জাতীয়

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আজ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউনাইটেড ন্যাশনস্ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আজ একটি হোটেলে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক একটি রিজিওনাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

সেমিনারে স্বাগত বক্তৃতা করেন ইউএনডিপি’র স্টিফান লিলার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব সভাপতিত্ব করেন।

সেমিনারে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, শ্রম আদালত, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের বিচারকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের প্রশিক্ষণ শাখা হতে চট্টগ্রামে কর্মকরত ৫৭ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে এই সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করে সরকারি আদেশ জারি হয়েছিল। এছাড়াও সেমিনারে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌশুলি, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণার পর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনে খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য তৈরিকৃত এ খসড়া অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ চালু করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে কাগজমুক্ত কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, স্বচ্ছ ও সহজলভ্য বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘোষিত রোডম্যাপের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের যাত্রা আরও সুসংহত করবে।

জাতীয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অডিও বক্তব্য ছড়িয়েছে। এবারের অডিও বক্তব্যটি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে এটি পোস্ট করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের এ অডিও বক্তব্যটি এসেছে। তবে তিনি কোথায় বক্তব্য দিয়েছেন সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও কিছু জানানো বা লেখা হয়নি।

অডিও বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আর রেহেনা যে বেঁচে গেলাম মাত্র ২০-২৫ মিনিটের ব্যবধানে আমরা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমার আসলে এটাই মনে হয় ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া বা কোটালীপাড়ার ওই বিশাল বোমার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া আবার এ ২৪-এর ৫ আগস্ট বেঁচে যাওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো একটা ইচ্ছা আছে, হাত আছে। না হলে এবার তো বেঁচে যাওয়ার কথা না। … তবুও এটা বোধ হয় আল্লাহরই একটা রহমত যে, আল্লাহ আমাকে আর কিছু কাজ করাতে চান বলে তাই আমি এখনও বেঁচে আছি। যদিও আমার কষ্ট হচ্ছে আমি আমার দেশ ছাড়া, ঘর ছাড়া সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ’

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন ও শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এ পাঁচ মাসে তার বেশ কিছু কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এসব অডিও বক্তব্যে ‘চট করে দেশে ঢুকে পড়া’সহ শেখ হাসিনার নানা বক্তব্য পাওয়া গেছে।

তবে একবারের জন্যও তার মুখ দেখা যায়নি গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোথাও।

২০২৪ সালের শুরুতে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার মাত্র সাত মাসের মাথায় তীব্র জনরোষে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী। ওইদিনই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

জাতীয়

উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠনে একটি অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হয়েছে। এজন্য গতকাল (১৬ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।

শুক্রবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। শিগগিরই লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের রুটিন ভেটিং সাপেক্ষে অধ্যাদেশটির খসড়া চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কার রোডম্যাপের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হবে।

গণসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের বিচার বিভাগের মানোন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ সেপ্টেম্বর তিনি সুপ্রিমকোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দেশের জেলা আদালতগুলোর বিচারকদের সম্মুখে বিচার বিভাগ আধুনিকায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। এই রোডম্যাপে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করার বিষয়ে তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত, প্রথাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিষদ গবেষণা পরিচালনাপূর্বক একটি প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।

জাতীয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স এরই মধ্যে পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। গঠিত হয়েছে দুই ধাপে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত এই সরকার কতদিন দায়িত্ব পালন করবে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, কবে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে-এ প্রশ্ন এখন সবার। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে না থাকা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগে মন্দা, প্রশাসনে অস্থিরতা, পরাজিত শক্তির নানা অপকৌশল-এসব কারণে সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ প্রবল হয়ে উঠেছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। তবে বহির্বিশ্বের চাপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের দিন শেষ বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশির ভাগ দেশই সরকারের সংস্কারপদ্ধতির জোর সমর্থন দিচ্ছে। হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করে। তবে আন্তর্জাতিক মহল শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের কথা বলে। সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সময় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিদেশিরা। প্রয়োজনীয় সময়ের পক্ষেই ছিল তাদের অবস্থান। কিন্তু দুই মাস ধরেই সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলাপ-আলোচনা জোরালো হচ্ছে।

এদিকে, দেশের অভ্যন্তরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ বাড়ছে। বিএনপি ও তার মিত্র ছয়দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ অন্তত ৪৮টি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রার শুরুতে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানালেও এখন দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ চাইছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলেও মনে করছে এসব দল। একই মত ছয়দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও। পাশাপাশি জামায়াত, গণ-অধিকার পরিষদ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টও (এনডিএম) দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে।

রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সাময়িক হিসাবেই সবাই বিবেচনা করছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা বাড়বে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থনও কমে যেতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশিরা তাদের নিজস্ব মতামত, নিজস্ব ধারণা দেবে। তাদের একেক রকম চিন্তাভাবনা, আমাদের বিচন্তাভাবনা হলো বাংলাদেশের জনগণের চিন্তাভাবনা। তিনি বলেন, আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি এই সরকার হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সরকার জনগণকে কথা দিয়েছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমতা নিয়েছে। অতএব যত দ্রুত নির্বাচন করতে পারে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে ততই এই সরকার এবং দেশের জন্য মঙ্গল। আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) বিএনপির মতামত জানিয়েছেন, আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের সে প্রস্তুতি আছে। এটা সম্ভব। তাই আশা করি সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে একটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে। এই স্বল্পকালীন সরকারের পক্ষে সংস্কার প্রস্তাবগুলো সব সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই যারা নির্বাচিত হবে তারা বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবে এটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ন্যূনতম সংস্কার করতে যেটুকু সময়, যৌক্তিক সে সময়টুকু নিয়ে সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। যৌক্তিক সময় যেটুকু লাগে সে সময়টুকু সরকারকে দেওয়া উচিত। তবে খুব লম্বা সময় দরকার নেই। তা হলে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের মতো হবে বলে আমরা মনে করি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনের দলের পরাজয়ের পর থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের সঙ্গে ভারতের আলোচনা বাড়ে। এর আগে বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের প্রতি ভারতের আগ্রহই বেশি দেখা গেছে। শেখ হাসিনা ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও ওয়াশিংটন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করেছে বলে জানান ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। এছাড়া আঞ্চলিক দুই প্রভাবশালী দেশ ভারত, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিদেশিদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগ্রহের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর মন্তব্যে। গত সোমবার দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে নির্বাচিত সরকারের সময় কথা হওয়া উচিত।’ যদিও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার মতো তিনি যথাযথ লোক নন।

গত শনিবার কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির বক্তব্যের দুদিন পর ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা শুরু হয়। এরিক গারসেটি বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত আলোচনা করেছে। সম্প্রতি দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়, যেখানে বাংলাদেশে সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এরিক গারসেটি আবারও জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচন বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় খুলতে সহায়ক হবে। মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা উভয়ই (ভারত-যুক্তরাষ্ট্র) যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চাই। আর এটি বাংলাদেশে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে সহায়তা করবে।’

এমন মন্তব্যের মাধ্যমে দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একক নীতিতে বিশ্বাস করে। সেটি হলো, উভয় দেশই শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চায়। এই মুহূর্তে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র।’

এদিকে নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ অংশীজনদের কী অবস্থান, তা জানতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার রোববার বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। একই সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নির্বাচনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশে কাজ শুরু করছে। ইউএনডিপির একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছে। নির্বাচনে সহায়তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছিল, এটি জানিয়ে ঢাকায় সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে কী সহায়তা প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করা হবে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনডিপি কী সহায়তা দিতে পারে, তা জানানো হবে। এছাড়া জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানেও কারিগরি সহায়তার বিষয়টি উঠে আসে। ফলে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা চাপ বিদেশিদের পক্ষ থেকে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অবশ্য জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন মনে করেন, বহির্বিশ্বের চাপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার দিন শেষ। এখানে আগে আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রে স্যাংশনের দিকে তাকিয়ে থাকত, নির্বাচনের আগে ভারত কী বলল সেদিকে তাকিয়ে থাকত। বাংলাদেশে এই দিন আর ফেরত আসবে না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অভ্যন্তরীণভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই এখানে নির্বাচন কবে হবে এবং কী ধরনের নির্বাচন হবে, কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী করবে না-এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। পৃথিবীর সব দেশেই নানা ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আছে। আমরা যেমন কারও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত হই না, শুধুমাত্র মানবাধিকার ইস্যু বাদে। আমরা মনেও করি না যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং নির্বাচনিব্যবস্থায় কারও হস্তক্ষেপ দেশের মানুষ মেনে নেবে। কারণ এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ গণ-অভ্যুত্থান করেছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আমরা আর বাংলাদেশে দেখতে চাই না। এটি পরিবর্তনের জন্য আমরা লড়াই করব বলে মানুষকে কথা দিয়েছি। সুতরাং এটি আমরা করব।

জাতীয়

দেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্দলীয় ব্যক্তিকে দেখতে চান দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ চান রাষ্ট্রপতি হবেন দলীয় ব্যক্তি। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ। আর সংসদ-সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ১৩ শতাংশ।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ৬৫ শতাংশ মানুষ। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের জন্য তৈরি জাতীয় জনমত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপটি পরিচালনা করে। ২০-২২ ডিসেম্বর জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন না ৬৩ শতাংশ মানুষ। তবে ৩১ শতাংশ মানুষ এটিকে সমর্থন করেন। প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, এ বিষয়ে জানেন না।

জরিপে রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রত্যাশিত ব্যক্তির ধরন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এখানে চারটি উত্তর থেকে যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো নির্দলীয়, জানি না ও উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই। উত্তরদাতাদের ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দলীয় ব্যক্তির পক্ষে, ৬৮ দশমিক ২৮ শতাংশ নির্দলীয় ব্যক্তির পক্ষে মতামত দিয়েছেন। ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জানেন না। আর ১ শতাংশের কিছু কম মানুষ উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন বলে জানান।

জরিপে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য রোধে প্রধান দায়িত্ব কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এখানেও চারটি উত্তরের একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। এর মধ্যে ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, এই দায়িত্ব রাজনৈতিক দল বা তাদের প্রার্থীর। ৪৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বলেছেন, এই দায়িত্ব জনগণের।

এ প্রশ্নের জবাবে ‘জানি না’ বলেছেন ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ বলেছেন, তারা উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন। এছাড়া নির্বাচনে ‘না’ ভোট জয়ী হলে পরাজিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। এর বিপক্ষে ছিলেন প্রায় ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশনও তাদের সুপারিশে এটি রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন প্রায় ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৪ শতাংশ জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার পক্ষে মত দেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে প্রদত্ত ভোট ৫০ শতাংশের কম হলে ওই আসনে পুনর্নির্বাচনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে মত দেন ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনর্নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছে।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টিতে উন্নীত করে নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর প্রায় ২০ শতাংশ ছিলেন বিপক্ষে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন না ৬৩ শতাংশ মানুষ। আর প্রায় ৩১ শতাংশ এটিকে সমর্থন করেন।

প্রায় ৫ শতাংশ বলেছেন, এ বিষয়ে জানেন না। বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা রাখার বিষয়টিকে সমর্থন করেন না ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বিদেশে দলের শাখা থাকার বিষয়টিকে সমর্থন করেন। ৮৭ শতাংশ মানুষ প্রবাসীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, জরিপে নমুনায়নের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ৮০টি সাধারণ খানা (পরিবার বা যারা এক চুলায় রান্না করেন) থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি খানা থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি নাগরিকদের মধ্যে ‘কিশ গ্রিড সিলেকশন’ পদ্ধতিতে একজন নির্বাচিত উত্তরদাতার কাছ থেকে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ৪৬ হাজার ৮০ জন মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।

জাতীয়

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে ১১ রোডম্যাপ বা প্রস্তাব বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে ‘অ্যা পেনিনসুলা ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘জুলাই ৩৬ ফোরাম’।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ নির্ধারণে ১১টি মৌলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়, যা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তি কেন্দ্র এবং বিশ্বে ‘নেক্সট ১১ অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

বক্তারা বলেন, ৫৩ বছরে বাংলাদেশ নানা সংকট পেরিয়েছে। তবে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জুলাই ৩৬ ফোরামের আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ নাজীর শাহীন বলেন, এখনই সঠিক রোডম্যাপ কার্যকর করার সময়, অন্যথায় সম্ভাবনাগুলো হাতছাড়া হবে।

বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিনিয়োগ প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০০৮ সালে বিশ্বখ্যাত গোল্ডম্যান সার্চের প্রজেকশন অনুযায়ী বাংলাদেশ ১১তম অর্থনৈতিক অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

প্রস্তাবিত রোডম্যাপ/১১ দফা হলো-

এক. অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্লেষক এবং থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, দুই. ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে রেল, উচ্চগতির ট্রেন, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাব হিসাবে গড়ে তোলা, তিন. কৌশলগত প্রতিরক্ষায় ব্লু ইকোনমি ও রণতরী সংযোজনের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি, চার. বহুজাতিক সম্পর্কে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমন্বয়, পাঁচ. প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে সুন্দরবন ডকট্রিন ও অন্যান্য পরিবেশগত সম্পদ রক্ষা, ছয়. আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জোরালো ভ‚মিকা নিয়ে ইউএন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জন, সাত. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ব্যবহার করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আট. ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নে ২০৩৮ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ, নয়. প্রশাসনিক সংস্কারে দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহির মাধ্যমে প্রশাসনকে জনমুখী করা, দশ. প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রণীত থ্রি-জিরো : দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং এগারো. বিশ্বমঞ্চে অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ডেল্টা নেশন হিসাবে ব্র্যান্ডিং।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সুব্রত ঘোষ সুমন, নাওয়দি হোসাইন, মারুফী হাসান, কনক ইসলাম, এসএম লিমন এবং আরিয়ান নাজীর প্রমুখ।

জাতীয়

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় মহিলা দলের সমাবেশকে উপলক্ষ্য করে ভোজনের আয়োজনের জন্য গরু চুরি অভিযোগে বিএনপির এক নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের পর যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের কয়ড়া বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খানের স্বাক্ষরিত এক অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মাদারগঞ্জের কয়ড়া বাজার এলাকার মৃত আব্দুল মজিদ মন্ডলের ছেলে ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তা চৌধুরীর অনুসারী এবং আদারভিটা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী সুমন মণ্ডল (৪০)। অন্যজন একই এলাকার হাসান প্রামাণিকের ছেলে মাংস ব্যবসায়ী (কসাই) ফজলুল প্রামাণিক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সমাবেশ উপলক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুক্তার চৌধুরীর বাড়িতে এক ভোজের আয়োজন করা হয়। সেই ভোজের জন্য ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তা চৌধুরী নির্দেশে যুবদল কর্মী সুমন মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির কর্মী জোড়খালী ইউনিয়নের দক্ষিণ খামার মাগুরা এলাকার মৃত ছৈয়দ আলী মণ্ডলের ছেলে এফাজ মণ্ডলের বাড়ি থেকে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে একটি গরু চুরি করেন। পরে মাংস ব্যবসায়ী ফজলুল প্রামাণিককে দিয়ে গরু জবাই করে রান্নার জন্য তৈরি করা হয়।

আরও জানা গেছে, শনিবার সকালে এফাজ মণ্ডল তার গোয়াল ঘরে গরু দেখতে না পেয়ে এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। গরু চুরির ঘটনায় এফাজ মণ্ডলের বাড়িতে লোকজন জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনসহ গরুর মালিকসহ কয়ড়া বাজারে যাওয়ার পথে মাংস ব্যবসায়ী ফজলুর কাছে গরু মাথা ও চামড়া দেখে চুরি যাওয়া গরুটি শনাক্ত করেন। পরে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা করতে গেলে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মী সুমন ও মাংস ব্যবসায়ী ফজলুকে আটক করে। এ সময় গরু চামড়া, মাথা ও কিছু মাংস জব্দ করে পুলিশ।

এ বিষয়ে আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুক্তা বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, দলীয় ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মাহমুদুল হাসান মুক্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তা সাতদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

মাদারগঞ্জ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বলেন, গরু চুরি ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।

জাতীয়

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ বিশেষ অভিযান চলে।

ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ জানায়, তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইবনে মিজানের নেতৃত্বে একাধিক টিম সাড়ে চার ঘন্টা বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে রায়ের বাজার, বোর্ডঘাট, নবীনগর হাউজিং, চাঁদ উদ্যান ও ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে মাদক কারবারি, পেশাদার ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাতীয়

ভারত নদীকে ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের চারপাশে ভারতের পঞ্চাশটির মত ড্যাম, ব্যারেজসহ হাইড্রোলিক অবকাঠামো রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। মূলত ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে নদীকে ব্যবহার করে ভারত।”

শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পূর্বপাড় কাশিনগর এলাকায় ‘নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা’ বিষয়ক সংগঠন তরীর আয়োজনে ‘নদী সম্মিলনে’ এসব কথা বলেন তিনি।

নদীর ব্যাপারে ভারতকে অবিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে মনজুর আহমেদ বলেন, “ভারতকে নদীর ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। তাই বাংলাদেশকে পানির বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বনির্ভরশীল হতে হবে।”

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পঞ্চাশটিরও বেশি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দুই দেশের চুক্তিতে ভারতের আগ্রহ খুবই কম। যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে ডেল্টা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।”

নদী রক্ষার এই সম্মিলনে মনজুর আহমেদ বলেন, “ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত তার পশ্চিমাঞ্চলে ট্রান্সফার করতে চায়, যেটি বাংলাদেশের জন্য সমূহ বিপদ। ভারত থেকে যেসব নদীর শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তার মধ্যে ব্যাপক পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে জমে। বর্ষাকালে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিট মিটার পানি এসব নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়।

“তবে সেসব নদী থেকে গ্রীষ্মকালে মাত্র ৫ ভাগ পানি বাংলাদেশে আসে। সেখানে ভারতে পানি তো দেয়ই না, উল্টো গঙ্গার পানি তারা ব্যাপকভাবে নিয়ে যাচ্ছে। পানি যখন বেশি দরকার তখন কম দেয়, যখন কম দরকার তখন বেশি দিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। সিলেট এবং ফেনীর বন্যা তার প্রমাণ।”

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশব্যাপী নদী দখল ও দূষণ বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দাবি জানান নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

নদী সম্মিলনে তরীর আহ্বায়ক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে সাংবাদিক ও লেখক আমিন আল রশীদ, রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কিউ এম সোহেল রানা বক্তব্য দেন।

জাতীয়

২০২৪ সাল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ঘটনাবহুল বছর। নির্বাচন দিয়ে শুরু হয়েছিল বছর, এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়েছে। এছাড়া আরও ছোট-বড় বিভিন্ন ঘটনায় সারা বছর সরব ছিল দেশ। এসময় ভুল ও অপতথ্যও বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ।

বিগত বছরে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে।

বাংলাদেশের স্বাধীন ফ্যাক্টচেকার প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার প্রতিষ্ঠানটি ‘২০২৪ সালের ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের গণমাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একক ব্যক্তি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়ানো সবচেয়ে বেশি, ২০৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। এই তালিকায় পরের অবস্থানে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে নিয়ে ছড়ানো ১১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ছড়ানো ৯৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই তিনজন শীর্ষে।

জাতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য অধ্যাপক ইউনূসের পরে আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আসিফ নজরুলও রয়েছেন এ তালিকায়। ধর্মীয় দিক থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জড়িয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে।