খেলাধুলা

পল স্টার্লিং এবং কার্টিস ক্যাম্ফারের সেঞ্চুরিতে ভর করে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়লো আয়ারল্যান্ড। তবে জবাবে শ্রীলঙ্কা যে ছেড়ে কথা বলবে না, সেই ইঙ্গিতও মিললো।

গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে আজ আইরিশদের প্রথম ইনিংস থামে ৪৯২ রানে। তৃতীয় ও চতুর্থ আইরিশম্যান হিসেবে এই ফরম্যাটে সেঞ্চুরির দেখা পান স্টার্লিং ও ক্যাম্ফার। জবাবে বৃষ্টি বাধায় আগেভাগেই দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা বিনা উইকেটে তুলে ফেলে ৮১ রান। দিন শেষে ৪১১ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা। ৪১ রানে নিশান মাদুশকা এবং দিমুথ করুণারত্নে ৩৯ রানে অপরাজিত আছেন।

এর আগে প্রথম দিনে আইরিশ ব্যাটার স্টার্লিং ১০৩ রান করেন এবং ১১১ রান আসে ক্যাম্ফারের ব্যাট থেকে। অধিনায়ক অ্যান্ডি বলবার্নি খেলেন ৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস। এছাড়া ৮০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন লরকান টাকার। বল হাতে লঙ্কান স্পিনার প্রবাথ জয়াসুরিয়া ১৭৪ রান খরচে নেন ৫ উইকেট। এছাড়া আসিথা ফার্নান্দো ও বিশ্ব ফার্নান্দো নেন ২টি করে উইকেট।

২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আয়ারল্যান্ড এখন পর্যন্ত লাল বলের ৫ ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হেরেছে। ২০১৮ সালে অভিষেক ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৩৩৯ রান করেছিল তারা, যা এতদিন টেস্টে তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল।

চলতি সিরিজে এখন পর্যন্ত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম টেস্টে এক ইনিংস ও ২৮০ রানে হেরে যায় আয়ারল্যান্ড।

খেলাধুলা

টানা তিন ম্যাচ হারের শুরুটা হয়েছিল ইডেন গার্ডেনসে। সেখানে ফিরেও জয়ের দেখা পেল না কলকাতা নাইট রাইডার্স। রোববার চেন্নাই সুপার কিংস ব্যাটিংয়ে আধিপত্য করল। ২৩৫ রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিকদের টানা চতুর্থ হারের তিক্ত স্বাদ দিলো চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।

৪৯ রানে পঞ্চম জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আইপিএল টেবিলে শীর্ষে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। সমান ৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে কলকাতা।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তিন ফিফটিতে বড় স্কোর করে চেন্নাই। মাত্র ৪ উইকেট হারায় তারা। কলকাতার বোলারদের পাত্তাই দেননি আজিঙ্কা রাহানে। ২৯ বলে ৬ চার ও ৫ ছয়ে ৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। টানা চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরিতে দারুণ অবদান রাখেন ডেভন কনওয়ে। ৪০ বলে ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৫৬ রান করেন নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটার। শিবম দুবে ২১ বলে ২ চার ও ৫ ছয়ে ঝড়ো ৫০ রান করেন।

লক্ষ্যে নেমে প্রথম ৮ বলে সুনীল নারিন ও নারায়ণ জগদীসান ফিরে যান। মাত্র ১ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল কলকাতা। দলের ৭০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট পড়ে তাদের।

রিংকু সিংকে নিয়ে জেসন রয় প্রতিরোধ গড়েন ৬৫ রানের জুটিতে। ২৬ বলে পাঁচটি করে চার ও ওছয়ে ৬১ রানে থামেন ইংলিশ ব্যাটার। এরপর একাই দলকে টেনে নিতে থাকেন রিংকু। অন্যদিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে রিংকু ফিফটি করেন। ৩৩ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ে ৫৩ রান করে তিনি অপরাজিত ছিলেন। ৮ উইকেটে ১৮৬ রানে থামে কলকাতা।

তুষার দেশপান্ডে ও মাহিশ ঠিকশানা চেন্নাইয়ের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন। প্রত্যাশিতভাবে ম্যাচসেরা হয়েছেন রাহানে।

খেলাধুলা

অবশেষে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলতে আজ কোলকাতা নাইট রাইডার্স কেকেআর) দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের অফিসিয়াল পেইজে লিটনের আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কেকেআর। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে দেয়া অনাপত্তিপত্র (এনওসি) অনুসারে, আজ থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলতে পারবেন লিটন।

আজ আহমেদাবাদে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে কেকেআরের হয়ে মাঠে নামতে পারবেন না লিটন। আগামী ১৪ এপ্রিল ইডেন গার্ডেন্সে সানরাইজার্স হায়দারাবাদের বিপক্ষে কেকেআরের পরবর্তী ম্যাচে খেলতে পারবেন লিটন।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দলের যুক্তরাজ্য সফরের জন্য দলে যোগ দিতে পহেলা মে দেশে ফিরতে হবে লিটনকে।

ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন লিটন। বিশ্ব ক্রিকেটে গত তিন বছর ধরে রানের দিক দিয়ে শীর্ষ তিনের মধ্যেই আছেন তিনি। তবে কেকেআর ব্যাটিং লাইন আপে সুযোগ পাওয়া তার জন্য বেশ কঠিন হবে।

১টি হাফ-সেঞ্চুরিসহ কেকেআরের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করেছেন আফগানিস্তানের ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজ।

একই সাথে সাকিব আল হাসানের জায়গায় দলে সুযোগ হয়েছে ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়ের। খুব শীঘ্রই দলে যোগ দিবেন তিনি। তাই একাদশে সুযোগ পেতে কঠিন লড়াই করতে হবে লিটনকে।

পারিবারিক কারণে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ালেও ঘরোয়া ক্রিকেটে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের হয়ে খেলছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

ইতোমধ্যে দিল্লি ক্যাপিটালস শিবিরে যোগ দিয়েছেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তবে এখনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ফিজ।

খেলাধুলা

একটি দিনেই সবকিছু কীভাবে বদলে গেল! দ্বিতীয় দিন শেষে আলোচনা ছিল, আয়ার‌ল্যান্ড ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারবে কি না। সেই দল এখন জয়ের কথাও ভাবতে পারছে! দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে আইরিশদের ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক লর্কান টাকার বলছেন, সবটুকু চাপ এখন বাংলাদেশের ওপর।

মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকা আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেট হারায় ১৩ রানের মধ্যে। পরে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে দিন শেষ করে তারা ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে। তৃতীয় দিন শুরুর সময় ইনিংস পরাজয় এড়াতেই তাদের প্রয়োজন ছিল আরও ১২৮ রান।

অসাধারণ দৃঢ়তায় এ দিন সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে আরও অনেকটা দূর এগিয়ে যায় তারা। সারা দিনে ৪ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৫৯ রান।

প্রথম ইনিংসের মতো আরেকটি ফিফটি করেন হ্যারি টেক্টর। স্মরণীয় সেঞ্চুরিতে অভিষেক রাঙান টাকার। বোলিংয়ে ৬ উইকেট শিকার করা অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ব্যাটিংয়ে আটে নেমে দিন শেষে অপরাজিত ৭১ রানে। ২ উইকেট বাকি রেখে আইরিশদের লিড এখন ১৩১ রানের।

দিনের খেলা শেষে টাকার বললেন, ব্যাটিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্সের এই ধারা তারা বয়ে নিতে চান চতুর্থ দিনের বোলিংয়ে।

“উইকেট এখনও বেশ ভালো আচরণ করছে। আশা করি, কিছুটা হলেও ভাঙবে এটি। যদি জাদুকরী কিছু হয়ে যায় রাতারাতি…! আমরা জানি, আমাদেরকে ভালো বোলিং করতে হবে এবং ম্যাচ জিততে হলে কালকে ১০ উইকেট নিতে হবে। আশা করি, কালকে আরও কিছু রান আমরা যোগ করতে পারব এবং বাংলাদেশকে সত্যিকারের একটি লক্ষ্য দিতে পারব।”

“আমাদের মনে হচ্ছে, এখন চাপ সবটুকু তাদের ওপর। আজকে আমরা ভালো ব্যাট করেছি, কালকে ভালো বোলিং করতে হবে।”

কত রানের লক্ষ্য দিতে চান তারা, সুনির্দিষ্ট করে সেটিও বললেন টাকার।

“এখন ১৩০ রানে এগিয়ে আমরা…১৭০-১৮০ রানের মতো কোনো লক্ষ্য দিতে পারলে মোটামুটি খুশি থাকব। তার মানে আর ৪০-৫০ রান করতে চাই। আমরা তা পারব বলেই মনে করি।”

খেলাধুলা

তাইজুলের ৫ উইকেটে আয়ারল্যান্ডকে ২১৪ রানে আটকে রাখলেও ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ।

দিনের খেলা তখন শেষ হওয়ার অপেক্ষা। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বল একটু টার্ন করে অনেকটা লাফিয়ে ছোবল দিল ব্যাটের কানায়। সহজ ক্যাচ। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন তামিম ইকবাল। দিনের শেষ বলে আউট! তামিমের আগে বাজে শটে ফিরে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। আয়ার‌ল্যান্ডকে প্রথম দিনেই অলআউট করার স্বস্তি তাই কিছুটা উবে গেল শেষ বিকেলের ব্যাটিংয়ে।

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আয়ারল্যান্ড অলআউট ২১৪ রানে। প্রায় চার বছর বিরতির পর টেস্ট খেলতে নেমেছে তারা ৬ জন অভিষিক্ত ক্রিকেটার নিয়ে। দলের বেশির ভাগ সদস্য লাল বলের ক্রিকেটই খেলেন না দীর্ঘদিন ধরে। তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা তাই অনুমিতই।

শেষ বেলায় ১০ ওভারের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩৪।

ম্যাচের শুরুটায় ছিল পেস আগুনের ইঙ্গিত। ৯ বছর পর দেশের মাঠে তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। উইকেটে ছিল সবুজের ছোঁয়া। স্টাম্পের পেছনে কিপারের পাশে অর্ধচন্দ্র হয়ে দাঁড়ানো চার স্লিপ ও একটি ওয়াইড স্লিপ। মনে হচ্ছিল যেন, পার্থ বা ডারবানে ম্যাচ!

তবে গর্জন যতটা ছিল, ততটা বর্ষণ হয়নি। সেই স্পিনাররাই বোলিং করেছেন বেশির ভাগ ওভার, স্পিনেই মিলেছে বেশি সাফল্য। ৫ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাইজুল ইসলাম। টেস্টে এই স্বাদ পেলেন তিনি একাদশবার।

মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার ২ উইকেট। তবে দুই স্পিনারের সাফল্যের দিনে নজর কাড়া ব্যাপার ছিল আরেক স্পিনারের বোলিং না করাও। ৬৫ ওভারের পর প্রথম বোলিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক হাত ঘোরান স্রেফ ৩ ওভার!

দিনের শুরুর দিকে দুই উইকেট নিয়ে স্পিনারদের সাফল্যের মঞ্চ গড়ে দেন অবশ্য পেসাররাই। প্রথম সাফল্য ধরা দেয় দ্রুতই। ম্যাচের পঞ্চম ওভারে শরিফুল ইসলাম ফিরিয়ে দেন মারি কমিন্সকে। তার বাবা জুনিয়র কমিন্স টেস্ট অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৯৯৪ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ৩০ ও ৪৫। মারে কমিন্স প্রথম টেস্ট ইনিংসে ফিরলেন ৫ রানেই।

ক্যারিয়ারে একাদশবার ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন তাইজুল ইসলাম।

আরেক প্রান্তে সৈয়দ খালেদ আহমেদ শুরুটা খুব ভালো করতে পারেননি। তার জায়গায় বোলিংয়ে এসে উইকেটের দেখা পান ইবাদত হোসেন চৌধুরি। বাড়তি লাফানো বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন জেমস ম্যাককলাম (১০)।

তিন পেসার থাকলেও আক্রমণে স্পিন চলে আসে একাদশ ওভারেই। দুই প্রান্তেই স্পিন শুরু হয় চতুর্দশ ওভার থেকে। শুরুতে একটু সময় নিয়ে হ্যারি টেক্টর আভাস দেন পাল্টা আক্রমণের। তাইজুলকে চার মেরে তিনি প্রথম টেস্ট রানের স্বাদ ১৫ বল খেলে। পরের ওভারেই মিরাজকে ছক্কায় ওড়ান লং অন দিয়ে। এরপরই অবশ্য তিনি আবার নিজেকে গুটিয়ে নেন বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে।

আরেকপ্রান্তে অ্যান্ড্রু বালবার্নিও ব্যাট করছিলেন সাবধানতায়। তবে হুট করেই মনোযোগ হারানোর খেসারত দেন তিনি। তাইজুলকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান আইরিশ অধিনায়ক (৪৭ বলে ১৬)।

৪৮ রানে ৩ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি পায় এরপরই। টেক্টর ও কার্টিস ক্যাম্পার চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৭৪ রান।

টেস্ট অভিষেকের আগে ক্যাম্পারের একমাত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি ছিল ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশেই। টেক্টরের ক্যারিয়ারের ১০ প্রথম শ্রেণির ম্যাচের সবশেষটিও ছিল সেই ম্যাচ। তবে লাল বলে ম্যাচ খেলার ঘাটতি ততটা বোঝা যায়নি দুজনের ব্যাটিংয়ে। উইকেট আগলে রাখার পাশাপাশি বাজে বলকে বাউন্ডারিতে পাঠাতে ভুল করেননি দুজন।

দুজনের জুটিতে একশ পেরিয়ে আরেকটু দূর এগিয়ে যায় দল। টেক্টর ফিফটি স্পর্শ করেন ৮০ বলে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ফিফটি করা প্রথম আইরিশ ব্যাটসম্যান তিনি।

তবে মাইলফলকের পর আর এগোতে পারেনি টেক্টর। টানা ১১ বলে রান না পেয়ে মনোযোগও হয়তো নড়ে গিয়েছিল তার। মিরাজের ফ্লাইট ও টার্ন একদমই ধরতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান ৫০ রানেই।

তাইজুলের পাশাপাশি দারুণ বোলিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজও।

দলকে হতাশ করেন এরপর পিটার মুর। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৮টি টেস্ট খেলে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলতে নামে তিনি। নিজের সবশেষ টেস্টে এই মাঠেই ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের হয়ে। টেস্টের আগের দিন অধিনায়ক বালবার্নিও বলেন, মুরের ওপর অনেক ভরসা তাদের। কিন্তু ১ রানেই তাইজুলকে উইকেট উপহার দেন আলতো শটে ক্যাচ তুলে দিয়ে।

এই দুই উইকেটের রেশ থাকতেই আরেকটি বড় ধাক্কা আয়ারল্যান্ডের জন্য। তাইজুলের আর্ম বলে শেষ হয় ক্যাম্পারের লড়াই। ৭৩ বল খেলে তিনি থামেন ৩৭ রান করে।

১২৪ রানে ৬ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ডের সামনে তখন দেড়শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। তবে লোয়ার মিডল অর্ডারে লর্কান টাকারের সঙ্গে কিছুটা লড়াই করেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও মার্ক অ্যাডায়ার। সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে ৩৫ রান, অষ্টম জুটিতে ৪০।

১৯ রানে ম্যাকব্রাইন বিদায় নেন ইবাদতের শর্ট বলে। টাকারের প্রতিরোধ শেষ হয় ৭৪ বলে ৩৭ করে তাইজুলের বলে স্টাম্পড হয়ে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রান করা অ্যাডায়ারকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।

পরের ওভারেই হিউমকে বোল্ড করে ইনিংসের ইতি টানেন মিরাজ।

বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেট হারায় প্রথম ওভারেই। অ্যাডায়ারের বাড়তি লাফানো বলটি ছেড়ে দেওয়া যেত অনায়াসেই, কিন্তু শান্ত টেনে আনেন স্টাম্পে। ২২ টেস্টের ক্যারিয়ারে সপ্তমবার শূন্য রানে ফিরলেন তিনি।

চতুর্থ উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়েন কার্টিস ক্যাম্পার ও হ্যারি টেক্টর।

তামিম অবশ্য বেশ আস্থায়ই খেলছিলেন। পেসারদের সামাল দেন তিনি, ম্যাকব্রাইনের অফ স্পিন আক্রমণে আসার পর ছক্কা মারেন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে। মুমিনুলও শুরুটা করেন সাবলিল। কিন্তু দিনের শেষ বলে ওই বিপত্তি। বাংলাদেশের দিনটাও তাই শেষ হয় অস্বস্তি নিয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৭.২ ওভারে ২১৪ (ম্যাককলাম ১৫, কমিন্স ৫, বালবার্নি ১৬, টেক্টর ৫০, ক্যাম্পার ৩৪, মুর ১, টাকার ৩৭, ম্যাকব্রাইন ১৯, অ্যাডায়ার ৩২, হিউম ২, হোয়াইট ০*; শরিফুল ৮-১-২২-১, খালেদ ৯-১-২৯-০, ইবাদত ১২-০-৫৪-২, তাইজুল ২৮-১০-৫৮-৫, মিরাজ ১৭.২-৪-৪৩-২, সাকিব ৩-১-৮-০)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০ ওভারে ৩৪/২ (তামিম ২১, শান্ত ০, মুমিনুল ১২*; অ্যাডায়ার ৪-২-৩-১, হিউম ৩-০-১৮-০, ম্যাকব্রাইন ৩-১-১৩-১)।

খেলাধুলা

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সাকিব-লিটনরা যদি না খেলেন, তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না। এমনটি মনে করেন খালেদ মাহমুদ। দেশের হয়ে খেলাটাই আগে,এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার শুরু হবে এবারের আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ)। এবারের এই টি ২০ টুর্নামেন্টে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে খেলবেন। মোস্তাফিজুর রহমানকে এবারও ধরে রেখেছে দিলি­ ক্যাপিটালস। তিনজনই আইপিএলের ১৬তম সংস্করণে খেলার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র চেয়েছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত তা পাননি তারা।

এদিকে আইরিশদের বিপক্ষে ঢাকায় ৪ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্ট না খেলে সাকিবরা ভারতে যেতে চান আইপিএলে খেলতে।

বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ মঙ্গলবার মিরপুরে বলেন, সাকিবদের আইপিএলে খেলতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া-না দেওয়া বোর্ডের এখতিয়ার। আমাদের দলটা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই আইরিশদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে আমরা যে দলই খেলাই না কেন, ভালো করব। তাই সাকিব, লিটন, মোস্তাফিজ না খেললে খুব একটা যে ক্ষতি হবে, তা নয়। ওরা যদিও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সবার আগে দেশ।

আগের দিন মাশরাফি মুর্তজা বলেছিলেন,অন্যান্য দেশ তো কোনো খেলোয়াড়কে আটকায় না। আমাদের শুধু শুধু ইমোশনাল হয়ে লাভ নেই। আমরা তো এমনিতে অনেক খেলোয়াড়কে অদলবদল করে খেলাচ্ছি,খেলাচ্ছি না তা তো না। ওরা ভালো জায়গায় যখন খেলার সুযোগ পায়, তখন আটকানো ঠিক না।

খেলাধুলা

দুইশ ছাড়ানো স্কোরের পর বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারাল সাকিব আল হাসানের দল।

খেলা শুরুর আগে চট্টলার আকাশ খানিকটা মেঘলা। চারপাশ গুমোট। একটু পর ঠিকই উঠল ঝড়। তবে প্রকৃতিতে নয়, জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ২২ গজে! রনি তালুকদার ও লিটন দাস যেন তাণ্ডব বইয়ে দিলেন আইরিশ বোলারদের ওপর দিয়ে। বৃষ্টিতে নতুন মোড় নেওয়া ম্যাচে পড়ে বল হাতে জ্বলে উঠলেন তাসকিন আহমেদ। প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২২ রানে হারাল বাংলাদেশ।

টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, উইকেটের সম্ভাব্য আচরণের কোনো ধারণা তার নেই। যত বেশি সম্ভব রান তুলতে চান তারা। সেই পথে দলকে এগিয়ে নেন দুই ওপেনার লিটন ও রনি। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রেকর্ড রান তুলে শেষ পর্যন্ত ৯১ রানের জুটি গড়েন তারা স্রেফ ৭.১ ওভারে।

৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন রনি। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৪৭।

ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ভালো শুরু পাওয়া আইরিশদের আশা গুঁড়িয়ে ১ ওভারেই ৩ উইকেট নেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি ১৬ রানে।

টস জয়ী আয়ারল্যান্ড বোলিং শুরু করে হেরি টেক্টরকে দিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫১ টি-টোয়েন্টিতে তিনি একটি বলও করেননি। তবে আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই নতুন বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। এ দিন অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি তার অফ স্পিনে। প্রথম ওভারে তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় শুরু করেন লিটন। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকে পুল করে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন রনি। ব্যস, দুজনের রান রথ ছুটতে থাকে।

চার-ছক্কা আসতে থাকে প্রতি ওভারেই। পেস-স্পিন, কিছুই পায়নি পাত্তা।

প্রথম ৫ ওভারে ভিন্ন ৫ বোলার ব্যবহার করেন এই সিরিজের আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। কিন্তু রান স্রোতে বাঁধ দিতে পারেননি কেউ। ৫ ওভারে রান উঠে যায় ৬১।

পরের ওভারে সেই রান পেরিয়ে যায় ৮০। মার্ক অ্যাডারের করা ওভারটিতে প্রথম বলে কঠিন একটা সুযাগ দিয়েছিলেন লিটন। পরের বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে রনির ছক্কা, এরপর টানা তিন বাউন্ডারি।

৬ ওভারেই চলে আসে ১২ বাউন্ডারি। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৮১। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মিরপুরে ৭৬।

অপ্রতিরোধ্য জুটিকে শেষ পর্যন্ত থামাতে পারেন ক্রিস ইয়াং। তার স্লোয়ারে আলতো শটে মিড অফে ধরা পড়েন লিটন। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ করে ফেরেন তিনি।

লিটনের পর নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান এক ছক্কায় ১৩ বলে ১৪ করে। তবে আইরিশদের স্বস্তি ফেরেনি। রনির ঝড় চলতে থাকে। চারে নেমে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গী হন শামীম হোসেনও।

বেন হোয়াইটওকে টানা দুই বাউন্ডারিতে রনি পঞ্চাশে পৌঁছে যান ২৪ বলে। তার জন্য আবেগময় এক মাইলফলক। সেই ২০১৫ সালের পর জাতীয় দলে ফিরেছেন তিনি কদিন আগে। ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অবশেষে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটির স্বাদ পেলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে, অভিষেকের প্রায় ৮ বছর পর।

শামীম ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তিন বলের মধ্যে চার-ছক্কা মারেন হোয়াইটকে। ওই ওভারে ছক্কা আসে রনির ব্যাট থেকেও।

রনির ইনিংস শেষ হয় রানের তাড়নাতেই। গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথ বলে স্লগ খেলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

অ্যাডায়ারের কাটারে শামীমের ইনিংস থামে ২০ বল ৩০ রানে। এই দফায় দলে ফেরার পর তার প্রথম ইনিংস ছিল এটি। সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে খেললেও ব্যাটিং পাননি।

সাকিব শুরু করেন প্রথম বলের বাউন্ডারিতে। তাওহিদ হৃদয় আউট হয়ে যান এক ছক্কায় ৮ বলে ১৩ করে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে প্রথম বলকে সীমানায় পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজও। এর পরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। সাকিব তখন অপরাজিত ১৩ বলে ২০ করে।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২১৫, দেশের মাঠে সর্বোচ্চ ২১১। চার বল আগে ইনিংস থেমে যাওয়ায় তা আর ছাড়ানো হলো না।

২ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয় যে সমীকরণে, আয়ারল্যান্ডের সামনে জয়ের হাতছানি ছিল তাতে ভালোভাবেই। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার শুরুটাও করেন আশা জাগানিয়া। পাওয়ার প্লের ২ ওভারে দুজন তোলেন ৩২ রান।

নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে আসে ১৮ রান, মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৪।

পরের ওভারেই রাশ টেনে ধরেন হাসান মাহমুদ। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে টানা তিন বলে রান দেননি তিনি রস অ্যাডায়ারকে। পরের বলে আইরিশ ওপেনার খেলার চেষ্টা করেন স্টাম্প ছেড়ে, হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কার ভেঙে দেয় মিডল স্টাম্প।

পরের ওভারেই তাসকিনের তিন ছোবল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ফুল লেংথ বলে বোল্ড লর্কান টাকার। স্লগ করে বোল্ড স্টার্লিং (৮ বলে ১৭)। পয়েন্ট সীমানায় ধরা পড়েন জর্জ ডকরেল।

পরে হাসানের এক ওভারে টেক্টরের তিন বাউন্ডারিতে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে অভিজ্ঞতার সবটুকু মেলে ধরে সাকিব দেন স্রেফ ৫ রান।

পরের দুই ওভারে আর পেরে ওঠেনি আইরিশরা। শেষ ওভারে অসাধারণ ক্যাচে টেক্টরকে ফেরান মিরাজ, ৪ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে স্বস্তিতে।

ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে পারেননি রনি তালুকদার। তার হয়ে তা গ্রহণ করেন অধিনায়ক সাকিব।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ বুধবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ২০৭/৫ (লিটন ৪৭, রনি ৬৭, শান্ত ১৪, শামীম ৩০, হৃদয় ১৩, সাকিব ২০*, মিরাজ ৪*; টেক্টর ২-০-১৬-১, অ্যাডায়ার ৩.২-০-৪৮-১, হিউম ৪-০-৩৫-১, ইয়াং ৪-০-৪৫-২, ডেল্যানি ৩-০-২১-০, হোয়াইট ৩-০-৩৭-০)

আয়ারল্যান্ড: (লক্ষ্য ৮ ওভারে ১০৪) ৮ ওভারে ৮১/৫ (স্টার্লিং ১৭, রস অ্যাডায়ার ১৩, টাকার ১, টেক্টর ১৯, ডকরেল ০, ডেল্যানি ২১*, ক্যাম্পার ১*; নাসুম ১-০-১৮-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৬-০, হাসান ২-০-২০-১, তাসকিন ২-০-১৬-৪, সাকিব ১-০-৫-০)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার।

খেলাধুলা

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিল আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচ একবার আফগানিস্তানের দিকে হেলে তো আরেকবার পাকিস্তানের দিকে। এই ম্যাচে শেষ ২ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২২ রান। সেখান থেকে শেষ ৬ বলে ৫। আর শেষ ২ বলে আফগানদের প্রয়োজন ছিল ২।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেষ হাসিটা আফগানরাই হেসেছে। ১ বল ও ৭ ‍উইকেট হাতে রেখে তারা পেয়েছে দুর্দান্ত এক জয়। সে সঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করেছে রশিদ খানের দল।

এর আগে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম তিন দেখায় তিনটিতেই পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল আফগানিস্তান। গত শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান। এবার সিরিজও নিজেদের করে নিল তারা। এখন শেষ ম্যাচে জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও রয়েছে আফগানদের।

লক্ষ্য তাড়ায় ২ ওভারেই ১৮ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা পায় আফগানিস্তান। ম্যাচের চতুর্থ ওভারে গিয়ে আফগানদের প্রথম ধাক্কা দেয় পাকিস্তান। নভিন-উল-হককে ফিরিয়ে দেন ইমাদ ওয়াসিম। উইকেট হারিয়েও অবশ্য রানের গতি শ্লথ করেনি আফগানিস্তান। প্রথম ৬ ওভারে তারা করে ৪৫ রান। জুটি গড়ে দলকে টেনে নেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জারদান। ১০ ওভার শেষে তারা দলকে নিয়ে যান ৬৬ রানে।

তবে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান ও বলের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ৭.৪ ওভার থেকে ১৫.৩ ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি পায়নি আফগানরা। এর মাঝে রানআউট হয়ে ফিরে যান ৪৪ রান করা গুরবাজও। দলীয় ১০২ রানে ফিরে যান ৩৮ করা ইব্রাহিমও। তাকে ফেরান ইহসানউল্লাহ। তবে ১৯তম ওভারে চাপের মুখে ১৭ রান নিয়ে ম্যাচের রূপ বদলে দেয় আফগানিস্তান। আর রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারের ৫ম বলে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন জারদান।

শারজায় টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে আগের ম্যাচটা যেখানে শেষ করেছিল, সেখান থেকেই যেন আজকের ম্যাচটি শুরু করে আফগানিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে সিয়াম আইয়ুব ও আবদুল্লাহ শফিককে ফিরিয়ে হ্যাট্রটিকের সম্ভাবনা জাগানোর পাশাপাশি পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের ভিত নাড়িয়ে দেন ফজলহক ফারুকি। প্রথম ওভারে কোনো রান না করেই ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান। অফ স্টাম্পের বাইরে বল খোঁচা দেন সিয়াম। দারুণ ক্যাচে বাকি কাজ সম্পন্ন করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ।

ফারুকির পরের বলটিকে লেগ সাইডে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন শফিক। কিন্তু টাইমিং গড়বড় করায় সেটি সরাসরি আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ারের দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়েও বদলাতে পারেননি শফিক। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন এই ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে অবশ্য ১৮ রান করে কিছুটা চাপ কমায় পাকিস্তান। ২ চার ও ১ ছক্কায় একাই ১৫ রান করেন মোহাম্মদ হারিস।

খেলাধুলা

বাংলাদেশ থেকে র‌্যাংকিংয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে সিশেলস। ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল এই বিষয়টি।

র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে খেলে ঠিক কতটা উপকৃত হবে বাংলাদেশ?
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাওয়ার আগে র‌্যাংকিয়ে বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে খেলার কথা বলা হচ্ছিল। তবে আজ (২৫ মার্চ) সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সমানতালে লড়াই করলো সিশেলস। র‌্যাংকিংয়ের পার্থক্য খুব এটা চোখে পড়লো না। ম্যাচে তারিক কাজীর একমাত্র গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরু থেকেই সুন্দর ফুটবল প্রদর্শন করে সিশেলস। প্রথমার্ধে তাদের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করেছে বাংলাদেশ। যদিও গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪২ মিনিট পর্যন্ত। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে দারুন এক সুযোগ তৈরি করেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ডান প্রান্ত থেকে বক্সের ভেতরে থাকা সজীবের উদ্দেশ্যে লম্বা ক্রস বাড়িয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। তবে সজীব বল পাওয়ার আগেই ক্লিয়ার করে দলকে বিপদ মুক্ত করেন সিশেলস ডিফেন্ডার।

আক্রমনের ধারা বজায় রাখে বাংলাদেশ। নবম মিনিটে গোলের সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। জামাল ভূইয়ার শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ফিরে যায়। ম্যাচের ১৫ মিনিটে প্রথম অন টার্গেট শট নেয় সিশেলস। দলের অধিনায়ক স্টেনিও মারির পাস থেকে শট নেন আসাদ রায়ান আবদু। তবে সহজেই বল মুঠোবন্দি করে নেন জিকো।

১৯ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণে একাই ভীতি ছড়িয়েছিলেন ব্রান্ডন রশিদ ডেন লাবোরসে। মাঝ মাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে দারুণ এক শট নেন তিনি। সাইডবার ঘেঁষে বল বেরিয়ে যাওয়ায় অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হন সিশেলসের নাম্বার টেন। ৩৩ মিনিটে শর্ট কর্ণার থেকে জামলকে পাস দেন সাদ উদ্দীন। বাংলাদেশ অধিনায়কের ক্রসে হেড করেন তপু বর্মণ। তবে সিশেলস গোলরক্ষক আলভিন রডি মিশেল সেটি সহজেই মুঠোবন্দী করেন।

পরক্ষণেই কাউন্টারে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সিশেলস। গোলরক্ষকের পাস থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান ব্রান্ডন রশিদ। তবে শেষ মুহুর্তে তাকে রুখে দেন তারিক। ম্যাচের আগেই বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া বলেছিলেন কাউন্টার অ্যাটাকে সিশেলস বেশ শক্তিশালি। তেমনটাই দেখা গেল মাঠেও।

৪২ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল পায় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক হেডনিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ব্রেন্ডন মোল। ফিরতি বল হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন তারিক। জাতীয় দলের হয়ে এটাই তার প্রথম গোল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আমিনুর রহমান সজীবের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এলিটা কিংসলে। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই ফরোয়ার্ডের আক্ষেপ এবার পূরণ হলো। ৫৪ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মতিন মিয়া।

৬০ মিনিটে নিজের অভিষেক ম্যাচকে রাঙিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন কিংসলে। সিশেলসের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বক্সে কিংসলেকে বল বাড়িয়ে দেন মতিন মিয়া। তার বাঁ পায়ের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। অল্পেরর জন্য গোল বঞ্চিত হন কিংসলে।

ম্যাচের ৮৭ মিনিটে সিশেলসের ডন ম্যাক্সিমের ফ্রি-কিক ক্রস বারে লেগে ফিরে আসে। ৮৯ মিনিটে দারুন এক গোলের সুযোগ ছিল এলিটা কিংসলের সামনে। ডি বক্সের বাইর থেকে এই ফরোয়ার্ডের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন সিশেলস গোলরক্ষক।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে পেরি আর্নেস্টা ফ্রি কিক থেকে বক্সে বল পেয়ে যান সতীর্থ ওয়ারেন। তার হেড সহজেই তালুবন্দী করেন আনিসুর রহমান জিকো। পরবর্তীতে আর কোনো গোল না হলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে কাবরেরার শিষ্যরা।

খেলাধুলা

সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ভারতকে ১-০ গোলে হারায় স্বাগতিকরা।

ম্যাচের শুরুতেই প্রথম সুযোগ পায় বাংলাদেশ। পূজা দাসের ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সুরভি আকন্দ প্রীতি। এরপর সুলতানা আক্তার বল পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ম্যাচের ১৬ মিনিটে অল্পের জন্য গোল হজম করা থেকে রক্ষা পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। ৭৪ মিনিটে ভারতের আখিলা রাজনের আত্মঘাতী গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। জ্যোতির ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে গেলে নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে দেন ভারতীয় ডিফেন্ডার।

তিন ম্যাচে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে দুই ম্যাচে ভারতের প্রথম হার। বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ খেলবে নেপালের বিপক্ষে ২৮ মার্চ।

আজকের জয়ে ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রাশিয়া। অন্যদিকে দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ভারত। রাউন্ড রবিন লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলের হাতে উঠবে শিরোপা।