রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গায়েবি মামলা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে গায়েবি মামলা দিত।

আর এখন আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা-টামলা দিচ্ছি না। সাধারণ লোকজন, ভুক্তভোগী লোকজন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তারা অন্যদের ব্যাপারে ঢালাও মামলা দিচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, ঢালাও মামলার খুব মারাত্মক প্রকোপ দেশে দেখা দিয়েছে। এটি আমাদের অত্যন্ত বিব্রত করে। আমরা অনেক ধরনের আইনি সংস্কার, পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি। আমাদের প্রত্যাশা আইনিভাবে কীভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা যায়।

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের আইন করা হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, নেক্সট উচ্চ আদালতে যে বিচারক নিয়োগ হবে, এটি আমরা একটি আইনের মাধ্যমে করতে চাচ্ছি। আইনের মাধ্যমে করার দাবি সমাজে বহুদিন ধরে আছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে একটি আইন তৈরি হয়েছিল। সেটি পরে আইনে রূপান্তরিত হয়নি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এসে সেটিকে আর আইনে রূপান্তরিত করেনি। আমরা ওই আইনটি আরও বেশি যুগোপযোগী করার জন্য তাদের সহায়তা চেয়েছি, যাতে পরবর্তী যে নিয়োগ হবে, তা যাতে আমরা আইনের ভিত্তিতে করতে পারি।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে এ উপদেষ্টা বলেন, তারা যেভাবে কাজ আগাচ্ছেন, তাতে আমি খুবই আশাবাদী হয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, তারা যেমন বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন বা স্বপ্ন দেখছেন, তা যদি সত্যিই করা যেত, তাহলে সম্ভবত আমাদের বিচারাঙ্গনে সমস্যা যা আছে, তা আর থাকত না কখনো।

রাজনীতি

ওলামাদের রুহানি ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার (১১ নভেম্বর) পূর্ব লন্ডনের মায়েদা গ্রিল হলে অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের সর্বদলীয় ওলামা সংগঠন ‘বাংলাদেশি উলামা মাশায়েখ ইউকে’ কর্তৃক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ওলামাদের রুহানি ঐক্য প্রয়োজন। রুহানি ঐক্য হলে আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবারিত বারাকা লাভ করব। আমরা ঐক্য চাই। আবার বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বসে থাকি। একজন শর্ত দিলে তো অন্যজনও শর্ত দেবেন। এভাবে শর্তের বেড়াজালে শেষ পর্যন্ত ঐক্য প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে আলেম ওলামার মধ্যে ছোট-খাটো বিষয়ে কিছু মতানৈক্য রয়েছে। সবার চিন্তা ও কর্মপরিধি একই ধরনের নয়। কিন্তু যারা জীবনের পাথেয় হিসেবে কোরআনকে কবুল করেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বকে অকুণ্ঠচিত্তে গ্রহণ ও স্বীকৃতি দেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যের ক্ষেত্রে বাস্তব মডেল মনে করেন, এই তিন জায়গা ঠিক থাকলে আমাদের মধ্যে ঐক্য হওয়া সম্ভব।

জামায়াতের আমির বলেন, দ্বীন সবার। সুতরাং আমরা সবাইকে নিয়ে দ্বীনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। কেউ আমাদের স্বীকৃতি বা মর্যাদা দিল কি না আমরা তার পরওয়া করব না। আমরা সবাইকে ভাই ও বন্ধু মনে করে সামনে আগানোর চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

মতবিনিময় সভায় তিনি উপস্থিত ওলামা মাশায়েখদেরকে উদ্দেশে বলেন, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য যত ইসলামি সংগঠন ও মারকায রয়েছে, আপনারা আমাদের মধ্যে কোনো ভুল দেখলে আমাদেরকে সোজা করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনারা সহযোগিতা করলে আমাদের জন্য দ্বীনের পথে চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

তিনি আলেমদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের ও আমাদের মধ্যে পারস্পরিক দোয়া, ভালোবাসা ও সহযোগিতা থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ব্রিটেনকে বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন একটি পরিবেশে আপনারা আছেন যেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন। এখানে আপনাদের মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দেয় না, যেমনটি বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়। এখানে মেধার চর্চা বেশি হওয়ার কারণে আপনাদের ওপর আমাদের হকও বেশি। আপনারা সে হক আদায় করবেন ইনশাআল্লাহ।

‘বাংলাদেশি উলামা-মাশায়েখ ইউকে’র সভাপতি মাওলানা এ কে মওদুদ হাসানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শাহ মিজানুল হক ও মাওলানা এফ কে এম শাহজাহানের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ‘কাউন্সিল ফর মস্ক’ ও ‘ইশায়াতুল ইসলাম’-এর চেয়ারম্যান মাওলানা হাফেজ শামসুল হক, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি শাহ সদরদ্দীন, দাওয়াতুল ইসলাম ইউ কের আমীর শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ডক্টর শুয়াইব আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ প্রমুখ।

মতিবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ ইসহাক আল মাদানী, অধ্যাপক মুফিজুর রহমান, মাজাহিরুল উলুম মাইল্ড এর প্রিন্সিপাল শেখ ইমদাদুর রহমান মাদানী, ড. আব্দুস সালাম আজাদী, বাংলাদেশি ওলামা-মাসায়েখের সাবেক সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউ কের সহসভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ইউকে’র সহসভাপতি মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, মসজিদে আয়েশা টটেনহামের খতীব মাওলানা খিজির হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউকে’র সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, জমিয়তে উলামা ইসলাম ইউ কের সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, খেলাফত মজলিস ইউকে সাউথের সহসেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশি ওলামা মাশায়েখ ইউকে’র অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুমিনুল ইসলাম ফারুকী, মাওলানা রফিক আহমদ রফিক, বাংলাদেশি ওলামা মাশায়েখ ইউকে’র প্রচার সম্পাদক মাওলানা তায়ীদুল ইসলাম, দারুল উম্মাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল হাসানাত চৌধুরী, খেলাফত মজলিস লন্ডন শাখার সহ সম্পাদক মাওলানা দিলাওয়ার হোসেন প্রমুখ।

রাজনীতি

আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে আজ  সোমবার দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ  বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ১১ থেকে ১৪ নভেম্বর আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।’ প্রেস সচিব জানান, এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করবেন। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ বাকুতে নিজেদের দাবি-দাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে-সেসব বিষয় তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন।

তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রাখবেন এবং সেখানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ যে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, সেটিও তুলে ধরা হবে এই সম্মেলনে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ড. ইউনূসের দ্বিতীয় সফর। তার প্রথম সফর ছিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকার নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক হাইকমিশনার ডেরেক লো।

রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক হয়। এতে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়।

তারা বলেন, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচিত সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না।

বৈঠককালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। হাইকমিশনের চ্যার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিচেল লো, সিঙ্গাপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার রাহুল আব্রাহাম।

বৈঠক শেষে আমির খসরু বলেন, ‘দক্ষ শ্রমশক্তি কীভাবে আমরা সেখানে (সিঙ্গাপুরে) পাঠাতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন- সিঙ্গাপুরে প্রচুর নার্স দরকার, অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক নিতে তাদের উৎসাহ আছে। আমাদের শ্রমশক্তিকে আরও দক্ষ করার জন্য সিঙ্গাপুর বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চায়, টেকনিক্যাল সহযোগিতা দিতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে বন্দর ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত দক্ষ। তারা আমাদের দেশের বন্দরগুলো কার্যকর করতে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও সিঙ্গাপুর সহযোগিতা করতে চায়। এনার্জি ও ফাইনান্সিয়াল সেক্টারেও তারা কাজ করার কথাও বলেছে।’

এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু মাহদুদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ও আওয়ামী লীগের ফিরে আসার চেষ্টায় প্রভাব ফেলছে।

আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে কেন ট্রাম্পের বেশে আসতে হবে? কেন তারা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে এই অবস্থায় পৌঁছাল? আমরা আবারও বলছি তারা এখন দেউলিয়া হয়ে বিভিন্ন মোড়কে আসার চেষ্টা করছে। তাদের (আওয়ামী লীগ) তো নিজের বেশেই ফিরে আসতে হবে। কিন্তু তাদের সে সাহস নাই। সেই সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছে। আসলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, এটা হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা। তারা যে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়েছে এটাই তার প্রমাণ।’

রাজনীতি

কথা ছিল বেলা ৩টার মধ্যে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে (নূর হোসেন চত্বর) নেতাকর্মীরা জড়ো হবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই ডাকে সাড়া দেননি দলীয় নেতাকর্মীরা। ঘর থেকে বের হননি সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীরাও।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো এই কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তবে সেখানে ছিল না কোনো মঞ্চ। দলীয় নির্দেশের পরও চোখে পড়েনি কোনো পর্যায়ের একজন নেতাকর্মীও।

গত কয়েকদিন থেকে শহিদ নূর হোসেন দিবসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’র দাবি জানিয়ে রোববার দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাকার জিরো পয়েন্টে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। দলটির মুখপত্র হিসাবে ব্যবহূত ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে জিরো পয়েন্টে উপস্থিত হতেও দেখা যায়নি। দিনভর সেখানে আওয়ামী লীগের একটি প্ল্যাকার্ডও চোখে পড়েনি। কোথাও শোনা যায়নি তাদের দলীয় স্লোগান। তবে সকালে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন মিলে। কয়েক মিনিট মিছিল করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন তারা।

এছাড়া দুপুরে জিরো পয়েন্টের পাশে পল্টনের দিকে ফাঁকা রাস্তায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন। পাশাপাশি গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে ব্যানার নিয়ে আরেকটি মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তবে এসব মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা জিরো পয়েন্ট কিংবা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার সাহস করেননি।

গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করতে শনিবার রাত থেকেই জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। সারা রাত পাহারা বসিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।

রোববার সকাল থেকে জিরো পয়েন্ট ও এর আশপাশে আরও শক্ত অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অপরদিকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেয় বিএনপি, যুবদলসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন সতর্ক অবস্থানে। রোববার সকাল থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি জিরো পয়েন্টে একটি জলকামান এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে একটি জলকামান ও রায়ট কার মোতায়েন ছিল। সচিবালয়সহ পুরো এলাকা টহল দিতে দেখা গেছে বিজিবি সদস্যদের।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৪ জনকে পুলিশে সোপর্দ: শহিদ নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছেন বিএনপির নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতা। রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৪ জনকে মারধর করে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্র-জনতা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে রাত পর্যন্ত মোট কতজনকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি পুলিশ। পল্টন থানার ওসি কাজী নাছিরুল আমিন রোববার বিকালে বলেন, কিছু লোক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। ছাত্র-জনতা তাদের ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৪ জনকে পল্টন থানায় আনা হয়।

আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার

সারা দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। আটক ব্যক্তিরা বিভিন্ন মামলার তালিকাভুক্ত পলাতক আসামি। শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা হয়। আটক ব্যক্তিদের কয়েকজন বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরাসরি হামলার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে ৬ ইউপি সদস্যও রয়েছেন। ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নাটোর, সিংড়া ও লালপুর :  নাটোরে আওয়ামী লীগের ৩৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন বড়াইগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল বারেক, নাটোর সদরের বড়হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সদর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান গনি, নলডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর আওয়মী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাহেব আলী। পুলিশ জানায়, ২৪ ঘণ্টায় নাটোর সদরে ১৮, সিংড়ায় ৫, লালপুরে ৪, নলডাঙ্গা ও বাগাতিপাড়ায় দুইজন করে এবং বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে একজন করে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

রাজশাহী :  রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) বিপুল কুমার সরকারসহ ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা ও মহানগর পুলিশের মিডিয়া উইং রোববার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের মধ্যে জেলায় ১০ জন এবং মহানগরীতে ১৪ জন রয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) :  মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলাকারী জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দর রব মাহবুবসহ ৩ আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে কুলাউড়া উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়।

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) :  কুষ্টিয়ার খোকসায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ব্যারিস্টারসহ ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

রাণীনগর (নওগাঁ) :  নওগাঁর রাণীনগরে নাশকতা মামলায় শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন উপজেলার পারইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিল্লুর রহমান এবং ছাত্রলীগের কাশিমপুর ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি সাগর হোসেন।

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) :  হালুয়াঘাটে শনিবার রাতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহীদসসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

দিরাই (সুনামগঞ্জ) :  সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলায় সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার (হাফিজুর মাস্টার)-সহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) :  কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম লালু, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি এবং ভেড়ামারা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) :  বড়লেখা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক আলী আহমদ চৌধুরী জাহিদসহ ৩ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) :  ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ৫ ইউপি সদস্যকে যৌথ বাহিনী আটক করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বালিখা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলমের বাড়ি থেকে রোববার তাদের আটক করা হয়। তারা হলেন বালিখা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ইউপি সদস্য ফয়সাল আহমেদ সফির, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, নুরুল আমিন সরকার, শফিকুল ইসলাম ও হামিদুল হক।

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) :  দাউদকান্দি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা খাজা মিয়াকে শনিবার রাতে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ আটক করেছে।

ধামরাই (ঢাকা) :  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার ধামরাইয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ কলেজছাত্র মো. আফিকুল ইসলাম সাদ হত্যা মামলায় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন-৭নং গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. হাজী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, কুল্লা ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার ও রোয়াল ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ফয়সাল হোসেন।

কুড়িগ্রাম :  কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগের সাবেক তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা শহর ও উলিপুর উপজেলা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) :  ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম.ম. সিদ্দিক মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার বিকালে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) :  ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেলিমকে গ্রেফতার করে রোববার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) :  মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাজনীতি

বরিশালে জাতীয় পার্টির বক্তারা বলেছেন, গণতন্ত্র মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দেশের সবাই গণতন্ত্রের কথা মুখে বলে কিন্তু কেউই গণতন্ত্রের চর্চা করে না, গণতন্ত্রের রাতিনীতি মেনে চলে না। সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু এরশাদ দেশে গণতন্ত্রির শাসন ব্যবস্থা আনার জন্য আপ্রাণ চষ্টো করছেন। কিন্তু বৃহত্ দুইটি রাজনৈতিক দলের কারণে তা তিনি করতে পারেননি। এতো রক্ত ঝড়ার পরও ওই দুইটি রাজনৈতিক দলের কারণে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি।

গণতন্ত্র ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে এই সভা হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন, জাতীয় পার্টি বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল।

বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টি বরিশাল জেলা সদস্য সচিব এমএ জলিল, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম গফুর, রুস্তম আলী খান, আকতার রহমান সপ্রু, মঞ্জুরুল আলম খোকন ও ফোরকান তালুকদার, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব কামরুজ্জামান চেৌধুরী কামাল, জাতীয় যুব সংহতি বরিশাল জেলা আহ্বায়ক নুজরুল ইসলাম হেমায়েত, জাতীয় যুব সংহতির মহানগর আহ্বায়ক অধ্যাপক গিয়াস আহাম্মেদ, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক পার্টি জেলা সভাপতি আবদুল মন্নান ও মহানগরের আহ্বায়ক আবদুস সোবাহান, জেলা কৃষক পার্টি আহ্বায়ক মোসলেম ফরাজী, জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলা আহ্বায়ক বাহাদুল হোসেন প্রমুখ।

রাজনীতি

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জোরপূর্বক গুমের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে গুম বিষয়ক তদন্ত গঠিত কমিশনকে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার (০৯ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনাদের যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। ’

কমিশনের সদস্যরা জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সরকারকে তারা একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন এবং এরপর বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করবেন।

বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সরকার প্রয়োজনে কমিশনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়াবে এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবে, যার মধ্যে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার জন্য আইনি বিধানের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা প্রায় ১,৬০০টি অভিযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪০০টি অভিযোগ যাচাই করেছেন এবং ১৪০ জন অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

বৈঠকে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, ‘অসংখ্য অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিভূত। অনেক মানুষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা প্রতিশোধ নিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কমিশনে আসছেন না। এ থেকে বোঝা যায়, গুমের প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। ’

কমিশনের ওই সদস্য আরও জানান, তারা সন্দেহ করছেন যে. জোরপূর্বক গুমের সংখ্যা অন্তত ৩,৫০০ হতে পারে।

তিনি জানান, গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং যাদের নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে, তাদের শনাক্ত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন।

ওই সদস্য আরও বলেন, অনেক ভুক্তভোগী কারাগারে রয়েছেন, এমনকি কিছু ভুক্তভোগী মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি। গ্রেপ্তার দেখানোর পর এদের আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

বেশ কিছু ভুক্তভোগী প্রতিবেশী দেশ ভারতের কারাগারেও বন্দি রয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

কমিশনের সদস্যরা বলেন, সরকারকে এমন কিছু গোপন স্থানে প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য সহায়তা করতে হবে, যেখানে ভুক্তভোগীদের আটকে রাখা হয়েছিল।

কমিশনের সদস্যরা বলেন, ‘অনেক ভুক্তভোগী আমাদের বলেছেন যে, তারা বছরের পর বছর সূর্যের আলো দেখেননি। প্রতিদিন নতুন দিন শুরু হয়েছে, তা তারা কেবল সকালের নাস্তা পরিবেশনের সময় টের পেতেন। ’

কমিসনের এক সদস্য সরকারকে অভিযুক্তদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ জানান।

বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের তালিকা পাওয়ার পরই অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম কমিশনের তদন্ত জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলোর তদারককারীদের প্রকাশ্যে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম সাখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে রাতেই জিরো পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ছাত্র-জনতা। রোববার (১০ নভেম্বর) গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ জন্য বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কর্মসূচি রুখে দিতে রাত থেকেই জিরো পয়েন্টে জড়ো হচ্ছে ছাত্র-জনতা।

শনিবার (৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টার পোস্ট করা হয়। যাতে লেখা, ‘১০ নভেম্বর আসুন জিরো পয়েন্টে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’। পরে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে অপর এক পোস্টে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, গণতন্ত্র ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় দলে দলে ঢাকায় আসুন।’ পোস্টে বিকাল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে করা পোস্টে রোববার গণজমায়েতের ডাক দিয়ে লিখেছেন, ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত’।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির ভেন্যুও জিরো পয়েন্ট। সেখানে দুপুর ১২টাতেই ছাত্র-জনতা জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

তাদের এই কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই গুলিস্তানে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। তাদের কারো কারো হাতে লাঠিসোঁটাও দেখা যায়। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে সেখানে জড়ো হওয়া ব্যক্তিরা জানান, তারা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে জিরো পয়েন্টে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখনও দলটি সফলভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এর আগে ১৫ আগস্ট, জেল হত্যা দিবসের মতো দিনগুলো নেতাকর্মীদের পালনের আহ্বান জানালেও তাতে খুব একটা সাড়া মেলেনি।

রাজনীতি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এসেছে।

আপিল বিভাগের রোববারের (১০ নভেম্বর) কার্যতালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আবেদন দুটি ৫ ও ৬ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে আবেদনটির শুনানি হতে পারে।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুটি লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. রেজাউল হক।

২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছিলেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

একই সঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল করেন। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট।

সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এছাড়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।

হাইকোর্টের ওই রায়ের আগের দিন ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান একটি রায় দেন। রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

পরে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার অংশ হিসেবে নিজের খরচে পেপারবুক (মামলা বৃত্তান্ত) তৈরির আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট সে আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এখন পেপারবুক তৈরি হলে আপিল শুনানি হবে।

যদিও এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। তারপরও আপিল শুনানি কেন? আমরা বলেছি, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজনীতি

গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চেনার দিন। তেমনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল শত্রু চিহ্নিত করার দিন। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না।

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার রাজপথে আজ লাখো জনতার মিছিল। দেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল আজ।

তিনি আরও বলেন, লাখো জনতার আজকের এ মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নের একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী মিছিল।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক, রাজধানীর রাজপথে আজ কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার মিছিল নয় বরং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার মিছিল। নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার আদায়ের মিছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কখনো যেন ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য প্রত্যেক নাগরিকের সরাসরি ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সক্ষমতা অর্জন জরুরি। স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্বাচিত হতে ইচ্ছুক জনপ্রতিনিধিদের যতক্ষণ জনগণের ভোটের প্রতি মুখাপেক্ষী না করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত করে যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে না আনা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে তারা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।