রাজনীতি

৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

রোববার (৯ মার্চ) আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। এখন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার তদন্তকাজ সম্পন্ন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তকাজ শেষ করতে হবে। একইসঙ্গে ৯০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মাগুরায় যে ঘটনা ঘটেছে সেটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অন্যান্য সবার মতো আমাদেরও মর্মাহত করেছে। এ ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলার বিচারে ও তদন্তে যাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ মাত্রায় সজাগ থাকবো।

আইন উপদেষ্টা বলেন, শুধু এ ঘটনা না, নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা রোধকল্পে আমরা কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করেছি। আজ সকালে মিটিং করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। আমরা চেষ্টা করবো কয়েকদিনের মধ্যে আইনগত পরিবর্তন আনার জন্য। পরিবর্তন বলতে, আমরা দেখতাম নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, রেপের মতো মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ৩০ দিনের মধ্যে তদন্তকাজ সম্পন্ন করতে না পারলে তাকে পরিবর্তন করে আরেকজনকে দেওয়া হতো, সে যদি না পারে তাহলে আরেকজনকে দেওয়া হতো। এ রকম করে অনেকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তিত হতো। এতে মামলা দীর্ঘায়িত হতো ও বিচারকাজ করতে দেরি হতো।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে সংশোধনী আনবো সেখানে তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তাকেই তদন্তকাজ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তদন্তকারী অফিসার পরিবর্তন করা যাবে না। একইসঙ্গে তদন্তের সময় অর্ধেক করা হচ্ছে। আগে ছিল ৩০ দিন এখন সেটা ১৫ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া বিচারের সময়ও অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। আগে ছিল ধর্ষণের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার করতে হতো, এখন সেটা অর্ধেক করে ৯০ দিন করা হচ্ছে। ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার নারী নির্যাতন আইন পরিবর্তন করছে। গত কয়েকদিনের যে-সব মব জাস্টিস এবং মরাল পুলিশিংয়ের ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সব ঘটনা সরকারের পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে কোনও অপরাধী বিচারের বাইরে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দমনে সরকার সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত সব ধর্ষণের মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি কল্পে মামলাগুলোকে নিয়মিত পর্যালোচনায় আনছে। রাস্তাঘাটে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করতে পুলিশ দ্রুত আলাদা হটলাইন চালু করবে।

রাজনীতি

দেশের লাখো শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আগামী ১০ থেকে ২০ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫৩তম অধিবেশনের আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

বুধবার (০৫ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইএলও অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন।

প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের সবকিছু ইতিবাচকভাবে করতে হবে এবং কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এখানে কোনো অজুহাত দেওয়া চলবে না।

বাংলাদেশের শ্রম খাতে কর্মীদের বিমা সুবিধা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন তিনি।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনলাইনে যোগ দেন। তিনি জেনেভায় আইএলও অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের হয়ে অংশগ্রহণ করবেন। লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শ্রম খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন, সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং আইএলও বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি তুয়োমো পুশিয়াইনেন উপস্থিত ছিলেন।

জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।

রাজনীতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণবিরোধী কিছু উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে শিক্ষকদের দিকে দৃষ্টি দিতে দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, এই নন এমপিও শিক্ষকরা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য যে দাবি তুলেছে এই দাবির প্রতি ন্যূনতম কোনো কর্ণপাত করেনি সরকার।এটাতো আবু সাঈদের রক্তঝড়া সরকার, মুগ্ধের রক্তঝড়া সরকার, এটাতো আহনাফের রক্তঝড়া সরকার।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত নন এমপিও ঐক্য পরিষদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বিএনপির এই নেতা এসব কথা বলেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এমপিওর দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সম্মিলিত নন এমপিও ঐক্য পরিষদের শিক্ষকরা।

রিজভী বলেন, আজকে যারা সমাজের মেরুদণ্ড, সমাজকে যারা নির্মাণ করবেন, ছাত্রদেরকে যারা গড়ে তুলবেন তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের আহারের জন্য, খাদ্যের জন্য, কোনো রকমে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার দাবি করছেন। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নজর নেই।

এ সময় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদেরকে ক্ষুধার্ত রেখে, অনাহারে রেখে, এদের সন্তানদেরকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়িয়ে আপনারা কী আনন্দ পাবেন আমি জানি না। কিছু কিছু উপদেষ্টারা এই কাজগুলো করছেন। তাদের (শিক্ষক) দিকে কোনো দৃষ্টি দেওয়াতে দিচ্ছেন না প্রধান উপদেষ্টাকে।

রিজভী বলেন, নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যারা গত বিশ বছর, পঁচিশ বছর, ত্রিশ বছর ধরে একটি টাকাও পায়নি। এরা বাংলাদেশের লোক নন? এরাতো টাকা না নিয়েই অনেক ছাত্র তৈরি করেছেন যারা সমাজের বিভিন্ন জায়গায় আছেন। বিভিন্ন সরকারি দ্বায়িত্বও হয়তো পালন করছেন। তো এদের (শিক্ষক) দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন কেন?

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামী নেতা নয়, নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নেতা নয়, নীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

ক্ষমতা নয়, দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জামায়াত জোরালোভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাজধানীর শ্যামলীতে বাদশাহ ফয়সল ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের সম্মানে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের মেডিকেল থানা শাখা আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চিকিৎসকদের মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করার জন্য আল্লাহ আমাদের ওপর সিয়ামকে অত্যাবশ্যকীয় বা ফরজ করে দিয়েছেন, তাই এ মোবারক মাসে যথাযথভাবে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে।

মেডিকেল থানা আমির ডা. স ম খালিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, এনডিএফ সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম এবং থানা সহকারী সেক্রেটারি ডা.হাসানুল বান্না।

উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত, জিয়াউল হাসান, ডা. আব্দুল জলিলসহ অনেকে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পবিত্র মাহে রমজান একটি মোবারক মাস। রাসূল (সা.) রজব মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এ বলে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বারাকাহ ও কল্যাণ নিশ্চিত করো এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও। কারণ, হাদিসে রাসূল (সা.)-এ রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যের ১০ দিন মাগফিরাত তথা গোনাহ মাফ, আর শেষ ১০ দিনকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে রাসূল (সা.)-এর অন্যত্র বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রমজান মাসে সিয়াম পালন করবেন, আল্লাহ তার পূর্বের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। মূলত, মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও তাজকিয়া অর্জনের মাস। তাই এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

তিনি মাহে রমজানের শিক্ষা বাস্তব জীবনের প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

জাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, শাড়ি-লুঙ্গি বা খাদ্যদ্রব্য নয় বরং এমনভাবে জাকাত দেওয়া উচিত, যাতে একজন ব্যক্তি স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র না হওয়ায় সরকারি জাকাত ব্যবস্থাপনায় জনগণের আস্থা নেই। তাই মানুষ সরকারকে জাকাত দিতে চায় না। মূলত, জামায়াতে ইসলামী নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

তিনি বলেন, জামায়াত নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আল্লাহর কুরআন বিজয় করতে চায়। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ময়দানে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, পবিত্র রমজান মাসেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়েছে বলে এ মাসের এতো মর্যাদা। মূলত, এ মাসকে কুরআনের মাসও বলা হয়। তাই মানবজীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে হবে কুরআনের আদর্শের ভিত্তিতেই।

তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসকদের দাওয়াতি কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান।

মোবারক হোসাইন বলেন, রমজানে সিয়াম পালন শুধু আমাদের জন্য নয় বরং পূর্ববর্তীদের জন্যও অত্যাবশ্যকীয় ছিল। আমরা যাতে তাকওয়া অর্জন করতে পারি, সেজন্যই রোজা আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। তাই পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে তাকওয়ার সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. স ম খালিদুজ্জামান বলেন, আমরা সবাই আল্লাহর বান্দা। তাই চিকিৎসাকে শুধু পেশা হিসেবে নেয়, মানবসেবা হিসেবে নিতে হবে।

তিনি চিকিৎসকদের সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

রাজনীতি

জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে যারা ছিলেন, তারা এরইমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নামের দলটি আত্মপ্রকাশ করেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

এরপর থেকেই নতুন এ দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচনের আগে বিদ্যমান আইনে নতুন দলটির নিবন্ধন সম্ভব, না কি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে, তা নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন।
বলা হচ্ছে, নিবন্ধন পেতে প্রধান তিন শর্তের প্রথম দু’টি পূরণ করা নতুন দলটির নাগালের বাইরে। কেননা, দলটি আগে কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং কোনো আসনে জয়লাভ করেনি বা ন্যূনতম ভোটও পায়নি। এক্ষেত্রে কেবল একটি পথ খোলা। সেটি হলো নির্দিষ্ট কার্যালয়সহ কমিটি গঠন ও সমর্থক জোগাড় করা। তবে অক্টোবরে তফসিল হলে আট মাসে সেটাও কতটুকু সম্ভব সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

এদিকে নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইনি দিক নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ আসে কি-না, সে অপেক্ষা করতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। ঐক্যমত কমিশনেও বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসবে সে দিকেই যাবে কমিশন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশে বলেছে, নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের লক্ষ্যে বিদ্যমান এক তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির পরিবর্তে ১০ শতাংশ জেলা এবং ১০০ উপজেলার পরিবর্তে ৫ শতাংশ উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করতে হবে।

একই রকম দাবি বিভিন্ন দল থেকেও করা হয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে বলেন, আমরা মনে করি, পুরো নিবন্ধন বিধিমালাই পরিবর্তন করা দরকার। কারণ দল নিবন্ধনের যে আইন ও বিধি তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার অধিকার ক্ষুণ্ন করে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের যে নিবর্তনমূলক বিষয়গুলো ছিল, যেভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় জনগণের অধিকারকে হরণ করতে চেয়েছে, একই কায়দায় রাজনৈতিক দলও যাতে বিকশিত হতে না পারে, সেজন্য নানাভাবে যেন রাজনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত করে রাখা যায়, সেটার অংশ হিসেবেই গণসংহতির ছয় বছর নিবন্ধন আটকে রেখেছিল।

জোনায়েদ সাকি বলেন, পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশ মান্য করা হচ্ছে না, এই রকম দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও আবার আদালতের দারস্থ হলেন। তবে আপিল চালাতে আগ্রহী কি না, সরকার পতনের পর সেই ইসির কাছে জানতে চাইলে তারা আপিল প্রত্যাহার করে নেয়। এভাবে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

নিবন্ধিত দল:

ইসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর প্রায় প্রতিটিই আবেদনের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছিল।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা।

নতুন দল:

জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যে নতুন দল গঠন করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নামের দলটির আহ্বায়ক হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট দলটির কমিটিতে রয়েছেন আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা ছাত্র নেতারা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দলটির আত্মপ্রকাশের পর ইসির দল নিবন্ধন নিয়ে ফের সামনে এসেছে আলোচনা।

নিবন্ধনের বর্তমান পদ্ধতি:

গণপ্রতিনিধি আদেশ-১৯৭২ এ নতুন দল নিবন্ধনের জন্য তিনটি প্রধান শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করতে হয়।
(ক) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা
(খ) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা
(গ) দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন একশটি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং ওই রকম প্রতি উপজেলায় বা থানায় অন্যূন দুইশত ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল।

এছাড়া দলের প্রতিটি কমিটি নির্বাচিত, সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ রাখা, বিদেশি শাখা না রাখার মতো শর্তগুলোও রয়েছে।

কী বলছে ইসি:

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, অনেকেই দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বলছেন। কোনো কোনো দল থেকে আরো কঠিন করার জন্য বলা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বর্তমান প্রক্রিয়া রাখার পক্ষে। অনেকেই নিবন্ধন প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। কাজেই এটা একটা জটিল বিষয়।

তিনি বলেন, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনও দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপারিশ করেছে। সরকার ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে। এখন সেখান থেকে কী সুপারিশ আসে সেটা দেখতে হবে। যেহেতু এটা রাজনৈতিক দলের বিষয়, তাই তাদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে সহজে আসা যাবে না। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

অতিরিক্ত সচিব আরো বলেন, প্রতি সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করা হয়। এক্ষেত্রে আইনে যে প্রক্রিয়া আছে সেটাই ফলো করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নিবন্ধন আইন তো একটা থাকতে হবে। বর্তমানে যে আইন আছে, সেটার হয়তোবা সংযোজন, বিয়োজন কিছু থাকতে পারে।

তবে বর্তমান আইন নিয়ে আমরা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। যেহেতু একটা আইন আছে, সবাই বলতেছে। এখন বিষয়টা ঐকমত্যের প্রশ্ন। কেউ বলবে যে আরও কঠিন করতে। কেউ বলবে যে আরও সহজ করতে। কেউ বলবেন যে আইনটা বাতিল করে দেন। বলার স্বাধীনতা সবার আছে। আমরা কোনো মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাই না।

রাজনীতি

দেড় দশকেরও বেশি সময় একনায়কতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসনে শোষিত হয়েছে দেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই ফ্যাসিবাদী শাসনের ইতি ঘটেছে।

তবে দীর্ঘ এ সময়ে দলীয়করণ ও দুর্নীতি চর্চার মাধ্যমে অন্তঃসারশূন্য করে দেওয়া হয় প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে কর্তৃত্ববাদী শাসকের পতনের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান। তৈরি হয়েছে এক ধরনের শূন্যতা। এই সুযোগে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে সেই পতিত ফ্যাসিবাদ আর দেশি-বিদেশি শক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইন্ধন দিচ্ছে। এর সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজরাও চেষ্টা করছে ফায়দা লোটার। সেজন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একাট্টা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পক্ষগুলোর মধ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে মতের আমিল দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় দেশের সেনাপ্রধান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, নিজেরা কাদা–ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাপ্রধান যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তা মোকাবিলা করার জন্য ড. ইউনুসের ইমেজই যথেষ্ট। তিনি থাকলে কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশ বিরোধী কোনো অপতৎপরতার কথা চিন্তাও করতে পারবে না।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুভার পড়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁধে। যাত্রার শুরু থেকেই এই সরকার পড়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জে। বিভিন্ন গোষ্ঠী-সংগঠন তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পাহাড় নিয়ে প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট অবরোধ করছে। বিভিন্ন ধরনের মব (দলবদ্ধ) সৃষ্টি করে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে সরকারের কাজকে। পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো নানাভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার অনেক ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র থেকেও পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সহায়তা। এত ‘না’ সত্ত্বেও দমে যাননি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অভ্যন্তরীণ এমন পরিস্থিতির মধ্যে বহির্শক্তির তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার কথাও ভাবতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সচেতন মহলের মতে, এক্ষেত্রে যে ধরনের প্রভাবশালী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব দরকার, তাতে অধ্যাপক ইউনূসের বিকল্প হিসেবে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বৈশ্বিক পরিসরে কোনো বাংলাদেশির কণ্ঠস্বর সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি করলে সেটা হবে ড. ইউনূসেরই।

ইতিহাস টেনে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে যে শূন্যতা চলছে, এর আগে এমনটা দেখা গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরপরই। তখনো দেশে এ ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। পরে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা রাখেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরও বাংলাদেশে তেমনই একজন আইকনিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা ছিল। আর সেই শূন্যতা পূরণের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।

বিদেশে অধ্যাপক ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা

একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেলজয়ীর ক্লাবে নাম লিখিয়ে ড. ইউনূস নিজেকে শুধু অনন্য উচ্চতায় উত্তীর্ণ করেননি, বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে চিনিয়েছেন বাংলাদেশকে। নোবেল পাওয়ার পর থেকেই সমগ্র বিশ্বে অনেক বড় পরিসরে অতিথি বা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আসন অলংকৃত করে আসছেন। অলিম্পিক থেকে শুরু করে বহুজাতিক অনেক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে শুধু নিজে সমাদৃত হননি, হয়েছেন বাংলাদেশের পতাকাবাহীও।

শান্তিতে নোবেল জয়ের পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূসের ‘স্যোশ্যাল বিজনেস’ বা ‘সামাজিক ব্যবসা’ তত্ত্ব বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সেই সুবাদে বিশ্বের অসংখ্য রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। বিশ্ব পরিমণ্ডলে অধ্যাপক ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর।

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে শুরু করে চীনের মতো বিপরীতমুখী শক্তিগুলোও সরকারকে স্বাগত জানায়। ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি বৈশ্বিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। বিশ্বের বহু দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেন।

ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার ও দণ্ডিত হয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূসের অনুরোধে অতি অল্প সময়েই দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তাদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ও মুক্তি দেন। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর পাকিস্তান সফর শেষে দেশে ফেরার সময় পাঁচ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

অনেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। ট্রাম্পের বিশ্বস্ত এবং তার সরকারের সরকারি কর্মদক্ষতা দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়া বিশ্বের সফলতম টেক উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের রয়েছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট চালু করতে যোগাযোগও হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সফরেরও সম্ভাবনা রয়েছে ইলন মাস্কের। এ ছাড়াও অধ্যাপক ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৩ মার্চ চার দিনের সফরে আসছেন বাংলাদেশে। বৈশ্বিক পরিসরে তার যোগাযোগের এমন বহু নজির রয়েছে।

জাতিসংঘ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূসের অর্জন

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দেড় মাসের মাথায় জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময়ে তিনি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মাত্র চার দিনের সফরে অধ্যাপক ইউনূস তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পাশাপাশি অধিবেশনের সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন।

নানা কারণে অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা তখন বলছিলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের দূরত্ব বিরাজ করছিল। তবে অধ্যাপক ইউনূসের ওই সফরে সেই সংকট অনেকটাই কেটে যায়। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকট অনেকটাই কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন অধ্যাপক ইউনূস। এর সঙ্গে তিনি পরিবর্তিত বাংলাদেশ নিয়ে তার সংস্কারের ধারণাও তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ সম্মেলনের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন অধ্যাপক ইউনূস। এই সফরে তিনি মোট ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি চারজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, চারজন মন্ত্রিপর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি, জাতিসংঘ বা সদৃশ সংস্থার ১০ জন প্রধান বা শীর্ষ নির্বাহী, ১০ জন সিইও বা উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব, নয়টি আয়োজিত অনুষ্ঠান (আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ এবং মধ্যাহ্নভোজ), সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আটটি আয়োজন এবং আরও দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলেও জানা যায়।

সেই সফরে একটি অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানকালে আত্মদানকারীদের দেশপ্রেমের বর্ণনা দেন ড. ইউনূস। যার একটি ভিডিও তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে ড. ইউনূসের বক্তব্যের সময় অতিথিদের নির্বাক হয়ে গভীর মনোযোগে শুনতে দেখা যায়।

সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যে কৌশলী

ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ৬ আগস্টই অধ্যাপক ইউনূস ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ততক্ষণে তার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়ার খবর সামনে চলে আসে। এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি অস্থিতিশীল থাকে, তা মিয়ানমার এবং সেভেন সিস্টার্সে (ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্য) ছড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, এদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, ফলে এটি বাংলাদেশের চারপাশে এবং মিয়ানমারে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হবে। আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং যদি তা অর্জন করা না যায়, তাহলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে।

অধ্যাপক ইউনূসের ওই বক্তব্যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায়ের ক্ষেত্রে তার কৌশলী চিন্তার বিষয়টি সামনে আসে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়াগুলো বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালানো শুরু করে। এর মধ্যেই ডিসেম্বরে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করেন। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, হস্তক্ষেপ ও উসকানির বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেয় দলগুলো।

জানুয়ারিতে রাজবাড়ীতে সেনাবাহিনীর এক অনুশীলনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা সদস্যদের সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। এর আগে ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন-এটাই সকলের প্রত্যাশা। অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের সময়ে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তের কয়েকটি স্থানে বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েও বিজিবির বাধার মুখে পিছু হটে।

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের কান্ডারি

বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষক হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে নিজের ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্বে ভর করে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন ড. ইউনূস। সেই সুযোগ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যেমনি তিনি নিজে তৈরি করেছেন, তেমনই বিদেশ থেকে বিনিয়োগ এনে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেশের অর্থনীতিকেও করেছেন শক্তিশালী। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান এবং ব্যবস্থা করেছেন আত্মকর্মসংস্থানের।

বহির্বিশ্বে যার এত সম্মান, দেশের মাটিতে টিকে থাকতে তাকে অনেক কাঠগড় পোহাতে হয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়ে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকও ছাড়তে হয়েছিল তাকে। অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তৎকালীন নিয়ন্ত্রিত বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রম আইনের একটি হয়রানিমূলক মামলায় ছয় মাসের সাজা পর্যন্ত হয়েছিল তার। এই বয়সেও আসামি হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছে লোহার খাঁচায়। দৌড়াতে হয়েছে আদালতের বারান্দায় বারান্দায়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হাসিনার রক্তচক্ষুর ভয়ে দেশমাতৃকার মায়া ছেড়ে চলে যাননি অধ্যাপক ইউনূস। যে দেশকে তিনি এত ভালোবেসেছেন, সেই দেশের মানুষ একদিন প্রতিদান হয়তো দেবে, সেই আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিদায়ের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবতীর্ণ হন জাতির কান্ডারি হিসেবে। শেষ বয়সে দেশকে খাদের কিনারা থেকে রক্ষা করতে তার কাঁধেই গুরুভার তুলে দেয় ছাত্র-জনতা।

তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা ইউনূসের সংকট মোকাবিলা, সংস্কার ধারণা

দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূসের নেওয়া নানা সংস্কার পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক সমর্থনই বলে দেয়, সংকটে কতটা অপরিহার্য ছিলেন তিনি। অনেকেরই শঙ্কা ছিল, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে অসংখ্য সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে যেভাবে জীবন দিতে হয়েছিল, একই প্রেক্ষাপট হতে পারতো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ার পর। তবে প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ইউনূসের আবির্ভাব দেশকে এমন সংকট থেকে রক্ষা করেছে। কারণ ‘বিদেশি কোনো প্রভাবে বা প্রলোভনে’ কোনো পক্ষ বা শক্তির মননে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ থাকলেও সামনে ড. ইউনূস থাকায় তাদের ভাবতে হয়েছে এবং নিরুৎসাহিত হতে হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, ড. ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ বা প্রতিপক্ষ করে কারও ‘অর্জন’র সম্ভাবনা যেমন শূন্য, তেমনি বৈশ্বিক পরিসরে তাদের একেবারে ‘একঘরে’ হয়ে পড়ারও ঝুঁকি শতভাগ।

সচেতন মহল মনে করে, দেশি-বিদেশি যে ষড়যন্ত্র গত সাত মাসে মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, তা হয়তো অধ্যাপক ইউনূস ছাড়া আর কারও পক্ষে সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না। হয়তো আরও রক্তপাত হতো। এমনকি বিপন্ন হতে পারত স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা। সেসব চ্যালেঞ্জ তিনি মোকাবিলা করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। এমনকি এসব মোকাবেলায় তেমন কঠোরতাও দেখাননি।

স্বৈরাচার হাসিনার দেড় দশকেরও শাসনকালে দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে করে ফেলা হয় অন্তঃসারশূন্য। প্রকল্পের নামে লুটপাট করা হয় লাখো কোটি টাকা। খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়া সেই অর্থনীতি শক্তিশালী করতে অধ্যাপক ইউনূস নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে রিজার্ভে সেটির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। দুর্নীতি প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের ফল স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিগত প্রায় সাত মাসে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এরইমধ্যে ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে। সেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হলে সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক হলে এই সংস্কার প্রক্রিয়া দেশে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ক্ষমতা ধরে রাখার খায়েশ নেই, জাতির জন্য সুযোগ

অধ্যাপক ইউনূস বারবারই বলেছেন, তার ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছা নেই। ক্ষমতা ধরে রাখার প্রতি তার যে বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ অন্যরাও তা বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছেন। বারবারই তিনি নির্বাচনের কথা বলছেন। এরইমধ্যে তিনি সম্ভাব্য সময়ও বলে দিয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগে কিছুটা সংস্কার তিনি চান।

তিনি বারবার বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনো রাষ্ট্র আর থাকবে না।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশ, গণতন্ত্র, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, সুশাসনের স্বার্থে এবং ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের স্বার্থে অধ্যাপক ইউনূসের পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তা সামনে চলে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তার পাশে থাকলে তিনি শক্ত হাতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবেন। দেশি-বিদেশি অপশক্তিও তার অগ্রগতির পথে বাধা হতে পারবে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধ্যাপক ইউনূসের পাশে থাকলেই বাঁচবে বাংলাদেশ। রক্ষা পাবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা। শক্তিশালী হবে অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে গণতন্ত্র এবং প্রতিষ্ঠিত হবে সুশাসন। এই সুযোগ জাতি হিসেবে সব রাজনৈতিক দল, সামরিক-বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, তরুণ ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণ সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এই সুযোগ কাজে না লাগালে জাতি হিসেবে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে হবে।

রাজনীতি

বহু বছরের রেওয়াজ অনুযায়ী রমজানের প্রথম দিনে আলেম-ওলামা ও এতিমদের সঙ্গে ইফতার করলেন বিএনপির নেতারা। তাদের সম্মানে রোববার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে দলটি। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ইফতারের আগে বক্তৃতায় দেশবাসীকে রমজানের শুভেচ্ছা জানান তারেক। রমজানের শিক্ষা কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আমরা যদি নিজেদের সৎ কাজে উৎসাহিত এবং অসৎ কাজে নিরুসাহিত করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের প্রত্যাশিত সমাজ ও দেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রমজান আমাদের শেখায় সংযমী হতে। কীভাবে ধৈর্যশীল হতে হবে। কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। একই সঙ্গে আল্লাহর যা যা সৃষ্টি আছে, সবকিছুর পাশে আমাদের দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যত্ন নেওয়া রমজান আমাদের শিক্ষা দেয়।

ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি তারেক রহমান বলেন, আসুন, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে, রমজানে আল্লাহর দরবারে সেই প্রার্থনা করি। তিনি আরও বলেন, ‘খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সারা বিশ্বে বড়দিন একই দিনে পালন করে। তাই আমরা চিন্তা বা আলোচনা করে দেখতে পারি কিনা, বাংলাদেশের মানুষ সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করতে পারি কিনা। বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে এটি করা সম্ভব কিনা।’

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও দেশবাসীর কাছে তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চান তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে বসে একশ্রেণির লোক আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করছে। এই বিভেদ শুধু বিএনপির সঙ্গে ওলামা-মাশায়েখদের নয়, এই বিভেদের মাধ্যমে যে ফাটল সৃষ্টি হবে তার মধ্য দিয়ে বিদেশি শক্তি প্রবেশ করবে। তারা দেশটা ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, আজকে নতুন স্লোগান (ইনকিলাব জিন্দাবাদ) থেকে সবাই সাবধান থাকবেন। এর অর্থ কী? দ্বিতীয় স্বাধীনতা কী? সেকেন্ড রিপাবলিক কাকে বলে? একটা বিশেষ পন্থায় তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আপনারা সতর্ক থাকবেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

মাহফিলে অংশ নেন ফার্মগেট ইসলামি মিশন মাদ্রাসা ও শান্তিনগর বাজার জাতীয় মুসলিম মাদ্রাসার ৮০ শিক্ষার্থী। ইফতার শুরুর আগে দেশের অগ্রগতি ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী সেলিম রেজা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু, সোবহানবাগ মসজিদের খতিব মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ মসজিদের খতিব মুফতি মহিউদ্দিন ও মিরসরাই দরবার শরিফের সুফি আব্দুল মোমেন নাছেরী। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী ডেনি জন গোমেজ প্রমুখ।

রাজনীতি

ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, এদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। বিপ্লবোত্তর অনেক কিছু হবে বলে কল্পকাহিনী প্রচার করা হলেও তার এক ভাগও হয়নি। যতটুকু হয়েছে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা তাও সমর্থন করি না। এদেশে কোনো বৈষম্যের স্থান দেওয়া হবে না।

রোববার রাজধানীর মিরপুরের একটি রেস্টুরেন্টে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দ্বীনই আমাদের জীবনোদ্দেশ্য। দেশে দ্বীনের শিক্ষা যত সম্প্রসারিত হবে, ততই সমাজ আলোকিত হয়ে উঠবে। আর দ্বীনের শিক্ষা সংকোচিত হলে নেমে আসবে অন্ধকার। যার প্রমাণই হচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের অপশাসন-দুঃশাসন। সে সময় দেশ বরেণ্য আলেম-উলামাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ আর পায়ে ছিল ডাণ্ডাবেড়ি। অথচ চোর, ডাকাত, অপরাধী ও সমাজবিরোধীরা গোটা দেশে নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

নিজের গ্রেফতারের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে জামায়াতের আমির বলেন, আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল গভীর রাতে। আমাকে আয়না ঘরে রাখা না হলেও আমি তা দেখেছি। আমাকে এমনভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল যেন তারা কোনো ভয়ংকর অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।

এদিকে পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে রাজধানীর উত্তরায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে জামায়াত। রোববার এর উদ্বোধন করেন জামায়াত নেতা সেলিম উদ্দিন।

এসময় তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী হয়ে যারা চাঁদাবাজি করে তাদের চাইতে বড় দুশমন আল্লাহর জমিনে আর নেই। রাজনীতির নামে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেননি। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে সন্ধ্যায় নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। প্রেস সচিব বাংলানিউজকে জানান, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেননি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন নাহিদ ইসলাম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।

সম্ভাব্য নতুন এই দলের নেতৃত্ব দেবেন নাহিদ ইসলাম। সে কারণে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন, এমন আলোচনা কয়েকদিন ধরেই চলছে।

রাজনীতি

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পুস্পস্তবক অর্পণ করেন এবং দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।

রাষ্ট্রপতি ১১টা ৫৯ মিনিটে শহীদ মিনারে আসেন। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্যসচিব সাইফুদ্দীন আহমেদ।

প্রধান উপদেষ্টা রাত ১২টা ১০ মিনিটে শহীদ মিনারে আসেন। তাকেও উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্যসচিব সাইফুদ্দীন আহমেদ অভ্যর্থনা জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাত ১২টা ১৩ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা ১৬ মিনিটে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও হাইকমিশনাররা পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। তাদের পর তিন বাহিনীর প্রধান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শুরুতে সেনাবাহিনীর পক্ষে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ১২টা ২২ মিনিটে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। বিমানবাহিনীর পক্ষে চিপ এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান। রাত ১২টা ৪০ মিনিট থেকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষকে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।