছে?’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাকে পাঁচবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাল্টাতে বাধ্য করে পুলিশ, যেন একাধিক গুলিবিদ্ধের উল্লেখ না থাকে। তারা চেয়েছিল রিপোর্টে লেখা হোক—সাঈদ ভাই পাথরের আঘাতে মারা গেছেন। অথচ তিনি গুলিতে মারা যান।’

সাঈদ নিহত হওয়ার ১২ দিন পর তার পরিবারসহ ৪০টি নিহত পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে। এই বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করে সরকার।

সেখানে শেখ হাসিনা প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন এবং বলেন, ‘আমরা তোমাদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করব।’

সাঈদের বোন সুমি খাতুন সরাসরিই জবাব দেন, ‘ভিডিওতে তো দেখা গেছে পুলিশ গুলি করেছে। এখানে তদন্তের কী আছে? এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে।’

সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমাদের জোর করে গণভবনে আনা হয়েছে। না এলে অন্যভাবে হয়রানি করা হতো।’

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করেন, হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলেননি। এই ফোনালাপ হয় কৌশলে বাছাই করা, নয়তো সম্পাদিত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকার আন্তরিক। এ নিয়ে কোনো লুকোচুরি নেই।’